#যখন_দুজনে_একা
৭ম পর্ব
স্টাডি রুম থেকে বের হয়ে নিঝুম ড্রয়িং রুমের পাশের ওয়াস রুমে গিয়ে ঢুকলো । কোনভাবেই সে তার কান্না থামাতে পারছে না !
গত তিন টা বছর তার আর মাহির রিলেশন। মেডিকেল এর ফাইনাল প্রোফ এর আগে একরকম লজ্জার মাথা খেয়ে ই মাহিকে সে প্রোপোজ করে বসে ! তার ভেতরে খালাতো ভাই মাহির প্রতি দূর্বলতা যখন সে কলেজে পড়ে তখন থেকেই।
শিহাব ভাইয়া, মাহি দুই ভাই খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিল বলেই তার মা, খালা, মামিরা সারাদিন ওদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতো। ওদের মতো হওয়ার জন্য কত কথা যে শুনতে হতো ছোটবেলা থেকে। একটা সময় অসহ্য লাগতো শুনতে ।
বিশেষ করে মাহির সঙ্গে তার দেখা হলেই কথাকাটাকাটি, তর্ক , ঝগড়া বেঁধে যেত। সমবয়সী হলে যা হয়। কিন্তু কবে যে সেই রাগ অনুরাগ এ পরিনত হয়ে গেল সে টের ই পেল না।
এর জন্য অবশ্য ওর বান্ধবীরা ও দায়ী, ওরা মাহির জন্য পাগল ছিল।
এক রকম ওদের পাগলামী ই মাহির প্রতি ওর অনুভূতি তৈরি করে দেয়!
মাহির জন্য ই সে মেডিকেল এ পড়ার আগ্রহী হয়ে ওঠে। সারাক্ষণ মাহির সঙ্গে থাকবে বলে।
কিন্তু কিসের কি !
কলেজে সে নিঝুম কে পাত্তা ই দিত না। ওর আলাদা ফ্রেন্ড সার্কেল। স্টাডি পার্টনার।
কোথাও সে নিঝুম কে সঙ্গে রাখে না ।
কত নালিশ করতো মায়ের কাছে , তোমার বোনের ছেলের অহংকারে মাটিতে পা পড়ে না। এমন ভাব যে সে ছাড়া ইহ দুনিয়াতে আর ভালো স্টুডেন্ট নেই।
এমনকি বড় খালাম্মা কে পর্যন্ত বলেছে, আপনার ছেলে কলেজে তো আমাকে চিনেই না । মানুষের কাজিন রা একসঙ্গে পড়াশোনা করলে কত হেল্প করে আপনার ছেলে খালাম্মা কলেজে এমন ভাব করে যেন আমাকে কোন দিন দেখে নাই, পরিচয় নাই। কলেজের পাশে পুরান ঢাকার খাবারের দোকান গুলোতে বন্ধুদের নিয়ে কত কি খায় একদিন ও বলে না খাবি? চল এক সঙ্গে লান্চ করি।
খালাম্মা রাগ করতো মাহির উপর।
ফিফথ ইয়ারে পড়ার সময় একদিন ক্লাসমেট গীতি মাহির প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া শুরু করলো ।
সেই খবর ওর বান্ধবীরা যখন নিঝুম কে দিল সেদিন ও একটা সীম কিনে মাহিকে উল্টাপাল্টা মেসেজ পাঠানো শুরু করে। ।
প্রথম প্রথম মাহি কোন রিপ্লাই দিতো না । কিন্তু যখন উঠতে বসতে মাহির কাজ কর্ম নিয়ে মেসেজ দেয়া শুরু করল তখন মাহিও রিপ্লাই দিতো। ঝাড়ি দিতো।
কিন্তু কোন ভাবেই নিজের পরিচয় নিঝুম প্রকাশ করেনি।
কিন্তু ঘাপলাটা বাঁধায় ওর ক্লোজ ফ্রেন্ড ফারিয়া । ফারিয়ার প্রেম তখন মাহি র দোস্তো ওয়ালী র সঙ্গে । ফারিয়া ওয়ালীকে বলে দেয় নিঝুম মাহিকে বেনামে মেসেজ পাঠায় । আর যায় কোথায় !
