যখন দুজনে একা পর্ব-৫১

0
3633

#যখন_দুজনে_একা

৫১ পর্ব

মাহি আর রুবা ওয়েটিং রুমে বসে আছে। নিঝুম উঠে গেছে ওদের কাছ থেকে। মাহি রুবাকে তাকিয়ে দেখছে,
: কি দেখো ?
: তোমাকে।
: সেটা তো বুঝলাম, কিন্তু কি দেখো নতুন করে?
: তোমাকে তো সব বেলায় নতুন করেই দেখি রুবা !
: তাই আমাকে নতুন করে দেখার কি আছে ?
: আছে, সময় হোক বলব ! হাসলো মাহি , আমার মাথা ব্যথা করছে মাইগ্রেন হলেই সর্বনাশ।
রুবা মাহির কপালে হাত রাখলো! মাহি চোখ বন্ধ করে ফেলল।
: তুমি কালকে থেকে এই গেঞ্জি পড়ে আছো , আমি সঙ্গে তোমার গেঞ্জি নিয়ে এসেছি চেন্জ করে নাও !
: রাখো পরে করব, থ্যাঙ্কস আমার মাথায়ই ছিল না এটা তোমাকে বলতে!
: আমার মাথায় ছিল। রুবা হেসে বলল।
আচ্ছা কিছুক্ষণের জন্য বাসায় আসা যায় না ?
: তুমি কি খুব করে চাইছো আমি বাসায় আসি রুবা , মাহি ফিসফিস করে বলল।
: না চাইছি না । সবসময় শুধু আমার সঙ্গে ফান করা !
মাহি হাসছে রুবার হাত ধরে ।
গোসল করে খেয়ে তারপর চলে আসলে ,বাসা তো মাত্র পাঁচ মিনিট লাগে এখান থেকে?
: নিঝুম একা আছে এখানে, ওকে একা রেখে যেতে চাচ্ছি না।
: আমি থাকি তুমি যাও বাসায় ?
: এটা ভালো বলেছো তুমি এখানে থাকবে আর আমি বাসায় যাব !
: হুম আমি নিঝুম আপু কে কম্পানি দিলাম।
: আর আমাকে কম্পানি টা দিবে কে বাসায় , তোমার বুয়ারা, কেয়ারটেকার, সিকিউরিটি গার্ড আর ড্রাইভার ?
: তুমি বাসায় যাবে শাওয়ার নিবে একটু কিছু খাবে তারপর তো চলেই আসবে এখানে!
: আমার টাওয়েল কে এগিয়ে দিবে, আমার গেঞ্জি বা শার্ট কে এগিয়ে দিবে , ঘড়ি কে দিবে রুবা ?
: সব সময় এগুলো কি আমি এগিয়ে গুছিয়ে দেই? তুমি ই তো তোমার কাজ করো আমি হঠাৎ একদিন কি দুইদিন দেই!
: আজ বাসায় গেলে দিতে হবে এমনকি কি গোসল করিয়েও দিতে হতে পারে রুবা ?
: থাক বাবা এখানেই থাকো , তোমার গোসল করার ও দরকার নেই বাসায় যাওয়ার ও দরকার নেই !
মাহি হেসে দিল!
রুবা তোমার মন খারাপ হয়নি কালকে ,আমি তাড়াতাড়ি আসব বলে বের হয়ে এলাম তারপর আর যেতেই পারলাম না বাসায় ?
: নিজের জন্য না তোমার জন্য মন খারাপ লাগছিল , তুমি অনেক অপেক্ষা করেছিলে !
: কিসের জন্য, রুবা?
: ঘোড়ার ডিমের জন্য যাও বলে রুবা উঠে গেল মাহির পাশ থেকে !
মাহি রুবার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
রুবা উঠে নিঝুমকে খুঁজতে গেলে। মাহি ওর পিছনে পিছনে আসছে।
নিঝুম ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিল। বের হয়ে এসে মাহিকে বলল,
রাতে কার্ডিওলজিস্ট জানাবে আব্বু র বাইপাস কবে হবে ? আমার খুব নার্ভাস লাগছে মাহি!
: এত নার্ভাস হ‌ওয়ার কিছু নেই। যারা অপারেট করবে দে আর এক্সপার্ট সো ডোন্ট ওরি। এগুলো এখন তাদের কাছে ডাল ভাত।‌
: মাহি তুই ওটিতে থাকবি কথা দে ? নিঝুম মাহির হাত ধরলো।
: আচ্ছা দেখি কথা বলে , আমার ও ইচ্ছে আছে।
: তাহলে ব্যবস্থা কর প্লিজ। তুই তো সব পারিস।
মাহি ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চলে গেল।

