যখন দুজনে একা পর্ব-১৩

0
3511

#যখন_দুজনে_একা

১৩ তম পর্ব

আসার পথে পুরো রাস্তায় দুজন চুপচাপ বসে ছিল। মাঝখানে মাহি একবার রুবাকে বলল, কোন সমস্যা হচ্ছে না তো !
রুবা শুধু মাথাটা নেড়ে না করলো!
গাড়ির শব্দ পেয়ে সাফিয়া বেগম ছুটে এলেন সিঁড়ির কাছে ।
গাড়ি থেকে রুবাকে ধরে ই নামাল মাহি । তারপর ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো ।
সাফিয়া বেগম দোতলায় সিঁড়ি র গোঁড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর সঙ্গে মাহির ছোট মামি আর চাচী দাঁড়িয়ে আছে।
রুবা আর মাহি দোতলায় উঠতেই সাফিয়া বেগম রুবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন!
মাহি মাকে ধরলো , মা কি শুরু করলে?
অন্যরাও এসে সাফিয়া বেগম কে সরিয়ে নিলেন!
মাহি অবাক হয়ে খেয়াল করলো , রুবা মায়ের এত কান্নাকাটি দেখেও চুপ করে তাকিয়ে আছে ।
মাহি রুবাকে সোফায় নিয়ে বসিয়ে দিল ।
তারপর মায়ের কাছে গিয়ে মা কে ধরে বলল, প্লিজ মা তুমি আর কান্নাকাটি করো না । এই বাসাটা দুঃখের ভারে একবারে নুয়ে গেছে মা আর না । মা তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে আমি আর কয়টা দিক সামলাব বলো তো ?
তারানা মামি সাফিয়া বেগম এর দিকে পানি র গ্লাস এগিয়ে দিলেন!
মাহির চাচী বলে উঠলেন, ভাবি আপনি ছাড়া এই দুজনকে কে সামলাবে বলেন তো ভাইজান তো আর আগের অবস্থায় নেই! আর রুবা র তো আপনি ছাড়া কেউ ই নেই পৃথিবীতে !
নিজেকে কন্ট্রোল করেন ভাবি!
সাফিয়া বেগম উঠে গিয়ে রুবাকে আদর করলেন !

ছোট মামি বলল, মাহি তুমি রুবাকে নিয়ে রুমে যাও বাবা । এভাবে কতক্ষন বসে থাকবে ও ! যাও ঘরে যাও । তোমার অবস্থাও তো শেষ কালকে থেকে এক কাপড়ে আছো যাও ফ্রেস হয়ে নাও আমি খাওয়া দিচ্ছি।
রুবাকে কি খেতে দিব এখন মাহি? মামি জানতে চাইল।
ভাত খাবে , খাবার সব খেতে পারবে মাহি বলল।
মাহি রুবাকে রুমে নিয়ে আসলো!
গোসল করে নাও রুবা ফ্রেশ লাগবে ! তারপর একসঙ্গে এবং ঠিক ভাবে ভাত খাবে তুমি , মাহি বলল।
রুবা কোন কথা বলছে না সেই আগের মতই চুপ করে আছে!
মাহি রুম থেকে বাহিরে গিয়ে মামিকে ডাকল,
মামি এদিকে আসেন একটু।
তারানা বলল, কি কিছু লাগবে মাহি?
মামি রুবা একা গোসল করতে পারবে না মনে হচ্ছে অনেক উইক, আপনি বুয়াদের কাউকে বলবেন ওকে হেল্প করতে?
তারানা বলল, বুয়াদের লাগবে কেন আমি করিয়ে দিচ্ছি !
মাহি রুম থেকে বের হয়ে আসলো । তারানা মামি রুমে ঢুকলেন।

