যখন দুজনে একা পর্ব-১৮

0
3416

#যখন_দুজনে_একা
১৮ তম পর্ব

ডিনার করে বাবা মায়ের সাথে সময় কাটিয়ে ওরা দুজন যখন রুমে ঢুকলো তখন ঘড়িতে পৌনে বারোটা । মাহি রুবাকে ওষুধ খেতে দিয়ে বলল, কালকে দুপুরের দিকে আমার একটা কাজ আছে এখনো কর্নফাম না আমি বাসায় না থাকলে তুমি কিন্তু আবার উল্টোপাল্টা কাজ করা শুরু করো না ।
আমি আবার কি উল্টোপাল্টা কাজ করি?
রুবা তুমি আজ যা দূর্ঘটনা ঘটালে মা এসে পড়লো তাই কিছু বলি নাই , আমি কিন্তু খুব রেগে গিয়েছিলাম !
রুবা বলল, সব‌ই ঠিক ছিল হাতটা কেঁপে চা টা পড়ে গেল এই যা আর কি!
তাই না রুবা ?
এটাই আর করো না !
তুমি কি হসপিটালে যাবে ?
না রুবা একজনের সাথে দেখা করতে যাব !
ও আচ্ছা!
মাহি বিছানায় এসে রুবার পাশে বসতে বসতে বলল একটা অনুমতির দরকার ছিল তোমার কাছে!
কিসের অনুমতি , রুবা জানতে চাইলো ?
সোফায় ঘুমিয়ে আমার অভ্যাস নেই কয়দিন ঘুমিয়ে আমার পিঠ ব্যথা হয়ে গেছে ! তুমি অনুমতি দিলে আমি বিছানায় ঘুমাতে চাই !
রুবা অবাক হয়ে বলল, এর জন্য আমার অনুমতি লাগবে ? তোমার ঘর, তোমার বেড !
তারপরও লাগে !
রুবা বলল তুমি এখানে ই ঘুমাতে পারো !
মাহি খুশি হয়ে বলল, থেঙ্কস!
মাহি বলল আর একটা অনুমতি লাগবে !
রুবা হেসে বলল আবার কি?
আমি একটা শুধু একটা সিগারেট খেতে চাই সেই অনুমতি চাই !
রুবা হো হো করে হেসে উঠলো !
আচ্ছা ঠিক আছে !
ঘরেই খাও বাহিরে খুব গরম !
না এসির ভেতরে খাব না ! বেশি সময় নিব না জাস্ট ফাইভ মিনিট । বলে মাহি বের হয়ে গেল !
সিগারেট ধরিয়ে মাহি রিয়াদ কে মেসেজ দিয়ে আগামীকাল কে রিয়াদের সাথে দেখা করার সময় টা ফিক্সড করলো।
মাহি হোয়াটসঅ্যাপ এ নিঝুমের দেয়া মেসেজ টা পড়লো।
তারপর ডিলিট করে দিলো!
সিগারেট শেষ করে মাহি দুই মিনিট বসলো আরো ! তারপর রুমে ঢুকলো ।
রুবা বিছানায় শুয়ে পড়েছে ।
মাহি চোখে মুখে পানি দিয়ে বিছানায় এসে বলল, তুমি রাগ করোনি তো সিগারেট খেতে চাইলাম বলে?
না রাগ করি নাই !
তো চলো ঘুমিয়ে পড়ি রাত অনেক হয়েছে রুবা !
তোমার পায়ের জ্বলুনি টা কমছে ?
রুবা বলল, আগে থেকে কম।
দাঁড়াও আর একটু বার্নল লাগিয়ে দিচ্ছি বলে মাহি বেড থেকে নেমে বার্নল টা নিয়ে এলো!
তারপর হাত ধুয়ে এসে রুবার পায়ে লাগিয়ে দিল !
ওষুধের জন্য রুবার চোখে রাজ্যের ঘুম চলে আসছে!
মাহি বলল, লাইট গুলো অফ করে দাও রুবা !
শুধু কর্নারে র ঐ ল্যাম্প শেড টা থাকুক।
রুবা সব অফ করে দিল!
মাহি বলল, গুড নাইট !
