রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ। [১৪]

#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১৪]

আরাভ ক্লাসে এসে থেকেই দেখছে ভূমির ক্লাসে মন নেই। কখনো গম্ভীর হয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে আবার কখনো রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আরাভের দিকে।আরাভ মাখে মাঝেই লক্ষ করছে। ভূমির সাথে তার দৃষ্টি সংযোগ হওয়ার পরেও দৃষ্টি নামিয়ে নেয়নি। হয়তো কাল রাতের কথার জন্যে রেগে আছে ভূমি ওর উপর। তাই আর কিছু না বলে পড়ানোতে মন দেয়। আড় চোখে মাঝে মাঝে ভূমিকে দেখছিলো সে। ভূমি তখন মাথা নিচু করে বসে ছিলো। ক্লাস শেষে আরাভ ভূমির দিকে একপলক তাকিয়ে বের হয়ে যায়। অফিসরুমে যাওয়ার সময় ভূমিকে একটা মেসেজ করে,
” রেগে আছো?”

মিনিট পাচেক অপেক্ষা করার পরেও ওপাশ থেকে কোন উত্তর এলো না। আরাভ ধরেই নিয়েছে আর কোন উত্তর আসবেও না। তাই মোবাইল পকেটে পুরে অফিসরুমে যায়। পরপর কয়েকটা ক্লাস শেষে আবারও মোবাইল চেক করে। না ভূমির থেকে কোন রিপ্লাই আসে নি। মোবাইল রেখে লম্বাশ্বাস নেয়। বিড়বিড়ায়, ” ডেঞ্জারাস মেয়ে একটা। কি সব চিন্তাভাবনা মাথায় নিয়ে ঘুরে। তুমি যতই রাগ দেখাও তোমার এই ইচ্ছে আমি কোনদিনও পূরণ করতে দিবো না। সরি নিলাদ্রিতা। তোমার জিবন নিয়ে খেলা, সেতো কোনদিনও পারবো না।”

ছুটির শেষে আরাভ নিজের কাজ গুছিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে বের হয়। ও জানে ভূমি আজ ওর জন্যে অপেক্ষা করবে না। হলোও তাই, ভূমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে রিক্সার জন্যে। অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরেও যখন কোন রিক্সা পেলো না তখন ক্যাব বুক করলো। আর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ক্যাব আসার অপেক্ষা করতে লাগলো। তখনি ওর সামনে গাড়ি নিয়ে এসে দাঁড়ায় আরাভ। আরাভ গাড়ির কাচ নামিয়ে বলল,

” চলে এসো। আকাশের অবস্থা ভালো নয় মনে হয় বৃষ্টি নামবে।”

ভূমি যেন আরাভকে দেখলোই না। অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আরাভ মৃদু হেসে গাড়ি থেকে নেমে আসলো ভূমির সামনে।
” আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না?”

” আমি যাব না আপনার সাথে। ক্যাব বুক করেছি।”

” আমার সাথেই যাবে তুমি। কোন ক্যাবট্যাবে নয় ওকে।”

আরাভ ভূমির হাত ধরে ওকে গাড়িতে নিয়ে বসাতে চাইলে ভূমি নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। আর তখনি শুরু হয় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজে চলেছে।একজন সামনে তাকিয়ে অপরজন দেখছে বৃষ্টি ভেজা প্রিয়সীকে। কতক্ষণ দেখেছে জানা নেই। হর্নের শব্দে হুশ ফেরে আরাভের। ভূমির ক্যাব এসেগেছে। ভূমি ক্যাবে উঠবে এমন সময় আরাভ ভূমির হাত ধরে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
” এই শরীর নিয়ে তুমি ক্যাবে যাবে।”

আরাভের চোখ মুখে দুষ্ট হাসি। ভূমির আরাভের হাসির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালো তারপর নিজের দিকে তাকাতেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো। বৃষ্টি ভিজে জামা লেপ্টে আছে শরীরের সাথে যার কারনে শরীরের প্রতিটা ভাজ নিখুঁত ভাবে দেখা যাচ্ছে। দু-হাত সামনে দিয়ে উল্টো দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো ভূমি। আরাভ স্মিত হেসে দুই আঙ্গুল দিয়ে নিজের মুখের পানি সড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে কারতে ক্যাবের কাছে গিয়ে ভাড়া মিটিয়ে দেয়। তারপর ভূমির কাছে এসে ওকে পাজা কোলে তুলে নেয়। আকস্মিক এমন হওয়ার ভূমি ভয় পেয়ে আরাভের গলা জড়িয়ে ধরে। আরাভ মৃদু হেসে বলে,
” ভয় নেয়। এই দেহে একবিন্দু পরিমান রক্ত থাকতে তোমার কোন ক্ষতি-ই আমি হতে দিবো না।”

