যখন দুজনে একা পর্ব-২৭

0
3460

#যখন_দুজনে_একা

২৭ পর্ব

মাহি হাত ইশারায় রুবা কে ডাকলো কাছে! রুবা আগে দেখল থান্ডারিং হচ্ছে কিনা । তারপর বৃষ্টি তে এসে দাঁড়ালো! অনেক দিন পর বৃষ্টিতে ভিজছে!
রুবা মাহির কাছে গিয়ে বলল, তোমার আবার শরীর খারাপ করবে না তো ?
মাহি বলল, না বৃষ্টিতে সমস্যা হবে না !
তারপরও বেশিক্ষণ থাকার দরকার নেই , রুবা বলল!
দুজন অনেকক্ষণ বৃষ্টি তে ভিজলো!
মাহি রুবাকে উঠার জন্য তাগাদা দিল!
রুবা বলল, আর দশ মিনিট!
না রুবা প্লিজ ওঠো
মাহি বলল, অনেক বাতাস যে কোন সময় বাজ পড়বে! আমি উঠলাম তুমি থাকো!
বলে মাহি বৃষ্টি থেকে উঠে গেল! ও জানে ও না থাকলে রুবাও ভয়ে থাকবে না !
মাহি ওয়াস রুমে ঢুকলো! গা মুছে তোয়ালে জড়িয়ে বের হলো !
আমি নিচে রুমে গেলাম , রুবা বলল!
যাও কিন্তু সাবধানে সিঁড়ি দিয়ে নামবে , তোমার ভেজা শরীর থেকে পানি পড়ছে রুবা টাইলসে পা পিছলাবে !
মাহির কথা শেষ হ‌ওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রুবা পা পিছলে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে গেল!
মাহি রুবা , বলে‌ চিৎকার দিয়ে উঠলো!
দৌড়ে নামল নিচে! দুই বুয়া ভাবি গো, বলে ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার দিল!
সাফিয়া বেগম যোহরের নামাজ পড়ছিলেন নিজের রুমে তিনি চিৎকার শুনলেন , কিন্তু নামাজ শেষ না করে আসতে পারছেন না!
মাহি দৌড়ে গিয়ে রুবা কে ধরলো ! রুবা চিৎকার দিয়ে উঠল পা আর ডান হাত ধরে ! ওর মাথায় ও লেগেছে।
মাহি বলল, দেখি রুবা বেশি ব্যথা পেয়েছো‌? পা ঝাড়া দাও উঠো দাঁড়াও !
রুবা কে মাহি আর বুয়ারা মিলে দাঁড় করালো কিন্তু ও পায়ে ভর দিতে পারছে না ! ডান হাতও নাড়াতে পারছে না!
ফরিদা দৌড়ে গিয়ে বরফ নিয়ে এলো!
রুবা বেশি কষ্ট হচ্ছে তোমার ?
মাহির দিকে তাকিয়ে রুবা হেসে দিল !
এই বোকা মেয়ে দাঁড়াতে পারছে না আবার হাসে , মাহি বলল!
মাহি ওকে কোলে তুলে রুমের দিকে রওনা হলো !
রুমে ঢুকে মাহি বলল, তোমার তো সব কাপড় ভেজা !
আগে বাথরুমে যাই গোসল দিব , কাপড় বদলাব রুবা বলল!
লাইলি বুয়াকে রুবা বলল, একটা চেয়ার দাও বাথরুমে আমি চেয়ারে বসব ! আর কাপড় বের করে দাও!
লাইলি বুয়া প্লাস্টিকের চেয়ার আনতে রান্নাঘরে র দিকে দৌড় দিল!
মাহি নিজে আগে শটস আর গেঞ্জি পড়লো কোমর থেকে টাওয়াল খুলল!
মাহি বলল, কি যে কান্ড করো রুবা !
আমি আবার কি করলাম , পড়ে যাব কি জানতাম!
মাহি ওর পা ধরে দেখছে ! ডান পা ধরতেই রুবা চিৎকার দিল, হাতেও লেগেছে নড়াতে পারছে না!
আমার তো মনে হচ্ছে ভেঙে গেছে রুবা , মাহি চিন্তিত গলায় বলল!
আরে না একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে দেখো ,রুবা বলল!
দেখা যাক!
বুয়া ওয়াস রুমে চেয়ার দিলে মাহি রুবাকে তুলে ওয়াস রুমে নিয়ে গেল !
লাইলি বুয়াকে আসতে বল তুমি রুমে যাও, রুবা বলল!
মাহি বুয়াকে ভেতরে পাঠালো !
সাফিয়া বেগম রুমে ঢুকলেন!
মাহি রুবা কিভাবে পড়লো?
আর বলো না মা , টাইলসে পিছলে পড়েছে কাপড় ভেজা ছিল পানি পড়ছিল!
এখন কি বেশি ব্যথা পেয়েছে , মা জিজ্ঞাসা করল ?
পায়ে ভর দিতে পারছে না মা, হাত ও নড়াতে পারছে না !
এক্স রে করাতে নিয়ে যাও !
দেখি মা বের হোক বাথরুম থেকে আগে!
সকাল থেকে তোমার জন্য কত রকম ভর্তা বানালো , তোমার পছন্দের মাছ রান্না করেছে নিজে হাতে বুয়াদের ধরতেও দেয় নি ! আর এখন নিজেই ব্যথা পেয়ে বসে আছে !
এত অস্থির মা ও , মাহি বলছে!
সাফিয়া বেগম বললেন, এভাবে বলো না !
লাইলি বুয়া রুবাকে ধরে ঘরে আনার চেষ্টা করছে , মাহি ছুটে গেল আনতে !
মা বলল, রুবা এত বড় ব্যথা পেয়ে গেলে ! দেখো মাহি অস্থির হয়ে গেছে!
মা আপনার ছেলে আমাকে বকতেছে !
মাহি বলল, কখন বকলাম ?
আমি বাথরুম থেকে শুনছি !
রুবা তুমি তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে ব্যথা পাইছো তাই বললাম!
মা বলল, আচ্ছা থাক এখন মাহি দেখো এক্সরে করাতে হবে কিনা ?
এক্সরে তো করাতেই হবে , মাহি বলল!

