যখন দুজনে একা পর্ব-৪৩

0
3275

#যখন_দুজনে_একা

৪৩ পর্ব

রুবা তাকাও এদিকে। খুব ঘুম পাচ্ছে ?
: আচ্ছা ঘুমাও!
: মাহি ওকে জড়িয়ে ধরে ওর কানের কাছে এসে বলল,
” কাছে যাওয়া বড্ড বেশি হবে
এই এখানে দাঁড়িয়ে থাকা ভালো
তোমার ঘরে থমকে আছে দুপুর
বারান্দাতে বিকেল পড়ে এলো”
: রুবা হেসে বলল, তাহলে কাছে এসো না !
: আমি তো আসব‌ই , মাহি বলল।
: কখন এলে রুবা?
: ভোর বেলায় !
: এতটা পাগলামী‌ !
: আমার তোমার জন্য খারাপ লাগছিল !
: তাহলে থাকতে গেলে কেন?কার সঙ্গে এসেছো ?
: কুদরত ভাই কে ফোন করেছি আশরাফ গাড়ি নিয়ে গিয়ে গেছে ওর সঙ্গে এসেছি।
: এখন আমাকে ঘুমাতে দাও মাহি !
: সারারাত জেগে ছিলে তাই না , রুবা?
: হুঁ নিঝুম আপুর সাথে গল্প করেছি।
: কি গল্প ?
: অনেক কিছু সব বলা যাবে না ?
: নিঝুম আপুর সঙ্গে গল্প আর আমার সঙ্গে শুধু ঘুম ?
: ঘুমাতে যদি না দেই , জাগিয়ে রাখি?
: কালকে সারাদিন রং খেলে তারপর রাত জেগে দেখো আমার চোখ এখন খুলতে পারছি না !
: কোথায় দেখি , বলে মাহি রুবার চোখে চুমু খেলো ‌!
: এখন তো আরো বেশি ঘুম আসবে দেখো!
: ওরে পাজি মেয়ে বলে মাহি ওর গালে র সঙ্গে নিজের গাল চেপে ধরলো, রুবা আমার সঙ্গে গ্রীস যাবে ?
: সান্তোরিনি, রুবা বলল?
: হু । তারপর তোমাকে নিয়ে চলে যাব রাতের আকাশের অরোরা দেখতে নর‌ওয়ে তারপর আটলান্টিক ওশান রোডে ড্রাইভ এ বের হব। ক্রোয়েশিয়ার প্লিটভিস ন্যাশনাল পার্কের ঝর্না দেখব। স্পেনের কোন বীচে বসে সন্ধ্যা নামা দেখব!
: কবে যেতে হবে ?
: তুমি বললে, আগামী মাসে ভিসা পেতে যতদিন লাগে দেখি।
: তুমি ছুটি পাবে?
: না পেলে চাকরি বাকরি ছেড়ে চলে যাব।
: তাই ? এখন ফোন বাজছে তোমার রিসিভ করো আগে।
মাহি ফোনে কথা শেষ করে বলল,
: আরো আধ ঘন্টা তোমার সঙ্গে থাকতে পারব । হসপিটালে যেতে হবে না একটা সেমিনারে যেতে হবে মহাখালী।
: এই না বললে আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিবে এখন মাত্র আধ ঘন্টা সময় হাতে।
: সিরিয়াসলি রুবা বলছো , তুমি বললে আমি আজ কোথাও যাব না সারাদিন এই কাঁথা র নিচে কাটিয়ে দিব !
: আমি ঘুমাব । রাতে রিয়া আপুর মেহেন্দী প্রোগ্রাম আছে।
: এক বিয়ের কত প্রোগ্রাম হয় এদের?
: আজকাল এসব হয় !
: আমি যাব না তোমরা যেও।
: আচ্ছা মা যদি জিজ্ঞাসা করে আমি কখন এসেছি তুমি কিন্তু বলবে , তুমি নিয়ে এসেছো!
: আমি বের হয়ে যাচ্ছি রুবা তুমি বলো যা বলার!
: আমার লজ্জা লাগবে !
: যখন এসেছিলে তখন মনে ছিল না ?
: তোমার জন্য এসেছি !
: আমার জন্য আর কি কি করবে , পা পুড়িয়েছো, হাত ভেঙ্গলে, নাক ফোড়ালে !
: তুমি মা কে বলবে কিন্তু !
: তাহলে আমাকে কি দিবে বলো ?
: আমার কাছে কি আছে দেয়ার ?
: আচ্ছা পেন্ডিং র‌ইল পরে চেয়ে নিব ?
: মাহি বলল, এখন কথা দাও আমাকে রেখে কোথাও যাবে না ! রুবা মাহির সঙ্গে ই সব আনন্দ নিবে মনে থাকবে ?
: থাকবে।
:এখন ঘুমাও আমি রেডি হতে গেলাম।

