যখন_দুজনে_একা পর্ব-৩৮

0
3847

#যখন_দুজনে_একা

৩৮ পর্ব

সবাই মিলে লান্চ করার পর মাহি রিয়াকে বলল, আপু আমরা আধা ঘন্টা পর বের হয়ে যাব! তোমরা থাকো! আমার দাওয়াত আছে রাতে। বাসায় ফিরে একটু রেস্ট নিয়ে তারপর যাব।
খাওয়ার পর ওরা একটা গোল ঘর টাইপের জায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। হঠাৎ অপার উঠে মাহির কাছে এসে বলল,
: ভাইয়া আপনাকে এফবি তে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিসি প্লিজ এড মি !
: মাহি এই মেয়ে কে কি বলবে বুঝতে পারছে না!
: পাশ থেকে রুবা বলল এড করো !
: মাহি হতাশ দৃষ্টিতে রুবার দিকে তাকালো মনে মনে বলল, বোকা রুবা তুমি জানো না এই মেয়ের মনের খবর , জানলে আর এই কথা বলতে না!
: কি তাকিয়ে আছো কেন এড করো, রুবা বলল!
: মাহি বলল করছি !
: থেঙ্কস ভাইয়া বলে অপার চলে গেল!
নিঝুম দূর থেকে হাসছে মাহিকে দেখে। মাহিও নিঝুমের দিকে তাকালো অসহায় দৃষ্টিতে।
মাহি রুবাকে বলল,
: চলো কটেজে যাই ব্যাগ গুছিয়ে নেই !
: চলো!
রিয়া এসে মাহিকে বলল,
: মাহি তোরা যেখানে দাওয়াতে যাবি নিঝুম ও যাবে এক কাজ কর না নিঝুম কেও সঙ্গে নিয়ে যা । ও আগে বাসায় চলে যেতে চাইছে ! তোর সঙ্গে গেলে আরো ভালো!
: হুঁ কোন সমস্যা নেই , ওকে রেডি হতে বলো!
: ঠিক আছে আমি বলছি!
মাহি আর রুবা কটেজে ফিরে এলো !
: রুবা এসো এই বারান্দায় বসি কিছুক্ষণ!
: ব্যাগ টা আগে গুছিয়ে তারপর বসি ?
: ঠিক আছে আমি আছি এখানে ,তুমি তোমার কাজ কমপ্লিট করো!
: রুবা রুমে ঢুকে গেল!
: মাহি সিগারেট ধরিয়ে বসলো বারান্দার চেয়ারে ! তারপর হঠাৎ একাই গেয়ে উঠলো তার খুব প্রিয় একটা রবীন্দ্র সংগীত, বৃষ্টি র দিনে এই গান টা তার খুব গাইতে ইচ্ছে করে,
শ্রাবণের ধারার মত
পড়ুক ঝড়ে, পড়ুক ঝড়ে
তোমার এই সুরটি আমার
মুখের পড়ে বুকের পড়ে…..
রুবা মাহির গান শুনেই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো ! কি সুন্দর গাইছে মাহি ! ওর চোখে পানি চলে আসছে গানটা শুনে!
মাহির পিছনে দাঁড়িয়ে ওর ঘাড় টা স্পর্শ করলো! মাহি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো ! গান থামিয়ে প্রশ্ন করলো চোখে পানি কেন ?
: তোমার গান শুনে!
: তাহলে তো আর গাওয়া যাবে না !
: না না প্লিজ গাও শুনতে খুব ভালো লাগছে!
মাহি হেসে বলল, ঠিক আছে এখন চলো, বাসায় যাই তোমার কেনা গায়ক আমি যখন খুশি বাজিয়ে শুনো!
: যখন খুশি শোনাবে তো ?
: প্রমিজ!
: চলো তাহলে যাই!
: চলো!
ওরা লবীতে এসে বসলো ! কফি খেতে খেতে সাজ্জাদ এর সঙ্গে গল্প করছে মাহি! নিঝুম এখনো রেডি হয়নি! মাহি বারবার ঘড়ি দেখছে।
রুবা ইনবক্স করেছে,
” যে শাখায় ফুল ফোটে না,ফল ধরে না একে বারে
তোমার ঐ বাদল বায়ে দিক জাগায়ে সেই শাখারে।
যা – কিছু জীর্ণ আমার, দীর্ণ আমার, জীবন হারা,
তাহার‌ই স্তরে স্তরে পড়ুক ঝড়ে সুরের ধারা‌ !
নিশিদিন এই জীবনে তৃষা র পরে ,ভুখের পরে।
শ্রাবণের ধারার মত পড়ুক ঝড়ে পড়ুক ঝড়ে!
আমার জীবন এর মত লাইন গুলো তাই না ? ”

