যখন দুজনে একা পর্ব-৫৯

0
3234

#যখন_দুজনে_একা

৫৯ পর্ব

ভোরের দিকে মাহির ঘুম ভেঙ্গে গেল । রুবা দূরে সরে ঘুমাচ্ছে ! তার খুব অস্বস্তি লাগছে রাতে তার জন্য মনে হয় রুবা কষ্ট পেয়েছে! নিঝুমের বিয়ের খবর শুনে তার খারাপ লেগেছে এই ভেবে যে একদিন দুজনে অন্য রকম কিছু ভেবেছিল কিন্তু এখন দুজনের পথ আলাদা!
রুবাকে বিয়ে করে সে নিঝুমের সঙ্গে ইচ্ছে করেই অনেক দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছিল। এর জন্য নিঝুমের সঙ্গে অনেক কঠিন ব্যবহার করতে হয়েছে , তা না হলে নিঝুম তার সঙ্গে কোন না কোন ভাবে জড়িয়ে থাকার চেষ্টা করতোই।
নিঝুম এখন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে এটাই সবচেয়ে বড় ভালো কথা ! তার কাছে সব‌সময় একটা জিনিস কষ্ট দিত সে রুবাকে নিয়ে অনেক সুখী আর নিঝুম একাই আছে !
নিঝুমের একাকীত্ব টা তাকে অপরাধবোধের অতলে ডুবিয়ে দিতো!
এখন নিঝুমের জীবনটা সুন্দর হবে , নিয়াজ ওর ভালোবাসা দিয়ে নিঝুম এর কষ্ট ভুলিয়ে দিবে !

মাহি মিউজিক সিস্টেম চালু করলো ! আগে একটা সময় সকালে উঠে গান শুনত কিন্তু রুবার ঘুম নষ্ট হবে ভেবে এখন আর মিউজিক ছাড়া হয় না সকালে!
গানের সাউন্ডে রুবা চোখ খুলে তাকালো !
মাহি ভাবছে রুবার সঙ্গে কথা বলা দরকার ! ওর মনে কষ্ট দিয়ে সে সারাদিন বাহিরে ভালো থাকতে পারবে না!
: গুড মর্নিং ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলাম তোমার রুবা !
: ভালো করেছো ! তুমি যাওয়ার সময় আমার উঠতে ইচ্ছে করে কিন্তু তুমি তো না ডাক দিয়েই চলে যাও!
: কোন প্রয়োজন তো নেই তাড়াতাড়ি ওঠার তোমার , তাই ডাকি না !
: আজ হঠাৎ গান শুনছো যে ?
: আজ মনে হলো তোমাকে তুলে তোমার সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করে তারপর যাই ! গান শুনিয়ে ঘুম ভাঙাই তোমার!
: ভালো করেছো! আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি একটু অপেক্ষা করো !
রুবা ওয়াস রুমে ঢুকে গেলে মাহি নিজে রেডি হয়ে নিল!
ঘড়ি পড়ার সময় হঠাৎ নিঝুমের দেয়া ঘড়িটার দিকে চোখ পড়লো! অনেক দিন পড়া হয় না ঘড়ি টা! সে মায়ের কিনে দেয়া অন্য একটা ঘড়ি পড়লো!
পুরনো স্মৃতি , পুরনো আবেগ কোন টাই সে সঙ্গে নিয়ে চলতে চায় না সে!
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এসব ই সে চিন্তা করছে !
রুবা এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ানো শুরু করলো!
মাহি ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো!
: কি ব্যাপার সকাল সকাল কি হলো ডাক্তার সাহেব?
: তোমার কি মন খারাপ রুবা ?
: না কেন?
: কালকে রাতে তুমি আমার এত কাছে এলে আমি ঘুমিয়ে গেলাম!
: না আমার মন খারাপ হয়নি কিন্তু অল্প অল্প খারাপ লাগছিল তোমার মন খারাপ দেখে!
: আমি ঠিক আছি রুবা !
: না আমার মনে হলো নিঝুম আপুর বিয়ের খবর শুনে তুমি একটু মন খারাপ করেছো!
মাহি বিছানায় বসলো রুবার হাত ধরে রুবাকে কোলে নিজের পায়ের উপর বসালো !
: রুবা আমার দিকে তাকাও , আমার মন খারাপ হয়নি সত্যি করে বলছি ,আমার হঠাৎ মনে হলো ফাইনালি দুজনের পথ দুটো হয়েছে ! একটু নস্টালজিক হয়ে গিয়েছিলাম ! সরি রুবা !
: প্লিজ তুমি এভাবে বললে আমার খারাপ লাগবে রুবা মাহির গালে হাত রাখলো! তোমার মত একজন অনুভূতি সম্পন্ন মানুষের তো খারাপ লাগার‌ই কথা ! না লাগলেই অবাক হতাম বেশি!
: প্লিজ রুবা আমার মনে হচ্ছে আমি তোমার সঙ্গে ঠিক করিনি সরি!
: আবার এক‌ই কথা , বললাম তো আমি কষ্ট পাইনি! সত্যি কথা বলতে কি আমার, কি মনে পড়ে না তোমার ভাইয়ার কথা!
তোমার কয়বার নিঝুম আপুকে মনে পড়ে আমার তো তোমার ভাইয়া কে ভুলে যাওয়ারই কোন সুযোগ নেই ! তোমার কি খারাপ লাগে কখনো ?
: মাহি রুবাকে বুকের কাছে নিয়ে বলল, ভাইয়ার ব্যাপার টা সম্পূর্ণ আলাদা রুবা !
: আলাদা কেন হবে , তুমি নিঝুম আপুকে নিয়ে জীবন সাজাও নি ?
: আমি নিঝুম কে নিয়ে স্বপ্ন সাজিয়েছি জীবন যাপন করিনি ! বিয়ের সম্পর্কে র ব্যাপার টা আমার কাছে অন্য রকম অনুভুতি তাই ভাইয়ার সঙ্গে তোমার অনুভূতি আর নিঝুমের সঙ্গে আমার কি অনুভূতি ছিল তা এক না!
: আচ্ছা বাবা ঠিক আছে এখন মন ছোট করে থেকো না প্লিজ! হসপিটালে সারাদিন থাকবে এভাবে মন খারাপ করে থাকবে নাকি?
: তোমার মন ভালো থাকলে রুবা আমার মন ও ভালো!
: তাহলে চলো খেতে চলো তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে!

