যখন দুজনে একা পর্ব-৫৪

0
3889

#যখন_দুজনে_একা

৫৪ পর্ব

দুই রাত না ঘুমিয়ে মাহি ভেবেছিল আরাম করে ঘুমাবে কিন্তু এই রাতটা যে এত চমকপ্রদ হবে সে কখনো কল্পনাও করেনি।
সবচেয়ে যে বিষয়টা ওকে শান্তি দিচ্ছে নিঝুমের বিষয়টা রুবা জানার পর, রুবাকে সে পুরোপুরি পেয়েছে ! তা না হলে অপরাধবোধ টা আরো বেশি লাগতো।
রাতে রুবার সেই জাও কাচ্চি বিরিয়ানী ই রুবাকে খুশি করার জন্য খেয়েছে সে।
ওর এখনো হাসি পাচ্ছে। আমার জন্য সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেছে রুবা।
মাহি ঘুমন্ত রুবাকে বুকের কাছে টেনে নিল!
রুবার ঘুমন্ত মুখটা দেখতে সব সময় আদর আদর লাগে। রুবাকে সে ঘুমাতে দেয় নি সারা রাত । ভোর বেলায় দুজনেই ঘুমিয়েছে।
কত কথা যে রুবা বলল‌ রাতভর ! সে পুরোই অবাক রুবার মত চুপচাপ কম কথা বলা মেয়ের পেটে এত কথা জমে আছে !
মনে মনে হাসছে মাহি !
এত সুন্দর রাত কি আগে কখনো এসেছিল তার জীবনে ? না !
থেঙ্কস রুবা ।

সত্যি ই তুমি গানের মতো ই, আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে রুবা!
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে মাত্র সাড়ে সাতটা বাজে ! সকাল সাড়ে সাতটায় ছুটির দিনেও ঘুম ভাঙ্গা টা বিরক্তিকর।
সে আবার রুবাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো!

দরজায় নক করার আওয়াজে মাহির ঘুম ভেঙ্গে গেল যখন, তখন দশটা বাজে।
আবার দরজায় শব্দ হচ্ছে‌! বুয়াদের আজ কঠিন ধমক দিতে হবে ছুটির দিনেও এত ডাকাডাকি কিসের?
সে খুব সাবধানে রুবার পাশ থেকে উঠলো । সারা বিছনায় রুবার গয়না, চুড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে !
ফ্লোরে রুবার শাড়ি , ফোপার ফুল মাহি দরজা খুলতে গেল তাড়াহুড়া করে, রুবার ঘুম ডাকাডাকি র শব্দে না আবার ভেঙ্গে যায় !
দরজা খুলে সে পুরোই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল ,
দরজায় নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে !
মাহি ঘুমন্ত রুবার দিকে তাকালো। আজ‌ই নিঝুম কে এখানে আসতে হলো!
রুবা ঘুমাচ্ছে যেভাবে ,নিঝুম কে কোন ভাবেই এই অবস্থায় রুমে ঢুকতে দেয়া যাবে না !
: সরি ঘুম ভাঙালাম তোর , ফোন ধরছিস না কেন এতবার কল করছি ? ফাইল টা কোথায়!
: কিসের ফাইল ,মাহি ফিসফিস করে বলল ?
: আপু তোর গাড়িতে রেখে গেছে যে , হসপিটালে র বিল আর রিপোর্ট আছে যেটা ?
: মাহি দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
: মোবাইল সাইলেন্ট ছিল আমার ।
তুই এখানে দাঁড়া বলে, মাহি নিজের গেঞ্জি ফ্লোরে পড়া ছিল সেখান থেকে তুলে গায়ে দিল!
তারপর রুম থেকে বের হয়ে এলো ! নিচে চল , ফাইল আমার গাড়িতে ই রয়েছে! বলে মাহি নিচে র‌ওনা হলো।
নিঝুম ওর পিছুপিছু যাচ্ছে!
: সরি মাহি তোর ঘুম ভাঙ্গালাম, তোকে কতবার কল করলাম , বাসার নিচে এসেও কল দিলাম । তোদের বুয়া রা তোকে এত ভয় পায় কেউ তোদের রুমের দিকেই যাবে না !
উপায় না পেয়ে আমিই গিয়ে হাজির হলাম!
: মাহি গাড়ির ভেতর থেকে ফাইল টা বের করে নিঝুম কে দিল !
: রুবা ঘুমাচ্ছে তাই আর তোকে বসতে বলতে পারলাম না !
: আমি হসপিটালে যাচ্ছি আমার‌ই সময় নেই, এই নে তোর মোবাইল, চার্জ দিয়েছি!
: মাহি হাত বাড়িয়ে মোবাইল টা নিল !
:গাড়িতে উঠার সময় নিঝুম বলে উঠলো,
তোর এই লাল গেন্জি টা এখনো পড়লে তোকে সর্বনাশা ই লাগে মাহি !
: মাহি তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে !
: নিঝুম মুখে একটা বাঁকা হাসি নিয়ে গাড়িতে উঠে বসতে ই, ড্রাইভার গাড়ি টান দিল।
: মাহি তাকিয়ে রইল ওর চলে যাওয়া পথ টার দিকে !
মনে মনে বলল, আজকেই ওর ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য নিঝুম কে এখানে আসতে হলো!
মাহি উপরে উঠে এলো!
ফরিদা বুয়া কর্ডলেস এগিয়ে দিয়ে বলল,
আম্মার ফোন ভাইজান !

