#রংধনুর_স্নিগ্ধতা
#পর্ব_৮
#নবনী_নীলা
আদিল মৃদু হেসে বলল,” আমি তো ভিতরেই ছিলাম।” কিন্তু সেই মৃদু হাসির মাঝে হালকা দুষ্টুমির ছাপ দেখে শিউরে উঠলো স্নিগ্ধা।
” ভিতরে ছিলেন মানে? আপনি এতক্ষণ তাহলে….”, বলতে বলতে লজ্জায় থেমে গেলো সে। শাড়ির আঁচলটা শক্ত করে মুষ্টিবন্ধ করে ফেললো। এবং সারা শরীরে এক শীতল শিহরণ অনুভব করলো।
আদিল এগিয়ে এসে ফিচেল গলায় বলল,” হুম্, আমি এতক্ষন তোমাকেই দেখছিলাম।”
স্নিগ্ধা রাগে দাতে দাত চেপে বলল,” অসভ্য।”
আদিল বুকের কাছে হাত ভাজ করে বললো,” আচ্ছা আমি অসভ্য? আর তুমি যে আমার সামনে শাড়ি বদলে নিলে তার বেলায়?”
স্নিগ্ধা নিচের ঠোঁট কামড়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলো। আদিলের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো তারপর কাপা কাপা বললো,” আমি কি দেখেছি নাকি যে আপনি ভিতরে ছিলেন।”
আদিল ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বললো,” হুম, আমিও তো বেলকনিতেই ছিলাম। এমন কিছু ঘটবে জানলে রুমেই থেকে যেতাম।”
স্নিগ্ধা আস্তে আস্তে চোখ খুলে আদিলের দিকে তাকালো। বেলকনিতে ছিলো মানে? তাহলে কি কিছু দেখেনি। স্নিগ্ধা আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” তার মানে আপনি মাত্র রুমে এসেছেন?”
আদিল এগিয়ে এসে ঝুকে স্নিগ্ধার চোখের দিকে তাকালো তারপর চাপা হাসি দিয়ে বললো,” তোমার কি মনে হয় এর আগে এলে, আমি নিজেকে সামলে নিতে পারতাম? এতটাও ডিসেন্ট হাসব্যান্ড তুমি পাও নি।”
স্নিগ্ধা চোখ পিট পিট করে তাকালো। তারপর মনে মনে বললো,” হ্যা, সেটা তো ধীরে ধীরে টের পাচ্ছি। অসভ্য লোক একটা।” আদিল মৃদু হেসে সোজা হয়ে দাড়ালো তারপর বললো,” জলদি রেডি হয়ে নাও।” তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আদিল চলে যেতেই স্নিগ্ধা বুকে হাত রেখে সস্থির নিশ্বাস ফেললো।
_________
স্নিগ্ধাকে বাড়িতে দেখে স্পৃহা খুশিতে আত্মহারা। মামা বাড়ি থেকে ফিরে এসে সে পুরো ঘটনাটা জানতে পেরেছে। আদিল অভ্র আর স্নিগ্ধাকে বাড়িতে ড্রপ করে গেছে। যদিও আয়েশা খাতুন তাকে রাতে ফিরতে বলেছেন।
অভ্র ফরিদার সাথে খেলতে ব্যাস্ত। স্পৃহা সূযোগ পেয়ে স্নিগ্ধাকে টেনে রুমে নিয়ে এলো তারপর নিজের সামনে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো,” আচ্ছা তুই কি করে এমন সুন্দর একটা জামাই পেলি বলতো? সবাই তো বলছে তোদের নাকি আগে প্রেম ছিল। আসলেই কি প্রেম করেছিস? আমাকে তো বললি না।”
স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে বললো,” হ্যা আমার তো মাথা খারাপ যে আমি ওনার সাথে প্রেম করতে যাবো।”
স্পৃহা আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” নাহ্, তুই মিথ্যে বলছিস। আপু বল না।”
স্নিগ্ধা মলিন চোখে তাকিয়ে রইলো। কি যন্ত্রণায় পড়া গেলো। স্নিগ্ধাকে স্পৃহা আরো বললো,” যাই বলিস। এমন সুন্দর মতোন জিজু পেয়ে আমি কিন্তু অনেক খুশি। কালকে সেতু আর মিলা আসবে। জিজুকে দেখতে।”
স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে তাকালো তারপর বললো,” দেখতে আসবে মানে? উনি কি শোপিস যে দেখতে আসবে?”