মাহি অর্থোপেডিক এর ডাক্তারের সাথে কথা বলল ফোনে !
ডাক্তার নিয়ে যেতে বলল, তার আগে ভালো করে বরফ লাগাতে বলেছে !
রুবা র হাতে পায়ে বরফ লাগিয়ে দিচ্ছে মাহি ! তুমি একটা পাগল রুবা! আচ্ছা আগে তো এরকম বোঝা যায় নাই নাকি আমি খেয়াল ই করি নাই ?
রুবা বিরক্ত চোখে তাকালো , যাও আমি কথা বলব না তোমার সাথে আমাকে বরফ লাগাতে হবে না আমাকে ধরবাও না , বলে রুবা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল!
এই রুবা তুমি রাগ করলে নাকি ! আমি ধরবো না , কে ধরবে শুনি ! আমি তো হাজার বার ধরব এই যে ধরছি বলে মাহি রুবার বাম হাত টা শক্ত করে ধরলো ! ডান হাত দিয়ে ছাড়াতে গিয়ে রুবা চিৎকার দিল !
মাহি বলল, ধীরে !
আমি কত কিছু রান্না করলাম সবাই এক সঙ্গে খাব আর এখন কি হল, রুবা মন খারাপ করে বলছে!
এটা বৃষ্টিতে ভিজার আগে মনে ছিল না, মাহি বলল!
আর আমাকে বৃষ্টি আসার খবর কে দিসে আমার কাছে প্রমাণ আছে ডাঃ মাহির আজগর?
এখন আমার দোষ !
হ্যাঁ তোমার দোষ , বলল রুবা! রুবা সিরিয়াসলি মন খারাপ করলো!
মাহি হেসে রুম থেকে বের হয়ে গেল ।
রুবার চোখে পানি চলে আসছে তার মধ্যে ব্যথায় কষ্ট লাগছে!
মাহি দুপুরে র খাবার ডাইনিং এ লাগানোর কথা বলে রুমে এসে দেখে রুবার চোখে পানি ! ও আড়াল করার চেষ্টা করছে!
মাহি রুবার পাশে গিয়ে বসলো , এই রুবা তুমি কি সত্যি সত্যি মন খারাপ করছো !
রুবা কিছু বলল না !
মাহি ওর দিকে তাকিয়ে বলল, সরি রুবা আমি তোমাকে বকা দিতে চাই নাই তুমি ব্যথা পেয়েছো আমার চোখের সামনে , আমি কিছুই করতে পারলাম না আমার নিজের ই অপরাধবোধ হচ্ছে । তাকাও আমার দিকে প্লিজ ! সরি !
মাহি রুবার চোখ মুছিয়ে দিল! চলো রুবা খেতে যাই !
আমি কি যেতে পারব , রুবা বলল ?
আমি নিয়ে যাচ্ছি বলে মাহি রুবাকে কোলে তুলে নিল ! রুবা বলল, ছাড়ো বাসায় লোকজন আছে !
আরে এছাড়া আর কি উপায় , মাহি বলল?
মাহি ওকে তুলে ডাইনিং এ নিয়ে বসালো !
সাফিয়া বেগম বললেন, তোমরা নিজেদের রুমেই খেতে !
মা রুবা সবার সঙ্গে খাবে বলে এত রান্না করলো কিন্তু ব্যথা পেয়ে যতটা না কষ্ট পাচ্ছে সে সবার সঙ্গে খেতে পারবে না বলে কষ্ট পাচ্ছে বেশি, তাই এখানে নিয়ে এলাম মা !
ঠিক আছে , এখন বল ডাক্তারের কাছে কখন নিচ্ছ বাবা বলল ?
বাবা সন্ধ্যায় নিব !
এত কিছু করেছো রুবা তুমি , এত ভর্তা করছো মাহি অবাক হলো!

