#যখন_দুজনে_একা
৫২ পর্ব
মাহি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে বের হয়ে দেখে নিঝুম আর নিয়াজ লিফট থেকে বের হচ্ছে।
মাহিকে দেখে নিঝুম বলল,
: রুবাকে আবার একা রেখে আসলি !
: বুয়া আছে ওর পাশে , তুই আজ বাসায় চলে যা নিঝুম , কালকে ও সারারাত জেগে ছিলি!
: বাসায় গিয়ে ও ঘুম আসবে না মাহি তারচেয়ে এখানে থাকলে টেনশন টা কম থাকবে। তুই কালকে ওটিতে থাকবি আজ রাতে তোর রেস্ট নেয়ার দরকার ছিল না ?
: আমি ঠিক আছি , বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম নাউ পার্ফেক্টলি অলরাইট। নিয়াজ আয় বসি ঐ দিকে বলে মাহি ওয়েটিং রুমের দিকে এগিয়ে গেল ।
: ভাবি একা ভয় পাবে না মাহি , নিয়াজ প্রশ্ন করলো ?
: একা থাকলে পাবে, ওর সঙ্গে বুয়া আছে ওরা আবার খুব এফিসিয়েন্ট রুবা কে ভালো হ্যান্ডেল করতে পারে । ঐ ভাইয়া চলে যাওয়ার পরে ক্রাইসিস এর সময় টা তে মা আর এই দুই বুয়া ই রুবাকে টেক কেয়ার করেছে। প্রচুর বকবক করে এরা, রুবা নিজে কথা কম বললেও ওদের কথায় মজা পায়। হাসলো মাহি !
: মাহি তুই ডিনার করেছিস , নিঝুম বলল।
: বাসায় গেলাম যখন রুবা চা নাস্তা খেতে দিয়েছে আমি আর ডিনার করব না , তুই অস্থির হয়ে পরিস না তো !
নিয়াজ নিঝুম কথা বলছে মাহি মোবাইল এ রুবার কোন মেসেজ এলো কিনা চেক করলো !
না কোন মেসেজ নাই !
নিঝুম মাহিকে প্রশ্ন করলো,
: খালুর ডাক্তার দেখানো হয়েছে মাহি ?
: আজ দেখিয়েছে ! ভালো করে মায়ের সাথে কথা বলতে পারি নাই ।
: কেন?
: মা রেগে আছে , রুবাকে কল করেছিল আমাকেও চাইছে কথা বলতে কিন্তু আমি তো এখানে , রুবা বলে দিসে বাহিরে গেছে ফ্রেন্ড দের সঙ্গে। তারপর আর কি আমাকে কল দিয়ে ঝাড়ি কেন রুবাকে একা রেখে বাসার বাহিরে আছি !
: বুঝলে নিয়াজ খালাম্মা আবার রুবার বিষয়ে নো কম্প্রোমাইজ , হাসছে নিঝুম।
: সেটাই এই মেজাজ এর ভেতরে আর মা কে বেশি কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারি নাই !
: মাহি তুই চলে যা তো রুবার জন্য আমারই খারাপ লাগছে !
: নিঝুম আমাদের এই বিষয়ে কথা আগেই শেষ হয়েছে আর কেন বারবার এক কথা বলছিস ?
নিঝুম চুপ করে গেল ।
রাত বারটা বেজে গেছে মাহি রুবার কোন মেসেজ না পেয়ে কল দিল । কিন্তু রুবা ফোন রিসিভ করলো না । ঘুমিয়ে গেল নাকি ?
মাহি একটু টেনশন ফিল করছে। আসার সময় মুখে কোন হাসি ছিল না । ওর কি মন খারাপ ছিল ?
মুখ ফুটে কিছু তো বলেও না।
মাহি ফরিদা বুয়া কে ফোন দিল । নো আনসার ।ঘুমাচ্ছে সব !
মাহির মন টা খচখচ করছে!
নিঝুম মাহির কাছে এসে বলল,
: তুই কি টেনশন করছিস কিছু নিয়ে মাহি ? আব্বু ঠিক আছে তো ?
: নিঝুম আমি টেনশন করছি না ,সব ঠিক আছে ! তুই নিয়াজের সঙ্গে কথা বল আমি আসছি নিচের থেকে!
: কোথায় যাবি , বাসায় যাচ্ছিস ?
:না সিগারেট খেতে যাচ্ছি!