মাহি বাবা মায়ের ঘরের দিকে গেল!
মা চাচী র সঙ্গে খাবার টেবিলে বসা ।
ঘরে ঢুকে দেখে বাবা বিছানায় শুয়ে আছে!
বাবাকে গিয়ে ডাক দিলো মাহি, বাবা ! বাবা!
আজগর সাহেব চোখ মেলে তাকালেন।
মাহি বাবার পায়ের কাছে গিয়ে বসলো , বাবা রুবা ফিরেছে হসপিটাল থেকে!
তুমি যাবে না রুবাকে দেখতে?
আজগর সাহেব মাহির দিকে তাকিয়ে আছেন কোন কথা বলছেন না !
বাবা তোমার কি মনে হয় না আমাদের সবার তোমাকে খুব প্রয়োজন ?
আমি, মা আর রুবা এই তিনটা মানুষ কি তোমার কেউ না বাবা? তুমি এভাবে সব কিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে, আমরা কিভাবে ভালো থাকি বলো তো?
তোমাকে যে আমাদের ও খুব দরকার বাবা!
বাবা ভাইয়ার আয়ু এত দিন ই ছিল বাবা ! আমরা হাজার কষ্টে ডুবে থাকলেও ভাইয়া ফিরে আসবে না বাবা!
কিন্তু ভাইয়ার প্রিয় মানুষ গুলো কষ্টে ডুবে থাকলে ওর কি ভালো লাগবে বাবা ?
মাহি চোখ মুছতে মুছতে বলল, তুমি আবার আগের মত হ‌ও বাবা । আমাদের জন্য , ভাইয়ার জন্য।
মায়ের দিকে রুবার দিকে তাকিয়ে দেখেছো কখনো ওদের কষ্টের পাল্লা কিন্তু কোন দিক দিয়ে কম না!
একটু তাকিয়ে দেখো বাবা আমার দিকে আমি আমার প্রিয় ভাইকে হারিয়েছি ও শুধু ভাই ছিল না আমার বন্ধু , গাইড আইডল সব ছিল! আমার কি তোমার কাছ থেকে একটা স্বান্তনা র হাতের স্পর্শ পাওয়ার কথা ছিল না বাবা? মাহি কাঁদছে!

বাবা আমার কষ্ট হয় , তোমাদের সবাই কে এভাবে কষ্ট পেতে দেখলে । প্লিজ বাবা তুমি আর এভাবে থেকো না ।
মাহি কথা গুলো বলে উঠে দাড়াতেই , ওর হাত টা চেপে ধরলেন আজগর সাহেব।
মাহি বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো!
এই প্রথম শিহাব যাওয়ার পর মাহি আর তার বাবা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে ।
দুজন মানুষ কাঁদতে কাঁদতে তাদের কষ্টকে ছুঁয়ে দেখছে।
শব্দ পেয়ে সাফিয়া বেগম ছুটে আসলেন ঘরে , তিনি আতংকিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে মাহি ? কি হয়েছে ?
মাহি বাবার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, কিছু হয়নি মা সব এই মাত্র ঠিক হলো।
সাফিয়া বেগম অবাক হয়ে বললেন, মানে বুঝলাম না ?
মানে কিছু না মা তুমি এখানে বাবার কাছে থাকো আমি যাই ফ্রেশ হয়ে আসি।
মাহি বাবা মায়ের ঘর থেকে বের হয়ে আসলো, বাবা আর মায়ের এখন একা থাকা দরকার । অনেক দিন পর তাদের দুজনের দুজনকে লাগবে কষ্ট শেয়ার করার জন্য ।
মাহি চোখের পানি মুছে নিজের ঘরের দিকে গেল ।

দরজায় নক করতেই ভেতর থেকে মামি বলল , কে মাহি। আসো ভেতরে।
ভেতরে ঢুকে মাহি দেখে রুবার গোসল শেষ মামি রুবার চুল তোয়ালে দিয়ে মুছে দিচ্ছে । রুবা চুপচাপ আয়নার সামনে বসে আছে।

মামি বললেন মাহি দেখেছো রুবার চুল কত লম্বা! আমি শ্রুতি, মিতি কে বলি সব সময় রুবা চুল কাটে না কালার করে না কত সুন্দর ঘন, লম্বা , কালো চুল !
আর ওরা আজ এই কাট তো কালকে ঐ কাট একদিন দেখি গোল্ডেন তো আরেক দিন ব্রাউন কি উদ্ভট রং যে করে! ওরা বুঝেই না মেয়েদের চুল লম্বা আর কালোই সুন্দর!
কি বলো মাহি?
মাহি স্মিত হেসে বলল, জি মামি!