রুবা কালকে তো স্যান্ডেল কেনা হলো না তোমার আজ এসে নিয়ে যাব তোমাকে ! বিকালের মধ্যে চলে আসব বাসায়!
: আবার দোকানে গিয়ে ঝগড়া করার ইচ্ছা তাই না?
: আমি পড়িয়ে দিব তোমার পায়ে স্যান্ডেল আর কাউকে ধরতে দিব না !
রুবা হাসছে !

মাহি এর পর কয়দিন তার পরীক্ষা আর পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল।
একদিন সন্ধ্যায় মাহি পড়ছে নিজের ঘরে সাফিয়া বেগম এসে ঢুকলেন !
মা কে দেখে মাহি একটু অবাক হলো !
: এসো মা , কিছু বলবে ?
: হুম , তোমার পরীক্ষা শেষ কবে?
: এই সপ্তাহে , কেন?
: তোমার তো কোন হুশে থাকে না ডেট আর ওকেশন !
: কেন আবার কিছু মিস করলাম আমি?
: এখন পর্যন্ত করো নি ! কালকে মনে হয় তোমাদের এনিভার্সারি এবং যথারীতি তোমার মনে নেই!
: মাহি জিব কাটলো সরি মা পরীক্ষার প্রেসারে ভুলে গেছি!
: তোমার বাবা আর তুমি এই জীবন তো পার করে দিলে তোমরা মুখের সামনে ব‌ই ধরে রেখে! এখন যাও দেখো কি করতে পারো!
: মা থেঙ্কস একটা রিকোয়েস্ট তুমি কোন হাঙ্গামা করো না, এই দিনটা খুব সাদামাটা করে রুবাকে নিয়ে কাটাতে চাই আমি!
: তোমরা যা চাও আমিও তো তাই চাই কিন্তু তোমার তো পরীক্ষা রুবার দিকে তাকানোর সময় কোথায় ?
: কোথায় সে ?
: তোমার বাবার জন্য চা বানাচ্ছে!
: থ্যাঙ্কস মা !
: দেখো এখন কি করতে পারো ! সাফিয়া বেগম উঠে চলে গেলেন!
মাহি তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করে বের হয়ে গেল বাসা থেকে!
কি কিনবে ,কি দেখে রুবা খুব খুশি হবে চিন্তা করতে করতে মাহি আপন জুয়েলার্স এ ঢুকলো!
রুবার জন্য একটা ব্রেসলেট কিনলো , ছোট্ট একটা গিটারে পুরোটা ডায়মন্ড বসানো লকেট আর চেইন এত পছন্দ হলো কিনে ফেলল !
নরমাল গিফট সব। তার আরও কিছু কিনতে ইচ্ছা করছে পারফিউম, ঘড়ি হাবিজাবি কিছু কিনলো কিন্তু মাহির মন ভরছে না !
ফুল, কেক নিয়ে বাসায় ফিরে এলো!
তার ভালো লাগছে না । রুবাকে দারুন কিছু একটা দিয়ে সারপ্রাইজ করতে পারলে খুব ভালো লাগতো! কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কি করবে ভেবেই পাচ্ছে না !
রাতে রুবা এসব দেখেই সারপ্রাইজ হয়ে গেল! সাফিয়া বেগম রুবাকে গোল্ডের চুড়ি গিফট দিলেন।
রুবা নিজেই ভুলে গিয়েছিল দিনটা!
তার খুব ইচ্ছে করছে মাহির জন্য গিফট কিনতে কালকে মা কে বলে যেভাবেই হোক মাহির জন্য কিছু একটা কিনতে যাবে সে।
পরদিন শ্বাশুড়ি র কাছে বলে একাই মাহির জন্য গিফট কিনতে বের হলো!
তার আগেই ঠিক করা ছিল কি কিনবে। যখন দেশের বাহিরে ঘুরতে গিয়েছিল দুজন তখন সে মাহিকে অনেক গিফট কিনে দিয়েছে এক রকম জোর করে ই কিন্তু একটা জিনিস তার অনেক দিনের ইচ্ছা মাহিকে দেয়ার আজ সে তাই কিনলো।

