#যখন_দুজনে_একা
১২তম পর্ব
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো মাহি আর রিয়াদ! রুবা আগের মতই চুপ করে বেডে বসে আছে ।
রুবাকে ঘিরে তার খালা নাহার আর নিঝুমের বড় বোন রিয়া আপু আছে।
ডাঃ রিয়াদ মাহিকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমি যাই রে আমার রাউন্ড আছে! খেয়াল রাখিস পরে কথা হবে!
মাহি হাত মিলিয়ে বাহিরে এসে রিয়াদ কে বিদায় দিল!
নিঝুম করিডোরে মোবাইল এ কথা বলছিল । মাহি চুপচাপ আবার কেবিনে ঢুকলো।
রুবা তো কিছুই খাচ্ছে না রে মাহি , নাহার খালা বললেন।
মাহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ! তারপর বলল, তুমি কি আমাদের বাসা থেকে আসলে খালা ?
নাহার বললেন, হ্যাঁ ।
মা এখন কেমন আছে ?
বড়পা অনেক স্ট্রং রে মাহি , ও ভেঙে পড়ে না ! কষ্টে ভেতরে ভেতরে শেষ হবে কিন্তু বাহিরে শক্ত হয়ে থাকবে! ওর জায়গা আমি তো নিজেকে ভাবতেই পারি না !
মাহি বলল, আমার তো সেটা ই চিন্তা খালামনি মা না অসুস্থ হয়ে যায়!
কথার মাঝখানে রিয়া বলল, তুই ও তো কিছুই খাসনি মাহি , আমি সেন্ডুইজ নিয়ে এসেছি একটু মুখে দে ! সবাই এক সাথে অসুস্থ হয়ে পড়লে কিভাবে হবে!
আমি ঠিক আছি এখন কিছু ই খেতে ইচ্ছে করছে না আপু ।
নিঝুমের বড় বোন রিয়া ওদের দুই বছরের বড় ! একটা প্রাইভেট ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ।
এখনো বিয়ে করছে না , তার কারণ উনার প্রিন্স চার্মিং সাজ্জাদ ভাই ইউএসএ তে পিএইচডি করছেন তিনি পড়াশোনার মাঝখানে বিয়ে নামক ভেজালে জড়াতে চাইছেন না তাই পিএইচডি শেষ হলেই বিয়ে করতে আসবেন।
রিয়া আপু ও সেই অপেক্ষায় আছেন। আর বড় বোন কে রেখে ছোটবোন বিয়ে কিভাবে করে সেই জন্যই এমবিবিএস পাশ করে আজ দুই বছর পড়েও নিঝুম আর সে তাদের ব্যাপার টা সবার কাছে গোপন রাখতে হয়েছিল। আরও কিছু পারিবারিক কারন ছিল। এখন মনে হচ্ছে,
ভালোই হয়েছে কেউ জানতো না ব্যাপার টা । তাহলে আবার আরেক ফ্যামিলি ক্রাইসিস শুরু হতো।
মাহি রুবার পাশে এসে বসলো ।
রুবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,তুমি এখন একটু স্যুপ খাও ? প্লিজ!
রুবা কোন কথাই বলল না। বসে ছিল এখন শুয়ে পড়লো ।
দরজা খুলে নিঝুম রুমে ঢুকলো । মাহিকে বলল, রুবার ডিসচার্জ পেপার রেডি যে কোন সময় নিয়ে যেতে পারবি!
মাহি রিয়াকে বলল, আপু ঐ ব্যাগের ভেতর রুবার ড্রেস আছে একটু চেন্জ করে দাও আমি পেপার গুলো নিয়ে আসছি বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল !
ডিউটি নার্সের কাছে গিয়ে রুবার সব রিপোর্ট আর প্রেসক্রিপশন গুলো নিলো মাহি।
নিঝুম চিরুনি দিয়ে রুবার চুল চিরুনি করে দিচ্ছে! কখনও কখনও ওর রুবার উপর খুব রাগ হয়, ঘৃণা ও হয় কিন্তু আবার মনে হয় মেয়েটা এত দুঃখী কেন ! করুনা ও হয় ওর !
রুবাকে সেলোয়ার কামিজ পড়াতে নিলো যখন রিয়া, রুবা মাথাটা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল দুই বোন মিলে ধরলো ওকে!
নিঝুম রুবাকে বলল, তুমি অনেক উইক হয়ে গেছো রুবা ! ঠিক মত খেতে হবে কিন্তু!
রুবা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল কিছু বলল না।
রিয়া নিঝুমের পাশে এসে গলা নামিয়ে বলল, রুবা একবারে চুপ হয়ে গেছে কেন? মনে হচ্ছে ও এখানে কোথাও নাই !
আপু একটার পর একটা শক পেয়ে ও একবারে অনুভূতি শূন্য হয়ে গেছে নিঝুম বলল !
বুঝেছিস নিঝুম খালাম্মা খুব ভালো কাজ করছে মাহির সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে, দুজন কে একসাথে কি সুন্দর লাগে দেখেছিস। যেমন সুন্দর রুবা মাহি ও তো সেরকম হ্যান্ডসাম , সুন্দর। দেখবি এরা খুব রোমান্টিক কাপল হবে !
নিঝুম চরম বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে বলে উঠলো, আপু কোন কথা কোথায় বলতে হবে সেটা কোন কালেই তুই শিখবি না তাই তো ?
ওমা আমি খারাপ কি বললাম ? রিয়া অবাক হয়ে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বলল!
প্লিজ আপু চুপ কর হাত জোড় করছি ! তোর এসব ভালো কথাও শুনতে চাইছি না এখন !
