যখন দুজনে একা পর্ব-২৯

0
3644

#যখন_দুজনে_একা

২৯ পর্ব

রুবার হাতের প্লাস্টার টা আছে ,তবে কয়দিনে পায়ের ব্যথা কমেছে। মাহির পরীক্ষা শেষ । পুরো দমে হসপিটাল চলেছে । প্রতিদিন বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয় । আর নাইট ডিউটি থাকলে ফিরতে ফিরতে সকাল!
আজ শুক্রবার মাহির ছুটি !আজ আবার রিয়ার এনগেজমেন্ট !
ওর যেতে ইচ্ছে করছে না রুবার ও হাতে প্লাস্টার ! ও যেতে চাইছে না !
এখন মা যা বলবে তাই হবে !

দুপুরে খেতে বসে মাহি বলল, মা রুবার কি যেতেই হবে প্রোগ্রাম এ ?
রুবা কে একা রেখে তুমি গেলে খারাপ দেখায় !
মা বলল, না গেলে তোমার খালামনি, খালু মন খারাপ করবে না !
তা অবশ্য ঠিক বলেছো মা ! ওর হাতে প্লাস্টার তো তাই বলছিলাম!
এক কাজ করো তুমি আর রুবা আধা ঘন্টা র জন্য যাও তারপর খেয়েই চলে আসবে!
খাওয়াটা বড় কথা না গিয়ে হাজিরা দেয়া আরকি , মাহি বলল!
সাফিয়া বেগম বললেন, সেটাই!
ঠিক আছে মা তুমি আগে চলে যেও আমি আর রুবা পরে আসব!

লান্চ করে ওরা নিজেদের রুমে গল্প করছে।
রুবা বলল, জানো তোমাকে তো বলাই হয়নি মা ঐ দিন খালামনির সঙ্গে শপিং এ গিয়েছিল । আমার জন্য দশটা শাড়ি এনেছে!
আমার এত শাড়ি তারপরও একসঙ্গে এত শাড়ি আনার কি দরকার ছিল বলো !
আমাদের বিয়ের সময় তোমাকে তো কিছুই কিনে দেয়া হয়নি তাই হয়তো মা দিয়েছে !
হু হবে হয়তো! এত শাড়ি থাকার পরও দরকার ছিল না। আমি আর শাড়ি পড়ি কোথায়!
আমি নিজেও তো তোমাকে কখনো কিছু কিনে দিলাম না, রুবা !তোমাকে শাড়িতে ভালো লাগে , মাহি বলল!
আমি তো শাড়ি পড়তেই পারি না ! মা পড়িয়ে দিলে আর সব সময় মা কে বলতে লজ্জা লাগে!
শিখে নাও।
দুজন বেডে শুয়ে গল্প করছে । মাহি ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করছে!
আজ শাড়ি পড়তে পারতাম কিন্তু হাতে তো প্লাস্টার পড়া যাবে না!

আচ্ছা মেয়েদের কি একটা প্রোগ্রাম এ দাওয়াত পেলে কি পড়বে, কিভাবে সাজবে এসব নিয়ে টেনশন শুরু হয়ে যায় তাই না ? আমাদের ছেলেদের কিন্তু ওসব নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই!
তোমাদের ছেলেদের শার্ট প্যান্ট ছাড়া কোন অপশন আছে যে টেনশন করবে ?
কেন আমি তো পাঞ্জাবি পড়তে পাড়ি‌?
আজকে পাঞ্জাবি পড়বে তুমি , রুবা প্রশ্ন করলো ?
না না পাঞ্জাবি পড়ো না প্লিজ!
কেন রুবা , আমাকে ভালো লাগে না পাঞ্জাবি তে ?
লাগে , কিন্তু আমি যেদিন শাড়ি পড়ব তুমি সেদিন পাঞ্জাবি পড়লে ঠিক আছে !
মাহি হো হো করে হেসে উঠলো।
আচ্ছা যাও পড়লাম না তাহলে কি পড়ব‌?
তুমি হসপিটালে যাওয়ার সময় ফুল শার্ট আর প্যান্ট পড়ো আর শার্ট এর হাতা টা ফোল্ড করে উপরে তুলে রাখো যখন তখন অনেক ভালো লাগে !
সিরিয়াসলি রুবা ! আমি তো কখনো ওভাবে চিন্তা করিনি!
রুবা হাসছে !
ঠিক আছে যাও তোমার যেভাবে ভালো লাগে আজ সেভাবেই রেডি হব , মাহি বলল।

