যখন_দুজনে_একা ৩৫ পর্ব

0
3355

#যখন_দুজনে_একা

৩৫ পর্ব

মাহি মন থেকে টেনশন দূর করতে পারছে না ! আর রাস্তায় প্রতিটা সিগন্যাল এ এত জ্যাম মেজাজ টাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে।‌ অসহ্য ! এত গাড়ি কেন শহর টাতে !
সে রুবাকে কল দিল!
হ্যালো কি অবস্থা তোমাদের ?
এই তো , তুমি হসপিটালে পৌঁছে গেছো ?
আরে না এত জ্যাম রাস্তায় !
তাহলে ড্রাইভ করার সময় ফোন দিলে কেন , রুবা বলল?
বললাম না স্টিয়ারিং ধরে বসেই আছি নড়াচড়া র উপায় নেই !
আমরা ঠিক আছি , তুমি টেনশন করো না ! রাখি !
ওকে সাবধানে থেকো রুবা!
থাকব ফোন রাখছি!
ফোন রেখে মাহি মিউজিক এর ভলিউম বাড়ালো! চিন্তা করছে আচ্ছা রুবাকে নিয়ে সত্যি সত্যি গ্রীস গেলে কেমন হবে ! ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশে ভাইয়ার সাথে গেছে কিন্তু গ্রীস যায়নি , গেলে ও খুব আনন্দ পাবে! দেখা যাক কি হয় !
বহু জ্যাম পার হয়ে হসপিটালে পৌঁছাতে মাহির দুই ঘন্টা লাগলো ।গাড়ি পার্ক করেই রুবাকে ফোন দিল,
: রুবা কি করছো?
: এখন সবাই ফুচকা খাচ্ছি, খাবে তুমি?
: না থাক তুমি খাও , আমি চলে এসেছি হসপিটালে ভাবলাম একবার ঢুকে গেলে ব্যস্ত হয়ে যাব, ফোন দেই তার আগেই!
: ঠিক আছি আমরা সবাই, তুমি এরকম বারবার ফোন দিচ্ছ ওরা হাসছে!
: হাসুক ওদের কাজ ই হাসাহাসি করা।
: আচ্ছা রাখি এখন।
: আমি যা যা বলেছি মনে থাকে যেন, মাহি বলল !
: থাকবে থাকবে , রাখছি!
মাহি ফোন রেখে হসপিটালে ঢুকলো! সত্যি সত্যি হসপিটালে ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে গেল। ওর ডিউটি ইমারজেন্সি তে। ইমারজেন্সিতে ডিউটি থাকলে সার্জন দের মাথা খারাপ অবস্থা থাকে। ঘন্টা খানেক ব্যস্ততার পর একটু যখন বসলো সে আবার রুবাকে ফোন দিল,
:রুবা শেষ তোমাদের শপিং?
: না এখনো নিঝুম আপু আসেনি ! রিয়া আপুও আসতে চেষ্টা করছে অফিস থেকে!
: তাহলেই হয়েছে কখন শেষ হয় এই শপিং দেখো, মাহি বলল!
: তুমি আর ফোন দিও না কাজ করো !
: আচ্ছা আচ্ছা রাখছি , বলে ফোন রাখলো মাহি!
রুবার সঙ্গে কথা শেষ করে মাহি নিঝুম কে ফোন দিল! একবার ভাবলো থাক , তারপর ফোন দিয়েই দিল,
: হ্যালো নিঝুম মাহি !
: বল কি অবস্থা?
: তুই গুলশান পৌঁছে গেছিস ?
: অলমোস্ট শপিং সেন্টারের কাছে, তুই নাকি পাগল হয়ে গেছিস রুবাকে ওদের সঙ্গে শপিং এ পাঠিয়ে, বারবার ফোন দিচ্ছিস নিঝুম ঠেস দিয়ে একটা হাসি দিল!
: সেরকম কিছু না , তুই তো আছিস তাহলে আর চিন্তা করব কেন !
: তাই , শুনে ভালো লাগলো!
: নিঝুম তোকে ফোন দিলাম অন্য কারণে , তোর সঙ্গে গাড়ি থাকবে তো ?
