যখন দুজনে একা পর্ব-৬৮

0
3610

#যখন_দুজনে_একা

৬৮ পর্ব

মাহি রুবার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে । রুবার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। মাহি হাত দিয়ে রুবার চোখের পানি মুছিয়ে দিল। রুবার বুকের উপর মাথা রেখে বলল,
: আমি ভুল করে ফেলেছি রুবা , তোমাকে আমার সব বলা উচিত ছিল ! তোমার ভালোবাসা আমার ভুলের চেয়ে অনেক বিশাল আমার বিশ্বাস তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিবে ! আমি দিশার সঙ্গে সারাদিন ঘুরতে যাওয়ার আগে তোমাকে বলাটা আমার দ্বায়িত্ব ছিল । সরি!
এখন যাও উঠো চেঞ্জ করে এসে শুয়ে পর । অনেক রাত হয়েছে! উঠো যাও । ছেলেরা কাঁদলে ঘুমাতে পারবে না চলো ঘুমাই । আমিও সারাদিন ঘুরে টায়ার্ড হয়ে গেছি।
মাহি রুবাকে তাগাদা দিয়ে চেন্জ করাতে পাঠালো।
বিছানায় শুয়ে মাহি চিন্তা করছে রুবার হঠাৎ এই ধারণা হলো কিভাবে সে আর দিশা ঘুরতে গেছে!
রুবা তো সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত মেয়ে না ! তাহলে ?
আজকে রাতটা নিয়ে কত কিছু একটুক্ষনে ভেবে ছিল সে !
মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল!
আলো নিভিয়ে সে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। রুবা ভুল বুঝে আছে থাকুক ভুল বুঝে সে কোন কৈফিয়ত দিবে না মাথা পেতে নিবে সব অভিযোগ। দেখি না কি হয় !
মাহি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে । রুবা ড্রেস চেঞ্জ করে এসে দেখে মাহি ঘুমিয়ে গেছে !
ও মাহির বুকে হাত রাখলো ! কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাহিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
মাহি অনেক রাত পর্যন্ত জেগে র‌ইল! ছোট ছেলে কাঁদছিল ওকে গিয়ে নিয়ে এসেছে মাহি। কিছুক্ষণ কোলে নিয়ে হাটলো কিন্তু মায়ের কাছে যাবে সে। রুবাই বুকে নিয়ে ঘুম পাড়ালো ছেলেকে।
মাহি মনে মনে বলল, সত্যিই ছোটটা আমার মত হয়েছে রুবার গায়ের সঙ্গে না জড়িয়ে ঘুমাতে পারে না। আমিও তো রুবার একটু স্পর্শ ছাড়া ঘুমাতে পারি না। এই দুই মাস যদিও পারতে হয়েছে কিন্তু প্রতিরাতে রুবা এসে হাসি মুখে কাছে বসেছে কিছুক্ষণ তারপর চলে এসেছে কিন্তু আজ রুবার এত কাছে থেকেও ঘুম আসছে না !
বুকের ভেতর চিনচিনে একটা কষ্ট হচ্ছে। রুবা তুমি আমাকে ভুল বুঝলে , কিভাবে পারলে ?
মাহি ছেলেকে নিজের বুকের কাছে টেনে নিলো ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেল।
সকালে উঠে মাহি হসপিটালে র জন্য বের হ‌ওয়ার সময় রুবাকে বলেই বের হয়ে গেল ! রুবা উঠে আসতে পারেনি ছেলের জন্য।
সারাদিন রুবার বুকের ভেতর কেমন অস্বস্তি লাগছে। মাহি একবার মেসেজ দিয়েছে , ওটিতে ঢুকব ফোন বন্ধ থাকবে !
তারপর থেকে ওর ফোন বন্ধ ।
বিকালে সাফিয়া বেগম আর রুবা বাচ্চাদের নিয়ে পোর্চের উপর বসে ছিল তখন দিশা এসে ঢুকলো বাসায়!
ওদের দেখতে পেয়ে কাছে এলো! সাফিয়া বেগম ই বলে উঠলেন,
: কি অবস্থা দিশা ?