রুবা লাল রঙের একটা লং পাকিস্তানি থ্রি পিস পড়েছে ! হাতের স্টিচ খুলে বুয়া অনেক টা ঢিলে করে দিয়েছে , প্লাস্টার হাতটা ঢুকানো গেল তাই ! গলায় একটা গোল্ডের লকেট দিয়ে মোটা চেইন বের করে মাহিকে বলল পড়িয়ে দিতে । মাহি
পড়িয়ে দিল।
এই চেইন টার কথা মনে আছে তোমার , রুবা মাহি কে প্রশ্ন করল?
কোন চেইন এটা ?
যেদিন এই বাড়িতে প্রথম এসেছিলাম তুমি দিয়েছিলে আমাকে দেখে!
ও আচ্ছা , ও তো মা আমার হাতে দিয়ে বলেছিল তোমাকে দেয়ার জন্য ! আমি কিনিনি ।
আমি জানি , রুবা বলল !
ভালো কথা রুবা , বলে মাহি নিজের মানিব্যাগ খুলে তার ক্রেডিট কার্ড বের করে রুবার হাতে দিল এটা রাখো তোমার কাছে ! আমি তো আর সারাক্ষণ বাসায় থাকি না তোমার লাগবে বাহিরে গেলে!
রুবা বলল, কার্ড দিয়ে আমি কি করব ! আমি তো বাহিরে যাই না একা ! আর আমার কাছে টাকা আছে । আমার কার্ড আছে!
আমি জানি ব্যক্তি ডাঃ মাহির চেয়ে রুবা অনেক রীচ তোমার নিজস্ব প্রোপার্টি অনেক , তারপরও স্বামী হিসেবে এটা আমার দ্বায়িত্ব ,রুবা!
রুবা রাখলো মাহির কার্ড টা !
মাহি খুশি হলো ।
তোমার চুল আঁচড়ে দিব রুবা, তুমি এক হাতে তো পারবে না ?
বুয়াদের কাউকে ডেকে দাও ওরাই করে দিবে !
কেন আমি করলে কি সমস্যা , মাহি বলল?
চুল ছিড়ো না প্লিজ !
ঠিক আছে খুব সাবধানে দিব বলে মাহি রুবার চুল আঁচড়ে দিতে নিল।
রুবা এক হাতেই হালকা সাজলো ! চোখে কাজল দিতে গিয়ে হাত কাঁপছে
মাহি বলল, দাও আমি দিয়ে দিচ্ছি !
না চোখে গুতা দিবা !
দিয়ে দেখো গুতা দিব না !
মাহি রুবার চোখে কাজল ঠিক ভাবেই লাগিয়ে দিল !
এরপর দাও লিপস্টিক লাগিয়ে দেই ,যদিও ছেলেরা মেয়েদের কে লিপস্টিক লাগিয়ে দেয় না , ছেলেরা মেয়েদের লিপস্টিক….. কথা কমপ্লিট না করেই হো হো ‌করে হাসতে লাগলো মাহি !
রুবা বলল, কি বললা তুমি শুনি নাই আবার বলো এই আবার বলল প্লিজ ।
থাক যা শুনো নাই বাদ থাক বলে মাহি হাসলো!
মাহি এশশ কালারের শার্ট আর ব্লাক প্যান্ট পড়লো তারপর রুবার মনের মত শার্টের হাত গুটিয়ে উপরে তুলে রুবাকে বলল ঠিক আছে রুবা ?
রুবা হেসে বলল হুঁ !
মাহি আলমারি খুলে শিহাবের কিনে দেয়া একটা পাটেক ফিলিপি ব্রান্ডের ঘড়ি পড়লো !
ভাইয়ার দেয়া ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে রইল মাহি!
রুবা বলল, লাস্টবার লন্ডন গেলাম যখন এই ঘড়ি আমি আর তোমার ভাইয়া অনেক ঘুরে ঘুরে কিনেছিলাম!
আমার পারফিউম, ঘড়ি , বেল্ট এর শখ ও সব সময় কিনে আনত ! এবং সব সময় নিজের চেয়ে বেশি এক্সপেনসিভ টা আমার জন্য আনত!
আমি জানি, রুবা বলল!
নিজের কেনাকাটায় সময় দিত না বেশি কিন্তু আমাদের জন্য সব সময় ঘুরত দশ দোকান তারপর কিনত!
রুবার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে !
মাহি ওর চোখের পানিও আড়াল করলো!

