রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ। [১২]

#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১২]

সন্ধ্যা সাতটার মধ্যেই আরাভের দেওয়া ঠিকানায় এসে পৌঁছায় দিগন্ত। কলিং বেল বাজাতেই তাহমিদ এসে দরজা খুলে দেয়। তারপর দিগন্তকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। দিগন্তকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে তাহমিদ আরাভকে ডাকে। আরাভ এসে দিগন্তের পাশে বসে ওকে ওয়েলকাম জানিয়ে তাহমিদকে বলে চা দিতে। দিগন্ত এমনিতেই এই কেইসটা নিয়ে ঝামেলায় আছে। গোটা একটা দিন কেটে গেলো এখনো পর্যন্ত কোন ক্লু পাইনি সে। এমনকি এই কেইসটা কোথা থেকে শুরু করবে সেটাও বুঝতে পারছে না। অধৈর্য হয়ে পরছে সে।বিরক্ত মুখ করে আরাভের দিকে তাকাতেই আরাভ মৃদু হেসে বলে,

” এত অধৈর্য হলে চলবে! ডিটেকটিভ। শান্ত হয়ে বসুন।”

দিগন্ত আর কিছু বললনা। তাহমিদ এসে দিগন্তকে চা দিয়ে ওর পাশেই বসে পরে। তারপর একে একে রেদওয়ান তুহিন এসে বসে দিগন্তের পাশে। দিগন্ত ভ্রু কুচকে কিছুটা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো আরাভের দিকে। আরাভ বুঝতে পারছে দিগন্তের মনে কি চলছে। তাই সে চোখের ইশারায় দিগন্তকে শান্ত হয়ে বসতে বলে নিজে উঠে দাঁড়ালো। সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
” আমি আসছি।”

” কোথায় যাচ্ছিস? প্রশ্ন করলো তুহিন।

” এই ডিটেকটিভের মতো আরো একজন আমায় সন্দেহ করছে। তার সন্দেহ দূর করাটা ভীষন দরকার।” আরাভ গিয়ে ভূমির রুমে নক করলো। ভূমি দরজা খুলে দিতেই আরাভ ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এই ড্রেসটা কেনার আগেও ভাবেনি ভূমিকে এতটা সুন্দর লাগবে এই ড্রেসে। তবে এখন মনে হচ্ছে আরাভের ড্রেস কেনাটা সার্থক হয়েছে। তারপর সদ্য শাওয়ার নিয়েছে ভূমি। মাথার চুল বেয়ে টিপটিপ পানি পরছে ভূমির গাল বেয়ে। এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো ভূমির গলায়। বাদামি তিলের উপর বিন্দু পরিমান পানি দেখেই আরাভের তৃষ্ণা যেন বেড়ে গেল। শুকনো ডুক গিলে সে। তারপর নিজেকে শান্ত করে ভিতরে প্রবেশ করে। এই অবস্থায় ভূমিকে সবার সামনে নেওয়া ঠিক হবে না। তাই সে নিজে টাওয়াল দিয়ে ভূমির মাথার চুল মুছে দেয়। তারপর একটা উড়না দিয়ে মাথায় ডেকে ভূমিকে নিয়ে ড্রয়িংরুমের আসে। এখানে ভূমিকে দেখে অবাক দিগন্ত। যেহেতু আরাভের সাথে আছে তাই কোন প্রশ্ন করলো না। আরাভ ভূমিকে নিয়ে একপাশে বসে। তারপর দিগন্তের দিকে একপলক তাকিয়ে প্রশ্ন করে,

” ডিটেকটিভ, আপনার কি প্রশ্ন আছে সেটা করতে পারেন।”

দিগন্ত একবার ভূমির দিকে তাকায়। তারপর বলে,
” দেড় বছর আগে আপনি যে কলেজ থেকে বহিষ্কার হয়েছেন আবার কেন সেই কলেজে জয়েন করলেন।”

” এর একটাই কারন। সত্যিটা খুঁজে বের করা।”

” ভূমির ভয়ান অনুসারে আপনি আগে থেকেই জানতেন দিয়ার মৃত্যর কথা সেটা কিভাবে?”

