যখন দুজনে একা পর্ব-৬০

0
3235

#যখন_দুজনে_একা

৬০ পর্ব

রাতে রুবার জ্বর এই বাড়ে এই কমে ! এর মধ্যে দুই তিন বার বমি ও করার চেষ্টা করছে । মাহি রুবার গা স্পঞ্জ করে দিয়েছে বারবার! নিজে ডাক্তার হয়েও আজ মাহির খুব অসহায় লাগছে ! প্রিয়জন অসুস্থ থাকলে ডাক্তার ও যে অসহায় বোধ করে আজ মাহি জানলো!
শুধু বমি হলে না হয় ধরে নেয়া যেত বিয়ের খাবার খেয়ে এমন হয়েছে! এই উথালপাথাল জ্বর কেন ?
কি ভালো মানুষ ও হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিল , একসঙ্গে খেলো সারাক্ষণ পাশেই ছিল হঠাৎ এতটা খারাপ হয়ে গেল শরীর!
মাহি রুবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে , চোখের কোণে পানি!
: খুব কষ্ট হচ্ছে সোনা ?
রুবার চোখের পানি মুছে দিল ! চোখ দুটো তে চুমু দিয়ে বলল,
:একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো !
রুবা কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে যায় আবার কিছুক্ষণ পর উঠে যাচ্ছে!
মাহির দিকে তাকিয়ে বলল ,
: তুমি ঘুমাবে না ?
: না তোমার কষ্ট দেখে আমার ঘুম আসছে না ! শরীর খারাপ লাগছিল তাহলে বললে না কেন আমাকে!
: হঠাৎ শরীর কেমন ব্যথা লাগছিল আর আশেপাশের খাবারের গন্ধ, মানুষ জনের পারফিউম এর গন্ধ কেমন অসহ্য লাগা শুরু হলো গা কেমন গুলিয়ে উঠলো! গাড়িতে বসতেই জ্বর জ্বর লাগছিল , আমি তো ভেবেছিলাম গাড়িতে ই বমি হয়ে যাবে !
: আমি না ধরলে তুমি পড়েই যেতে রুবা ! একটু কথা বলেই তুমি হাঁপিয়ে গেছো তার মানে শরীর খুব উইক ! ঘুমাও!
: একটা কথা বলব ?
: এত কথা বলো না ঘুমানোর চেষ্টা করো, আচ্ছা বলো কি বলবে ?
: থাক সকালে বলা যাবে !
: সেটাই এখন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি ঘুমাও !

সব আত্মীয় স্বজন হোটেলের রুম থেকে যাওয়ার পর নিয়াজ নিঝুমের সামনে রাখা চেয়ারে এসে বসলো!
: নিঝুম তোমার এই প্ল্যান টা ভালো ছিল আজকের রাতটা হোটেলে থাকা, আমার খুব অস্বস্তি লাগতো তোমাদের বাসায় থাকতে!
: তোমার কি অস্বস্তি লাগতো আমার তারচেয়ে দ্বিগুণ অস্বস্তি লাগতো , তোমাদের বাসায় সেটা ন্যাচারাল কিন্তু আমার ছোটবেলার রুম আব্বু আম্মু র সামনে দিয়ে তোমাকে নিয়ে রুমে ঢুকে গেলাম এটা ভেবেই আমার কেমন লাগছিল তাই আপুকে বললাম , আপুই সব ম্যানেজ করলো!
: তোমাকে বলতে ভুলে গেছি নিঝুম, খুব সুন্দর লাগছে আজ তোমাকে ! যখন রুবা ভাবি হাত ধরে তোমাকে নিয়ে এলো স্টেজে আমি শুধু তোমাকেই তাকিয়ে দেখছিলাম !
: রুবার পাশে তুমি আমাকে দেখছিলে ?
: তাহলে আর কাকে দেখব ?
: রুবার মত সুন্দরী র পাশে আমাকে দেখেছো তাই অবাক হলাম!
: উনি অনেক সুন্দর, মিথ্যা বলব না যে কোন ভীড়ে আলাদা করে উনার দিকে চোখ পড়বেই কিন্তু আমার অপেক্ষা ছিল আজ তোমার জন্য নিঝুম!
: থ্যাঙ্কস নিয়াজ!
নিয়াজ একটা কথা বলব?
: বলো!
: এই রাত নিয়ে তোমার কি স্বপ্ন সাজানো ছিল জানি না আমি সম্পূর্ণ অন্য একটা মানুষ কে নিয়ে অনেক কিছু ভেবেছিলাম ! আমি প্রসঙ্গ টা কেন আনলাম আমি চাই তোমার কাছে আমার সব সত্য নিয়ে , জড়তাহীন ভাবে আসতে !
: আমার কাছে তো তোমার অতীত গোপন তো না নিঝুম, তাহলে নতুন করে বলার কিছু নেই!
: আমি মন থেকে মাহির কাছ থেকে অনেক কষ্টে সরে আসতে পেরেছি তোমার কাছে একটা হেল্প চাইব !
: বলো !
: তুমি তোমার মত আমাকে আমার অতীত থেকে আরো দূরে সরিয়ে আনবে !
: নিয়াজ নিঝুমের হাত ধরলো নিঝুম তুমি একটু সময় দাও দেখবে আমি তোমার সব কষ্ট আনন্দে ভরিয়ে দিব !