শেষের লাইনটা পড়ে মাহির মনটা খারাপ হলো ‌
একটু পর নিঝুম আসলো সঙ্গে রুবা ও!
মাহি উঠে সাজ্জাদ এর কাছ থেকে বিদায় নিল! অপার এসে নিঝুম কে বলল,
: আমি তোমাকে ফোন দিব আপু , অনেক ইনফরমেশন চাই আমার!
: নিঝুম এর বিষম খাওয়ার মত অবস্থা! এই মেয়ে তো মাহির জন্য সত্যি পাগল হয়ে যাচ্ছে!
: রুবা কে জড়িয়ে ধরলো অপার, আপু আপনি খুব সুন্দর অনেক দিন আপনার মত সুন্দর মেয়ে সত্যি দেখি নাই!
: তুমি তো দারুন সুন্দর করে কথা বলো , অনেক দিন তোমার মত সুন্দর করে কাউকে কথা বলতে দেখি নাই ! হাসলো ওরা।
মাহি রুবাকে তাগিদ দিল জলদি করো!
তানহা- মানহা আর শ্রুতি- মিতি গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে বলল,
: আমরা এখন আরো মজা করব তোমরা মিস করলে সবাই!
: রুবা বলল কালকে বাসায় চলে আসো!
: ভাবি তুমি একদিন ও আসো না বাসায় !
: তোমার ভাইয়া ফ্রী হোক আসব!
: ও জীবনেও ফ্রী হবে না , তানহা বলল !
মাহি গাড়ি স্টার্ট করলো!
নিঝুম বলল, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে ! বাসায় গিয়ে ঘুমালে, রাতে প্রোগ্রাম এ তবেই এনজয় করতে পারব।
মাহি বলল,
: কয়টায় যাবি?
: নয়টা নাগাদ!
: আমি ও সেরকম চিন্তা করেছি!
রুবা বলল,
: অপার মেয়ে টা কি সুন্দর করে কথা বলে!
: মাহি চুপ করে আছে।
: নিঝুম হাসছে! রুবা ও একটু পাগলাটে টাইপের! কি বলে ঠিক নাই!
: মাহি বলল বয়স টাই এমন!
নিঝুম চোখ বন্ধ করলো!
মাহি রুবাকে গলা নামিয়ে বলল,
: কি মেসেজ দিলে এটা ?
: কোথায়?
: আমাকে ?
: ও আচ্ছা আমার অবস্থা তো এমনই এখন!
: তাই , বাসায় গিয়ে এক্সপ্লেইন করবে ঠিক আছে!
: এক্সপ্লেইন করার কি আছে ?
: অবশ্যই আছে আমি শুনব রুবা!
নিঝুম চোখ বন্ধ করে ওদের কথা শুনছে । মাহি গলা নামিয়ে রুবার কাছ থেকে কি জানতে চাইছে!
: আমার তো মনে হচ্ছে এই গান টা গাওয়া টাই ভুল হয়েছে , মাহি বলল।
: তা কেন হবে , কিছু গান কারো জীবনের সঙ্গে মিলে যায় !
: রুবা এভাবে বলো না আমার কষ্ট হয় !
: তুমি কেন কষ্ট পাচ্ছ ।
: আচ্ছা ঠিক আছে বাসায় গিয়ে বলব কেন কষ্ট হয়!
রাস্তায় জ্যাম ছিল না ওরা বারিধারা হয়ে গুলশান চলে এলো ! নিঝুম কে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়ে দুজন বাসায় চলে আসলো।