তারপর রুবার কাছে এসে ওর মাথায় হাত রেখে বলল, চলো রুবা আমরা বের হ‌ই !
রুবা চোখ মুছলো!
চলো!
রুবাকে স্বাভাবিক করতে মাহি বলল, আসো রুবা একটা সেলফি তুলি!
থাক !
আরে আসো তো!
দুজন সেলফি তুলল !
চলো এবার।
হুঁ।

ওরা দুজন যখন পার্টি হলে পৌঁছাল অলরেডি বর চলে এসেছে!
সবাই গেস্ট দের নিয়ে ব্যস্ত!
মাহি রুবাকে ধরে ধরে মায়ের কাছে নিয়ে বসিয়ে দিল!
সে ও নিঝুম কে যতটা এড়িয়ে যাওয়া যায় সেই চেষ্টা করছে!
ওর খালা বলল, মাহি যা রিয়া আর বরের কাছে ! নিঝুম রা তো ঐদিকে!
যাচ্ছি খালামনি । বলল ঠিক ই কিন্তু সে ঐ মেয়েদের দল থেকে একশ হাত দূরে থাকতে চাইছে। ইদানিং নিঝুম যে বেপরোয়া কোন কথা কোথায় বলবে ঠিক নাই!
কয়েকবার নিঝুম আশেপাশ দিয়ে গেছে ও না দেখার ভঙ্গি করলো, মাহি !
কোন না কোন আত্মীয় স্বজন এর সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত হচ্ছে সে!
রুবাকেও খেয়াল রাখতে হচ্ছে !
নিঝুমের আচরনের আগামাথা নাই কখন রুবার সঙ্গে কোন ফান করে বসে কে জানে !
খুব অস্বস্তি হচ্ছে ওর!
মেসেজ এর ভাইব্রেশন হলো, অফকোর্স নিঝুম হবে!
সে পকেট থেকে মোবাইল বের ই করলো না !
সাফিয়া বেগম বললেন, তোমরা খেয়ে নাও মাহি !
খাব মা !
একটু পর নিঝুম এসে হাজির, রুবা এসো স্টেজে যাই ! মাহি কে বলল, তুই যাবি না ?
মাহি বলল, রুবা উঠতে পারবে না স্টেজে ওর পায়ের অবস্থা তো জানিস !
তুই আছিস কি করতে কোলে নিবি!
আমি ধরে নিয়ে যাচ্ছি তোর দলবলের হুড়োহুড়ি তে ব্যথা পেয়ে আরেক কাহিনী হবে , মাহি বলল !
নিঝুম বলল ,আমি কিভাবে হেন্ডল করতে হয় জানি মাহি !
ঠিক আছে নিয়ে যা !
রুবাকে ধরে ধরে নিঝুম নিয়ে যাচ্ছে!
মাহি পিছনে পিছনে আসছে!
ওরা রিয়া আর সাজ্জাদ এর সঙ্গে ছবি তুলে বেশিক্ষণ স্টেজে বসলো না ফটোগ্রাফার বর ,ব‌উ এর শট নিবে ।
মাহি মনে মনে বলল, থেঙ্কস ফটোগ্রাফার ভাই বড় বাঁচা বাঁচায় দিলেন!
রুবা কে ধরে নিয়ে আসল মাহি এবার !

