#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_9
তুরানের বাবা-মা দুই জন দুই জনের দিকে তাকাচ্ছে। রুপা কি বাবা মা কে উল্টা-পাল্টা বললো? এই মেয়ের তো বিশ্বাস নেই।
ভাগ্যিস রুপা আইসক্রীম চেয়েছে এটা বাবা-মা শুনে নি। তুরান স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,
-‘কি হলো এভাবে তাকাচ্ছো কেন?’
তুরানের মা গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-‘কিছু না। ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।’
তুরান হাতের ব্যাগটা টেবিলের উপর রাখলো। তুরানের মা রুপা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
-‘এই মেয়ে তুমিও খেতে আসো। না খেয়ে যেয়ো না।’
খাটের দিকে তাকিয়ে আবার বলে,
-‘আরে ওই মেয়েটা কোথায়? খাটের কাছেই তো বসে ছিলো। চলে গেলো?’
তুরানের বাবা রুমের চার পাশে তাকিয়ে বলে,
-‘হ্যাঁ তাই তো। চলে গিয়েছে বোধ হয়।কি অদ্ভুধ মেয়ে।’
তুরান ওয়াশরুমে না গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাবা-মায়ের কথা শুনছে।
-‘রুপার কথা বলছো? অদ্ভুধ টাইপের মেয়ে। মুড হুট-হাট চেঞ্জ হয়। চলে গেছে বোধ হয়।’
-‘মেয়েটার নাম তো জানা হলো না। সারা দুপুর আমার সাথে রান্না করলো,না খেয়ে এভাবে চলে গেলো। খারাপ দেখায় তো।’
এই পর্যন্ত বলে গম্ভীর হয়ে যায় তুরানের মা।
-‘আচ্ছা সত্যি করে বল তো ওই মেয়েটার সাথে তোর কোন সম্পর্ক আছে?’
-‘সত্যি মিথ্যার কি আছে? ওর সাথে যদি কোন সম্পর্ক না থাকত তাহলে কি আমাদের বাবা-মা ডাকত। অত বড় মেয়ে কাকে কি ডাকতে হয় তাও জানে না নাকি?’
তুরান বিরক্ত হয়ে বলে,
-‘বাবা এগুলো কেমন কথা? অবিশ্বাস করো তোমরা আমায়?’
-‘বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের কথা না। প্রেম করলে যে আমাদের জানিয়ে করবি তাও তো না।’
-‘আরে আমার কথা টা তো শুনবা।’
একটু দম নিয়ে তুরান বলে,
-‘এই বাসায় আসলাম এক মাস একুশ দিন হবে মনে হয়। রুপার সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না। কিন্তু মেয়েটা কেমন যেন স্বাভাবিক না। তোমরাও ওর ব্যবহারে যেমন অবাক হচ্ছো আমি সেইম। ও কারো এমন ভাবে কথা বলে মনে হয় ওর সাথে তার কত যুগের পরিচয় ।যাস্ট একুটুই।’
তুরানের মা রেগে বলে,
-‘চুপ কর তুই? আমি কি কানে কম শুনি ভাবছিস? ওই মেয়ে তোর কাছে আইসক্রীম চাইলো কেন?’
থতমথ খেয়ে গেলো তুরান।
-‘আরে বললামই তো মেয়েটা অদ্ভুধ। আজকে ভার্সিটি তে যাওয়ার সময় গেটের সামনে বসে বলে ওর জন্য আইসক্রীম আনতে। আমার কাছে ওর কিসের আবদার ও জানে।’
-‘রাখ তোর ন্যাকামো মার্কা কথা।’
কি একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তে পরলো। বাবা-মা কে বুঝানো দায়।
তুরান ওর মায়ের মাথায় হাত রেখে বলে,
-‘ওই মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক নেই। এবার তো বিশ্বাস করো।’
-‘আমার মাথায় এমন কিছু নেই যে তুই আমার মাথা ছুঁয়ে বলবি আর আমি বিশ্বাস করবো।’
এঁদের সাথে কথা বলে পারার উপায়ান্তর নেই। হতাশ হয়ে বসে পরলো খাটের উপর।
-‘হয়েছে,হয়েছে ঢং করতে হবে না। ফ্রেশ হয়ে খেতে বস। তোর পছন্দের সব খাবার রান্না হয়েছে।’
-‘আজাইরা কথা বলে দিলা তো মুড টা নষ্ট করে।’
তুরানের মা চোখ লাল করে তুরানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-‘আজাইরা কথা তাই না?’