রুবা নিঝুম এর পাশে গিয়ে ওর হাত ধরলো। তুমি এত টেনশন করছো কেন নিঝুম আপু? টেনশন করে কখনো কিছু হয় না , যা নির্ধারণ করা থাকে তাই হয়!
আমি আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখেছি টেনশন করে কিছুই আটকাতে পারিনি।
নিঝুম রুবার কথা শুনে হাসলো।
: রুবা তোমার কথা শুনে মন টা হালকা হয়ে গেল। সত্যি বলছি। তুমি অনেক গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলো। মাহি নিশ্চয়ই সারাক্ষণ তোমার কথা শুনে?
: রুবা হেসে দিল, না আপু মুগ্ধ হয়ে তো আমি ওর কথা শুনি, ওকে দেখি !
: তাই , আমি কিন্তু তোমাদের দুজনকে দেখি মুগ্ধ হয়ে। কি সুন্দর ছোট ছোট ব্যাপার গুলো ভালোবাসা বাড়িয়ে দিচ্ছে তোমাদের মাঝে ।‌এই যে এক মগে চা খাচ্ছো তোমরা, কি ভালো লাগলো দেখে আমার !
: রুবা একটু লজ্জা পেয়ে গেল , আপু এটা শুরু থেকেই মাহি করে , ওর মগ থেকে আমাকে খাইয়ে ছাড়বে । আমার হাতে আমার চায়ের মগ, তারপরও ওর টা থেকে আমাকে খেতে হবে । ওর চিনি ,দুধ ছাড়া চা কফি খেতে খেতে এখন আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। এমনকি মা বাবার সঙ্গে চা খাওয়ার সময়ও ওর মগ থেকে খেতে হবে আমার।
: হাও সুইট , মাহি এতটা রোমান্টিক কখনো বুঝিনি রুবা ! ও এই ব্যাপার গুলো নোটিশ করে লাইফে জানতাম না !
: আমি ও ওকে যতটা দেখি খুব অবাক হয়ে যাই। একটা কথা বলি ?
: বলো রুবা !
: তোমার শিহাব ভাইয়া ছিল শান্ত একটা নদীর মত ওর আশেপাশে যতদিন ছিলাম নিজের ভেতরে শান্তি শান্তি একটা ভাব ছিল। ওর কোন ডিমান্ড ছিল না। যা দিবে হাসিমুখে গ্রহণ করত । নিজের থেকে সে আদায় করে নিবে না । কষ্ট পেলেও সে মুখ ফুটে বলতো না । সবাই কে ভালোবাসা দিয়েই সুখ পেত।
: আর মাহি , নিঝুম আগ্রহী দৃষ্টি তে প্রশ্ন করলো রুবাকে?
: মাহি উত্তাল সাগর, সে নিজে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে , ভাসিয়ে ছাড়বেই, এমন কিছু বলবে এক কথা শুনে পাগল হয়ে যেতে হবে ।
: তুমি ওর পাগলামী র পার্ফেক্ট ম্যাচ রুবা তোমার মধ্যেও যথেষ্ট পাগলামী আছে!
: সব ওর সঙ্গে থেকে ওর জন্য হয়ে উঠা ।
: নিঝুম রুবার গালে হাত ছোয়াল ! কিছু পাগলামী জীবনে খুব প্রয়োজন রুবা, এতে রিলেশন এর রুট টা স্ট্রং হয়।
খালাম্মার খবর বলো তোমাকে কিভাবে রেখে গেলেন, আমি তো শুনে অবাক !
: মা তো শুরু থেকেই আমাকে নিয়ে যেতে চাননি তোমার ভাইয়ের ভিসাটা হয়নি দেখে , ওকে একা রেখে যেতে মা র কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু মাহির জিদের কাছে সবাই পরাজিত হয়।
গতকাল সকালে মাহি হসপিটালে চলে যায় আগেই। এয়ার পোর্টে যেতে পারেনি ও, এটাই ভালো হয়েছে । বাবা বাসা থেকে বের হওয়ার আগ মুহূর্তে বলল, রুবা থাক মাহি একা থাকবে আমার ও ভালো লাগছে না ।
মা খুশি হয়ে রেখে গেল।‌
: মাহি রাগ হয়েছে নাকি খুশি হয়েছে সেটা বলো‌?
: খুশিই হয়েছে ওর ও খারাপ লাগছিল একা বাসায় থাকতে !
: একা বাসায় ও জীবনে অনেক বার ছিল তোমাকে ছাড়া থাকতে ওর খারাপ লাগছিল !
কিন্তু দেখো কেমন একটা ব্যাপার হলো এখন তুমি বাসায় একা আর মাহি এখানে পরে আছে।
: প্লিজ আপু তুমি এভাবে বললে খারাপ লাগবে আমার এবং মাহির। আজ বাবা কিংবা মা আল্লাহ মাফ করুন অসুস্থ থাকলে তখন কি মাহি তার দ্বায়িত্ব থেকে দূরে থাকতে পারতো ? না আমি পারতাম ?
: নিঝুম রুবাকে জড়িয়ে ধরলো , রুবা থ্যাঙ্কস তোমাকে খালাম্মা কেন এত ভালোবাসে আজ জানলাম, কারণ তুমি শিহাব ভাইয়ার মত। শিহাব ভাইয়া তোমার মত ভালো ছিল । আপু মাহিও অনেক ভালো!
: হুম।
মাহি ওদের কাছে এসে অবাক হয়ে বলল, কি ব্যাপার কি হচ্ছে এখানে ?
: তোর বদনাম হচ্ছে , নিঝুম বলল!
: সত্যি , কে করছে বদনাম টা তুই না রুবা ?
: দুজনেই করছি হাসলো নিঝুম। বলছিলাম তুই অনেক ভাগ্যবান রুবার মত একটা মেয়ে কে পেয়েছিস জীবনে ।
: আমার তো মনে হয় রুবা লাকী আমার মত কাউকে পেয়েছে জীবনে মাহি দুষ্টামি র সুরে বলল।
: তোকে বলেছে মাহি, রুবা হলো বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা বুঝলি বলেই নিঝুম আর রুবা হাসা শুরু করলো।
মাহি বলে উঠলো,
: আমি আমার সব সম্পর্ক পাওয়ার ব্যাপারে খুব ভাগ্যবান মা , বাবা, ভাই, আত্মীয়-স্বজন এন্ড অফকোর্স রুবা । আমার মত বাঁদরের গলায় আমার সব সম্পর্ক অনেক দামী মালা ।
: নিঝুম মাহির দিকে তাকিয়ে বলল তুই ভালো বলেই তোর জন্য সব ভালো !
: নিঝুম আমি হয়তো থাকছি ওটিতে ।
: নিঝুম খুশি হয়ে গেল ! থ্যাঙ্কস মাহি খুব রিল্যাক্স থাকব তাহলে।
: ঐ আমি কিন্তু কার্ডিওলজিস্ট না আমি শুধু দর্শক ওটিতে । তাও সম্ভব হয়েছে এদের একজন ডাইরেক্টর বাবার ক্লায়েন্ট তাই ।
: তুই দর্শক হয়ে ওটিতে থাকলেই হবে । এখন প্লিজ বাসায় যা একটু রেস্ট নে আমি আছি এখানে।
: আমার সমস্যা হচ্ছে না তো , রুবাও আছে এখানে আর বাসায় যেতে হবে কেন?
: নিঝুম আপু আমি বললাম , আমি তোমার কাছে থাকি তুমি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো শুনছে না‌, রুবা বলল!
: কি বলে এই পাগল মেয়ে মাহি, পার্ফেক্ট তোর ব‌উ বুঝলি!
: নিঝুম আমি কি সাধে পাগল ডাকি একে বল , মাহি হাসতে হাসতে বলল ।
: মাহি বাসায় যাবে আর তুমি এখানে থাকবে রুবা , বোকা মেয়ে!
: শোন তোমরা দুজন এখন বাসায় যাবে আমি আছি আপু আর সাজ্জাদ ভাই আসছে আর নিয়াজ ও আসছে। আর ভিজিটর তো আসছেই আত্মীয় স্বজন, বাবার অফিসের লোকজন। মাহি তুই আজ রাতে বাসায় থাকবি রুবা কোন ভাবেই আজ একা থাকবে না। এটাই ফাইনাল।
: তুই সব ফাইনাল করে ফেললি নিঝুম ?
: মাহি প্লিজ এখন তুই বাসায় যা রুবার সঙ্গে। রেস্ট নে।