মাহি তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে নাও! আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি! বলে মামি ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।

মাহি রুবার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো, তারপর বলল এখন তোমাকে অনেক ফ্রেশ লাগছে । তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি গোসল করে আসি তারপর খাব একসঙ্গে। আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে ।

মাহি ওয়াস রুমে ঢুকে পড়লো।

রুবা বিছানায় গিয়ে কাত হয়ে শুয়ে রইল।

মাহি সময় নিয়ে গোসল করছে ! এর মধ্যে ফরিদা বুয়া আর কেয়ারটেকার কুদরত এর ব‌উ লাইলি দুই টা ট্রে তে করে খাওয়া নিয়ে ঢুকলো ।

রুবার কাছে এসে লাইলি বলল, ভাবি আমি আজকা আসলাম বাড়িত থে । দশ দিন পর আইসা ই শুনি আপনে হাসপাতালো।
রুবা তাকিয়ে শুনছে শুধু!
তাড়াতাড়ি ভালা হয়ে যান ভাবি । আফনে এমনে প‌ইড়া থাকলে দেখতে খুব কষ্ট লাগে। আপনে হ‌ইলেন এই বাড়ির জান আপনে কষ্টে থাকলে কিছু ভালা লাগে না। ছোট ভাইজান আপনেরে অনেক ভালা রাখব দেইখেন।

মাহি ঘরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ওরা বের হয়ে গেল !

মাহি চুল ঠিক করছে আর রুবার দিকে তাকিয়ে বলল, কি আবার শুয়ে পড়লে কেন ? রুবা উঠো খাব উঠো, উঠো!
রুবাকে হাত ধরে টেনে উঠালো মাহি তারপর নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিল ।
প্লেটে ভাত বেড়ে নিয়ে বলল কি দিব তোমাকে মাছ না চিকেন ।
রুবা শুধু তাকিয়ে আছে !
কি ব্যাপার তুমি কথা বলছো না কেন? আচ্ছা তুমি সকাল থেকে একটা কথা ও আমার সাথে বলোনি !
তোমার ভোকাল কর্ড এ সমস্যা হয়েছে কি? দেখি হা করো !মাহি হাসছে !
রুবা তুমি না খেলে আমি কিন্তু খাব না বললাম! আমার খুব খিদে পেয়েছে তাও খাব না ।
তোমাকে হাত দিয়ে খেতে হবে না যাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি!
আচ্ছা মাছ টা খাও দেখতে দারুন হয়েছে মাহি বলল!
মাহি প্লেটে ভাত মাছ দিয়ে মেখে রুবার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল ।
রুবা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ! ওর কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে। মাহি কত খেয়াল রাখছে তার।
মাহি বলল, হা করো মুখ খুলো! তুমি ই প্রথম কোন মানুষ যাকে কিছু খাইয়ে দিচ্ছি হাসলো মাহি । ঠিক ঠাক পারবো না হয়তো ! হা করো রুবা।
রুবা হা করলো!
রুবা তাকিয়ে দেখছে ওর জন্য কত কি করছে মাহি!
ওর চোখে পানি চলে আসছে!
রুবার চোখে পানি দেখে মাহি বলল, কি ব্যাপার চোখে পানি কেন ! তাড়কাড়ি ঝাল হয়েছে বেশি , বলে নিজের মুখে ভাত নিল মাহি । কোথায় রান্না তো ঠিক আছে ?
চোখ মুছো আর ঠিক মত লক্ষী মেয়ের মতো খাও!