নিঝুম মনে মনে হাসছে , মাহি তোর রুমে পড়ে থাকা রুবার শাড়ি, ফুল কিছুই আমার চোখ এড়িয়ে যায়নি মেয়ে মানুষের চোখ বলে কথা।
তোর আমাকে দেখে ইলেকট্রিক শক খাওয়া চেহারা আর মেঝেতে পড়ে থাকা শাড়ি , ফুল সব‌ই তোর কাল রাতের ঘটনা বর্ণনা করছে।
ফাইনালী রুবা তার মানসিক সমস্যা গুলো কে ওভারকাম করতে পেরেছে।
কিন্তু আমি আজও তোকে এই লাল গেন্জিতে কিংবা অপ্রত্যাশিত ভাবে খালি গায়ে দেখে শিহরিত হ‌ই কেন বলতো?
আমি কবে ওভার কাম করতে পারব ?
আদো পারব কিনা সেটাও বুঝতে পারছি না।
পরিস্থিতি দেখ, আজ ই তোর রুমের সামনে হাজির হতে হলো আমাকে!
: প্রথমে শকে তারপর লজ্জায় যে তুই কথাই বলতে পারিস নি আমি বুঝি। ভাগ্যিস রুমে ঢুকিনি রুবা না জানি কি অবস্থায় ছিল। হাসলো নিঝুম !
কেমন জানি একটা চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে নিঝুমের বুকে।
হসপিটালে র গেটে গাড়ি থেকে নামতেই নিয়াজ এসে সামনে দাঁড়ালো!
: কি অবস্থা তোমার ঘুম হয়েছে রাতে নিঝুম?
: হুম, হাঁটতে হাঁটতে ওরা লিফটে র দিকে এগিয়ে যাচ্ছে!
নিয়াজে কে দেখে ভালো লাগল ওর ! কেউ একজন তো তার অপেক্ষায় আছে!
: কতক্ষণ হলো তুমি আসলে ?
: তোমাকে যখন ফোন দিলাম তার পরপর!
: থেঙ্কস নিয়াজ।
: থেঙ্কস বলছো কেন ?
: আমার জন্য তুমি কত কষ্ট করছো ?
: এটা ঠিক তোমার জন্য করছি , তবে করে আমি আনন্দ পাচ্ছি নিঝুম !
: নিঝুম নিয়াজের দিকে তাকালো শুধু।
: তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার মন খারাপ নিঝুম, আঙ্কেল কে নিয়ে টেনশন করছো , এখন তো টেনশনে র কিছু নেই আঙ্কেল ডুইং বেটার !
: তারপরও টেনশন তো থাকেই !
: মাহি আসবে ?
: কেন নিয়াজ মাহিকে ছাড়া আমি চলতে পারব না , আব্বু র টেককেয়ার করতে পারব না ?
: তুমি রেগে যাচ্ছো কেন নিঝুম, কিছু হয়েছে ? যত কথাই বলো মাহি কিন্তু অনেক করেছে ওর ওয়াইফ কে একা বাসায় ফেলে রেখে রাতদিন এখানেই পড়ে ছিল !
: নিজেকে সামলে নিয়ে নিঝুম বলল, সরি আসলে একটু টেনশন হচ্ছিল তাই রিয়েক্ট করে ফেলেছি। মাহি অনেক করেছে ঋনী করে ফেলেছে সত্যি। ইনফেক্ট ওর বাসায় গিয়েছিলাম ফাইলটা ওর গাড়িতে রয়ে গিয়েছিল আনতে । দুই রাত ঘুমায়নি, ঘুমাচ্ছিল। আমি গিয়ে আবার ঘুম ভাঙ্গিয়ে ডিস্টার্ব করে এলাম !
: তোমাকে দেখে ডিস্টার্ব মনে হচ্ছে এবং সেটা আঙ্কেল এর জন্য না, বলা যায় কি ?তুমি বলবে নিঝুম !
: নিঝুম হাসলো, সময় হোক বলা যায় কিনা দেখি নিয়াজ!