রুবা এত টায়ার্ড ছিল, যে ড্রেস চেঞ্জ না করেই বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে গেল । সুইমিং পুলে ঝাঁপাঝাঁপি করেই ক্লান্ত রুবা !
মাহি আজকের দিন টার জন্য রিয়া আপুকে থেঙ্কস লিখে ইনবক্স করলো। সবচেয়ে ভালো এনজয় করেছে রুবা আর ছোট গুলো।
মাহি শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছে ।
হঠাৎ অপার ইনবক্স করছে ! সে অবাক হয়ে খেয়াল করলো তার সুইমিং পুলের ছবি কয়টা !
মাহি তো পুরোই হতবাক এই মেয়ে তার ছবিও তুলেছে !
একটু পর রিসোর্ট এ থাকা মাহির আরো কিছু এলোমেলো ছবি !
মাহি কি বলবে বুঝতে পারছে না ! এই এঠারো বছরের পিচ্চি মেয়ে এখন তাকে নিয়ে কি শুরু করলো !
রুবাকে বলতে হবে বিষয় টা ! নিঝুমের বিষয় টা গোপন রেখেছে কারণ রুবা তাঁর জীবনে আসার আগে নিঝুম তাঁর জীবনে ছিল এইটা ওর না জানলেও চলবে কিন্তু এই মেয়ে এখন যা করা শুরু করেছে রুবাকে বলতে হবে । কবে আবার রুবা কি শুনে ওকে ভুল না বুঝে!
মাহি ঘড়ির দিকে তাকালো , সন্ধ্যা হয়ে গেছে কখন!
রুবা উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে! মাহি রুবার চুলে হাত রাখলো!
: রুবা উঠো ! আমাদের যেতে হবে !
রুবা নড়াচড়া করছে না !
মাহি আবার ডাকলো, এবার ওর কানের কাছে মুখ এনে ডাকলো , ওঠো!
রুবা মাহির দিকে পাশ ফিরল !
: খুব টায়ার্ড লাগছে!
: যাবে না ?
: যাব ,আর একটু শুয়ে থাকি !
: তোমার সঙ্গে কথা আছে একটু শুনবে , মাহি বলল?
: রুবা মাথা তুলে তাকালো, সিরিয়াস কিছু?
: হ্যাঁ।
: রুবা বেডে হেলান দিয়ে বসলো , বলো!
: তুমি আজ মেসেজ যে করলে , গানের ঐ লাইনটা লিখে তোমার জীবনে র সঙ্গে মিল কেন বললে ?
: ও আচ্ছা এই সিরিয়াস সাবজেক্ট তোমার ?
: অবশ্যই সিরিয়াস সাবজেক্ট, মাহি বলল!
: আমি তো সেরকম একটা মানুষ যে কাউকে কোন আশা দিতে পারি না , এই যে তুমি এবং মা আমাকে এত আদর, ভালোবাসা দিয়ে ভরে দিচ্ছ, বিনিময়ে আমি কি দিচ্ছি তোমাদের ?
: বুঝলাম না রুবা কি এসব চিন্তা করো ! তুমি জানো না ,তুমি ভালো থাকলে আমি ভালো থাকি, মা ভালো থাকে , আমরা সবাই ভালো থাকি! প্লিজ রুবা উল্টো পাল্টা ভেবে মন খারাপ করো না ।

আমার কাছে আসো রুবা ,তুমি কি জানো তোমার দিকে তাকালে মনটা ভালো হয়ে যায় ! সারাদিন পর যখন বাসায় আসি প্রথমে ঢুকেই তোমার খোঁজ নেই , তুমি ঘুমিয়ে থাকলেও তোমার মুখটা দেখতে ভালো লাগে! তারপরও তুমি বলবে তুমি কিছু দিচ্ছ না আমাকে ? তুমি তো অনেক কষ্ট ভুলিয়ে দিচ্ছ!
রুবা মাহির কোলের কাছে মাথা রাখলো!
: আমার মন খারাপ লাগে মনে হয় আমি কাউকে কোন সুখ দিতে পারি না!
মাহি ওর কানের কাছে মুখ এনে বলল, সুখের খোজ আমি নিজেই খুঁজে নিব তুমি চিন্তা করো না!
এখন ওঠো যাও রেডি হ‌ও।
রুবা উঠে গেল রেডি হ‌ওয়ার জন্য!
মাহি ভাবছে , তুমি নিজে থেকে যেদিন আসবে রুবা, সেদিন আমি তোমার মাঝেই সব সুখ খুঁজে নিব।
রুবা ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে বলল, কি পড়ে যাই বলোতো? শাড়ি পড়ব নাকি সেলোয়ার কামিজ‌?
: তোমার ইচ্ছা! যা খুশি পড়ো আমি বাবার সাথে কথা বলে আসছি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও প্লিজ। মাহি রুম থেকে বের হয়ে গেল!

