যখন দুজনে একা পর্ব-৩

0
3965

#যখন_দুজনে_একা

পর্ব ৩য়

রুবা তাকিয়ে আছে মাহির পড়িয়ে দেয়ার চুড়ি গুলো র দিকে। দু’বছর আগে এ বাড়ির ই বড় ছেলে শিহাবের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। পাশের ঘর টাতে তার আর শিহাবের বাসর হয়েছিল।
আজকের এই রাতের মত কষ্টের আঁধারে ডুবে যাওয়া রাত ছিল না সেটা।
নানান আলোয় আলোকিত ছিল এই বিশাল বাড়ি, আত্মীয় স্বজনদের আনন্দ উল্লাসে মুখরিত বিয়ে বাড়ি। ব্যারিস্টার আজগর আলীর বড় ছেলে ব্যারিস্টার শিহাব আজগরের বিয়ে বলে কথা।
শিহাব শুধু তার বাবা মায়ের সুপুত্র ছিল না বংশের সবচেয়ে মুখ উজ্জ্বল করা ছেলে।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় সেরা, খেলাধুলা য় এমনকি গান ও গাইত খুব সুন্দর।
বংশের সবাই শিহাবের উদাহরণ দিতে তাদের সন্তানদের।
সেই শিহাবের সঙ্গে মধ্যবিত্ত জলে ভাসা পদ্মের মত মেয়ে রুবাইয়্যাত ফেরদৌস রুবার বিয়ে স্বপ্নের মত ই ছিল রুবার কাছে।
রুবার বাবা মারা যান যখন ,তখন রুবার বয়স চার বছর। দাদা দাদি কেউ ছিল না । ছাপোষা চাচারা তার আর তার কমবয়সী সুন্দরী বিধবা মায়ের দ্বায়িত্ব নিতে চায়নি।
তার বেসরকারি কলেজে লেকচারার বাবা হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান যখন তখন কিছু ই রেখে যেতে পারেন নি।
অগত্যা তাদের ঠাঁই হয় মামা মামী আর বৃদ্ধা নানির সঙ্গে ।
গ্রামের নানি বাড়িতে তাদের যে খুব যে সন্মানের জীবন ছিল তা কিন্তু নয় । তার মা মামাদের বাচ্চাদের পড়াশোনা করাতো, খাওয়ানো, গোসল সংসারে মামিদের ফরমাইস খাটতো।
একবছরের মাথায় মা যে স্কুলে পড়াশোনা করেছিল সেই স্কুলে র হেডস্যার মাকে স্কুলের ক্যারানির একটা চাকরি দেয়।
হাজার তিনেক টাকা বেতন।
সারাদিন স্কুলের কাজ করে বাড়িতে আবার সব বাচ্চাদের পড়াতে হত মায়ের।
মায়ের সাথে তখন সে স্কুলে যেত।

একদিন সেই হেডস্যার নানি বাড়িতে এলেন নানি আর মামাদের সাথে কথা বলতে। বিষয় ছিল, তার ভাগ্নের মাস ছয়েক আগে স্ত্রী মারা গেছে এখন তারা চাইছে ভাগ্নে কে আবার বিয়ে দিবেন। ভাগ্নে ঢাকাতে গার্মেন্টসে মালিক, তিন তলা বাড়ি আছে । বিয়ের পনের বছরেও সন্তানের মুখ দেখতে পারেনি। সম্প্রতি বিভিন্ন রোগে ভুগে স্ত্রী মারা গেছে।
রুবার মা রেবেকা কে তার খুব পছন্দ।
নানি মামারা খুব খুশি তার বিধবা মায়ের এত ভালো বিয়ের সম্বন্ধ আসলো দেখে!
হেডস্যার শুধু বললেন, কিন্তু আছে একটা।
সেই কিন্তু টা ছিলাম আমি।
আমাকে ঐ সংসারে তারা চায় না । আমি নানি বাড়িতে ই থাকব মা আসবে টাকা পয়সা আর প্রয়োজনীয় সব দিতে মাঝে মাঝে।
এই কথা শুনে মা কোন ভাবেই রাজি হয়নি।
মামারা হেডস্যার কে বললো, আপনারা আসেন একদিন ছেলে সহ আমরা এর মাঝে বুঝিয়ে রাজি করাচ্ছি।
কিন্তু মা কোন ভাবেই আমাকে দূরে রেখে থাকবে না । সবাই মাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।
মামিরা অশান্তি শুরু করলো।
তিনদিন পর একটা সাদা মাইক্রোবাসে করে ছয় সাত জন লোক আর হেডস্যার এলেন।
মামিদের পীড়াপীড়ি তে মা শাড়ি পড়ে ঘোমটা টেনে তাদের সামনে গেল।
মাকে তাদের খুব পছন্দ হলো।
আমাকে নিয়ে সমস্যা বাঁধলো।
এক ফাঁকে আমি যখন পুকুর পাড়ে বসে ছিলাম তখন একজন লম্বা করে লোক সেখানে সিগারেট খাচ্ছিলেন তিনি ও সেই গাড়িতে এসেছিলেন।
আমার নাম ধাম জানতে চাইলো। কি পড়ি, সারাদিন কি করি। পড়ে জানলাম উনিই শ‌ওকত সাহেব যিনি মাকে বিয়ে করতে এসেছেন।
ভেতর ঘরে মা কান্নাকাটি করছে।
হঠাৎ সেই শ‌ওকত সাহেব বলে উঠলেন, তিনি রেবেকা র মেয়ে সহ ই বিয়ে করতে ইচ্ছুক।
তিনি কোন মা আর মেয়ে কে আলাদা করতে পারবেন না।
মুহূর্তে আনন্দ খেলে গেল নানি বাড়িতে।
সেই রাতেই মায়ের বিয়ে হয়ে যায় শ‌ওকত ওসমান নামের পঞ্চাশ উর্ধো মানুষ টা র সঙ্গে।

