যখন দুজনে একা পর্ব-২৬

0
3068

#যখন_দুজনে_একা

২৬ পর্ব

মাহি বলল, তুমি এত ভয় পাও রুবা ঝড় বৃষ্টি ! আমাদের বিয়ের এক দুই দিন পর এমন থান্ডারিং হচ্ছিল তুমি সেদিন‌ও ভয় পেয়েছিলে!
রুবা বলল, খুব ভয় লাগে! ছোটবেলা থেকেই !
মাহি ওর হাত ধরে টেনে বারান্দায় নিয়ে এলো , রুবা আসবেই না ! রুবা এসে দেখো ঝড়ের ও একটা সৌন্দর্য আছে !
রুবা কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে !
বাহিরে সন্ধ্যা হ‌ওয়ার আগেই অন্ধকার হয়ে আছে! কি প্রচন্ড বাতাস!
শোন রুবা ভয় কে জয় করে নিতে হয় সাহস দিয়ে! আর মনে রাখবে,সাহস এমন এক জিনিস যাকে ভয় ও ভয় পায় !
বাহ্ দারুন সুন্দর কথা তো , রুবা বলল?
হুঁ !
ওরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে! জায়গা টা খুব সুন্দর রুবা ,তাই না?
রুবা বলল, খুবই !
একদিন চলো রাতে এখানে এসে থাকি ? চাঁদনী রাতে কেমন হবে ?
রুবা বলল, আচ্ছা ঠিক আছে !
ওরা আরো কিছুক্ষণ বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখলো!
তোমার ভিজতে ইচ্ছে করছে রুবা ?
করছে কিন্তু এক্সট্রা ড্রেস আনি নাই , ভিজা কাপড়ে এত দূর থেকে যাব কিভাবে?
মাহি হো হো করে হেসে উঠলো !
রুবা বলল, তুমি এখানে বসো আমি ভেতর থেকে আসছি বলে রুবা ভেতরে ঢুকল কটেজের!
জেনারেটর চালু হয়েছে তাই আর অন্ধকার নেই ভেতরে!
রুবা চোখে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হলো, চুল ঠিক করে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাচ্ছে এমন সময় তার মোবাইল এ মেসেজ এর সাউন্ড , ওপেন করে দেখে খুব সুন্দর একটা মেসেজ পাঠিয়েছে মাহি,

‘কেন দিনের আলোর মত সহজ হয়ে
এলে আমার গহন রাতে!
আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব , হারিয়ে যাব তোমার সাথে”

এর রিপ্লাই কি দিবে রুবা ভেবে পাচ্ছে না ! ওর খুব রিপ্লাই দিতে ইচ্ছে করছে ! এক অজানা আনন্দে রুবার মন ভরে উঠছে!
মাহি দরজার কাছে এসে বলল, আসব?
হুঁ আসো!
রুবা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল চিরুনি করছে!
মাহি একদম রুবার পিছনে গা ঘেঁষে দাঁড়ালো রুবার ঘাড়ের কাছে এসে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের চুল ঠিক করল! রুবার গা কেমন ছমছম করে উঠলো! ওকে আবাক করে মাহি ওর কানের কাছে ওর মুখ নামিয়ে ফিসফিস করে বলল, তোমাকে কখন থেকে একটা কথা বলব ভাবছিলাম,
রুবা আয়নায় মাহিকে দেখছে ।
কি?
রুবা তোমাকে আজ এত সুন্দর লাগছে আমি চোখ ফিরাতে পারছি না ! আমার কী হবে বলো তো?
রুবা চোখ নিচে নামিয়ে ফেললো?
কথা গুলো যখন মাহি বলছে, রুবার মনে হলো মাহির ঠোঁট গুলো যেন ওর গলা,কান ছুঁয়ে গেছে!
রুবাও ফিসফিস করে শুধু বলল, জানি না !

মাহি নিজের ঠোঁট কামড়ে এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাসছে ! রুবার মনে হলো হঠাৎ, এত সুন্দর ও কারো হাসি হয়!
মাহি সেই হাসি মুখে নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে আর বলল, তাড়াতাড়ি এসো বৃষ্টি কমে গেছে আমাদের বেরিয়ে পরা উচিত । আমি বাহিরে আছি!
রুবার মনে হলো ওর শরীরে দাঁড়ানোর কোন শক্তি নেই !

ওরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল! দুজনেই চুপচাপ ! মাহি মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছে ! রুবা কখনো মাহিকে দেখছে কখনো সামনে র রাস্তা দেখছে!
হঠাৎ মাহি বলল, রুবা এভাবে তাকিয়ো না আমি ড্রাইভিং এ কনসেনট্রেশন করতে পারছি না !
রুবা অন্য পাশে ফিরে হাসছে!