খেয়ে রিয়া আপু , মা আর খালামনি কে বলে মাহি আর রুবা বের হয়ে গেল !
বাসায় এসে মাহি রুবাকে বলল, আমি একটু পোর্চের ছাদে বসব , তুমি বসবে সঙ্গে নাকি রুমে দিয়ে আসব ?
বসি তোমার সঙ্গে রুমে গিয়ে একা কি করব ?
আসো তাহলে!
রুবা বলল, রিয়া আপু কে সুন্দর লাগছিল!
হুঁ
সবচেয়ে বেশি নিঝুম আপুকে সুন্দর লাগছিল!
এবার মাহি চুপ করে রইলো !
বিয়ে কবে ?
জানি না মনে হয় নেক্সট মান্থ এ , মাহি বলল!
তখন অনেক মজা হবে তাই না ?
মাহি বলল, আমার কি মজা বিয়েতে মেয়েদের মজা বেশি ! শাড়ি , গয়না, স্যান্ডেল কেনা ! কোন পার্লারে সাজবে এসব এক‌মাস আগে থেকেই চিন্তা করা শুরু করে !
আমি চিন্তা করব ঐ দিন ছুটি ম্যানেজ হবে তো ? এই !
তোমাদের তো বোন নেই থাকলে দেখতা বোন রা একটা প্রোগ্রাম নিয়ে কতটা এক্সাইটেড থাকে!
না থাকলেও দেখি তো আশেপাশের এক্সসাইটমেন্ট !
ফরিদা বুয়া আসছে , রুবা বলর বাবা খেয়েছে বুয়া ?
জী ভাবি !
আম্মা কখন আসব , ভাবি?
দেরি হবে কেন?
না এমনি!
রুবা মাহির দিকে তাকিয়ে বলল,
আমি রুমে যাই তুমি বসো !
ঠিক আছে।
বুয়া আমাকে ধরে নিয়ে যাও!
মাহি বলল, সাবধানে যাও!

রুবা যাওয়ার পর মাহি সিগারেট ধরালো ! মোবাইল বের করে নিঝুম এর মেসেজ পড়লো,
” চোখ সরানো যত সহজ
মন সরানো এত সহজ নয়
ভালোবেসে কেন যে এই
দূরে যাওয়ার মিথ্যে অভিনয়”

প্রোগ্রাম এ ওকে দেখেও না দেখার জন্য এই মেসেজ দিসে! মাহি সিগারেট এ টান দিচ্ছে আর চিন্তা করছে , কিভাবে নিঝুমের এই পাগলামী বন্ধ করা যায়?
আমি কি রুবার প্রতি আরো আরো বেশি এগিয়ে গেলে নিঝুম নিজেকে ঠান্ডা করবে ? মাহি বুঝতে পারছে না !
কি যা তা চিন্তা করছে সে , নিজেই ভাবলো!

সিগারেট শেষ করে মাহি রুমে র দিকে ফিরে আসছে !
নক করল !
ভেতর থেকে রুবা বলল, একটু অপেক্ষা করো !