: ও আচ্ছা।
মাহি নিচে এসে দেখে বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।এরকম লাগাতার বৃষ্টি হলে ঢাকাবাসীর জীবন শেষ। মাহি সিগারেট না ধরিয়ে রুবার কথা চিন্তা করছে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে।
কথা না বলেই ঘুমিয়ে গেল রুবা ! এরকম তো কখনো করে না ! কালকে রাতেও ঠিক মত ঘুমায়নি । ওকে ছাড়া থাকতে পারে না। কি করলো একদিন নিঝুম দের বাসা থেকে ভোর রাতে চলে আসছে।
আচ্ছা ও যদি এখন চলে যায় রুবার কাছে। খুব সারপ্রাইজ হবে । বাকি রাতটুকু রুবাকে জড়িয়ে ধরে কাটিয়ে দেয়া যাবে !
নিজের ভাবনায় নিজেই হাসছে মাহি !
মোবাইল বের করে দেখল, না কোন মেসেজ নেই অনেক আগে অনলাইন ছিল দেখাচ্ছে ! যখন মাহিকে মেসেজ দিয়েছে।
মাহি আরও অনেকক্ষণ নিচে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখলো।
রুবাকে নিয়ে ভাবতে খুব ভালো লাগছে তার।
উপরে এসে দেখে নিয়াজ আর নিঝুম চুপচাপ বসে আছে।
মাহিকে দেখে নিঝুম বলল, আমি ভাবলাম বাসায় গিয়েছিস !
: না নিচেই ছিলাম। প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।
: সী তে ডিপ্রেশন চলছে সিগন্যাল দিয়েছে শুনলাম, সে জন্যই ওয়েদার এত খারাপ , নিয়াজ বলল!
: তাই নাকি জানতাম না , নিঝুম বলল।
নিয়াজ আরো কিছুক্ষণ থেকে চলে গেল বাসায়।
নিঝুম মাহির কাছে এসে বলল, সত্যি করে বল তো মাহি কি হয়েছে তোর?
: কোথায় কিছু হয়নি !
:বলবি না এই তো ?
: মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল, রুবা কে নিয়ে চিন্তা করছি ঘুমানোর আগে ফোন দেয়নি । তাই একটু অস্বস্তি লাগছে।
: তুই তো দেখি টিনএজার দের মত প্রেম করছিস , হাসলো নিঝুম।
: নিঝুম রুবার কিছু সমস্যা আছে বলেছি তোকে ,সে জন্যই ওর ছোট ছোট ব্যাপার গুলো খুব মনোযোগ দিয়ে নোটিশ করতে হয় আমাকে।
: সরি মাহি, তুই গাড়ি টান দিয়ে চলে যা দেখে চলে আয় !
: না থাক ঘুমাচ্ছে এখন আর ঘুম ভাঙাতে চাইছি না ।
: সেটাই হবে হুট করে ঘুমিয়ে গেছে তাই আর তোকে ফোন দিতে পারেনি । টেনশন করিস না। রুবা তোকে খুব ভালোবাসে রে ।
: মাহি অন্য দিকে তাকিয়ে আছে ।
সারারাত মাহি অস্থির হয়ে কাটালো। সকালে অপারেশন এর ফর্মালিটিজ করতে গিয়ে ও ভুলে গেল রুবার কথা ।
নিঝুম এসে হঠাৎ বলল, রুবার সঙ্গে কথা হয়েছে ?
: মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল ,ভুলে গেছি।
: ফোন দিয়ে কথা বল, একটা কাজ করতে পারিস বাসায় চলে যা এখনও কিছুটা সময় আছে স্যার রা কেউ আসেনি । আমি ফোন দিব তোকে তুই টেনশন ফ্রি হয়ে আয়!
: ফোন দেই আগে ! বলে মাহি কল করলো রুবাকে। কিন্তু নো আনসার। মোবাইল এ চার্জও প্রায় শেষ।
: পাওয়ার ব্যাঙ্ক কোথায় তোর ?
: ঐ টা তেও চার্জ ছিল না ।
মাহি ফরিদা বুয়াকে কল করলো !
:বুয়া তোমার ভাবি কোথায় ?
: ভাইজান ভাবি তো নিজের ঘরে ঘুমায় আপনে ভাবির সাথে নাই ?
: আমি তোমার ভাবির সাথে থাকলে তোমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করি ওর কথা ? তুমি ওর রুমে ঘুমাও নি ?
