#রহস্যময়_সারপ্রাইজ
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা
#পর্ব- ১২
জিহাদের সেই মাথা ঘুরানো ম্যাসেজটি ছিল এরকম,” 2⃣🌠🕚 bp-gp”
জিহাদের মাথা ঘুরানোর কথা শুনে অধরা শব্দযোগে হেসে ওঠল। আদাবর ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ম্যাডাম এটা কেমন ক্লু? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
অধরা চিন্তিত ভঙিত বলল,” ওরা ইমোজি টক করেছে। এখানে কোন একটা ম্যাসেজ আছে। খেয়াল করে দেখতে হবে ইমোজিগুলো দিয়ে কী বুঝিয়েছে। বুঝতে পারলেই উত্তর সহজ হবে।”
নিতিন ঠোঁট কামড়ে ম্যাসেজের দিকে তাকিয়ে রইল। চারজন এক ধ্যানে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। অধরার কপালে চিন্তার ভাজ। চেহারায় ভাবুকতার আভাস। চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মৃদুলের বাদামী ফোনের স্ক্রিনে আবদ্ধ। খানিকক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে সুক্ষ্ম মস্তিষ্কে কিছু একটা ভাবল। তারপর বলল,
” 2⃣ মানে টু, 🌠এই ইমোজিতে স্টার আছে। স্টার দিয়ে রাত বুঝিয়েছে। ইমোজি দুটো মানে টু’নাইট যার অর্থ আজ রাত। আর 🕛 এই ঘড়ির ইমোজি দিয়ে সময় বুঝিয়েছে। ইমোজির ঘড়িতে বাজে এগারোটা। ওই সময়কেই ইঙ্গিত করেছে। তিনটা ইমোজির মানে দাঁড়ায়, আজ রাত এগারোটা। আর bp…
” আর bp-gp দিয়ে কি গ্রামীণফোনের ভিপিকে বুঝানো হয়েছে? মানে আজ রাত এগারোয় গ্রামীনফোনের ভিপির সাথে খুনীদের মিটিং। এমনটা?”
অধরার কথা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল জিহাদ।
জিহাদের এই উদ্ভট স্বভাবে বেশ বিরক্ত অধরা। মাঝে পথে কথা না থামালেই কি হয় না জিহাদের? অধরার বিরক্তিভাবকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিল জিহাদের অর্থহীন প্রশ্ন। খুনের সাথে সিম কোম্পানিকে টানল। খুনীদের সাথে মিটিং! তাও আবার গ্রামীণ ফোনের ভিপির সাথে! কী অর্থহীন কথাবার্তা! চোখে মুখে বিরক্তির আভা ফুটিয়ে অধরা কিছু বলার জন্য মুখ খুলল। তার ভাবনা ছিল, সে জিহাদকে জিজ্ঞেস করবে যে জিহাদ কিভাবে পুলিশের চাকরি পেল। কিন্তু জিহাদকে কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেল না। তার মুখ থেকে একটা শব্দ বের হওয়ার আগেই নিতিন বলে উঠল,
” bp-gp মানে গ্রামীণফোনের ভিপি নয়। bp-gp মানে বেনাপোল-গাতিপাড়া। আমি আন্দাজ করছি, এটাকেই ইঙ্গিত করেছে তারা। ”
” এটা তো বাংলাদেশ- ভারত সীমান্ত। তারমানে কি ওরা বেনাপোল দিয়ে ভারত চলে যেতে চাচ্ছে?”