রুবা কালো জমিনে ইট রঙের সূতার কাজের একটা জামদানী শাড়ি পড়লো! কালো ব্লাউজ! গলায় , কানে তার পছন্দের তাহিতিয়ান ব্লেক পার্ল এর সেট হাতে গোল্ডের চূড়ি ! চুল গুলো সাইড করে ঘাড়ের কাছে একটা খোঁপা করলো।
হালকা একটু মেক‌আপ , চোখে কাজল আর ঠোঁটে ন্যুড সেইড লিপস্টিক!
ও রেডি হয়ে বসে আছে মাহির খবর নেই! মোবাইল হাতে নিল ফোন দেয়ার জন্য, তখন ই মাহি দরজায় নক করলো!
: খোলা আছে!
: ঘরে ঢুকেই মাহি রুবার দিকে তাকিয়ে বলল , আজ যাওয়ার প্ল্যান ক্যানসেল!
: রুবা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল কেন , কি হয়েছে , এত কষ্ট করে রেডি হলাম!
মাহি কাছে এসে বলল, এত সুন্দর লাগছে তোমাকে আমিই দেখি আর কারো দেখার কি দরকার !
: ও দুষ্টামি , আমি ভাবলাম কোন সমস্যা রুবা বলল!
: আমার জন্য তো সমস্যা ই, সবাই আমার ব‌উ এর দিকে তাকিয়ে থাকবে!
: কেউ তাকায় না এসব তোমার ভাবনা যাও রেডি হ‌ও!
: তুমি আমার প্রিয় ব্ল্যাক কালার পড়েছো আমিও ব্ল্যাক শার্ট পড়ি তাহলে , যদিও ম্যাচিং ব্যাপার টা কেমন কেমন যেন লাগে!
: তাহলে পড়ো না , রুবা বলল!
: আজকে পড়ব , বলে মাহি ব্ল্যাক শার্ট আর গ্রে কালারের প্যান্ট বের করলো।
রুবা এই বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে দেখেছে শিহাব, মাহি দুই ভাই ব্রান্ডেড জিনিস ছাড়া ব্যবহার করে না ! ঘড়ি থেকে জুতা , পারফিউম থেকে শার্ট, বেল্ট সব ব্রান্ডেড হতেই হবে ! রুবাকেও শিহাব সেভাবে সব কিনে দিত। দুই ভাইয়ের মধ্যে মাহি সবচেয়ে বেশি পশ । নিজের সব নিজে গুছিয়ে রাখে, কখনো সে এলোমেলো থাকে না !
রুবা ওর আলমারি খুললে মুগ্ধ হয়ে যায় সব কতটা গোছানো দেখে।
মাহি পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে গেল । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রুবাকে ডাকলো এদিকে এসো!
দুজন পাশাপাশি দাঁড়ালে মাহি বলল,
: দেখোতো তোমার সঙ্গে মানিয়েছে কিনা ?
: রুবা বলল, আগে দেখো আমাকে তোমার সঙ্গে মানিয়েছে কিনা ! আমি তোমার থেকে যথেষ্ট হাইটে কম !
: রুবা ফাইভ সেভেন বাংলাদেশের কয়টা মেয়ে হয় বলো তো?
: কিন্তু তুমি তো সিক্স তাই না !
: না সিক্সে র কম । ভাইয়া ছিল সিক্স!
: রুবা বলল হুঁ।
মাহি স্যু পড়তে পড়তে বলল, আজ নিঝুম বলছিল আমি নাকি তোমার কাছ থেকে সৌন্দর্য ধার নিচ্ছি!
: রুবা বলল, হ্যাঁ আজকে অপার নামের রিয়া আপু র ননদ টাও আমাকে বলল, আপনার বর কিন্তু গুড লুকিং এন্ড হ্যান্ডসাম।
: মাহি বলল, তোমার মেজাজ খারাপ হয়নি অন্য কোন মেয়ের মুখে এই কথা শুনে ? মাহি রুবার দিকে তাকালো!
: কেন মেজাজ খারাপ হবে ও তো তোমার প্রশংসা করলো!
: ও আচ্ছা। মাহি মনে মনে ভাবছে ওর সব কথা শোনার পর তোমার রিয়েকশন নিয়ে আমি চিন্তিত রুবা!
: চলো রুবা বের হ‌ই!
: চলো । মা কে বলে যাই।
: মা বাসায় নেই ।
: ও তাহলে বের হ‌ই ।
: নিচে নেমে ওরা বাবার সঙ্গে দেখা করে বের হলো।