রাতে দুজন ডিনার করতে যখন বাহিরে যাচ্ছে রুবা সেজে আসতেই মাহি বলল,
: আজ তোমাকে অন্যরকম লাগছে !
: মা সাজিয়ে দিয়েছে ! বলল খুব সুন্দর করে সেজে যাও! লাল শাড়ি পড় । খোঁপা করো ।
: মার মনে যে কি চলে সারাক্ষণ সেই এক আফসোস , আমাদের বিয়ের কোন তাকঝাম না হ‌ওয়া!
রেস্টুরেন্টে এ গিয়ে রুবা মাহিকে তার জন্য কেনা
গিফট টা বের করে দিল !
একটা প্লাটিনাম এর রিং । মাহি অবাক হয়ে বলল,
: কখন কিনলে এই জিনিস !
: আজকে !
: মায়ের সঙ্গে গিয়েছিলে ?
: না একাই মায়ের পরিচিত দোকানে মা ফোন করে বলে দিয়েছিল!
: সুন্দর দাও পড়িয়ে দাও আমাকে !
রুবা মাহির আঙুল এ রিং পড়িয়ে দিল ।
তোমার আঙুল থেকে কালকে যখন ঘুমিয়ে ছিলে তখন মাপ নিয়েছি।
: কি বুদ্ধি মেয়ের!
: আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল তোমাকে একটা রিং কিনে দেই!
: তাই ?
: হুম , আব্বা আম্মা থাকলে এই ফর্মালিটিজ গুলো করতো, তোমাকে তো কিছুই দেয়া হয়নি !
: থ্যিঙ্কস রুবা আমি এটা সব সময় পড়ে থাকব ।
: ঠিক আছে !