সে দিন টা র কথা নিঝুম কোন দিন ভুলতে পারবে না।
হঠাৎ মাহির ফোন , নিঝুম বাসায় আসবি ?
কেন রে? নিঝুম অবাক হয়ে প্রশ্ন করল!
তুই সব সময় নালিশ দিস মাকে তোকে নিয়ে পড়ি না ! আয় বাসায় তোর সঙ্গে বসবো আজকে।
তুই চলে আয় আমাদের বাসায় মাহি ?
মাহি ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল, আমি কি তোর প্রাইভেট টিচার ! পড়তে হলে এখানে আমাদের বাসায় আসতে হবে!
তা ঠিক আছে কিন্তু এখন তো ড্রাইভার নেই আসব কার সঙ্গে?
মাহি বলল, আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি তুই রেডি থাক!
নিঝুম তো আনন্দে লাফাচ্ছে!
ওর বড় বোন রিয়া বলল, পড়তে যাবি এর জন্য এত এক্সাইটেড তুই!
আরে না আপু পড়া তো বাহানা আরো ফ্রেন্ড রা আসবে আড্ডা হবে সেই জন্য !
তাই বল! আমি বলি তোর মতো মানুষ পড়ার কথা শুনে আনন্দে আত্মহারা হওয়ার তো কথা না নিঝুম!
গাড়ি পাঠিয়ে মাহি ওকে বাসার ডেকে নিয়ে গেল!
বাসায় গিয়ে দেখে খালাম্মা , খালু কোথায় কোন পার্টিতে গেছে। বাসা খালি । শিহাব ভাইয়াও নেই।
কাজের লোকজন ছাড়া কেউ নেই!
সে মাহির ঘরে গেল!
যথারীতি মাহি তাকে নিয়ে বসলো পড়তে!
একটা বিষয় নিয়ে নিঝুম কে প্রশ্ন করলো নিঝুম যেই বলল, আমি স্যারের ক্লাসে কিছুই বুঝি না রে ভালো করে তুই বুঝাতো মাহি !
হঠাৎ মাহি বলে উঠলো, ক্লাসে মন থাকলে তো বুঝবি ! তোর মন তো আমাকে মেসেজ দেয়াতে ব্যস্ত থাকে !
নিঝুম পুরাই থতমত খেয়ে গেল!
কি তোকে মেসেজ ! আমি দেই? কবে , কখন?
নিঝুম থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব!
নিঝুম ও কম না !
গাল এগিয়ে দিয়ে বলল, দে থাপ্পড় দে!
চুপ কর!
না থাপ্পড় আজকে দিতেই হবে! তোর থাপ্পড় না খেয়ে যাব না!
সত্যি সত্যি দিব কিন্তু নিঝুম! রাগে গজগজ করতে করতে মাহি বলল!
দিতে ইচ্ছে করছে দে মাহি!
আমার রাগ তুলিস না! আমাকে উল্টাপাল্টা মেসেজ দেয়ার কারণ কি বল?
কোন কারণ নাই! আর থাকলেও তুই খুঁজে বের কর কি কারন হতে পারে?
তুই ভদ্র ভাবে বলবি না বুঝেছি!
কি করবি!
খালামনি কে বলল তার মেয়ের কির্তি !
ও আচ্ছা এর বেশি কি করতে পারবি তুই!
নিঝুম ! সামনে আমার পরীক্ষা তোর মত ফালতু কাজে সময় নষ্ট করার ইচ্ছা আমার নাই। ফারদার আর কোন দিন যদি আমার সঙ্গে এরকম ফাজলামি করবি সত্যি বলছি তোর খবর আছে!
