#যখন_দুজনে_একা
১৬ পর্ব
রুবা মাহির বাড়িয়ে দেয়া কাপ নিয়ে চুমুক দিল।
মাহি বলল, চিনি ছাড়া চা ।
রুবা বলল, তুমি তো সব সময়ই চিনি ছাড়া চা খাও আমি জানি!
রুবা তুমি আমার ব্যাপারে কি কি জানো?
তোমার ব্যাপারে তোমার ভাইয়া সব বলতো । তুমি ওর জান !
মাহি চুপ হয়ে আছে !
এই বাড়িতে যখন থেকে এসেছি তোমাকে দেখতাম তুমি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত নয়তো হসপিটাল নিয়ে। তোমার শত ব্যস্ততার মাঝেও তোমরা দুই ভাই একে অপরের সাথে সময় কাটাতে , রুবা বলল! তোমার রাগ ও অনেক বেশি!
তাই রুবা তোমার মনে হয় আমার রাগ বেশি? মাহি হাসলো।
রুবা বলল, হুঁ।
তুমি অনেক গান শুনতে পছন্দ করো । গান তো তোমরা দুই ভাই ই খুব ভালো গাও ।
মাহি বলল , সব চেয়ে ভালো গান কে গায় জানো রুবা বাবা !
রুবা বলল, জানি ।
অনেক দিন আগে বাবা বারান্দায় বসে মা কে গান শোনাচ্ছিল আমি শুনে ফেলেছি! বলে হাসলো রুবা।
বাবা মা কিন্তু খুব রোমান্টিক জানো রুবা?
রুবা হাসলো শুনে।
মাহি বলল, আমি আবার আগের মত ওদের করে তুলব দেখো।
তুমি দেখো রুবা এই বাড়িটা আগের মত হবে ।
রুবা তুমি আমাকে হেল্প করবে প্রমিজ করো।
তুমি নিজের যত্ন নিবে , মাহি রুবার দিকে তাকিয়ে বলল।
রুবা মাথা নেড়ে সায় দিল।
রুবা বেডে হেলান দিয়ে বসে কথা শুনছে মাহির!
মাহি ওর পাশেই শুয়ে শুয়ে গল্প করছে।
ফরিদা বুয়া দরজায় নক করলো ।
রুবা বলল, আসো বুয়া !
চায়ের মগ রুবার হাতে তুলে দিয়ে ফরিদা বলল,
আম্মা জিজ্ঞাসা করতে বলছে এখন কিছু খাইবেন কিনা ?
মাহি বলল, আমি খাব না তোমার ভাবির জন্য ডিম দুইটা আনো পোস ওর প্রেসার কমে গেছে !
রুবা সঙ্গে সঙ্গে বলল, ইয়াক আমি পোস খেতে পারি না গন্ধ লাগে । আর দুটো তো অসম্ভব!
মাহি বলল, সিদ্ধ খেতে পারো তো সেটাই আনুক !
ফরিদা বুয়া বলল, আইচ্ছা সিদ্ধ ডিম আনতাছি। বলে চলে গেল ।
রুবা চায়ের মগে চুমুক দিলো!
মাহি বলল, আমার জন্য রেখো!
রুবা বলল, উঠে বসো তুমি আর এটা কিন্তু চিনি দেয়া চা !
মাহি বলল , সমস্যা নাই তোমার চিনি চা খেয়েই দেখি আজ ।
রুবা দুই চুমুক দিয়ে মাহির দিকে বাড়িয়ে দিল মগ।
মাহি রুবার চায়ে চুমুক দিল!
তার মোবাইল এর মেসেজ টোন বেজে উঠেছে!
মাহি মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে নিঝুম মেসেজ দিয়েছে। মেসেজ না পড়েই রেখে দিল ফোন ।
চায়ের মগে চুমুক দিচ্ছে মাহি কোন কথা বলছে না ।
রুবা বলল, আমার ঘুম কাটছে না কেন ?
মাহি কোন উওর দিল না ।
রুবা বলল, শুনছো ?
হু কি বলছিলে খেয়াল করি নাই, মাহি বলল?
বললাম, আমার ঘুম কাটছে না ।
কালকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি তোমাকে তাই । এক কাজ করো ঘুমাও । তোমার তো কোন কাজ করতে হচ্ছে না !