: হুম থাকবে , কেন?
: তোরা যেখানে যাবি রুবাকে তোর গাড়িতে উঠাবি , ঠিক আছে ঐ গাড়িতে যেন না উঠে!
: কেন মাহি , ঐ গাড়িতে কোন সমস্যা?
: বাবা কোর্টে গেছে ওরা ভাইয়ার গাড়ি নিয়ে এসেছে, আমি ভুল করছি আমার উচিত ছিল ভাইয়ার টা নিয়ে চলে আসা !
: কেন কি হয়েছে মাহি?
: রুবাকে ভাইয়ার গাড়িতে উঠাতে চাইছি না , ভাইয়া যাওয়ার পর ও ঐ গাড়িতে উঠেনি, ওর অনেক ইমোশন জড়িয়ে আছে ঐ গাড়িকে ঘিরে।
: হুঁ বুঝতে পেরেছি! ঠিক আছে আমি দেখছি!
: একবার ইমোশনাল হলে সামলাতে কষ্ট হয় । কালকে রাতেও অনেক কষ্ট পেয়েছে !
: তুই রুবার অনেক খেয়াল রাখিস !
: রাখতে হচ্ছে ওর সাইকোলজিক্যাল অবস্থা যা তোকে বোঝানো যাবে না রে!
: ও আচ্ছা তুই চিন্তা করিস না আমি রুবার খেয়াল রাখব !
: থেঙ্কস নিঝুম!
মাহি ফোন রেখে কিছুক্ষণ বসে রইল । তখন‌ই রিয়াদ ভাই এসে হাজির !
কি অবস্থা মাহি, তোর তো দেখাই পাচ্ছি না ?
ভাই এত দৌড়ের উপর আছি !
সবাই দৌড়ের উপর আছি রে মাহি !
ভাই কথা বলতে চাইছিলেন , বিষয় কি ?
বলতেছি খাঁড়া , রিয়াদ বলল!
তারপর উঠে গিয়ে ওয়ার্ডবয়ের সাথে কি একটা বলে আবার মাহি র পাশে বসলো।
: রুবা কেমন আছে ?
: ভালো আছে , ভাই!
: আচ্ছা নিয়াজ তোকে ফোন দিসিল মাহি?
: কি বিষয়ে ভাই?
: নিঝুমের বিষয়ে!
: ও কি আপনাকেও ফোন দিয়েছে ?
: হুঁ!
: আমার সঙ্গে দেখা করে কথা বলল গতকাল!
: আমাকে বলল, ভাই আপনি তো নিঝুম মাহি দুজনের সঙ্গেই খুব ক্লোজ এই সেই বলে বলল, সে নিঝুম কে নিয়ে চিন্তা করছে!
: ভাই দেখেন আমাকেও বলেছে নিয়াজ , কিন্তু নিঝুম কেমন জানেন ই তো, আমি এই সাবজেক্ট এর ভেতরে থাকলে জিদ করে আরো নিয়াজের কথা চিন্তা করবে না !
আমি চাই ও লাইফে এগিয়ে যাক ! কালকে নিঝুমকে আমি বুঝিয়েছি এবং সত্যিই ভাই ও আমার কথা মন দিয়ে শুনেছে , এখন দেখা যাক কতটুকু কি বুঝলো!
: সেটাই আমিও চাই রে মেয়েটা ভালো থাকুক , রিয়াদ বলল।
নিয়াজ খুব ভালো ছেলে যদি তাই হয় নিয়াজ ওকে হ্যাপি রাখবে আমার বিশ্বাস মাহি !
: নিঝুমের বড় বোনের বিয়ে , এখন তাই নিয়ে ই ব্যস্ত ও!
: আমাকে বলেছে নিঝুম , সময় রাখতে ঐ দিন !
: হুঁ
: ও ভালো কথা তোকে যে কারণে খুঁজছি মাহি , আগামী শুক্রবার আমার ফ্ল্যাটে র হাউজ ওয়ার্মিং পার্টি সন্ধ্যায় তুই আর রুবা চলে আসবি কিন্তু!
: তাই , কনগ্রাচুলেশন ভাই সব রেডি তাই না !
: আর বলিস না এই নিয়ে ই এই মাসটা দৌড়ের উপর ছিলাম রে!
: ভাই অবশ্যই আমি আর রুবা আসার চেষ্টা করব! ওদের কথার মাঝেই ক্যাজুয়েল্টি পেসেন্ট আসাতে মাহি ওটিতে ছুটলো!