রিয়াদের বাসার লিফটের সামনে নিঝুমের সঙ্গে দেখা। নিঝুম মুগ্ধ হয়ে গেল দুজনকে দেখে। মনে মনে বলল, অপার আসলে ঠিকই বলেছে মাহি যেন আলো ছড়াচ্ছে চারদিকে । আর রুবার সঙ্গে কি সুন্দর লাগছে দুজনকে। যেন মেইড ফর ইচ আদার।
নিঝুম রুবাকে দেখে বলল, ইউ আর গর্জিয়াস এজ অল‌ওয়েজ।
: নিঝুম আপু একা একা শাড়ি পড়েছি !
: নিঝুম বলল, তাই ?
: হুঁ ইউটিউব দেখে !
: নিঝুম হেসে দিল ,ভালোই তো! আজকাল মানুষ ডাক্তারি করে ফেলছে ইউটিউব দেখে শাড়ি তো কিছুই না।
: হাসলো তিনজন।
ডাঃ রিয়াদ এবং ডাঃ শাহানার নতুন ফ্ল্যাটে মাহিদের এবং রিয়াদের ক্লাস মেট দের বিশাল গেট টুগেদার।

নিঝুম বলল, তোরা ঢুকে যা আমি একটা কল করে আসছি।
মাহি বলল ঠিক আছে!
নিঝুম মাহি রুবার সঙ্গে একসঙ্গে যেতে চাইছে না। সবাই ওর আর মাহির ব্যাপার টা জানে! ওর আন‌ইজি লাগছে আজ। যেহেতু রুবা ও আসছে।

রুবা আর মাহি একসঙ্গে রিয়াদের বাসায় ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে সবাই ওদের দিকেই মনোযোগ দিল। যদিও রুবার জন্য নতুন নয় সারাজীবন ও যেখানে ঢুকেছে সবাই ওকে এক নজর হলেও তাকিয়ে দেখেছে। রিয়াদ মাহি আর রুবাকে নিয়ে সবার সামনে এগিয়ে গেল।
মাহি সবার সঙ্গে রুবাকে পরিচয় করিয়ে দিল।
এখানে উপস্থিত সবাই মাহি আর নিঝুমের ব্যাপার টা জানে এই প্রথম মাহি রুবাকে নিজের বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল নিজের স্ত্রী হিসেবে।

রুবা কে নিয়ে শাহানা নিজেদের রুমে গেল।
নিঝুম ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে নিয়াজ এলো‌ কাছে !
মাহি দূর থেকে দেখছে ওদের। মনে মনে বলছে , নিয়াজ আজ তোমার জন্য দারুন সুযোগ । কাজে না লাগাতে পারলে আর পারবে না।
মাহি আর নিয়াজ চোখাচোখি হতেই , মাহি একটা স্মাইল দিল যার অর্থ বেস্ট অফ লাক।