: না ভাইজান রাইতে ভাত খেয়ে গিয়ে দেখি ভাবির দরজা বন্ধ আমি ভাবছি আপনে আইছেন তাই আমার ঘরে আইসা পড়ছি !
: কি বলো এসব , রুবা একা ঘুমাচ্ছে তোমাকে কি বলে আসলাম আমি।
: ডাক দেই এখন !
:না থাক আমি আসছি ।
নিঝুম বলল , কি সমস্যা মাহি ?
: তেমন কিছু না, নিঝুম আমি বাসা থেকে আসছি জাস্ট থার্টি মিনিটস । তুই আমাকে কল করবি স্যার আসার সঙ্গে সঙ্গে । মাহি দৌড় দিল । লিফটের অপেক্ষা করলো না সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলো।
মাহি বাসায় এসে দৌড়ে দোতলায় উঠে এলো। ফরিদা বুয়া আর লাইলি বুয়া ওকে দেখে কাছে এসে দাঁড়ালো।
: উঠেছে রুবা ?
: না ভাইজান।
: ওর আর আমার ব্রেকফাস্ট রেডি করে রাখো ডাকাডাকি করবে না আমি আসব নিতে বলে মাহি নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেল।
দরজায় দুই তিন বার নক করলো। হ্যান্ডেল ঘুরাতে ই দরজা খুলে গেল। তারমানে দরজা খোলা ছিল।
মাহি ঘরে ঢুকে দেখে রুবা বিছানার পাশে চুপ করে বসে আছে । ভারী পর্দা ঝুলানো আর বাহিরে বৃষ্টি বলেই ঘর অনেক অন্ধকার।
গুড মর্নিং রুবা !
মাহি রুবার কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো । কি হয়েছে আমার মুরগির বাচ্চার মোবাইল সাইলেন্ট করা ছিল ?
আমি কতবার কল করেছি , বলেই রুবার মুখটা তুলে ঠোঁটে, কপালে, গালে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দেয়া শুরু করল । মাহি আরও বেপরোয়া হওয়ার আগেই খেয়াল করলো রুবার চোখ পুরো লাল , মুখ ও যথেষ্ট ফোলা ।
মাহি ধাক্কা খেল একটা !
: কি হয়েছে রুবা , চোখে পানি কেন ?
রুবা কোন কথা বলল না !
: পুরো নির্লিপ্ত হয়ে বসে আছে মনে হচ্ছে ও কিছু শুনছেও না কানে।
: মাহি অস্থির হয়ে গেল। কি হয়েছে না বললে , আমি কিভাবে আমার রুবার মন ভালো করব ,বলে ওকে আবার জড়িয়ে ধরল মাহি ! মাহির টেনশন হচ্ছে।
রুবার পাশে মাহির সেই ফোন টা রাখা । রুবা ঐ টা হাতে তুলে নিল।
মাহি বিষয়টা খেয়াল করতেই ও রুবার হাত থেকে মোবাইল টা নিল এবং বুদ্ধিমান মাহির আর বুঝতে বাকি নেই ঘটনা কি ?মাহির মেরুদন্ড বেয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল ।
মনে মনে বলল, এসেই গেল সেই সময় টা !
রুবা মাহির মুখের দিকে তাকালো ! কিন্তু কোন প্রশ্ন করলো না !
মাহি রুবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো ! তারপর রুবার হাত দুটো ধরে, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
আমাকে কি পাঁচটা মিনিট সময় দিবে রুবা ? আমি সাফাই দিব না আমি শুধু আমার কয়টা কথা তোমাকে বলব !
প্লিজ আমাকে পাঁচটা মিনিট সময় দাও ?
রুবা অপলক দৃষ্টিতে মাহির দিকে তাকিয়ে আছে !