: আমি জানি , এখন আমার এই সাজগোজ খুলতে হেল্প করো আগে !
: থাক না দেখি এভাবে তোমাকে !
: এভাবে থাকবে ?
: হুম !
: অন্তত এই ভারী ওড়না টা খুলে রাখি !
: ঠিক আছে !
নিঝুম ইন্দোনেশিয়া র বালী গেছো ?
: তোমার যেতে ইচ্ছে করছে ?
: আমি গিয়েছিলাম কয়েক বছর আগে, বিশ্বাস করবে না পুরো সময়টা যাই দেখেছি মনে হয়েছিল নিঝুম কে নিয়ে দেখতাম যদি, বীচে বসে আছি মনে হচ্ছিল এখন পাশে নিঝুম থাকতো যদি ! তখন তুমি আর আমি এভাবে কখনো সম্পর্কে জড়িয়ে যাব তা ছিল অসম্ভব কিন্তু দেখো ভাগ্য আমাদের ,আজ আমার সামনে তুমি আমার ব‌উ সেজে বসে আছো !
: ঠিক আছে যাব সেই সব জায়গায় যেখানে তুমি আমাকে ফীল করেছো ! তুমি সব ঠিক করো !
: থ্যাঙ্কস নিঝুম!
: বারবার এমন থ্যাঙ্কস দিও না তো কেমন পর পর লাগে!
: ঠিক আছে দিব না তোমাকে পর হতে দিব নাকি মাথা নষ্ট! কত ধৈর্য্য ধরে তোমাকে পেয়েছি!
নিঝুম নিয়াজের কথায় জোরে হেসে উঠলো !
নিয়াজ ও হাসছে !
হাসি মুখেই ওরা ওদের জীবনের এক উল্লেখযোগ্য অংশের সূচনা করলো! নিঝুম কখনও ভাবতে পারেনি মাহি কে ছাড়া কাউকে এভাবে সুন্দর ভাবে জীবনে গ্রহণ করতে পারবে!
কিন্তু কি আশ্চর্য নিয়াজ কে আজ কতটা আপন লাগছে , নিয়াজ যখন মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকাচ্ছে ওর গায়ে অন্য রকম এক শিহরণ খেলে যাচ্ছে!
নিয়াজের দিকে তাকিয়ে থাকতে কত ভালো লাগছে!
কালকে ও এতটা অনুভূতি কাজ করেনি নিয়াজ কে দেখে আর আজ বুকের কাছে কোথাও নিয়াজ স্থান করে নিচ্ছে ধীরে ধীরে !
এটাই কি স্বামী স্ত্রীর সেই সম্পর্ক , সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ ও এক সেকেন্ডের ভেতর একটা ম্যাজিক করে যায়!
নিয়াজের গল্প গুলো মুগ্ধতায় ভরে দিচ্ছে ওর ভেতর! এটাই তাহলে সেই ম্যাজিক ।
মাহি আসলেই আজ জানলাম তুই কোন ম্যাজিকে রুবার হয়ে গেলি !
রাত বাড়ছে নিয়াজ তার গল্পের জাদুতে নিঝুমের মনে নিজের অবস্থান দৃঢ় করে নিচ্ছে!

রুবার জ্বর ভোর রাতের দিকে একদম কমে গেল ঘেমে গেছে মাহি ওর শরীর মুছিয়ে দিল!
ভাইরাস জ্বর আবার আসবে বোঝাই যাচ্ছে! ক্লান্ত রুবা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে ! মাহিও একটা সময় ঘুমিয়ে গেল!
সারারাত জেগে ছিল মাহি ঘুম ভাঙল অন্য দিনের চেয়ে দেরি করে । রুবার গায়ে হাত দিয়ে দেখে আবার গা গরম ! একশ র উপর হবেই!
গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে! ওকে এই অবস্থায় রেখে হসপিটালে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না ! গেলেও হাজার বার ফোন দিবে রুবা !
কিন্তু এখন কিছু খাইয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে আগে !
চোখ ডলতে ডলতে মাহি ওয়াস রুমে ঢুকলো এবং সেখানে সে মোটামুটি চারশো চল্লিশ ভোল্টের শক খেলো একটা! যার জন্য সে এই মুহূর্তে প্রস্তুত ছিল না !
বেসিনের পাশে কালো মার্বেল পাথরের কাউন্টারে র উপর একটা হোম প্রেগন্যান্সি টেস্ট স্ট্রিপ রাখা পাশেই রাখা ছিল প্যাকেট টা মাহি স্পস্ট দেখতে পাচ্ছে স্ট্রিপে দুটো রেড লাইন ! রেডলাইন দুটো কি মিন করছে তার বুঝতে বাকি নেই!
মাহি ছুটে রুমের ভেতর এসে ঢুকলো!
রুবা ঘুমাচ্ছে আগের মত ! এক্সাইটমেন্টে মাহির হাত পা কাঁপছে!
সে বিশ্বাস করতে পারছে না তার হাতে এই মুহূর্তে এরকম একটা কিছু!
রুবার পাশে এসে বসলো মাহি,
: রুবা ! এই রুবা ! রুবা প্লিজ তাকাও!
: হুঁ !