” একটা গল্প শুনবেন ডিটেকটিভ। চলুন আপনাকে একটা গল্প শুনাই। এখানেই আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন।” আরাভ ভূমির দিকে একপলক তাকিয়ে বলতে শুরু করে।

” আজ থেকে প্রায় আড়াইবছর আগের কথা। তখন আমি মাত্র কলেজে জয়েন করেছি। কয়েকদিনের মাধ্যে আমার সকল স্টুডেন্টরা আমাকে পছন্দ করতে লাগলো। তারপর একদিন তারা বায়না ধরলো আমার কাছে পড়বে আমার বাড়িতে। আমি না করলেও ওরা শুনতে নারাজ। সেখানে ছিলো তিনটা ছেলে আর দুটো মেয়ে। সবাই মোটামুটি ভালো স্টুডেন্ট। আমি তাদের পড়াতে শুরু করি। একদিন দেখলাম আমার এক স্টুডেন্ট, ইশান সিগারেট খাচ্ছে। আমাকে দেখে সেটা লুকিয়ে ফেলল। আমিও আর কিছু বলিনি। পরপর এমন হতেই থাকলো তাই একদিন আমি তার কাছ থেকে প্যাকেট সহ সবকটা নিয়ে নেই। সিগারেটের নেশা আমার ও ছিলো তবে সেটা নিত্তান্তই খুব কম। সেদিন ইশানের কাছ থেকে নেওয়া সিগারেট আমি একটা খাই। ভালো লাগে। এর আগে যত সিগারেট খেয়েছি সেগুলোর থেকে আলাদা এক স্বাদ। তিনদিনের মধ্যে পুরো প্যাক শেষ করলাম। তারপর আবার নেশা ধরলো। অন্য সিগারেট খেলাম কোন কাজে এলো না। তাই ইশানের কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে নিলাম। ভাবতেই পারে স্যার হয়ে স্টুডেন্টদের কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে নেয়। কি করবো নেশা ধরেছে যে। তারপর যখন ওর কাছ থেকে জানতে চাইলাম এটা কোন ব্যান্ডের সিগারেট। তখন ইশান বলল, ” এটা আমার এক বড় ভাই আমাকে দেয়।” আমি ওকে বললাম, ” এখন থেকে প্রতিদিন আমার জন্যে এক প্যাক নিয়ে আসবে।” আমি টাকা দিতাম ও সিগারেট নিয়ে আসতো। এভাবেই চলল এক বছর। রোজ আমার এক প্যাক করে সিগারেট লাগতো। না খেলে পাগল পাগল লাগতো। অস্বাভাবিক আচরণ করতাম। তারপর আমার এক বন্ধুকে রক্ত দিতে যেয়ে দেখি আমার রক্তে ড্রা*গ। বিষয়টা ছড়িয়ে পরলো চারিদিকে। আমি তো কোন ড্রা*গ নেইনা তাহলে আমার শরীরে ড্রা*গ এলো কোথা থেকে। আমি সাইক্রিটিয়াসের কাছে কাউন্সিলিং করালাম। সব শুনে সে আমার সিগারেট খাওয়ার উপর সন্দেহ করলো। সন্দেহ আমার ও হলো। তাই সিগাটের একটা টেষ্ট করালাম। রিপোর্ট এলো, সিগারেট এ ড্রা*গস মেশানো। সিগারেট খাওয়া ত্যাগ করলম। তবে নিজের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করলাম। সবার সাথে রুক্ষ ব্যবহার করা, ভাংচুর করা মাথা ব্যাথা নিজেকে পাগল পাগল মনে হতো। ক্লাস নিতে পারতাম। কলেজ থেকে আমাকে অপমানিত করে বহিষ্কার করে দিল। তার কিছুদিন পর ইশানের মৃত্যু। ওর মৃত্যুটাও ড্রা*গ এর কারনে হয়েছে। তখন সবার আঙ্গুল আমার দিকে। যার স্যার ড্রা*গ নেয় তার স্টুডেন্ট ও নিবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমি তো জানি সবটা। আমার সব সন্দেহ দূর করলো ইশানের মোবাইলের একটা এসএমএস। যেখানে লেখা ছিল, ” It’s time to die.” আর নিচে লেখা ছিলো, “DEATH” কোন নাম্বার নেই ডিজিট নেই শুধু একটা নাম, ডেট্থ। আমি চলে গেলাম রিহ্যাবে। তবে আমার মাথায় একটাই নাম চলতো, “DEATH”