রুবা হাসলো তার উত্তরে তারপর অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো !
মাহি বেশ কিছু সময় তাকিয়ে রইল পাশে শুয়ে থাকা রুবার দিকে। আজ‌ই প্রথম তারা এক বিছানায় ঘুমাচ্ছে। মাহি অনেক সতর্ক হয়ে দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে আছে।

অনেক দিন পর মাহির একটা গভীর ঘুম হলো ! সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে যায় তার আজ‌ও তাই হলো !
দশটার দিকে রিয়াদ ভাই এর সঙ্গে দেখা করতে বনানী যাবে !
সাড়ে আটটার দিকে রুবাকে ডেকে তুললো মাহি !
ওঠো ব্রেকফাস্ট করব !
রুবা উঠে ফ্রেশ হতে গেল !
মাহি সেই ফাঁকে রেডি হয়ে গেল !
রুবা রুমে ঢুকে বলল, তুমি কি এখন‌ই বের হচ্ছো ?
মাহি বলল, খেয়ে তারপর যাব! তাই একবারে তৈরি হয়ে নিলাম!
তুমি রেডি চলো টেবিলে যাই ।
ওরা খাওয়ার টেবিলে গিয়ে দেখে মা পেপার পড়ছে মাহিকে আর রুবাকে দেখে হাসলেন , সাফিয়া বেগম।
কোথাও বের হচ্ছো মাহি?
মা একটু বনানী যাচ্ছি চলে আসব!
লান্চ বাসায় করবে তুমি, রুবা প্রশ্ন করলো!
হ্যাঁ!
মাহি খেতে শুরু করলো !
মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, মা আমি যতক্ষন না আসব রুবাকে তোমার সঙ্গে রাখবে!
রুবা বলল, কেন আমি কি করলাম ?
মাহি বলল তোমার শরীর টা খারাপ আর তুমি কখন কি করো তার ঠিক নেই !
রুবা বলল, মা দেখলেন তো !
রুবা মাহি ঠিক বলেছে, সাফিয়া বেগম বললেন।
তোমার শরীর ভালো না ! একজন কেউ সঙ্গে থাকা উচিত ।
চা খেয়ে মাহি পৌনে দশটার দিকে বের হয়ে গেল !
পার্কিং এ দেখা হয়ে গেল রিয়াদের সঙ্গে।
কফি শপে ঢুকে রিয়াদ কফির অর্ডার দিল ওরা বসলো এক কর্নারে।
মাহি কি খবর বল?
ভাই আছি বেঁচে!
রুবার শরীর কেমন ? রিয়াদ জিজ্ঞাসা করলো।
আছে ভালো আগের চেয়ে । ওকে নিয়েই আমার চিন্তা ! ইফতেখার ভাইয়ের সাথে কথা বললাম , তিনি বললেন বেশি সময় দিতে, ইম্পর্ট্যান্স দিতে স্প্যাশল ফীল করাতে ।
সব করতে চেষ্টা করছি।
গুড মাহি !
বিশ্বাস করবেন না ভাই , যে মানুষ টা টোটাল ডিপ্রেশন এ চলে যাচ্ছিল এখন আবার সে হাসছে । একটুসময় দিতেই অনেক চেন্জ এসেছে।
এটাই এখন দরকার রুবার জন্য মাহি, আচ্ছা নিঝুমের ব্যাপার টা কি বলতো? কালকে সে কি কান্নাকাটি তুই তো জানিস ই তোদের বন্ধু দের একদল তোর রুবাকে বিয়ে করাটাকে নিয়ে খুব চটে আছে তোর উপর। তোর সাথে কথাও বলে না আর যারা তোর আর নিঝুম কে নিয়ে জেলাস ছিল তারা আবার হ্যাপি এখন!
তুই আমাকে বল নিঝুম নতুন করে আবার কান্নাকাটি কেন করছে আমাকে বলল আমার সঙ্গে কথা আছে। যদিও আমি গতকাল বেশি ব্যস্ত ছিলাম তাই সময় দিতে পারি নাই, রিয়াদ বলল।
রিয়াদ ভাই আপনি তো জানেন ই আমার ভাইয়ের সাথে আমি কতটা ক্লোজ ছিলাম ও আমার কতটা জুড়ে ছিল? আর তারপর যে মানুষ টার সঙ্গে আমি সব শেয়ার করি পরামর্শ করি আপনি হলেন সেই মানুষ।
আপনার কাছে লুকানোর কিছু নেই !