দুপুরের খাওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে রুবার ডান পায়ে আর হাতে ব্যথা বাড়তেই থাকলো! হাত ফুলে গেছে পা ও অনেক ফুলেছে !
সন্ধ্যায় সে কান্নাকাটি শুরু করে দিসে ব্যথায় । মাহি , সাফিয়া বেগম দুজন‌ই অস্থির হয়ে গেল ! মাহি ভেবেছিল পড়েছে খুব বেশি কিছু হয়নি হয়তো কিন্তু রুবার কান্নাকাটি দেখে এখন ওর মনে হচ্ছে ভেঙে গেল নাকি ?
রুবা কে কোলে তুলে নিচে নিয়ে এলো মাহি !
মা কে বলল তোমার যাওয়ার দরকার নেই মা ! আমি ফোনে জানাচ্ছি তোমাকে!
গাড়িতে তুলে নিজে রুবার পাশে বসলো , রুবা পা ঝুলিয়ে রাখতে পারছে না !
মাহি ড্রাইভার আশরাফ কে সাবধানে চালাতে বলল, ঝাকি যেন না লাগে!
রুবা কেঁদে অস্থির!
মাহি রুবাকে ধরে বসে আছে , ওর খুব চিন্তা হচ্ছে !

এক্সরে রুমে রুবাকে ঢুকিয়ে মাহি বাহিরে দাঁড়ালো , রিয়াদ কে ফোন দিচ্ছে!
ওর ক্লাসমেট রবিন ওর পাশে এসে জিজ্ঞাসা করলো, মাহির হু ইস দিস বিউটিফুল লেডি ? লুক হার বিউটি ওএমজি , রবিন মাহিকে এক্সরে রুমের গ্লাসের দিকে ইশারা করলো রুবাকে দেখালো!
মাহি বলল, সী ইজ মাই ওয়াইফ !
সিরিয়াসলি মাহির!
মাহির সব বিউটিফুল লেডি যদি তোমার ব‌উ আর প্রেমিকা হয় তাহলে আমাদের কি হবে বলো তো?
সাটআপ রবিন বলে , ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মাহি এক্সরে রুমে ঢুকলো!

এক্সরে করার পর মাহি যা ভয় পাচ্ছিল তাই হলো , রুবার ডান হাতের কব্জি র উপর ফেটে গেছে দুই জায়গায়! আর ডান পায়ের হাঁটুর লিগামেন্ট এফেক্টটেড !

রুবার হাত প্লাস্টার করার সময় অর্থোপেডিক এ ডিউটি ছিল রবিনের মাহি তাকে ধরতেই দেয় নি ! রুবার পায়ের অবস্থা দেখার জন্য ও দেয় নাই ! তোমার দেখার দরকার নাই স্যার আসছে রবিন । স্যার দেখবে আমার কথা হয়েছে স্যারের সঙ্গে!
মাহির কি আশ্চর্য তুমি এরকম করছো কেন ? আমি ডিউটি ডাক্তার! স্যার কে হিস্ট্রি বলব না !
আমি স্যার কে সব বলেছি তুই ভাই অন্য কাজ কর যা!
রবিন বিরক্ত হয়ে চলে গেল !
মাহির মেজাজ খারাপ !

রিয়াদ আসলো মাহি রিয়াদ কে দেখে অনেকটা আস্বস্ত হলো!

হাতে প্লাস্টার করাতে হয়েছে রুবার হাঁটুর টা এত বেশি সিরিয়াস কিছু না কয়দিন পা টা রেস্টে রাখলেই হবে! পরে একটা এম‌আর‌আই করিয়ে নিতে বলল হাঁটুর !

বাসায় রুবাকে মাহি খুব সাবধানে তুলল! রুমে বিছানায় পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে শুয়ে দিল।

সাফিয়া বেগম বললেন, ভাঙল তাই না ?
মা যা ফেটেছে ভাঙ্গার সামিল, অনেক খানি !

ওকে কিছু খেতে দাও মা ওর ওষুধ খাওয়াতে হবে !
মা রুবার খাবারের কথা বলতে বের‌ হয়ে গেল !
মাহি রুবার সামনে এসে বলল, ম্যাডাম আপনি
পারেন ও !
কি পারলাম, রুবা বলল!
এক বৃষ্টিতে ভিজে আচ্ছা শিক্ষা হয়ে গেল আমাদের !
মাহি হো হো করে হাসছে!
রুবাও হেসে দিল!

রাতে রুবার হাঁটুতে অনেক ব্যাথা উঠলো। অর্ধেক রাত ব্যাথায় কোকালো ! তারপর মাহি ঘুমের ওষুধ দিল কড়া রুবা এর পর ঘুমাচ্ছে!
মাহি রুবার মাথার কাছে বসে আছে ! ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে!
মনে মনে বলল, প্রতিটা খুশি বা আনন্দে চড়া দাম দিতে হয় কেন, রুবা তোমাকে !
মাহির মনটা খারাপ হয়ে গেল !

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here