#যখন_দুজনে_একা
৪৪ পর্ব
রুবা চোখে মুখে পানি দিয়ে আসলো । মাহি ওর হাতে টাওয়েল এগিয়ে দিল ।
: আয়নায় তাকিয়ে দেখো তোমার চেহারার কি অবস্থা হয়েছে ? এভাবে কেউ কান্নাকাটি করে !
: মা কোথায় , রুবা বলল?
: কিছু বলবে ?
: না এমনি , আমার জন্য অস্থির হচ্ছিল তখন!
: তোমার মাথা ব্যথা কি কমেছে ?
: না এখনো করছে।
: মাথার আর দোষ কি এখানে শুধু ভারি ভারি চিন্তা ,বলে মাহি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দাও আমি ফ্রেশ হয়ে তোমার মাথা ব্যথা ভালো করে দিচ্ছি। বলে মাহি উঠে গেল।
রুবা ঘরের আলো কমিয়ে দিল । আলো অসহ্য লাগছে ওর।
মাহি ড্রেস চেঞ্জ করে এসে বলল,
: ভালো করেছো আলো কমিয়ে , আমার যখন মাথা ব্যথা করে আলো অসহ্য লাগে। এখন আমার কাছে এসো আমি মাথা মেসেজ করে দিচ্ছি।
মাহি সোফায় গিয়ে বসলো !
আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পর সোফায় ! রুবা মাহির কথা মত ওর কোলে মাথা রাখলো।
মাহি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
: তুমি আগে একবার প্রমিজ করেছিলে রুবা তুমি উল্টোপাল্টা চিন্তা করবে না কখনো! কিন্তু তুমি সেই আজেবাজে চিন্তায় মাথা ভর্তি করেছো!
: রুবা চুপ করে আছে!
: আমার কেমন লাগে বলো তো তোমাকে এরকম অসহায়, মানসিক, শারীরিক যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখলে ?
: সরি।
: হুঁ সরি । তুমি আসলে একটা বোকা টাইপের মেয়ে । যে নিজের ভালো বুঝে না। যদি বুঝতে তাহলে এভাবে নিজেকে কষ্ট দিতে না। আর শুধু কি নিজে কষ্ট পাও সঙ্গে আমাকেও কষ্ট দাও, মা কেও কষ্ট দাও।
: রুবা মাহির গালে হাত দিয়ে বলল সরি!
: আর কখনো এরকম হলে দেখো আমি সত্যি সত্যি কথা বলব না রুবা !
: আর এমন হবে না , প্রমিজ।
: হুঁ দেখা যাক কি হয়!
তুমি একটা জিনিস আমাকে ছুঁয়ে বলো রুবা, তুমি তোমার যে কোন সমস্যা যে কোন কষ্ট আমাকে আগে বলবে !
: হুঁ
: হুঁ হুঁ করলে হবে না বলো!
: ঠিক আছে এই যে ছুঁয়ে বলছি সব তোমাকে বলব ! এখন খুশি !
: খুশি।
মাহি হেসে বলল,
বুঝলে রুবা আমরা কিন্তু সত্যি সত্যি প্রেম করব । আর প্রেমিক প্রেমিকা তাদের সব কথা একে অপরকে বলে তুমি কিন্তু এটা ফলো করবে ।
: ঠিক আছে করব , ভালো ই হলো কলেজ, ভার্সিটি তে থাকতে সবার প্রেম করা দেখে প্রেম করতে ইচ্ছে করতো এখন সেই ইচ্ছেটা ও পূরণ হয়ে যাবে , বলে রুবা হাসছে।
: তখন একটা প্রেম ও করলে না , এত অপরূপ সুন্দরী কে কেউ প্রোপোজ করেনি কোন অন্ধের কলেজে , ভার্সিটি তে পড়তে তুমি?
: লোকজন অন্ধ ছিল না আমি আমার মায়ের ভয়ে কান তালা দিয়ে রেখেছিলাম যাতে কারো কথা আমার কাছে না পৌঁছায়!