বলে মাহি গতকালের নিঝুম এর সব কথা বলল রিয়াদ কে !
রিয়াদ সব শুনে বলল, নিঝুম তোর উপর এই অপবাদ দেয়াটা কোন ভাবেই ঠিক করেনি আমি অবশ্যই বলব। কিন্তু ও আসলে তোকে হারানোর কষ্ট থেকেই করেছে কাজ টা !
নিঝুম এমন নয় যে রুবার প্রতি কর্নসার্ন হয়ে বলে ফেলেছে! নিজের না পাওয়ার যন্ত্রনা থেকে করেছে।
তুই এটা ধরে বসে থাকিস না মাহি ।
রিয়াদ ভাই আমি কারো কারো কাছে খুব খারাপ আমি জানি । আমি সেদিন কি কি করতে পারতাম আর , কেন করেছি সবাই কে ব্যাখ্যা করতে করতে ক্লান্ত!
আমি স্বনামধন্য একজন ব্যারিস্টারের সন্তান, জন্ম হয়েছে প্রাচুর্যের ভেতরে । জীবনে যা কিছু চেয়েছি চাওয়ার আগেই পেয়ে গেছি আমার পরিবার তা ফুলফীল করেছে।
স্বপ্নের মতো জীবন আমার । হঠাৎ একদিন তাসের ঘরের মত আমার পরিবার এর সুখ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। আমার পাহাড়ের মত বাবা তার সবচেয়ে প্রিয় যোগ্য সন্তানের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু তে একেবারে ভেঙে পড়েন। মা অসহায় তার সেই ছেলের সন্তান সম্ভবা বিধবা স্ত্রী কে নিয়ে । যে পরিবার যে মা আমাকে সারাজীবন শুধু দিয়েই এসেছে এক রাতে সেই মা জীবনের প্রথম কিছু চাইলেন আমার কাছে । চাইলো আমার প্রিয় ভাইয়ের স্ত্রী আর তার সন্তানের জন্য একটা নিরাপদ জীবন ! আমার কাছে আমার পরিবার কখনো কোন এসপেক্টেশন রাখেনি কিন্তু সেই রাতে মা অনেক আশা নিয়ে ই আসলো অসহায়ের মত ।
আমি পারতাম ফিরিয়ে দিতে মা কে খুব সহজ হত বরং সেটাই আমার কাছে কিন্তু আমি পারিনি ভাই কারণ এই প্রথম আমার কাছে মা কিছু চাইলো।
হ্যাঁ আপনি বলতে পারেন আমরা রুবাকে একটা ভালো জীবন দিতে পারতাম , কিন্তু কি সেটা? একটা হতে পারতো সারাজীবন আমার ভাইয়ের ব‌উ হিসেবে বিধবার জীবন কাটানো আর নয়তো আর একটা বিয়ে ! মা কে বিয়ের কথাটা যখন বললাম তখন মা বললেন আমি একটা ভালো মানুষের গ্যারান্টি কাকে দিতে পারব এই পৃথিবীতে তোমাকে ছাড়া মাহি? নিজের সন্তান কে ছাড়া কারো গ্যারান্টি দেয়া যাবে যে রুবাকে আর তার সন্তান কে আমাদের চেয়েও ভালো রাখবে?
আমি সেদিন মায়ের এই কথার পর আর কথা খুঁজে পাই নি!
নিঝুমের দোষী আমি । আমি ওকে ফিরিয়ে দিয়েছি আমার স্বার্থ শুধু আমার পরিবারের ভেসে যাওয়া অবস্থা টা আটকানো ছিল ভাই । এর বাহিরে আর কি কিছু? আমি তো রুবার প্রতি আজ যে দ্বায়িত্ব , ফিলিংস ফীল করছি এ সব কিছু বিয়ের পর! বিয়ের আগে তো ওকে নিয়ে আমার কোন আকাঙ্ক্ষা ছিল না, তাহলে ?