প্রশ্নবোধক চাহনি দিয়ে বলল আদাবর।
নিতিন জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
“ঠিক ধরেছো। বাংলাদেশ ও ভারতে অবৈধ পথে যাতায়াতের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হয় বেনাপোল সীমান্তকে । বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সদস্যদের নিয়মিত টহল এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার নজরদারি থাকার পরেও চলে এ কার্যক্রম। কাঁটাতারের বেড়া টপকে জল ও স্থলপথে চলে অবৈধ যাতায়াত। নারী প্রাচার থেকে শুরু করে নানা অবৈধ কার্যক্রম হয় এ সীমান্তে। অবৈধ ভাবে বেনাপোল দিয়ে ভারত যাবার ক্ষেত্রে বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী, দৌলতপুর, গাতিপাড়া ও সাদিপুর সীমান্তকে বেছে নেওয়া হয় নিরাপদ রুট হিসাবে। এই অবৈধ যাতায়াতে মূখ্য ভূমিকা রাখে দালালরা। একজন সীমান্ত দালাল ঢাকা থেকে একজন নারী বা পুরুষকে কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছাতে ৭-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ নিয়ে থাকেন। সীমান্তের ঘাট মালিক তাদেরকে ভারতে পৌচ্ছে দেয়। তারপর ওপারের দালাল তার নিজ দায়িত্বে সীমান্ত পার করা মানুষদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন। আমি নিশ্চিত তুরাগরা আজ রাতে এভাবেই পালানোর ফন্দি আঁটছে। ”
খানিক থেমে নিতিন জিহাদের কাধ চাপড়ে বলল,
” তুমি একজন পুলিশ কর্মকর্তা। কারো কথার আগামাথা না বুঝে কোন প্রশ্ন বা উত্তর দিবে না। কথা বললে ভারি মাপের কথা বলবে, না হলে চুপ থাকবে। এতে সম্মানিত না হলেও অন্তত অপমানিত হতে হবে না।
“জ্বি স্যার।”
লজ্জিত ভঙিতে বলল জিহাদ। সে আবারো বুঝতে পেরেছে পুরোনো ভুল আবারো করেছে। অধরা সেদিকে খেয়াল না দিয়ে বলল,
” মৃদুলের ফোনের আসা ম্যাসেজের মানে হচ্ছে,” ‘আজ রাত বারোটা বাজে তারা বেনাপোলের গাতিপাড়া সীমান্ত দিয়ে ভারত চলে যাবে। আমার ধারণা, তুরাগ, স্বরূপা, শিলা ইতিমধ্যেই যশোর পৌঁছে গিয়েছে। আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।”
আদাবর তার হাত ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বলল,
“এখন বাজে সন্ধ্যা ছ’টা। তারমানে আমাদের হাতে আছে আর মাত্র পাঁচ ঘন্টা! ”
নিতিন ও একবার নিজের হাতে পরে থাকা ঘড়িটায় সময় দেখে নিল। তারপর ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
” ইন্সপেক্টর অধরা, আপনি আপনার ফোর্স লাগান আমিও আমার ফোর্স লাগিয়ে দিচ্ছি। ”
“আচ্ছা। ”
এর পর শুরু হলো জুরুরি অভিযান। নিতিন ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মোহাম্মদ বিহারি মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করল। আর অধরা বেনাপোল পোর্ট থানার ইন্সপেক্টরের সাথে যোগাযোগ করেছে। নিতিন তৎক্ষনাৎ ফ্লাইট ধরে যশোর গেল। বর্ডার গার্ড, সি আই ডি এবং পুলিশের সহায়তায় পালায়নের চেষ্টাকালে তুরাগ,শিলা, অভিলাষ, স্বরূপাকে আটক করল। হাতে নাতে ধরে ফেলায় কেউ পালানোর সুযোগ পায় নি। গ্রেফতারের পর ঢাকায় নিয়ে আসা হয় আসামীদের।