মাহি রেডি হয়ে এসে দেখে রুবা গভীর ঘুমে। বাচ্চাদের মত গুটিগুটি দিয়ে ঘুমাচ্ছে।
দরজায় টোকা দিল কেউ?
: দরজা খোলা এসো,
সাফিয়া বেগম ঘরে ঢুকলেন,
: ওমা রুবাকে কখন নিয়ে এলে‌, আবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন?
: মাহি গলা নামিয়ে বলল, নিজেই এসেছে ম্যাডাম এর খারাপ লাগছিল নাকি ! আশরাফ গিয়ে নিয়ে এসেছে।
: আমি জানতাম ও থাকতে পারবে না নিজের বাসা ছাড়া কখনও থাকেনি কোথাও।
: আমাকে বলল, মা কে বলো না লজ্জা পাব!
: ঠিক আছে আমি জানি না কিছু , হাসলেন সাফিয়া বেগম।
: এই নাও তোমার বাবার আর আমার পাসপোর্ট!
: থেঙ্কস মা।
: তুমি এসো তোমার ব্রেকফাস্ট রেডি আছে ।
: সাফিয়া বেগম বের হয়ে গেলেন!
মাহি রুবার মাথার কাছে গিয়ে বসলো, ওর গালে আদর করে দিয়ে বলল, ঘুমাও আমি আসছি !
ওর গায়ের কাঁথা ঠিক করে ‌দিল।

ব্রেকফাস্ট করার সময় নিঝুম এর ফোন এলো ,
: তুই কি সেমিনারে যাচ্ছিস?
: হুঁ কেন?
: আমাকে সঙ্গে নিয়ে যা ! বাসায় গাড়ি সব বিজি আজ!
: তুই না ছুটিতে নিঝুম?
: আগেই যাব বলেছিলাম তাই যেতে হচ্ছে।
: ঠিক আছে আমি জাস্ট বের হচ্ছি তুই রেডি থাক।
মাহি নিঝুম দের রোডে ঢুকেই ফোন দিল,
: নাম নিচে , চলে এসেছি।
: নিঝুম নিচেই দাড়ানো ছিল গাড়িতে এসে উঠলো।
: আপু রাগ হচ্ছিল কেন যাচ্ছি !
: হু।
মাহি গাড়ি শার্ট দিল।
নিঝুম তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ মাহির দিকে মুগ্ধ হয়ে।
মাহি বলল,
: কিছু বলবি?
: রুবা কি করে ?
: ঘুমাচ্ছে ! সারা রাত জেগে ছিল এখন চোখ খুলতে পারছে না!
নিঝুম বলল,
: পাগল হয়ে গিয়েছিল তোর কাছে যাওয়ার জন্য।
: বাসার বাহিরে থেকে অভ্যাস নেই !
: বাসার জন্য না মাহি তোর কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করছিল!
: মাহি চুপ করে আছে!
:আমি সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি ও পাশে ঘুমাচ্ছে!
: ভোর হ‌ওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল ! আমি রাতেই বলেছিলাম চলো তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসি , মাহি সারপ্রাইজ হবে । তুই বকা দিবি তাই যায় নি !
: কালকে সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করেছে তারপর সারা রাত নাকি গল্প করেছে এখন চোখ খুলতে পারছে না ঘুমে!
: আমার সঙ্গেই গল্প করেছে। অনেক সুন্দর করে কথা বলে ও । আগে কখনো তো ওর সঙ্গে এত কথা বলা হয়ে উঠতো না !
: তাই ছেলে মানুষী টাইপ কিছু বলেনি তোকে।
: না মাহি! তবে ও মনের ভেতরে অনেক কষ্ট পুষে রেখেছে ! ওর জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট ওর প্রিয় মানুষদের ওকে ছেড়ে চলে যাওয়া। আর সেই কষ্ট থেকে ওর মধ্যে একটা ধারণা ঢুকে গেছে, ও যাদের ভালোবাসে ওরা ওকে ছেড়ে চলে যায়! এবং সেই জন্যই রুবা তোকে বলতে পারে না তোকে কতটা ভালোবাসে!
আমি জানি না তোদের সম্পর্ক টা কতটা কি কিন্তু রুবা কালকে আমাকে যা বলল তাতে বুঝলাম ও তোকে অনেক ভালোবাসে এবং এই কথাটা তোকে বলতে চায় না, বললে তোকেও যদি হারিয়ে ফেলে !

: মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল, ওকে এই কমপ্লেক্স টা থেকে ই তো বের করে আনতে চাইছি !
মাহি মনে মনে বলল, রুবা আমি শুধু অপেক্ষা করি প্রতিদিন, কখন তুমি বলবে মুখ ফুটে আমাকে ভালোবাসো ! মুখ ফুটে বলতে হবে তোমাকে রুবা !
ওরা চলে এলো !
: তুই নেমে যা আমি পার্ক করে আসছি গাড়ি !
নিঝুম নেমে গেল !
মাহি গাড়ি পার্কিং করে এসে সেমিনার হলের সামনে দাঁড়ালো ! সিগারেট জ্বালিয়ে রুবার কথাই চিন্তা করছে , কেন এত কষ্ট পুষে রেখেছো রুবা আমি তো আছি তোমার সব কষ্ট মুছে দেয়ার জন্য !
মোবাইল বের করে রুবাকে ইনবক্স করলো,
” এই যে আমি তোমাকে দেখছি,
দেখে মন ভরে যাচ্ছে,
না দেখতে পেলে বুক টনটন করে,
বেঁচে থাকাটা বিবর্ণ হয়ে যায়,
এই অনুভূতি কি ভালোবাসা নয় ?”

রুবার ঘুম ভাঙল তীব্র মাথা ব্যথা নিয়ে। বিছানা ছেড়ে উঠে প্যারাসিটামল খেল। রুম থেকে বের হতে ইচ্ছে করছে না। সে আবার শুয়ে পড়লো।
ঘন্টা খানেক পর ও যখন মাথা ব্যথা কমছে না সে মাহি কে ফোন দিল।
মাহি, নিঝুম আর তাদের কয়েকজন বন্ধু সেমিনারে র বিরতি তে চা খাচ্ছিল ! তখন ই মাহির মোবাইল বেজে উঠল! মাহি একটু দূরে সরে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো,
: ঘুম ভেঙ্গেছে আপনার ?
: ভেঙেছে , তুমি কোথায় এখন?
: আমি বলেছিলাম না একটা সেমিনার এটেনডেন্ট করতে এসেছি , মহাখালীতে ! কেন?
: আমার না শরীর টা খারাপ লাগছে ।
: আবার কি হলো ?
: প্রচন্ড মাথা ব্যথা প্যারাসিটামল খেয়েছি কিন্তু এক ঘন্টা হলো তাও তো কমছে না !
: আর একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো , খেয়েছো কিছু ?
: না খেতে ইচ্ছে করছে না !
: রুবা না খেয়ে থাকলে কি সুস্থ হবে? খাওয়া দাওয়া করে আরো একটা নাপা খেয়ে নাও আমি লাঞ্চ এর পর আসব ।
: ঠিক আছে । রাখছি !