মাহি বলল,জানো রুবা তোমার রান্না কোন জিনিস টা আমার ভালো লাগে ? ভর্তা !
তোমার নাম দিয়েছিলাম ভর্তা কুমারী ! বলে ই হাসলো মাহি !
তোমাকে বলা হয়নি এই কথা যদি আবার মন খারাপ করো!
তুমি সুস্থ হয়ে আমাকে ভর্তা করে খাওয়াবে যত রকম ভর্তা তুমি পারো ! মনে থাকবে!
হ্যাঁ না কিছু একটা বলো ! কি খাওয়াবে না?
রুবা চোখের পাতা শুধু ঝাকালো! মুখে কিছুই বলল না!
দরজায় নক করার শব্দ হচ্ছে ! মাহি বলল, এসো খোলা দরজা!
মা আর তারানা মামি আসলেন ঘরে !
সাফিয়া বেগম বললেন, খাচ্ছিস তোরা ?
মাহি বলল, মা দেখো তোমার এত বড় মেয়ে কে খাইয়ে দিতে হচ্ছে আমার !
তারানা মামি হেসে বললেন, কোন সমস্যা নাই কখনও কখনও ব‌উ কে মুখে তুলে খাইয়ে দিলে ভালোবাসা বাড়ে মাহি!
মাহি আড় চোখে তাকালো রুবার দিকে !
রুবা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে !
কি ব্যাপার ওর কোন হিলদোল নাই কেন কোন কথায়! মামির কথা শুনে লজ্জা ‌ও পেলো না! মাহি অবাক হচ্ছে !
তারপর তুমিও খেয়ে নাও বাবা সারাদিন কিছুই খাওনি সাফিয়া বেগম বললেন মাহিকে।
মাহি বলল, তোমরা খেয়েছো মা , বাবা খেয়েছে ?
আমাদের খাওয়া শেষ অনেকক্ষণ আগেই ! আর অনেক দিন পর তোর বাবা আমাদের সাথে টেবিলে বসে খেয়েছে! কথাবার্তা তেমন বলেনি কিন্তু আমাদের সবার কাছে বসলো এটাই তো এত দিন পাই নাই!
থেঙ্কস মাহি , সাফিয়া বেগম ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন!
মা তুমি দেখো সব কিভাবে ঠিক হয়!
হাসলেন সাফিয়া বেগম!
তারানা বলল, আচ্ছা তোমরা খেয়ে নাও তারপর রেস্ট নাও, মাহি তো কাল সারারাত জেগে ছিলে!
বড়পা চলেন আমরা যাই !
সাফিয়া বেগম রুবার গালে নিজের গাল ছুঁয়ে বের হয়ে গেলেন।
রুবা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে আর খাবে না ! মাহি বলল, আচ্ছা ঠিক আছে আর খেতে হবে না । পানি খাও , আমি খেয়ে তোমার ওষুধ আছে বের করে দিচ্ছি।

মাহি খাচ্ছে রুবা আগের মতই চুপ করে বসে আছে পাশে !
খাওয়া শেষ করে মাহি , রুবার ওষুধ বের করে দিল ।রুবাকে বলল,
চলো ঘুম দেই একটা খুব ক্লান্ত লাগছে !
রুবা উঠে বিছানায় এসে বসলো!