মাহি মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলে নিজের রুমে এসে ঢুকলো।
রুবা তখন‌ও ঘুমাচ্ছে। সারারাত ঘুমায়নি। গত দুটো রাত রুবাও জেগে ছিল এক রাত চোখের পানিতে ভিজে, আর এক রাত মাহির ভালোবাসায় ।
মাহি ছড়ানো ছিটানো সব গয়না গুছিয়ে বেডের পাশে রাখলো। রুবার শাড়ি মেঝে থেকে তুলে নিল।
তারপর রুবার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল ।
নিঝুম এভাবে হঠাৎ চলে আসবে সে কল্পনাও করতে পারেনি!
তাকে বারবার কল করেছে , ফোন সাইলেন্ট ছিল সেজন্যই এসেছে ঘর পর্যন্ত ! তারপরও কেমন অস্বস্তি লাগছে।
মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল ।
রুবা কে আর ঘুমাতে দিতে ইচ্ছে করছে না। ডেকে তুলে ফেলতে ইচ্ছে করছে। এখন দুষ্টুমি করলে রুবা নির্ঘাত ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে বেড থেকে , কাল রাতে সে রুবাকে অনেক জ্বালিয়েছে!
রুবার কানের কাছে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো সে।
ওঠো রুবা ,অনেক বেলা হয়েছে!
রুবা নড়াচড়া করে উঠলো!
ওঠো রুবা !
: চোখ খুলতে পারছিনা !
: আরো ঘুমাবে ?
: না উঠছি , বলে রুবা চোখ খুলে তাকালো।
: মাহি ওর কপালে চুমু খেল !
: সরি মাহি !
: ফর হোয়াইট ?
: আমার ফালতু রান্না তুমি কষ্ট করে খেলে !
: আর কতবার সরি বলবে , এক কাজ কর বড় করে একটা কাগজে সরি লিখে রুমে টাঙ্গিয়ে রাখো !
: রুবা হাসছে, আমার খুব ই খারাপ লেগেছে !
: খারাপ আমার ও লেগেছে এত কষ্ট করে তুমি করেছো কিন্তু তোমার মনের মত হয়নি তাই!
: তুমি খেতে পারলে না !
রুবা কে বুকের কাছে টেনে নিয়ে মাহি বলল,
: শোন রুবা আমি আমার ব‌উ কে কেমন দেখতে চাই জানো, আমার ব‌উ আমার জন্য রান্না করে টেবিল সাজিয়ে রাখবে আমার কাপড় গুছিয়ে রাখবে এমন কিছুই না । আমি চাই তুমি আমার চোখের সামনে থাকবে , যতক্ষণ আমি বাসায় থাকব তুমি আমাকে ঘিরে থাকবে । আমি এতেই খুশি। এই বাসায় রান্না করার , ঘর গোছানোর লোকজন আছে এসব নিয়ে তোমাকে ব্যস্ত হতে হবে না । মা ও তোমাকে সারাক্ষণ রান্না নিয়ে পড়ে থাকো সেভাবে দেখতে চায় না তুমি জানো।
: তাহলে আমি কি করবো ?
: তুমি সেজে গুজে আমার চোখের সামনে থাকবে তোমাকে কি বলি জানো আমি , আমার চোখের শান্তি! তো আমার চোখের শান্তি আমার চোখে থাকবে রান্নাঘরে পরে থাকলে কি হবে ?
তুমি সুন্দর করে সেজে গুজে আমার জন্য অপেক্ষা করবে, দিন শেষে তোমার এই সুন্দর মুখটা দেখেই আমার ক্লান্তি কাটবে, আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছে বাড়বে!
: তারপরও আমার তো দ্বায়িত্ব আছে !
: তুমি ভালো থাকো এটাই সবচেয়ে বড় দ্বায়িত্ব তোমার! সঙ্গে আমাকে ভালো রাখো। মাহি হাত বাড়িয়ে রুবার চুড়ি গুলো নিয়ে রুবার হাতে পড়িয়ে দিল!
আমি সাধারণত একটা ব‌উ চাই যে গয়না, শাড়ি , নূপুর পড়ে রুনঝুন শব্দ করে আমার আশেপাশে ঘুরে বেড়াবে।
আর আমার বউ তো মাসাআল্লাহ পূর্ণিমার চাঁদ, তাকে না সাজলেই চোখ সরানো যায় না আর সাজলে আমি খুন হয়ে যাই!
: কি বলো এসব মাহি? তাহলে তো সাজা যাবে না । হাসছে রুবা।
: হুম রুবা সিরিয়াসলি!
মাহি রুবার নাকে নাক ঘষে দিল।
: তুমি আমার কাছে একটা গিফট পাও রুবা?
: কিসের জন্য , হঠাৎ?
: রিটার্ন গিফট , তোমার সারপ্রাইজ এর রিটার্ন গিফট। এবং সেটা আমি আজকে ই দিব ! আজ সন্ধ্যায় আমরা কিনব যা তোমার ভালো লাগে ! যত দামী হোক !