তুরান কথা না বাড়িয়ে ওয়াশরুমে গেলো। রুপার জন্য কি একটা জামেলায় পরলো। উটকো জামেলা একটা। বিরক্ত হচ্ছে রুপার উপর। ভার্সিটি থেকে ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোজা বাসায় ফিরিছে তুরান । আইসক্রীমের কথা ভুলেই গিয়েছে। মনে থাকলেও যেন আনতো সেটাও না।
ফ্রেশ হয়ে এসে বেশ বিরক্তির সাথে খেতে লাগলো তুরান।
-‘আরে এত রাগ দেখাচ্ছিস কার সাথে?’
-‘মা আমি কোথায় রাগ দেখালাম?’
-‘তোর চেহেরা দেখেই বুঝা যায়। ধীরে সুস্থে খা। আচ্ছা যা তোর কথা বিশ্বাস করলাম ,কোন সম্পর্ক নেই ওই মেয়ের সাথে তোর ।’
তুরানের মা আবার আদুরে গলায় বলে,
-‘আমার ছেলে কি আমার মাথায় হাত রেখে মিথ্যা বলতে পারে?’
হেসে দিলো তুরান। বলে ,
-‘এতক্ষনে বুঝলে সেটা?’
খাওয়া শেষ করে রুমে শুয়ে বই পড়ছে তুরান । এতদিন ছাদে বসেই কাটাতো বিকালটা। আজ আর যাচ্ছে না। বাবা-মা আবার সন্দেহ করবে।
তুরানের মা ছাদে কাপড় আনতে গিয়ে রুপা কে দেখে বলে,
-‘এই মেয়ে তুমি দুপুরে না খেয়ে চলে আসলে কেন?’
রুপা পিছন ফিরে হেসে বলে,
-‘আন্টি আপনি? আম্মু এসে পড়ছিলো তাই। আম্মু এসে যদি আমায় বাসায় না দেখে তাহলে বকে।’
এই টুকু থেমে রুপা আবার বলে,
-‘আম্মু বলেছে আম্মুর বয়সী মানুষকে আন্টি ডাকতে।’
ভ্রু কুঁচকে তুরানের মা বলে,
-‘কে কাকে কি ডাকতে হয় তা কি তুমি জানো না?’
রুপা ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-‘উঁহু।’
রুপার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তুরানের মা বলে,
-‘এখন চলো খেয়ে আসবে।’
-‘না,না আন্টি আমি দুপুরে খেয়েছি।’
-‘দুপুরে খেয়েছো তো কি হয়েছে এখন তো বিকাল?’
-‘অন্য আরেক দিন।’
কথা বাড়ালো না তুরানের মা।
-‘আন্টি ভ্যাবলাকান্ত মশাই আজ ছাদে আসলো না কেন?’
রুপার কথার কিছুই বুঝলো না তুরানের মা।
-‘ভ্যাবলাকান্ত মশাই কে?’
রুপা হেসে বলে,
-‘আপনার ছেলে।’
-‘ও তুরানের কথা বলছো?’
-‘হুম। জানেন আপনার ছেলে একটা বদ। কেমন ভাব নেয়! নিজেকে কি ভাবে কে জানে। একা সময় কাটে না তাই একটু ছাদে এসে উনার সাথে কথা বলি। তা আমায় সহ্য করতে পারে না। একটু কথা বললে কি হয়?’