নিঝুম আর তার দলবল শপিং এর চেয়ে বেশি হাসাহাসি তে ব্যস্ত। নিঝুম রুবাকে বলল,
: তোমার বর অস্থির হয়ে গেছে তুমি ওকে রেখে একা এসেছো দেখে!
: আর বলো না নিঝুম আপু আমাকে বাচ্চাদের মত ট্রিট করে !
: নিঝুম হাসলো, ও সারাজীবন এরকম সবার উপরে মাতব্বরি করে!
রুবা হাসছে !
নিঝুম বলল চলো রুবা ওরা স্যান্ডেল এর দোকানে ঢুকেছে আমরাও যাই !
: চলেন!
সবাই স্যান্ডেল পছন্দ করছে! রুবাও বিভিন্ন স্যান্ডেল হাতে নিয়ে কখনো পায়ে দিয়ে দেখছে!
তানহা হঠাৎ রুবার পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
: ভাবি তোমার পায়ে গোল্ডের পায়েল টা কি সুন্দর লাগছে !
: তাই !
: বাহির থেকে কেনা না দেশ থেকে ?
: তোমার ভাইয়া দিল কিছুদিন আগে এখান থেকেই , রুবা একটু লজ্জা পেয়ে বলল!
: অনেক সুন্দর ভাবি!
পাশ থেকে নিঝুম দেখছে । মনে মনে ভাবছে মাহি ও জুয়েলারি শপে ঢুকে এখন !
নিঝুমের ফোনে রিং হচ্ছে ও ওদের কাছ থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো!
নিয়াজ ফোন দিয়েছে,
: হ্যালো
: কেমন আছো নিঝুম?
: হাই নিয়াজ আমি ভালো তোমার কি খবর?
: অসময়ে ফোন দিলাম না তো নিঝুম?
: না সেরকম কিছু না , বলো!
: না অনেক দিন তোমার সঙ্গে দেখা হয় না , তাই ভাবলাম কথা বলে দেখি !
: একচুয়েলি নিয়াজ ডিউটি শেষে এত বেশি টায়ার্ড থাকি পড়তেই ইচ্ছা করে না এমন অবস্থা , আর বড় আপুর বিয়ে সামনে ইনফেক্ট এই মুহূর্তে আমি শপিং এ !
: ও সরি তাহলে ক্যারি অন আমি পরে কখনো ফোন দিব !
: ঠিক আছে কথা হবে নিয়াজ, বাই
ফোন রেখে নিঝুম দোকানে ঢুকে দেখে ওরা স্যান্ডেল কিনেছে কেউ কেউ!
রুবা মামির সঙ্গে কি নিয়ে হাসাহাসি করছে!
সবাই মিলে তারপর দর্জির দোকানে গেল , নিঝুম গায়ে হলুদ এ কি পড়বে সেই সব এর ডিজাইন বুঝিয়ে দিল ।
রুবার মোবাইল এ মাহি ইনবক্স করেই যাচ্ছে!
রুবা ইমোজি ছাড়া আর কিছু রিপ্লাই দিচ্ছে না !
শ্রুতি আর তানহা একবার খেয়াল করল, তারপর রুবার লেগ পুল করলো কতক্ষন !
রুবা একবার রাগ হয়ে মাহিকে মেসেজ পাঠালো আর যদি সে মেসেজ পাঠায় কিংবা ফোন দেয় তাহলে ও বাসায় চলে যাবে সোজা!
মাহি লিখল, সরি!
রুবা ফোন সাইলেন্ট করে ব্যাগে ভরে রেখে দিল!