: এটা কি রুবা ?
: রুবা কাঁথার নিচে মুখ ঢেকে নিল !
: রুবা প্লিজ উঠো এটা কার ? মুখ ঢেকে রেখেছো কেন ?
: এটা তোমার তিন নাম্বার ব‌উ এর যে তোমার টেক কেয়ার করে , কাঁথার নিচে মুখ লুকিয়ে রুবা বলল!
: তাহলে তুমি মুখ লাকাচ্ছো কেন রুবা ?
: আমি মুখ লুকাচ্ছি না !
: আমি তো দেখছি তুমি লজ্জা পাচ্ছো!
: রুবা এটা কখন টেস্ট করেছিলে ?
: সকালে পাঁচটা র দিকে !
: এখন আটটার বাজে আর এই কথা পেটে নিয়ে তুমি দিব্যি ঘুমাচ্ছো! তুমি তো আমাকে সত্যিই খুন করে ফেলবে!
মুখ বের করছো না কেন, বলে মাহি কাঁথা টান দিয়ে সরালো !
রুবা হাত দিয়ে মুখ ডাকলো লজ্জায়!
: টেস্ট কীট কবে কিনে এনেছো আর কে কিনে দিলো ?
: আমাদের এনিভার্সারির দিন তোমার জন্য গিফট কেনার সময় বাহিরে গিয়েছিলাম তখন এনেছি !
: তার মানে আরো প্রায় তিন সপ্তাহ আগেই সন্দেহ হয়েছে তোমার আর তুমি আমাকে এক বার‌ও বলোনি যে তুমি এরকম কিছু ধারণা করছো!
: তখন নেগেটিভ এসেছিল আজ‌ই পজেটিভ এলো!
: মুখ থেকে হাত সরাও আমার কাছে লজ্জা কিসের রুবা?
: তোমার কাছেই বেশি লজ্জা লাগছে !
মাহি হাত সরিয়ে রুবাকে জড়িয়ে ধরে সমস্ত মুখে চুমু খাওয়া শুরু করলো পাগল কি তোমাকে এমনি এমনি বলি রুবা !
এই যে কালকে থেকে এত বমি করছো তার মানে ঘটনা এই!
: সেজন্যই আজ টেস্ট করলাম!
: তারপর আমাকে ডেকে বলতে , তুমি কি বলো তো রুবা ,মাহি রুবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল ?
: জানি না ! আচ্ছা তুমি রাগ করলে না তো, তোমার তো অন্য প্ল‌্যান ছিল মাহি ?
: কি প্ল্যান ছিল আমার?
: এত তাড়াতাড়ি বেবী চাইছিলে না !
: এখন আল্লাহ দিয়েছে আমি তো ভিশন হ্যাপি !
: সত্যি?
: হুম, চলো এখন‌ই ডাক্তারের কাছে ! আচ্ছা কত সপ্তাহ হবে অনুমান?
: আট হবে হয়তো!
: রুবা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না ! তোমার তো এখনো অনেক জ্বর সোনা !
মাহি শুয়ে রুবাকে জড়িয়ে ধরলো ।
: তোমার এরকম শক দেয়ার স্টাইল আমার হার্টবিট বন্ধ করে দেয় বুঝলে!
: আচ্ছা আমার আগের হিস্ট্রি তো ভালো না এবার কোন সমস্যা হবে না তো? রুবা চিন্তিত সুরে বলল।
মাহি একটু ধাক্কা খেলো কিন্তু রুবাকে বুঝতে দিল না!
: আরে না এবার আমি পৃথিবী তোলপাড় করে ফেলব দেখো !
: পৃথিবী তোলপাড় করার কি হলো ? কি বলো এসব !
: বুঝলে রুবা আনন্দে আমার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে !
: তাই তো দেখছি !
: রুবা এখন উঠো ব্রেকফাস্ট করে ওষুধ খাও ! এখন থেকে আমি যা বলব তুমি তাই শুনবে ! আমার কথা ছাড়া এক পা ফেলবে না !
: আমি সব সময় তোমার সব কথা শুনি !
: হুম কিন্তু আরো বেশি শুনবে আমি তোমার চোখে পানি দেখতে চাই না রুবা প্লিজ!
: মা কে জানানো দরকার না ?
: ডাক্তারের কাছ থেকে আসি আল্ট্রাসনোগ্রাম করে তারপর রিপোর্ট সহ মা কে দেখাব !
এই বাসায় একটা বাচ্চা ছুটে বেড়াবে আমার ভাবতেই এত ভালো লাগছে , রুবা আমার বেবী আসবে আমাদের বেবী আসবে আমার যে কি ভালো লাগছে ভাবতেই !
রুবা মাহির উচ্ছাস দেখে মনে মনে আল্লাহকে বলল,
: আল্লাহ তুমি এবার কোন সমস্যা দিও না প্লিজ !
: আমার এত জ্বর আসছে কেন ? সমস্যা হবে না তো বেবির?
: ভাইরাস জ্বর সোনা , তুমি চিন্তা করো না ডাক্তার ওষুধ দিবে ঠিক হয়ে যাবে ! আমি এবার তোমাকে আমার বুকে আগলে রাখব কোন সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ দেখো !