পরদিন থেকে আবার মাহির ব্যস্ত জীবন । সকালে মাহি যায় সেই রাতে ফিরে ! রুবা অনেক মিস করে মাহিকে কিন্তু সে জানে ও সব সময়ই এরকম ব্যস্ত।
রুবা ওর জন্য মাহির ক্যারিয়ারের ক্ষতি হোক চায় না!
বাসায় গেস্ট আসে শ্বাশুড়ি আর সে গল্প করে। ইদানিং সে তার শ্বশুরের সঙ্গে বসে গল্প করে।
শিহাব যাওয়ার পর সবচেয়ে বেশি বাবা ভেঙে পড়েছিলেন । মা রুবাকে সামলাতে গিয়ে বাবার কষ্টের ভার নিতে পারেন নি।
মা র ই বা দোষ কি একা তিনি কয়দিক সামলাবেন। হয়তো বাবা এরকম না হলে মা নিজেকে কঠিন হাতে নিয়ন্ত্রণ ই করতে পারতো না । নিজেই তখন ভেঙে যেত।
মা এই পরিবারের সবচেয়ে মজবুত খুঁটি মা তার প্রমাণ শিহাব যাওয়ার পর দিয়েছেন।
রুবা কে দেখে আজগর সাহেব বললেন, তোমার হাতের কি খবর?
প্লাস্টার কাটবে কয়দিনে র ভেতর! তার আগে আবার এক্সরে করবে!
তোমার মা কোথায়?
কে যেন এসেছে গল্প করছে বাবা!
ও আচ্ছা।
আগে বাসাটা কত মানুষে ভরা থাকতো তাই না বাবা ? আপনার স্টাডি রুমে লোকজন আসত , যেত !কত রকম নাস্তা বানাতাম আমি ,মা ,বুয়া রা !
এখন কিছু ই নেই বাবা !
বাবা কখনো স্কুলের শেষে নিরব ছাত্র ছাত্রী হীন স্কুলে গেছেন ? খুব ভয়ঙ্কর রকম নিস্তব্ধ থাকে । আমাদের এই বাড়িটা এখন সেই রকম স্টুডেন্ট হীন স্কুল হয়ে গেছে বাবা।
ভয়ঙ্কর রকম নিস্তব্ধ।
কখনও কখনও মনে হয় বাড়ি টাও কাঁদছে বাবা !
আপনি আগের মত নিচে যাবেন বাবা , আদালতে যাবেন ? সন্ধ্যায় লোকজন আসবে কি খেতে দিব আমরা সেই চিন্তা করব! পাতিলের পর পাতিল চা বানাতে হবে !
এই বাড়িটা আগের মত করে দিবেন বাবা আপনি?
যে যাওয়ার তাকে আমরা ফিরাতে পারিনি কিন্তু যারা আছি তারা কি ভালো থাকার অধিকার রাখে না বাবা ?
এই কথা গুলো আমার না মায়ের কথা ! আমাকে আপনার শিহাব যাওয়ার পর মা এভাবেই বুঝাতো !
নিজের বুকে কষ্টের পাহাড় জমিয়ে আমাকে বুঝাত মা!
আপনি কি শুধু শিহাব কে ভালো বাসেন বাবা , মা কে মাহি কে ভালোবাসেন না ?
ওরা আপনার নরমাল জীবন দেখার জন্য ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আমি জীবনে সব হারিয়েছি বাবা । সব হারিয়ে আপনাদের আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি।
হারাতে হারাতে এখন আমি শূন্য ! হঠাৎ এক রাতে অনুভব করলাম , সব কেড়ে নিয়েও ভাগ্য তো আমাকে দিয়েছে মা, বাবা আর মাহি কে ! আমি আর কিছু হারাতে চাই না !
এই তিনজন কে নিয়ে ভালো থাকতে চাই! শিহাব আমাদের মাঝেই আছে বাবা । আমরা ভালো থাকলে ,ও ভালো থাকে !
মাহি ভালো থাকলে, ও ভালো থাকে।
মা ভালো থাকলে ,ভালো থাকে বাবা ।
আপনি ভালো থাকলেও থাকবে বাবা।
আপনার শিহাব কে ভালো রাখবেন না ? রুবা শ্বশুরের চেয়ারে র কাছে এসে ফ্লোরে বসে কথা বলছে। ওর চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে । আজগর সাহেব ও কাঁদছেন রুবার মাথায় হাত দিয়ে!
শ্বশুরের চোখ মুছাতে মুছাতে রুবা বলল, কাঁদবেন না বাবা ! কাঁদবেন না!
কাঁদলে শিহাব কষ্ট পাবে !
আজগর সাহেব বললেন, আমি শিহাব কে কষ্ট দিব না রুবা ! কখনও আর কষ্ট দিব না । তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো তো রুবা?
আপনি কি করেছেন বাবা ?
আমার জন্য শিহাব !
না বাবা আপনার জন্য শিহাবের কিছু হয়নি এটাই ওর ভাগ্যে ছিল ।
ও এত দিন ই আমাদের মাঝে থাকার জীবন নিয়ে এসেছিল বাবা!
আপনার বা আমাদের কিছু করার ছিল না !
আপনি শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছেন বাবা !
আজগর সাহেব রুবার মাথায় হাত রাখলেন! মনে মনে বললেন, আমি তোমাদের জন্যে ও বাঁচতে চাই রুবা !