কালকে থেকে বুঝলে রুবা আমার অনেক পড়াশোনা করতে হবে সপ্তাহ খানেক পর আমার একটা পরীক্ষা আছে!
খুব কঠিন পরীক্ষা , রুবা প্রশ্ন করলো ?
কঠিন পরীক্ষা তো অবশ্যই খুব কঠিন না , মাহি বলল!
তুমি তো রুমের দরজা বন্ধ করে পড়াশোনা করো, তাহলে কি আমি অন্য ‌রুমে চলে যাব?
আরে না তুমি তোমার মতো থাকো ! আমি পড়ব এটাই যা ! আর দরজা বন্ধ করে পড়ি কারণ, পড়ি আর স্মোক করি মা এসে পড়লে কেমন হবে তাই !
এত স্মোক কেন করতে হয়, রুবা বলল?
আমি কিন্তু ছেলে খুব ভালো বুঝলে কোন খারাপ কাজ করি না শুধু একটু সিগারেট খাই এই যা!
একটু না অনেক বেশি খাও , রুবা বলল!
তোমার যেহেতু পছন্দ না যাও এখন থেকে কথা দিচ্ছি আস্তে আস্তে কমিয়ে দিব একসময় বন্ধ করে দিব !
প্রমিজ , রুবা বলল!
মাহি বলল হাত দাও তোমার , হাত ধরে বলছি প্রমিজ!
রুবা হাত বাড়িয়ে দিল মাহি ওর হাত ধরে বলল, প্রমিজ রুবা !
রুবা হাসলো !

অনেক জ্যাম ঠেলে ওরা গুলশান এ ঢুকতে ঢুকতে রাত সাড়ে নয়টা । মাহি ওর প্রিয় রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে গাড়ি ঢুকালো ।
আমরা বাসায় যাব না , রুবা বলল?
যাব তার আগে এখানে ডিনার করব !
মা কে জানিয়ে দেই , রুবা বলল?
আমি আসার আগেই মা কে বলেছি রুবা তোমার চিন্তা করতে হবে না!
ওরা যখন খাচ্ছে তখন মাহির ক্লাস মেট নিয়াজের সঙ্গে দেখা !
ওদের দেখে কাছে এসে দাঁড়ালো নিয়াজ !
কি ব্যাপার মাহি শরীর কেমন এখন ?
গ্রেট , মাহি বলল!
নিয়াজ মীট মাই ওয়াইফ রুবা , বলে রুবাকে পরিচয় করিয়ে দিল !
নিয়াজ আর রুবা একে অপর কে সালাম দিল!
নিঝুম কেমন আছে মাহি , নিয়াজ বলল?
আশাকরি ভালো আছে , তোর কাছে নাম্বার নেই নিঝুমের?
নিয়াজ মাথা নাড়লো , আছে !
তাহলে খোঁজ নিতে পারিস , আয় বস আমাদের সঙ্গে মাহি বলল?
না আজ থাক , আমি চলে যাচ্ছিলাম , ভালো থাকিস মাহি বেস্ট আব লাক!
মাহি হেসে হাত মিলালো !
রুবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিয়াজ চলে গেল !
মাহি মনে মনে চিন্তা করছে, নিয়াজ এখনো নিঝুমের ব্যাপার টা নিয়ে ওর উপর ক্ষুব্ধ!

ওরা ডিনার সেরে বাসায় ফিরলো তখন রাত এগারোটা!
দুজনেই মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেল! বাবা মা ডিনার করছে ডাইনিং এ !
ওদের দেখে খু্শি হলো সাফিয়া বেগম !
ঝড় হচ্ছিল আমি ভয় পাচ্ছিলাম তোমরা আটকে গেলে নাকি !
না মা আমরা ঠিক ছিলাম , মাহি বলল!
মা আপনাদের ডিনার এত দেরিতে কেন , রুবা বলল ?
মাহিকে দেখতে তারানা এসেছিল কিন্তু ফোন করেনি আমাকে তাহলে বলতাম তোমরা বাহিরে গেছো!
ও একটু আগেই গেল , দেরি হয়ে গেল তাই ডিনার করতে!
মামি কে ডিনার করে যেতে বলতেন, রুবা বলল?
বলেছি , কিন্তু মিনহাজ আসে নাই তাই চলে গেল সাফিয়া বেগম বললেন!

মাহি বলল মা আমি রুমে যাচ্ছি !
যাও বাবা , রুবা তুমি ও যাও, ফ্রেশ হ‌ও অনেক টা জার্নি করে আসছো!
ঠিক আছে মা যাচ্ছি!
বাবা আসি , বলে উঠে গেল মাহি আর রুবা !

খুব টায়ার্ড ছিল দুজন, মাহি তার মেডিসিন নিয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিল! রুবা সকালে ছাদের ঘরটা ঠিক করে দিতে বলো তো, ওখানে পড়তে খুব ভালো লাগে ! আমি ওখানেও পড়তে পারি
ঠিক আছে আমি বুয়া কে বলে দিব , রুবা বলল!