সারাদিন হৈচৈ আর শপিং শেষে ওরা সন্ধ্যা র পর বাসায় পৌঁছাল! রুবাকে নামিয়ে দিয়ে সাফিয়া বেগম কে সব শপিং দেখালো সবাই!
সাফিয়া বেগম রুবা কে বললেন,
: কেমন দিন কাটলো তোমার?
: খুব ভালো লেগেছে মা এখন খুব টায়ার্ড লাগছে !
: মাহি কে বলে দাও বাসায় চলে এসেছো ও টেনশন করছে।
: জ্বি মা , আপনার ছেলে অনেক টর্চার করেছে বারবার ফোন দিচ্ছিল সবাই এই নিয়ে কি হাসাহাসি!
: ও তোমাকে নিয়ে টেনশন করছিল তুমি তো একা যাও না কোথাও তাই।
: একা কোথায় ছিলাম সবাই একসঙ্গে ছিলাম মামি, নিঝুম আপু ছিল সঙ্গে । ও একটু বেশি বেশি করে আমার খুব রাগ লাগছিল মা!
: আচ্ছা বুঝলাম এখন যাও গোসল করে রেস্ট নাও । হাসলেন সাফিয়া বেগম!
মা আমি রুমে গেলাম বলে রুবা উঠে গেল!
রুমে ঢুকে মাহিকে মেসেজ পাঠাতে গিয়ে দেখে ও আগেই মেসেজ পাঠিয়েছে,
” আকাশ যখন গাইতে বলে বাদলের ই গান
বাতাস তখন ব‌ইতে গিয়েও দেখায় অভিমান, অভিমান……সরি রুবা ”

রুবা আর কিছু লিখলো না শুধু, “সেইফলি রিচজ এট হোম ” লিখে পাঠিয়ে দিয়ে গোসলে ঢুকে গেল!

অনেকক্ষণ লাগিয়ে গোসল করল রুবা ! ওয়াস রুম থেকে বের হ‌ওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওর লিগামেন্ট এর ব্যথা টা একটু একটু করে শুরু হয়ে গেল। ডাক্তার বলেছিল বেশি হাঁটা হাটি করলে বাড়বে । রুবা পেইন কিলার খেয়ে নিল একটা তাড়াতাড়ি। মাহি কে ভুলেও জানানো যাবে না , অনেক কথা শুনাবে ।
ও সোফায় পা উঁচু করে শুয়ে টিভি ছাড়লো, আর মনে মনে বলছে আল্লাহ ব্যথা যেন না বাড়ে প্লিজ!
মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে মাহি তার মেসেজ সীন করেছে!
ফোন দিবে কিনা চিন্তা করলো একবার, রাগ করেছে নাকি? থাক করুক আমার ও আজ অনেক রাগ লাগছে বলে রুবা ফোন দিল না!

একটু পর চিন্তা করলো ফোন না দেই একটা মেসেজ দেই বলে ও লিখল,
” আকাশ যখন ফিরতি পথে মন খারাপের সুর
বাতাস তখন নিরব চিঠি পাঠায় বহুদূর, বহুদূর……

লাইলি বুয়া এসে রুমে ঢুকল! ভাবি আসি ?
: আসো বুয়া!
: একা কি করেন?
: শুয়ে আছি টিভি দেখি!
: আম্মা বলল আপনারে দেইখা আসতে!
: অনেক টায়ার্ড লাগছে তাই শুয়ে আছি!
: ভাইয়া মনে হয় রাতে আসতে দেরি করব।
: নাও আসতে পারে !
: আপনার চুল আঁচড়ে দেই ভাবি?
: দিবা ,দাও !
লাইলি বুয়া রুবার চুল চিরুনি করে দিচ্ছে আর গল্প করছে। একটা সময় বুয়া খেয়াল করলো রুবা ঘুমিয়ে গেছে!
এসি ছাড়া তাই গায়ে একটা কাঁথা দিয়ে দিল, আলো কমিয়ে টিভি বন্ধ করে রুম থেকে বের হয়ে আসল!

মাহি সন্ধ্যা থেকে মারাত্মক ব্যস্ত ছিল একটা বড় এক্সিডেন্ট এর পাঁচ ছয় জন পেসেন্ট এসেছে। ওটিতে ব্যস্ত ছিল, এর মধ্যে এক পেসেন্ট এর অনেক ব্লাড লাগবে ডোনার আনতে আনতে তার ব্লাডের পেসেন্ট তাই সেও ব্লাড দিল । আরো ব্লাড লাগবে আত্মীয়-স্বজন ছুটা ছুটি করছে!
এসব দেখতে দেখতে এখন নার্ভ অনেক শক্ত হয়ে গেছে।
ওর কাজ সামলে বাসার উদ্দেশ্যে বের হতে হতে রাত দশটা বেজে গেছে।
রুবার মেসেজ সে গাড়িতে বসেই দেখলো!