ভূমি মুগ্ধ দৃষ্টি আরাভের দিকে চেয়ে রইলো। মুখে কিছু বলল না। তবে ওর মনে ভালোবাসার প্রজাপ্রতি হাওয়ায় দুল খাচ্ছে সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্চে।লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারন করছে ভূমির গালদুটো। আরাভ ভূমিকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে অপর পাশে বসলো। ভূমি এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। উড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা। আরাভ হাসলো। গাড়ির পিছনের সিট থেকে নিজের অতি পছন্দের কোটটা এনে ভূমির গায়ে জড়িয়ে দিলো। ভূমি তাকালো আরাভের চোখের দিকে। আর আরাভ ভূমির চোখের দিকে। কোমড়ে শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠলো ভূমি। লাজ্জারাঙা চোখ নিয়ে আরাভের দিকে তাকাতেই দেখলো আরাভের চোখমুখে সেই দুষ্ট হাসি। ভূমি কিছু বলার জন্যে মুখ খুলতেই আরাভ ভূমির অধরো নিজের তর্জনী ঠেকায়। তারপর ভূমির অধোরে নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলল,

” কোন কথা শুনতে চাই না।”
” আরাভ, কি করছো তুমি ছাড়ো কেউ দেখে ফেলবে।”
আরাভ ভূমির কথার কোন জবাব না দিয়ে ভূমিকে টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে ঘাড়ে মুখ ঠেকিয়ে কোমড়ে স্লাইড করতে করতে বলে,

” আদর কারতে জানো নাকি শিখাতে হবে?”
চোখমুখে দুষ্ট হাসি নিয়ে তাকিয়ে থাকে ভূমির দিকে। লজ্জায় ভূমি মাথা নিচু করে ফেলে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। আরাভ আবার বলে,

” আগে বলো জানো নাকি শেখাতে হবে।”
ভূমি মাথা নিচু করে জবাব দেয়,

” এসব কাউকে শেখাতে হয় নাকি। এগুলো তো মানুষ এমনি শিখে যায়।”
আরাভ নিজের মুখটা বাড়িয়ে বলে,

” ঠিক আছে তাহলে এখন আদর করো আমায়।”
ভূমি আশ্চর্য হয়ে আরাভের দিকে তাকায়। তারপর বলে,

” আমি জানিনা। শিখতে হবে।”
“তাহলে শিখিয়ে দিচ্ছি।” এই বলে আরাভ ভূমির দিকে মুখটা আরেকটু এগিয়ে দিতেই ভূমি বলে,
” আরাভ ছাড়ো আমায়। বিয়ে আগে এসব করতে নেই। আমরা বিয়ের পর,,
” শাট আপ ভূমি। আমি জানি আমার লিমিট কতটুকু।”

আরাভ ভূমির কপালে গালে নাকে চোখে চুমু খায়। তারপর ভূমির গলার তিলের দিকে তাকিয়ে শুকনো ডুক গিলে। বিড়বিড়িয়ে বলে,
” তোমার তিলটা বড্ড নেশাতুর, আমি চাইলেও নিজেকে আটকে রাখতে পারছি না। সরি নিলাদ্রিতা।”

ভূমির গলায় থাকা তিলের উপর গভীর ভাবে চুমু দেয় আরাভ। তারপর ভূমিকে ওর সিটে বসিয়ে দিয়ে সিল্টবেল বেধে দেয় অতঃপর নিজের সিল্টবেল ও বেধে নেয়। আরাভ ড্রাইভ করছে আর ভূমি জানালার দিকে তাকিয়ে বাহিরের বৃষ্টি দেখছে। কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পরতেই ব্লাশ করছে বারংবার। আরাভ ভূমির অবস্থা দেখে না হেসে পারে না। ড্রাইভ করতে করতে বলে,

” মাথা থেকে ডেথ এর ভূত নেমেছে নাকি আরো আদর করতে হবে।”

চোখ ছোট ছোট করে আরাভের দিকে তাকায় ভূমি। কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ ফেলে বলে,
” এইজন্যে তুমি,,,,,
” ইয়েস ডার্লিং। সকাল থেকে আমার সাথে কোন কথা বলছো না। কল দিলে রিসিভ করছো না। মেসেজের রিপ্লাই করছো না। শাস্তি তো পেতেই হতো।”
“এটা শাস্তি!”
” না ভালোবাসা বলে এটাকে। বুঝতে পারোনি। আবার করে বুঝাবো।”

