#যখন_দুজনে_একা
৯ম পর্ব
প্রতিদিন সাধারণত সকাল বেলা যে সময়ে উঠে ঘুম থেকে, মাহি সেই সময়ের অনেক আগেই আজ উঠে গেল!
ওষুধ খাওয়ার জন্যই হয়তো তার ঘুম টা ভালো হলো !
ফ্রেশ হয়ে নিজের কাপড় রেডি করলো তারপর বিছানার কাছে গিয়ে রুবাকে ডাকলো!
রুবা তুমি কি উঠবে!
রুবা কোন সারা দিল না !
মাহি ওয়াস রুম লাগোয়া ছোট্ট ড্রেসিং রুম টাতে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে রুমে ঢুকলো , আগে রুমে র ভেতরে ই চেন্জ করতো কিন্তু এখন রুবা আছে রুমে, ব্যাপার টা খুবই খারাপ হবে এখানে চেন্জ করলে।
আগেও কখনো সে রুবার সামনে খালি গায়ে আসেনি!
সাদা শার্ট আর নেভী ব্লু প্যান্ট পড়ে আয়না কিছুক্ষণ দেখলো নিজেকে ! কতদিন নিজেকে একটু ভালো করে দেখে না সে।
কতদিন জীমেও যায় না !
হঠাৎ ভাইয়া চলে যাওয়ার পর সব এলোমেলো হয়ে গেল তার!
আবার সে আগের মত হবে!
মায়ের জন্য হবে!
বাবার জন্য হতে হবে!
আর রুবার জন্য সে …
রুবার জন্য ই তো অনেক কিছু করতে হবে তাকে!
নিজের ভাবনা গুলো বাদ দিয়ে রুবাকে ডাকতে আবার কাছে গেল!
ওঠো রুবা
এই ,আমি তো হসপিটালে যাব উঠো!
কয়টা বাজে? রুবা চোখ খুলে জানতে চাইলো!
সাড়ে সাত টা!
তুমি যদি আরো ঘুমাতে চাও ঘুমাতে পারো রুবা!
না উঠব!
রুবা উঠে বসলো বিছানায়!
মাহি সোফায় বসে মোজা পড়ছে ! রুবার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করি!
ঠিক আছে ।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি বলে,
রুবা ওয়াস রুমে ঢুকে গেল।
মাহি তার হাত ঘড়ি টা খুঁজছে যেটা নিঝুম দিয়েছিল । মনে পড়লো রাতে আলমারি তে রেখেছিল।
নিঝুম ঘড়িটা দেয়ার পর থেকে সে সব সময় এটাই পড়ে।
ড্রয়ার খুলে ঘড়ি টা হাতে নিয়ে মনে হলো, যে মানুষ টাকে জীবন থেকেই বাদ দিয়ে দিয়েছে সে, তার দেয়া উপহার পড়ে তাকে আর কোন অনুভূতি ই সে দিতে পারবে না। দিতে চায় ও না মাহি ।
তাই ঘড়ি টা বক্সে র ভেতরে রেখে দিল। যত্নে থাকুক তার প্রিয়জনের দেয়া উপহার!
সে অন্য ঘড়ি পড়লো!
মায়ের কিনে দেয়া একটা !
হঠাৎ ওয়াস রুমে র ভেতর থেকে রুবার বমির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে!
মর্নিং সিকনেস!
এই সময়ে এটা খুব বেশি হয়!
রুবা ঠিক আছো?
রুবা কোন জবাব দিলো না!
একটু পর বের হয়ে এলো !
আর ইউ ওকে?
হুম!
আমার দেরি হয়ে যাবে এখন না বের হলে মারাত্মক জ্যামে পড়ে যাব!
চুল ঠিক করে দুজন এক সঙ্গে রুম থেকে বের হলো!
রুবা রান্না ঘরে র দিকে গেল!
মাহি খাওয়ার টেবিলে গিয়ে বসলো!
রান্না ঘরে ফরিদা বুয়া মাহির নাস্তা রেডি করছে!
রুবাকে দেখে ফরিদা বলে উঠলো, ভাবি আপনার শরীর এহন কেমন?
ভালো!
তোমার ভাইয়া র আর আমার খাবার দাও! মা কোথায় বুয়া?
আম্মা তো নিচে নামছে!
মনে লয় বাসার পিছে লনে হাঁটে!
ঠিক আছে , তাড়াতাড়ি করো তোমার ভাইজান অপেক্ষা করছে।
আপনে যান টেবিলে আমি নাস্তা আনতাছি!
মাহি ব্রেড আর ডিম ভাজি নিল নিজের জন্য !
একটার বেশি ব্রেড বা রুটি কখনোই সে খায় না । খাবার নিয়ে অনেক সচেতন মাহি। হিসেব করে খাবে। নিয়মের বাহিরে চলেনা।
রুবা রুটি খাচ্ছে ! রুবা অনেক সময় লাগিয়ে খায় সব সময়!
মাহি বলল, খাওয়ার পর ওষুধ খেয়ে নিও।
ও আচ্ছা ভালো কথা ,আজ তোমার ইঞ্জেকশন নেয়ার কথা না?
নার্স মেয়ে টা কখন আসে?
রুবা বলল, বিকেলে!
ঠিক আছে ! নেয়ার পর আমাকে ফোন দিয়ে জানাবে!
হাই রিস্কি প্রেগন্যান্সি রুবার, তাই প্রতি সপ্তাহে বাচ্চা র সেফটির জন্য ইনজেকশন দিয়ে হয় মিসকারেজ এড়াতে।
তুমি ডুফাস্টোন ট্যাবলেট টা দুই বেলা খাচ্ছো তো?