মায়ের সাথে ঐ গাড়িতে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে নানিবাড়ি থেকে র‌ওনা দেই আমরা। আসার পথে আমি শ‌ওকত সাহেব র কোলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তিনি পরম মমতায় জড়িয়ে রেখেছিলেন।
যতদিন বেঁচে ছিলেন তিনি সেই মমতা বেড়েছে রুবার জন্য কমেনি কখনো।

ঢাকার উত্তরায় তার বাড়িতে মায়ের নতুন সংসার শুরু হলো। কাছেই একটা স্কুলে তাকে ভর্তি করে দেয়া হলো।
প্রথম দিন ই শ‌ওকত সাহেব বললেন তাকে যেন রুবা বাবা ডাকে।
শুরুতে রুবার খুব কষ্ট হতো ডাকতে কিন্তু তিনি পিতার স্নেহ এত দিয়েছেন বাবা না বলার প্রশ্নই আসে নাই। তিনি রুবাইয়্যাত আর তার মাকে ভালোবাসা , সন্মান যা দিয়েছেন তার তুলনা হয় না।
কিন্তু নিজের সন্তানের মুখ তিনি দেখতে পারেন নি।
ঢাকার নামকরা কত ডাক্তারের কাছে মা’কে নিয়ে গেছেন এমনকি কলকাতা অব্দি ছুটেছেন।
সবখানে সমস্যা তাঁর ই চিহ্নিত হতো। একপর্যায়ে তিনি ধরেই নিয়েছেন সন্তান সুখ তার কপালে নেই।
তাই রুবার মাঝেই নিজের সন্তানের সাধ পূরণ করেছেন।

রুবার যখন বিশ বছর বয়স তখন তার মা রেবেকা র হার্টের জটিল সমস্যা ধরা পড়ে তখন রুবা একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে বিবিএ পড়ে।
শ‌ওকত সাহেব ঢাকার বড় বড় কার্ডিওলজিস্ট দের দেখালেন । মাস ছয়েক পর মায়ের হার্টের বাইপাস সার্জারি করাতে হয়।

সুস্থ হয়ে মা বাড়ি ফিরলেও পুরোপুরি সুস্থ বলা যায় না তাকে।
তখন থেকেই রেবেকা মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য শ‌ওকত সাহেব কে জুড়াজুড়ি শুরু করলেন।
প্রথম প্রথম শ‌ওকত সাহেব পাত্তা দেননি স্ত্রী র কথা। বলতেন, আমাদের মেয়ে লেখাপড়া শেষ করে আমার বিজনেস দেখবে তারপর বিয়ে।
কিন্তু মায়ের মাথায় বিয়ে দেয়ার চিন্তা জেকেই বসেছিল।
এর মধ্যে একদিন শ‌ওকত সাহেব এর ছোট বোন তার ছেলের জন্য রুবার হাত চেয়ে বসলো ।
শ‌ওকত সাহেব তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন । বখাটে, নেশাগ্রস্ত ছেলের জন্য তার মেয়ের প্রস্তাব দেয়ার সাহস দেখে।
এই নিয়ে আত্মীয় স্বজন অশান্তি শুরু করলো । তাদের সব সময় ই নিঃসন্তান শ‌ওকত সাহেব র সম্পত্তির উপর নজর ছিল রুবার মাধ্যমে যদি তা আদায় করা যায় সে জন্য অনেক চেষ্টা করেছে।