নিঝুম তার বান্ধবী আর ক্লাসমেট দের সঙ্গে বসে গল্প করছে। মাহি ইদানিং এই আড্ডায় থাকে না । সেখানে রুবা এবং মাহির প্রসঙ্গ এলো যথারীতি।
ওদের এক ক্লাস মেট নিঝুম কে উদ্দেশ্য করে বলল,
: আজ মাহির ব‌উ কে দেখে বুঝলাম রে নিঝুম কেন তোর কপাল পুড়লো। এত সুন্দরী ও মানুষ হয়!
: নিঝুম কিছুটা বিব্রত বোধ করছে।
: দুজনকে মানিয়েছে দারুন।
হঠাৎ নিয়াজ বলল, এসব কথা এখন নিঝুম কে শুনিয়ে কি লাভ?
রবিন বলল, আমি একদিন ডিউটিতে মাহির ব‌উ হাতের ফ্রেকচার নিয়ে আসছে আমাকে ধরতেও দেয় নাই মাহি । অবশ‌্য এমন সুন্দরী ব‌উ আমার থাকলে আমিও এই কাজ ই করতাম বলেই হাসাহাসি করছে ওরা। পরাগ নামের ওদের এক ক্লাসমেট বলল,
আমি যতদূর জানি উনি মাহির ভাবি ছিলেন , ভাই মারা যাওয়ার পর মাহির ফ্যামিলি মাহিকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিল !
রবিন বলল,
: মাহির মত গুড লুকিং , ক্যারিয়ার ব্রাইট ডাক্তার, ফ্যামিলি স্ট্যাটাস যার ঈর্ষণীয় এরকম সুন্দরী না হলে কি বিয়ে করতো বল ! এরকম সুন্দরী র দুই নাম্বার কেন আমি তো তিন চার নাম্বার বর হতেও রাজি রে দোস্ত!
নিয়াজ হঠাৎ বলে ফেলল,
: ছিঃ ছিঃ তোরা না মাহির ফ্রেন্ড ! নিঝুমের ফ্রেন্ড ! তোরা এভাবে কিভাবে কথা বলছিস।
নিঝুম বলল,
: সে জন্যই মাহি ইদানিং তোদের এড়িয়ে যায়।
: চলো নিয়াজ এরা এখানে থাকুক আমরা যাই।

নিয়াজ নিঝুম কে বলল, আমার মনে হয় তোমার মাহির ওয়াইফের কাছে থাকা উচিত । কারণ মেয়েদের ওখানেও উনাকে নিয়ে এরকম কথা হবে না এর কোন গ্যারান্টি নাই।
: নিয়াজ তুমি ঠিক বলেছো। নিঝুম রুবাকে তার কাছে ডেকে নিয়ে আসলো।
নিয়াজ , নিঝুম আর রুবা বসে গল্প করছে । মাহি ইচ্ছা করে দূরে সরে র‌ইলো!

খাওয়া দাওয়া শেষ হচ্ছে যখন রুবা দেখল তার গাইনোকলজিস্ট ডাঃ সুরাইয়া এসেছেন।
তিনি রিয়াদ আর শাহানার সঙ্গে দেখা করেই চলে যাচ্ছে।
রুবা নিঝুম কে বলল,
: আপু আমি একটু ডাঃ সুরাইয়া র সঙ্গে কথা বলব তুমি আমার সঙ্গে চলো প্লিজ।
: চলো ম্যাম তো সামনেই আছে।
নিঝুম গিয়ে ডাঃ সুরাইয়ার কাছে বলল ব্যাপার টা।
রুবা, নিঝুম কে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে ডাঃ সুরাইয়া র সঙ্গে কথা বলা শুরু করলো ।