রুবা বলল, ঘুমের ইনজেকশন কেন দিতে গেলে ?
ঘুমের ইনজেকশন কেন দিতে গেলাম , নিজের জান বাঁচাতে ! যে মারামারি শুরু করেছিলে আমি তো ভয়েই শেষ! রিতিমত কুস্তি করতে হয়েছে এর রেজাল্ট তো আমার শরীরে দেখলেই !
রুবা লজ্জা পেলো !
মাহি বলল, তুমি ঘুমাও রুবা আমারও ঘুম পাচ্ছে !
এখন ইচ্ছা করছে না , রুবা বলল !
আর একটা কথা আমি যতক্ষন ঘুমাব তুমি বেড থেকে নামবে না ! কোথাও যাবে না প্রমিজ করো!
ওয়াস রুমে যাব না ? আবাক হয়ে রুবা বলল ।
মাহি বলল,যাবে তার আগে আমাকে ডাকবে ।
রুবা বলল, আচ্ছা ঠিক আছে ।
মাহির মোবাইল এ আবার মেসেজ আসছে !
মাহি দেখার প্রয়োজন ই বোধ করলো না !
মাহি মোবাইল নিয়ে উঠে বসলো বেডে , তারপর রিয়াদ কে কল দিল !
রিং হচ্ছে , রুবার দিকে তাকিয়ে বলল আমি একটু রিয়াদ ভাইয়ের সাথে কথা বলে আসছি। বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল ।
রিয়াদ ওপাশে ফোন ধরেই বলল , মাহি আমি ভাবছিলাম তোকে ফোন দেই !
মাহি বলল, বলেন ভাই ?
না আগে তুই বল কেন ফোন দিলি ?
মাহি রাতের সব ঘটনা খুলে বললো । সকালে অসুস্থ হয়ে গেল রুবা সেটাও বলল।
রিয়াদ শুনলো মনোযোগ দিয়ে ! তারপর বলল,
মাহি তুই খুব চোখে চোখে রাখ রুবাকে ! এখন কি অবস্থা ?
ভাই এখন তো খুবই নরমাল ! আমি সেটাতেও অবাক হচ্ছি !
ওকে একা রাখিস না মাহি এরকম সময় মুড খুব ঘন ঘন সুইং হয় । এই ভালো আবার খারাপ হতেও সময় লাগে না, রিয়াদ বলল।
আর সাইকোলজিস্ট ইফতেখার ভাইয়ের সাথে কথা বলবি ? একটু বলে দেখ !
ঠিক আছে ভাই কথা বলব দেখি!
আচ্ছা আর একটা কথা নিঝুমের কি হয়েছে জানিস , খুব কাঁদছিল দেখলাম! কাউকে সেভাবে কিছু বলছেও না ?
মাহি বলল, ওকে নিয়ে পরে কথা বলি ভাই !
ঠিক আছে রাখলাম মাহি বলে ফোন কেটে দিল রিয়াদ।
মাহি নিঝুমের মেসেজ গুলো দেখলো।
লিখেছে, সরি সরি প্লিজ ফর গিভ মি !
আরো একটা মেসেজ দিয়েছে, ইফ ইউ ডোন্ট ফর গিভ মি আই স্যাল ডাই মাহি …… প্লিজ!
মাহি মেসেজ ডিলিট করে দিল সব ! তারপর ফোন গ্যালারি তে গিয়ে তার আর নিঝুমের এলবাম ডিলিট করে দিয়ে মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো!
বুয়া তাদের রুমের দিকে ট্রে তে করে রুবার জন্য ডিম, ফ্রুট বাস্কেট নিয়ে আসছে !
ওকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল !
মাহি বলল , যাও ভেতরে!
মাহি রুমে ঢুকে দেখে রুবা আবার ঘুমিয়ে গেছে !
মাহির খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে ! কিন্তু রুবা র খারাপ লাগবে ভেবে বাদ দিল!
বুয়া কে বলল, কুদরত ভাই কে বলো মায়ের ঘরে যেমন কলিং বেল আছে সেরকম একটা এ ঘরের জন্য কিনে আনতে ! এখান থেকে ডাকলে শোনো না তোমরা !
