যখন দুজনে একা পর্ব-২২

0
3333

#যখন_দুজনে_একা

২২ পর্ব

দুজন হাত ধরে এসে ছাদে দাঁড়ালো! মাহি বলল কি সুন্দর চাঁদ দেখেছো রুবা!
রুবা মাথা নাড়লো!
এরকম জোছনায় মনটা খুব ভালো হয়ে যায় তাই না ?
রুবা বলল, অনেক সময় মন আবার খারাপ ও হয় !
মাহি বলল, সেটাও ঠিক বলছো!
রুবা বসলো সিমেন্ট এর বেঞ্চে মাহি বেঞ্চে র উপর বসে দুই পা রুবার দুই দিকে দিয়ে পেছনে বসলো!
তোমার কি মন খারাপ হচ্ছে রুবা ?
রুবা বলল, না !
রুবা তুমি তোমার বন্ধু- বান্ধবী দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখো না কেন? সবার সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে তোমার দেখবে মন ভালো থাকবে , কথা বলার জায়গা হবে ! এই যে সারাদিন কি করো তুমি ,একা বসে থাকো ?
আমি মায়ের সাথে গল্প করি এখন তো সারাক্ষণ তুমি ই থাকো তাই সময় কেটে যায় !
মাহি বলল , হ্যাঁ ঠিক আছে মায়ের সাথে গল্প করো । কিন্তু মা কে ও দেখবে খালামনি, মামি, চাচী , মায়ের বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে আসা যাওয়া করে!
আর আমার ছুটি শেষ হলে রুবা মাই ডিয়ার, দম ফেলার ফুরসত নেই! হসপিটাল, পড়াশোনা এসব করে একেবারে দৌড়ের উপর থাকব । তোমার সঙ্গে সময় কাটানো র সময় কোথায়?
দেখা যাবে কোন রাতে ফিরব আবার সকালে চলে যাব এসব ই চলবে !
তুমি ঠিকই আমার জন্য সময় বের করবে ,আমি জানি । বলে রুবা হাসলো!
মাহি রুবার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে !
তাই আমাকে এতটা জানো তুমি ,মাহি হাসলো!
একটা জিনিস প্রতিদিন অবাক হ‌ই ভেবে , তোমাকে আগে যা জানতাম এখন দেখি তুমি আরেক রকম।
তো আগে কি জানতে রুবা ?
রুবা মুখ নামিয়ে হেসে বলল, সেটা তো বলা যাবে না !
মাহি ওর ঘাড়ের কাছে মুখ নামিয়ে বলল, প্লিজ বলো !
রুবা হেসে বলল, তোমাকে মনে হতো তুমি খুব নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানুষ! নিজের পড়াশোনা ক্যারিয়ার আর বন্ধু – বান্ধব এই নিয়ে তোমার জীবন !
মাহি বলল, ভুল ধারণা না কিন্তু এটা তোমার!
আমি তো পড়াশোনা, ক্যারিয়ার নিয়েই ব্যস্ত থাকি ! কিন্তু কোথায় তুমি তো ফ্যামিলি কেও সময় দাও, রুবা বলল!
এটা তো এখন দেই কারণ আগে আমার ফ্যামিলি বলতে মা বাবা ভাইয়া ছাড়া কেউ ছিল না ! তারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলো । এখন তো বিয়ে করেছি সময় তো ব‌উকে দিতেই হবে , তাই না ?
আর একটা জিনিস মনে হয় ফিসফিস করে বলল রুবা , তুমি অনেক রোমান্টিক ও !
মাহি শব্দ করে হেসে উঠলো , আসলেই কি তাই ?
রুবা লজ্জা পেয়ে বলল, আমি কিভাবে বলব !
রুবা আমি ব্যস্ত হয়ে পড়লে তুমি মন‌ খারাপ করে থাকবে?
তুমি একজন ডাক্তার আমি সেটা জানি তোমার সময়ের অনেক অভাব !
আমি তোমাকে প্রমিজ করছি , আমি যত‌ই ব্যস্ত থাকি তোমার জন্য দিনের একটা সময় থাকবে আমরা গল্প কবর ঠিক আছে , কিংবা ঘুরতে যাব !
রুবা বলল, ঠিক আছে !
এখন চলো উঠি !
মাহি বলল, আর একটু থাকি !
রুমে গেলেই ঘুমিয়ে যাব এখানে কত সুন্দর গল্প করছি দুজন!
গরম লাগছে তো! বেডে শুয়ে গল্প করি !
আচ্ছা ঠিক আছে চলো !
দুজন আবার রুমে ফিরে আসলো!