: চাচী কালকে যা বাজে অবস্থার মধ্যে পড়েছি , আপনাকে তো মেসেজ দিয়ে শুধু জানিয়েছি আসতে পারব না পুরো ঘটনা তো বলিনি !
: কেন কি হয়েছে ?
: কালকে সকালে কক্সবাজার ল্যান্ড করে সোজা চলে গেছি টেকনাফ ওখানের কাজ শেষ করে বিকেলের ফ্লাইটে ঢাকা আসার কথা কিন্তু আসার পথে গাড়ি গেল নষ্ট হয়ে । আশেপাশে কোন ম্যাকানিক নেই অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম , অফিস থেকে অন্য গাড়ি যেতে গেলেও ফ্লাইট ধরতে পারব না । তারপর অন্য একটা অর্গানাইজেশন এর গাড়ি থামিয়ে লিফট নিলাম। কপাল খারাপ হলে যা হয় কক্সবাজার এর কাছাকাছি এসে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে পুরো রাস্তা আটকানো জ্যাম বেঁধে ছিল যথারীতি ফ্লাইট তো মিস হলোই , সারারাত এই ড্রেসে ছিলাম। এক কলিগের আসার টিকিট কাটা ছিল ও আসবে না তাই ওর টিকেটে আমি এই কিছুক্ষণ আগে ঢাকা ল্যান্ড করলাম । হরেবল একটা রাত ছিল আমার জন্য।
: কালকে মাহির কলিগের ভাই ও এক্সিডেন্ট করেছে ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বাসায় ফিরছিল । ডাক্তার রা অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু বাঁচাতে পারেনি ! মাহি সারাদিন ঐ নিয়েই ব্যস্ত ছিল, কিছু বলেনি আমাদের রাতে দাফন শেষ করে এসে বলল!
: বাংলাদেশে এই রোড এক্সিডেন্ট নাকি মারাত্মক হাড়ে বেড়ে গেছে ! কয়েক মাস আগে ই আমাদের অফিসের একজন এক্সিডেন্ট করেছিল এখন সিঙ্গাপুরে ট্রিটমেন্ট নিচ্ছে।
চাচী আমি ফ্রেশ হয়ে আসি কালকে থেকে এই ড্রেসে আছি !
: যাও !
: রুবার দিকে তাকিয়ে দিশা বলল, তারপর চা খাব আর গল্প করব তোমার সঙ্গে !
দিশা চলে গেল গেস্ট রুমের দিকে ।
রুবার সারা শরীর ঝিমঝিম করছে । সে নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারেনি এতক্ষণ। মাহি আর দিশা আপু ঘুরতে যায় নি ? ও এত বড় ভুলটা মাহিকে বুঝলো ! মাহি ও তাকে কিছু বলল না ! উল্টো ক্ষমা চাইলো ! কতটা দুঃখ পেলে মাহি কিছুই না বলে চুপচাপ ওর কথা মেনে নিয়েছে !
: মা আমি রুম থেকে আসছি । বলে রুবা ঘরে ফিরে এলো ! মোবাইল নিয়ে মাহি কে কল দিল। মাহির ফোন বন্ধ !
ও বারবার বারবার ফোন দিচ্ছে । রুবার নিজের উপর নিজের খুব রাগ লাগছে কিভাবে সে এত বড় ভুলটা করলো!
মাহি একটা বার‌ও রুবার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করলো না ! কত কষ্ট দিলাম তোমাকে আমি !
বিছানায় শুয়ে কাঁদছে আর বারবার বলছে , ছিঃ ছিঃ এ আমি কি করলাম ?
নিজের কোন কাজের উপর এতটা অনুশোচনা হয়নি কখনো যতটা আজ হচ্ছে রুবার!
কষ্টে , দুঃখে, অনুতাপে মরে যেতে ইচ্ছে করছে !
সন্ধ্যায় সাফিয়া বেগম রুমে এসে দেখে রুবা ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছে!
আলো জ্বালাতে ই রুবা চোখ মুছে উঠে বসলো!