ফরিদা ঠিক আছে বলে দরজা চাপিয়ে চলে গেল!
মাহি দরজা লক করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল । তার ও খুব ঘুম পাচ্ছে !
রুবা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে!
মাহি রুবার দিকে তাকিয়ে আছে । ওর মুখ চোখ এখনো ফোলা!
রুবাকে দেখতে দেখতে ই ঘুমিয়ে গেল মাহি !
বিকেলে মাহির ফোনের শব্দে রুবার ঘুম ভেঙ্গে গেল । মা ফোন দিচ্ছে !
রুবা রিসিভ করল , হ্যালো মা বলেন!
সাফিয়া বেগম বললেন, রুবা মা তোমার শরীর কেমন এখন ? মাহি কোথায়?
রুবা বলল, আমি ঠিক আছি মা ঘুমাচ্ছিলাম । ও তো ঘুমাচ্ছে মা !
অনেক বেলা হয়ে গেছে মাহি সকালেও কিছু খেলো না ! খাবে না তোমরা ?
আমি ডাকছি মা ওকে ,বলল রুবা।
ঠিক আছে বলে সাফিয়া বেগম ফোন রাখলেন!
রুবা মাহি কে ডাকলো, এই ওঠো ! দুই বার মুখে ডেকে তারপর হাতে ধাক্কা দিল ! ওঠো ।
মাহি চোখ বন্ধ রেখেই বলল, ধাক্কা দিও না হাতে ব্যথা ।
রুবা বলল, কিভাবে ?
কিভাবে , কালকে একটা ভূতে কিলিয়েছে আমাকে বলে চোখ খুলল মাহি!
রুবা অবাক হয়ে বলল , সিরিয়াসলি এত ব্যথা হচ্ছে ?
মাহি হেসে বলল , একটু লেগেছে ব্যাপার না ঠিক হয়ে যাবে !
আমার খুব খারাপ লাগছে , রুবা মাথা নিচু করে বলল!
ঠিক আছে মন খারাপ করো না, কয়টা বাজে রুবা বলে ঘড়ির দিকে তাকালো মাহি !
ও মাই গড রুবা বিকেল হয়ে গেছে তোমার ওষুধ ছিল দুপুরে মাহি বলে উঠলো!
মা তোমার মোবাইল এ ফোন দিয়েছিল !
তুমি কিছু ই খাওনি সকাল থেকে !
হুঁ ইচ্ছা করছিল না , কিন্তু এখন খিদে পেয়েছে খুব মাহি বলল!
আমি গিয়ে নিয়ে আসি খাবার , রুবা বলল?
মাহি বলল, অসম্ভব কোথাও যাবে না তুমি ! লোকজন আছে ওরাই আনবে!
মাহি বাথরুমে ঢুকলো !
রুবা বেড থেকে নেমে দাঁড়াল মাথা ভাড় লাগছে তার ! আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ! ওমা চেহারা কি হয়ে আছে ! শরীর কেমন দুলছে তার । এমন সময় মাহি এসে দাঁড়ালো রুমে!
মাহি বলল, উঠে আসলে যে ওয়াস রুমে যাবে?
রুবা বলল, যাব কিন্তু দাঁড়াতে পারছি না শরীর কেমন দুলছে !
মাহি এসে ধরলো ওকে , পারবে যেতে একা রুবা?
রুবা বলল, পারব !
মাহি ফোন হাতে নিয়ে বসলো ।
সাইকোলজিস্ট ডঃ ইফতেখার ভাই কে ফোন দিল !
উনাকে সব ঘটনা খুলে বলার পর উনি বললেন, তুমি একটু বেশি সময় দাও আর ওকে একটু স্প্যাশল ফীল করাও সব কিছুতে । এসব ক্ষেত্রে হাজবেন্ড আর কাছের মানুষের ভালোবাসা টা খুব ইফেক্টিভ হয় !
আর নেক্সট কিছু অস্বাভাবিক করলে আমার কাছে নিয়ে এসো!
ফোন রেখে মাহি ওয়াস রুমে র দরজায় এসে ডাকলো, রুবা ইজ এভরিথিং ওকে ?
