যখন দুজনে একা পর্ব-৩৩

0
3226

#যখন_দুজনে_একা

৩৩ পর্ব

আজকাল বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করে রুবা মাহি ড্রাইভ করছে আর চিন্তা করছে ! একটা সময় হঠাৎ এই বাসায় আসার পথটা অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছিল। কষ্টের তীব্রতা যখন এত বেশি হয়েগিয়েছিল তখন হসপিটালে পড়ে থাকতেই ভালো লাগতো। নিজেকে সিগারেটের ধোঁয়া তে উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করতো।
আর আজকাল, পুরোনো সেই স্বাভাবিক বাড়ি আর আমার জীবনে নতুন তুমি রুবা। মাহি হাসছে একা একা।
বাড়ির গেটের কাছে এসে দেখে গেটের সামনে সিটি কর্পোরেশনের লোকজন গর্ত করে কি কাজ করছে ,গাড়ি ঢুকানো যাবে না।
ওর গাড়ি দেখেই দারোয়ান দৌড় দিয়ে কাছে এসে বলল ,ভাইয়া আর বেশিক্ষন লাগবে না এদের কাজ মুটামুটি শেষ । গাড়ি বাহিরে থাকুক। আশরাফ গাড়ি ঢুকাব আপনে ঢুইকা পড়েন বাসায়।

মাহি গাড়ি সাইডে পার্ক করে ,চাবি দারোয়ান এর কাছে দিয়ে বাড়িতে ঢুকলো।
তখনো মাহি জানে না তার জন্য উপরে কি অপেক্ষা করছে!
আজ সে অনেক আগেই চলে এসেছে, রুবাকে সারপ্রাইজ দেয়া যাবে ভাবতে ভাবতে দোতলায় উঠে এলো মাহি। গাড়ির আওয়াজ ও পায়নি রুবা।

প্রতিদিনের মত ডাইনিং এর বেসিনে হাত ধুয়ে ফ্রীজ খুলে পানি বের করলো।
এই সময় কাজের লোকজন নিজেদের ঘরেই থাকে। রুবা অবাক হবে ওকে দেখে যখন ভাবছে আর বোতল থেকে পানি খাচ্ছে মাহি , হঠাৎ তীব্র চিৎকারের শব্দ এলো ওর কানে।
কি ব্যাপার কার চিৎকার! রুবার গলা না!
মাহি দৌড়ে ওর রুমে ঢুকলো , রুবা বলে ডাক দিল !
রুমে রুবাকে না পেয়ে ওর মাথা খারাপ হয়ে গেল ! ও রুম থেকে বের হয়ে আবার রুবার নাম ধরে ডাকছে!
হঠাৎ বাড়ির পেছনের বারান্দায় গলার আওয়াজ শুনে মাহি ওদিকে ছুটে গেল!
ওকে দেখে দুই বুয়া থতমত অবস্থা।
রুবা কোথায়?
কিছু না বলেই দুজন সামনে থেকে ছুটে পালিয়ে গেল।
বারান্দায় রুবা দাঁড়িয়ে আছে উল্টো ঘুরে, মাহি দৌড়ে কাছে গেল ।
কি ব্যাপার তোমার চিৎকার শুনলাম মনে হয় বলে রুবার দিকে তাকিয়ে দেখে মাহি রুবার নাকে রক্ত!
মাহি চিৎকার দিয়ে উঠলো, কি হয়েছে তোমার !

মাহি পুরো হতভম্ব অবস্থায় ওকে ধরলো।
রুবা ততক্ষণে ভয়ে জমে গেছে! কিছুনা বলে সে মাহির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রুমের দিকে দৌড় দিল।
মাহি রুবা দাড়াও বলে পিছন পিছন আসছে।
রুমে ঢুকেই রুবাকে আটকালো! ঘটনা কি তাকাও এদিকে!
রুবা নাকে রক্ত দেখছি কেন?
রুবা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, নাক ফোড়াচ্ছিলাম ! প্লিজ প্লিজ বকবা না প্লিজ।
মাহি রুবার কথা শুনে নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলল!
রুবা তুমি বুয়াদের দিয়ে নাক ফোড়াচ্ছিলে ? তোমার কি মাথা নষ্ট হয়ে গেছে! ইনফেকশন হবে তো! তোমাকে কে বলছে নাক ফোঁড়াতে ?