মা আর বাবা কালকে সকালে চলে আসবে। খালামনি কে ফোন দিয়েছিল খালামনি বলেছে খালুর কথা এখন মা চলে আসতে চাইছে।
: সব টেস্ট হয়েছে বাবার কিন্তু রিপোর্ট দেখানো তো হয়নি ?
: আজ হবে কালকে তাই চলে আসবে ! ও রুবা একটা কথা, ঘন্টা খানেক আগে নিঝুম এসেছিল এখানে একটা ফাইল নিতে !
: রুমে এসেছিল, রুবা জিব কাটলো !
: মাথা নষ্ট তোমার, ঘরের এই অবস্থায় রুমে ঢুকতে দেই ? তুমি ও তো ঘুমাচ্ছিলে।
: ফাইল গাড়িতে ছিল আমি নীচে গিয়ে দিয়ে এসেছি।
: একটা কথা বলব মাহি, নিঝুম আপুকে দেখলে কষ্ট হয় না তোমার ?
: কষ্ট হয় রুবা, কারণ আমার জন্য ও কষ্ট পেয়েছে এটা ভেবে। আর আমার ভেতরে র কথা যদি বলো , আমি সত্যি সত্যি নিজেকে ফিরিয়ে নিয়েছি তোমার প্রতি দ্বায়িত্ব পালন করতে করতে তোমাকে ভালোবেসে ছি। বিয়ে জিনিস টা নিয়ে কখনো চিন্তা করিনি এটা কেমন ?
দ্বায়িত্ব – কর্তব্য নাকি শুধু এনজয়মেন্ট, নাকি এডজাস্টমেন্ট ?
রুবা বিলিভমী তোমার আমার বিয়ের পর আমি বুঝেছি বিয়ে, এই সব গুলো নিয়েই শুরু হয়, এবং এর কোনটা‌ বাদ গেলেই সম্পর্কে চীড় ধরবে।
ভালোবাসা, এই গুলোর মধ্য দিয়েই আসবে এবং এগুলো স্টে করলে ভালোবাসা বেঁচে থাকবে।
আমি তোমার আমার সম্পর্কে র ভেতরে এই সব ধারন করেছি বলেই এক‌সময় ভালোবেসেছি।
রুবা মাহিকে জড়িয়ে ধরলো ,
: আর সেই জন্য হয়তো আমি বেঁচে গেছি মাহি ! তুমি আমাকে বাঁচিয়ে দিলে ! তোমার সব কিছু আমাকে বাঁচার মতো বাঁচিয়ে দিল। রুবার চোখে পানি এসে গেল !
: এই চোখে পানি কেন আবার ! পাগল মেয়ে , কথায় কথায় শুধু কান্নাকাটি !
: আর আমার কি ইচ্ছে করে জানো মাহি, সারাক্ষণ তোমার গান শুনি । এত সুন্দর গাও তুমি। আমার কষ্ট গুলো তোমার গান শুনলে হারিয়ে যায়।
: অলটাইম রেডি ফর ইওর সার্ভিস ম্যাম !
রুবা মা চলে আসলে আমরা এবার ঘুরতে যাব !
: কোথায় ?
: গ্রীস , নর‌ওয়ে , স্পেন ! তার আগে চলো নেক্সট উইকেন্ডে কক্সবাজার যাই একদিন থাকব !
: আগে মা আসুক তারপর । আর আমাদের দেশের বাহিরের ট্যুর আমি স্পন্সর করব , কোন কথা শুনব না মাহি !
: বড়লোক ব‌উ থাকলে যা উপকার বুঝলে , এই বিষয়ে পরে কথা হবে রুবা ! এখন গান শোনো..
” প্রাণের প্রদীপ হয়ে তুমি
জ্বলছো নিশিদিন
কোন মোহরে শোধ হবে গো
এত বড় ঋণ , এত বড় ঋণ।”
গান থামিয়ে মাহি বলল,
: রুবা তুমি এভাবে যদি আরো কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখো আমাকে , আমার নিয়ত খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু !
: রুবা মাহিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে, দৌড় দিয়ে ওয়াস রুমে ঢুকে গেল !
: মাহি হাসছে!