সাফিয়া বেগম রুবাকে দেখে চমকে উঠলেন ,
: কি হয়েছে তোমার , চোখ মুখের এই অবস্থা কেন ?
: রুবা চুপ করে আছে !
সাফিয়া বেগম রুবার পাশে এসে গায়ে হাত রাখলেন , রুবা আমাকে বলো কি হয়েছে তোমার কাঁদছো কেন ?
: মা – রুবা শ্বাশুড়ি কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো !
: আমার ভয় লাগছে রুবা তুমি বলো না কি হয়েছে ?
: মা আমি আপনার ছেলের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি, ওকে ভুল বুঝে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ! আমার কষ্টে, অনুতাপে মরে যেতে ইচ্ছা করছে এখন! আমি কিভাবে এত বড় কষ্ট দিলাম ওকে!
: ঝগড়া হয়েছে তোমাদের ? সাফিয়া বেগম শান্ত গলায় বললেন।
: না মা ঝগড়া না আমি আপনার ছেলেকে ভুল বুঝেছি!
: ঠিক আছে কান্না বন্ধ করো আগে , মাহিও রাগ করে আছে তোমার উপর?
: না মা ও রাগ করে নেই ও আমার সঙ্গে কোন খারাপ ব্যবহার করেনি উল্টো সব অভিযোগ মাথায় নিয়েছে!
: আমি তোমাদের হাজব্যান্ড ওয়াইফের কি কথায় মান অভিমান চলছে শুনবো না , শুধু বলব হাজব্যান্ড ওয়াইফের মধ্যে মান অভিমান তো হবেই এটা নিয়ে এত কান্নাকাটি করার কিছু নেই ! তুমি যখন বুঝতে পেরেছো তুমি ভুল বুঝেছো তাহলে মাহি আসলে সরি বললেই ও বুঝবে।
: না মা সরি বললেই আমি শান্তি পাব না !
: তাহলে কি করলে শান্তি পাবে মনে, সেটা করো। শোন মাহি একটু রাগী কিন্তু ও রাগ মনে পুষে বসে থাকার মানুষ না। আর তোমাকেও অনেক ভালোবাসে তোমার উপর রাগ করে বসে থাকবে না কখনো।
: মা ও রাগ হয়নি অনেক কষ্ট পেয়েছে! আমি ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছি অনেক মা অনেক!
: বুঝলাম তো এখন কিভাবে ওর কষ্ট কমাবে সেটা চিন্তা করো ! তুমি কান্নাকাটি করে কষ্ট পেলে ওর কষ্ট কমবে ?
: আপনি আমাকে বলে দেন মা আমি কিভাবে ওর কাছে ক্ষমা চাইব?
: ক্ষমা তুমি সরি বলে দিলেই হবে কিন্তু তুমি এক কাজ করো ও পছন্দ করে তুমি সুন্দর করে সাজগোজ করে ওর আশেপাশে থাকাটা। তুমি তাই করো।
আরে বোকা মেয়ে এত দিন হয়েছে বিয়ের জানোনা তোমার হাজব্যান্ড কি পছন্দ করে , অবশ্যই জানো তুমি ওর যা পছন্দ তাই করো দেখবে মাহির মন খারাপ থাকলে ঠিক হয়ে যাবে।
পাগল মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখের কি হাল করেছে !
: মা আমি অনেক খারাপ ওর মত মানুষ কে কিভাবে কষ্ট দিলাম ?
: হয়ে যায় , ভুলবোঝাবুঝি নিজের মানুষের সঙ্গে হবে না তো প্রতিবেশীর সঙ্গে হবে ?
তুমি এক কাজ করো সুন্দর করে একটা শাড়ি পড়ো সাজগোজ করে রেডি থাকো তারপর মাহি আসলে বাহির থেকে ডিনার করে আসো আমি বাচ্চাদের রাখছি !
: মা ও যাবে না ও অনেক কষ্ট পেয়েছে!