সাবলীল ভাবে কথা গুলো বলছে রুপা । তুরানের মা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে আছে।
-‘এভাবে তাকানোর কিছু নেই আমি আপনার ছেলের সাথে কথা বলতে ছাদে আসি নি।’
রুপা আড়ালে থাকা তেলের বোতল আর চিরুনি তুরানের মা’কে দেখিয়ে বলে,
-‘এই দেখেন মাথায় তেল দিতে আসছি। চুলে বেনী গাঁথবো। এত বড় চুল সামলাতে পারি না। কিন্তু বেনীও গাঁথতে পারি না। পেঁচিয়ে ফেলি।’
তুরানের মা হেসে দেয়। রুপার কথা গুলো বেশ ভালোই লেগেছে বোধ হয়।
-‘আচ্ছা দেও আমি বেনী গেঁথে দিচ্ছি।’
রুপা খোঁপা করা চুল গুলো ছেড়ে দেয়। তুরানের মা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-‘এ তো দেখছি চুল বিলাসী।’
.
রুমে বসে পাঁয়তারা করছে তুরানের বাবা।
-‘বাবা এত অস্থির অস্থির ভাব কেন?’
-‘তোর মা সেই কখন ছাদে গিয়েছে কাপড় আনতে। কাপড়ও নেই,মানুষও নেই। আমি একটু বের হবো। টাকা রাখতে দিয়েছি তোর মায়ের কাছে।’
-‘কেন টাকা নিজের কাছে রাখতে পারো না?’
তুরানের বাবা হেসে বলে,
-‘তোর মায়ের কাছে টাকা যদি বছরের পর বছর থাকে এক পয়সাও খরচ হবে না বরংচ বাড়বে। ঘরের বউকে একটু অগ্র অধিকার দিয়ে রানী রানী ভাবে রাখতে হয়। নয়ত অশান্তি হয়। মেয়েরা পুরো সংসার আঁকড়ে রাখতে চায়, নিজের অধীনে রাখতে চায়। বিয়ে কর বুঝবি।’
-‘এত ভাবের কথা আমি বুঝি না।’
ছাদ থেকে ফিরছে না মা। নিশ্চয়ই রুপার পাল্লায় পরেছে।
তুরান দ্রুত পায়ে ছাদে গিয়ে থেকে রুপার চুলে বেনী গেঁথে দিচ্ছে তুরানের মা। তুরানের চোখ কপালে উঠে পারে । এই মেয়ে টার আসলেই মানুষের সাথে মিশার অদ্ভুধ পাওয়ার আছে।
তুরান কে দেখেই রুপা বলে উঠে,
-‘এই যে আসছে আপনার ছেলে এখন জিজ্ঞেস করে দেখেন আমার সাথে কুত্তার মত ব্যবহার করে। একটা আইসক্রীম আনতে বললাম তাই আনলো না। সে জন্যই তো দুপুরে না খেয়ে চলে এসেছি।’
রুপার কথা শুনে তুরান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইল। মায়ের সামনে বসে কি বলছে এসব?
তুরান ভাবুক কন্ঠে বলে,
-‘মা ও কি কি বলেছে তোমার কাছে?’
তুরানের মা হেসে বলে,
-‘তোর সব কুকীর্তির কথা ফাঁস করে দিয়েছি।’
তুরান চোখ লাল করে রুপার দিকে তাকিয়ে আছে । রুপা ভয়ে চুপসে তুরানের মায়ের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালো। রুপার মুখে ভঙ্গি দেখে হেসে দেয় তুরান ।
-‘মা তুমি ওর কথা বিশ্বাস করো না তো। আমি ওর জন্য আইসক্রীম আনতে যাবো কেন?’
হাতের চিরুনীটা তুরানের গায়ে ছুঁড়ে মেরে বলে,
-‘একটা আইসক্রীম আনলে খুব ক্ষতি হয়ে যেত তাই না?’
তুরানের মা এবার স্পষ্ট বুঝতে পারলো রুপার হয়ত মানসিক সমস্যা আছে।
-‘তুরান পাগলীটা কে একটা আইসক্রীম এনে দিস তো।’
রুপা তুরানের মায়ের গালে চুমো খেয়ে বলে,
-‘আন্টি আপনি আম্মুর থেকেও ভালো।’
চলবে…