নিঝুমের বাবাকে সিসিইউ তে আনা হয়েছে। নিঝুমের সঙ্গে একটু কথা ও বলেছেন তিনি।
অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়ে নিঝুম ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসলো।
: এখন টেনশন ফ্রি হয়েছো , নিয়াজ বলল?
: হুম অনেক টা !
: এখন আর মন খারাপ করে থেকো না নিঝুম, তোমার সুন্দর মুখটা মন খারাপ দেখতে ভালো লাগে না।
: নিঝুম হেসে দিল, নিয়াজ কি বলছো বুঝে বলছো তো ?
: আমি সব বুঝেই বলি !
: আমার সব কিছু জেনে এই কথা বলা টা বেশি হয়ে গেল না !
: তোমার সব কিছু কি নিঝুম? মাহি , যে বিয়ে করে নিজের জীবন ব‌উ এর সঙ্গে কাটাচ্ছে ?
: নিয়াজ তুমি কি বেশি বলে ফেলছো না ?
: সরি নিঝুম
নিঝুম কটমট করে চলে গেল ওয়েটিং রুম থেকে ।
নিয়াজ তাকিয়ে আছে নিঝুমের পিছনে ।

সেদিন সন্ধ্যায় মাহি রুবাকে নিয়ে নিঝুমের আব্বু কে দেখতে বের হলো।
মাহি রেডি হয়ে নিচে রুবার অপেক্ষা করছে ।
কিছুক্ষণ পর রুবা হালকা আকাশী রঙের লাল পাড়ের একটা কোটা শাড়ি পরে নিচে এলো।
মাহি দেরি হচ্ছিল দেখে বিরক্ত হচ্ছিল কিন্তু রুবা সামনে আসতেই ও মুগ্ধ হয়ে গেল রুবাকে দেখে।
: কি দেখো ?
: মানুষ এত সুন্দর হয় কিভাবে তাই দেখি ? আর মানুষ রেডি হতে এত সময় নিলো কেন সেটাও দেখি!
: এত সময় নিলাম কোথায়, শাড়ি পড়তে আমার সময় লাগে বেশি নতুন নতুন পড়া শিখেছি !
: আমাকে ডাক দিতে হেল্প করতাম ?
: তাহলে আর যাওয়া হতো না তাই ডাক দেই নাই !
মাহি হাসতে হাসতে গাড়ি স্টার্ট দিল ।