নিঝুম একরকম জোর করে মাহিকে রুবার সঙ্গে যেতে রাজি করালো।
ওরা একসঙ্গে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে এলো । নিঝুম বেসমেন্ট এ যাবে বিল গুলো দেখতে। মাহি সঙ্গে যেতে চাইলো সে জোর করে ওকে বাঁধা দিল। মাহি নিঝুমের কাছে এসে বলল,
: নিয়াজ যেহেতু আসছে ওর কাছে তোকে দিয়েই যাই কি বল?
: নিঝুম অবাক হয়ে তাকালো মাহির দিকে।
মাহি হাসছে
নিঝুম ও হেসে দিল। কেন যেন কথাটা ভালোই লাগলো।
: নিয়াজ তাই না মাহি ?
: হুম নিঝুম।
: যা ভাগ নিঝুম ‌উল্টো ঘুরে হাঁটা দিল ।
মাহি রুবাকে নিয়ে পার্কিং এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে !
নিঝুম আবার পিছন ফিরে তাকালো ,দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে ।
কি সুন্দর মাহি পেছন থেকে রুবার কাঁধে হাত দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । ভালো ই লাগছে ওর, খারাপ লাগছে না তো নিঝুম চিন্তা করলো। যতক্ষণ ওদের দেখা গেল নিঝুম দাঁড়িয়ে রইল ।