বেডে শুয়ে মাহি বলল, আমি কোন রোমান্টিক মানুষ ন‌ই রুবা, আমি বাস্তববাদী মানুষ! আমার কাছে আমার বর্তমান টাই বড় ! আমি বর্তমানে বাঁচি আর ভবিষ্যত কে ভেতরে ধারন করি ! অতীত আঁকড়ে বর্তমান আর ভবিষ্যত কে ঝামেলায় ফেলা আমার কাছে বোকামি মনে হয় ! একটা ব্যাপার যখন অতীত হয়ে যায় সেটাকে ধরে পড়ে থাকাটা বুদ্ধিমান এর কাজ না। এই কথাটা সব সময় মনে রাখবে , আমার ব্যাপারে!
ঠিক আছে মনে রাখব , রুবা বলল!
আর একটা কথা , বলে মাহি রুবার হাত ধরে বলল আমার মত বাস্তববাদী সবাই যে হবে তা কিন্তু নয় কিন্তু জীবন কে এগিয়ে নিতে হলে কিছু টা বাস্তবাদী হতে হয় রুবা !
কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে রুবার চোখে পানি চলে আসছে !
মাহি উঠে বসলো রুবা প্লিজ প্লিজ আই এম সরি তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য বলি নাই !
রুবা চোখের পানি লুকাতে অন্য দিকে তাকালো!
এদিকে দেখো রুবা , তাকাও আমার দিকে !
রুবা মাহির দিকে তাকালো , মাহি রুবার চোখ মুছিয়ে দিল !
এই বোকা মেয়ে , আমি তোমাকে বলেছি আমার মত প্রাকটিক্যাল হয়ে যেতে এক পলকে! তুমি তোমার মত থাকো ! তুমি তোমার আলোয় আলোকিত বলে মাহি হাসলো !

আমার গা কেমন ব্যথা ব্যথা করছে খুব ক্লান্ত ও লাগছে চলো রুবা এখন ঘুমানো যাক !আর শোন কালকে থেকে যা বললাম , ফ্রেন্ড দের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াও আনন্দে থাকবে ঠিক আছে !
রুবা মাথা নেড়ে সম্মতি দিল ! তারপর চোখ বন্ধ করলো তার ও এখন খুব ঘুম পাচ্ছে!
মাহি পাশ ফিরে শুয়ে নিঝুমের ব্যাপার টা চিন্তা করছে !
নিঝুমের ক্যারেক্টার এর সঙ্গে কি এই ছেলেমানুষী গুলো যায়! ও যা শুরু করেছে এখন!
যত বলব না , সে আরো তিনগুণ উৎসাহ নিয়ে করবে । এটাই নিঝুমের সমস্যা !
পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে মাহি রুবা ঘুমিয়ে গেছে ! ও তাকিয়ে রইল রুবার দিকে অপলক! মনে মনে ভাবছে রুবা যদি নিঝুমের কথা জানতে পারে কখনো তখন কি হবে ?ও নিজে আরো কষ্ট পাবে তখন , নিজেকে আরও অপরাধী ভাববে ! তোমাকে আমার অতীত জানাতে চাই না কখনো রুবা ! কখনোই না।
এসব ভাবনা ভাবতে ভাবতে মাহি ঘুমিয়ে গেল !