নিঝুম রিয়ার পাশ থেকে উঠে গেল !
কি আশ্চর্য তোদের আবার কি হলো ? নিঝুমের মা বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলেন!
নিঝুম বলল, কিছু না !
এমন সময় মাহি একটা হুইলচেয়ার নিয়ে রুমে ঢুকলো !
সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলল ,সব রেডি এদিকে ?
রিয়া বলল, রেডি!
মাহি রুবার দিকে তাকালো , সাদা একটা সেলোয়ার কামিজ পড়ে বসে আছে রুবা ! জানালার দিকে তাকিয়ে আছে শূন্য দৃষ্টিতে।
রুমের অন্য সবার দিকে তাকিয়ে মাহি বলল, তোমরা এগিয়ে যাও আমি রুবাকে নিয়ে আসছি । আর বাহিরে কুদরত ভাই দাঁড়িয়ে আছে ব্যাগ টা ওর হাতে দিয়ে দাও।
সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেল একে একে! নিঝুম বের হওয়ার সময় একবার পিছু ফিরে দুজন কে দেখলো !
সবাই যাওয়ার পর মাহি রুবার কাছে এসে দাঁড়ালো।
তারপর রুবার মাথায় হাত রাখলো , মাথাটা উপর দিকে তুলে ধরে প্রশ্ন করলো তুমি এভাবে চুপ করে আছো কেন বলো তো ? এভাবে চুপচাপ তোমাকে দেখতে ভালো লাগে না ! কষ্ট হয় রুবা! তুমি এভাবে থেকো না ! প্লিজ !
মাহি রুবার পায়ের কাছে বসলো, রুবার স্যান্ডেল জোড়া নিজে হাতে পড়িয়ে দিচ্ছে !
রুবা অবাক হয়ে মাহির কি তাকালো ! রুবার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে ! মাহি উঠে দাঁড়ালো , রুবার মুখটা তুলে ধরে চোখ টা মুছিয়ে দিলো !
রুবা তুমি কান্নাকাটি করো যা খুশি করো , কিন্তু এভাবে চুপ করে থেকো না ! তোমাকে চুপচাপ দেখে কষ্ট হচ্ছে।
ঠাস করে দরজা খুলে রিয়া ঢুকে বলে উঠলো, সরি রে মোবাইল টা ফেলে গেছি !
মাহি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল রুবার পাশ থেকে দুই কদম সরে গেল!
টেবিলের উপর থেকে মোবাইল টা নিয়ে রিয়া বলল , তোরা আয় আমরা নিচে যাচ্ছি !
মাহি বলল, যাও আসছি আমরা!
যেরকম ঝড়ের বেগে রিয়া এসেছিল সেরকম ঝড়ের বেগে রিয়া বের হয়ে গেল আবার।
মাহি রুবার কাছে এসে ওকে ধরে বেড থেকে নামালো ! তারপর ধরে ধরে রুবাকে হুইলচেয়ার এ বসিয়ে দিল ।
মাহি পিছু ফিরে রুম থেকে বের হওয়ার আগে দেখে নিলো কিছু রেখে গেল কিনা !
তারপর রুবাকে নিয়ে বের হয়ে গেল ।
লিফটের সামনে গিয়ে যখন অপেক্ষা করছে ওরা , মাহি রুবার হুইলচেয়ার টা ঘুরিয়ে করিডোরে র দিকে ইঙ্গিত করে বলল, রুবা দেখ পিছনে এখানে আমরা আমাদের কষ্ট গুলো ফেলে রেখে যাব ঠিক আছে এখন থেকে সব কষ্ট শেষ এখন থেকে আমাদের সবার জীবনে যা হবে সব ভালো হবে দেখো!
তারপর রুবার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল, তুমি বাসায় গিয়ে এই পঁচা সাদা ড্রেস টা ফেলে দিবে কেমন। তোমাকে রঙ্গে রঙ্গিন দেখতে ভালো লাগে !
এভাবে দেখতে ভালো লাগে না । বলে হাসলো মাহি! এখন থেকে তুমি মন খারাপ করে থাকবে না আর।
রুবা অবাক চোখে মাহিকে দেখছে শুধু।
নিঝুম আর তার মা নিচে এসে দাঁড়িয়েছে । রিয়া তার ফোন টা আনতে উপরে গিয়েছিল মাত্র আসলো ছুটতে ছুটতে ।
নিঝুমের পাশে এসে বলল, তোকে তখন বললাম না রুবা আর মাহির কথা তুই তো ঝাড়ি মেরে ফেলে দিলি।
আমি মোবাইল আনতে গিয়ে দেখি মাহি কি আদর করে তার বউ কে ধরে ধরে কথা বলছে ! চোখের পানি মুছে দিচ্ছে।
আপু প্লিজ চুপ করবি অসহ্য ? নিঝুম বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলো!
পিছন ফিরে দেখে ওরা দুজন চলে এসেছে।
নিঝুম গাড়ির দরজা খুলে দিল ! মাহি রুবাকে গাড়িতে ধরে ধরে গাড়িতে তুলল।
নিঝুমের মা বলল, আমি আমাদের বাসায় যাব মাহি তুই রুবাকে নিয়ে যা সন্ধ্যায় আসব আমি বড়পা কে বলিস !
ঠিক আছে খালামনি !
তাহলে আসলাম বলে গাড়িতে রুবার পাশে উঠে বসলো মাহি ।
নিঝুম ওদের দিকে তাকিয়ে আছে!
রিয়া ডাক দিলো নিঝুম কে , উঠ গাড়িতে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
তারপর দুটো গাড়ি বের হয়ে গেল !
( চলবে)