যখন দুজনে একা পর্ব-২১

0
3228

#যখন_দুজনে_একা

২১ পর্ব

মাহি সময় মত বাসায় ফিরে এলো গাড়ি থেকে নেমে অভ্যাস বসত সিগারেট বের করলো । আগুন ধরানোর আগেই হঠাৎ তার মনে হলো গিফট দেয়ার সময় ওর শরীর থেকে সিগারেট এর গন্ধ আসবে রুবার খুবই বিরক্তি লাগবে হয়তো , সে সিগারেট প্যাকেটে ভরে ফেলল আবার ।
উপরে উঠে দেখে রুবা দুই বুয়ার সঙ্গে বসে কি যেন খাচ্ছে!
মাহি লিভিং রুমে ঢুকতেই দুই বুয়া ওকে দেখে ওখান থেকে চলে যাচ্ছে!
পানি খাব বুয়া ! অবশ্যই ঠান্ডা !
রুবা কি খাচ্ছো ?
শুকনা বর‌ই আর তেঁতুলের মিক্স ভর্তা ! খাবে তুমি?
মাহি বলল আরে না মাথা খারাপ আমি টক খেতে পারি না ! তুমিই খাও!
আমার ও দাঁত টক হয়ে যায় কিন্তু খেতে খুব ইচ্ছে করে আবার, রুবা বলল!
কি করলে এতক্ষণ ,রুবা ?
তুমি যাওয়ার পর আমাদের ঘর টা গোছালাম ! তারপর দুই বুয়ার সঙ্গে এখানে বসে গল্প করছি আর ভর্তা খাচ্ছি!
ও আচ্ছা খালামনির বাসা থেকে খাবার পাঠিয়েছে স্প্যাশলী তোমার জন্য নিঝুম আপু কাচ্চি পাঠিয়েছে ,তুমি পছন্দ কর তাই ! আমার সঙ্গে আবার কথাও বলল ফোনে !
মাহি শুধু বলল, ও !
কি বলল নিঝুম তোমার সঙ্গে ?
আমার শরীরের খবর নিলো , মায়ের কাছ থেকে শুনলো আমার পা পুড়ে গেছে ! তোমার কি খবর, ছুটি নিয়েছো সারাদিন কি করছো ! আজ কখন আসলে হসপিটাল থেকে , কোথায় গেছো এখন ,এসব আর কি !
তুমি কি বললে?
বললাম তুমি একটা কাজে বাহিরে গেছো । আর ছুটি নিয়ে রেস্ট করছো আমার খুব টেইক কেয়ার করছো এই তো !
ও আচ্ছা , মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল!
বুয়া পানি দিল মাহি ফরিদা কে বলল, এই ব্যাগটা মায়ের ঘরে রেখে আসো!
রুবা আমি ঘরে যাচ্ছি তুমি যাবে এখন , বলে মাহি উঠে দাঁড়ালো?
আমি একটু পর আসছি তুমি যাও! ডিনার কখন দিবে ?
আমি চেন্জ করে আসি তারপর ! তুমি সার্ভ করতে বলো ! বলে মাহি নিজের রুমের দিকে রওনা হলো।

রুমে গিয়ে মাহি জিন্স চেন্জ করে ঘরের ড্রেস পড়লো! মোবাইল নিয়ে বসলো তারপর ।
নিঝুম মেসেজ দিসে আবার, “তোর প্রিয় খাবার পাঠালাম আশাকরি খেতে ভালো লাগবে !
আজ অনেক কষ্ট গেল তোর” !