গাড়িতে উঠে মাহি রুবাকে বলল,
:রুবা তুমি আমাকে নিয়ে চলেই এলে এর পরিনাম কি হতে পারে জানো তো।
: আমি নিয়ে আসলাম তোমাকে , নিঝুম আপু জোর করে পাঠালো দেখেই তো এলে তুমি ! এখন‌ই গাড়ি ঘুরাও তাড়াতাড়ি গাড়ি ঘুরাও।
: এই পাগল আমি ফান করছি।
: কিন্তু আমি সিরিয়াস মাহি!
: তোমাকে নিয়ে কি করি বলোতো রুবা ?
: কি করতে চাও ?
: চলো বাসায় দেখা যাক কি করা যায় ?
: ওফফ মাহি তুমি কিন্তু আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছ !
: এই কাজ তুমি আগে করেছো রুবা , অনেক কষ্ট দিচ্ছ আমাকে ! মাহি গান গাওয়া শুরু করলো.
” বেদনার কলি তুমি দাও ভালোবেসে বধূ
ফুল ফোটানোর ছলে আমি ভরে দেব মধু ”
: সব পরিস্থিতিতে তোমার গান রেডি থাকে মাহি ?
: হুম আমি গান পাগল মানুষ। বুঝলে এই ডাক্তারি পড়াশোনা করলাম বলেই, তা না হলে গায়ক হয়ে যেতাম।
: এটা ঠিক বলেছো তোমার গান শুনেই মন ভরে যায়।
বাসায় এসে মাহি রুবাকে তাড়া দিল আমি কিন্তু বেশিক্ষণ থাকব না শাওয়ার নিয়েই চা খেয়ে চলে যাব ! তুমি চা বানাতে বলে দাও। এখান থেকে গিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে হবে শুনলেই তো।
: হুম।

রুবা চা নিয়ে রুমে ঢুকে দেখে মাহি গোসল শেষ করে আলমারি তে কি যেন খুঁজছে?
: কিছু খুঁজছিলে ?
: হুম আমার পুরোনো মোবাইল টা !
: কি করবে ?
: এটাতে চার্জ একেবারে শেষ এখন পাওয়ার ব্যাঙ্ক এ চার্জ দিব পুরোনো টা চার্জ দিয়ে রাখি যদি ইমার্জেন্সি তে লাগে তখন ব্যবহার করা যাবে।
মাহি পুরোনো ফোন টা আলমারি থেকে বের করে চার্জ এ দিল !
চা খেতে গিয়ে মাহি রুবার দিকে নিজের মগ এগিয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে রুবা কিছু না বলেই হেসে দিল হো হো করে।
মাহি খুব অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
: হাসলে কেন রুবা?
: আজ তুমি তোমার অভ্যাস মত আমার মগ থেকে চা খাচ্ছিলে নিঝুম আপু নোটিশ করেছে । আমাকে বলল মাহি যে এতটা রোমান্টিক জানতাম না তো এসব ছোট ছোট ব্যাপার মাহি খেয়াল রাখে ?
: মাহি চুপ করে গেল !
: চুপ করে গেলে যে শুনে!
: এত সব খেয়াল করার কি আছে আমি পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তি ন‌ই যে এই কাজ করেছি !
: রাগ করছো নাকি !
: রাগ করব কেন ?
রুবা মাহির হাত থেকে মগ টেনে এনে চুমুক দিল । মাহি হাসছে ওর কাজ দেখে।
: তোমার মাথা ব্যথা কমেছে ?
: হুঁ এখন ভালো লাগছে । থ্যাঙ্কস রুবা বাসায় না আসলে, ফ্রেশ না হলে মাথার যন্ত্রণা টা কষ্ট দিত।
রুবা মাহির মাথা মেসেজ করে দিতে নিলে।
: আচ্ছা নিঝুম আপুকে কেন থাকতে দিবে না অপারেশন এর সময় ?
: কি দরকার নিজের বাবার এত জটিল অপারেশন দেখার !
: আমার কোন জটিল অপারেশন হলে তুমি কি থাকবে ওটিতে ?
: আমি অপারেশন এর সময় অবশ্যই তোমার পাশে থাকব , জটিল হোক আর সাধারণ অপারেশন হোক । তোমার হাত ধরে বসে থাকব।
:‌হুম ডি এন্ড সির সময় ছিলে তুমি আমার পাশে দাড়িয়ে । আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু ভালো লাগছিল কেউ একজন আমার কষ্টের সময় পাশে আছে দেখে।
: মাহি রুবার হাত ধরে বলল, প্লিজ কষ্টের সময়ের কথা চিন্তা করতে হবে না । আমি সব সময় তোমার পাশে আছি রুবা।