: এটা ভালো করেছো তা না হলে আমি আমার রুবাকে কিভাবে পেতাম ? মাহি ওর কপালে চুমু খেলো।
: তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছ আমার ঘুম এসে যাচ্ছে।
: তাহলে ঘুমিয়ে যাও কে বাঁধা দিচ্ছে ?
: আজ তো রিয়া আপুর মেহেদী প্রোগ্রাম যেতে হবে না ?
: ওফফ তুমি আগে সুস্থ হও তো। ঘন্টা খানেক ঘুমাও আমি তারপর নিয়ে যাব
: তুমি নিয়ে যাবে তো ?
: ঠিক আছে নিয়ে যাব !
রুবা চোখ বন্ধ করলো। মাহি ওর মাথায় হাত রাখলো । মাহির কোলে র কাছেই ঘুমিয়ে গেল রুবা ! মাহিও চোখ বন্ধ করে আছে! রুবাকে নিয়ে খুব টেনশন হচ্ছে । যত সহজে রুবাকে ম্যানেজ করা যায় , তারচেয়েও সহজে ও ভেঙে পড়ে ।
সাফিয়া বেগম মাহির দরজায় নক করছেন !
মাহি বলল, এসো মা!
: কি অবস্থা রুবার ?
: ঘুমাচ্ছে মা ? মাথা ব্যথা কমেনি মাহি বলল।
: থাক ঘুমাক , কথা হয়েছে ওর সঙ্গে ?
সাফিয়া বেগম পাশে বসলেন!
ম্যানেজ তো সহজেই করা যায় ওকে কিন্তু ও তো সহজেই নিজের ভেতরে উল্টোপাল্টা ধারণা ধরে বসে থাকে।
: তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে মাহি ?
: আমার ওর কষ্ট দেখে কষ্ট হচ্ছে মা । এছাড়া আমি ডাক্তার, আমার তো ধৈর্য্য হারা হলে চলে না যেখানে রোগীটা রুবা সেখানে তো আরো না। মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।
সাফিয়া বেগম ছেলের মাথায় হাত রাখলো। ওকে বালিসে শুইয়ে দাও ঘাড় ব্যাথা হয়ে যাবে তো!
মাহি বলল,
একা পারছিলাম না মা তুমি একটা বালিশ কাছে এনে দাও।
ডাক্তার কি বলল মাহি?
: মা ঐ একি কথা ওর বেশি খেয়াল রাখতে হবে ! আমি চিন্তা করছি ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাব মা !
: আমার ও তাই মনে হয় কিছুদিন এখান থেকে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসলে ওর ভালো লাগব !
: রিয়ার মেহেদী প্রোগ্রাম রুবা যাবে না , মা বলল?
: যাবে না আবার, আমাকে বলল ঘন্টা খানেক পর ডেকে দিতে।
: আমি আগে যাচ্ছি তুমি রুবাকে নিয়ে এসো !
: মাহি উঠে মাকে গিয়ে ধরলো , টেনশন করো না মা।
সাফিয়া বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বললেন, মাহি তোমাকে যত দেখি আমি এত আবাক হই, আমার মাহি কে এত ধৈর্য দিয়েছে আল্লাহ! কতটা ধৈর্য্য নিয়ে তুমি রুবার সঙ্গে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করছো!
প্রায় সময় মনে হয় তুমি খুব যন্ত্রণা য় আছো!
: মা প্লিজ তুমি এ কথা আগেও বলেছো আর বলো না ! তুমি কোন অবিচার করোনি। আমি রুবাকে নিয়ে হ্যাপি । ও একটু ডিস্টার্ব আছে এতে আমি ভেঙে পড়িনি।
মা আমি তো তোমার কাছে কিছু গোপন করতে পারি না তুমি জানো , আমি রুবাকে ভালোবাসি মা ! তুমি নিশ্চিন্তে থাকো ওকে আমি ঠিক করে ফেলব এবং খুব জলদিই।
সাফিয়া বেগম ছেলের মাথায় হাত রাখলেন !
: মাহি আমি যাই তোমরা এসো রুবা কিন্তু এই প্রোগ্রাম এর ড্রেস বানিয়েছে সেভাবে রেডি করে নিয়ে এসো ।
: তুমি যাও আমরা আসছি!