লাইলি বুয়া পারে ফোঁড়াতে , রুবা বলল!
রুবা এক দম চুপ, ধমকে উঠলো মাহি!
সুই কি স্টেরিলাইজ করা ছিল ? জানো না ইনফেকশন হ‌ওয়ার সম্ভাবনা থাকে! কথা বলছো না কেন?
এই তো বললা রুবা একদম চুপ, বলেই রুবা কেঁদে দিল!
মাহি তাকিয়ে আছে ওর দিকে ! রুবা কাঁদতে কাঁদতে ওয়াস রুমে ঢুকলো।
মাহি ওর পিছনে এসে ঢুকলো !
তারপর ওর হাত ধরে টেনে রুমে আনল।
হাত ছাড়ো বলে, রুবা হাত ছুটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সোফায় বসিয়ে মাহি রুবাকে বলল, আচ্ছা কয়দিন পর পর এরকম ধামাকা আমাকে না দিলে কি তোমার ভালো লাগে না , রুবা?
মাহি আফটার শেভ নিয়ে এসে তুলা দিয়ে ওর নাকে ধরলো। সেখানে সূতা বাঁধা রক্ত জমে আছে !
আমি তোমার জন্য ই নাক ফোড়ালাম ঠিক আছে, আর সেই তুমি এত বকাঝকা শুরু করলে বলেই রুবা কেঁদে উঠলো!
মাহি পুরাই তাজ্জব হয়ে বলল, আমি কখন তোমাকে নাক ফোঁড়াতে বললাম!
এবার মাহি হেসে দিল ! এত বড় পাগলের সংসার করতে হবে আমাকে , বলে হাসছে মাহি!
কেন মনে নাই যেদিন এই পায়েল টা দিলে তখন বলেছিলে, রুবা তোমার নাক ফুল পড়লে খুব ভালো লাগবে?
ও আচ্ছা সেই জন্য তুমি আজকে এই কাজ করেছো?
রুবা চুপ করে আছে, চোখের পানি মুছছে।
মা জানে, তুমি তো মাকে না বলে কোন কাজ করো না ?
না সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলাম !
রুবা প্লিজ এই টাইপের সারপ্রাইজ দিতে যেও না হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে আমাদের , মাহি হাসলো।
রুবার পাশে বসে মাহি বলল, আমাকে বা মা কে বললে আমরা পার্লারে নাকি মেশিন দিয়ে নাক কান ফোড়ায়, সেখানে নিয়ে গিয়ে করানোর কথা বলতে পারতাম ! এই যে বুয়াকে দিয়ে করালে ওর হাতে জার্ম থাকতে পারে , সুই এ জার্ম থাকতে পারে, এখন ইনফেকশন হলে এই সুন্দর নাকের কি হবে হুঁ!
গরম পানি দিয়ে সুঁই ফুটিয়ে নিয়েছি।
আচ্ছা ঠিক আছে এখন আর কাঁদতে হবে না , বলে মাহি ওর হাত ধরলো।
আমাকে এভাবে কেউ বকে না, বিড়বিড় করে বলল রুবা!
কাছে টেনে মাহি বলল, আমি তো বকা দিব‌ই যখন এরকম পাগলামী করবে!
আচ্ছা সূতা কেন নাকে , নাক ফুল কোথায়?
নাক ফুল নাই, বুয়া বলল হাজব্যান্ডের নাক ফুল কিনে দিতে হয়!
তাই এটা নিয়ম, দেটস গুড আমি এক্ষুনি কিনে এনে দিচ্ছি ! বলে মাহি উঠে দাঁড়ালো!
রুবা ওর হাত ধরে বলল, এখন লাগবে না পরে হলেও হবে!
না কেন, আমার জন্য এই কষ্ট তুমি করতে পারলে আমি এক্ষুনি কিনতে যেতে পারি না ?
কি পাগলামি করছো, হসপিটাল থেকে এসেছো লান্চ ও হয়নি তাই না ?
তোমার সঙ্গে থেকে পাগলামী শিখছি রুবা , হেসে বলল মাহি!
তোমার খাবার দিতে বলব?
না আমি লান্চ করেছি , নিঝুমের সঙ্গে!
ঠিক আছে , চা তো খাবে !
না কিছু খাব না ! তুমি এদিকে এসো দেখি নাকের কি অবস্থা! সত্যি করে বলো ব্যথা হচ্ছে কিনা ?
অল্প ব্যথা হচ্ছে!