রাতে মাহি আর রুবা পোর্চের উপর বসে রইল অনেক্ষণ। চাঁদনী রাতে ওরা সব সময় এভাবে বসে এখানে!
: রুবা দেখলে একটা বছর কত তাড়াতাড়ি চলে গেল !
: হুম!
: এভাবে বুড়ো হয়ে যাব একদিন আমরা!
: আজকাল চোখের পলকের মত দিন গুলো চলে যায় !
মাহি রুবার হাত ধরে বলল, সেটাই তো ! অপেক্ষা করো কিছু নিয়ে দেখবে দিন গুলো যাবে না । অপেক্ষা র সময় অনেক লম্বা হবে এত দীর্ঘ হবে যা মাপা যায় না।
: জানি তো , তুমি বাহিরে থাকলে ই মনে হয় সময় টা যায় না !
: তাই রুবা ?
: হুম!
: রুবা জীবনের দিন পার হবে আমি ব্যস্ত থেকে ব্যস্ত হয়ে যাব নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে, তুমি ব্যস্ত হয়ে যাবে সংসারে র দ্বায়িত্ব নিয়ে ! হয়তো কখনো কখনো খেয়াল ও করতে পারবো না তুমি কি করছো , নতুন একটা শাড়ি পড়লে আমি খেয়াল ই করলাম না হয়তো ,তোমার মন খারাপ আমি বুঝতেই পারলাম না এর মানে কখনো ভেবো না আমার ভালোবাসা তোমার প্রতি কমে গেছে । আমি হয়তো একটু বেখেয়ালি হয়ে গেছি কিন্তু আমার ভালোবাসা তোমার প্রতি কমবে না রুবা।
জীবনের এক এক প্রান্তে তোমাকে এক এক রকম ভালোবাসব।
তুমি এসে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবে পুরনো দিন মনে করিয়ে দিবে ।
: তোমার মত ভালোবাসার প্রকাশ যে আমার নেই মাহি?
: করবে, আমাকে ভালোবাসবে কিন্তু প্রকাশ করতে দ্বিধা কিসের ?
: তুমি যেভাবে পারো আমি তো সেভাবে পারি না । আর একটা জিনিস, মা বাবা আত্মীয় স্বজন কে আছে সামনে কোন খেয়াল নাই তোমার যা খুশি বলছো, করছো ! ওফফ
: এই রুবা আমি কি করলাম কবে কার সামনে ?
: তুমি সেদিন‌ও বাবার সামনে বসে কি যেন খাচ্ছিলে, চামচ নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলে এক বার হলে ঠিক ছিল বারবার আমি না পারছি তোমাকে বাঁধা দিতে না পারছি উঠে যেতে !
: এতে লজ্জা পাওয়ার কি হলো , তোমার সঙ্গে শেয়ার করছিলাম !
: বাবা ছিল সামনে, শুধু কি তাই মার সঙ্গে বসে থাকলে তুমি এসে একদম গা ঘেঁষে বসো, ঐ দিন লিভিং রুমের সোফায় আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লে মায়ের সামনে আমি তো লজ্জায় শেষ !
: শোন রুবা তোমার শ্বাশুড়ি এতে বিরক্ত হয় না নিশ্চিত ! মা যে কত চিন্তা করে আমাদের দুজনকে নিয়ে , আমাদের সম্পর্ক টা নিয়ে সে গল্প তো তোমাকে করিনি ! তোমাকে মুখ ফুটে বলেনি কিন্তু আমাকে প্রশ্ন করেছে আমরা হ্যাপি তো একেঅপরের সঙ্গে?
: তাই নাকি ?
: হুম , মায়ের জন্য আমরা বিয়ে করেছি মায়ের চিন্তা থাকবে এটাই স্বাভাবিক !
আর শোন ভালোবাসবে কিন্তু প্রকাশ করবে না এটা দূর্বলতা, কিছুটা প্রকাশ লাগে। সারাক্ষণ আই লাভ ইউ না বললেও দিন শেষে ভালোবাসা মাখা একটা হাসিও ভালোবাসার প্রকাশ করে রুবা ! সব সম্পর্ক তার প্রকাশে মজবুত হয় মনে রাখবে!
: ঠিক আছে মনে থাকবে !
: তবে তোমার লজ্জা টা আমার ভালো লাগে কিন্তু কখনো কখনো মনে হয় লজ্জা আড়ালে তুমি নিজ থেকে এগিয়ে এসো!
: রুবা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে হাসছে !
: এই যে দেখলে এখনো লজ্জা পাচ্ছো!
: আমার কাছে ভালোবাসা হলো মাহি যত্ন করে রাখা প্রিয় কোন মূল্যবান গয়না ! যাকে সযত্নে আগলে রাখতে হয় !
: আমার কাছে ভালোবাসা হলো নিঃশ্বাসের মত একদম হৃদয় আর জীবনের কাছাকাছি থাকা কিছু, যা সব সময় লাগে এক মুহূর্তের জন্য কোথাও যত্ন করে রেখে দেয়া যাবে না । তুমি হলে আমার সেরকম কিছু রুবা ! যতক্ষণ আমার জীবন আছে ততক্ষন তোমাকে লাগবে তোমার ভালোবাসা লাগবে !
মাহি রুবার হাত ধরলো । হ্যাপি এনিভার্সারি রুবা চলো ভেতরে বলে মাহি গেয়ে উঠলো,
” তোমার হাতে হোক রাত্রি রচনা
ও আমার স্বপ্ন, সুখের ভাবনা
চেয়েছি পেতে যাকে
চাইনা হারাতে তাকে
বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরে চাইলাম! ”
: পুরো গান না শুধু চার লাইন মাহি ?
: পুরো গান শোনাব ভেতরে চলো !
তুমি কি এখন পড়তে বসবে ?
: মাথা নষ্ট মা কালকেই বলল আমি আর বাবা নাকি মুখের সামনে ব‌ই রেখেই জীবন পার করে দিলাম ! যদিও কালকে আমার এক্সাম কিন্তু এনিভার্সারি নাইট কোন পড়াশোনা নাই ঠিক আছে রুবা!
: অনেক হয়েছে সেলিব্রেশান তুমি রুমে যাও আমি কফি নিয়ে আসছি পড়তে বসো ।
: সমস্যা নাই !
: যাও না বাবা !
: সত্যি বলছো তো রুবা ! তোমার শ্বাশুড়ি বকবে না তো আমাকে!
: না !
মাহি রুমের দিকে দৌড় দিল অনেক কিছু বাকি ছিল রুবা থ্যাঙ্কস সুইটহার্ট !
রুবা দাঁড়িয়ে হাসছে আর মনে মনে বলছে,
তুমি আসলেই অন্যরকম একদম তোমার মত‌ই। আর তোমার ভালোবাসা তোমার মত‌ই সবচেয়ে আলাদা !