মা বের হয়ে যাওয়ার পর মাহি রুবার পাশে গিয়ে বসলো। ওর খারাপ লাগছে একটা কথা ভেবে
: জীবনে তোমাকে গোপন করেছি মা একটাই জিনিস , নিঝুম এর ব্যাপার টা ।
আমি চেয়েছিলাম তোমাকে বলতে, নিঝুম ই বাঁধা দেয় তাই আজ কত কিছু কত রকম হয়েছে। ভালো খারাপ এখন আর ভাবিনা । এখন আমার সামনে শুধু এই মানুষ টা! মাহি রুবার মাথায় হাত রাখলো।
রুবা তুমি ভালো হয়ে যাও প্লিজ। কেন এরকম করছো ? আমার খুব কষ্ট হয়!
মাহি আর রুবা রিয়ার মেহেন্দীর প্রোগ্রাম এ গিয়ে হাজির হলো।
রুবা এই প্রোগ্রাম এর জন্য সবার মত ম্যাচিং গাউন পড়েছে। মাহি ওকে দেখে বলল, তোমাকে আরো লম্বা লাগছে গাউনে । খুব সুন্দর লাগছে ।
রুবা হাসলো।
মাহি বলল, শরীর খারাপ লাগলে আমার পাশে এসে বসে থাকবে ঠিক আছে।
: মাথা ব্যথা নেই তো এখন, রুবা বলল।
: আমি বলে রাখলাম।
নিঝুমদের এপার্টমেন্ট এর ছাদে মেহেদী র প্রোগ্রাম হচ্ছে। মাহি নিঝুম দের লিভিং রুমে বসে আছে।
নিঝুম ওর কাছে এসে বলল, রুবা নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল?
: খুব মাথা ব্যথা ছিল , এখন ঠিক আছে গেল তো ছাদে সবার সঙ্গে ।
নিঝুম কফি খাওয়াতে বল না কাউকে প্লিজ !
: আমি বানিয়ে দিচ্ছি , নিঝুম বলল!
: তোকে বানাতে হবে না , তোর এখন কত কাজের ব্যস্ততা কাউকে বল দিতে।
: আমার এখন কোন কাজ নেই মাহি । মনে মনে বলল, কত দিন পর তোর জন্য কফি বানাব মাহি।
নিঝুম ওর আর মাহির জন্য কফি বানালো ! কফি নিয়ে মাহির পাশে বসলো সেও।
: তোরা সবাই এক রকম ড্রেস বানিয়েছিস , খুব সুন্দর লাগছে সবাই কে ,মাহি বলল!
: সবচেয়ে সুন্দর লাগছে তোর বউ কে , আমরা সবাই একদিকে ও আরেক দিকে।
: এভাবে বলছিস কেন ? তুই তোর মত সুন্দর ও ওর মত । এখানে কম্পেরিজন এর কি হলো ?
: রুবা কে তাকিয়ে দেখেছিস আমি নিজেই তো চোখ ফিরাতে পারছি না, নিঝুম বলল ।
মাহি প্রসঙ্গ চেন্জ করার জন্য বলল, কফি ভালো হয়েছে !
: এটা কোন কফি হলো, পানি আর কফি !
: আমি এটাই খাই এবং তুই ভালো বানিয়েছিস!
: থেঙ্কস!কি হয়েছিল রুবার খুব অস্থির হয়ে চলে গেলি তখন?
: ঐ যা বলছিলি আজ তুই , ওর আমার খারাপ কিছু হওয়ার ভয় আর ওর কিছু কষ্ট যা ও বয়ে বেড়াচ্ছে ,সব মিলিয়ে সাইকোলজিক্যাল ইমব্যালেন্স হয়ে গিয়েছিল।
: এখন ঠিক আছে ?
: ঠিক আছে , সামলে নিয়েছি !
একটা কথা বলতো মাহি,
:যদি কখনো রুবা তোর আর আমার কথা জেনে যায় তখন?