মাহি রুবার সব সময় ই অনেক টেক কেয়ার করে কিন্তু প্রেগন্যান্সি র খবর শুনে সে রুবাকে মাথায় তুলে রাখছে!
জল পট্টি দিয়ে দিল ! নিজে ব্রেকফাস্ট নিয়ে এলো , মুখে তুলে খাইয়ে দিল ! যদিও রুবা জ্বরের জন্য , কিছুই খেতে পারছে না ! বমি হচ্ছে যথারীতি!
বিকেলে রুবাকে নিয়ে রুবার গাইনোকলজিস্ট ডাঃ সুরাইয়া র কাছে গেল মাহি!
ডাক্তার সুরাইয়া রুবার সব কিছু জানেন , মাহি রুবার বিয়ে কোন পরিস্থিতিতে হয়েছে সব ! তিনি রুবার প্রেগন্যান্সি র খবর শুনে খুশি হলেন !
দুজনকে কনগ্রাচুলেট করলেন! মাহিকে বললেন আগে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে নিয়ে আসতে এবং ব্লাডের সব টেস্ট দিলেন!
ডাক্তারের রুম থেকে বেরিয়ে ওরা যখন টেস্টে র জন্য যাচ্ছে , রুবা মাহির হাত ধরলো
: আমার খুব ভয় হচ্ছে !
: ভয়ের কি আছে সব ঠিক থাকবে দেখো ! আমার খুব থ্রিল ফীল হচ্ছে একটু পর দেখব আমি বেবী কে !
: কি বলো এখন তো কিছুই না কি দেখবে ?
: ঐ ক্যান্ডির মত যতটুকু ই হোক আমার বেবী তো আমি এক্সাইটেড রুবা !
মাহির এক্সাইটমেন্ট দেখে রুবা আরো ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে!
বেশ অনেকক্ষণ পর আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে ডাক্তারের রুমে ঢুকলো দুজন। সিনিয়র একজন রেডিওলজিস্ট !
রুবা খুবই নার্ভাস!
মাহি নিজের পরিচয় দিয়ে রুবার আগের হিস্ট্রি খুলে বলল ডাক্তার কে !
ডাক্তার যখন রুবার সনোগ্রাফি করছে রুবার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ও খুব ঘাবড়ে গেল! মাহি রুবার হাত ধরে আছে । ইশারায় রুবাকে আস্বস্ত করার চেষ্টা করলো।
ডাক্তার মাহিকে মনিটরে দেখাচ্ছে বেবীর হার্টবিট , সাইজ, ওয়েট মাহির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে! ও পলকহীন চোখে মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছে!
রুবা ওদের কথা কিছুই বুঝতে পারছেনা । ও এক মনে শুধু আল্লাহ কে ডাকছে ! দোয়া পড়ছে, মানত করছে সদকা !
সে মাহির আনন্দ টা হারিয়ে যাক কোন ভাবেই চায় না!
ডাক্তার তাকিয়ে দেখে রুবার চোখে পানি! রুবাকে বলল,
: এই মেয়ে কাঁদছো কেন তুমি , কান্নাকাটির কিছু নেই এখন তো সব সময় আনন্দে থাকতে হবে ! মাহিকে বলল তুমি বুঝিয়ে বলো তোমার কাছ থেকে শুনতে ওর বেশি ভালো লাগবে যাও !
মাহি রুবার হাত ধরে রুমের বাহিরে নিয়ে এলো!
রুবা অস্থির হয়ে আছে শোনার জন্য!
: তাড়াতাড়ি বলো কি দেখলে , সব কিছু ঠিক আছে তো চুপ করে আছো কেন বলছো না!
মাহি হাসতে হাসতে বলল, তুমি সুযোগ দাও রুবা তারপর বলি।
: তাড়াতাড়ি বলো !
: সব ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই বেবি প্রোপার প্লেসেই আছে এবং হেলদি ! কিন্তু রুবা তোমার ব্যাপার টাই বুঝলাম না ?
: কি সমস্যা কোন ?
রুবা চিন্তিত চোখে তাকালো মাহির দিকে!
: তুমি আমার জীবনে আসার পর আল্লাহ সব দ্বিগুণ দিয়েছে আমাকে হাসি, আনন্দ সব এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি, রুবা আমাদের টুইন বেবী আসছে! মাহি রুবাকে জড়িয়ে ধরলো খুশিতে!
: কি ?
: হুম টুইন বেবী এই যে দেখো রিপোর্ট এ লিখা আছে !
রুবা খুশি হবে না কি ভীত হবে আরো বুঝতে পারছে না!
: কথা বলছো না কেন রুবা ?
: কি বলব বুঝতে পারছি না , কোন সমস্যা হবে না তো ?
: খালি নেগেটিভ চিন্তা ,চলো তো ম্যাম এর কাছে যাই উনি বললে তবেই শান্তি পাবে তুমি!
ডাক্তার সুরাইয়া রুবাকে সব বুঝিয়ে বলল এবার ওর কোন সমস্যা নেই টুইন বেবিরা খুব ভালো আছে !
রুবা তারপরও আতংক নিয়ে বলল, মাহি ও টুইন ছিল কিন্তু ওর সঙ্গে র বেবি টা মিসক্যারিজ হয়ে গিয়েছিল এরকম কিছু হবে না তো ডাক্তার?