সাফিয়া বেগম দরজায় নক করছেন!
মা এসো ভেতরে!
তিনি ঘরে ঢুকে বললেন, কি অবস্থা দেখি রুবা !
কত বড় পাগলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছো মা আমাকে দেখো!
রুবা তুমি নাক ফোঁড়াতে চাও আমাকে বলতে? আমি পার্লারে নিয়ে যেতাম!
মা তোমার রুবা সারপ্রাইজ দিতে চাইছে সবাই কে আমরা এখন সারপ্রাইজ এর পরিবর্তে হাজার ভোল্টের শক এ আছি!
মা দেখেন ও বলেছিল নাক ফুল পড়লে ভালো লাগবে এখন আমার সঙ্গে কি ব্যবহার করছে দেখেন!
আমি কি বলেছিলাম বুয়াকে দিয়ে এই কাজ করতে! আর ভালো কথা ঐ দুই সার্জিক্যাল স্পেশালিস্ট কোথায় মা ?
মাহি, ওরা তোমার ভয়ে অস্থির হয়ে আছে ! আমি বলছি রুবার ছেলেমানুষি র সঙ্গে তাল না মিলাতে। এখন তুমি দেখো ওর নাকে সব ঠিক আছে কিনা ?
দেখো মা একটা সূতা লাগিয়ে রেখেছে , মাহি বলল !
আমি নাক ফুল এনে দিচ্ছি , বললেন সাফিয়া বেগম।
মা আমি কিনে দিচ্ছি তুমি অস্থির হয়ো না , মাহি বলল!
রুবা ওয়াস রুমে ঢুকলো।

মাহি মাকে বলল, মা ও
রুবা কি আগেও এমন ছেলেমানুষি করতো?
না মাহি এই রুবাকে দেখে আমি অবাক হচ্ছি! সারাদিন বাসায় কি যে ছুটে বেড়ায় , সাফিয়া বেগম বললেন!
আমার কিন্তু মা ভালোই লাগে ওর চঞ্চলতা টা মনে হয় বাসায় একটা প্রান আছে।
আমারো মাহি!
চা খাবে তুমি ,মাহি?
দিতে পারো !
আমি রেডি করতে বলি, তোমার বাবা আবার বাহিরে যাবে একটু!
কোথায় মা ?
আমি জিজ্ঞেস করি নাই , এখন করব গিয়ে ।
মা উঠে গেল।

মা যাওয়ার পর মাহি নিয়াজ কে কল দিলো !
নিয়াজ মাহি বলছি
হ্যাঁ আমিও ফোন দিচ্ছিলাম তোকে।
কোথায় বসবি ?
মাহি তুই সিক্রেট রেসিপি তে চলে আয় তোর বাসার কাছেই!
আটটার দিকে আসছি , মাহি বলল!
ঠিক আছে , দেখা হচ্ছে মাহি!