নিঝুম আর নিয়াজের আকদ এর দিন সাফিয়া বেগম রুবাকে ডেকে বললেন,
: মাহির জন্য একটা জিনিস এনেছি দেখো তো কেমন হলো?
একটা ব্ল্যাক প্রিন্স কোট !
: ওর বাবা আর শিহাবের ও ছিল ভেবেছিলাম মাহির বিয়ের সময় বানিয়ে দিব যাই হোক তখন হয়নি এখন দিলাম !
: মা অদ্ভুত সুন্দর , আপনার ছেলে কে পড়লে অসাধারণ লাগবে!
: আমার ও তাই মনে হয় বলে সাফিয়া বেগম হাসলেন!
বিকেলে মাহি কে রুবা বের করে দেখালো মা তার জন্য কি এনেছে!
: পছন্দ হয়েছে তোমার?
: এটা পড়তে হবে আজ ?
: হুম !
: ঠিক আছে মা আর ব‌উ সবার পছন্দ যখন পড়লাম !
রুবা তুমি কিন্তু খুব বেশি সুন্দর সাজবে না !
: কেন ?
: লোকজন তাকাবে আমার মেজাজ খারাপ হবে !
: ঢং তাই না !
: সিরিয়াসলি
: আজ সবাই নিঝুম আপুকে দেখবে !
: সে আমি জানি না তোমাকে না দেখলেই হলো!
: যাও তো আমি রেডি হ‌‌ই !
: আমি থাকি হেল্প করি !
: না যাও
রুবা মেরুন রেড সিকোয়েন্স এর কাজের একটা জর্জেটের শাড়ি পড়লো ! সঙ্গে গলায় চোকার নেকলেস , চুল খোঁপা করেই রাখলো !
মাহি রুমে ঢুকে বলল ,
: বিয়ে তো নিঝুমের তুমি এত সুন্দর করে সেজেছো কেন ?
: যেন তুমি আমার দিকে তাকিয়ে থাকো !
: আমি সব সময় যেখানে থাকি তোমার দিকেই তাকিয়ে থাকি রুবা !
: এটাই ভালো এখন যাও রেডি হ‌ও মা অপেক্ষা করছেন !
মাহি যখন প্রিন্স কোট পড়ে রেডি হয়ে আসলো রুবা এবার মাহি কে খোচানো শুরু করলো !
: অপার কিন্তু আজ আবার মাথা ঘুরে পড়ে যাবে তোমাকে দেখে!
: কোন অপার ?
: ভুলে গেলে এত তাড়াতাড়ি ! তোমার উপর ক্রাশ খেয়েছিল!
: ও আচ্ছা হা হা !
: না এই বয়সী মেয়েদের মন এক জায়গায় স্থির থাকে না এখন গিয়ে দেখো অন্য কারো উপর ক্রাশ খাচ্ছে!
: তাহলে অন্য কেউ খাবে ডাক্তার সাহেব !
: দেখা যাক কি হয় !
: আমিই তো চোখ ফিরাতে পারছি না মাহি !
: আমি তো তাই চাই তোমার দুই নয়ন আমাকেই দেখুক !
আচ্ছা এখন বের হ‌ই চলো !
ওদের দুজনকে এক সঙ্গে দেখে সাফিয়া বেগম ইচ্ছে করে চোখ নামিয়ে ফেললেন ! মায়ের নজর নাকি বেশি লাগে । মনে মনে বললেন , কি সুন্দর লাগছে দুজনকে ! মাসাআল্লাহ!
: মা তাকিয়ে দেখো তোমার গিফট পড়লাম , হ্যাপি !
: হুম অনেক সুন্দর লাগছে ,এবার চলো !