রুবা বলল, ঠিক আছি ।
রুবা সেলোয়ার কামিজ চেন্জ করে এসেছে । সবুজ রঙের একটা হাতের কাজের ড্রেস পড়েছে!
মাহি মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখছে । আজ আর চোখ নামিয়ে নিল না ! তাকিয়ে ই আছে !
রুবা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ে এক পাশে একটা বেনী করলো!
অনেক দিন পর সে নিজে এসব করছে । শিহাব যাওয়ার পর তার চুল আঁচড়ে দিতো বুয়া রা কেউ ! ওর কিছুই করতে ইচ্ছে করতো না !
আজ নিজেই করলো!
মাহি পুরো সময় টা রুবা র দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে !
রুবা হঠাৎ প্রশ্ন করলো , কি দেখছো কিছু বলবে ?
মাথা নেড়ে না করলো মাহি!
তাকিয়ে আছো যে , রুবা বলল?
এমনি তাকিয়ে আছি!
মাহি মনে মনে ভাবলো , এই মুখটা কে দেখে খারাপ চিন্তা কারো আসবে ! কিভাবে বলতে পারলি রে নিঝুম ! আমার তো ওকে দেখে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে এখন !
তুই আমার ভেতরটা কে এভাবে নাড়িয়ে দিলি নিঝুম!
দীর্ঘ শ্বাস ফেলল মাহি !
কি ব্যাপার এভাবে তাকিয়ে আছো আবার বলছো তুমি কিছু বলবে না , রুবা প্রশ্ন করল!
মাহি রুবার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল ।
রুবা মাহির বাড়িয়ে দেয়া হাত ধরলো !
মাহি ওকে সোফায় বসিয়ে দিল ।
তারপর বলল, আমার মনে হচ্ছে তুমি পড়ে যাও যদি তাই দেখছি !
রুবা এখানে বসো আমি খাবার দিতে বলি , মাহি বলল।
সন্ধ্যায় মাহি রুবাকে ধরে ধরে পোর্চের উপর বাগানে নিয়ে এসে বসিয়ে দিল ! দুজন ওখানে যখন বসে ছিল
তখন দূর থেকে ওদের দেখছিলেন সাফিয়া বেগম আর আজগর সাহেব ! সাফিয়া বেগম বলল, আমার ডিসিশন ঠিক ছিল মাহির বাবা ! তোমার ছেলে সুখে থাকবে দেখো ও কি যে যত্ন করছে রুবাকে না দেখলে তুমি বিশ্বাস করবে না !
আমি ওদের দুটোর জন্য সারাক্ষণ দোয়া করি ওরা যেন তাড়াতাড়ি নিজেদের দূরত্ব টা কমিয়ে ফেলে !
আজগর সাহেব বললেন, মাহি সব ঠিক করে দিবে সাফিয়া ! তুমি চিন্তা করো না ! আমি কল্পনা ও করি নাই আমাদের মাহি এত বুঝদার এত বড় কবে হয়ে গেল!
আমরা আসলেই ভাগ্যবান বাবা মা আল্লাহ আমাদের এত ভালো দুটো সন্তান দিয়েছেন!
সাফিয়া বেগম আজগর সাহেব এর হাত টা ধরলেন! অনেক দিন পর আজগর সাহেব ও নিজের স্ত্রীর হাত শক্ত করে ধরলেন!
আজগর সাহেব বললেন , চলো ভেতরে যাই ওরা থাকুক ওদের মতো!
সাফিয়া বেগম আঁচল দিয়ে চোখ মুছলেন।
রুবা ।
বলো ?
তোমার বন্ধু বান্ধবী দের সাথে যোগাযোগ করো না ?
রুবা বলল, আমার এত বেশি বন্ধু বান্ধব নাই দুই জন বান্ধবী আছে ওরাই শুধু! আর ইদানিং যোগাযোগ আমিই রাখি নাই!
একটা জিনিস কি জানো , বেশি সুন্দরী মেয়েদের বেশি বন্ধু থাকে না মাহি বলল।
রুবা বলল , কেন?
লোকজন ওদের হিংসে করে বন্ধু হতে চায় না তাই।
রুবা বলল, তাই বুঝি!