বাসায় আসতে আসতে রাত এগারোটা পার হয়েছে ! ওকে দেখে সাফিয়া বেগম বলল,
: আমি ভেবেছি তুমি রাতে আসবে না !
: মা অনেক ব্যস্ত ছিলাম , ইমার্জেন্সি তে ডিউটি ছিল! রুবা কোথায়?
: খুব টায়ার্ড সে, রুমেই আছে!
: অনেক শপিং করেছে তাই না , মাহি বলল?
: হুঁ সবচেয়ে বেশি আনন্দ করেছে ! তোমার উপর রাগ করেছে তুমি বারবার ফোন দিয়েছো ওরা সবাই ওকে ক্ষ্যাপাচ্ছিল !
: তাই , হাসলো মাহি !
: যাও ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর ডিনার করো !
: গোসল করব মা , তোমরা ডিনার করেছো?
: আমরা করেছি তুমি আর রুবা বাকি !
ঠিক আছে মা রুমে যাচ্ছি বলে মাহি উঠে গেল!

দরজায় নক করে ভেতরে ঢুকলো মাহি ! রুবা সোফায় ঘুমিয়ে আছে ! মাহি ওর কাছে গিয়ে ওর চোখের কাছে ফুঁ দিল !
রুবা গভীর ঘুমে ! হাসলো মাহি , একদিন মার্কেটে ঘুরেই একেবারে শেষ ম্যাডাম !
মাহি নিজের কাপড় বের করে ওয়াস রুমে ঢুকল! বের হয়ে দেখে রুবা তখন‌ও ঘুমাচ্ছে! একবার ডাক দিতে গিয়েও ভাবলো থাক ঘুমাক!
দরজায় নক করছে বুয়া , বাহির থেকে ই বলল
: ভাইয়া খাওয়া দেই ?
: টেবিলে ঢেকে রাখো তোমার ভাবি ঘুমাচ্ছে পরে খাব! তোমরাও রেস্ট নাও আমি লাগলে ডাকব!
বুয়া ঠিক আছে বলে চলে গেল!

মাহি বিছানায় শুয়ে রুবার ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষা করতে করতে নিজেই ঘুমিয়ে গেল!