: যাবে যাবে তুমি আগে রেডি হ‌ও। শোন নিজের ভুল বুঝতে পারাটাই অনেক বড় ব্যাপার , পৃথিবীতে কয়জন নিজের ভুল বুঝে, আগ বাড়িয়ে ক্ষমা চায় অনুতপ্ত হয় ! তুমি নিজের ভুল যখন বুঝেছো তুমি অর্ধেক সমস্যার সমাধান করে ফেলেছো।
যাও এখন রেডি হ‌ও। মাহি চলে আসবে। আমি তোমার ছেলেদের কাছে যাই।
সাফিয়া বেগম রুবার কপালে চুমু খেলেন বোকা মেয়ে কি অবস্থা করেছে সুন্দর মুখটার! উঠো এখন যাও!
সাফিয়া বেগম রুম থেকে বের হয়ে গেলেন!
রুবা আরো কিছুক্ষণ এভাবে শুয়ে কাঁদল। নিজের উপর নিজের এত রাগ হচ্ছে ওর ।

বিছানা থেকে উঠে রুবা ওয়াস রুমে ঢুকে ভালো করে মুখ ধুয়ে বের হলো। চোখের ফোলা ভাবটা একটু কমেছে। ছোটবেলা থেকেই একটু কাদলেই ওর চোখ মুখ ফুলে যায়।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ও চিন্তা করছে কালকে রাতে কত রোমান্টিক মুড়ে ছিল মাহি ! ও যা কান্ড করেছে মাহির মন পুরোটাই ভেঙে গেছে।
রুবার চোখ আবার ভিজে গেছে!
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত হয়ে যাচ্ছে , মাহির আসার সময় হয়ে যাচ্ছে !
সে সুন্দর একটা শাড়ি বের করে পড়লো। মাহি যেভাবে সেজে থাকলে পছন্দ করে রুবা সেভাবেই সাজলো।
মাহির দুটো হাত ধরে সরি বলবে ! যতক্ষণ না মাহি ক্ষমা করবে ততক্ষণ সে ক্ষমা চাইতেই থাকবে!

রাতে মাহি বাসায় এসে নিচে বসে রইল অনেক্ষণ। সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে না। ও রুবাকে নিয়ে ভাবছে । আজ সারাদিন রুবাকে নিয়ে অনেক ভেবেছে। রুবা কিভাবে চিন্তা করলো ও দিশার সঙ্গে বাহিরে ঘুরতে যাবে তাও রুবাকে না বলে!
রুবা আমি জানি তুমি কষ্ট পাচ্ছো আমার চেয়েও বেশি !
কেন রুবা মনে এত অভিমান নিয়ে বসে র‌ইলে ? আমাকে একবার প্রশ্ন করতে কোথায় ছিলাম সারাদিন ?
মাহি উপরে উঠে এলো ! লিভিং রুমে কেউ নেই ! মাহি নিজের রুমে ঢুকলো। এখানেও কেউ নেই। রুবা বাচ্চাদের নিয়ে হয়তো মায়ের ঘরে। মাহি মনে মনে ভাবছে, রুবা প্লিজ কোথায় তুমি একটু এসো ! তোমার সঙ্গে কথা বলতে হবে !
কিছুক্ষণ বসে মাহি ওয়াস রুমে ঢুকে গেল!

শাওয়ার নিয়ে ঘরে ঢুকে মাহি ভেবেছিল রুবাকে দেখবে।
না রুবা আসেনি। মাহি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।তখন‌ই রুবা কোথায় ছিল মাহি খেয়াল করেনি হঠাৎ পিছনে এসে দাঁড়ালো।
আয়নায় ওর মুখ দেখা যাচ্ছে না । মাহি বডি স্প্রে লাগাতে লাগাতে বলল,
: কি খবর তোমার ?
রুবা চুপ করে আছে! ওর মুখ দেখা যাচ্ছে না মাহির পিঠের পিছনে ওর মুখ লুকানো।
: চুপচাপ কেন সোনা !
রুবা মাহির পিঠের সঙ্গে একদম ঘেঁষে দাঁড়ালো! তারপর মাহিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো ।
: কি হয়েছে , চোখে পানি মনে হচ্ছে ! কি করলাম আমি আবার ?
মাহি হাত বাড়িয়ে ওকে সামনে এনে দাঁড় করালো। রুবা দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠলো।
: কি হলো আবার! আরে তাকাও আমার দিকে !