রুবা হাসলো ।
: তুমি রাতে খালামনির বাসায় থাকো রুবা , আমি দিয়ে আসি!
: না আমি এই বাসা ছেড়ে কোথাও যাব না । মা আমার জিম্মায় বাসা রেখে গেছে তারচেয়ে ও বড় কথা নিজের ঘর ছাড়া আমার ঘুম আসে না ।
: তুমি একা থাকলে আমার টেনশন হয় !
: প্লিজ মাহি।
মাহি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রুবা তাকিয়ে আছে ওর ইচ্ছে করছে মাহির সঙ্গে হসপিটালে চলে যেতে । এই কথা বললে মাহি হাসবে ! ওকে পাগল বলে আরো ক্ষ্যাপাবে।
: রুবা ঘন্টা দুইয়েক পর মোবাইল টা অন করে দেখো তো ঠিক আছে কিনা অনেক দিন বন্ধ পরে আছে।
: ঠিক আছে !
সিঁড়ি র কাছে বিদায় দেয়ার সময় রুবাকে ধরে আদর দিয়ে মাহি বলল,
” শোন কাজল চোখের মেয়ে
আমার দিবস কাটে, বিবশ হয়ে
তোমার চোখে চেয়ে”
: কার কবিতা মাহি ?
: আমার প্রিয় একজন কবির।আরো শুনবে ,
” শোনো, জল ছলছল কাজল চোখের কন্যা- সর্বনাশী
আমি তোমায় ভালোবাসি ! ”
: খুব সুন্দর !

: বৃষ্টি হচ্ছে আরও দুই দিন হবে ঝড় ও হতে পারে তুমি একা থাকবে রুবা আমার মনটা মানছে না।
: তাহলে কি করা যাবে বলো ?
: আমার বুকে পকেটে করে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে তোমাকে রুবা।
: আমি সত্যি সত্যি মুরগির বাচ্চা হলে বুক পকেটে করে চলে যেতাম।
: হুম আমার মুরগির বাচ্চা ! আমি আজ রাত ভর একটু পর পর ফোন দিব তুমি ঘুমাবে না আমার সঙ্গে কথা বলবে।
: ঠিক আছে যাও । তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

মাহি যাওয়ার সময় বারবার রুবার দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিল। রুবার খুব ইচ্ছে করছিল মাহিকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলতে তুমি যেও না । কিন্তু এতটা প্রকাশ যে সে কোন কালেই করতে পারে না । আর মাহির হসপিটালে যাওয়াটা জরুরি ।
রুবা মন উদাস করে রুমে বসে রইল। ওর আজ খুব কান্না পাচ্ছে । মাহিকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। মাহি কে ছাড়া এই ঘরটাতে তার দম বন্ধ লাগছে কেন সে বুঝতে পারছে না।
আজ মা ও নেই বাসায় । মা থাকলে মায়ের সঙ্গে ঘুমাত ।
তার একা থাকার খুব ভয় হয় । কিন্তু আজ সে কতটা একা । পুরো বাড়িটা খালি। ফরিদা বুয়া সেই দূরে কিচেনের পাশে ওর রুমে আর এখানে এত দূরে সে একা।
রুবা মাহি কে ফোন দিল । কিন্তু মাহি লাইন কেটে দিল । এই প্রথম মাহি তার ফোন কেটে দিল।
হয়তো ব্যস্ত আছে। কিন্তু তারপরও কষ্ট লাগছে রুবার।