মাহির ফোন বাজছে , ডাঃ রিয়াদের ফোন !
হ্যালো ভাই
মাহি কি অবস্থা ? সব কিছু ঠিক ঠাক?
জ্বি ভাই আলহামদুলিল্লাহ।
রিয়াদ বলল, তোর দুই সপ্তাহের ছুটি হলেই হবে তো ?
মাহি বলল, হবে ভাই থেঙ্কস !
রিয়াদ বলল, বারবার কিসব নাটক সিনামার মত থেঙ্কস দেস !
মাহি কথা বলতে বলতে রুমের বাহিরে আসলো, ভাই রুবা সকালে উঠার পর থেকে কারো সঙ্গে কোন কথা বলছে না ! একেবারে চুপ ! বাসায় আসার পর মা এত কান্নাকাটি করলো তবু তার কোন এক্সপ্রেশন নেই আমার তো কেমন জানি লাগছে !
রিয়াদ বলল, চিন্তা করিস না ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ । তুই বেশি বেশি সময় দে একা রাখিস না ।
ঠিক আছে ভাই ।
ফোন রেখে মাহি ঘরে ঢুকে দেখে রুবা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।মাহি ওর মাথায় হাত রাখল । তারপর ফোনের রিংটোন অফ করে শোফায় এসে শুয়ে পড়লো!
ক্লান্ত মাহি কিছুক্ষণ এর মধ্যে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল ।

ফোনের ভাইব্রেশন এর আওয়াজে মাহির ঘুম ভেঙ্গে গেল সন্ধ্যায় । ভো ভো করছে টেবিলে ফোনটা। হাতে নিয়ে দেখে
ফোন দিয়েছে ওর বন্ধু ওয়ালী !
মাহি ফোন রিসিভ করার আগেই কেটে গেল ।
সারাঘর অন্ধকার । সন্ধ্যা হয়ে গেছে কখন!
সোফার পাশের ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে দিল মাহি।
রুবা ও উঠে গেছে !
মাহি একটা হাসি দিল ওর দিকে তাকিয়ে ।
কখন উঠলে তুমি , রুবাকে বলল!
দেখো কত সময় পার হয়ে গেছে !
চলো রুম থেকে বের হ‌ই চা খেয়ে আসি ! উঠো রুবা!
তারপর তোমাকে একটা দারুন জিনিস উপহার দিব আজকে!
যাও ফ্রেশ হ‌ও তারপর আমরা চা খেতে লিভিং রুমের দিকে যাব লক্ষী মেয়ে কথা শুনো।

রুবা বাধ্য মেয়ের মত উঠে গেলা।
মাহি ওয়ালী কে কল দিল,
হ্যালো দোস্ত কি অবস্থা?
ওপাশ থেকে ওয়ালী বলল,
আমি আজকে অফ নিসিলাম তাই ডিউটি ছিল না একটু আগে রিয়াদ ভাই বলল রুবার কথা!
মোলার প্রেগন্যান্সি ছিল যা হবার তাই হয়েগেছে ন্যাচারাল এবোরশন , মাহি বলল!
ওয়ালী বলল, এখন কি অবস্থা?
এখন ট্রমার মধ্যে আছে , আশাকরি ঠিক হয়ে যাবে !
ঠিক আছে কোন দরকার লাগলে ফোন দিস দোস্ত, ওয়ালী বলল।
ঠিক আছে !
ফোন রেখে মাহি চোখে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুবাকে নিয়ে লিভিং রুমের দিকে গেল।

চা খেলো মাহি !
রুবা কিছু খেলো না । চুপচাপ সবার কাছে বসে রইল।
মাহি রুবার কাছে এসে বলল , তুমি এখানে বসো আমি আসছি একটু।
সাফিয়া বেগম বললেন , রুবা এখানে বসো রিয়া, নিঝুম আর শ্রুতি দের আসতে বলেছি সবার সঙ্গে কথা বলো , গল্প করো ভালো লাগবে!

একটু পর ফরিদা বুয়া রুবাকে এসে বলল , ভাবি ভাইজান আপনেরে সামনের ছাদে যাইতে ক‌ইছে!

রুবা অবাক হলো !
বুয়া বলল, আমারে ক‌ইছে আপনেরে ধ‌ইরা ধ‌ইরা নিয়ে যাইতে।
সাফিয়া বেগম বলল, যাও রুবা ! দেখো কেন ডাকছে ?
ফরিদা ধরে নিয়ে যাও!
রুবা উঠে গেল!