মাহি নিঝুমের দিকে তাকালো, ওর শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে গেল ! আজ ওর ভয় লেগে গেল কথা টা শুনে ! তাই তো সেদিন কি হবে ? রুবার মানসিক অবস্থা কি হবে ও কি ব্যাখ্যা দিবে রুবাকে?
মাহি কোন কথা বলতে পারছে না , চুপ হয়ে গেল !
ঠিক তখনই নিয়াজ এসে নিঝুমদের বাসায় ঢুকলো ।
নিঝুম এগিয়ে গেল নিয়াজ কে রিসিভ করতে।
নিয়াজ আর মাহি বসে আছে নিঝুমদের লিভিং রুমে ! নিঝুম নিয়াজের জন্য চায়ের কথা বলতে গেছে।
মাহি কোন কথায় মনোযোগ দিতে পারছে না , ওর বারবার নিঝুম এর কথাটা মাথায় ঘুরছে। কি হবে রুবার, ওর আর নিঝুমের কথাটা জানলে ??
নিঝুম এসে বসলো ওদের পাশে। প্রোগ্রাম এখনো শুরু হয়নি কারণ সাজ্জাদ দের বাড়ির লোকজন এখনও আসেনি।
মাহি উঠে বলল,
: তোরা গল্প কর , আমি রুবাকে দেখে আসি ! নিয়াজ উপরে আয় !
: আসছি মাহি!
মাহি ছাদের দিকে এগিয়ে গেল।
ওর কি হয়েছে নিঝুম , নিয়াজ প্রশ্ন করলো?
: কার , মাহির ? রুবা একটু সিক তাই টেনশন করছে!
: কি হয়েছে ভাবির ?
: মাথা ব্যথা ছিল সারাদিন!
নিয়াজ অবাক হয়ে বলল,
: মাথা ব্যথা দেখেই এত অস্থির হচ্ছে মাহি !
: মাহি এমনই নিয়াজ, ও খুব কেয়ারিং লাইফ পার্টনার !
: ভালো !
: শিখার আছে অনেক কিছু ওর কাছ থেকে বুঝলে !
: শিখে কার উপর এপ্লাই করব ?
: শুধু কেয়ারিং হাজব্যান্ড কিন্তু না সে, এবাউট এভরি রিলেশন হি ইজ ভেরি রেপসপনসিবল!
: তাই বুঝি ?
: হুঁ!
: ঠিক আছে আই উইল ফলো হিজ ফুট স্টেপ! হাসলো নিয়াজ।
মাহি ছাদে এসে দেখে সবাই রেডি হয়ে আছে । পার্লারে র মেয়ে রা এক একজনের হাতে মেহেদি পড়িয়ে দিচ্ছে।
মাহির মেজাজ খারাপ হচ্ছে , এটা সম্পূর্ণ মেয়েদের প্রোগ্রাম এখানে তার কি কাজ।
এখন চলে গেলে রুবার খুব খারাপ লাগবে।
গান বাজনার আয়োজন ও আছে । সে ছাদের একটা অন্ধকার কর্নারে গিয়ে বসলো। এখান থেকে রুবাকে দেখা যাচ্ছে !
হাত নেড়ে নেড়ে কি যেন বলছে ছোট মামি কে!
কে বলবে এই মেয়ে দুপুরে কত কান্নাকাটি করেছে! মাহি ভাবছে নিঝুমের কথা জানলে কি করবে রুবা?
সেই দিন টার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই।
কোন ভাবে জানার আগেই , নিজেই বলে দেয়া ভালো , দেখা যাক কি হয়!
মাহি সিগারেট ধরালো।
ফটোগ্রাফার রিয়া আপুর কত ভঙ্গি র ছবি যে তুলছে !
মানুষ এত এনার্জি পায় কোথায় !
রুবা আসছে এদিকে ।
মাহি সিগারেট ফেলে দিল !
ওর পাশে এসে রুবা হাতের মেহেদী দেখাল।
: সুন্দর, মাহি বলল।
: তুমি অন্ধকারে বসে আছো কেন ?
: মাহি রুবার হাত ধরলো , এখান থেকে তোমাকে দেখা যাচ্ছে বসে বসে দেখছি তোমাকে !