বিয়ের অনুষ্ঠানে মাহি ইচ্ছে করেই নিঝুমের সামনে যাচ্ছে না ! নিঝুম পাশের একটা রুমে বসা ! সবাই গিয়ে দেখে আসছে ওকে!
মাহি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে ! নিয়াজ ও এসে পৌঁছে গেছে। মাহি নিয়াজ কে গিয়ে রিসিভ করলো এটা তার দ্বায়িত্ব ছিল !
বিয়ে পড়ানো শেষ হলে নিঝুম স্টেজে আসবে ! যখন বিয়ে পড়ানো হচ্ছে তার আগ মুহূর্তে মাহির মোবাইল এ নিঝুম এর মেসেজ ,
” তুই কি একটু কাছে আসবি ”
মাহি একটু অবাক হলো , এ আবার কোন ধরনের আবদার !
মাহি যায়নি !
বিয়ে পড়ানো শেষ দোয়া পড়ানো শেষ নিঝুম আবার মেসেজ দিল আসার জন্য!
একটু পর নিঝুম মাহির ক্লাসমেট ফারিয়া এসে মাহির কানে কানে বলল ,
: যা না নিঝুম তোর জন্য অপেক্ষা করছে !
: আমি গিয়ে কি করব ?
: কি কথা বলবে যেন !
: অসম্ভব এর প্রয়োজন দেখছি না ফারিয়া !
: আমি পড়েছি বিপদে আয় না মাহি !
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাহি নিঝুমের কাছে গেল!
: কি সমস্যা তোর নিঝুম?
: মাহি আমাকে একবার দেখবি না ব‌উ সাজে কেমন লাগছে ?
: ও তো স্টেজে গেলেই দেখতে পেতাম এখানে ডাকার কি দরকার?
: আমার শেষ একটা অনুরোধ রাখবি আমি চাই তুই আমাকে ধরে স্টেজে নিয়াজের কাছে নিয়ে যাবি !
: কি তোর মাথা নষ্ট, বলিউড এর মুভি এটা !
: প্লিজ মাহি , তুই বিয়ে করেছিস ইচ্ছা অনিচ্ছায় হোক মেনে নিয়েছিলাম তুই আমার অনুরোধ টা রাখ নিয়াজ কিছু মনে করবে না !
: তোর নিয়াজের অনুভূতি নিয়ে মাথা ব্যথা না থাকলেও আমি রুবাকে কষ্ট দিতে পারব না কখনো না !
: প্লিজ নিঝুম ! তোর জন্য কি সব পালকী রেডি করেছে রিয়া আপু ওরাই নিয়ে যাবে !
: আমি ওসব পালকীতে উঠব না!
: আমাকে বলছিস কেন , এসব ?
ভালো থাকিস ।
মাহি বের হয়ে গেল নিঝুমের সামনে থেকে !
ঐ রুম থেকে বের হতেই মাহির রুবার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ! মাহির মুখ কালো দেখে রুবা প্রশ্ন করলো !
মাহি রুবার কাছে কিছুই লুকালো না নিঝুম কি চাইছে বলল ! সব শুনে রুবা বলল,
: চলো !
: কোথায় ?
: নিঝুম আপুর কাছে !
: কেন রুবা প্লিজ আমি এসব পারব না !
: আরে আসো তো একটা মেয়ে বাপের বাড়ি থেকে তার শেষ ইচ্ছে টা অপূর্ণ রেখে যাবে কখনোই না !
রুবা নিঝুমের কাছে গিয়ে বলল,
: নিঝুম আপু তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি তোমার বর অস্থির হচ্ছে তার সুন্দরী বউ কে দেখার জন্য !
রুবা নিঝুমের হাত ধরলো !
নিঝুম অবাক হয়ে রুবার দিকে তাকালো !
: অবাক হচ্ছো কেন আপু সম্পর্কে আমার‌ই তো তোমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা তাই না ? চলো
রুবা মাহির দিকে তাকিয়ে বলল ঐ পাশে তুমি দাঁড়াও যাও !
রুবাই নিঝুমের হাত ধরে স্টেজে নিয়ে গেল মাহি ওদের পিছনে পিছনে গেল শুধু!
সবাই যখন নতুন বর আর ব‌উ কে নিয়ে ব্যস্ত মাহি এসে রুবার পাশে দাঁড়ালো !
: রুবা !
: বলো ?
: তুমি সত্যি দিনের আলোর মত সহজ হয়ে আমার জীবনে এসেছো !
: তাই বুঝি ! রুবা হাসছে
: এত সুন্দর করে কিভাবে তুমি সব ঠিক করে ফেললে !
: তেমন কিছু না তুমি নিয়ে গেলেও আমার কোন সমস্যা ছিল না ! আমি তো জানি এই বুকে এখন কে বসত করে ডাক্তার !
: তারপরও এতটা সিনেম্যাটিক আমি হতে পারব না !
: নিঝুম আপু আর নিয়াজ ভাই সুখী হবে দেখো !
: যদি সত্যি তোমার আমার মত বোঝাপড়া টা থাকে তাহলে হবে! বিয়েটা এমন এক জিনিস একটু মন থেকে এগিয়ে এলেই দুটো মানুষ , সম্পর্ক তার আপন টানে জড়িয়ে ফেলবে আষ্টেপৃষ্ঠে । তখন ভালো লাগা আর ভালোবাসা দিয়েই একটা জীবন পার করে দেয়া যায়!
সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা লাগে সেটা হলো দুজনের ইচ্ছা আর বোঝাপড়া!
মাহি রুবার হাত ধরলো !
: সবাই আছে হাত ছাড়ো ডাক্তার সাহেব প্লিজ!
: না আমি আমার বউ এর হাত ধরেছি কার কি , আর ছাড়ার জন্য হাত কখন‌ই ধরি নাই সেই প্রথম রাতে চুড়ি পড়িয়ে ছিলাম তখন থেকেই এই হাত আমার, হাত ধরে থাকার জন্য ম্যাডাম বুঝেছেন!