আমি সব সময় বলি আমি যে সম্পর্ক টা গড়েছি কিংবা গড়ব সম্পূর্ন সততা দিয়েই পালন করব, করার চেষ্টা করছি।
যেদিন আমি রুবাকে কবুল বলেছি সেদিন থেকে নিঝুম কে অন্য হাতে ধরে রাখাটা কি ওর জন্যেও অপমানকর হতো না ?
নিঝুম জন্য ভালো টা ভাবতে হলেও ওকে সামনে মুভ অন করানোর জন্য , আমার থেকে দূর করতে হবে কিনা বলেন ?
আমি নিঝুম কে ওর চেয়ে বেশি চিনি ও এখন আমার প্রতি আরো বেশি আকর্ষণ বোধ করছে । ও বারবার শুধু আমাকে ই ফিরে পেতে চাইছে রিয়াদ ভাই।
এটা কি খুব ভালো হত , রুবা তো লাশের মত পরেই থাকত বিয়ের পর আমি যদি ওকে একটু ও মনোযোগ একটু ও স্বামী হিসেবে আশ্রয় প্রশ্রয় না দিতাম । সে ভাইয়ার ফেলে যাওয়া অস্তিত্ব নিয়েই পরে থাকত ঘরে আর আমি নিঝুম কে অলীক স্বপ্ন দেখিয়ে ঘরের বাহিরে মেতে থাকতাম ? এটা ভালো হত কি ভাই ?
ভাই একটা মেয়ে বাবা মায়ের জন্য তাদের খাতিরে নিজের ভালোবাসা ত্যাগ করে আরেকজন কে বিয়ে করে প্রথম দিন থেকেই স্বামী , শ্বাশুড়বাড়ি নিয়ে সুখে সংসার করতে থাকলে সেটা মেয়ে টার সেক্রিফাইস হিসেবে ধরা হয় আর এই কাজটা একটা ছেলে করলে কেন তাকে স্বার্থপর বলা হয় বলেন তো ভাই?
ছেলেদের কি ভেতরে কষ্ট হয় না ? নাকি ছেলে টা চিৎকার করে কাঁদতে পারেনা বলে?
মাহি আমি তোর অবস্থা টা বুঝি রে ভাই ! কি বলব তোকে , পুরুষ মানুষের আবেগ নিয়ে এই সমাজ ভাবে না রে !
আবেগের কপিরাইট শুধু মেয়েদের ভাগ্যেই !
আমি চাই নিঝুম জীবনে মুভ করুক আমার অস্তিত্ব কে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাক । সে আমার চরিত্র নিয়ে আমার নৈতিকতা বোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না ।
আমি তো শুধু তার প্রেমিক ছিলাম না সারাজীবন সে আমাকে দেখেছে আমরা ফাস্ট কাজিন। তারপরও সে আমাকে বিয়ের পরদিন থেকে যা ইচ্ছা বলে আসছে আমি তো মানুষ একটা ,কষ্ট ভাই আমার ও তো হয় ? নাকি?
আর রুবার যা মানসিক অবস্থা এখন ,সেদিন রাতে যা দেখলাম আমি আমার জায়গায় যে কেউ থাকলেই বুঝতো রুবা কে ভালো রাখতে এখন কি দরকার আমি তো একজন ডাক্তার রোগীর শারীরিক খারাপ টা যেমন বুঝি মানসিক খারাপ টাও বুঝি।
এই যে এখানে আসলাম ওকে মায়ের জিম্মায় রেখে এসেছি। কারণ ও এই খুব নরমাল এই সে অস্থির হয়ে যা খুশি করে ফেলছে ।
আমি তো ওকে ভালো রাখব বলেই বিয়ে করেছি ভাই এক রকম যাচ্ছে তাই ভাবে ফেলে রাখার জন্য নিজের নামের সঙ্গে জুড়ি নাই তাই ওকে ভালো রাখতে আমাকে এখন ওর মনের মত হতে হবে । ও যে স্প্যাশল সবার জন্য আগের মতই সেই ফীল টা দিতে হবে !