রুবা আমার আর নিঝুমের তিন বছরের একটা রিলেশন ছিল ! ফ্যামিলি র কেউ জানতো না । আমরা খুব কেয়ারফুল ছিলাম কারণ মা আত্মীয় স্বজনের মধ্যে বিয়ে পছন্দ করে না ।
তোমার আমার বিয়ে টা যে পরিস্থিতির মধ্যে হয়েছে আমার তোমাকে বলার কোন সুযোগ ই ছিল না । তোমার সঙ্গে বিয়ে করা ছাড়া আমার ও অপশন ছিল না । মায়ের অনুরোধ তুমি যেমন ফেলতে পারো নাই , আমি ও না।
আমরা দুজনেই জানি বিয়েটা তোমার আমার দুজনের ই কম্প্রোমাইজ ছিল শুরুতে ।
আমি নিঝুম কে বুঝিয়ে বলেছি ও বুঝতে পেরেছে পরিস্থিতি । আর বিশ্বাস করো তোমাকে যখন আমার জীবনের অংশ বানিয়েছি, কবুল উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে আমি কখনো নিঝুমের দিকে এক বিন্দু ও আগে র দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখিনি। আমি তোমার প্রতি আমার সকল কিছু সামিল করেছি।
আমি তোমাকে ভালোবাসি রুবা এখন এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য।
তুমি আমাকে ক্ষমা করো আমি তোমাকে বলিনি কিন্তু আমার কোন উপায় ছিল না । এই ব্যাপারটা ফ্যামিলি র সবার সামনে আর আনার কোন সুযোগ নেই ।
এখন তুমি বলো কি করব আমি, আমার কথা শেষ।
রুবা চুপ করে আছে ! মাহি ওর দিকে তাকিয়ে আছে!
রুবা প্লিজ স্পীক আপ আজ তুমি কিছু না বললে আমি মরে যাব !
আমি কিভাবে সহ্য করব মাহি, আমি নিঝুম আপুর ভাগ্য কেড়ে নিয়েছি, তোমাদের দুজনের ভালোবাসার মাঝে এসে তোমাদের দুজনকে আলাদা করেছি তোমাদের ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছি , মাহি ?
আমি নিঝুম আপুর দীর্ঘ শ্বাস এর উপর আমার সুখের জীবন সাজিয়েছি !
কালকে সারা রাত এই চিন্তা করেই আমি বারবার মরে যাচ্ছি । রুবা কাঁদছে ব্যাকুল হয়ে।
মাহি মাথা নিচু করে বসে আছে ।
রুবা আমাদের তিন জনের ভাগ্য এভাবেই লিখেছেন আল্লাহ।
আমি কিভাবে যাব নিঝুম আপুর সামনে ,আপুর সঙ্গে কত কথা বলেছি তোমাকে নিয়ে, আপু কত কষ্ট না জানি পেয়েছে আমি এসব ভেবেই পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার মনে হচ্ছে আমি চোরাবালিতে হারিয়ে যাচ্ছি । আমার নিজের উপর নিজেরই ঘৃণা হচ্ছে।
মাহি রুবাকে ধরে বলল, তুমি নিঝুমের অপরাধী না রুবা, নিঝুমের অপরাধী আমি। তোমার নিঝুমের কাছে কোন দায় নেই। আমরা একেঅপরের ভাগ্যে ছিলাম রুবা ।
ভাগ্য তো আর মানুষ লিখতে পারে না ।
আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না মাহি।
: তুমি তো কোন অপরাধ করোনি রুবা , জীবন তোমার সঙ্গে যেভাবে খেলছে তুমি সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছো ।
: রুবা একটা কথা বলো তো তোমার কি মনে হয়, আমি তোমাকে ভালোবাসি না ?
: রুবা তাকিয়ে আছে মাহির দিকে!
: আজ জবাব দাও রুবা প্লিজ !
: রুবা মাথা নেড়ে সম্মতি দিল ।
: এটাই আমার জীবনের সত্য রুবা । আমি তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি। তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি তোমাকে নিঝুমের কথা বলিনি বলে।
মাহির ফোনে ফোন আসছে বারবার নিঝুমের।
রুবা একটু পর খালুর অপারেশন আমাকে যেতে হবে । আমি তোমাকে এভাবে ফেলে যেতে পারব না ।
তুমি কিছু একটা বলো ?
রুবা চুপ করেই আছে , কিছু বলছে না!