মাহি বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিলো!
রুবা কোথায় তুমি?
রুবা ওয়াস রুম থেকে গোসল করে বের হলো !
এত অবেলায় গোসল করলে যে রুবা?
আজ দুপুরে করিনি , রুবা বলল!
চুল শুকিয়ে নাও ঠান্ডা লেগে যাবে!
তার আগে এদিকে এসো !
রুবা টাওয়ালে চুল মুছতে মুছতে মাহির কাছে এলো !
মাহি উঠে বসে ওর হাত দুটো ধরলো !
সরি রুবা , তোমাকে ধমক দিসি ! তুমি এরকম কাজ আর করবে না বলো!
রুবা বলল, ঠিক আছে ।
এখন বসো এখানে দেখি তো নাকের অবস্থা !
মাহি রুবার নাক দেখে বলল, রাতে ওষুধ খেতে হবে আমি বাহিরে যাব একটু পর ।ওষুধ নিয়ে আসব , আসার সময়।
তুমি সত্যিই খুব কষ্ট পেয়েছো আমার কথায়?
রুবা বলল, তখন পেয়েছিলাম!
এখন কষ্ট কমেছে? বলে মাহি হাসলো!
হু কমেছে।
তোমার কেমন নাক ফুল পছন্দ ?
একটা হলেই হলো!
না তারপরও !
তোমার পছন্দ অনুযায়ী একটা হলেই হবে , রুবা বলল!
ঠিক আছে। মাহি বলল, তোমার গা থেকে কি সুন্দর একটা ঘ্রাণ আসছে!
রুবা হাসলো!
দরজায় নক করার শব্দ হচ্ছে!
মাহি বলল, আচ্ছা এদের কি সমস্যা বলো তো? আমি একটু তোমার কাছে বসলেই এরা দরজা নক করা শুরু করে ?
রুবা হো হো হেসে দিল !
না সিরিয়াসলি রুবা !
কে ?
ভাইজান চা খাইতে ডাকে আম্মা !
যাও আসছি!
চলো মা ডাকে , রুবা বলল!
সিরিয়াসলি ব্যাপার টা খেয়াল করেছি রুবা ! আমি প্রমাণ করে দিব দেখো। নেক্সট টাইমও এমন হবে!
রুবা হাসছে।

সবাই মিলে চা খাওয়া শেষ করলো, মাহি রুবাকে ডেকে বলল, আমি একটু বাহিরে যাব ঐ দিন দেখা হলো না তোমার সঙ্গে আমার ফ্রেন্ড নিয়াজের ,ওর সঙ্গে দেখা করতে!
রুবা বলল, ঠিক আছে !
তুমি মার সাথে গল্প করো। বেশি সময় লাগবে না !