স্পৃহা মিট মিট করে হেসে বলল,” কেনো তোর কি হিংসে হচ্ছে?”
স্নিগ্ধা এইবার কড়া চোখে তাকালো। স্পৃহা ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বললো,” আচ্ছা সরি। রাগ করিস না। কিন্তু ঐ বাচ্চাটা? বাচ্চা হয়ে গেলো কবে তোর? সবাই তো অবাক এমন খবরে।”
স্নিগ্ধা চুপ করে আছে। স্পৃহা বক বক করছে। মাঝে মাঝে সে ভাবে এরা কি করে আপন বোন হলো। দুজনেই দুজনের সম্পূর্ন বিপরীত। স্পৃহা বক বক করে আজ তার কানের বারোটা বাজবে সেটা খুব ভালো করেই টের পাচ্ছে সে।
আদিল শাশুড়ির কথা মতন রাতে এই বাড়িতে ফিরলো। স্নিগ্ধার বাবা এতক্ষণ তার সাথে কথা বললেন। স্নিগ্ধার বাবার সাথে কথা বলে আদিল যা বুঝলো সেটা হলো লোকটা শান্ত সভাবের। তার মানে স্নিগ্ধার এমন চুপচাপ সভাব সে তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছে।
আদিল কথা শেষে স্নিগ্ধার রুমে যাবে এই সময়ে স্পৃহা নীচে নামছিলো। আদিলকে দেখে থমকে গিয়ে বললো,” আপনি আবরার ফাইয়াজ মানে আমার জিজু?”
আদিল মাথা নেড়ে বললো,” হুম?”
স্পৃহা হেসে উঠে বললো,” আমি আপনার একমাত্র শালিকা।”
আদিল মনে করে বললো,” তোমার নাম স্পৃহা, রাইট? হুম শুনেছি। তা কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
স্পৃহা গাল ফুলিয়ে বললো,” নিচে যাচ্ছি। কি করবো বলুন? আপনার বউটা এতো পাজি। আমাকে রুম থেকেই বের করে দিলো। বলছে আমার কথা শুনে তার নাকি মাথা ব্যাথা করছে।”
স্পৃহার অভিযোগ শুনে আদিল হেসে ফেললো তারপর বললো,” আচ্ছা আমি তাহলে গিয়ে দেখে আসি।”
স্পৃহা নিচে নেমে যেতে যেতে বলল,” হ্যা, দেখে আসুন আর কষ্ট করে একটা মাথা ব্যথার ট্যাবলেট খাইয়ে দিবেন।” বলতে বলতে স্পৃহা নিচে নামলো।
জিম ড্রয়িং রুমে বসে নিজের কাজে ব্যাস্ত ছিল কিন্তু এই মুহুর্তে তার ভীষণ বিরক্তি লাগছে। এই বাড়ির কাজের মেয়ে ফরিদা চা নিয়ে এসে তখন থেকে আজে বাজে বক বক করছে। জিম সেসব কথার কোনো উত্তর দিচ্ছে না। হটাৎ ফরিদা বললো,” আফনে অনেক সুন্দর। আমি টিভিতে সিআইডি দেখি ঐখানে লোকেরা এমন কোর্ট টাই পইরা থাকে।”
জিম এমন মন্তব্যে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। ফরিদার পিছন থেকে স্পৃহা বলে উঠলো,” তাই নাকি। ফরিদা আপা? কথাটা তো মাকে জানাতে হচ্ছে।”
ফরিদা ভুত দেখার মত করে পিছনে তাকালো। তারপর স্পৃহার কড়া দৃষ্টি চোখে পড়তেই সঙ্গে রান্না ঘরে ছুটে গেলো। জিম তার সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে এক পলক তাকালো তারপর আবার নিজের কাজে মন দিলো।
স্পৃহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কে এই লোকটা পুরো সালমান খানের বডিগার্ড ছবির বডিগার্ড সেজে বসে আছে। পার্থক্য শুধু ফিগারটা নরমাল। স্পৃহা একটা ভ্রু তুলে বললো,” এই যে কে আপনি?”