এত ভীড়ের মাঝে রিয়া রুবাকে ডেকে বলল,
: নিঝুম আর নিয়াজের জন্য লা মেরিডিয়ান এ রুম সাজিয়ে রাখা হয়েছে , চলো রুবা ওদের দিয়ে আসি প্লিজ !
নিয়াজ আর নিঝুম আজকের রাতটা হোটেলে থাকবে । নিয়াজের একমাত্র বোন ইউএসএ তে থাকে সে আসার পর রিসিপশন আর বাকি অনুষ্ঠানে র পর নিঝুম নিয়াজদের বাসায় যাবে!

এবার রুবা একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেল! মাহি ওকে একা ছাড়বে না, রুবা গেলে বাধ্য হয়ে তাকে আসতে হবে সঙ্গে। আর রুবা কোন ভাবেই চায় না মাহি নিঝুম আপু আর নিয়াজের বাসর ঘরে গিয়ে দাঁড়াক!
খুব খারাপ হবে ব্যাপার টা দুজনের জন্য!
তাছাড়া বিয়ের খবর শুনে মাহি একটা রাত মনে কষ্ট নিয়েই পার করেছে এখন বাসর ঘর দেখে অস্বস্তি ফীল করুক রুবা এটা কখনোই চায় না !
আজকের রাতটা নিয়ে তার অনেক প্ল্যান । সে আজকে রাত টা মাহির জন্য অনেক সুন্দর করতে চায় !
খাওয়া দাওয়ার পর রুবা রিয়ার কাছে গিয়ে
শরীর খারাপ লাগছে এসব বাহানা দিয়ে রুবা রিয়ার কাছ থেকে রেহাই পেল ! কিন্তু রুবা জানতো না এর একটু পর তার সত্যি সত্যি ই শরীর খারাপ হ‌ওয়া শুরু করবে!
রুবার গা কেমন জানি কাঁপা শুরু হলো এবং সেই সঙ্গে গোলাচ্ছে পুরো শরীর!