এই প্রোগ্রাম শেষ হবে কখন রুবা?
: তোমার খারাপ লাগছে ?
: মেয়েদের প্রোগ্রাম না এটা, আমার আনইজি লাগছে।
: একটুপর ভালো লাগবে , অনেক ফান হবে দেখো!
: কি ফান হবে শুনি ?
: ডান্স পার্ফম করবে সবাই , তুমি চাইলে অপারের সঙ্গে ডান্স করতে পারো ,কথা টা বলে ই রুবা হাসছে।
: খুব মজা লাগছে তাই না ?
: হুম, হাসছে রুবা!
একটু পর সাজ্জাদ দের বাড়ির লোকজন চলে আসছে ।
মাহি দূর থেকে লক্ষ্য করছে, এই প্রোগ্রাম এর মেইন থীম হলো নাচ গান আর ছবি তোলা। মেহেদী পার্লারের মেয়ে রা সবার হাতেই লাগিয়ে দিচ্ছে।
অপার এসেছে মাহি পুরো ইগনোর করল ওকে।
নিয়াজ আর নিঝুম মাহির পাশে এসে বসল। নিঝুমের বান্ধবী রা ও এলো। সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে।
এখন মাহির একটু ভালো লাগছে । অনেক দিন পর পড়াশোনা আর হসপিটালে র বাহিরে আড্ডা ভালো জমেছে।
ওদিকে মেহেদী র প্রোগ্রাম এ নাচানাচি চলছে।
মাহি আড্ডার মাঝে ও রুবাকে খেয়াল করছে। কেন যেন রুবার জন্য ওর মন খারাপ লাগছে।
রুবা কত জটিল মানসিক অবস্থার মাঝ দিয়ে যাচ্ছে , ভালোবেসেও সে ভালোবাসা র মানুষের কাছে আসতে পারছে না, তাকে ভালোবাসার কথা টুকু বলতে পারছে না, বাঁধা তারই মন দিচ্ছে সেখানে বসে থাকা অনেক দিনের ভয় অনেক দিনের পেতে থাকা কষ্ট তাকে আটকে দিচ্ছে এর চেয়ে যন্ত্রণা আর কি হতে পারে !
রুবা তুমি চিন্তা করো না, আমি তোমার পাশে আছি। এই কষ্ট থেকে আমি তোমাকে বের করব।
রিয়া মাহিকে কাছে ডাকছে।
মাহি উঠে রিয়ার কাছে গেল।
: মাহি এসে চুপচাপ বসে আছিস আড্ডা দিচ্ছিস বন্ধুদের সাথে ।
: কি করব তাহলে আপু?
: নাচবি !
: ভালো বলছো , তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে!
: নাচার দরকার নেই তুই যেটা ভালো পারিস সেটা কর গান শোনা আমাদের!
: আপু এখানে অনেক বড় বড় গায়ক গায়িকা আছে তাদের সামনে আমার গান গেয়ে অনুষ্ঠানে র বারোটা বাজানোর কি খুব দরকার!
: থাপ্পড় খাবি দাম দেখালে মাহি!
: সব কাজিন রা শ্লোগান দেয়া শুরু করেছে মাহি ভাই মাহি ভাই ….
তারানা মামি এসে বলল,
: মাহি হাবিজাবি গান না কিন্তু তোমার গলায় যে গান গুলো সব চেয়ে ভালো লাগে সে গুলো গাইবে ।
সবাই মাহির পিছনে লেগে গেল। গাইতেই হবে গান।
: রিয়া বলল, তুই আমাদের একটা মাত্র ভাই এত দাম দেখাচ্ছিস মাহি!
আচ্ছা ঠিক আছে চিন্তা করে দেখি প্রোগ্রাম চলুক।
মাহি আড্ডা দিতে ফিরে এলো বন্ধুদের কাছে।
কিছুক্ষণ পর মাহি মেসেঞ্জারের আওয়াজ পেয়ে মোবাইল বের করলো রুবা ইনবক্স করেছে,
” ডাক্তার সাহেব অধীর হয়ে অপেক্ষা করছি তোমার গান শোনার জন্য ”
মাহি হাসলো, পাগল !