: আমাকে তুমি ক্ষমা করো প্লিজ ! আমি অনেক বড় ভুল করেছি !
: কি করেছো তুমি ?
রুবা ফুঁপিয়ে কাঁদছে ! মাহি ওকে বুকে টেনে নিল !
: কাঁদতে হবে না ,এখন বলো তোমার কি হয়েছিল এত অভিমান, অভিযোগ কিভাবে আমার রুবার মনের আকাশে জমা হয়েছে?
রুবা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল,
: আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি !
: হুম কিভাবে ভুল টা বুঝলে বলো তো ? মাহি রুবাকে বেডের উপর নিয়ে পাশে বসালো ! রুবার দুই হাত নিজের হাতে চেপে ধরলো !
: আমি ঐ দিন রাতে ছাদে তোমাদের স্মোক করতে দেখেছি আমার এত খারাপ লাগলো ব্যাপার টা !
: কেন , আমি তো স্মোক করিই তুমি তো জানো !.
: একটা মেয়ের সঙ্গে বসে স্মোক করছো জিনিস টা আমি হজম করতে পারিনি!
: আচ্ছা এই কথা ঠিক আছে এটার কারণ টা বলবো তার আগে বলো তুমি কেন বললে আমি দিশার সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলাম?
: সকালে ঘুম ভেঙ্গে আমার মনে হলো তোমার কাছে যাই রাতে রাগ করে তোমার সঙ্গে কথা না বলেই ঘুমিয়ে গেছি । তোমার রুমে ঢুকে দেখি তুমি নেই পুরো বাসায় খুঁজে পেলাম না । নিচে গেলাম কুদরত ভাই বলল, তুমি আর দিশা আপু এক সঙ্গে বের হয়ে গেছো !
: ও এই কথা আসল প্যাচটা লাগিয়েছে কুদরত ভাই ! আচ্ছা এক‌ই সঙ্গে বের হয়েছি কিন্তু দুজন এক সঙ্গে কোথাও যাইনি !
: পরে জেনেছি ! উনি এমন ভাবে বলেছেন আমি ভাবলাম একসাথে গেছো!
মাহি রুবার কপালে চুমু দিয়ে বলল, বোকা মেয়ে আমি তোমাকে না বলে ঘুরতে চলে যাব এটা ভাবতে পারলে তুমি?
: আমি ভুল করেছি সরি ! আমি ভেবেছি আমি তো আর বাচ্চাদের রেখে কোথাও যেতে পারিনা আবার নিয়েও যেতে পারব না ওদের। তুমি মনে হয় দিশা আপুকে ঘুরিয়ে আনতে গেছো । বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকি তোমাকে একটু সময় দেই না !
রুবা ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
: এই পাগল মেয়ে, আমার আর খেয়ে কাজ নেই অসুস্থ শরীর নিয়ে দিশা কে ঘুরাতে নিয়ে যাব ! আর এটা কি বললে তুমি সময় দিতে পারো না বলে আমি তোমাকে না বলে ঘুরতে চলে যাব ? রুবাকে শুয়ে দিয়ে ওর দিকে কাত হয়ে মাহি তাকিয়ে আছে।
: সরি!
: তুমি সময় দিতে পারো বা না পারো তোমাকে ছাড়া আমার তো কারো সময়ের দরকার নেই রুবা।
রুবা মাহির বুকে মুখ লুকালো !
রুবা তুমি আমাকে সময় দাও আর নাও দাও আমি শুধু তোমার জন্য ই অপেক্ষা করে থাকি আমার আর কারো প্রতি কোন আগ্রহ নেই তুমি এসব নিয়ে কষ্ট পেও না ! বাবা হয়েছি আমাকে একটু ধৈর্য তো ধরতেই হবে !
: তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো কিনা সেটা আগে বলো !
: তোমাকে তো আমি পানিশমেন্ট দিব রুবা !
: ঠিক আছে দাও তোমার যা ইচ্ছা পানিশমেন্ট দাও আমি মাথা পেতে নিব !