আমি এখন তাই করছি!
তুই ঠিক আছিস আমি জানি মাহি ! তবুও বলবো নিঝুম এর সঙ্গে বসে একবার কথা বল ওর কথা গুলো শোন ওকে দুটো স্বান্তনা র বাণী শুনা !
রিয়াদ ভাই আমার ভালো মানুষী টা দেখলে নিঝুম আরো আমার বলয় থেকে বের হতে পারবে না আমাতেই মেতে থাকবে! এটা খুব খারাপ হবে বরং আমি যত খারাপ হব সে তত তাড়াতাড়ি সামনে এগিয়ে যাবে !
তারপরও চিন্তা করে দেখিস।
মাহি রিয়াদ কে এক রকম কথা দিতে বাধ্য হলো নিঝুম কে সে ক্ষমা করে দিবে সেদিনের ঘটনার জন্য !
কফি শপ থেকে বের হতে হতে প্রায় দুপুর হয়ে গেল!
মাহি সরাসরি বাসায় ফিরে আসলো !
মা তখন নিজের রুমে!
রুবা কোথায় জানার জন্য মাহি আশেপাশে তাকাচ্ছে।
ফরিদা কে দেখে মাহি বলল, রুবা কোথায়?
বুয়া বলল, মেলাক্ষন দেখি না ! আছে মনে হয় আপনার রুমে!
মাহি নিজের রুমে এসে দেখে না এখানে নেই !
শিহাবের রুমে উকি দিল , সেটা বন্ধ!
মাহি একটু অস্থির বোধ করছে !
এবার সে রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ডাকলো, রুবা রুবা কোথায় তুমি?
তাও কোন সারা শব্দ নেই !
কি আশ্চর্য ! কোথায় সে ?
লাইলি বুয়া কে দেখে জিজ্ঞাসা করলো ,সে বলল, ও ছাদে!
এই শরীর নিয়ে সে দুপুর রোদে ছাদে কি করে?
মাহি ছাদে উঠে এলো । রুবা টের পায়নি । মাহি পেছন থেকে ওর চোখ ধরে ফেলল!
রুবা বলল,আমি জানি কে গায়ের ঘ্রাণ বলে দিচ্ছে এটা ডাঃ মাহির আজগর!
আমার গায়ের ঘ্রাণ চেনা হয়ে গেছে তোমার? অনেক উন্নতি!
বা রে তুমি আমার সামনে তোমার পারফিউম টা স্প্রে করলে না তখন!
সে জন্যই তো বুঝলাম!
কিন্তু রুবা আমি তো বুঝলাম না তুমি এই দুপুর রোদে এই শরীর নিয়ে ছাদে কি করছ ?
রুবা বলল লাইলি বুয়া কাপড় শুকাতে ছাদে এসে দেখে আট দশটা টিয়া পাখি ছাদে ! এটা শুনেই আমি দেখতে এসেছি। টিয়া পাখি আমার খুব প্রিয়!
তাই বুঝি !
আর কোন পাখি , পশু আপনার প্রিয় ? ম্যাডাম!
ম্যাকাও পাখি গুলো দেখতে খুব সুন্দর হয় আমার ভালো লাগে !
রুবা বাকি লিস্ট নিচে নেমে শুনব এখন চলো নিচে যাই! আমার হাত ধরো।
রুবা মাহির হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো।
সাফিয়া বেগম ওদের দেখে বললেন , মাহি একটা খবর আছে এদিকে আয়!
মাহি এবং রুবা মায়ের কাছে এসে বসলো।
কি খবর মা ?
রিয়ার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন আসবে বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে আজকে সন্ধ্যায়! রিয়ার বিয়ে মনে হচ্ছে এমাসেই!
খবর টা শুনে মাহি হাসলো শুধু! চিন্তা করলো একটা সময় এই খবর টা তার আর নিঝুমের জন্য কতটা আকাঙ্ক্ষিত ছিল! আজ কোন অর্থই বহন করে না!
মুখে বলল মাহি, ভালো খবর । অবশেষে রিয়া আপু আর সাজ্জাদ ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে!