: রুবা, নিঝুমের সামনে প্লিজ তুমি নরমাল থাকবে এবং আমার আর ওর প্রসঙ্গ আনবে না প্লিজ প্রমিজ করো!
: কারণ টা‌ বলো তো ?
: প্রথম কারণ তোমার তো দোষ নেই , তুমি তো আমাকে জোর করোনি বিয়ে করতে। আমি নিজে রাজি হয়েছি । আর দ্বিতীয় কারণ নিঝুম তোমার সামনে আজকের পর থেকে আর আমার সঙ্গে নরমাল থাকতে পারবে না তাহলে ।
ও জানে তুমি জানো না । একটা মেয়ে যেমন নিজের স্বামীর এক্স এর সামনে অস্বস্তি ফীল করে ঠিক তেমনি সেই এক্স এর ও অস্বস্তি হয় আর সে যদি ফ্যামিলির রিলেটিভ হয় তাহলে তার জন্য কতটা অস্বস্তিকর হয় বলো ?
লক্ষী সোনা তুমি আমার কথা টা শুনবে বলো?
:রুবা মাহির হাত ধরলো, তোমার রিকোয়েস্ট করতে হবে না তুমি বলেদিয়েছো এতে হবে আমি এই প্রসঙ্গ টানব না !
: থেঙ্কস রুবা দ্যটস হোয়াই আই লাভ ইউ !
: রুবা হাসি দিল মাহির দিকে তাকিয়ে।
: চুল বেনী করলে কেন ছেড়ে দিতে?
: গরম লাগে , মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করো তো!
: এমন সুন্দর মানুষ পাশে থাকলে মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করা যায় বলো ?
: তাহলে নেক্সট টাইম আসরাফ কে নিয়ে বের হবে !
: মোটেও না !

সিসিইউ তে এক জনের বেশি যেতে দেয় না। ওয়েটিং রুমে আত্মীয় স্বজনদের ভীড় তাই। রুবা আর মাহিকে দেখে রিয়া বলল,
: এই যে আমাদের রাজপুত্র আর তার পরী চলে এসেছে।
: আমি বলেছি না আমি জীনের বাদশা রিয়া আপু , মাহি বলল!
: হুম তুই জীন আর রুবা পরী । মাহি তোর বউ কে নিয়ে এই এলাকায় আসিস না হার্টের রোগীদের হার্ট অ্যাটাক আবার হয়ে যাবে !
: রিয়া আপু আমাদের ডাক্তার দের বাঁচতে হলে লোকজনের হার্ট অ্যাটাকের দরকার আছে বুঝলে, মাহি দুষ্টামি করছে!
: এটা ঠিক বলেছিস ‌, তুই!
মাহি বলল, তোমরা থাকো এখানে আমি ভেতর থেকে আসছি । বলে মাহি চলে গেল।

একটু পর নিঝুম কোথা থেকে আসলো ওয়েটিং রুমে। রিয়া আর রুবাকে কথা বলতে দেখে এগিয়ে গেল কাছে।
রুবার কেমন যেন লাগছে কিন্তু ও নরমাল থাকার চেস্টা করছে।
অস্বস্তি কেন যেন নিঝুমের ও লাগছে!
কিন্তু কেউ ই বুঝতে দিচ্ছে না কাউকে।
নিঝুম রুবার দিকে তাকিয়ে আছে । মনে মনে ভাবছে মাহির ভালোবাসায় তুমি আরো সুন্দর রুবা ! আজ তোমাকে দেখে খুব হিংসে হচ্ছে !
: নিঝুমের মোবাইল এ একটা মেসেজ এলো ।
নিঝুম মেসেজ ওপেন করে দেখে নিয়াজের মেসেজ,
” নিঝুম প্লিজ একটু কথা বলব, তুমি সময় করে নিচে আসবে? তুমি যতক্ষণ না আসবে আমি বসে থাকব যতরাত ই হোক আমি যাব না , প্লিজ প্লিজ !”
নিঝুম মেসেজ পড়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল!

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here