জিম স্পৃহার দিকে না তাকিয়েই বললো,” আমি আবরার ফাইয়াজের পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্ট।”
স্পৃহা চকিত হয়ে তাকালো। তারপর জিমের একদম সামনে বসে পড়লো তারপর বলল,” তার মানে আপনি সব জানেন?”বলেই জিমের সামনের ল্যাপটপটা টেনে নিয়ে গেলো। জিম হতবাক হয়ে তাকালো। তারপর ভ্রু কুঁচকে বললো,” এটা কি হলো?”
স্পৃহা ফিক করে হেসে বললো,” আপনি আমাকে আপু আর জিজুর লাভ স্টোরিটা বলুন। তারপর এইটা ফেরত পাবেন।”
জিম হতভম্ব এ কেমন বিপদে পড়তে হলো তাকে? জিম ভ্রু কুঁচকে বললো,” লাভ স্টোরি মানে?”
স্পৃহা মুচকি হেসে বললো,” লাভ স্টোরি মানে বুঝেন না?”
জিম হাত বাড়িয়ে স্পৃহার কাছ থেকে নিয়ে বললো,” না বোঝার কি আছে?”
স্পৃহা মিট মিট করে হেসে বললো,” তাহলে বলুন।”
জিম ল্যাপটপ অন করতে করতে বললো,” বলার মতন কিছুই নেই। প্রথম দেখায় প্রেম দ্বিতীয় দেখায় বিয়ে, তারপর গল্প শেষ।”
স্পৃহা হা করে তাকালো। এটা গল্প ছিলো নাকি এক কথায় প্রকাশ? স্পৃহা মনে মনে জিমকে বকা দিয়ে উঠে গেলো। এমন রোবট মানব সে এই জনমে দেখেনি।
স্নিগ্ধা রুমে বসে জিমের বলা কথাটা ভাবছে। সবটা মিলিয়ে বিষয়টা যা দাড়ালো সেটা হলো। আদিল সে রাতে একজনকে মেরেছে। হয়তো এর কোনো পুরনো হিস্টোরি আছে।
কিন্তু তাকে বাড়ি বাড়ি থেকে বের হতে দেয় না। তারমানে কেউ কি তার ক্ষতি করবে? কিন্তু কেনো কেউ তার ক্ষতি করতে যাবে। আর এই কয়েকদিনে কে এমন তার ক্ষতি করতে চাইবে। পুরো বিষয়টা বানোয়াট নয় তো? রহস্য কিছু তো আছেই। সেটা এতো সহজ না সে যতটা ভাবছে।
স্নিগ্ধার রূমের দরজায় টোকা পড়তেই সে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। দশ মিনিট না যেতেই আবার চলে এসেছে স্পৃহা। নাহ্, এইবার সে দরজা খুলবে না। স্নিগ্ধা চুপ চাপ গিয়ে বিছানায় বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর আবার টোকা পড়লো। স্নিগ্ধা ভিতরে থেকে বললো,” আবার কি জন্যে এসেছিস?”
কোনো উত্তর না দিয়ে আবার দরজায় টোকা পড়লো। স্নিগ্ধা রেগে গিয়ে উঠে পড়লো। অকারণে ডেকেছে তো সত্যি মার লাগাবে স্পৃহাকে। কিন্তু দরজা খুলে স্নিগ্ধা অবাক হয়ে তাকালো। আদিল তার সামনে দাড়িয়ে। আদিল স্নিগ্ধার ঘরে ঢুকে বললো,” আমি ভেবেছিলাম রাগটা শুধু আমাকেই দেখাও কিন্তু ভুল ভেবেছিলাম। তুমি তো দেখি সবাইকেই রাগের উপর রাখো।”
স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। আদিলকে এখন তার রহস্য মানব মনে হচ্ছে। যার চারিপাশে রহস্যে ঘেরা। কিন্তু কোনোটাই স্পষ্ট নয়।
[ #চলবে ]