পোর্চের উপর খুব সুন্দর বাগান করেছেন সাফিয়া বেগম যেটা দোতলায় তার ছেলেদের ঘরের সামনে ।
সেখানে বসার সুন্দর এরেন্জমেন্ট করা আছে! এই জায়গাটা রুবার অনেক পছন্দ। শিহাবের সঙ্গে এখানে বসে গল্প করতো। শ্বাশুড়ির সঙ্গে বিকেলে এখানে বসে চা খেতো।

রুবা সেখানে গিয়ে দেখে মাহি তার ভায়োলিন নিয়ে বসে আছে !
এগিয়ে এসে রুবার হাত ধরলো মাহি!
ফরিদা চলে গেল সঙ্গে সঙ্গে !

মাহি রুবাকে নিয়ে বসিয়ে দিল চেয়ারে ।
তারপর অনেক দিন পর ভায়োলিন বাজাতে শুরু করলো!
রুবা কে বলল, শুধু তোমার জন্য এই গানটা।

ঠিক তখনই নিচে মাহির নাহার খালা র গাড়ি এসে থামলো।
তিনি তার মেয়েদের সহ এসেছেন!
গাড়ি থেকে নামতেই নিঝুম শুনতে পেল মাহির ভায়োলিন এর আওয়াজ।
মাহি তার সবচেয়ে প্রিয় গানটা বাজাচ্ছে !

” হামে ওর জিনে ক্যা চাহাত না হোতি
আগার তুম না হোতি……..”

নিঝুমের বুকের ভেতর ধাক্কা র মত লাগলো ।
রিয়া বলল, মাহি বাজাচ্ছে তাই না ! ওর ব‌উয়ের জন্য, হাউ রোমান্টিক! চল তাড়াতাড়ি উপরে! রিয়া চলে গেল উপরে!

নিঝুম উপরে উঠলো না পোর্চের ঠিক পাশে নিচে গিয়ে একটু অন্ধকারে দাঁড়িয়েছে এখান থেকে মাহি কে দেখা যাচ্ছে উপরে !
ওর গা হাত পা অবশ হয়ে আসছে!
চোখ দিয়ে পানি পড়ছে !
কি কথা ছিল রে মাহি, আমাদের বিয়ের রাতে তুই আমাকে সারা রাত ভায়োলিন বাজিয়ে শুনাবি! আজকে ঠিকই তুই ভায়োলিন বাজাচ্ছিস , কিন্তু সেটা আমার জন্য না ! আর কারো জন্য ! তোর ব‌উ অন্য কেউ!
আমাকে সেটা দেখতে হচ্ছে!
এখান থেকে যে ফিরে যাব সেই উপায় ও নেই আমার! সবাই হাজার টা প্রশ্ন করবে । তাই তো বারবার ফিরে ফিরে তোর সামনেই আসতে হয় । তোকে অপ্রস্তুত হয়ে যেতে দেখতে হয়!
আর আমি ও যে তোর থেকে দূরে যেতে পারি না! কেন জানি আরো বেশি তোর কাছে আসতে ইচ্ছে করে !
দেয়ালে পিঠ ঠেকে কাঁদছে নিঝুম !
কষ্টে তার বুকটা ভেঙে যাচ্ছে!
ইচ্ছা করছে দৌড়ে গিয়ে মাহির বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে!

কিন্তু হয় না রে সব ইচ্ছা সবার পূরণ হয় না । আমার আর তোর পথ বেঁকে গেছে। মাহি তোর গন্তব্য এখন রুবা তোর সুর সব রুবার জন্য আমার জন্য কিছুই না !

নিঝুম এর সামনে কেয়ারটেকার কুদরত ভাই দাঁড়িয়ে আছে !
কুদরত জিজ্ঞাসা করল, আফা কিছু খুঁজতে ছিলেন?

নিঝুম নিজেকে সামলে বলল, না ফোনে কথা বলছিলাম বলেই উপরের দিকে রওনা দিল, তার আগে নিজের চোখ মুছে ঠিক করে নিলো!

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here