সেদিন সন্ধ্যায় মাহি হসপিটাল থেকে ফিরে তার অভ্যাস মত গাড়ি থেকে নেমে নিচে বসে সিগারেট খাচ্ছিল তখন তার বাবার এসিস্ট্যান্ট নাজমুল এর গাড়ি ঢুকলো গেটের ভেতরে!
নাজমুল কে দেখে মাহি অবাক হলো অনেক , সাধারণত বাবা যেহেতু প্রাকটিস করছে না তাই তারা কেউ আসে না !
মাহিকে দেখে নাজমুল বলল, কি খবর মাহি? কেমন আছো?
আমি ভালো আপনার কি খবর ?
চলছে ! স্যার কি নিচে ?
বাবা তো নিচে নামেই না , মাহি অবাক হয়ে বলল!
স্যার আমাকে ফোন দিয়েছিল আসার জন্য !
বাবা ফোন দিয়েছে? মাহি বিস্ময় প্রকাশ করে বলল।
ঠিক তখনই কুদরত ভাই বাবার স্টাডি রুম পরিস্কার করে বের হলো!
মাহি হতবাক, দৌড়ে উপরে আসলো ।
দো তলায় মায়ের সঙ্গে দেখা । মাহি মা কে বলল, মা বাবা কি স্টাডি রুমে যাবে ? নিচে নাজমুল ভাই আসছেন?
সাফিয়া বেগম হেসে বললেন, হুঁ!
মাহি বলল, কিভাবে সম্ভব হলো মা ! মাহির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ! বাবা কোথায় ?
মা বলল, বাবা নিচে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে আর সম্ভব হয়েছে তোমাকে ব্যস্ত করে , অস্থির করে রাখে যে মানুষ টা তার জন্য, রুবার জন্য । সে তোমার বাবার সঙ্গে কি বলেছে তারপর দেখি সবাই কে ফোন দিচ্ছে কথা বলছে ! আমাকে বলল, আজ থেকে আবার স্টাডি রুমে সন্ধ্যায় বসবে রুম ঠিকঠাক করতে!
বাবা‌ কোথায় এখন ,মা ?
পরে যাও এখন রেডি হচ্ছে বাবা !
মাহি বলল রুবা কোথায় মা ?
তোমাদের রুমেই হবে দুপুরে ঘুমাচ্ছিল তারপর আর এদিকে আসেনি !
মাহি ছুটে নিজের ঘরের দিকে আসল! ঘরে ঢুকে দেখে ঘর অন্ধকার রুবা ঘুমাচ্ছে তখনো!
মাহি বেড সাইড ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিল!
রুবা পাশ ফিরে ঘুমাচ্ছে !
মাহি রুবার মাথার কাছে বসে মনে মনে বলল, থেঙ্কস রুবা ! তুমি আজ আমাকে আমার আগের বাবাকে ফিরিয়ে দিলে ! আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ র‌ইলাম সারাজীবন!
আজ আমি বুঝলাম কেন মা বলেন, রুবা ই পারে এই সংসারে র সব ঠিক করতে ! সত্যি তুমি পারো! তোমাকে বিয়ে করা নিয়ে আজ থেকে আমার আর কোন জড়তা নেই ! মা তোমাকে কেন হারাতে চায় না, আজ বুঝলাম!
মাহি রুবার কপালে হাত রাখলো । খুব ইচ্ছে করছে রুবাকে জড়িয়ে ধরে বলতে তুমি সত্যিই অসাধারণ রুবা !
মাহির চোখ ভিজে উঠলো !

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here