মাহি রুবার হাত ধরে বলল,
: রুবা মানুষ অপরাধ করলে আল্লাহ র কাছে খাস দিলে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেয় কিন্তু কষ্টের বিষয় কি জানো মানুষ মানুষকে ক্ষমা করতে পারে না । আমি নিঝুমের কাছেও ক্ষমা চেয়েছি আজ তোমার কাছে চাইছি। প্লিজ ফরগিভ মী ।
মাহি কাঁদছে।
মাহি রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য দাঁড়ালো । রুবা মাথা নিচু করে কাঁদছে।
মাহি পিছন ঘুরার সঙ্গে সঙ্গে রুবা ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো মাহি কে । ফোপাতে ফোপাতে বলল,
: তুমি আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমার অপরাধ আর বাড়িয়ে দিও না, তোমার আর মায়ের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা র শেষ নেই। আমার এই জীবনে তোমাদের দুজন মানুষের কাছে আমি চিরঋণী । তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাইলে আমি বাঁচতে পারব না ।
: মাহি রুবাকে ধরে বলল, আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞতা বোধ চাইনা ! আমি তোমার কাছে আমার প্রতি ভালোবাসা চাই ! মা ও তোমার কাছে কৃতজ্ঞতার প্রকাশ চায় না । আমরা দুজনেই তোমার সুখ টা চাই । তুমি এডজাস্ট করে আমার সঙ্গে থাকবে রুবা আমি এটা মানতে পারবো না । তার চেয়ে আমি তোমার অপরাধী হয়ে থাকি তাই ভালো।
: তুমি আমাকে নিঝুমের ব্যাপার টা জানার পর ভালোবাসতে পারবে কিনা সেটা বলো, প্লিজ। এবং মুখে বলো ? রুবার মুখটা দুই হাতে ধরে মাহি বলল!
রুবা চুপ করে আছে !
রুবা প্লিজ এই মুহূর্তে চুপ করে থেকো না !
: রুবা মাহির দিকে তাকিয়ে ই বলল, বললাম তো !
: কোথায় কি বললে শুনলাম না তো কিছুই ?
: ভালোবাসি !
: না সুন্দর করে বলো !
: আমি তোমাকে সব ভাবেই ভালোবাসি মাহি , তোমার ভালোটা নিয়ে, তোমার রাগ গুলো নিয়ে, আমার প্রতি অধিকার বোধের শাসন গুলো নিয়ে , আমার জন্য তুমি যেভাবে অস্থির হয়ে উঠো সেটা দেখে , আমার জন্য তোমার সকল সেক্রিফাইস গুলো দেখে আমি তীব্র ভাবে তোমাকে ই শুধু ভালোবাসি এখন হলো ।
মাহি হেসে দিল। এই হাসি মুখ টা না দেখে আমি যেতাম না আজ।
আমার হার্ট বন্ধ করে খালুর হার্টের অপারেশন এ কিভাবে থাকতাম বলো ?
মাহি রুবার মুখটা তুলে বলল , আমি জলদি ফিরে আসব রুবা। খালুকে ওটি থেকে বের করে আনলেই চলে আসব সোজা তোমার কাছে ! আমার মুরগির বাচ্চার কাছে । মাহি তার পাঁজরের সঙ্গে চেপে ধরে আছে রুবাকে।
: তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে মাহি ?
: কি ?
: আমি নিঝুম আপুর কাছে ক্ষমা চাইব তা না হলে আমি শান্তি পাব না ! তুমি বাঁধা দিবে না !
: পরে দেখা যাবে রুবা। আমি তো বললাম তোমার কোন দায় নেই নিঝুমের কাছে !
: তবুও প্লিজ।
: আচ্ছা ঠিক আছে , সময় হোক আমিই নিঝুমের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলিয়ে দিব কিন্তু তার আগে না রুবা ।
আমি এখন আসছি তুমি প্লিজ তোমার চেহারা টা ঠিক করো । আমি এরকম রুবা কে ফিরে এসে যেন না দেখি।
আমি আমার রুবাকে চাই ! যে রুবার দিকে তাকালে আমার সকল ক্লান্তি মুছে যায়, যে রুবাকে দেখলে আমার বুকে খুব শান্তি লাগে ।
কিন্তু এই রুবাকে দেখলে আমার ভয় লাগে। এতটা ভয় কেউ তার বউ কে পায় না যতটা আমি পাই!
: ঠিক আছে যাও আমি তোমার সেই রুবা হয়ে থাকব !
: সে জন্যই তো তোমাকে আমার চোখের শান্তি বলি !
: লাভ ইউ রুবা , আমাকে ভুল বুঝো না প্লিজ!