এর মধ্যে মায়ের শরীর খুব খারাপ করে আবার। শ‌ওকত সাহেব ঠিক করলেন স্ত্রী কে নিয়ে সিঙ্গাপুর যাবেন।
একদিন রেবেকা, রুবা সহ তারা তিন জন সিঙ্গাপুরে উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।
রেবেকা কে ভর্তি করা হলো, সিঙ্গাপুরে র বিখ্যাত মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ।
সেই হাসপাতালে রুবাকে দেখেন তার শ্বাশুড়ি সাফিয়া বেগম ।
আজগর সাহেবের হার্টের চিকিৎসা র জন্য তখন সাফিয়া দুই ছেলে ব্যারিস্টার শিহাব আজগর আর ছোট ছেলে ডাঃ মাহির আজগর সহ পুরো পরিবার নিয়ে সিঙ্গাপুরে ।
রেবেকা র ডাক্তার আর আজগর সাহেবের ডাক্তার ছিলেন এক‌ই । সেখানেই রুবাকে প্রথম দেখেই সাফিয়ার পছন্দ হয়ে যায় ।
বিদেশ বিভূঁইয়ে দেশের লোক পেলে হৃদ্যতা যেমন বাড়ে দুই পরিবারের মধ্যে তাই হলো। ছেলে কে ও পরিচয় করিয়ে দেন সবার সঙ্গে সাফিয়া বেগম।

রেবেকা একটু সুস্থ বোধ করায় ডাক্তার তাদের ডিসচার্জ করে দেয় ওরা দেশে ফিরে আসে।

আজগর সাহেবের হার্টে রিং পড়ানো হয় । হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ পেয়ে তারা হোটেলে গিয়ে উঠে।
হোটেল রুমে শিহাব কে ডেকে সাফিয়া বেগম আর আজগর সাহেব জানতে চাইলেন রুবাকে তার কেমন লেগেছে?
শিহাব উল্টো তাদের প্রশ্ন করলো তোমাদের কেমন লেগেছে ?
সাফিয়া বেগম তো খুব উচ্ছাসিত হয়ে বললেন আমার তো দারুন লেগেছে!
আজগর সাহেব বললেন ছেলে কে বিয়ে তুমি করবে তোমার মতামত টাই আসল।
বাবা, মা আমার কাউকে পছন্দ নেই তোমাদের পছন্দ আমার ও পছন্দ।
এভাবে বললে হবে না ঠিক করে বলো চিন্তা করে বলো।
মা আমার পছন্দ হয়েছে মেয়েটিকে।
তাহলে ফাইনালী দেশে গিয়ে ওদের বাসায় আমরা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

এদিকে রেবেকা কে নিয়ে দেশে আসার পর শ‌ওকত সাহেব এর শরীর ই খারাপ হয়ে গেল তিনি সবাই কে ততটা বুঝতে দিলেন না ।
এবার মৃত্যু চিন্তা তাকেও পেয়ে বসলো।
তিনি চিন্তায় পরে গেলেন, তার এবং রেবেকা র অবর্তমানে রুবার কি হবে?
উনার আত্মীয় স্বজন রা তো শকুনের মত বসে আছে সম্পত্তি পাওয়ার আশায় ।
সেই সময় একদিন সাফিয়া বেগম শ‌ওকত সাহেব ৎকে ফোন দিলেন , রেবেকা কে দেখতে তারা বাসায় আসতে চায়। শ‌ওকত সাহেব খুব খুশি মনে তাদের আমন্ত্রণ জানালেন।

সেদিন বিকেলেই সাফিয়া বেগম আর আজগর সাহেব এলেন রুবাদের বাসায়।
রেবেকা র বিছানা ছেড়ে উঠার ক্ষমতা নাই । রুবাই লোকজন নিয়ে সব আয়োজন করলো।

রেবেকা র রুমে বসে গল্পের মাঝে সাফিয়া বেগম বলে উঠলেন তার আসার উদ্দেশ্য শুরু রেবেকা কে দেখা না তিনি তার বড় ছেলে শিহাবের জন্য তাদের মেয়ে রুবা কে চান।