ভোর রাতের দিকে হঠাৎ রুবা পাশ ফিরার সময় মাহির শরীরের সঙ্গে হাত টা লাগতেই লাফ দিয়ে উঠে বসলো , জ্বরে মাহির গা পুড়ে যাচ্ছে!
কপালে হাত দিয়ে দেখে অনেক জ্বর !
রুবা ডাকলো এই উঠো এই !
কানের কাছে এসে বলল , শুনছো প্লিজ উঠো!
মাহি চোখ না খুলেই বলল‌, কিছু লাগবে রুবা ?
আমার কিছু লাগবে না তোমার তো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে!
মাহি বলল, ঠান্ডা লাগছে খুব !
আলো জ্বেলে ,
রুবা এসি অফ করে দিল ! জ্বর মাপতে হবে তোমার বলেই রুবা মেডিসিন বক্স থেকে থার্মোমিটার বের করলো ! এই তাকাও না , হা করো থার্মোমিটার নাও!
মাহি মুখে থার্মোমিটার নিয়ে শুয়ে আছে! কখন থেকে তোমার এই অবস্থা আমাকে ডাকলে না কেন?
ও আল্লাহ তোমার ১০৩° উপর জ্বর ! রুবা থার্মোমিটারে চোখ রেখে আঁতকে উঠলো!
প্যারাসিটামল বের করে মাহির হাতে দিল তারপর পানির গ্লাস সামনে ধরলো! গা স্পঞ্জ করা দরকার না ?
মাহি ওষুধ খেয়ে হেসে বলল, ডাক্তারের উপর ডাক্তারি হচ্ছে তাই না রুবা ?
কথা বলো না এত জ্বর এখন কি করব আমি সেটাই বলো , রুবা বলল?
কিছুই করতে হবে না আমার পাশে শুয়ে থাকো তাহলেই হবে ! ঘুমাও।
গা স্পঞ্জ করতে হবে তো !
রুবা এসব লাগবে না প্যারাসিটামল খেয়েছি এতেই চলবে ! তুমি অস্থির হয়ো না প্লিজ! মাহি কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।
রাতে বলেছিলে গা ব্যথা করছে , এই জ্বরের জন্য ই এখন বুঝলাম, রুবা বলল !
শরবত করে আনব , খাও ভালো লাগবে ?
রুবা আমি ঘুমাব প্লিজ তুমি কি শুরু করলে ! আমার পাশে শুয়ে থাকো ঘুম ভেঙ্গে দেখবে আমার জ্বর গায়েব !
রুবা বলল, মাথা ব্যথা করছে তোমার ?
না তবে খুব ভার হয়ে আছে , ঘুম হলে ই ঠিক হয়ে যাবে দেখো!
ঠিক আছে তুমি ঘুমাও আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি !
উঠে যেও না কোথাও বলে মাহি চোখ বন্ধ করলো !
রুবা মাহির মাথা মেসেজ করে দিচ্ছে!
রুবা জানে মাহি অসুস্থ হলে খুব কাতর হয়ে যায়! জ্বর হলেও তার শ্বাশুড়ি সারাক্ষণ মাহির কাছে থাকে একদম বাচ্চাদের মত করে। একবার টাইফয়েড হলো বছর খানেক আগে , মাহি বাচ্চাদের মত মা কে অস্থির করে দিয়েছিল !
মনে মনে হাসলো রুবা !
এই মানুষটার কাছাকাছি যত আসছে তত সে নতুন নতুন ব্যাপার খেয়াল করে । কখনও সে বাচ্চাদের মত, কখনো এক রোখা, কখনো দারুন ম্যাচিউর, কখনো রাগী, কখনো চরম ধৈর্যশীল, সবচেয়ে বেশি দ্বায়িত্বশীল সে !
আগে মাহির এত রূপের সঙ্গে পরিচয় হয়নি তার । অবশ্য এই মাহিকে বাবা মা ও দেখে অবাক হচ্ছে !

মাহিকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ওর কপালে হাত রেখেই ঘুমিয়ে গেল রুবা ! সকালে মাহির ডাকেই ঘুম ভাঙল তার !
এই যে ম্যাডাম রুবা আমার চোখ, কপাল থেকে হাতটা একটু সরাবেন ? আমি দুনিয়াটা দেখব!
রুবা ধড়মড় করে সোজা হয়ে বসল ! ওর হাত ছিল মাহির চোখের উপর !
এখন কেমন তোমার জ্বর , বলে রুবা মাহির কপালে হাত রাখলো আবার।
এখনো তো অনেক জ্বর আছে, রুবা বলল!
ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করো না , রুবা!
মা কে খবর দেই !
পরে দিও এত অস্থির হ‌ওয়ার কিছু নেই !
ঠিক আছে তুমি ফ্রেশ হ‌ও আমি তোমার ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসি বলে রুবা বের হয়ে গেল !

মাহি শুয়েই র‌ইলো ! নিঝুম এই জ্বর আসছে তোর জন্য ! এভাবে প্রখর রোদে র মধ্যে আমাকে ফেলে না আসলে এই জ্বর আসতো না ! মাথাও যন্ত্রণা করছে এখন! মাহি ভাবছে এখন এই জ্বর আর মাথার যন্ত্রণা কয়দিনে ঠিক হয় কে জানে?

রুবা কিছুক্ষণ পর ফিরে এসেছে সঙ্গে বুয়া ট্রে হাতে খাবার নিয়ে এসেছে!
তুমি এখনো উঠলে না ?
কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না রুবা , মাহি বলল!
আমি জানি কিন্তু কিছু করার নাই খেতে তোমাকে হবেই! মনে নাই আমি যখন অসুস্থ ছিলাম তুমি কি করেছিলে?
বুয়া টেবিলে রেখে যাও তারপর চা নিয়ে আসো!
বুয়া চলে গেল!
তুমি কি আমার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছ রুবা?
কিসের ?
তোমাকে জোর করে খাবার খাইয়ে ছিলাম বলে !
হুম নিব তো চরম প্রতিশোধ নিব , দেখো না আর কি কি হয় , রুবা বলল!
প্লিজ তোমার পায়ে পড়ি মাফ করো আর কখনো তোমার অসুস্থতার সময় খেতে বলল না , মাহি বলল!
কোন লাভ নেই ডাক্তার সাহেব , উঠেন এখন বলে রুবা মাহির হাত ধরে টানছে !
অগত্যা মাহিকে উঠে যেতেই হলো ওয়াস রুমে!

খেতে বসে মাহি বলল, আমি কিন্তু রোগীর খাবার খেতে পারব না আগেই বলে দিলাম ! নরমাল খাবার খাব !
তুমি তাকিয়ে দেখো নরমাল খাবার ই এনেছি ! স্যুপ আর স্যান্ডুইজ !
মাহি বলল, স্যুপ না খেলে হয় না ?
ইসস এত কথা বলে ধমকে উঠলো রুবা!
ওরে বাবা এত বড় ধমক অসুস্থ মানুষ কে কেউ দেয় , ?
আর একটা কথা বললে আরো জোরে ধমক খাবে তুমি !
রুবা স্যুপের চামচে ফুঁ দিয়ে মাহির মুখের সামনে ধরেছে !
মাহি বলল, তুমি একটু খাও!
আমি পরে খাব এখন কথা না খাও আগে !
না খাও রুবা প্লিজ !
ওকে তুমি তিনবার আমি একবার ঠিক আছে?
আচ্ছা ঠিক আছে !
এই এই আমার বেলায় চামচে ভরে ভরে স্যুপ তুলো আর নিজের বেলায় একটু , হবে না রুবা চিটিং হবে না !
মাহি তুমি এত জিদ করো !
মাহি বলল তুমি ও তো কম করছো না রুবা ?
এখন স্যান্ডুইজ খেতে থাকো বসে বসে আমি মায়ের ঘর থেকে আসি !
রুবা বের হয়ে যাচ্ছে মাহি ডেকে বলল, রুবা থেঙ্কস !
রুবা বলল, ফর হোয়াট ?
খুব সুন্দর করে আমাকে নাম ধরে ডাকার জন্য !
রুবা হেসে দৌড় দিল শ্বাশুড়ি র ঘরের দিকে !