গাড়িতে উঠে রুবার শরীর আরো খারাপ লাগছে। কিন্তু মাহি বা শ্বশুর শ্বাশুড়ি কাউকেই বুঝতে দেয়নি সে চুপচাপ বসে আছে।
মাহি ড্রাইভ করতে করতে মা বাবার সঙ্গে গল্প করছে!
গাড়ি বাসার নিচে আসার সঙ্গে সঙ্গে রুবা দরজা খুলেই হরহর করে বমি করা শুরু করলো ! ঘটনার আকস্মিকতায় মাহি আর সাফিয়া বেগম এমনকি ওর শ্বশুর পুরোই অবাক!
রুবা উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পরে যেতে নিলো মাহি এসে জাপটে ধরলো !
রুবার গা ছুয়ে মাহি পুরোই হতভম্ব জ্বরে রুবার গা পুড়ে যাচ্ছে!
বমি করতে করতে রুবার গলা দিয়ে রক্ত এসে গেল ! মাহি কিছু ই বুঝতে পারছে না , কি হচ্ছে!
: সাফিয়া বেগম চিৎকার করে বুয়াদের ডাকলেন!
দুই বুয়া পানি নিয়ে এলো ! চোখে মুখে যখন পানি দিল মাহি , রুবা এক রকম অচেতন জ্বরে! মাহি
কোলে করে তুলে নিয়ে এলো উপরে !
থার্মোমিটারে জ্বর একশ চার ! প্রেসার ঠিক আছে !
সাফিয়া বেগম খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন ,
: তোমার সঙ্গে না ছিল মাহি এত খারাপ কখন হলো শরীর, কিছু বলে নাই?
: মা আমিও বুঝতে পারছি না ওর হাত ধরে ছিলাম তখন কোন টেম্পারেচার ছিল না ওর !
বুয়ারা রুবার কপালে জল পট্টি দিচ্ছে!
নিজের ড্রেস আগে চেন্জ করলো মাহি !
:এভাবে হবে না , সরো সবাই !
সাফিয়া বেগম রুবার গয়না চুড়ি সব খুলে ফেলল ।
মা ওকে আমি দেখছি ,
: রুবা ওঠো রুবা চলো তো ওয়াস রুমে গায়ে মাথায় পানি দিতে হবে তোমার চলো!
সাফিয়া বেগম রুম থেকে বের হয়ে এলেন তার মনের ভেতর খুব খচখচ করছে ।
কি সুন্দর লাগছিল রুবাকে , নজর টজর লাগলো না তো !
যদিও তিনি এসব বিশ্বাস করেন না তবুও মনটা কেমন করছে!
মাহি রুবার শাড়ি খুলে ওকে ধরে নিয়ে শাওয়ারের নিচে নিয়ে দাঁড় করালো।
মুটামুটি অনেকক্ষণ জোর করেই রুবাকে শাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে রাখলো!
শরীর মুছিয়ে কাপড় পাল্টে দিল, ওষুধ খাইয়ে কাঁথা গায়ে শুইয়ে দিল !
তারপর রুবাকে ধরে বিছানায় বসে রইল সে। বুঝতেই পারছে না হঠাৎ দিব্যি ভালো মানুষ হাসছে গল্প করছে গাড়িতে তার পাশে বসে আসলো বাসায় পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কি হয়ে গেল !
সাফিয়া বেগম দরজায় নক করলেন!
: এসো মা!
: এখন কত জ্বর ?
: আগের চেয়ে কম পানি দিয়েছি তো !
: কি হলো মাহি মেয়েটার , কি সুন্দর হেসে বেড়াচ্ছিল !
: বুঝতে পারছি না মা আমার নিজের ই অসহায় লাগছে!
: গলা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল!
: বমি করেছে তো গলা ছিঁড়ে গেছে ভেতরে সেটা ব্যাপার না ! আমি বুঝতে পারছি না হঠাৎ কি হলো!
: কি সুন্দর লাগছিল আজ খারাপ নজর লেগেছে মনে হচ্ছে!
: মা এসব বলো না তো প্লিজ। মাহি রুবার মাথায় হাত রাখলো! ওকে তো সব সময়ই সুন্দর লাগে!
: সব সময় তো এত লোকের সামনে যায় না !
: আচ্ছা ঠিক আছে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে দাও!
সাফিয়া বেগম দোয়া পড়ে রুবার শরীরে ফুঁ দিয়ে দিল!
তুমিও রেস্ট নাও মাহি রাতে দরকার পড়লে অবশ্যই ডাকবে আমাকে । তোমার বাবাও চিন্তায় পড়ে গেছে ওদিকে!
: ঠিক আছে মা যাও তুমি বাবাকে বলো ঠিক আছে এখন রুবা!
সাফিয়া বেগম ছেলের মাথায় গাল ছুঁয়ে দিলেন চিন্তা করো না ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ!

মা বের হয়ে যাওয়ার পর মাহি রুবার জ্বর আবার মাপলো! এখনও একশো দুই!
মাহি খুব অসহায় বোধ করছে ! হঠাৎ করে একটা মানুষ এভাবে বিছানায় পড়ে গেল!
: রুবা পানি খাবে সোনা ?
: রুবা মাথা নেড়ে না করলো শুধু!
: ঠিক আছে ঘুমাও আমি আছি জেগে!
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার আগে রুবার খুব আফসোস হতে লাগলো ,
রুবা ভেবেছিল কি দারুন একটা রাত রচনা করবে মাহির জন্য কিন্তু সব কিছু কিভাবে ওলোটপালোট হয়ে গেল !
মাহি এখন ওর জন্য চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হচ্ছে ! সামান্য জ্বর দেখে সে ভয় পাচ্ছে না, তার খারাপ লাগছে একটু সময়ে কিভাবে রুবা এতটা অসুস্থ হয়ে গেল!

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here