মাহি মেসেজ ডিলিট করে দিল!
দরজায় নক করছে বুয়া, ভাইজান ভাবি ডাকে !
যাও আসছি বুয়া !
মাহি গিয়ে দেখে রুবা আর বাবা খাবার টেবিলে অলরেডি বসে আছে !
মাহি বাবাকে দেখে খুশি হলো ! কি খবর বাবা কেমন আছো ?
ভালো আছি মাহি , তোমার কি খবর ?
আজ না বলে তুমি হসপিটালে গেলে , ফোন ও ধরছো না ! তোমার মা আর রুবা খুব অস্থির ছিল ।
সরি বাবা এমন আর হবে না !
আজগর সাহেব বলল, ঠিক আছে এখন খাওয়া শুরু করো !
আমি এসব কাচ্চি খাব না এত তেল , মাহি বলল!
রুবা বলল, ওমা তুমি তো পছন্দ করো কাচ্চি ! নিঝুম আপু এত শখ করে পাঠালো এখন খাবে না ?
ওরা পাঠালেই খেতে হবে ? আমার ইচ্ছে করছে না আর কি আছে দাও ! মাহি একটু কঠিন গলায়‌ই বলল কথাটা।
রুটি আর চিকেন বলে রুবা এগিয়ে দিল মাহির দিকে বাটি !
মাহি রুটি , চিকেন কারি খাচ্ছে আর মনে মনে বলল , ঢং আমাকে রোদের মধ্যে এত দূরে নিয়ে গিয়ে রেখে চলে আসলো এখন আবার খাবার পাঠিয়ে কম্পলসেট করার চেষ্টা !

ওরা ডিনার করা শেষে লিভিং রুমে বসে রইল কিছুক্ষণ!
সাফিয়া বেগম আসলেন বোনের বাসা থেকে !
মা কে দেখে মাহি বলল, আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আরো পরে আসবে মা !
ইচ্ছা করে ই চলে এসেছি আগে আগে, রুবা অসুস্থ তোমার বাবা বাসায় একা !
মা আমি এখন সুস্থ, রুবা বলল ।
তোমার বাবাকে ডিনার দিয়েছে ওরা , সাফিয়া বেগম বললেন?
মা ,বাবা আমাদের সাথে খাবার টেবিলে বসেই ডিনার করেছে , মাহি বলল!
সত্যিই সাফিয়া বেগম অবাক হলেন!
রুবা বলল , আমি ডাকতেই বাবা চলে আসলেন !
থেঙ্কস রুবা , তোমার বাবা নরমাল হয়ে গেলে আমার আর কোন চিন্তা নেই !
মা তোমার অর্ডারের জিনিস চলে এসেছে , মাহি বলল!
কোন জিনিস , সাফিয়া বেগম বললেন ?
কার্ড দিয়ে গেলে না ! দাঁড়াও দিচ্ছি বলে মাহি মায়ের ঘরে ছুটে গেল।
সাফিয়া বেগম বললেন, ও আচ্ছা।
মাহি মায়ের ঘর থেকে মোবাইল এর প্যাকেট টা নিয়ে এলো !
এই নাও মা তুমি দাও!
তুমি দিতে আমাকেই দিতে হবে এমন কোন কথা নেই!
সাফিয়া বেগম রুবার দিকে ব্যাগ টা দিয়ে বলল, রুবা মা তোমার জন্য একটা গিফট আছে দেখো তো !
আমার জন্য গিফট ,রুবা অবাক হলো !
মাহি বলল, খুলে দেখো !
রুবা প্যাকেট খুলে বের করলো, আইফোন এর লেটেস্ট মডেল!
ওয়াও আমার জন্য, থেঙ্কস মা ! কিন্তু এত দামি সেট এর দরকার ছিল না !
কি বলো রুবা তুমি আমার জন্য কত দামি জানো ! এটা তার কাছে কিছু ই না , সাফিয়া বেগম বললেন!
রুবা শ্বাশুড়ি কে জড়িয়ে ধরে থেঙ্কস বলল!
মাহি বলল, দাও তোমার ছবি তুলে দেই !
রুবা বলল, মায়ের সঙ্গে তুলব ছবি!
না তোমরা তুলো ছবি ,আমি যাই তোমার বাবার সঙ্গে দেখা করি!
রুবা বলল, মা কবে হচ্ছে রিয়া আপু র বিয়ে?
ও দুই সপ্তাহ পর এনগেজমেন্ট ! বিয়ের ডেট পরে ঠিক হবে , সাফিয়া বেগম বললেন!
বলে তিনি নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন !

চলো রুবা ঘরে যাই !
তুমি যাও আমি আসছি !
আর কি কাজ তোমার এখানে , মাহি বলল?
পানি নিয়ে আসি !
ওরা দিয়ে যাবে তুমি আমার সঙ্গে চলো !
নিয়ে নেই সঙ্গে , রুবা বলল!
নো কাম উইথ মি বলে মাহি রুবার হাত ধরে টানলো!
অগত্যা রুবাকে যেতেই হলো , মাহির সঙ্গে!

ঘরে ঢুকে মাহি বলল, দাও তোমার নতুন ফোন দিয়ে তোমার ছবি তুলি একটা!
শুধু আমার ছবি কেন চলো আমরা একটা সেলফি তুলি।
তাই ! ঠিক আছে চলো , তোমার আমার প্রথম সেলফি হয়ে যাক রুবা !
দুজন সেলফি তোলার জন্য ক্লোজ হয়ে দাঁড়ালো , রুবা বলল আমার চুল ঠিক নেই একটু দাঁড়াও !
মাহি ই ঠিক করে দিলো রুবার চুল , এখন ঠিক আছে রুবা !
ঠিক আছে!
সেলফি তোলা শেষে রুবা বলল, এই মোবাইল কিনতে তখন বের হলে তুমি?
হু ,
মা কার্ড দিয়ে গেল যাওয়ার সময় , মাহি বলল!
মাহি হোম থিয়েটার এ মিউজিক ছাড়লো ! তার প্রিয় কিশোর কুমারের হিন্দি সং । এক ফাঁকে রুবার জন্য আনা তার গিফট টা ড্রয়ার খুলে দেখে নিল !
রুবা মেডিসিন নাও আর তোমার পায়ে ওষুধ লাগিয়ে দেই আসো!
রুবা বলল, আমি আগে ড্রেস চেঞ্জ করে আসি, কামিজে বর‌ই ভর্তা পড়েছিল দাগ বসে যাবে!
রুবা আলমারি খুলে নিজের কাপড় বের করে ওয়াস রুমে ঢুকে গেল !
মাহি বক্স থেকে জিনিস টা বের করে পকেটে রাখলো । সে কিছুটা নার্ভাস ! এত অস্বস্তি লাগছে কেন জানি ? নিঝুম কে তিন বছরে কত গিফট দিয়েছে কখনো এমন নার্ভাস বা অস্বস্তি লাগেনি তার !
আজ এই সামান্য জিনিস টা রুবাকে দিতে ওর এমন লাগছে কেন ?
মনে হচ্ছে ভায়বা এক্সাম দিতে এখনি স্যার দের সামনে যাবে ! নিজের ভাবনায় নিজেই হো হো করে হেসে উঠলো মাহি !
এক বার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে গায়ে পছন্দের পারফিউম ও লাগিয়ে নিলো!
মিউজিক সিস্টেমে কিশোর কুমার গাইছে ,
” হামে তুম ছে পেয়ার কিতনা
এ হাম নেহি জানতে
মাগার জি নেহি সাকতে
তুম হারে বিনা”

মাহি ও গুনগুন করে গাইছে…

রুবা কামিজ চেন্জ করে চোখে মুখে পানি দিয়ে রুমে ঢুকে দেখে মাহি গান গাইছে ! সে চুপ করে শুনছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে । এত সুন্দর করে গায় ও গান !

মাহি র সঙ্গে চোখে চোখ পড়তেই রুবা বলল, কি চমৎকার গাইছিলে তুমি!
মাহি বলল, আরে ধুর সেরকম কিছু না ! কিশোরকুমার ইজ মাই সোল সিঙ্গার ! কি যে গেয়েছে গান কলিজা তে গিয়ে লাগে !
রুবা বলল, আমার ও খুব ভালো লাগে ওর গান !
চুল ঠিক করে রুবা তার ওষুধ খেয়ে নিল !

রুবা রুমের অন্য সব আলো নিভিয়ে বেড সাইড লাইট গুলো জ্বালিয়ে দিল ! তারপর বিছানায় বসে গান শুনছে , মাহি সোফায় বসে চোখ বন্ধ করে আছে!
হঠাৎ মাহি বলল, কেমন জানি গা মেজমেজ করছে , ! মনে মনে বলল, করবে না হাঁটতে হলো রোদের ভেতর , ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিল বাসে, তারপর আবার সিএনজি তে ওফফ!