হঠাৎ নিঝুম মাথা নিচু করে কাঁদতে শুরু করে দিল ! মাহি একটু ভড়কে গেল!
এভাবে কাদবি না ! ভাগ এখান থেকে !
তবুও নিঝুম কেঁদেই যাচ্ছিল! ওভাবেই কাঁদতে কাঁদতে মাহির ঘর থেকে বের হয়ে গেল !
মাহি পিছনে পিছনে আসলো!
চল তোকে নামিয়ে দিয়ে আসি বাসায়!
চোখ মুছতে মুছতে নিঝুম বলল, না লাগবে না !
তুই মাহি আমার পিছনে পিছনে আসলে আমি কিন্তু ট্রাকের নিচে ঝাঁপ দিব!
মাহি ফিক করে হেসে বলল, সন্ধ্যা সাতটার সময় গুলশান এলাকায় ট্রাক কোথায় পাবি ঝাঁপ দেয়ার জন্য! চল এফডিসিতে যাই বলেই সে হাসতে শুরু করলো!
মাহি তুই সত্যিই বুঝতে পারিস নাই আমি কেন মেসেজ দিতাম ?
না ! তুই তো বলছিস না !
আমি কোন দিন বলব না ! আর তোর সঙ্গে কথাও বলব না!
সেদিনের পর থেকে নিঝুম কলেজে , বাসায় যেখানে ই দেখা হত এড়িয়ে যেতো মাহিকে!
প্রথম প্রথম মাহি হাসতো তেমন একটা গা করেনি ! পরে যখন দেখে সিরিয়াসলি নিঝুম তাকে এড়িয়ে যায় কথা বলে না তখন সে নিজেই আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসতো।
কিন্তু নিঝুম অনড় ছিল !
এক ঈদের দিন রাতে নিঝুম দের বাসায় দাওয়াতে মাহি ওকে ছাদে টেনে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো কি রে সত্যি তুই কোন দিন কথা বলবি না আমার সঙ্গে!
মুখ ফিরিয়ে নিঝুম বলল, আমি কথা না বললে তোর কি কিছু আসে যায়?
তা যায় না শিওর হলাম বুঝলি নিঝুম ।
নিঝুম নিচে নেমে আসতে নিল মাহি হাত ধরে বলল, সত্যি করে বলে যা তো কেন মেসেজ দিতি?
জেনে কি করবি ?
মাহি বলল, গীতি কে বলব ও জানতে চাইছে?
কি গীতি এসবের মধ্যে কিভাবে আসছে মাহি?
ও কেন জানতে চাইছে ?ও কিভাবে জানলো আমি তোকে মেসেজ দেই মাহি? বল আমাকে?
মাহি মুচকি হেসে বলল, বুঝতে পারছিস না কেন?
মাহি ,গীতি কে আমি খুন করে ফেলব!
ও আল্লাহ! তাহলে আমার কি হবে?
মানে?
তুই বুঝবি না নিঝুম!
মাহি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না দয়া করে বুঝায় বল! গীতি কি তোকে প্রোপোজ করে ফেলছে? নিঝুম চিৎকার করে উঠল!
আমি বুঝেছিলাম ও এই কান্ড ঘটাবেই!
তাহলে তোর কি নিঝুম? হাসছে মাহি!
মাহি , আমার কি জানতে চাস ? সত্যি জানতে চাস ?
এই সত্যি টা ই তো কবে থেকে জানতে চাচ্ছি নিঝুম !
তাহলে শোন , তোর মতো জ্ঞানী গাধাকে সেই কলেজে পড়ি যখন , তখন থেকেই পছন্দ করি রে !
শুধু পছন্দ ? আমাকে তো গীতি ও পছন্দ করে !
থাপ্পড় খাবি মাহি!
শুধু পছন্দ করলে এত কান্ড করার কি দরকার?
তোকে শুধু পছন্দ না রে ছাগল তোকে আমি ভালোবাসি!তুই কোন দিন বুঝবি না !