ডাক্তার আর মাহি দুজন‌ই হাসছে !
: এখন মেডিকেল সাইন্স অনেক এগিয়ে গেছে আর আমরা আছি না তোমার বর ই তো ডাক্তার মাহি সবসময় তোমার পাশে আছে ইনশাআল্লাহ নেগেটিভ কিছু হবে না !
ডাক্তার সুরাইয়া চেয়ার থেকে উঠে এসে রুবার হাত ধরলো , সব কিছু ঠিক আছে এবং থাকবে তুমি টেনশন করো না আনন্দে থাকো । তোমার কোলে দ্বিগুণ আনন্দ আসছে মন কালো করে থাকলে হয় ! তোমাদের বেবিরা দেখবে তাদের পেরেন্টস এর মত খুব কিউট হবে, এখন বাসায় গিয়ে শুধু রেস্ট করো যাও!
রুবা ডাক্তারের কথায় একটু আস্বস্ত হলো কিন্তু ওর ভয় কাটছে না !
ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে মাহি রুবাকে ধরে ধরেই নিয়ে গাড়িতে উঠালো!
: রুবা প্লিজ একটু হাসো তো ! তোমার চেহারা এমন থাকলে আমার কষ্ট লাগে!
: তুমি বুঝবে না আমার খুব টেনশন হচ্ছে !
: ম্যাম তো তোমার সামনে ই সব বলল ঠিক আছে টেনশনে র কিছু নেই! রেস্টে থাকতে হবে, ঠিক মত খেতে হবে আর কিছু ই না ! বাকি আমি সব সামলে নিব !
: হুম , মা কে তুমি বলবে ঠিক আছে আমার লজ্জা লাগছে !
: আমি কিভাবে বলব রুবা আমার তো আরো বেশি লজ্জা লাগছে , তুমি সারাক্ষন মায়ের সঙ্গে থাকো তুমি বলো!
: আমি পারব না মাহি প্লিজ !
: আচ্ছা ঠিক আছে মায়ের হাতে রিপোর্ট গুলো দিলেই মা বুঝবে!
বাসায় আসার পথে রুবা বমি করতে করতে এলো !
: শুরু হয়ে গেল তোমার কষ্ট রুবা !
: আচ্ছা টুইন বেবী অনেক কষ্ট আর রিস্ক তাই না ?
: কষ্ট সব মায়েদের এক রকম, তবে হ্যাঁ টুইন তো কষ্ট একটু বেশি থাকবেই আর রিস্ক এর কিছু নেই তুমি খালি খালি ভয় পাচ্ছো !
রুবা মাহির কথায় আস্বস্ত হতে পারছেনা মাহি কখনো কোন সমস্যা থাকলেও বলবে না ওকে !

বাসায় এসে দোতলায় উঠার সময় মাহি ওর হাত ধরে রাখলো!
: তোমার এত নিচে নামা উঠার দরকার নেই ঠিক আছে রুবা?
: হুম!
: টেনশন না করে খুব কেয়ারফুল থাকো এটাই এখন দরকার বেশি , তুমি রুমে যাবে নাকি এখানে বসবে?
: রুমে যাব , তুমি মা কে গিয়ে বলো !
: তুমি সামনে থাকো প্লিজ!
: ঠিক আছে !
সাফিয়া বেগম লিভিং রুমে বসে টিভি দেখছিলেন। ওদের দেখে ছুটে এলেন !
: কি বলল ডাক্তার , জ্বর কেন এসেছে?
: ভাইরাস জ্বর মা , তারপরও ব্লাড টেস্ট করাতে দিয়ে আসলাম!
রুবার পাশে বসে সাফিয়া বেগম বললেন,
: জুস বা অন্য কিছু খাবে এখন ?
: রুবা মাথা নাড়ল খাবে না!
: মা তোমার কিন্তু দ্বায়িত্ব বেড়ে গেছে , মাহি বলল!
কিসের দ্বায়িত্ব ? সাফিয়া বেগম মাহির দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালেন!
মাহি আল্ট্রাসনোগ্রাম এর রিপোর্ট টা সাফিয়া বেগম এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
: টুইন বেবী মা মাহি হাসছে।
সাফিয়া বেগম হা হয়ে গেলেন পুরো , তিনি কল্পনাও করেননি এরকম একটা খবর শুনবেন এই মুহূর্তে! তিনি রুবার দিকে তাকালেন ,
: সে জন্যই তোমার এত খারাপ অবস্থা কালকে থেকে ! রুবাকে জড়িয়ে ধরলেন! আনন্দে তাঁর চোখে পানি চলে এসেছে!
: এরকম একটা খবর শুনতে খুব ইচ্ছে করছিল রুবা !
: মা টুইন বেবী চাইছিলে তুমি ?
: আমি তোমাদের বেবি চাইছিলাম টুইন তো বোনাস পাওয়া মাহি।
রুবাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন সাফিয়া বেগম। এত আনন্দে র খবর অনেক দিন তিনি পাননি।
: মা সব আদর রুবার জন্য আমার জন্য কিছু নাই ?
: অবশ্যই বাবা তোমার জন্যে ও অনেক আদর বলে তিনি মাহি কেও আদর দিয়ে দিলেন!
: ডাক্তার কি বলল মাহি সব আমাকে বলো !