মাহি হসপিটালে গিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতেই , ডাক্তার বলল আগামীকাল বাইপাস সার্জারি হবে খালুর। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ডাক্তার রা।
রিয়া খুব নার্ভাস হয়ে মাহির কাছে এলো,
: মাহি খুব ভয় হচ্ছে আমার।
: আপু আজকাল হার্টের বাইপাস, সিজারিয়ানের মত সহজ হয়ে গেছে ডাক্তার দের কাছে ,ভয় পেয়ো না তো‌!
: আমি তো তোদের মত ডাক্তার না তাই ভয় পাচ্ছি!
: প্লিজ আপু শান্ত হয়ে আমার পাশে বসো ।
: রুবা কোথায় মাহি ?
: ও বাসায় !
: শুনলাম খালাম্মা খালু সিঙ্গাপুর আর তুই এখানে, রুবাকে একা বাসায় যে রেখে এসেছিস তোর কি বুদ্ধি নাই ? নাকি ভাতের সঙ্গে খেয়ে ফেলেছিল বুদ্ধি সব !
: মাহি হেসে দিল , আপু কি যে বলো !
: ওকে একা রেখেছিস পুরো বাসায় কি বলব আর ! খালাম্মা এসে শুনলে তোকে কি করবে মাহি ? তুই জানিস না রুবা খালাম্মা র কি ?
: তুমি তো আমাকে পেনিক করছো আপু!
: গাধা তুই আম্মু র বাসায় রুবাকে রেখে আসতি !
: ও যেতে চাইছে না আপু , কি করব বলো ?
: ও তো চাইবেই না তোর জোর করতে হবে !
: আজ রাত টা ই তো আগামীকাল খালুকে আইসিইউ তে রাখবে তখন এখানে কাউকে থাকতেই হবে এমন কথা নেই , তখন আমি বাসায় থাকব !
: শোন নতুন বিয়ে করা মেয়েদের একা থাকতে হয় না আর রুবা যে সুন্দরী ওর আশেপাশে তো জীন ভূতের নজর বেশি থাকবে বুঝলি !
: ও আচ্ছা এতক্ষণে বুঝলাম তুমি এত ভয় কিসের দেখাচ্ছো , জীন ভূতের ?
: হুম কেন তুই পাস না মাহি ?
: আমি নিজেই তো ভূত আমি কিসের ভয় পাব? বলে মাহি হাসছে !
শোন আপু ডাকাতের বাড়িতে যেমন চোর আসে না , আমার মত জীনের বাদশার ব‌উ এর কাছে ভূত আসবে না ।
হাসছে মাহি !
রিয়া উঠে চলে গেল !
মাহি নিঝুম কে খোঁজার জন্য আশেপাশে তাকালো। রাত আটটার পর ভিজিটর আওয়ার শেষ । নয়টা নাগাদ মাহি খালামনি, রিয়া আপু, সাজ্জাদ ভাই কে বাসায় পাঠিয়ে দিল।

নিঝুম নিয়াজ কে নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিল। এখনো আসেনি।
মাহি সেই ফাঁকে রুবাকে কল করলো !
: কি করছো রুবা ?
: টিভি দেখি মা ফোন দিয়েছিল মায়ের সঙ্গে কথা বললাম।
: তুমি খালুর কথা বলোনি তো ?
: না বলিনি , কিন্তু তোমার কথা জিজ্ঞাসা করছিল ?
: আমি বলেছি ফ্রেন্ড দের সঙ্গে দেখা করতে গেছো‌!
তখন মা বলল, তোমাকে রেখে আসলাম মাহির জন্য আর ও বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে ! তুমি বাসায় একা !
: রুবা দিলে তো আমাকে ধরা খাইয়ে ! এখন তোমার শ্বাশুড়ি তার প্রাণপ্রিয় পুত্রবধূ কে একা বাসায় রেখে আসার জন্য আমার কারাদন্ড ঘোষণা দিবে!
: কি বলতাম , আমার মাথায় হুট করে মিথ্যা কথা আসছিল না ! আমি মায়ের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলতে পারি ও না।
: আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখছি কি বলা যায়।
: রাখছি।