মাহি এক কামড় স্যান্ডউইচ খেয়ে রেখে দিল ! মাথার যন্ত্রনা য় শেষ হয়ে যাচ্ছে সে।
ফোনের রিং হচ্ছে ! মোবাইল টা কোথায় আছে উঠে খুঁজতে ইচ্ছা করছে না !

আবার রিং হচ্ছে ! এবার মাহি উঠলো , সোফার উপর থেকে মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখে নিঝুমের ফোন!
একবার ভাবলো ধরবে না ! কিন্তু না ধরলে বারবার করতেই থাকবে !
হ্যালো বল, নিঝুম !
কি অবস্থা কি করিস ?
তেমন কিছু না এই তো ব্রেকফাস্ট করলাম! তারপর তোদের বাড়ির কি খবর , বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে ?
না মাত্র তো গতকাল এনগেজমেন্ট এর তারিখ ঠিক হলো!
গুড আমি ফোন দিয়ে কনগ্রাচুলেশন জানাব রিয়া আপুকে , বলিস!
মাহি কালকে তুই কিভাবে ফিরলি বাসায় ?
ঐ ব্যাপার টা তোর না জানলেও চলবে ! তুই শান্তি পেয়েছিস তো ,আমার এতেই ভালো লাগছে !
মাহি সরি রে , রাগের মাথায় করে ফেলেসি ! তুই আমাকে বকা দে চিল্লাচিল্লি কর প্লিজ !
কেন বকা দিব ! আমি তো তোকে বলেছি তুই যত পারিস আমাকে ঘৃণা কর ! প্লিজ কীপ ইট আপ নিঝুম !

রুবা তখন‌ই ঘরে ঢুকলো !
মাহি আর কথা বাড়াতে চাইছে না ! নিঝুমের নাম শুনলে অবার হুট করে ফোন রাখলেও জিজ্ঞাসা করতে পারে রুবা !
মাহি বলল, রুবা তুমি খেয়ে নাও !
মাহি তুই মনে হয় আমার সঙ্গে কথা বলছিলি !
আমি জানি , এখন বল কিসের জন্য ফোন দিসিস ?
আমি তোর সাথে দেখা করতে চাচ্ছি, প্লিজ না করিস না !
কালকে আমার দারুন শিক্ষা হয়েছে , আবার ! অসম্ভব।
প্লিজ মাহি প্লিজ !
আমি ফোন রাখছি পরে কথা হবে ! আল্লাহ হাফেজ!
মাহি ফোন রেখে দিল !
রুবা প্যারাসিটামল আর পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো । মাহি ওষুধ খেয়ে বলল, মা কোথায় রুবা?
কে যেন এসেছে নিচে মা উনার সঙ্গে কথা বলছে !
কে আসছে ?
আমি গিয়ে দেখি নাই !
তুমি স্যান্ডউইচ টা পুরো খেলে না কেন ?
প্লিজ রুবা আমার খেতে ইচ্ছা করছে না , রাখো পরে খাব!
তুমি খেয়েছো , মাহি বলল!
রুবা বলল,মা আসুক নিচ থেকে মায়ের সঙ্গে খাব !
তুমি দুপুরে কি খেতে চাও বলো ?
রুবা প্লিজ কিছু ই খেতে চাই না !
এটা বললে তো হবে না !
ঠিক আছে যা রান্না করবে , শুধু জাও রান্না করবে না আমার অসহ্য লাগে! এই বাসায় কেউ অসুস্থ হলে জাও খাওয়া শুরু করে আমার অসহ্য লাগে।
তুমি তো খাও না কিছু তারপর বমি করতে থাকো তাই মা জা‌ও খেতে দেয় বলেই ফিক করে হেসে উঠলো রুবা।
হাসবা না অসহ্য একটা জিনিস আমি আমার পেসেন্ট দের ও এই জিনিস খেতে বলি না।
আচ্ছা ঠিক আছে! দিব না এই জিনিস।