: সব ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই মা !
মাহি রুবার দিকে তাকিয়ে বলল,
রুবা তুমি রুমে চলো হাত মুখ ধুয়ে নাও বাহির থেকে এসেছো!
একা যেতে পারবে আমি মা কে রিপোর্ট টা বুঝিয়ে আসি ?
: পারব যেতে , বলে রুবা উঠে গেল!
রুবা নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছে । সে জানে সমস্যা কিছু তো অবশ্যই আছে। মাহি মায়ের কাছে বলবে এখন তা না হলে ও কখনও ওকে একা আসতে দিত না! রুবার বুকের ভেতর একটা আতংক টিপ টিপ করছে!

সাফিয়া বেগম মাহির দিকে তাকালেন,
: মাহি এবার সত্যি করে বলো তো সব ঠিক আছে তো ?
: মাহি মায়ের হাত ধরলো সব ঠিক আছে এখন পর্যন্ত তবে, মা হাই রিস্কি প্রেগন্যান্সি! টোটাল বেড রেস্ট কোন রকম স্ট্রেস নেয়া যাবে না ! রুবা খুব ভয়ে আছে , দেখলে না ওর চোখে মুখে কোন আনন্দ নেই!
: আল্লাহ ভরসা মাহি , তুমি ওর পাশে থাকো তুমি ওর সবচেয়ে বড় শক্তি! আমি যাই তোমার বাবাকে বলে আসি খুব খুশি হবে!
সাফিয়া বেগম নিচ তলার দিকে ছুটে গেলেন আজগর সাহেব কে খবর টা দিতে!
মাহি বসে চিন্তা করছে ওকে অনেক কিছু করতে হবে, রুবাকে মনের শক্তি দিতে হবে ! কোন ভাবেই রুবাকে নার্ভাস হতে দেয়া যাবে না! রুবাকে অনেক কষ্টের সময় পার করতে হবে সামনে!
মাহি নিজের ঘরের দিকে আসছে আর ভাবছে ওকে অনেক দ্বায়িত্ব পালন করতে হবে অনেক!
একজন মা এত কষ্ট করে সন্তান কে পৃথিবীতে আনে আর একজন বাবা কত সহজে বাবা হয়ে যায়! কিন্তু ও রুবার প্রতি টা কষ্ট , প্রতিটা চ্যালেঞ্জ এ পাশে থাকবে । যতটা পারবে রুবাকে আগলে রাখবে! রুবা তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুখ এনে দিচ্ছে সে রুবার জন্য সব করতে পারে ।
সেদিন থেকে মাহি রুবাকে সব সময় আগলে রাখে! রুবার প্রতিটা কষ্ট সে কমানোর জন্য জীবন দিয়ে দেয়।
রুবার ঘুম আসে না মাহি রাতভর রুবার সঙ্গে জেগে থাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে!
ডিউটি ছাড়া এক মুহুর্ত বাসার বাহিরে থাকে না। বাসায় যতক্ষণ থাকে রুবার পাশে থাকে!
রুবা কি খাবে কি খাবে না সে সব খেয়াল রাখে।

রুবার শরীর ভারি হয়ে গেল খুব তাড়াতাড়ি আয়নার সামনে গিয়ে রুবা শুধু আফসোস করে, মাহিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
: দেখেছো আমি একটা ছোটখাটো হাতির বাচ্চা হয়ে যাচ্ছি দিন দিন!
: না তুমি আমার মুরগির বাচ্চাই আছো রুবা এখনো, তবে একটু গোলগাল হয়ে গেছো!
: আচ্ছা একটা কথা বলব টিভিতে নাটক , সিনামায় বলে না বাচ্চা আর মায়ের মধ্যে একজন কে বাঁচাতে পারবে এরকম কিছু হয় যদি?
: মাহি হো হো করে হাসছে পাগল মেয়ে এসব শুধু মুভিতে হয় ঠিক আছে ডাক্তারদের কাছে মায়ের আগে কোন অপশন নেই !
: আর তোমার কাছে ?
: মাহি রুবার পাশে এসে দাঁড়ালো তোমার কি মনে হয় ?
: তুমি বলো প্লিজ ?
: আমার প্রথম , দ্বিতীয় এবং সব অপশন তুমি রুবা । তুমি থাকলে সব আছে আর বাকি টা জানি না !
একটা সময় আমি বলতাম রুবা আমাদের অনেক বাচ্চা লাগবে এখন বলছি আর না !
: কেন , হঠাৎ প্ল্যান চেন্জ কেন ?
: তোমার এই কষ্ট আমি শেয়ার করতে পারি না তাই এরকম কষ্টে তোমাকে আমি আর দেখতে চাই না ! এবার ই শেষ!
: দেখা যাক , ভবিষ্যৎ বলবে কি হয় !
: এটাই ফাইনাল!
রুবা মোটামুটি এক রকম বিছানা বন্দী জীবন পার করেছে পাঁচ মাস। একটা সময় সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে !
ওর কান্নাকাটি দেখে মাহির খারাপ লাগে কিন্তু স্বান্তনা দেয়া ছাড়া কিছুই করার নেই ওর!