মাহি রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই নিয়াজ এগিয়ে এলো!
হাত মিলিয়ে , মাহি বলল আর কেউ আসবে ?
না আমি তোর সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলাম , নিয়াজ বলল!
মাহি বলল, এনিথিং সিরিয়াস ?
নিয়াজ বলল, আয় আগে বসি !
দুজন একটা কর্নারে গিয়ে বসলো !
কফি অর্ডার করলো নিয়াজ!
হ্যাঁ তারপর বল, নিয়াজ কবে যাচ্ছিস অস্ট্রেলিয়া?
যাচ্ছি মাহি সব অলমোস্ট রেডি! তোর খবর কি ? কেমন চলছে লাইফ ?
মাহি বলল, ভালো!
নিয়াজ একটু অন্যমনস্ক হলো!
মাহি ওর দিকে তাকিয়ে বলল, নিয়াজ কোন সমস্যা আমার মনে হচ্ছে তুই কিছু বলতে চাইছিস কিন্তু তোর খুব আন‌ইজি লাগছে?
মাহি সত্যি খুব আন‌ইজি লাগছে রে !
কি ব্যাপার নিয়াজ ?
মাহি তোর বিয়েটা নিঝুমের সঙ্গে কেন হলো না ? না মানে আমি কিছুটা শুনেছি যে তুই তোর ভাই মারা যাওয়ার পর ভাবিকে বিয়ে করেছিস !
হু নিয়াজ ঠিক শুনেছিস ! এবং এই জন্য নিঝুমের সঙ্গে আমার সম্পর্ক টা ব্রেক‌আপ হয়েছে।
আমি এই বিষয়টা জানতে চাইছি ?
কারণ কি নিয়াজ? আমার লাইফ নিয়ে তোর ইন্টারেস্ট কেন?
কারণ নিঝুম!
মানে বুঝলাম না , মাহি বলল?
আমি নিঝুম কে একটা সময় খুব পছন্দ করতাম সব টাই তুই জানিস মাহি!
হু
নিঝুম আর তোর রিলেশন হলো , আমি নিঝুম কে কখনো ডিস্টার্ব করিনি।
আমি জানি, নিয়াজ। আমার ভাই মারা যাওয়ার পর আমার মায়ের ইচ্ছাতেই আমাকে বিয়ে করতে হয় । নাও আই এম হ্যাপি উইথ মাই ওয়াইফ। নিঝুম প্রথম দিকে অনেক আপসেট ছিল বাট নাও সী ইজ ওকে।
যেহেতু ও আমার ফাস্ট কাজিন তাই আমার বাসার অবস্থা সে দেখেছে, কেন কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে আমি এই ডিসিশন নিয়েছিলাম।
মাহি আমি তোর কাছে কিছু গোপন করব না। আমি নিঝুম কে ভুলতে পারিনি! আমি তোদের মাঝে পড়তে চাইনি তখন, কিন্তু আজ যখন তোদের রিলেশন টা নেই আমি নিঝুম কে নিয়ে আমার মনের ভেতরের অনুভূতি টাকে আটকে রাখতে পারছি না, নিয়াজ বলল!
মাহি হাসলো!
মাহি আমি নিঝুম কে বিয়ে করতে চাই !
মাহি হেসে বলল, ভালো তো আমিও চাই নিঝুম মুভ অন করুক লাইফে। কিন্তু এটা আমাকে কেন বলছিস নিয়াজ? এই কথা তোর নিঝুম কে বলা উচিত!
মাহি আমি জানি আসলে তোর সঙ্গে ওর রিলেশন টা আর তোরা কাজিন সব মিলিয়ে আমার মনে হলো , আগে তোর সঙ্গে কথা বলা উচিত।
লুক নিয়াজ আমি বিয়ের ডিসিশন নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিঝুমের সঙ্গে আত্মীয়তা র রিলেশন ছাড়া আর কোন রিলেশন রাখার চেষ্টা করিনি। এমন‌ও হয়েছে আমি ভালো করে দুটো কথাও বলিনি।
শুধু যে নিঝুমের জন্য তা না আমি আমার ম্যারেড লাইফের জন্যেও দূরত্ব টা তৈরি করেছি। আমার বন্ধু বান্ধব রা জানলেও আমাদের ফ্যামিলির কেউ কিন্তু কোন দিন আমাদের ব্যাপারে কিছু জানে না!
মাহি আমার কি করা উচিত বলতো?
যদি সিরিয়াস থাকিস ওর ব্যাপারে তাহলে আগে ওর সঙ্গেই কথা বলা উচিত, মাহি বলল!
তুই হেল্প কর প্লিজ!
অসম্ভব, আমি বললে যাও তোর কথা শুনত নিঝুম, আমি এটার মধ্যে থাকলে কোন পজেটিভ কিছু হ‌ওয়ার চান্স নাই।
তুই নিঝুম কে আমার চেয়ে বেশি জানিস মাহি!
সে জন্যই বলছি নিয়াজ তুই ওর সঙ্গে সরাসরি কথা বল!
আর একটা বিষয় তোকে ধৈর্য্য রাখতে হবে ! কয়দিন আগেই সে একটা বড় আঘাত থেকে উঠেছে নিয়াজ। আমি ওর ছোটবেলা থেকেই মনে র ভেতরে ছিলাম, যদিও সম্পর্ক তিন বছরের ছিল ও তো মনে মনে আমাকে তখন থেকেই ভেবেছে , তাই খুব তাড়াতাড়ি ও তোর প্রতি মনোযোগ দিবে না! তাই বলছি যদি সত্যিই তুই ওকে ভালোবাসিস তাহলে ধৈর্য্য ধরে এগিয়ে যেতে হবে ।
নিয়াজ বলল, মাহি আমি সিরিয়াস !