কেন তোমাকে তোমার বান্ধবী রা হিংসে করে না ? মাহি বলল।
না হিংসে করবে কেন ? আশ্চর্য !
মাহি উঠে এসে রুবার সামনে ঝুঁকে বলল, তুমি যে সুন্দর তোমাকে যে কেউ হিংসে করার কথা !
রুবা , যাও বলে হেসে উঠলো ।
মাহিও হাসছে !
আচ্ছা চলো রুমে যাই গরম লাগছে এখানে ! মাহি বলল!
রুবা উঠে দাঁড়ালো ! ওর হাত ধরলো মাহি!
রুমে ঢুকে মাহি দেখে ফোনে নিঝুমের অনেক গুলো মিসডকর!
মাহি বিরক্ত হলো !
নিঝুম, যে অপমান তুই আমাকে আজ করেছিস তারপর আমাদের আর কোন কথা থাকতে পারে না !
নিঝুম আবার ফোন করলো , মাহি কেটে দিলো!
মাহি শুধু এখন রুবাকে নিয়ে ই ভাবতে চায় ! ওর জীবনে আর কেউ নেই । নিঝুমের জন্য যে খারাপ লাগা, কষ্ট টা ছিল আজ সকালে নিঝুম সেটা কবর দিয়েছে নিজের হাতে!
রুবা বলল, তোমার কি খারাপ লাগছে মুখ টা এমন দেখাচ্ছে কেন ?
মাহি বলল, মাথা ব্যথা করছে ! শুয়ে থাকি একটু । মাহি চোখ বন্ধ করে সোজা হয়ে শুয়ে আছে ।
রুবা মাহির পাশে এসে বসলো বেডে ! ঘরের আলো কমিয়ে দিলো সে । বেশি আলো কষ্ট দেয় মাইগ্রেন এ ।
রুবা মাহির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ! হাত টা রাখলো মাহির মাথায় ! কেন জানি তার খুব অস্থির লাগছে মাহির কষ্ট দেখে ! ঝুঁকে মাহির কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, মাথায় বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে তোমার ?
মাহি চোখ মেলে বলল , হুঁ!
হাত বুলিয়ে দেই ভালো লাগবে?
মাহি বলল, থাক । মনে মনে বলল, মাথায় কোন যন্ত্রনা নেই। আমার বুকের ভেতরে বেশি কষ্ট রুবা , তোমাকে কিভাবে বলি সেটা ! মাহির চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি বেয়ে পড়ছে !
রুবা র মাহির জন্য বুকের ভেতরে কেমন অস্থির লাগছে ! ওর কষ্ট দেখে এত খারাপ লাগছে সে ছুটে বের হয়ে গেল রান্নাঘরে র দিকে !
ওকে দেখে দুই বুয়া অবাক হয়ে গেল !
ভাবি গো আপনে উইঠা আইলেন ক্যারে ? কি লাগবো !
রুবা বলল, আদা দাও আছে?
ফরিদা বলল, আছে কিন্তু কি করবাইন ভাবি?
রুবা বিরক্ত হয়ে বলল, আগে বের করো।
ফরিদা আদা বের করে দিল । ভাবি আম্মা যদি দেখে আপনে রান্না ঘরে আমার জান শেষ ! কি লাগব আমি বানায় দেই?
চায়ের পাতিল কোথায় বুয়া?
লাইলি বলল, এই যে পাতিল আমি চা বানাই !
রুবা বলল, না আমি করব সরো তোমরা !
ভাইজান কই, আল্লাহ জানে আইজ আমরার কপালে কি আছে ? লাইলি বলল।
রুবা মাহির জন্য আদা চা বানালো । মাইগ্রেন এ আদা চা আরাম দেয় । ও সব সময় তার বাবাকে বেশি করে আদা দিয়ে চা বানিয়ে দিতো মাথা ব্যথা করলে।
তাড়াহুড়া করতে গিয়ে গরম চা ছাকার সময় নিজের পায়ে ফেলে দিল রুবা !
ও চিৎকার দেয়ার আগেই দুই বুয়া চিৎকার দিয়ে ঘর মাথায় তুলল!
সাফিয়া বেগম ছুটে আসলেন রান্না ঘরে !