সাফিয়া বেগম পরম মমতায় রুবাকে জড়িয়ে রাখে কিন্তু রুবার ব্লাড প্রেসার বাড়ে তো হিমোগ্লোবিন কমে যায় ।
: রুবা মাহিকে কাঁদতে কাঁদতে বলে আর কতদিন ?
: মাহি রুবার চোখের পানি মুছিয়ে দিতে দিতে বলে আর মাত্র কয়টা দিন রুবা একটু ধৈর্য রাখো!
এর মধ্যে মাহি রুবাকে নিয়ে বাহিরে যাওয়ার প্ল্যান করলো !
রুবা যাবেই না তার শরীরের এমন সাইজ নিয়ে সে কখনো ই মানুষের সামনে যাবে না!
মাহি এক রকম জোর করেই নিয়ে গেল !
: রুবা শপিং করতে যাব এবং বাসায় এসে তুমি বলবে তোমার লাইফের বেস্ট শপিং ছিল এটা।
: এই অবস্থায় কি শপিং করব ?
: দেখো না যা ভালো লাগে কিনবে !
রুবা খুব অনিচ্ছা নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্কে ঢুকলো!
মাহি একটা বেবি শপে নিয়ে বলল,
: রুবা এখানে তোমার যা ভালো লাগে সব কিনতে পারো!
রুবা আনন্দে পাগল হয়ে গেল! এই প্রথম সে তাদের বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করবে ! তার এত ভালো লাগছে !
মাহি রুবার আনন্দ দেখছে কেন জানি ওর চোখে পানি চলে এসেছে ! অনেক দিন পর রুবাকে এতটা আনন্দ পেতে দেখছে!
হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে নিয়াজ আর নিঝুমের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ওখানে!
: মাহি তুই এখানে , নিঝুম অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল?
: ঐ যে দেখ কাকে নিয়ে এসেছি , মাহি রুবার দিকে ইশারা করলো!
নিঝুম তার আকদ এর পর এই প্রথম মাহি আর রুবাকে দেখলো!
রুবাকে এই অবস্থায় দেখে ওর ভালোই লাগছে!
নিঝুম এগিয়ে গেল দোকানের ভেতরে !
রুবাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো !
: সরি রুবা তোমাকে দেখতে আসতে পারিনি ! আম্মু র কাছ থেকে শুনেছি সুখবর!
: আর কয়দিন পর একবারে বেবিদের সঙ্গে দেখা হয়ে যেত তাদের ফুপির !
: বেবিদের মানে টুইন বেবি নাকি ? নিঝুম অবাক হয়ে গেল !
: হুম কেন জানো না ?
: না সত্যি আমি জানি না , আর তোমাকে দেখেও তো টুইন বেবি মনে হচ্ছে না !
: কি বলে হাতি হয়ে গেছি, আচ্ছা আপু আমি ঐ দিক থেকে আসছি একটু, তুমি মাহির সঙ্গে কথা বলো!
নিঝুম মাহির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো !
নিয়াজ কোথায় মাহি ?
: আসছি বলে গেল জানি কোথায় ? তারপর বল কেমন আছিস তোরা ?
: ও আচ্ছা একটা পাওয়ার ব্যাংক কিনতে গেছে !
একটা তো খোঁজ নিলি না কেমন আছি জানতে?
: একজন ভালো মানুষের সঙ্গে আছিস আমার বিশ্বাস খুব ভালো আছিস! সবচেয়ে বড় কথা সময় পাই না রে নিঝুম! তোর বিয়ের দিন থেকে রুবা অসুস্থ হয়ে গেল তারপর এই খবর পেলাম। জীবনটা এখন রুবা আর তার সবকিছু হয়ে গেছে!
: সেটা তো তোর বিয়ের পর থেকেই হয়েছে , আচ্ছা টুইন বেবির কথা মাত্র শুনলাম তোরা কাউকে বলিস নাই ?
: এটা কি ঢোল পিটিয়ে জানানোর কথা বোকা? মা তো অবশ্যই খালামনিকে বলেছে তুই খেয়াল করিস নাই!
: কি জানি এত বড় খবর মিস করলাম কিভাবে!
রুবা তো তোকে একেবারে উজাড় করে সব দিচ্ছে মাহি !
: মাহি নিঝুমের কথায় হেসে উঠলো , ক্রেডিট কিন্তু আমার আমি নিজে টুইন ছিলাম ! এটা ঠিক বলেছিস রুবা আমাকে উজার করে দিচ্ছে! এখন আল্লাহর কাছে চাইছি ও যেন সব সময় এতটাই সুখে থাকে!
: তুই আছিস সুখে রাখার জন্য ওকে !
: ওর কষ্ট দেখে আর সহ্য হচ্ছে না অনেক দিন পর নিয়ে আসলাম বাহিরে, দেখ পাগল হয়ে কেনাকাটা করছে ! নিজের জন্য কোন দিন কিছু কিনতে এতটা আনন্দ পেতে দেখিনি!
: খুব ভালো লাগছে ওকে দেখে !
রুবা এগিয়ে এলো ওদের দিকে ! তারপর মাহির কাছে গিয়ে বলল,
: এই কি কালারের নিব জিনিস ব্লু নাকি পিঙ্ক ?
: কমন কালার নাও !
: তোরা জানিস না এখনো কি হবে , নিঝুম প্রশ্ন করলো?