তুই থাকবি গীতি কে নিয়ে পড়ে!
হা হা করে হেসে উঠলো মাহি !
হাসতেছিস কেন ছাগল কোথাকার?
হাসতেছি গীতির নাম শুনেই সব কথা বের হলো তোর পেট থেকে তাই!
মানে ?
গীতির সঙ্গে আমার কোন কিছু নিয়ে কথা হয় নি কখনো!
নিঝুম মাহিকে মারতে তেড়ে গেল! মাহি দৌড় দিয়ে নিচে নেমে গেল!
সেই থেকে ও আর মাহি জীবন টা একসঙ্গে কাটাবে বলে কত স্বপ্ন সাজিয়েছে। মাহির ভালোবাসায় উড়ে বেড়িয়েছে নিঝুম।
কিন্তু শিহাব ভাই হঠাৎ মারা যাওয়াতে সব শেষ হয়ে গেল ! সব!
জীবন টা এক নিমিষেই অর্থহীন করে দিলো মাহি রুবা কে বিয়ে করে।
মাহি তোকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না কখনো না!নিঝুম ওয়াসরুমের ভেতর কাঁদতে কাঁদতে বলল।
চোখে মুখে পানি দিয়ে নিঝুম সোজা উপরে গিয়ে মাকে বলল, আমি বাসায় যাচ্ছি মা !
সাফিয়া বেগম অবাক হয়ে প্রশ্ন করল ওমা খেয়ে যাবি না লান্চ টাইম হয়ে গেছে ?
না খালাম্মা আজ আমার কাজ আছে!
নিঝুমের মা বলে উঠলো তোর না আজ ছুটি!
মা ডাক্তার দের ছুটি বলে কিছু নাই!
সাফিয়া বেগম বললেন, ঠিক আছে খেয়ে তারপর চলে যাবি !
প্লিজ খালাম্মা!
একদম চুপ কর নিঝুম! আমার কথা শোন!
অগত্যা নিঝুম কে খাওয়ার জন্য থেকে যেতে হলো!
মাহি স্টাডি রুম থেকে বের হয়ে তার রুমে চলে এলো!
ফোন বের করে নিঝুম কে একটা মেসেজ লিখতে শুরু করলো,
” নিঝুম, আমি তোর অপরাধী! জানি কখনও কোন দিন ক্ষমা করতে পারবি না ! তুই যেমন আমাকে ভালোবাসিস আমিও তোকে ভালবাসি ! কিন্তু আমাদের গন্তব্য এই পর্যন্তই ছিল! পরিস্থিতি আমাদের আর এগিয়ে যেতে দিল না ! পৃথিবীর সব ভালোবাসা পূর্ণতা হয়তো পায় না। যেমন আমাদের ভালোবাসাও পায়নি তার গন্তব্যে যেতে।
জীবনে কখনো কখনো ভাগ্যের কাছে হেরে যেতে হয় আমি আর তুই হেরে গেলাম!
রুবাকে দোষারোপ করিস না ! ও নিজেই নিজের কষ্ট নিয়ে দিশেহারা ! জীবন ওকেও তোর আর আমার মত হার ই লিখে দিচ্ছে। কখনো তো আমার আর তোর চেয়েও বেশি।
আমি মা কে ফিরিয়ে দিতে পারিনি তাই তোর কাছে অপরাধী!
শুধু চিন্তা করে দেখিস, সেদিন আমার কি বা করার ছিল! মা কে তোর কথা বললেও খুব একটা লাভ হয়তো হতো না। কেন সেটাও তোর জানা।
ভালো থাকার চেষ্টা করিস ।”
মাহির পাঠানো মেসেজ পড়ে নিঝুম মাহিকে বক্ল করে মেসেজ ডিলিট করে দিল!
দুপুরে সবাই একসঙ্গে খেতে বসলো মাহি ও কোন কথা বলল না নিঝুম ও চুপচাপ মাথা নিচু করে সামান্য কিছু খেয়ে উঠে পড়ল!