রুবার স্বাভাবিক আচরনে ওর একটু ভালো লাগছে।
রিয়া মাহিকে আবার ডেকে পাঠালো।
এবার মাহি কে গাইতে তো হবেই , রুবা ওর গানের জন্য অপেক্ষা করছে।
সে গান শুরুর আগে রুবাকে মেসেজ দিল।
” এই গান টা শুধু তোমার জন্য রুবা ”
মনে মনে খুব চাইছে রুবা যেন আবার নরমাল হয়ে উঠে। হোক তার গান শুনে , হোক তার একটু হাসিতে তার যে কোন আচরনে।
মাহি আজ রবীন্দ্রনাথ সঙ্গীত গাইবে । উনার গান ছাড়া ভালোবাসার প্রকাশ কি আর কিছুতে পুরোপুরি আসে।
রুবার দিকে একবার তাকিয়ে মাহি চোখ বন্ধ করে গেয়ে উঠলো,
” ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের ও মন্দিরে….”
রুবা মাহির দিকে তাকাতে লজ্জা পাচ্ছে । ও অন্য দিকে তাকিয়ে গান শুনছে ! ওর মনটা ভালো লাগায় ভরে যাচ্ছে। মাহি ভরাট গলায় যখন গান গায় ওর বুকের ভেতরে কি একটা তোলপাড় করা শুরু করে সব সময়। এত দরদ দিয়ে ও গান গায়। রুবার চোখ আজকেও ভিজে যাচ্ছে। ওর কষ্ট গুলো ঝট করে সামনে চলে আসছে। মাহির জন্য ওর বুকের চিনচিনে অনুভূতি টা ওর দম বন্ধ করে দেয়। ওর শরীর টা কাঁপছে।
নিঝুম দূর থেকে মাহির গান শুনছে। নিয়াজ ওর পাশে বসে আছে। নিয়াজ বলে উঠলো,
: নিঝুম মাহি আসলেই খুব সুন্দর গান গায়, কি বলো? নিয়াজ তাকিয়ে দেখে নিঝুম চোখ বন্ধ করে মাহির গান শুনছে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
ভালোবাসা এমন এক জিনিস যা মনের গভীরে ছিটে ফোটা পড়ে থাকলেও হালকা শিশিরের ছোঁয়া র মত কিছুর পরশ পেলেই প্লাবন ডেকে আনতে পারে।
মাহির এক গানে রুবার ভেতরের কষ্ট , নিঝুমের ভেতরের কষ্ট তাদের দুজনকে চোখের পানিতে ভিজিয়ে দিচ্ছে।
নিয়াজ নিঝুম কে অবাক করে দিয়ে নিঝুমের হাত টা ধরলো। কানে কানে বলল,
: নিঝুম তোমার কষ্ট কমাতে হয়তো পারবো না কিন্তু কষ্টের সময় তোমার পাশে তো থাকতে পারব , তুমি কি আমাকে সেই সুযোগ টা দিবে ?
: নিঝুম নিয়াজের হাত টার দিকে তাকিয়ে আছে ওটা শক্ত করে নিঝুমের হাত ধরে রেখেছে।
নিঝুম এর কেন জানি ছাড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করলো না !
নিয়াজ মনে মনে বলল,
: থেঙ্কস মাহি ! তোর গানটা আমার আর নিঝুমের জীবনের জন্য খুব দরকার ছিল আজ ! আর কেউ না জানুক আমি জানি।
রুবা ছাদ থেকে নিচে নিঝুম দের বাসায় চলে গেল। ওর খুব কান্না পাচ্ছে। মাহি কে সে তার কান্না টা দেখাতে চাইছে না । কিছুতেই না। সে নিঝুমের ওয়াস রুমে ঢুকে বেসিনে র কল ছেড়ে কাঁদছে।
এই মুহূর্তে সে কাঁদতে না পারলে ওর আরও বেশি কষ্ট হবে।
মাহি গান গাওয়া শেষে তাকিয়ে দেখে রুবা আশেপাশে নেই।
রিয়া বলল, আরো একটা গাইতে হবে মাহি!