দুজনে আরো কিছুক্ষণ গল্প করে উঠে পড়লো। রাস্তায় বের হয়ে মাহি নিয়াজ কে বলল, আমি একটা কথা শুধু বলব, নিঝুম খুব ভালো একটা মেয়ে তুই যদি সিরিয়াসলি ওকে ভালোবাসিস তাহলে ই ওকে নিয়ে চিন্তা কর নিয়াজ।
দুজনে সিগারেট জ্বালালো।
সামনে ওর বোনের বিয়ে , তারপর খালামনি, খালু নিঝুমের বিয়ের জন্যে ও চিন্তা শুরু করবে।
আমার ফ্যামিলি তো পাগল করে দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগেই বিয়ে টা করে ফেলতে। আমি শুধু সময় নিচ্ছি, নিয়াজ বলল!

মাহি নিয়াজের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চশমার দোকানে এলো ! চশমার ফ্রেম সিলেকশন করে অর্ডার দিল । আধ ঘন্টা অপেক্ষা করতে বলল চশমার জন্য।
সেই ফাঁকে মাহি ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এ ঢুকলো!

মাহি ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে একজন কাছে এসে গুড ইভিনিং বলল, তার কাছে ই সে বলল নোজপিন নিতে চায়।
সেই লোকটা একটা সেলস গার্ল এর কাছে এনে বলল, স্যার কে নোজপিন দেখাও।
মাহি নোজপিন দেখছে আর চিন্তা করছে কোনটা তে ভালো লাগবে রুবাকে!
মেয়েটি হেসে বলল, স্যার যদি কিছু মনে না করেন তাহলে কি বলবেন এটা কি আন্টির জন্য নাকি ইয়ং কারো জন্য, আমি সেই হিসেবে আপনাকে দেখাতে পারব।
জ্বি আমার ওয়াইফের জন্য, হেসে বলল মাহি।
মেয়েটি বলল, স্যার যদি বাজেট ম্যাটার না করে তাহলে কিছু দেখাব সেরকম?
আপনি সলিটারির ভেতরে দেখান!
জ্বি স্যার!
এবার মেয়েটি খুব সুন্দর কিছু কালেকশন বের করল!
সেখান থেকে মাহি পঞ্চাশ সেন্ট এর উপরে একটা ছোট্ট কিন্তু খুব সুন্দর নাক ফুল পছন্দ করলো।
মেয়েটি হেসে বলল, স্যার এটা খুব সুন্দর যে পড়বে খুব সুন্দর লাগবে! এবং এক্সপেনসিভ ও ।
মাহি মনে মনে বলল, আমার কাছে যাকে দিব এর চেয়েও বেশি এক্সপেনসিভ।

নোজপিন নিয়ে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড থেকে বের হয়ে আবার চশমার দোকানে ঢুকলো মাহি। নিজের চোখে চশমা দেখে তার সত্যিই মনে হচ্ছে বুড়ো বুড়ো লাগছে না তো?
বাসায় ফিরার সময় রুবার জন্য ওষুধ কিনলো !
ড্রাইভ করছে আর চিন্তা করছে আজ নিঝুমকে বুঝাতে পেরেই শান্তি লাগছে।
ওর ঠিক হ‌ওয়াটা খুব জরুরি।
নিয়াজ কে নিঝুম আদো পাত্তা দিবে কিনা শিওর না । কিন্তু এত দিন পর‌ও নিয়াজ নিঝুম কে এখনো ভালোবাসে জেনে ভালোই লাগছে।
আসলে ভালোবাসা ব্যাপার টা অদ্ভুত একটা জিনিস , কিভাবে কখন একজন কে কাবু করে ফেলে ঠিক নেই। সে ও কি কখনো ভেবেছিল বিয়ে করলেই সে রুবাকে ভালোবাসতে পারবে?
শুধু দ্বায়িত্ব পালন করে যেতে পারলেই হবে ভেবেছিল।
কিন্তু আজ রুবার জন্য, ওর পাগলামী গুলো জন্য কি প্রচন্ড ভালোবাসা অনুভব করে ।
কি এক মুগ্ধতা রুবাকে ঘিরে থাকে। ও কাছাকাছি থাকলে এত ভালো লাগে।ওর গায়ের ঘ্রাণ টা তে নেশা ধরে যায়। ওর চকচকে মায়া ভরা চোখ দুটো তে সারাক্ষণ দেখতে ইচ্ছে করে।
হাসছে একা একা মাহি।
রুবা তুমি একবার কাছে এসে দেখো আমার ভেতরে তোমার জন্য কতটা ভালোবাসা কতটা পাগলামো অপেক্ষা করছে । আমি আমার সব নিয়ে তোমার মনে হারিয়ে যেতে চাই।