সাফিয়া বেগম ছেলের রুমে এসে চিন্তিত গলায় বললেন, হঠাৎ এত জ্বর কিভাবে মাহি?
জানি না মা !
কালকে তুমি হসপিটাল থেকে যখন এলে তোমাকে দেখে পুরাই বিধ্বস্ত লেগেছিল ! তুমি নিজের কোন খেয়াল রাখো না মাহি !
এখন ওষুধ খাচ্ছো তো ?
খাচ্ছি মা !
তুমি রেস্ট নাও! আর বের হবে না বাসা থেকে।
মাহি বলল , মা তুমি একটু পর পর এসে দেখে যাবে আমাকে।
রুবা হেসে দিল মাহির কথা শুনে!
সাফিয়া বেগম বললেন, এখন তোমার ব‌উ আছে সেই তোমার খেয়াল রাখবে । আমার ছুটি!
সাফিয়া বেগম হেসে উঠে গেলেন!

রুবা বলল , তুমি এত না মাতব্বরি করো আমার সঙ্গে ,এখন একটু জ্বরে মায়ের বেবি হয়ে গেলে!
একটু কাছে এসে বলো কথাটা রুবা !
কেন , কি করবে?
দেখাব কে বেবি, মাহি বলল ?
রুবা হো হো করে হাসতে লাগলো ! হাসতে হাসতে ওর চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে !
মাহি মুগ্ধ হয়ে অনেক দিন পর রুবার এত সুন্দর উচ্ছাসে ভরা হাসি দেখলো !
মনে মনে বলল, রুবা তুমি এভাবেই হেসো সব সময় তোমার হাসি মুখটা দেখলে সব কষ্ট কমে যায় ! মুখে শুধু বলল, খুব হাসি পাচ্ছে তাই না রুবা?
হাসো যত পারো আমার ও সময় আসবে রুবা আসবে !
রুবা রুম থেকে বের হয়ে গেল হাসতে হাসতে!

দুপুরে খাবার খেয়ে মাহির জ্বর আবার এসেছে! সে একবার বমি ও করলো!
মাথার যন্ত্রণা তে পুরাই ধরাশায়ী!
রুবা ওর মাথায় কখনো বরফ লাগিয়ে দিচ্ছে কখনো কাপড় ভিজিয়ে জল পট্টি দিয়ে দিচ্ছে!

বিকালে র দিকে ওর জ্বর কিছুটা কমলো , মাহি ঘুমিয়ে গেলে রুবা ঘর থেকে বের হয়ে শ্বাশুড়ি র কাছে গেল , জানাতে যে জ্বর কমেছে!
মা বলল, তুমি ওর পাশে থাকো ও অসুস্থ হলে একবারে বাচ্চাদের মত আচরণ করে !
জ্বি মা আমি আছি !

রুমে গিয়ে রুবার ও চোখ ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল !
সন্ধ্যায় দরজায় নক করার শব্দে রুবার ঘুম ভাঙল!
মাহি যেন না জেগে যায় তাই তাড়াতাড়ি সে দরজা খুলে দিল !
দরজায় নিঝুম দাঁড়িয়ে !

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here