এখন রুবার গিফট টা দেয়াই যায় তাই না ! মাহি উঠে বেডে গিয়ে বসলো ! রুবা দুই হাঁটু বুকের কাছে ভাঁজ করে বসে গান শুনছে মনোযোগ দিয়ে !
মাহি বলল, তোমার পায়ের ওষুধ টা কোথায় দেখি লাগিয়ে দেই!
রুবা সাইড টেবিল থেকে অয়েনমেন্ট টা নিয়ে মাহির হাতে দিল !
মাহি পায়ে লাগিয়ে দিল ওষুধ তারপর আস্তে করে নিজের পকেট থেকে বের করলো একটা সোনার নূপুর !
রুবা তোমার জন্য দেখো তো পছন্দ হয় কিনা ?
রুবা হাতে নিয়ে বলল, খুব সুন্দর তো !
পছন্দ হয়েছে ?
অনেক!
আমি পড়িয়ে দেই ?
রুবা চোখ নেড়ে সম্মতি দিল!
মাহি ফ্লোরে বসে রুবার পায়ে নূপুর পড়িয়ে দিল !
রুবা বলল খুব সুন্দর !
তোমার পায়ের চেয়ে কম !
কখন কিনলে ?
ফোন কিনতে যখন গেলাম তখন মনে হলো তোমার জন্য আমি ও একটা গিফট কিনি ! আর ঐ দিন তোমার পায়ে ওষুধ লাগানোর সময় মনে হল এত সুন্দর পা খালি থাকবে কেন , এই পায়ে নূপুর থাকবে !
দোকানের সেলস গার্ল বলল, এসব সোনার নূপুর নাকি একটাই পড়ে তাই একটাই কিনলাম!
রুবা গলা নামিয়ে বলল, থেঙ্কস !
ওয়েল কাম !
তোমার পছন্দ হয়েছে তো, আমি টেনশন করছিলাম পছন্দ হয় কিনা !
খুব সুন্দর অনেক পছন্দ হয়েছে!
আমার মনে হয় মেয়েদের পায়ে নূপুর আর নাকের নাকফুল মেয়েদের সৌন্দর্য কে দ্বিগুণ করে দেয়, মাহি বলল !
আমার নাক ফুল পড়ানোর ছিদ্র নেই !
তোমার নাক তো এমনিতেই অনেক সুন্দর, নাকফুল না হলেও চলবে।
আর যদি থাকতো , রুবা বলল ?
তাহলে চোখ ফেরানো যেত না , বলে মাহি হেসে দিল!
যাহ্ , বলে রুবা লজ্জা পেল!
মোবাইল নিয়ে বলল, ছবি তুলি তোমার পায়ের আমার দেয়া প্রথম গিফট পড়ছো !
রুবা হাসলো!

মাহি বলল, চলো পোর্চের ছাদে যাই আজ পূর্ণিমা খুব সুন্দর জোছনা বাহিরে !
চলো যাই বলে দুজন উঠে দাঁড়ালো!
রুবা বলল, আমি আগে মা কে নূপুর টা দেখিয়ে আসি কি বলো!
মাহি হাত ধরে আটকালো রুবা কে , এত রাতে যাওয়ার দরকার নেই ! কি মাথা নষ্ট!
আচ্ছা কালকে দেখাব !
ঠিক আছে দেখিও!
মাহির মোবাইল এ মেসেজ এর সাউন্ড হল তখন,
রুবা বলল , মেসেজ আসছে তোমার!
পরে পড়ব!
দরকারি কিছু হতে পারে , রুবা বলল!
মাহি মোবাইল চেক করে দেখে নিঝুমের মেসেজ ,

” কাচ্চি কেমন লাগলো , সুইট হার্ট? আমার কথা গুলো চিন্তা করিস আজ যা বললাম ! ”

মাহি মোবাইল বেডে ছুড়ে ফেলে দিল । তারপর রুবাকে বলল,
এখন হাত ধর আমার , বলে মাহি হাত বাড়িয়ে দিল !
রুবা সেই হাত ধরলো!
হাত ধরে দুজন ঘর থেকে বের হলো ! জোছনায় গিয়ে দাঁড়ালো !

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here