নিয়াজ আর নিঝুম নিচে কফি শপে বসে কফি খাচ্ছে।
নিয়াজ বলল, একটা খুব ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করব নিঝুম?
: খুব ব্যাক্তিগত নিয়াজ ?
: একটু !
: আচ্ছা ঠিক আছে করো !
: তুমি আর মাহি এত পার্ফেক্ট ম্যাচ ছিলে মাহি তোমার প্রতি খুব এটাচড ছিল তারপরও কেন পারলে না মাহি কে আটকে রাখতে নিঝুম?
: নিয়াজ প্রথম কথা হলো আমরা পার্ফেক্ট ম্যাচ ছিলাম না , তুমি রুবা আর মাহির ক্যামিস্ট্রি তো দেখোই নি । দেখলে বলতে না ! রুবা মাহিতে মুগ্ধ , মাহির সব কিছু সে নিজের ভেতরে এমন ভাবে ধারন করে কি বলব তোমাকে।
মাহি রাত বললে রুবার জন্য রাত। আর রুবা যদি একটু ওফ করে উঠে মাহির পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায়। এই যে মাহি এখানে পড়ে আছে রুবা যদি একবার ডাক দেয় মাহি চুম্বকের মত চলে যাবে।
: এত টা ?
: এর চেয়েও বেশি ওরা ক্লোজড !
: একজনের জন্য আরেকজনের পাগলামী র শেষ নাই !
আমি মাহিকে ভালোই বেসেছি ও যে ভালোবাসা র পাগলামী ও দেখতে চায় আমি বুঝতে পারি নাই। তাই ধরে রাখতে পারিনি। সব ভালোবাসায় কিছুটা পাগলামী দরকার পড়ে ।
: বিয়ের কথা মাহিই তোমাকে বলেছে ?
: হুম ও ই একদিন , মনে হয় যেদিন খালাম্মা কে সম্মতি জানালো রুবাকে বিয়ে করবে ,তার পর দিন খুব সকালে আমাকে নিয়ে ওর গাড়িতে বসিয়ে বলল , সে রুবাকে বিয়ে করবে !
: ওদের বাসার পরিস্থিতি র জন্য দরকার ছিল, মাহি পারেনি খালাম্মা র অনুরোধ ফেলতে।
: তারপর তোমাকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল‌ নিঝুম !
: নিয়াজ ও আমাকে ভুলে গেছে কিনা ও বলতে পারবে ঠিক টা , তবে ও রুবার হয়ে গেছে। এটা ও আগেই বলেছে বিয়ে সে সিরিয়াসলি করবে রুবাকে সুখে রাখতে। খালাম্মা কে সে এই কথাই দিয়েছে।
: বুঝলাম না নিঝুম?
: সিম্পল রুবাকে যেহেতু সে বিয়ে করেছে স্বামী র দ্বায়িত্ব সে পুরো টাই পালন করবে , করছে । সমস্যা হয়েছে রুবা ওর সঙ্গে সহজ হতে পারছে না । রুবা ওকে ভালোবাসে কিন্তু মেয়েটা র লাইফের বিভিন্ন ট্র্যাজেডি ওকে এক ধরনের মানসিক চাপে ফেলে দিয়েছে সেই জন্য সে মাহির হয়েও মাহির কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায় !
: কি বলছো এসব মাহি তো যথেষ্ট ধৈর্য্য শীল মানুষ। যার জন্য নিজের ভালোবাসা সেক্রিফাইস করেছে তার কাছে থেকে ও দূরে থাকতে হয় ।
: হয়তো । তবে তাও মাহি হ্যাপি !
: এটা তোমাকে ও বলেছে ?
: না নিয়াজ মাহি কে আমার চেয়ে ভালো কে চিনে , আমি মাহির চোখ মুখ দেখেই বুঝি রুবাকে নিয়ে ও সুখী মানুষ। আসলে ভালোবাসা থাকলে শারীরিক ব্যাপার টা এতটা ম্যাটার করে না যদি সত্যি ই ভালোবাসা থাকে তো !
মাহি আর রুবা সত্যি একে অপর কে খুব ভালোবাসে !
: আর তুমি মাহি কে ?
: সত্যি টা শুনতে চাও নিয়াজ ?
: অফকোর্স !
: ভালোবাসা এত সহজে হারিয়ে যাওয়ার জিনিস না নিয়াজ ! এটা তোমার চেয়ে ভালো আর কে জানে ‌! তুমি আমার আর মাহির রিলেশন এর কথা জেনেও কি পেরেছো আমার প্রতি ভালোবাসা কমাতে ?
নিয়াজ একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল! তারপর বলল,
আমার কথা বাদ দাও, আমার তো একতরফা ভালোবাসা ছিল । তোমার আর মাহির তো সেরকম কিছু না । দুজন দুজনকে ভালোবাসতে।
: কি হতে পারতো নিয়াজ, ঘরে ব‌উ আর বাহিরে আমি থাকতে পারতাম । আমি মেনেও নিতাম । আমি মাহির বিনিময়ে সব পারি নিয়াজ ! রুবা তো তখন একদম শিহাব ভাইয়ার শোকে শেষ ছিল।
কিন্তু মাহি আমাকে একটুও পশ্রয় দেয় নাই আমি অনেক ভাবে ওকে টানতে চেয়েছি । ও ওর ডিসিশন এ অটল ছিল। আর রুবার প্রতি ছিল দ্বায়িত্বশীল প্রথম দিন থেকেই।
তুমি জানো রুবা শিহাব ভাইয়ার জন্য কান্নাকাটি করলেও মাহির বুকে করে । কয়টা হাজব্যান্ড এটা সহ্য করবে নিয়াজ ? মাহি করে ।
ওদের রিলেশন কে জুড়ে দিয়েছে জানো, আমার খালা ! সী ইজ এ ইন্টেলিজেন্ট উইমেন । রুবাকে তিনি নিজের মেয়ের মত ভালোবেসেছেন সেই শুরু থেকে ।
তিনি রুবাকে একটু একটু করে মাহির প্রতি এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। এই যে তিনি রুবা কে রেখে সিঙ্গাপুর গেছেন কারণ শুধু রুবা যেন সারাক্ষণ মাহিকে নিয়ে ভাবতে পারে মাহির কাছে আসতে পারে । এবং আমার বিশ্বাস মাহি একবার রুবাকে টেনে নিলেই রুবা নিজেকে আটকে রাখতে পারবে না ।
কিন্তু মাহির মধ্যে একটা ব্যাপার কাজ করছে আমার ধারণা , সে চায় রুবা নিজ থেকে আসুক।
: নিঝুম তুমি বললে মাহির জন্য সব পারো , এখনো কি পারো ?
: মাহির জন্য না নিয়াজ, মাহির বিনিময়ে পারি ! আর আমার কাছে মাহিকে কেউ বিনিময় করতে আসছে না । অন্তত রুবা তো অবশ্যই না ! ও মাহিকে খুব ভালোবাসে‌ এবং মাহি ও রুবাকে ।
রুবার রূপ তো দেখেছো ! এরকম রূপবতী কে অস্বীকার করার শক্তি কি আছে কোন পুরুষের । এরকম রূপবতী র জন্য অপেক্ষা করা যায়, ধৈর্য্য ধরা যায়, অস্বীকার করা যায় না । মাহি ও কোন মহাপুরুষ না ।
: নিয়াজ চুপ করে আছে !
: চলো নিয়াজ উপরে যাই ! মনে মনে নিঝুম মাহি কে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে । উপরে গেলে অন্তত চোখের দেখাটা দেখা যাবে ।
ভালোবাসা এক অদ্ভুত জিনিস দূরে ঠেলে ও পুরোপুরি দূরে সরাতে পারে না । নিঝুম যেমন পারছে না !