একটু পর সাফিয়া বেগম রুবার ঘরে ঢুকলেন!
: কি অবস্থা তোমার , মাথা ব্যথা নাকি করছে?
: হ্যাঁ মা অনেক মাথা ব্যথা করছে , রুবা বলল!
সাফিয়া বেগম রুবার মাথায় হাত রাখলেন!
: মাহি ফোন দিয়ে বলল , তুমি আমাকে ডাক দাও নি কেন ?
: মা উঠে যেতে ইচ্ছে করছিল না !
: কালকে সারাদিন ছুটোছুটি করেছো তারপর আবার রাতভর জেগে ছিলে তাই হয়তো মাথা ব্যথা করছে।
: সে জন্যই হবে হয়তো মা !
: রুবা একটা কথা বলতো তো, তুমি কি কিছু নিয়ে খুব টেনশন করছো ? তোমাকে দেখে আমার মনে হলো !
: রুবা শ্বাশুড়ি র কোলে মাথা রাখলো , সে রকম কিছু না মা !
: তাহলে কি রকম বলবে আমাকে ? আমি দেখলাম তুমি খুব অস্থির হয়ে ছিলে তোমার জন্মদিনে র দিন, কান্নাকাটি ও করলে অনেক। আবার কালকে তুমি গেলে ঐ বাসায় কিন্তু রাতে আসার সময় আমার মনে হলো তোমার খুব একটা ইচ্ছা পরে আর ছিল না থাকার। কিন্তু আর মুখ ফুটে বলতে পারো নি ! কি হয়েছে তোমার ?
: রুবা চুপ করে রইলো !
: তুমি বলবে না আমাকে রুবা ?
: রুবা শ্বাশুড়ি র কোলে মুখ লুকিয়ে ফেলল ওর খুব কান্না আসছে ।
: রুবা কি হয়েছে মা , সাফিয়া বেগম অস্থির হয়ে গেলেন ওর কান্না দেখে ! বসো তো আমার পাশে, উঠে বসো।
এখন বলো ?
: মা আপনি কেন মাহির সঙ্গে আমার বিয়ে দিলেন ?
: রুবা কি হয়েছে , মাহি কিছু বলেছে , বকেছে তোমাকে , খারাপ ব্যবহার করেছে কি হয়েছে বলো মা ! আমার টেনশন হচ্ছে?
: রুবা কাঁদছে ফুঁপিয়ে,
: বলো রুবা ?
: মা মাহি আমার সঙ্গে কোন খারাপ ব্যবহার করেনি ও তো অনেক ভালো মা !
: তাহলে কেন এ কথা বললে , রুবা?
: মা আমি তো মাহি কে ভালো রাখতে পারছি না ! ওর মত একজন ভালো মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারছি না । আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মা !
: বুঝলাম না রুবা কি বলতে চাইছো তুমি ?
: আমার শুধু ভয় হয় মা !
: কিসের ভয় হয় , রুবা?
: ওকে হারানোর ভয় হয় মা , আমি যদি ওর কাছে থাকি ওর যদি কোন ক্ষতি হয়ে যায় সেই ভয়! এই চিন্তা টা আমাকে অস্থির করে দিচ্ছে মা ! আর সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিচ্ছে আমি মাহির থেকে দূরে থাকতে পারছি না আমার খুব ইচ্ছে করে ওর কাছে থাকতে সে জন্যই আমি আরো বেশি অস্থির হয়ে যাচ্ছি আমার নিজের উপর কেন কোন কন্ট্রোল করতে পারছি না !
: রুবা, রুবা লক্ষী মেয়ে আমার তুমি মাহির কাছে গেলে কেন ওর ক্ষতি হবে ? কে বলেছে তোমাকে এসব কথা ! আরে বোকা মেয়ে , মানুষের ভাগ্য তো তার নিজের কপালে লেখা থাকে অন্য করো কিছু দিয়ে তা ভালো ও করা যায় না আবার খারাপ ও করা যায় না !
: না মা আমি মাহি র কাছে গেলে আমার মনে হয় আমি মাহি কে হারিয়ে ফেলব !
: আচ্ছা ঠিক আছে এখন চুপ করো , তোমার মাহির কাছে যেতে হবে না তুমি শান্ত হ‌ও । কান্নাকাটি বন্ধ করো মাথা ব্যথা করছে, এভাবে কাঁদলে আরো মাথা ব্যথা হবে !
তুমি গোসল করে এসো তো মাথা ব্যথায় আরাম পাবে ওঠো ! অনেক বেলাও হয়েছে লাঞ্চ এর সময় চলে যাচ্ছে। তারপর আমরা মা মেয়ে খাব এক সঙ্গে যাও গোসল করে এসো।
সাফিয়া বেগম রুবা কে ধরে দাঁড় করালেন।
: রুবা তুমি চিন্তা করো না , আমি মাহি কে বলব তোমার কাছ থেকে দূরে থাকবে ঠিক আছে তুমি কথা দাও কান্নাকাটি করবে না আমার কথা শুনবে !
: রুবা মাথা নাড়লো!
: আমি আমার ঘর থেকে আসছি তুমি গোসল শেষ করে এসো।
রুবা কে ওয়াস রুমে পাঠিয়ে সাফিয়া বেগম নিজের ঘরে ঢুকলেন ‌ খুব টেনশন হচ্ছে উনার রুবা কে নিয়ে। সব তো ঠিক ই চলছিল এখন আবার কি হলো ?
তিনি মাহি কে কল করলেন ,
: হ্যালো মাহি !
: মা বলো , কি অবস্থা রুবার মাথা ব্যথা কমেছে?
: তুমি কি বেশি ব্যস্ত !
: সমস্যা নেই ,বলো মা !
: কাজ শেষ হলে সরাসরি বাসায় এসো তো !
: কি হয়েছে মা , এনিথিং সিরিয়াস ?
: তুমি আসো বাসায় , সিরিয়াস হলো রুবা খুব মানসিক ভাবে আপসেট আমার মনে হয় তোমার এখন থাকা উচিত ওর পাশে ।
: হঠাৎ কি হলো মা ? ভালো মানুষ ঘুমাচ্ছে দেখে এলাম ।
: হঠাৎ করে হয়নি এই অবস্থা , তুমি বাসায় আসো আমি বলছি সব !
: আমার আর ঘন্টা খানেক লাগবে আমি আসছি মা !
: ঠিক আছে রাখছি !