শ‌ওকত আর রেবেকা যেন অথৈই সমুদ্রের মাঝে ভেলা না জাহাজ খুঁজে পেল।
সাফিয়া আর আজগর সাহেব কে শ‌ওকত জানালেন রুবা তার সন্তান নয় রুবার মায়ের অতীত বললেন।
কিন্তু এটা নিয়ে সাফিয়া বেগম আর আজগর সাহেবের কোন মাথাব্যথা নেই । তারা শুধু রুবা কে চায়।

খুশিতে রেবেকা সেদিন অনেক কাঁদলেন।

এর সপ্তাহ পেরোনোর আগেই রেবেকা মারা গেলেন।
মায়ের হঠাৎ মৃত্যু তে রুবা শোকে পাথর হয়ে গেল।
শ‌ওকত সাহেব মেয়ে কে আগলে রাখলেন কিন্তু তার চিন্তা র শেষ হয় না ।
ঘর ভরে গেছে অবাঞ্চিত আত্মীয় স্বজনে।

তিনি ও একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লেন । আত্মীয়-স্বজন দের কথাবার্তা তার কানে আসে । তিনি উকিল দিয়ে উইল আগেই করে রেখেছেন কিন্তু তার রুবা যে সহজ সরল আর নরম এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে কিভাবে কারো সাহায্য ছাড়া থাকবে।
এসব চিন্তা করতে করতে তিনি সাফিয়া বেগম কে ফোন দিলেন।
তাদের বাড়িতে গিয়ে রুবা আর শিহাবের বিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি সেরে ফেলতে চান জানালেন।

সাফিয়া বেগম আর আজগর সাহেব ও সব শুনে পরবর্তী এক মাসের ভেতর বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেল।
শ‌ওকত সাহেব খুব ধুমধাম করে বিয়ে দিলেন মেয়ের।
মেয়ের হাত সাফিয়া বেগম এর হাতে দিয়ে তিনি বলে উঠলেন, এই মেয়ে ছোটবেলা থেকে খুব দুঃখি জলে ভাসা পদ্মের মত ভেসে যাচ্ছে বিয়াইন আপনার বাসাই যেন তার শেষ আশ্রয় হয় কথা দেন!

সাফিয়া বেগম ও আবেগ‌আপ্লুত হয়ে গেলেন শ‌ওকত সাহেব র কথায়। আপনি চিন্তা করবেন না আমি বড় বড় কথা বলব না আমি আপনাকে শুধু কথা দিলাম ওর জীবনে র দ্বায়িত্ব আজ থেকে আমার । আর আমি আমার কথার খেলাপ করি না।

সেই থেকে সাফিয়া বেগম শ্বাশুড়ি নয় রুবার মায়ের স্থান দখল করে আছে।

রুবাদের বিয়ের তিন মাস পর ই শ‌ওকত সাহেব ইন্তেকাল করেন । এই পৃথিবীতে শ্বশুর বাড়ি র লোকজন ছাড়া আর কেউ নেই রুবার ।

শিহাবের ব‌উ হিসেবে যেদিন এবাড়িতে এসেছে আজগর সাহেব র রাজপুত্রের ব‌উ দামী গয়না আর শাড়িতে জড়ানো রুবাকে দেখে কেউ চোখ ফেরাতে পারেনি।

শিহাবের সঙ্গে বিয়ের আগে তার কথাও হয়নি কিন্তু শিহাব কে বিয়ের পর একটু একটু করে জেনেছে। শিহাব ও তাকে আদরে, ভালোবাসায় পূর্ণ করে রেখেছিল।
সে শিহাবের মনের মত হয়ে উঠার চেষ্টা করেছে । শ্বশুর বাড়িতে সে রাজকন্যা র মতো ই উড়ে বেড়াতো।
শিহাব, সাফিয়া বেগম, আজগর সাহেব আর দেবর মাহির কে নিয়ে তাদের সুখের সংসার ।
মাহির খুব পড়ুয়া ছেলে । খুব ভালো করছে সে তার ডাক্তারি প্রফেশন এ খুব খাটাখাটুনি করে সারাদিন আর খুব সুন্দর ভায়োলিন বাজায়।
দুই ভাই যেন এক আত্মা।
মাহি তার ভাই শিহাব কে খুব ভালোবাসে । দিন শেষে দুই ভাই গল্প আড্ডায় মেতে উঠতো।