রুবাকে দেখে তিনি তো আকাশ থেকে পড়লেন! কি হয়েছে ? রুবা এখানে কেন ?
রুবা চুপ করে আছে !
ফরিদা চিৎকার করে বলল, আম্মা ভাবির পাও গরম চা পড়ছে !
কি ? সাফিয়া বেগম চিৎকার দিয়ে উঠলো !
লাইলি বরফ বের করে রুবার পায়ে ধরলো !
সাফিয়া বেগম বললেন, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ও এই শরীর নিয়ে রান্না ঘরে কি করছে ? মাহি বাসায় নেই কোথায় সে? সাফিয়া বেগম উত্তেজিত হয়ে বললেন।
মা প্লিজ প্লিজ ওকে কিছু বলবেন না মা !
রুবাকে ধরে ধরে ওরা চেয়ারে বসালো !
এখন বলো তো রুবা ঘটনা কি , সাফিয়া বেগম প্রশ্ন করলো?
ওর খুব মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে মা আমি তাই আদা চা করতে এসেছিলাম !
মাহির মাথা ব্যথা?
রুবা বলল, হুঁ!
তুমি এখানে মাহি জানে , ও কোথায় ?
মা ও চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে!
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাফিয়া বেগম বললেন, তুমি না রুবা আমাকে ছেলের কাছে বকা খাওয়াবা ! ও জানলে কি করবে জানো?
আমার ভয় করছে মা !
আম্মা ভাবির পা অনেক টা পুড়ছে , লাইলি বলল !
বাসায় বার্নল আছে ?
ফরিদা বলল, না আম্মা !
কুদরত কে আনতে পাঠাও শিঘ্রই !
লাইলি নিচে দৌড় দিল !
পেস্ট আনো ফরিদা !
সাফিয়া বেগম পেস্ট লাগিয়ে দিলেন রুবার পায়ে নিজে হাতে ! বললেন , যাও এখন রুমে তোমাকে না দেখলে আবার অস্থির হবে আরেক জন !
সাফিয়া বেগম মিটিমিটি হাসছেন !
ফরিদা রুবাকে রুমে দিয়ে আসো !
মা আপনি ওকে বলবেন না কিন্তু !
আমার ছেলে এমনি টের পাবে যাও এখন তাড়াতাড়ি , পাগল একটা মেয়ে।
রুবা পা টিপে টিপে রুমে ঢুকলো !
ফরিদা ফিসফিস করে বলল, বেশি কষ্ট হইতাছে ভাবি ?
রুবা বলল, হুঁ ।
আমি ওষুধ নিয়া আসতাছি আপনে চুপ কইরা শুইয়া থাকেন যান !
ফরিদা বের হয়ে গেল ।
রুবা সাবধানে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল !
রুবার নড়াচড়া তে মাহির তন্দ্রা ভেংগে গেল ।
রুবা চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করলো!
মাহি উঠে বসল !
তারপর ঘর থেকে বের হয়ে কুদরত কে ফোন দিল সিগারেট আনার জন্য ! ততক্ষন সে পোর্চে বসে রইল চুপচাপ।
বেশ অনেকক্ষণ পর কুদরত সিগারেট নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে দেখে মাহি সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল !
মাহিকে এগিয়ে যেতে দেখে ফরিদা আর লাইলি দৌড় দিয়ে পালালো রান্নাঘরে !
কুদরত সিগারেট এর প্যাকেট আর বার্নল দুটোই মাহির হাতে দিল !
মাহি অবাক হয়ে বলল, বার্নল কেন?
কুদরত বলল, লাইলি কইলো ভাবির পায়ে চা বানাতে গিয়া গরম চা পড়ছে ! পা পুইড়া গেছে।
মাহি অবাক হয়ে বলল
!
রুবার ?
হ ভাইজান !
ঠিক আছে তুমি যাও!
মাহি বার্নল হাতে নিয়ে রুমে র দিকে রওনা হলো !
ফরিদা দৌড় দিল সাফিয়া বেগম কে খবর দিতে !
মাহি নিজের ঘরে এসে ঢুকলো । রাগে তার গা জ্বলছে ! রুবা চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে আছে।
মাহি রুবার পায়ের দিকে তাকালো । পেস্ট লাগানো পায়ে দেখেই বোঝা যাচ্ছে পা পুড়েছে !