অনেকক্ষণ পর রুবা উঠে দেখে মাহি বিছানায়, খালি গায়ে ঘুমিয়ে আছে! সে উঠে বসলো।‌পা নামাতে গিয়ে দেখে ভালো ব্যথা লাগছে! তারপরও সে উঠে এলো ! মাহির পাশে এসে বসলো । ওর হাতে ব্যান্ড এইড লাগানো ! কি ব্যাপার ? চিন্তায় পরে গেল রুবা!
রুবা মাহির কপালে হাত রাখলো !
সঙ্গে সঙ্গে ই মাহির ঘুম ভেঙ্গে চোখ মেলে তাকালো !
: কখন এসেছো?
: এগারো টার পর, তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাকি নাই!
: তোমার হাতে ব্যান্ড এইড লাগানো কেন?
: ও এইটা, পেসেন্ট কে ব্লাড দিয়েছি! খুলতে খেয়াল নাই! খুলে ফেলল মাহি টান দিয়ে ।
রুবা ওর পাশে শুয়ে বলল, অনেক টায়ার্ড লাগছিল কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি ই না ! বুয়া গায়ে কাঁথা দিয়ে গেছে! তুমি খালি গায়ে শুয়ে আছো কেন ? টিশার্ট বের করে দিব!
লাগবে না আমার কাছে ই আছে হাতে নিয়ে ই ঘুমিয়ে গেছি! তোমাদের শপিং কেমন হলো?
: অনেক মজা করছি!
: হুঁ আমার উপর রেগে আছো মা বলল!
: অনেক !
: মাহি ওর দিকে কাত হয়ে বলল,কি করলাম আমি আবার?
: এতবার ফোন দিলে সবাই হাসাহাসি করছিল !
:করুক, ওরা এমনই!
: একটা জিনিস দেখাই তোমাকে বলে রুবা উঠে দাঁড়ালো!
তারপর আলমারি খুলে একটা অর্নামেন্টস এর বক্স বের করলো!
মাহি জিজ্ঞাসা করল, কি এটাতে?
রুবা খুলে দেখালো , দুটো গোল্ডের কানের দুল !
মাহি বলল, সুন্দর !
গিফট পেয়েছি, রুবা বলল!
: কে দিল ,মাহি অবাক হয়ে প্রশ্ন করল?
: নিঝুম আপু!
: নিঝুম ! হঠাৎ কেন?
: আমি নিতে চাচ্ছিলাম না ,বলল তোমাদের বিয়ের সময় তো কিছু দেয়া হলো না তোমাকে তাই এখন নিতেই হবে!
আর কি বলেছে জানো ?
: মাহি টিশার্ট গায়ে পরতে পরতে বলল, বলো শুনি?
: বলল,আমি মাহির পাঁচ মাসের বড় তাই তোমাকে গিফট দেয়া আমার দ্বায়িত্ব!
: মাহি শুনে হেসে দিল!
: তাই নিঝুম আপু তোমার পাঁচ মাসের বড় ?
: হুঁ , এই নিয়ে ছোট থেকেই খুব বড়াই করতো আমি কোন দিন পাত্তা দিতাম না ওর মাতব্বরি গুলো!
: আপু তো বলল, মাতব্বরি টা সবসময় তুমি ই করতে বলে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো রুবা!
: এসব বলছে ?
: হুঁ
মাহি হাসলো । মনে মনে বলল, থেঙ্কস গড নিঝুম সব কিছু মেনে নিচ্ছে ! মাহি খুব রিল্যাক্স ফীল করল!
রুবা বলল, চলো ডিনার করবে না ?
হুঁ চলো অনেক রাত হয়ে গেছে! একটা বাজে!

ডিনার করার সময় রুবা বলল, ব্লাড দিলে কাকে?
:একটা এক্সিডেন্ট এর পেসেন্ট ছিল, মাহি বলল!
:খুব খারাপ অবস্থা ?
: মাহি মিথ্যা বলল, না ভালো আছে !
: তোমার ভয় লাগে না এরকম পেসেন্ট দেখলে ?
: আমি ডাক্তার আমি ভয় পেলে চলবে ?
: তাও কথা ! আমি দেখলে বেহুঁশ হয়ে যাব!
: তোমার দেখার কি দরকার ?
: হুঁ এমনি বললাম!
মাহি খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে এলো। রুবা বাটি প্লেট নিয়ে কিচেনের দিকে যাচ্ছে। মাহি বলল, আমি হেল্প করছি!
: না লাগবে না তুমি বসো!
: কেন আমি হেল্প করলে কি সমস্যা!
: আচ্ছা ঠিক আছে এসো!
দুজনে মিলে টেবিল গুছিয়ে রুমে ঢুকলো!
রুবা বলল, নিঝুম আপু আমাকে অনেক আদর করে !
: তাই বুঝি?
: হ্যাঁ আগে থেকেই!
: তোমাকে তো সবাই আদর করে রুবা।
: এটা ঠিক বলছো, রুবা বিছানা গোছাতে গোছাতে বলল!
আজ ছোট মামির বাসায় গেস্ট এসেছে মামি চলে গেছে আগেই।
নিঝুম আপু আর সবাই আমাকে তার গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে মা কে সব শপিং দেখিয়ে তারপর বাসায় গেছে। আমাকে একা আসতে দিলোই না !
: তাই তো হ‌ওয়ার কথা ছিল , মাহি বলল! আমি ওদের ভরসায় তোমাকে দিয়েছি এটা ওদের দ্বায়িত্ব ছিল।
: তবে তুমি আজকে বেশি বেশি করেছো!
: রুবা তুমি বুঝবে না !
: সব তুমি ই বুঝো! নিঝুম আপু ঠিকই বলেছে!
: তোমার নিঝুম আপু সব ঠিকই বলে তাই না আর কি বলেছে?
: কিছু না!