দেড়টা বছর স্বপ্নের মত কেটে যায় রুবার ।
এর মধ্যে একদিন জানা গেল রুবাইয়্যাত মা হবে। সেদিন এবাড়ির আনন্দ দেখে কে ।
লজ্জায় রুবার সবার সামনে আসতে কষ্ট হলো কিন্তু তার শ্বাশুড়ি তাকে মাথায় করে রাখলেন।
হঠাৎ তার শ্বশুরের একটা সেমিনারে কানাডা যাওয়ার কথা সাফিয়া বেগম ও সঙ্গে যাবেন কিন্তু রুবার এই অবস্থায় তিনি রুবাকে রেখে যাবেন না ঘোষণা দিলেন।
যাওয়ার কদিন আগে শরীর টা একটু খারাপ লাগায় আজগর সাহেব শিহাব কে সেমিনার এটেনডেন্ট করতে কানাডা যেতে বললেন।

একদিন বিকালে শিহাব কানাডার উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেল সেই ছিল তার শেষ যাওয়া । আসার পথে আইসল্যান্ড এর কাছে আটলান্টিক এ শিহাবের প্লেনটা শুধু ক্রেস করলো না এই বাড়ির সব আনন্দ, এই বাড়ির প্রতিটি মানুষের ঘুম, হাসি , স্বপ্ন সব বরফ শীতল আটলান্টিক এ হারিয়ে গেল।

খবর টা শোনার পর দুটো মাস রুবা কিছুই মনে করতে পারে না । সে আর তার মাঝে ছিল না ।
জীবনের এত বড় শোকেও সাফিয়া বেগম রুবাকে আগলে রাখছেন।
সেই শোকে আর একটা মানুষ পাথর হয়ে গেছে তিনি আজগর সাহেব । সেই থেকে তিনি কোন কথা বলেন না।
খুব কম কদাচিৎ।
একটা অপরাধবোধে ভুগছেন তিনি । যাওয়ার কথা ছিল তার , তিনি শিহাব কে পাঠিয়েছিলেন।
মরে যাওয়ার কথা ছিল তার । তার মৃত্যু টা শিহাব কে নিয়ে গেছে।

চঞ্চল মাহি সেই থেকে চুপচাপ হয়ে গেছে।
রুবার হাই রিক্সি প্রেগন্যান্সি মাহি আর সাফিয়া বেগম শিহাবের শেষ চিহ্ন বয়ে বেড়ানো রুবাকে যে কোন উপায়ে সুস্থ রাখতে চায়।

কিন্তু মানুষ যা চায় তা কি আর হয়? এর মাঝে শ‌ওকত সাহেবের আত্মীয় স্বজন আর রুবার মামারা হাজির নিজেদের মেয়ে তারা নিয়ে যাবে!
কি আশ্চর্য বাবা মা জীবিত থাকা অবস্থায় যাদের কোন অস্তিত্ব ছিল না তারা আজ এসে হাজির তাদের উদ্দেশ্য সাফিয়া বেগম ভালোই বুঝেছিলেন।
কঠিন হাতে তিনি তাদের সামলেছেন।
কিন্তু এর জন্য তাকে দিতে হয়েছে ছেলে মাহির জীবনের সুখ, স্বপ্ন কে বলিদান।

যেদিন সাফিয়া বেগম রুবাকে এসে বললেন মাহিকে বিয়ে করতে রুবা অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে ছিল মায়ের দিকে ।
সাফিয়া বেগম অঝোরে কেঁদে বারবার বলছিলেন, মা রে তোকে আর শিহাবের সন্তান কে আমি হারাতে চাই না । তুই আমাকে ফিরিয়ে দিস না ।

রুবা তার শ্বাশুড়ি কে ফিরিয়ে দিতে পারেনি।

তাই আজ এই রাতে মাহির বিয়ে করা স্ত্রী হিসেবে মাহির ঘরে মাহির বিছানায় বসে আছে মাহির দেয়া এই চুড়ি জোড়া পড়ে।

তার এই বাইশ বছরের জীবনে আর কত কি দেখতে হবে ?
সে জানে না !

তাকিয়ে দেখে বারান্দায় তার‌ই মত চোখের পানি মুছছে মাহি!

কদিন আগে ও ভাবি ভাবি করে ডাকত, খুনসুটি করতো যে মানুষ টা আজ তার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারছে না সেই মাহি!

সম্পর্কে র যে বাঁধনে যে পরিবর্তন এসে গেছে সেটাকে কিভাবে পাড়ি দিবে তারা।

শিহাব শিহাব তুমি এভাবে আমাকে রেখে যেতে পারলে !!!

আমাকে আর মাহিকে তুমি কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলে শিহাব!

(চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here