মাহি দরজার পাশে এসে দাঁড়ালো ও ঢুকার আগেই শুনতে পেল রুবা বলছে,
: ম্যাম আপনি সত্যিই করে বলবেন প্লিজ , আমি কি কখনো মা হতে পারবো ?
: কেন পারবে না ! অবশ্যই পারবে ! তুমি তো সব দিক দিয়েই পার্ফেক্ট আছো রুবা!
: তোমাদের কি খুব জলদি বেবি নেয়ার প্ল্যান ? মাহি প্রেসার দিচ্ছে ?
: না ম্যাম ওর প্ল্যান নেই আমি আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি কে বেঁচে থাকার একটা বড় আনন্দ দিতে চাই এবং খুব জলদি!
: তুমি মাহিকে নিয়ে আসো একদিন কিছু টেস্ট করে রিপোর্ট দেখি তারপর তোমরা প্ল্যান করো।
ডাঃ সুরাইয়া বলল,
: নিঝুম দেখেছো, মাহি আর রুবা দুটোকে কত সুইট লাগে তাই না, ওদের বেবি টা একটা পুতুল হবে দেখে নিও, আমি বলছি!
: জ্বি ম্যাম!
মাহি কথা গুলো যখন শুনছে যখন, ওর ভেতরে সকল রক্ত কনিকা যেন আলোড়ন তোলা শুরু করেছে। ওর হার্ট যেন ঝড়ে র গতিতে পাম্প করা শুরু করেছে। কোথায় যেন হাজার টা ঘন্টা বেজে যাচ্ছে মনে হলো । রুবা কখনো ওর কাছে নিজের এই ইচ্ছের প্রসঙ্গ তুলেনি! ওর পুরো শরীর কাঁপছে।

ওরা ভেতরের দিকে আসছে দেখে ই মাহি সরে এলো ! রুবার সামনে যেতে চাইছে না সে এই মুহূর্তে।

নিঝুম বলল, রুবা তুমি ভেতরে যাও আমি আসছি‌ বলে নিঝুম ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রইল। ওর ভেতরেও কিছু একটা অবশ করে দিচ্ছে ওকে । ও কল্পনাও করেনি রুবা সুরাইয়া ম্যাম কে এই কথা বলবে ! ও এসব কথার মাঝে থাকবে ! ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
হঠাৎ নিয়াজ এসে পাশে দাঁড়ালো !
: নিঝুম কোন সমস্যা? কেউ কিছু বলেছে আবার তোমাকে ?
: আমি ঠিক আছি নিয়াজ! তোমার কোন সমস্যা না থাকলে তুমি কি আমাকে লিফট দিতে পারবে !
: শিওর নিঝুম।
: তাহলে চলো এখনি বের হ‌ই, আমার একটু তাড়া আছে।
: চলো !
: তুমি যাও আমি আসছি ।
নিয়াজ খুব খুশি মনে নিঝুমের অপেক্ষা করছে।
নিঝুম চোখ মুছে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে ঘরে এসে ঢুকলো।

রুবা মাহিকে খুঁজতে আশেপাশে তাকাচ্ছে। দূর থেকে মাহি দেখে কাছে এসে দাঁড়ালো।
রিয়াদ আর শাহানার সঙ্গে ছবি তুলল দুজন ! ফটোগ্রাফার ছেলে টা নিজ থেকেই ওদের দুজনের ছবি তুলে দিল ! মাহিকে সেই ছবি ফর‌ওয়ার্ড ও করে দিল।
মাহি শুধু বারবার রুবাকে দেখছে আর ওর ভেতরে একটা কাঁপুনি অনুভব করছে। রুবা কত সহজ স্বাভাবিক ভাবে ম্যাম কে বলল কথা গুলো। ওর সঙ্গে তাহলে কেন সহজ হতে পারছে না ! তারপরও মাহির খুব ভালো লাগছে আজ।

রিয়াদ আর শাহানার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওরা বের হয়ে এলো। নিচে নিঝুম আর নিয়াজ কে দেখলো গাড়িতে উঠতে।
মাহির খুব ভালো লাগছে , নিয়াজ সত্যি পরেছে আজকে র দিন টাকে কাজে লাগাতে।

গাড়িতে রুবা কত কথা বলছে, মাহি চুপচাপ শুনছে আর ড্রাইভ করছে।
রুবা বলল, তোমার কি হলো চুপ করে আছো যে?
: টায়ার্ড লাগছে!
: হু আজকে একটা দারুন দিন গেল ‌তাই না ! শুধু আনন্দ আর আনন্দ করেছি!
: মাহি বলল আজ আমার একটা বিশেষ দিন ছিল রুবা ?
: কি বিশেষ দিন ছিল বললে না তো?
: তুমি খুব আনন্দে আছো এটাই আমার বিশেষ দিন!
রুবা হাসছে ।
মাহির মনে হলো এই হাসি সে জনম জনম ধরে দেখে যেতে চায়!

( চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here