ভূমি এবার সিরিয়াস হয়ে বসে। তারপর বলে,
” আমি তোমাদের সাথে থাকলে কি এমন হবে। প্লিজ আমাকে নাও না তোমাদের সাথে। আমিও তোমাদের সাহায্য করতে চাই।”

” কি হবে? দিয়ার অবস্থা দেখে বুঝতে পারোনি কি হতে পারে। এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও। আর আমাকে আমার কাজে মন দিতে দাও। তুমি এসবে জড়ালে আমি মন দিয়ে নিজের কাজ করতে পারবো না। মনটা সারাক্ষণ তোমার কাছে পরে থাকবে। আচ্ছা তুমি কি চাওনা আমি এই কাজে সফল হই।”

” এসব তুমি কি বলছো। আমি চাই তুমি সফল হও। আর ওই ডেথকে তার শাস্তি দাও। অনেক মানুষের জিবন নিয়ে খেলেছে আর নয়।”

” তাহলে তুমি এসবে জড়াবে না। পাগলামি করো না। প্লিজ ভূমি আমার এই কথাটা রাখো।”

ভূমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,
” ঠিক আছে। আমি আর পাগলামি করবো না। তুমি তোমার কাজে সফলতা অর্জন করো।

আকস্মিক ব্রেক করতেই সামনের দিকে ঝুকে পরে ভূমি। ভূমির বাড়ি এসেগেছে। আরাভ ভূমির দিকে তাকিয়ে বলল,
” এই তোমার বাড়িটা আরেকটু দূরে হলে কি ক্ষতি হতো বলতো।”

” কেন?
“না কিছু না। নামবে তো নাকি?”
” বৃষ্টিতে ভিজে যাব।”
” এমনিতেই অনেকটা ভিজেছো। আর এইটুকু রাস্তায় কিছু হবে। বাসায় গিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিবে।”

ভূমি আরাভের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গলা জড়িয়ে ধরলো। তারপর আরাভের অধোরে নিজের অধোর গভীরভাবে স্পর্শ করে বলল,
” তখন এটা বাকি ছিলো।”
আরাভ অবাক চোখে দেখছে তার নিলাদ্রিতাকে। আর ভূমি হাসি মুখে আসছি বলে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। আরাভ ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিজের ওষ্ঠে হাত বুলায় মনে মনে বলে,
” এটা সত্যি ছিলো।”

রুমে গিয়ে ভূমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। লজ্জা লাগছে তার ভীষন লজ্জা লাগছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের লাজ্জারাঙা মুখ দেখে নিজের মনেই হেসে ফেলল। দু-হাতে মুখ চেপে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধকরতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে আরাভের দুষ্টুমি মাখা হাসি

______________________
মনিরুল স্যারের সাথে দেখা করে মাঠের দিকে হাটতে থাকে দিগন্ত। মূলত ডেথকে নিয়েই কথা হয়েছে তার সাথে। যেহেতু মনিরুল স্যার একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার তাই তার কাছ থেকে ডাক নেট সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জেনেছে দিগন্ত। আর মনিরুল স্যার বলেছে সে এই কেইসে সব রকমভাবে সাহায্য করবে। আগামিকাল মনিরুল স্যারকে নিয়ে নিজের অফিসে যাবে দিগন্ত। রফিক মির্জা নিজে তার সাথে কথা বলবে। এসব ভাবতে ভাবতে যখন মাঠের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল দিগন্ত তখন দেখতে পেল মাঠের পাশে একটা ছেলে অপর একটা ছেলেকে পার্সেল দিচ্ছে। দিগন্তের দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণ হলো। পকেট থেকে রিভালবার বের করে ছেলেদুটোর দিকে তাক করে এগিয়ে আসতে গেলে একজন কলেজের ভিতরের দিকে চলে যায় আর অপরজন রাস্তার দিকে। দিগন্ত রাস্তার দিকে ছুটে চলা ছেলের পিছনে ছুটতে ছুটতে বলে,
” দাঁড়াও বলছি না হলে স্যুট করে দিবো।”

ছেলেটা দাঁড়ায় না। সামনের দিকে ছুটতে থাকে। শেষে দিগন্ত ছেলেটার পা বরাবর স্যুট করে। গুলিবিদ্ধ পা নিয়ে ছুটতে থাকে ছেলেটা। দিগন্তও ছেলেটার পিছনে। রাস্তার পাশে আসতেই একটা বড় কালো গাড়ি এসে ছেলেটাকে তুলে নিয়ে চলে যায়। আর দিগন্ত সেখানেই হাটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। সামনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়ায়, “শিট, একটুর জন্যে মিছ করলাম। তবে মানতেই হবে এই ডেথের ক্ষমতা প্রখর।”

চলবে,,,,,,,

#মাহফুজা আফরিন শিখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here