খাওয়ার পর পরই নিঝুম বিদায় নিয়ে চলে গেল !
মাহি মা কে বলল , মা আমি একটু ঘুমাব ঘরে যাচ্ছি!
ঠিক আছে রুবা কে নিয়ে যা! ও রেস্ট নিক!
রুবা বলল, আমি আপনাদের সাথে এখানে ই থাকব মা!
সাফিয়া বেগম বললেন, খাওয়ার পর একটু রেস্ট নিতে পারো রুবা ।
এখানেই আপনার পাশে শুয়ে থাকি।
আচ্ছা ঠিক আছে ! তুই যা মাহি ঘুম দে!
রুবার দিকে তাকিয়ে মাহি বলল, তোমার এখন কোন ওষুধ আছে!
না !
মাহি তার রুমে ফিরে এলো ! ঘরে ঢোকার সময় খেয়াল করলো ভাইয়ার রুমের সামনে রুবা আর ভাইয়ার বেশ কিছু ছবি ফ্রেম করা ছিল!
কিছু ছবি দেয়ালে টাঙ্গানো ছিল !
ওদের হানিমুনে র ছবি! বিভিন্ন সময় দেশের বাহিরে ঘুরতে গিয়ে তোলা ছবি । মা সেসব ছবি বড় করে ফ্রেম করে দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছিল।
আজকে কোন ছবি দেয়ালে নেই!
মা সরিয়ে ফেলেছে! কবে সরালো মা ? মাহি মনে করতে পারছে না ।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলল মাহি , এভাবে কি একটা মানুষের অস্তিত্ব সরিয়ে ফেলা যাবে মা ?
রুবাকে যত বার দেখব ততবার ভাইয়ার কথা কি তার মনে আসবে না!
কিংবা রুবা কি ভাইয়া কে সরিয়ে তাকে নিয়ে ভাবতে পারবে?
কখনো না! ওরা দুজন কত সুখী কাপল ছিল।
বিছানায় শুয়ে এসব ভাবতে ভাবতে চোখ জড়িয়ে গেল মাহির ঘুমে!
সন্ধ্যা হয়ে গেল ঘর অন্ধকার! হঠাৎ কিছুর বিকট শব্দে মাহির ঘুম ভেঙ্গে গেল! আকাশে মেঘ ডাকছে বাজ পড়ার শব্দ হচ্ছে বাহিরে!
হাত বাড়িয়ে বেড সাইড ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত সাড়ে আটটা বাজে!
রুবা এখনো এ ঘরে আসেনি!
ওর মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। মনে হয় আজ মাইগ্রেন এর পেইন ভুগাবে!
উঠে ওষুধ খেয়ে নিল জানে কোন লাভ হবে না তবুও!
বাহিরে ঝড় আসছে মনে হয় !
সে আবার গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো!
সেসময় দড়জায় টুক করে শব্দ হলো !
রুবা খুব সাবধানে ঘরে ঢুকল! ভাবছে মাহি এখনো ঘুমাচ্ছে।
কি মনে করে মাহি চোখ বন্ধ করে ফেলল! রুবা বিছানার কাছে এসে উকি দিলো । দেখলো মাহি ঘুমে কিনা!
কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল মাহির দিকে!
তারপর ওয়াস রুমে গিয়ে ঢুকলো!
এবার মাহি উঠে বসলো ।
রুবা ড্রেস চেঞ্জ করে ঘরে ঢুকলো ।
উঠে গেছো তুমি !
হুম ! কি অবস্থা ওদিকে সবাই আছে নাকি চলে গেছে?
চলে গেছে !
আচ্ছা তুমি কি নিঝুম আপু র সঙ্গে ঝগড়া করছো?
মাহি অবাক হয়ে তাকালো রুবার দিকে! কেন?
এ কথা বললে কেন? মাহি একটু চমকে উঠলো!