মাহি বারান্দার দিকে যাচ্ছে দেখে রুবা বলল, এখন সিগারেট খেতে গেলে আমি আজ কে তোমার সঙ্গে বিছানায় ঘুমাব না সোফায় ঘুমাব!
মাহি হা হা করে হেসে উঠলো , কি বললা রুবা?
: যা বলেছি শুনছো!
: মাহি রুবার কাছে এসে বলল, হঠাৎ তোমার কি হলো বলো তো আজকে আমার উপর খুব রেগে যাচ্ছো?
: এত সিগারেট খেতে হয় না তুমি না ডাক্তার জানো না ?
: আজ সিগারেট তো খাব‌ই তারপর দেখো কি করি , আর ঘুমাবে তো তুমি আমার পাশেই!
: মোটেই না !
: ইয়েস রুবা ডার্লিং ইয়েস!
: প্লিজ না !
: আচ্ছা ঠিক আছে , তাহলে একটা কথা বলো তো এই কথাটা তুমি কেন বললে , তুমি সোফায় গিয়ে ঘুমাবে ? মাহি ওর হাত ধরে কাছে এনে বসাল।
: রুবা গলা নামিয়ে বলল, সরি !
: সরি বলতে হবে না ! আমার মনে হচ্ছে এটা তোমার কথা না !
: রুবা বলল, আজকে সিগারেট খাওয়া নিয়ে কথা হচ্ছিল তখন নিঝুম আপু বলল, মাহি সিগারেট বন্ধ না করলে তুমি সোফায় গিয়ে ঘুমাবা তাহলেই আর খাবে না!
: ও আচ্ছা নিঝুম আপু বলতে বলছে? আমি তোমার কথা শুনেই বুঝেছি রুবা এরকম কথা কার হতে পারে মাহি বলল ।
: তানহা বলেছে তাও না শুনলে বলবা , তুমি ও খাবে
সিগারেট!
মাহি হো হো করে হাসছে, রুবা এরা তো একদিনে তোমার দারুন ব্রেন ওয়াস করে দিয়েছে !
বুদ্ধি খারাপ না চলো একসঙ্গে একটা সিগারেট ভাগ করে খাই। আমি এক টান দিব তুমি এক টান দিলে। এক কাপে চা ভাগাভাগি করে খেলে ভালোবাসা বাড়ে যদি ,তাহলে এক সিগারেট ভাগ করে খেলে আরো তাড়াতাড়ি ভালোবাসা বাড়বে কি বলো , আমার এখন ভালোবাসার খুব দরকার বলেই মাহি হাসা শুরু করলো ।
রুবা বলল, ছিঃ কোন দিন ও না !
: আরে আসো না দেখি কি হয় !
: অসম্ভব!
মাহি হাসছে। রুবা নিজের জায়গায় শুয়ে বলল , তোমার মাথা খারাপ আমার মাথা তোমার মত মাথা খারাপ না! ঘুমাও!
মাহি রুবার কাছে গিয়ে বলল, তুমি যে কি বলব ?
: বলো!
: তুমি একটা পাগলী !
: রুবা কিছু না বলে তাকিয়ে রইল!
: রুবা তুমি নিঝুম, মানহা- তানহার কথায় কথা বললে কিভাবে ! তুমি তোমার মতো থাকবে তোমাকে তোমার মত‌ই আমি দেখতে চাই ! তুমি অন্য কারো সুরে কথা বললেই আমি বুঝতে পারব !
: আচ্ছা বাবা ঠিক আছে আমি কারো কথা শুনে তোমাকে কিছু বলব না!
: না কারো কথা শুনে তোমার কোন স্বভাবের পরিবর্তন আনবে না । আমি তোমাকে কথা দিয়েছি আমি সিগারেট কম খাব বিশ্বাস করো আমি এক দম কমিয়ে দিয়েছি। প্রমিজ! মাহি রুবার হাত ধরলো।
: আমি তোমাকে বিশ্বাস করছি!
: সো এখন একটা খাব !
: রুবা বালিস তুলে একটা বাড়ি দিল বালিস দিয়ে মাহিকে।
: আরে রুবা আসো ভাগ দিচ্ছি তোমাকে, রাগ করো কেন হাসছে মাহি!