” রিহ্যাবে ছয় মাস থেকেছেন কিন্তু বাড়ি ফিরেছেন আট মাস পর। বাকি তিন মাস কোথায় ছিলেন?” প্রশ্ন করলো দিগন্ত।

” মনের দিক থেকে পুরোপুরি ভেঙে পরলেও আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলো ওই একটাই মেসেজ। আবার সেই সময় রিহ্যাবে ক্যারাটে শিখতাম। নিজের শরীর ও স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিলাম। তারপর একটা খবর বের হয়েছিলো, কম বেশী সেটা সবাই জানে।
” একজন পুলিশ অফিসার ইললিগ্যাল কাজের সাথে যুক্ত থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” ওতে ওই ব্যাক্তির বয়ান ছিলো সে কিছুই করেনি। সব কিছু ওই “DEATH করেছে। যদিও তার কাছে কোন প্রমান ছিলো না। তাই তাকে গ্রেফতার ও পরে সাসপেন্ড করে। আমার কাছে এই খবরটাই ছিলো মেঘ নাচাইতে জলের মতো। যেহেতু আমি নিজেই নিজেকে শুধরে নিচ্ছি তাই আমার উপর কোন চাপ ছিলো না। তাই গোপনে আমি ওই জৈনক লোকটার সাথে যোগাযোগ করি। লোকটা ছিলো “রেদওয়ান”। রেদওয়ান একজন কম্পিউটার হ্যাকার। সরকারি ত্বত্তাবদানে সে মানুষের কম্পিউটার হ্যাক করে থাকে।ওর কাজ ছিলো ডার্ক নেটের উপর নজর রাখা। সেখানেই পরিচয় হয় তার DEATH এর সাথে। তারপর থেকে সে ডেত্থ এর উপর নজর রাখতো। একাদিন তার মোবাইলে এসএমএস আসলো, “I will destroy you.” আর তারপরেই সে গ্রেফতার।

দিগন্ত অবাক হয়ে তাকালো তার পাশে বসে থাকা ছেলেটার দিকে। আরাভ আবার বলতে শুরু করলো,

” এক অভাগী যেমন অন্য অভাগীর দুঃখ বুঝে তেমনি আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় রেদওয়ান। তারপর আমি রিহ্যাবে বসে কম্পিউটার ইন্টারনেট এর নানা রকমন ইল্লিগ্যাল কাজ কর্ম শিখতে লাগলাম। ছাত্র হিসাবে আমি বরাবরই ভালো তাই অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমি সফল ও হলাম। রিহ্যাবে থেকে বের হয়ে কম্পিউটারের উপর আমি একটা কোর্স শুরু করলাম তিনমাসের। তখন দু একবার আমাকে বিঞ্জান মঞ্চ আমাকে ডেকেছে। আমি সেখানে যেতাম শুধু মাত্র নতুন কিছু জানার জন্যে। তাই তিনমাস পর বাড়ি ফিরেছি। এই এখানে দেখছেন, তুহিন সেও কম্পিউটার হ্যাকার, তাহমিদ আমার ছোটবেলায় বন্ধু একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। ওর বোনের মৃত্য হয়েছে ওই ডেত্থ এর কারনে। আর সোহান সেও একজন হ্যাকার। তুহিন সোহান কোন ইল্লিগ্যাল কাজ করতো না। ডার্ক নেটের উপর কাজ করতো আর সরকারি লোকদের সাহায্য করতো। এরা সবাই “DEATH” এর শিকার। আমরা মোট পাঁচজন। আমাদের পরিচয় অল্পদিনের হলেও আমার লক্ষ একটাই “DEATH”