: আপু আর না অন্য দের পার্ফম করতে দাও। বলে মাহি চলে আসল।
ছাদে কোথাও রুবাকে না দেখে মাহি চিন্তায় পড়ে গেল।
সে নিঝুম দের বাসায় আসলো কিন্তু রুবা সেখানে নেই।
সাফিয়া বেগম ডাইনিং এ বসে ছিলেন। মাহি কিছু জিজ্ঞেস করার আগে তিনিই প্রশ্ন করলেন,
: রুবা কি করছে মাহি?
: আমি তো রুবাকেই খুঁজতে এলাম মা , এখানে নেই?
: দেখিনি তো।
: আচ্ছা আমি খুঁজে নিচ্ছি মা।
দরজার বাহিরে অপারের সঙ্গে ওর দেখা। অপার বলে উঠলো,
: আমি যত চেষ্টা করছি আপনার থেকে মন ডাইভার্ট করতে আপনার এক একটা জিনিস আমাকে ততটাই আপনার উপর ক্রাশ খাইয়ে দিচ্ছে। কি চমৎকার গান গাইলেন আই লাভ ইট।
মাহির হঠাৎ কি জানি হলো সে রিয়েক্ট করে ফেলল আজ,
: লুক অপার , আমার মনে হচ্ছে তুমি সব কিছুকে ফান হিসেবে নিতে পছন্দ করো। তুমি কি ভাবো আমাকে , আমি ভার্সিটিতে পড়া ইয়ো ইয়ো টাইপ কুল গাই। যে তোমার এসব ক্রাশ, ট্রাশ শুনে পাগল হয়ে যাব?
তোমার বয়স কিন্তু একেবারে কম না। এই বয়সী মেয়েদের অনেক বুদ্ধি করে চলতে হয়! তোমার এই মাথাটাতে কি এটা কাজ করে না কাকে কি বলতে হবে।
আই এম এ ম্যারেড পার্সন তুমি বারবার আমাকে পোক করা শুরু করেছো বিভিন্ন ভাবে। কি হচ্ছে টা কি?
তুমি আমার বোনের ননদ, আমার হাঁটুর বয়সী একটা মেয়ে সে জন্যই প্রথম প্রথম কিছু বলিনি বাট নাও এনাফ ইজ এনাফ।
সব কিছু র একটা লিমিট থাকে। আমি কি বোঝাতে পেরেছি তোমাকে?
প্লিজ অপার গ্রো আপ!
মাহি দৌড়ে আবার ছাদে ফিরে এলো ! না ছাদে কোথাও রুবা নেই। ওর মাথা খারাপ হবার মত অবস্থা। চোখের পলকে রুবা কোথায় গেল?
ওকে দেখে মানহা প্রশ্ন করলো,
: ভাইয়া কি ভাবি কে খুজছো?
: রুবা কোথায় রে?
: নিচে গেল দেখলাম!
মাহি দৌড়ে আবার নিঝুম দের বাসায় ফিরে এলো।
এসে দেখে রুবা সাফিয়া বেগম এর পাশে বসে আছে!
মাহির মনে হলো , বুকের ভেতর জান টা ফেরত আসছে। সে দরজা পাশে দাঁড়িয়ে হাপাচ্ছে।
তারপর ওদের কাছে এসে দাঁড়ালো!
সাফিয়া বেগম মাহি কে দেখে বললেন,
: মাহি রুবার খারাপ লাগছে বাসায় চলে যেতে চাচ্ছে।
: কি হয়েছে রুবা , মাহি প্রশ্ন করলো!
: কিছু না কেমন জানি লাগছে !
: ঠিক আছে মা আমরা না হয় যাই বাসায় ?
: ডিনার করবে না ?
: আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না আর রুবা বাসায় খেয়ে নিবে ।
মাহি চাইছে রুবাকে নিয়ে চলে যেতে ।
:আচ্ছা ঠিক আছে যাও , আমি গেস্ট যাক তারপর আসছি! রুবার মাথায় হাত দিয়ে বললেন ডিনার করে নিও তুমি ।
রুবা মাথা নাড়ল শুধু!