মাহি মনে মনে বলল, রুবা তুমি যে নিঝুমের ডায়লগ দিয়েছো তুমি বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি বুঝছি! নিঝুম সব সময় বলতো, তুই বিয়ের পর সিগারেট খেলে আমি তোর সঙ্গে এক বিছানায় থাকব না সোফায় থাকব! মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল!
: তোমার কি ঘুম পাচ্ছে, রুবা বলল?
: হ্যাঁ সারাদিন অনেক পরিশ্রম গেছে এখন শুধু চোখ বন্ধ করলেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাব!
: আমি অনেকক্ষন ঘুমিয়ে ছি তাই ঘুম আসছে না রুবা বলল !
: তাহলে এক কাজ করি চলো মুভি দেখি !
: থাক কালকে তোমার সকালে উঠতে হবে , তুমি ও ঘুমাও আমিও ঘুমের চেষ্টা করি !
: না থাকবে কেন চলো প্লিজ রুবা!
: আচ্ছা ঠিক আছে!
: কি মুভি দেখবে ?
: তোমার যা ইচ্ছা, রুবা বলল!
: মাহি নেটফ্লিক্স এ মুভি অন করলো।
: মুভি ছাড়ার দশ মিনিটের ভেতরে মাহি ঘুমিয়ে গেছে!
: রুবা কিছুক্ষণ দেখে বন্ধ করে দিলো।
তারপর উঠে গিয়ে আরো একটা পেইন কিলার খেলো‌! পায়ের ব্যথা টা কি কমবে না আজ !
লাইট অফ করে দিয়ে মাহির গায়ে ঠিক করে কাঁথা টা টেনে দিল!
ওর মন খারাপ লাগছে নিঝুম আপুর কথায় মাহিকে সোফায় থাকার কথাটা বলাতে ! আসলেই তো কারো কথায় এভাবে মাহিকে কিছু বলাটা ঠিক হয়নি।
ওর তো আর কোন খারাপ অভ্যাস নেই এত অনেস্ট একটা মানুষ শুধু সিগারেট খায় আর কিছু না !
অবশ্য একদিন ও খুব ভালো করে খেয়াল করেছে মাহি যখন সিগারেট এর ধোঁয়া ছাড়ে ওকে খুব সুন্দর লাগে ! কথাটা ভেবেই নিজেই একা একা হেসে দিল রুবা!
মাহি ঠিক ই বলে আমি পাগল হয়ে গেছি!
রুবা এই কয়েক মাসে খেয়াল করেছে মাহির ঘুম খুব পাতলা। তাই খুব সাবধানে নড়াচড়া করছে সে !
পানির বোতল টা মাহির পাশে রাখা কিন্তু পা এত ব্যথা করছে উঠতে ইচ্ছা করছে না , আবার ওকে ডিঙ্গিয়ে গেলে ঘুম ভেঙ্গে যাবে!
থাক লাগবে না ! রুবা মাহির দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো। তার ঘুম আসছে না এখনো!
ওর হালকা নড়াচড়া তেই মাহির ঘুম ভেঙ্গে গেল ।
: তোমার ঘুম আসছে না এখনো , মাহি বলল?
: না , তোমার ঘুম ভেঙ্গে গেল ?
: চিন্তা করো না আবার চলে আসবে !
: একটা কথা বলব !
: কি কথা ?
: তুমি খুব রাগ করছো আমি তখন নিঝুম আপুর বলা কথাটা বললাম দেখে ?আমার খুব খারাপ লাগছে , চিন্তা করে দেখলাম আসলেই তো অন্য কারো শিখানো কথা আমার তো তোমাকে বলা উচিত হয়নি !
: সেই জন্য তোমার ঘুম আসছে না রুবা ?
: না সেই জন্য না , চিন্তা করে দেখলাম তারপর থেকেই মন খারাপ লাগছে !
: তোমার কথা হলে মন খারাপ করতাম রুবা, এটা তো তোমার কথা না আমি তো জানি এই কথা কে বলতে পারে তাই তোমার উপর রাগ করিনি!
: সরি মাহি !
: মাহি ওর গালে হাত দিয়ে বলল ঘুমাও । তুমি একটা –
হ্যাঁ জানি ‘ পাগল’ , বলে রুবা হেসে দিল !

( চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here