মাহি কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে এলো ঘন্টা দেড়েক এর ভেতরে।
এর মাঝে রুবাকে নিয়ে সাফিয়া বেগম লাঞ্চ করেছেন । তারপর ঘুমানোর জন্য রুমে শুইয়ে রেখে আসলেন !
মাহি বাসায় ফিরে সরাসরি মায়ের কাছে এলো !
: কি হয়েছে মা ?
সাফিয়া বেগম সব কথা ছেলে কে খুলে বললেন! মাহি সব শুনে চুপ হয়ে বসে রইল !
: মা কি করি বলো তো ?
: তুমি একটু দূরে দূরে থাকো কিছুদিন !
: এটা সমাধান না মা এতে ও আরো বেশি একা হয়ে যাবে এবং কষ্ট পাবে! আমি দেখি সাইকোলজিস্ট এর সঙ্গে কথা বলি তিনি কি পরামর্শ দেন!
: ও কোথায় এখন ?
: তোমাদের রুমে ঘুমাচ্ছে !
মাহি মায়ের কাছ থেকে উঠে গেল ।
সাইকোলজিস্ট ইফতেখার ভাইয়ের সাথে কথা বলল মাহি । কথা শেষ করে মাহি নিজের ঘরে ঢুকলো !
রুবা ঘুমাচ্ছে । মাহি খুব সাবধানে ওর পাশে গিয়ে বসলো।
রুবার ঘুম ভেঙ্গে গেল কিছুক্ষণ পর, রুবা জিজ্ঞাসা করলো,
: কখন এলে
মাহি ওর দিকে তাকিয়ে গেয়ে উঠলো,
” পূর্ণিমা সন্ধ্যায় তোমার রজনীগন্ধা য়
রূপ সাগরের পাড়ে র পানে উদাসী মন ধায়
তোমার প্রজাপতির পাখা ,
আমার আকাশ চাওয়া মুগ্ধ চোখের র
রঙিন স্বপন মাখা,
তোমার চাঁদের আলোয় মিলায় আমার দুঃখ সুখের সকল অবসান।”