মাহি বলল,
: মা তুমি খালামনি আর রিয়া আপু কে বলো আমি গেলাম।
: যাও।
মাহি আর রুবা বাসায় ফিরে আসছে! মাহি গাড়িতে উঠে বলল,
: বাসায় যাব , নাকি দুজন ঘুরব একটু রুবা?
: বাসায় যাব!
: ঠিক আছে। মাহি ড্রাইভ করছে আর রুবাকে খেয়াল করছে।
: আমি ছাদে তোমাকে না দেখে অস্থির হয়ে গেলাম কোথায় ছিলে তুমি?
: ওয়াস রুমে গিয়েছিলাম।
: ও আচ্ছা।
মাহি আর কোন কথা বলল না ।
বাসায় এসে সরাসরি রুমে চলে এলো রুবা!
রুমে ঢুকে মাহি ওর হাত ধরে নিজের পাশে বসালো । কি হয়েছে রুবা ?
: কিছু না !
: তুমি আবার কান্নাকাটি করেছো !
: রুবা চুপ করে নিচে র দিকে তাকিয়ে আছে !
: কি হয়েছে বলো তো ক্লিয়ার করে?
: জানি না !
: জানো না নাকি সত্যি বুঝতে পারছো না ?
: বুঝতে পারছি না!
: তাহলে আমি বলি তোমার কি হয়েছে?
মাহি রুবার পায়ের কাছে এসে বসলো । তাকাও আমার দিকে তারপর রুবার দুই হাত ধরে বলল,
: তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাই তো ? তোমার এক মন আমার কাছে আসতে চায়, আবার অন্য দিকে আরেক মন বলছে তুমি আমার কাছে আসলে তোমার অন্য সব প্রিয়জন দের মত আমিও মরে টরে একটা কিছু হয়ে যাব ঠিক কিনা?
: রুবা কোন কথা বলছে না ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে শুধু !
: ঠিক ধরেছি রুবা ?
: রুবা মাথা নাড়লো !
এর কি সমাধান আছে বলো তো রুবা ?
: জানি না !
: এর সমাধান হলো তুমি কোন কিছু চিন্তা করাই বাদ দাও !
: আর তোমাকে না বলেছিলাম আমাকে সব কিছু বলবে ! তোমার কি এখনো কান্না পাচ্ছে তাহলে আসো আমার বুকে পাঁচ মিনিট এর জন্য কান্নাকাটি করো , এর বেশি কান্না করা যাবে না। প্রেমিকের বুকে কান্নাকাটি ও করা যায়!
: রুবা হেসে দিল!
ভালোই তো গান শুনতে চাইলে তারপর কি , হলো?
: তোমার গান শুনেই কান্না চলে আসছে !
: এত খারাপ হয়েছে গান রুবা?
: না গান খুব ভালো হয়েছে , তাই কান্না আসছে।
মাহি বলল, তাহলে আর কোন দিন গানই গাইব না । আরে ভাই গান শুনে যদি বউ এর চোখ দিয়ে সুনামী চলে আসে তাহলে তো গান না গাওয়াই ভালো!
: রুবা হাসছে !
তুমি এভাবে হাসবে রুবা ,তোমার ফ্যাচফ্যাচ কান্না কান্না মুখ টা দেখতে ভালো লাগে না।
কি শুরু হলো আজ সকালে আকাশে বৃষ্টি আর সারাদিন বউ এর চোখে বৃষ্টি খুব বাজে একটা দিন গেল।
তোমার হাত দেখি । মাহি ওর হাতে চুমু দিয়ে বলল, অনেক সুন্দর হয়েছে মেহেদী টা।
মাহি উঠে দাঁড়ালো তারপর ঘুরে রুবার দিকে তাকিয়ে বলল , রুবা আমার জন্য কি একটু ভালো থাকা যায় না ? প্লিজ!
রুবা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল মাহির দিকে । তারপর
উঠে গিয়ে মাহির হাত ধরে বলল, চেষ্টা করছি একটু সময় দাও আমাকে প্লীজ।
( চলবে )