: মাথা কেন শুধু আমি তো তোমার, মাথা থেকে পায়ের পাতা সবটা জুড়ে ই পানিশমেন্ট টা দিতে চাই , মাহি রুবার কানের কাছে মুখ এনে বলল!
: ইসস , রুবা লজ্জায় মুখ নামিয়ে ফেলল!
তারপর রুবার গালে র সঙ্গে গাল চেপে ধরে বলল,
: তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা প্লিজ রুবা , তোমার মনে আমাকে নিয়ে যে ভালোবাসা টা সেটাই আমার সবচেয়ে বড় আশ্রয় সেখানে কোন ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ থাকলে আমি কোথায় যাই বলো তো ?
: তবে কি জানো সত্যি কারের ভালবাসা য় একটু হারানোর ভয় থাকলে নাকি ভালোবাসার গভীরতা আরো বাড়ে ! কিন্তু সন্দেহ থাকা যাবে না !
: তুমি জানতে চেয়েছো না আমি কিভাবে দিশার সঙ্গে সিগারেট খাচ্ছিলাম! ও আমাকে এমন একটা প্রশ্ন করলো আমি নিজের অজান্তেই খুব কষ্ট পাই এই প্রশ্নের সম্মুখীন হলে!
: কোন প্রশ্ন?
: ও আমাকে বলল, ভাইয়া যদি ফিরে আসে তাহলে কি করব আমি ?
: কি সব অবান্তর প্রশ্ন ?
: সেটাই , রুবা আমি তোমাকে কারো কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবো না সত্যি বলছি ভাইয়ার কাছে ও না । আমি খুব স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি তোমাকে নিয়ে আমার ছেলেদের নিয়ে!
রুবা মাহিকে নিজের বুকের কাছে জড়িয়ে ধরলো!
: এই প্রশ্ন শুনেই আমি ওর সিগারেট এর প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরিয়েছিলাম।
: সরি রুবা !
: আর আমি কোন মেয়ে তোমাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবে এটা ভাবিনি , আমার কষ্ট লেগেছে আমি ভেবেছি তুমি আমার উপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছো হয়তো।
মাহি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুবার দিকে! কি বললে এটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি আমি !
আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি কিনা দেখবে রুবা, বলেই মাহি রুবার ঠোঁটে গভীর এক চুম্বন এ ডুবে গেল।
: যার জন্য আমি এত গুলো মাস ধরে চাতক পাখির মত ছটফট করছি সে কিনা বলছে আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি!
মাহি রুবার কানের কাছে আলতো করে কামড়ে দিলো !
আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি রুবা আমার মুরগির বাচ্চা!
বহুদিন পর দুটো মানুষ নিজেদের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে । আজ শুধু মাহির না রুবার প্রতিটি রক্ত বিন্দু র মাঝেও হাজারো ঘন্টা বেজে যাচ্ছে।
রুবা মাহির কানে কানে বলল শুধু,
” আমি তার চোখে থেকে যেতে চাই
আমি তার বুকের পাঁজর বেয়ে
হৃদয়ের প্রতিটি শিরা উপশিরায়
থেকে যেতে চাই !
আমি তার নিঃশ্বাসের বাতাস হয়ে
কপাল বেয়ে ঝড়ে পড়া
ঘামের বিন্দু হয়ে
থেকে যেতে চাই!
এই আমার এক অলিখিত আধিপত্য
আমার একক রাজত্ব!
: রুবা আমার সবটুকু জুড়ে শুধু তোমার ই রাজত্ব তুমি আমার রাজ্যের রানীই।

যেখানে ভালোবাসার গভীরতা যত বেশি সেখানে হারানোর ভয় থাকলে থাকতেও পারে কিন্তু ভুল বুঝাবুঝির কোন স্থান নেই। রুবা আর মাহি জানে হৃদয়ের মাঝে মেঘ জমে কালো হয়ে গেলে আলো দিয়েই সেই কালো মেঘ দূর করা যায় অন্ধকার দিয়ে মনের অন্ধকার কেন কোন আঁধার ই দূর করা যায় না !

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here