মাহি গাড়ি পার্ক করে উপরে উঠে এলো।
সিঁড়ি থেকে ই মা আর রুবার কথা শোনা যাচ্ছে।
মাহি ডাইনিং এ গিয়ে ঢুকলো।
এই তো মাহি চলে এসেছে রুবা! এখুনি ফোন দিচ্ছিল তোমাকে রুবা!
কি অবস্থা তোমাদের? বাবা ফিরেছে ?
হু !
রুবা তুমি ডিনার দিতে বলো ওদের !
বলছি মা বলে রুবা উঠে গেল।
আমি ডিনার করতে পারব না কফি খেলাম পেট ভরা লাগছে , মাহি বলল!
রবা বলল, কিছুই খাবে না।
না প্লিজ!
রুবা রান্না ঘরে চলে গেল।
সাফিয়া বেগম বললেন, মাহি সারাদিনে একটা সময় রুবার সঙ্গে খাওয়া উচিত। তোমার বাবা কিন্তু হাজার ব্যস্ত থাকলেও আমার সঙ্গে এই নিয়ম টা ফলো করতো!
সরি মা । নেক্সট আর এমন হবে না !
সরি আমাকে না রুবাকে বলো!
মাহি উঠে রান্না ঘরে গেল, রুবা সরি তুমি অপেক্ষা করছিলে , বিশ্বাস করো আমার পেট ভরা লাগছে দেখেই খেতে ইচ্ছা করছে না।
আরে না তুমি মন ছোট করো না , আমি মা বাবার সঙ্গে খেয়ে নিচ্ছি।
সরি ।
যাও তো রান্না ঘর থেকে বের হ‌ও।
সবাই যতক্ষণ খাওয়া-দাওয়া করলো মাহি ডাইনিং এ বসে গল্প করলো।

খাওয়া শেষ হলে রুবা তার শ্বশুরের জন্য লেবু চা বানাতে যাচ্ছে যখন মাহি বলল, আমি রুমে যাচ্ছি তুমি এসো।

রুবা প্রতিদিন রাতে তার শ্বশুরের জন্য ডিনারের পর লেবু চা করে দেয়। আগেও দিত। মাঝখানে শিহাব যাওয়ার পর দুজনের জীবন ই ওলোট পালোট ‌হয়ে গেল এখন আবার সেই আগের রুবা, তার শ্বশুরের জন্য চা দেয় তিনি হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে চা নেন। জীবন হয়তো এমন‌ই।

চা দিয়ে রুবার শ্বাশুড়ি রিয়ার বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে গল্প করছে রুবা তাই শুনছে ।
মাহি ওকে মেসেঞ্জার এ নক‌ করছে !
কোথায়?
রুবা লিখল, আসছি অপেক্ষা করো।
মাহি বলল, জলদি
রুবা বলল, অপেক্ষা।
মাহি তারপর খুব সুন্দর একটা মেসেজ দিল,
” আমি তোর খুব সহজ বুকে
আমার‌ এই হাত পুড়িয়েছি
তোর ঘড়ি জুড়ে আমার সময় থাক।
কিসমতে বানানো তোর রেখায়
আবার ভুল করে কাটাকুটি খেলায়
তোর কিছু বানানো নাম ধরে
আমি ও ভুল করে ডেকেছি শেষবেলায়।”