: চমৎকার , রুবা বলল!
: আমার সব গান সব সুর শুধু তোমার জন্য রুবা !
রুবা উঠে দাঁড়ালো বিছানা থেকে !
কোথায় যাচ্ছো রুবা ?
: কোথাও না চুল চিরুনি করব , ভেজা চুলে ঘুমাচ্ছিলাম !
মাহি উঠে এসে ওর হাত ধরে দাঁড় করালো আমার সামনে দাড়াও প্লিজ!
: কি হয়েছে তোমার রুবা ?
: কিছু হয়নি !
: কেঁদে চোখ মুখ ফুলে গেছে তোমার ! মাহি দুই হাত দিয়ে রুবার মুখ উঁচু করে ধরলো!
: রুবা কাঁদছে!
: আমি তোমার কাছে আসব না রুবা , তুমি ভয় পেও না । তুমি কষ্ট পেও না প্লিজ । তোমাকে এভাবে দেখলে আমার কষ্ট হয় । আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি রুবা । খুব ভালোবাসি।
তুমি তো আমার ,যেদিন তোমার ইচ্ছে হবে সেদিন তুমি আমার কাছে আসবে কোন সমস্যা নেই ।‌ তোমার ইচ্ছা র বিরুদ্ধে কিছু কি হয়েছে এত দিন । এখনও হবে না ।
তুমি শুধু কষ্ট পেও না । আমি তোমার কষ্ট মাখা মুখ টা সহ্য করতে পারি না।
আমি মাস , বছর তোমার অপেক্ষায় থাকতে পারব রুবা !
তুমি আমার কাছে আসলে আমার কোন ক্ষতি হবে না তুমি ভুল ভাবছো।
মাহি কাছে টেনে রুবার ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিল! রুবা কাঁপছে !
মাহি ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, আজ থেকে তুমি আর আমি প্রেম করা শুরু করব ! কেমন ? প্রেমিক প্রেমিকা যেরকম একটু একটু করে কাছে আসে আমরা ও আসব। আমি প্রথমে বন্ধু হব, প্রেমিক হব তার পর না হয় হাজব্যান্ড হ‌ওয়া যাবে!
সবাই বিয়ের আগে প্রেম করে আমরা বিয়ের পর না হয় করলাম!
তোমার তো প্রেম করার অভিজ্ঞতা নেই রুবা , আমি তোমাকে শিখিয়ে দিব!
: আজকালকার প্রেমিক রা কিন্তু দুষ্টু হয় ! আমি কিন্তু দুষ্টামি ও করব কখনো কখনো । তোমার যখন ইচ্ছা করবে আমার বুকে চলে আসবে চুপি চুপি । প্রেমিকের বুকে আসাই যায় ।
: রুবা হাসলো!
: শুধু আমাকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে রেখো না প্লিজ। আমি তোমার কাছাকাছি থাকতে চাই ! তা না হলে কিভাবে বাঁচবো বলো । তুমি ভাবছো তুমি আমার থেকে দূরে গেলে আমার ভালো হবে, আরে বোকা মেয়ে তুমি দূরে গেলেই আমি মরে যাব এখন!
কালকে রাতে তুমি ছিলে না আমার কত কষ্ট হয়েছে তুমি জানো ?
প্লিজ রুবা ! তুমি কষ্ট পেয়ো না !
রুবা মাহির বুকে কাঁদছে ‌!
রুবা , অনেক হয়েছে এবার বন্ধ করো এত কান্নাকাটি করলে প্রেম টা কখন করব আমরা !
রুবা হেসে দিল!

এখন যাও মুখ ধুয়ে আসো তো দেখো কেমন দেখাচ্ছে তোমাকে !
রুবা মুখ ধুয়ে আসতে গেল!

মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মনে মনে বলল, ইয়া আল্লাহ এতটা কষ্ট কেন তুমি ওকে দাও । কেন কিছুদিন পর পর ও এভাবে ভেঙে পড়ে।
আমি কেন পারি না ওর সব কষ্ট মুছে দিতে। তুমি প্লিজ আমাকে শক্তি দাও , আমি রুবার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিতে চাই। ওকে নরমাল করে দিতে চাই।
মাহির চোখে পানি চলে আসছে।
মাহি মনে মনে ঠিক করলো , এখন থেকে রুবাকে এতটা মানসিক শক্তি দিতে হবে যেন সে আর আমাকে হারানোর ভয়ে আমার থেকেই দূরে না থাকে। তীব্র গতিতে আমার কাছে ছুটে যেন আসে।

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here