রুবা বলল, না নিঝুম আপু চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে গেল আমার সাথে তোমার সাথে কোন কথা বলল না ! এমন তো করে না কখনো! তোমরা কত হাসাহাসি করো আড্ডা দাও সব সময়। কিন্তু আজ দেখলাম তুমি ও চুপ আপু ও চুপ !
না সেরকম কিছু না । আমার দুপুর থেকে মাইগ্রেন এর ব্যথা শুরু হয়েছে তাই কথা বলতে ভালো লাগছে না ।
ও আচ্ছা!
ওষুধ খেয়েছো!
হুম!
রুবা বলল, অনেক কষ্ট হচ্ছে!
মাহি হেসে বলল, আমার অভ্যাস আছে! তুমি চিন্তা করো না।
রুবা সোফায় বসতে বসতে বলল, আমার বাবার মাইগ্রেন ছিল । অনেক কষ্ট পেতো ব্যথা উঠলে! তখন আমি বাবার মাথায় বরফ ঘষে দিতাম!
মাহি রুবার দিকে তাকিয়ে বলল, তাই?
আমাকে বরফ ঘষে লাগিয়ে দিতে হবে না তুমি কলিং বেল চেপে কাউকে বলো আইস ব্যাগ টা দিয়ে যেতে!
আইস ব্যাগ নিজেই চেপে ধরে আছে মাহি!
রুবা তুমি ডিনার করে নিও আমি কিছুই খাব না রাতে!
দরজায় নক করে সাফিয়া বেগম মাহি কে ডেকে ঘরে ঢুকলেন!
কি ব্যাপার বাবা তোর নাকি মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে!
তেমন কিছু না মা! অস্থির হওয়ার কিছু নেই!
এক কাজ কর খেয়ে ঘুমিয়ে যা আরাম লাগবে! আমি কি চুল টেনে দিব একটু?
মা তুমি চিন্তা করো না তো!
রুবা ফরিদা ডিনার এঘরেই নিয়ে আসছে তোমরা খেয়ে নাও বাহিরে ওয়েদার খুব খারাপ যে কোন সময় ঝড় বৃষ্টি শুরু হবে!
রাতে বেশি খারাপ লাগলে আমাকে ডাক দিস বাবা!
ঠিক আছে মা !
মাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন সাফিয়া বেগম ।
রুবা তুমি কিন্তু খাবে ঠিক মত! দরজায় দাঁড়িয়ে বললেন সাফিয়া বেগম।
তারপর চলে গেলেন !
মাহি কিছুই খেলো না ! রুবা একটা রুটি খেয়ে উঠে পড়ল ।
তখন ই কাছে কোথাও বিকট শব্দে বাজ পড়ল! রুবা চিৎকার দিয়ে উঠল!
ওর চিৎকারে মাহিই ভয় পেয়ে গেল!
দৌড় দিয়ে এসে বিছানায় বসে পড়লো রুবা!
তুমি এত ভয় পাও বাজ পড়লে !
রুবা বলল, মারাত্মক ভয় পাই ! আমি এই ঘরে থাকবো না আজ রাতে ! মায়ের ঘরে থাকবো ! এখানে থাকলে ভয়েই মরে যাব!
মাহি অবাক হয়ে বলল,কেন রুবা ?
রুবা আতঙ্কিত হয়ে বলল, আমি এই ঝড়ের রাতে একা থাকব কিভাবে ! আশ্চর্য!
একা কোথায় আমি আছি তো তোমার পাশে রুবা!
ও তাই তো ! রুবা মাহির দিকে তাকিয়ে বলল।
আবার কোথাও বাজ পড়ল ! রুবা চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে গুটিসুটি হয়ে কান চেপে শুয়ে পড়লো।
মাহি পাশ ফিরে দেখছে রুবাকে। কেন জানি ওর খুব মজা লাগছে। বাচ্চাদের মত ভয় পাচ্ছে রুবা!
( চলবে)