: আমি প্রশ্ন করিনি এত সিনিয়র একজন রেডিওলজিস্ট ইচ্ছা করেনি , তবে আমার মনে হচ্ছে একটা ব্লু কালারের সব কিছু নিতে হবে আর একটা বুঝিনি ! মা আর রুবা খুব আশাকরে আছে মেয়ে বেবি ওদের মন খারাপ করাতে চাইনি তাই বলিনি!
: তাহলে দেখিস আর একটা মেয়েই হবে ! তুই তো ফুল কমপ্লিট মাহি !
: আলহামদুলিল্লাহ! আয় রুবার কাছে যাই !
মাহি রুবার কাছে এগিয়ে গেল । পানির বোতল এগিয়ে দিল রুবাকে ,
: পানি খাও আর এখন একটু বসো অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছো সোনা !
: আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না খুব ভালো লাগছে!
: আমি জানতাম তো , তুমি তো আসতেই চাইছিলে না !
নিঝুম ওদের দুজনকে দেখছে মাহি কত কেয়ারিং হাজব্যান্ড কেয়ারিং বাবা ! রুবার কত খেয়াল রাখছে! রুবাকে দেখে মনে হচ্ছে সুখী একজন পরিপূর্ণ মানুষ ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসা নিজের মাঝে ধারন করছে ! একটা জীবনে আল্লাহ ওর সব কেড়ে নিয়েছে, ঠিক তার পরে তাকে উজাড় করে দিচ্ছে! প্রথমে মাহিকে দিয়েছে, ওর ভালোবাসা, এখন একসঙ্গে দুটো বাচ্চা কি সুন্দর লাগছে রুবাকে !
মাতৃত্ব ওর রূপ কে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে! মাসাআল্লাহ!
রুবা এমন কিছু বাকি নেই যা কিনে নাই দরকারি অদরকারি । ডাইপার, ফিডার থেকে বেবিদের দোলনা, স্ট্রলার, বাউন্সার, বাথটাব !
মাহি কে টেনে নিয়ে গেল বিশাল একটা সুইমিং পুল দেখাতে এটা নিতে চায় । হাওয়া দিয়ে ফুলিয়ে ঘরের ভেতরে পানি দিয়ে সুইমিং পুল হবে !
: রুবা এটা লাগবে না বাচ্চা রা বড় হোক আমি সত্যিকারের সুইমিং পুল বাসার পিছনে বানিয়ে দিব আমরা সবাই নামতে পারব এক সঙ্গে!
: সত্যি বানিয়ে দিবে তো , প্রমিজ!
: প্রমিজ!
নিয়াজ , নিঝুম দের সঙ্গে ফুডকোর্টে গিয়ে বসলো ওরা দুইজন!
: নিয়াজ দোস্ত শুধু গল্প করব কিছুই খাব না !
: কেন মাহি আশ্চর্য!
: রুবা কে বাহিরের কিছু খেতে দেই না, আমিও কিছুই খাব না এখন!
: তাহলে এখানে আসলাম কেন , নিঝুম বলল?
: মন খারাপ করিস না রুবার অনেক কমপ্লিকেসি আছে এসব বাহিরের খাবার খেলে একটা না একটা কিছু হবেই আবার কষ্ট পাবে!
রুবা ফোনে শ্বাশুড়ি র সঙ্গে কথা বলছে ।
মাহি, নিঝুম আর নিয়াজ কে গলা নামিয়ে বলল,
: বিশ্বাস করবি না একটা করে দিন‌ যায় আমি বলি গেল ! ওর কষ্ট দেখে আমার ই সহ্য হচ্ছে না। ঘুমাতে পারে না চার মাস এর পর থেকে ! টুইন বেবি দেখতে মজা যার হয় সেই বুঝে ! কান্নাকাটি করে অনেক। মোটিভেট করতে হয় আমাকে আর মা কে ! আজ এই জিনিস গুলো কিনে দিলাম বাকি দিন গুলো এগুলো দেখে কাটিয়ে দেয় যেন একটু আনন্দ নিয়ে!
: আমার ও টুইন বেবি খুব ভালো লাগে!
: এত সহজ না বুঝলি খুব কষ্ট, ফ্যামিলিতে আছে হয়েও যেতে পারে নিঝুম ! বলে মাহি হাসছে!
: কিন্তু রুবা আরো সুন্দর হয়েছে প্রেগন্যান্সি তে মাহি !
: ফ্যাকাশে হয়ে গেছে ঘরের মধ্যে বন্দি জীবন আর রক্ত শূন্যতায় ভুগছে! দিন যায় ওকে কি স্বান্তনা দিব আমিই ভয়ে আছি!
রুবা বসলো ওদের পাশে !
: মা কি বলল রুবা ?
: বাহিরে কিছু খেতে না করল , খারাপ লাগলে বাসায় ফিরতে বলল!
রুবা তোমাকে খুব ভালো লাগছে দেখে !
আপু দোয়া করো আমি যেন বাচ্চাদের দেখে যেতে পারি আমার মনে হচ্ছে হয়তো সম্ভব না !
: এসব কি বলছো রুবা কিছু হবে না সব ঠিক থাকবে দেখো।
মাহি রুবার দিকে তাকিয়ে আছে করুন চোখে!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here