সকাল থেকে মাহি তার সকল ব‌ই নিয়ে বসেছে ! এখন কয়দিন পড়াশোনা র বাহিরে আর কিছু নিয়ে চিন্তা ই করা যাবে না !
মাহি পড়ছে আর রুবা ফেসবুকে ব্যস্ত!
একবার মাহির কাছে গিয়ে বলল, তোমার কিছু লাগবে?
মাহি বলল, না লাগলে আমি বলব!
আচ্ছা আমি যদি আমার আর তোমার ছবি ফেসবুকে আপলোড দেই কোন সমস্যা আছে, রুবা বলল?
কি সমস্যা , আমার কোন সমস্যা নেই , মাহি বলল!
তবে হ্যাঁ এত সুন্দর তোমাকে দেখে আর কারো সমস্যা হলে তখন কি হবে ?
তুমি না কি যে বলো , রুবা বলে উঠলো ?
মাহি হাসছে !
রুবা তার ফেসবুক টা আপডেট করলো ।আগে কখনো খুব একটা বসতো না , শিহাব ফেসবুক পছন্দ করতো না ! তাই রুবাও ফেসবুক ব্যবহার করতো না !
মাহি নিজেই ফেসবুকে একটিভ রুবা তাই ফ্রেন্ডদের সাথে যোগাযোগ করতে ফেসবুক কে বেছে নিয়েছে নতুন করে !
নতুন জীবনে সব কিছুই এখন নতুন ভাবে চলবে এটাই স্বাভাবিক!

মাহি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা য় ব্যস্ত ! কয়দিন রুমে আর ছাদের ঘরে পড়ছে আর মাঝেমধ্যে রুবার সঙ্গে খুনসুটি করছে!
ও পড়াশোনা তে ব্যস্ত হয়ে গেলে আর কোন দিকে তাকায় না !
দুই একদিনের মধ্যেই সে হসপিটালে জয়েন্ট করবে আবার অসুস্থতার জন্য ছুটি আরো বাড়াতে হয়েছিল! রিয়াদ ভাইয়ের মত বড় ভাই থাকলে সব সম্ভব!
ছাদের এই ঘরটা ওদের দুই ভাইয়ের খুব পছন্দের একটা জায়গা! তিন দিকে গ্লাস দিয়ে ঘেরা ! একটা বড় বেড মাঝখানে , একটা টেবিল , এসি লাগানো । রাত হলে পর্দা টেনে দেয় । বৃষ্টি হলে এই গ্লাসের ঘর থেকে বৃষ্টি দেখতে এত ভালো লাগে মাহির !
মাহি পড়ছে সকাল থেকে এই ঘরেই । রুবা আজ খুব ব্যস্ত রান্না ঘরে । আজ সে নিজেই সব রান্না করছে ! তাই আর ছাদে আসছে না ! কি করছে কে জানে!
আকাশে মেঘ করেছে যে কোন সময় বৃষ্টি হতে পারে। খুব গরম ও পড়েছে। এসির বাহিরে বসাই যাচ্ছে না গরমে।
ইস একটা দারুন বৃষ্টি খুব দরকার মাহি চিন্তা করছে! এই কালো মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝড়তো যদি দারুন হত! মাহি ছাদে এসে দাঁড়ালো! সিগারেট ধরিয়ে রুবাকে মেসেঞ্জার এ মেসেজ পাঠালো ,
আমার কাছে আসো রুবা !
রুবা কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই দিল,
কেন ?
কি করো , আজ একবার ও আমার কাছে আসোনি , মাহি সেন্ড করলো।
রান্না করছি !
রান্নার লোকজন আছে , তুমি আসো এদিকে!

আর আধা ঘন্টা পর আসছি , ধৈর্য্য ধরো , রুবা লিখলো!

বৃষ্টি আসছে রুবা তার আগে তোমাকে আসতে হবে !

দেখা যাক, রুবা লিখল!

মাহি ছাদের বাতাসে দাঁড়িয়ে আছে । বৃষ্টির বড় বড় ফোটা একটা দুইটা পড়ছে !
রুবা মাহিকে ইনবক্স করলো,

” সাজিয়েছি ছোট্ট ফালি সুখ
রাজি আছি আজকে বৃষ্টি নামুক
তুমি আমি ভিজব দুজনে খুব
ভরসা দিলে…….”

মাহি রিপ্লাই দিল, শুধু গান লিখে পাঠালেই হবে ভিজতে হলে তোমাকে ছাদে আসতে হবে রুবা , আমার কাছে আসতে হবে…..

তখন‌ই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো মাহি মোবাইল রাখল রুমে তারপর ছাদের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো। একটু পর পিছনে তাকিয়ে দেখে রুবা দূরে দাঁড়িয়ে আছে ……
মাহি ওকে কাছে ডাকলো ….

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here