সাফিয়া বেগম বললেন, হ্যাঁ তারপর নিঝুমের টা হয়ে গেলে নাহার নিশ্চিন্ত হয়ে যাবে!
মাহি চুপ করে আছে !
আজ সন্ধ্যায় আমি যাব ঐ বাসায় নাহার জোড় করছে,মা বলল!
আপনার তো যাওয়াই উচিত ফ্যামিলি সবার বড় আপনি।
কিন্তু রুবা তোমার শরীর খারাপ আর তোমার শ্বশুর ও থাকবে একা তাই ভাবছিলাম কি করি?
মা তুমি চিন্তা করো না আমি তো আছি রুবা আর বাবার জন্য, মাহি বলল।
ঠিক আছে , আমি সন্ধ্যায় ই যাব যত তাড়াতাড়ি আসা যায় সেই চেষ্টা করব !
আমি রুমে গেলাম মা , রুবা তুমিও চলো !
মাহি রুবাকে নিয়ে রুমে চলে আসলো।
রুবা এসি ছেড়ে দিল মাহি বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছে!
রুবা তুমি গোসল করেছো ?
না !
তাহলে ঢুকে পরো গোসল করে আসো লাঞ্চ টাইম তো হয়ে এলো ,তোমার ওষুধ আছে টাইমলী খেতে হবে!
রুবা বলল, যাচ্ছি!
মাহি বলল তার আগে এদিকে আসো দেখি !
রুবা সামনে গেল !
মাহি বলল কাছে আসো!
আসলাম!
আরো কাছে আসো রুবা!
তোমার পা টা দাও, দেখি কি অবস্থা?
রুবার পা ধরে মাহি বলল, ইস কতটা লাল হয়ে আছে এখনো! আর কোন দিন এমন অস্থিরতা দেখাবে না!
রুবা হাসলো!
তুমি গোসল করে নাও তারপর আমি ঢুকব গোসল করতে ।
রুবা ওয়াস রুমে ঢুকার সময় মাহির দিকে তাকিয়ে হাসলো ! মাহি মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত।
হঠাৎ একটা মেসেজ আসছে যা পড়ে মাহি কিছুটা বিচলিত হলো !
তারপর কাউকে কিছু না বলে হেঁটে বাসার বাহিরে চলে গেল !
বাসার অপজিট রাস্তায় নিঝুম দের কালো গাড়িটা দেখে ই চিনতে পারলো সে ! সামনে এগিয়ে যেতেই নিঝুম কে দেখলো ড্রাইভিং সিটে বসা!
মাহি বলল, কি ব্যাপার এভাবে আর্জেন্ট তলব দেয়ার কি মানে?
কথা আছে তোর সাথে উঠে আয় গাড়িতে, নিঝুম বলল।
কথা বললে বাসায় আয় নিঝুম!
না গাড়িতে উঠ মাহি প্লিজ!
মাহি এক সেকেন্ড চিন্তা করলো , ওর সঙ্গে কথা বলে ঝামেলা টা মিটিয়ে ফেলাই ভালো!
সেই চিন্তা করে মাহি গাড়িতে উঠলো!
মাহি উঠার সঙ্গে সঙ্গে নিঝুম টান দিল গাড়ি সোজা গুলশান থেকে পূর্বাচল এর দিকে!
মাহি বলল, কোন রেস্টুরেন্টে চল আমি বাসায় বলে আসিনি! তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে!
নিঝুম বলল, কি ব‌উ কে বলে আসিসনি ?
না কাউকে ই না ! রুবা গোসল করছে, মায়ের ঘরের দিকে যাইনি আর! তাই বলছিলাম তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে!
হ্যাঁ হ্যাঁ ফিরব এত তাড়া দিস না তো ,নিঝুম বলল
নিঝুম গাড়ির স্পীড তুলল! দুপুর দেখেই একটু জ্যাম কম মনে হচ্ছে!
গাড়ি সোজা পূর্বাচল এর দিকে যাচ্ছে! মাহি একটু অস্থির বোধ করছে ! চিন্তা করছে গোসল শেষে বের হয়ে রুবা ওকে না দেখলে কি চিন্তা করবে!

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here