রুবার গা কাঁপছে ওর মেসেজ পড়ে। আবার হাসিও পাচ্ছে।
সাফিয়া বেগম বললেন, যাও রুবা নাকের জন্য ওষুধ খেয়ে নিও আজ রাতে নাকে ব্যথা হতে পারে কিন্তু।

রুবা ভীড়ু পায়ে রুমের দিকে আসছে। কেমন জানি একটা অন্যরকম ভালোলাগায় সে হারিয়ে যাচ্ছে।
ঘরে ঢুকে দেখে মাহি কি জানি পড়ছে ,ওর চোখে চশমা!
রুবাকে দেখে মাহি বলল, আমার নিউ লুক।
সুন্দর লাগছে।
সিরিয়াসলি, মাহি বলল?
সত্যি !
বুড়ো মানুষ লাগছে না তো?
মোটেও না অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে !
রুবা চোখে মুখে পানি দিয়ে আসল, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে ক্রিম লাগাচ্ছে । মাহি ওর সামনে নোজপিন এর বক্স টা দিল !
কি এটা?
খুলে দেখো!
নোজপিন?
হু
খুলে রুবা বলল, দারুন তো !
তোমার পছন্দ হয়েছে?
হুঁ কি সুন্দর চকচক করছে !
পড়িয়ে দেই, মাহি বলল ?
ঠিক আছে দাঁড়াও কাঁচি নিয়ে আসি, রুবা বলল!
কাঁচি দিয়ে কি হবে ?
সূতাটা কাটতে হবে না !
রুবা মাহির পড়ার টেবিলে র ড্রয়ার খুলে কাঁচি বের করল।
মাহি বলল, আগে হাত এবং নোজপিন দুটো ই স্টিরেলাইজ করতে হবে!
নোজপিন কি গরম পানিতে ফুটাতে হবে , রুবা অবাক হয়ে বলল!
আরে বোকা হ্যান্ড রাব দিয়ে মুছে নিচ্ছি।
রুবা বিছানায় বসলো মাহি কাঁচি দিয়ে নাকের সূতা কাটলো।
ব্যথা দিও না প্লিজ!
কথা না রুবা চুপ করো।
বুয়া বলেছে আজকে নোজপিন পড়লে কষ্ট কম হবে, কালকে নাক কিছুটা ফুলে যাবে।
মাহি বলল,ইস তোমার বুয়ারা তো অনেক বড় ডাক্তার , ওরা রান্না করে খাওয়াত বলেই ডাক্তার হতে পারলাম আজ বুঝতে পারছি রুবা!
রুবা হাসলো!
সূতা কেটে টান দিতেই রুবা উ উ উ শুরু করলো।
এবার মাহি ঐ ফুটোতে নোজপিন ঢুকিয়ে দিল। রুবা ওর হাত খামচে ধরলো ব্যথায়।
পুস লাগানোর সময় অনেক ব্যথা পেল রুবা, ওর বন্ধ চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
মাহি রুবার নিঃশ্বাস এর দূরত্বে থেকে মুগ্ধ হয়ে রুবাকে দেখছে। রুবার সুন্দর নাকের পাটা আর ঠোঁট কাঁপছে ! চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে পড়ছে। মাহি হাত দিয়ে ওর গাল ধরে ফুঁ দিচ্ছে নাকে । ওর খুব ইচ্ছে করছে রুবার চোখে র পানি টা ওর ঠোট দিয়ে শুসে নিতে, ওর কাঁপা ঠোঁট দুটো তে তার ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে!
দরজায় নক করার শব্দ হলো তখনই।
মাহি বলল ,কে ?
ভাইজান আপনার ল্যাপটপ খাওয়ার ঘরে আছলো আম্মা পাঠাইছে!
আমি বলেছিলাম না রুবা আমি তোমার কাছে এলেই এরা কেউ না কেউ আসবেই।
রুবা বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে হাসছে!
মাহি বলল, শালার কিসমত……..

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here