“DEATH ” চরিত্রটা অদ্ভুত মায়াজাল। ও ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওকে ধরতে আমাদের আরো অনেক পরিশ্রম করতে হবে। আমরা পাঁচজন মিলে একটা হ্যাকিং গ্রুপ তৈরী করি। “Star” গ্রুপ। আমরা অনেকদিন থেকেই Death কে ফলো করার চেষ্টা করছি। তবে ও কি চায় সেটা আমাদের কাছে এখনো স্পষ্ট নয়। সম্প্রতি ওকে অনেক ইল্লিগ্যাল জিনিসপত্র টানজেকশন করতে দেখা যায়। তবে সব কিছুতেই ও মিডিলম্যান হয়ে কাজ করে। তবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশী যেটা টানজেকশন করেছে সেটা হলো tha death element. এটা এক প্রকার ড্রা*গ। তবে বর্তমানের প্রচলিত কোন ড্রা*গসের সাথে এর মিল নেই।”

” আচ্চার,Death এসব করে কিভাবে?” প্রশ্ন করলো দিগন্ত।

” ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে।”

” ডার্ক ওয়েব কি?”

” আমাদের যে ইন্টারনেট রয়েছে তার মাত্র ফোর পার্সেন্ট আমরা সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে থাকি। এটাকে সারফেস ওয়েব বলা হয়। যেটা মূলত গুগোল ক্রোম ইউসি ব্রাউজার বা মোজিলা এর মাধ্যমে যে কোন সময় ব্যাবহার করি। আর বাকি ইন্টারনেটের যে অংশ রয়েছে সেটা হলো ডিপ ওয়েব। এই ডিপ ওয়েবে আরো গোপন ভাবে রয়েছে ডার্ক ওয়েব।ডিপ ওয়ের মূলত গোপনীয়তা রক্ষার জন্যে ব্যবহার করা হয়। সরাসরি ইন্টারনেটের রিসার্চ করলে এটা আমরা পাইনা। কোন নিদিষ্ট লিংকের
মাধ্যমে ডিপ ওয়েবে আমরা কাজ করতে পারি। ই-মেইল রেকর্ড রক্ষা থেকে শুরু করে রিসার্চ ওয়াক এর গোপনীয়তা রক্ষা করা সমস্ত কিছু ডিপ ওয়েবের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ব্যাংক তাদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্যে ডিপ ওয়েব ব্যবহার করে থাকে। এতদূর পর্যন্ত আমরা নরমাল বাউজারের মাধ্যমেই কাজ করতে পারতাম। কিন্তু ডার্ক ওয়েব ক্ষেত্রে নরমাল ব্রাউজার কাজ করে না। ডার্ক ওয়েব শুধু মাত্র (TOR) ব্রাউজার অপেন হয়। এই ব্রাউজারের ওয়েবসাইট ডট ওনিয়ন নামে হয়। আমরা যেমন ডট কম/ডট ইন ব্যবহার করি।

ড্রাক ওয়েবের কোন ব্যাক্তি যখন ওয়েবসাইট এক্সেস করে তখন যে ব্যক্তি ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন বা যার ওয়েবসাইট ভিজিট করছে দুটোর ক্ষেত্রে সঠিক আইপি এড্রেস পাওয়া যায় না। অনেকগুলা আইপি এড্রেসের মাধ্যমে ডার্ক ওয়েব কাজ করে থাকে। আই আসল আইপি এড্রেসকে ট্রাক করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। ফলে যারা ডার্ক ওয়েবে কাজ করে তাদের আসল পরিচয় সামনে আসা অসম্ভব। আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ডার্ক ওয়েবের মাধ্য সমস্ত প্রকার ইল্লিগ্যাল কাজ হয়ে থাকে। ড্রা*গ পাচার অস্ত্র পাচার পর্নোগ্রাফি টেরোরিস্ট কার্যকলাপ সমস্ত আলোচলা হয়ে থাকে এই ডাক ওয়েবে। এককথাশ খুবই ভয়ানক এই ডার্ক ওয়েব। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ যদি (TOR) -এ শুধুমাত্র ওয়েবসাইট সার্চ করার জন্যেও যেয়ে থাকে তাহকে হয়তো তাতে তার নিজেস্ব সমস্ত তথ্য হ্যাক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধরণের dark web বা dark website গুলোকে visit করাটাও কিন্তু অপরাধ (illegal) যার জন্যে আপনার ওপরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।,,,,, [তথ্যসূত্রঃ গুগল]

চলবে,,,,,,,,,

#Mahfuza Afrin Shikha.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here