: ঠিক আছে , আমার এত কষ্ট লেগেছে ছবি গুলো দেখে মনে হচ্ছিল আমার সব কিছু মিথ্যে হয়ে গেছে।
: মাহি রুবার চোখের পানি মুছিয়ে দিল।
: হাসো একটু রুবা , হাসি মুখ না দেখে যেতে পারব না ।
: রুবা চেষ্টা করেও পারলো না হাসতে।
ঐ ফোন টা দাও আমার মোবাইল এ চার্জ শেষ ।
মাহি রুবাকে আদর দিয়ে ছুটে বের হয়ে গেল ।
রুবা চোখের পানি মুছে মুছে বারবার চিন্তা করছে ,
কিভাবে সে নিঝুম আপুর সামনে যাবে ?
নিঝুম আপুর কত কষ্ট হয় না জানি, যখন আমাদের দুজনকে দেখে !
আল্লাহ তুমি আর কত পরীক্ষা আমার সাথেই করবে।
আমি তো ছিলাম ই মাহির জীবনে কম্প্রোমাইজ তাই বলে এত কিছুর বিনিময়ে!
মাহি আর মায়ের জন্য ওর এই জীবন টা এখনো সুন্দর, সন্মান আর বেঁচে থাকার মত । মায়ের জন্য সে সব পারে । মায়ের জন্য সে তার একটা কেন আরো দুই তিন জীবন ও মায়ের পায়ের কাছে বসে কাটিয়ে দিতে পারে।
যে মা ছেলের বউ কে নিজের সন্তানের চেয়ে বেশি ভালোবাসে তার জন্য কৃতজ্ঞতা তো অনেক কম শব্দ পুরো জীবন দিলেও কি শেষ হবে!
আর মাহি , ওর রং হীন জীবনটাকে কত রঙ্গে সাজিয়ে দিয়েছে।
এত পাগল করা ভালোবাসা ওর জীবনে আসবে কখনও আর, সে তো ভাবেনি। শিহাব চলে গিয়েছিল ওর জীবনে র সব আনন্দ নিয়ে কিন্তু মা আর মাহি ওর জীবনে দ্বিগুণ, তিনগুণ , হাজার গুণ করে আনন্দে ভরে ভরে দিচ্ছে এই কৃতজ্ঞতা নিয়েও সে মাহির সঙ্গে জীবন পার করে দিতে পারবে। সেখানে ও তো মাহিকে তার জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসে।
মাহি তুমি কষ্ট দিলেও আমি পারবো না তোমাকে কষ্ট দিতে ।
তুমি আমার কাছে ক্ষমা চেয়ো না । ক্ষমা তো আমি চাইব নিঝুম আপুর কাছে হাজার বার।
তোমাকে যতবার ভালোবাসব ততবার , যতবার তোমার কাছে আসব ততবার , তোমার ভালোবাসা যত পাব ততবার আমার ক্ষমা চাওয়া উচিত নিঝুম আপুর কাছে।
রুবা উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
নিজেকে তো নিজেই চিনতে পারছে না । কি অবস্থা হয়েছে চেহারার !
মাহি তো রাগ হবেই ।
রুবা আর নিজেকে এভাবে কষ্ট দিবে না । ওর কষ্ট দেখলে মাহি কষ্ট পায় । অনেক কষ্ট মাহিকে দিয়েছে।
নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে সে ,আর রক্তাক্ত হয়
মাহি।
এত ভালোবাসা ওকে কি আর কেউ বাসতে পারতো মাহি ছাড়া ? তাহলে কেন মাহি কে কষ্ট দিবে আর ? নিজের ভালোবাসা সেক্রিফাইস করে আমার কাছে তুমি এসেছো আর আমি তোমাকে কত কষ্ট দেই মানসিক ভাবে। কত দূরে সরিয়ে রাখি । আজ খুব খারাপ লাগছে মাহি । আজ আমি সত্যিই খুব লজ্জিত।
মাহির জন্য আজ তার বুকের ভেতর টা তীব্র ভাবে কাঁপছে । মাহি প্লিজ আজ বাসায় এসো । তোমার সঙ্গে অনেক কথা বলার আছে । আজ তোমার রুবা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে তার সকল কষ্ট দূরে সরিয়ে । মাহিকে কাঁপা কাঁপা হাতে লিখল ,
” অনেক দিনের অনেক আশা
তৃষ্ণা পড়া দৃষ্টি
বুকটা জুড়ে খুঁজছে যেন
সুখে ভেজার বৃষ্টি ।”
মেসেজ পাঠিয়ে তার খুব লজ্জা লাগছে । মাহি না জানি আবার কি বুঝে নিবে । রুবা লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
( চলবে )