রুবা ডিনার শেষ করেছে । ফরিদা বুয়া ওর চুল চিরুনি করে দিচ্ছে। ও একা থাকলে বুয়ারা ওর আশেপাশে থাকে এটা শিহাব মারা যাওয়ার পর সাফিয়া বেগম এর আদেশ ছিল। একজন না একজন রুবার সঙ্গে থাকবে।
মাহি বাসার বাহিরে শুনেই, তিনি সিঙ্গাপুর থেকে ফরিদা কে ফোন করে বলেছেন ফরিদা রাতে মাহি না আসা পর্যন্ত যেন রুবার সঙ্গে থাকে।
ফরিদা বুয়া কে আগেই রুবা বলে রেখেছে খালু অসুস্থ কথাটা যেন না বলে । তাই তার শ্বাশুড়ি জানে না মাহি পুরো রাত আসবে না ।
রুবা মনে মনে হাসছে মাহির আজ খবর আছে , মা ওকে ছাড়বে না । বেচারা মাহি কিছু বলতেও পারবে না ।
বুয়া তুমি খাবার খেতে যাও পরে এসো !
: না ভাবি আম্মা বিদেশ থে ফোন দিয়া বলছে আপনার সাথে থাকতে।
: তাই বলে তুমি খেতে যাবে না ?
: একরাইত না খাইলে কিছু হবে না !
: ওফফ কিযে যন্ত্রণা বুয়া প্লিজ যাও , আমি তোমার ভাইয়ার সাথে ফোনে কথা বলব সেই ফাঁকে তুমি খেয়ে আসো যাও।
: তাহলে ঠিক আছে !
ফরিদা রুম থেকে বের হয়ে গেল !
রুবা মাহি কে ইনবক্স করলো,
” তুমি ভাবছো মেঘ করেছে
বৃষ্টি পরবে অনেক্ষণ?
আসলে তো মেঘ করেনি
মন খারাপের বিজ্ঞাপন ”
মিসিং ইউ ডাক্তার সাহেব …

মাহি রিপ্লাই পাঠালো , ” চলে আসব মুরগির বাচ্চা ”
রুবা লিখে পাঠালো, ” না না না ”

কিছুক্ষণ পর মাহি রুবাকে মেসেজ পাঠিয়েছে,
” মনে হয় শুধু আমি , আর শুধু তুমি
আর ঐ আকাশের পোউষ – নিরবতা,
রাত্রির নির্জন যাত্রী, তারকার কানে কানে কতকাল
কহিয়াছে আধো আধো কথা ”

রুবার খুব ভালো লাগছে মাহি দূরে থেকেও তাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে।
চার্জে দেয়া মাহির পুরোনো ফোন টা দেখে তার মনে হলো এটা অন করে রাখতে বলেছিল মাহি !
রুবা উঠে মোবাইল টা অন করলো ।
মনে মনে বলল, মোবাইল তো ঠিক ই আছে অন‌‌
হচ্ছে। মোবাইল এর ওয়ালপেপার টা আসার সঙ্গে সঙ্গে রুবা হাজার ভোল্টের একটা ঝাঁকুনি খেলো !
নিঝুম আর মাহির খুব সুন্দর একটা ছবি ! যেভাবে ওর সঙ্গে আজকাল মাহি ছবি তুলে সেভাবে তোলা সেলফি !
রুবা কাঁপা কাঁপা হাতে আনলক মোবাইল টার গ্যালারি তে ঢুকলো। গ্যালারি ভর্তি নিঝুম এর ছবি আবার মাহি নিঝুমের অনেক সেলফি ও আছে ।
রুবার বুকের কাছে কি যেন আটকে গেল । ওর হাত পা খুব কাঁপছে। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে ঘরটাও ওর সঙ্গে কাঁপছে । রুবা ফ্লোরে বসে পড়লো ওর শরীরে শক্তি পাচ্ছে না । মনে হচ্ছে ওর সুখের পৃথিবীটা আরো একবার ধসে গেল।

(চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here