যা লিখেদিয়েছে ডাক্তার সব ই খাচ্ছি খেতে খেতে রুবা বলল।
ঠিক আছে আমি বের হচ্ছি রুবা!
নিজের খেয়াল রেখো!
আসলাম!
রুবা ঘাড় কাত করল শুধু!
নিচে মায়ের সাথে কথা বলে মাহি বের হয়ে গেল গাড়ি নিয়ে!
হসপিটালে পৌঁছল যখন মাহি ঘড়িতে নয়টা প্রায় বেজে গেছে!
ডক্টরস রুমে ঢুকে দেখে রিয়াদ ভাই, ওয়ালী , রাফি , শায়লা আপু গল্প করছে!
মাহিকে দেখে রিয়াদ ভাই হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল !
কি অবস্থা মাহির ? ছুটি শেষ! এখন কামে লাইগা পড়ো!
মাহি আসার আগেই ডাক্তার রিয়াদ সবাই কে বলে রাখছে বিয়ে নিয়ে মাহিকে কেউ কোন কথা, ফান কিছুই যেন না করে ! এমনকি উইস করার ও দরকার নেই! অন্য সব দিনের মতোই স্বাভাবিক কথা যেন বলে।
আর নিঝুমের প্রসঙ্গ যেন কেউ ভুলেও না তোলে!
সবাই নরমাল ব্যবহার করছে ওর সাথে।
শায়লা আপু বলল, আমি যাচ্ছি রে আমার আজ আউটডোর আছে !
ওয়ালী বলল , আমার ও আছে গেলাম ! পরে দেখা হবে!
মাহি বলল, আমাকে রশীদ কবির স্যারের সঙ্গে ওটি তে থাকতে হবে ! পুরাই কঠিন দিনের শুরু।
রিয়াদ বলল, যা স্যার আসার আগে ওটি তে না গেলে কথা শুনাবে!
হুম!
যাওয়ার সময় মাহি বলল, থেঙ্কস রিয়াদ ভাই!
ক্যান?
আপনি ভালো করেই জানেন কেন!
ধুর ব্যাটা থেঙ্কস এর কিছু নাই ! হাসলো রিয়াদ।
মাহি ওটিতে ঢুকে গেল!
নাস্তা খেয়ে রুবা রুমের দিকে আসল। কি মনে করে তার আর শিহাবের রুমে ঢুকলো!
দুই দিন হলো এই ঘরটায় একবার ও আসেনি!
যেদিন থেকে এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছে সে, এই ঘর টাই তার সব ছিল।
কত স্মৃতি তার আর শিহাবের এখানে!
রাত জেগে ও গল্প করতো শিহাব রাত জাগতে পারতো না !
ও কোন ভাবেই ঘুমাতে দিবে না শিহাব কে!
কত খুনসুটি আর হাসাহাসি করে ওদের দিন রাত গুলো যেত।
শিহাব কোর্টে গিয়ে নিয়ম করে দুই বার ফোন দিত যতই ব্যস্ত থাকুক না কেন?
রুবা অপেক্ষা করতো কখন ফোন দিবে শিহাব!
আচ্ছা ওর ফোন টা কোথায়?
শিহাব যাওয়ার পর থেকে ফোন সে ব্যবহার ই করে নাই!
কেউ তো তাকে ফোন দেয় ও না!
কোথায় আছে ফোন টা? মোবাইল টা খোজার জন্য
আলমারি খুলতেই শিহাবের সব কাপড় গুলো সামনে চলে এলো আবার ! ওর প্রতিটা শার্টে , স্যূটে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রুবা! নাকের কাছে এনে গন্ধ নেয়ার চেষ্টা করছে।গালে ঘসছে। শিহাব যাওয়ার পর প্রায় সময়ই সে এই কাজটা করে।
ওর সব সময় মনে হয় শিহাব যেন ওর পাশেই আছে। যেকোন সময় চলে আসবে। রুবা বলে সিড়ি থেকে ডেকে উঠবে।
রুবার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে!
দরজায় টোকার আওয়াজ!
ভাবি কি এই ঘরে আছেন?
রুবা চোখ মুছলো!
কিছু বলবা বুয়া?
ছোট ভাইজান ফোন দিসে এই লন! কর্ডলেস টা দিয়ে বুয়া চলে গেল!
রুবা ফোন টা হাতে নিয়ে খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
ওপাশে মাহি হ্যালো বলাতে ওর হুশ ফিরল!
হ্যালো !
কি করছো তুমি!
রুবার গলাটা একটু ধরে এলো! তেমন কিছু না!
ওষুধ খেয়েছো?
হুম খেয়েছি!
আমি এখন ওটিতে ঢুকব , ভাবলাম তোমার একটা খোঁজ নেই!
আমি ঠিক আছি!
কখন ফিরবে তুমি?আগের মত অভ্যাস বসত রুবা প্রশ্ন করে বসলো , যেমন টা শিহাব কে করত সে !
মাহি বলল, আজ যে কখন ফ্রি হই! তোমার কিছু লাগলে মা কে বলো! আমি হয়তো বিকেলের আগেই চলে আসব।
ভালো থেকো, রাখি এখন।
রুবা শুধু বলল, হুঁ।
রুবা ফোন টা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল! দুই ভাই এর কত মিল ! শিহাব ও তো এভাবেই খোঁজ নিতো প্রতিদিন চেম্বার থেকে কোর্ট থেকে!
হঠাৎ রুবার খুব কান্না পেলো। আলমারি টার পাশে বসে রুবা নিঃশব্দে কাঁদছে।
(চলবে)