সে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ!
ঠিক তখনই সাফিয়া বেগম নক করে ঘরে ঢুকলেন !
মাহি বাবা কিছু বলিস না বলে হেসে দিলেন সাফিয়া বেগম !
মা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ঘটনা কি ?
তোর মাথা ব্যথা করছে দেখে ও গেছে আদা চা করতে ! নিজে করবে ওদের ধরতে দেই নাই।
তাড়াহুড়া আর ঠিক মত দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই কাঁপছে শরীর যথারীতি চা ফেলেছে পায়ে । অনেক টা পুড়েছে ! কষ্ট পাচ্ছে।
এই যে আর ঘুমের ভান করতে হবে না উঠেন ওষুধ লাগান সাফিয়া বেগম রুবার উদ্দেশ্যে বললেন!
রুবা উঠে বসলো ! মাহি তাকিয়ে আছে ওর দিকে !
আমি গেলাম তুই তোর পাগল সামলা বাবা বলে সাফিয়া বেগম হাসতে হাসতে বের হচ্ছেন ।
রুবা বলল, মা আপনি যাবেন না ও বকবে মা !
মাহি ধমক দিল , চুপ !
সাফিয়া বেগম ওদের রুম থেকে বের হয়ে এলেন, অনেক দিন পর আনন্দে তার চোখ ভিজে গেল !
মাহি রুবার দিকে তাকালো চোখ গরম করে !
রুবা মুখ ফিরিয়ে নিল অন্য দিকে !
রুবার পায়ের কাছে এসে ফ্লোরে বসলো মাহি ! রুবা পা সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে!
মাহি শক্ত করে চেপে ধরল পা ।
আহ লাগছে !
একদম চুপ রুবা ! ধমক দিল মাহি।
মাহি বার্নল বের করল , ইস এতটা পুড়েছে !
আগে বলো রুবা আমি চা খেতে চেয়েছি ? আর তুমি কেন বানাতে গেছো ? বাসায় লোকজন নেই?
তোমার মাথায় ব্যথা হচ্ছিল তাই !
আমার মাথায় ব্যথা বলেই এই শরীর নিয়ে তোমাকে যেতে হবে চা বানাতে ? মাহি বলল!
আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিল তোমার কষ্ট দেখে , রুবা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে ফেলল কথা টা !
মাহি কেঁপে উঠলো রুবার কথায় ! রুবার মুখে কথাটা শুনে মাহির সমস্ত শরীর ঝিমঝিম করে উঠলো।
মনে মনে বলল , আমার তো মাথায় কিছু হয়নি মিথ্যা বলেছি মাথা ব্যথা। আমার কষ্ট ছিল মনের ভেতর রুবা তাও অন্য কারো দেয়া । আর তুমি অস্থির হচ্ছো ?
আমার কষ্ট হলেই কি রুবা ? মাহি বলল।
রুবা বলল জানি না !
রুবার পায়ে বার্নল লাগিয়ে ওর পা টা মাহি নিজের বুকে চেপে ধরলো ।
কি সুন্দর পা টা এভাবে পুড়লে তুমি ! পা ও কারো এত সুন্দর হয় ! মাহি রুবার দিকে তাকিয়ে বলল ।
ইসস ছাড়ো পা !রুবা লজ্জা পেয়ে বলছে !
ছাড়বো না আজ তুমি বলবে কেন তুমি এত কষ্ট পেলে !
মা কে ডাকবো কিন্তু ! রুবা বলল ।
ডাকো আমার সমস্যা নাই !
মা….
আরো জোরে ডাকো মাহি বলল,
আজ বলতেই হবে ! আমি পা ছাড়ছি না ! দেখো ।
এই রাতে দুজন কষ্ট পেয়ে অস্থির মাহির জন্য একজন মাহির কষ্ট দেখে আরেক জন মাহি কে কষ্ট দিয়ে…..
মাহি হেসে বলল,
রুবা তুমি বলবে আজ দাড়াও ! কালকে রাতে তুমি পাগলামী করছো আজ দেখো আমি কি করি ?
( চলবে)