**
জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব চলছে। পর্বে প্রথম নাম এসেছে মৃদুলের। জেল খানার একটা অন্ধকার রুমের মাঝামাঝি একটা টেবিল। তাতে তিনটা চেয়ার পাতানো। একপাশে দুটো চেয়ারে পাশাপাশি বসে আছে অধরা নিতিন। তাদের ঠিক অপজিটে একটা কাঠের চেয়ারে বসে আছে মৃদুল। মাথার উপর ঝুলে থাকা বৈদ্যুতিক বাল্বটার হলদেটে আলোয় যেন চিকচিক করছে মৃদুলের চেহারার ভীত ভীত ভাবটা। ভয়ে অস্বস্তিতে কাচুমাচু করছে। চেয়ারের দুই হাতলের সাথে হাত বাধা থাকায় নড়াচড়ায় খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। এতে মহাবিরক্ত সে। বারবার হাতের বাধনের দিকে তাকাচ্ছে। যেন পারলে চোখ দিয়েই হাতের কব্জির উপর বাধা সাদা দড়িটা খুলে ফেলতো। অধরা নিতিন তাকে নানান প্রশ্ন করছে সে কাচুমাচু করতে করতে বরাবরই একটা উত্তর দিচ্ছে, তা হলো ‘জানিনা’। এই শব্দের মধ্যে কেটে গেল মিনিট বিশ।
এক পর্যায়ে মৃদুলের দিকে পরখ করে নিতিন শান্ত কন্ঠে বলল,
“পালানোর ধান্দা ছেড়ে দিন। দড়ি খুললেও আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন না। সুতরাং, এত গড়িমসি না করে সত্য উন্মোচন করুন। না হলে রিমান্ড সেল খুলে বসব।”
নিতিনের শান্ত কন্ঠের কঠোর বাক্যে মৃদুলের মনে ভয়ের হিমশীতল বাতাস ভয়ে গেল। সে নিমেষেই শান্ত হয়ে গেল। তা দেখে অধরা বাঁকা হাসল, তারপর বলল,
“তো মি. মৃদুল সত্যটা কি বলবেন না কি আমরা রিমান্ডের আবেদন করব? রিমান্ডে নিলে কী হবে তা নিশ্চয়ই আপনার জানা আছে। ”
অধরার কথাতে মৃদুলের ভীত-সন্ত্রস্ত চেহারা আরো চুপসে গেল। অধরা মনে মনে ধারণা করছে, ওদের দলের একমাত্র কাঁচা খেলোয়াড় হচ্ছে মৃদুল। যার কাছে খেলার দক্ষতা থেকে ভয়টা বেশি কাজ করে। সম্ভব সে সবচেয়ে ভীত মানুষ। একে খানিক চাপ দিলেই কাজ হবে। এই ভেবে অধরা নিতিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মি.নিতিন আমার মনে হয় সবার দশদিনের রিমান্ড আবেদন করা উচিত। যা দেখছি এরা ভাঙবে, তবু মচকাবে না। ”
অধরার চাহনি হয়তো নিতিন বুঝতে পেরেছে তাইতো বলল,
“রিমান্ডের আবেদন, মঞ্জুর, এসবে আমি সময় নষ্ট করব না। আমি চাই যত দ্রুত কেসটা শেষ হোক। তাই আমি নিজেই রিমান্ড সেল বসিয়ে দিব এখন। ”
এ বলে নিতিন চেয়ারের ডান হাতলের বাইরে মেঝের দিকে ঝুকে একটা প্লাইয়ার্স অন্ধকারে ফ্লোরে পড়ে থাকা অবস্থা থেকে তুলে নিল। কাঠের টেবিলটার উপর রেখে ইশারা করে বলল,
“এটা বেশ ধারালো। একটা নখ একটানেই শেষ । সেকেন্ড দশেকের ব্যাপার। আমার বেশ মজা লাগে নখ টেনে তুলতে দেখাতে। আপনাকে ও দেখাব?”
অধরা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি বরং হাতের বাধন খুলে দিই। না হলে তো হাতে কিছু করা যাবে না। ”
নিতিন-অধরার কথায় মৃদুল রীতিমতো ঘামতে শুরু করেছে। সে বেমালুম ভুলে গেছে মানষিক হাসপাতালে অধরার কান্ড। ভুলে গেছে তাদের দলের প্রতিশ্রুতি। প্রতিশ্রুতি ছিল, জান যাবে তবু সত্য বলবে না। কিন্তু অন্য সবার কথা মৃদুল জানে না তবে সে কিছুতেই সত্য আর প্রাণ এই দুটো অপশনে প্রাণকে বেছে নিয়ে প্রাণকে হারাবে না। সে সত্য অপশনকে বেছে নিবে। এতে তার প্রাণ বাঁচবে। এই অপশন টিকাতে যা করার করবে সে। প্রয়োজনে সত্যটাও বলবে। এই ভেবে সব ভুলে সে বর্তমান ভেবে নিজেকে বাঁচানোর চিন্তা সবার আগে করছে। অধরা যখন নিজের চেয়ার থেকে উঠে মৃদুলের হাতের বাধনে হাত দিলো দড়ি খোলার জন্য নিতিন তখন প্লাইয়ার্স ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। মাঝে মাঝে প্র্যাকটিস ও করছে কিভাবে নখ তুলবে। নিতিনের দিকে তাকিয়ে ভীত কন্ঠে মৃদুল বলল,
” আমার নখ তুলবেন না। আমি বলছি সব।”
মৃদুল কথাটা বলার সাথে সাথে নিতিন টেবিলে প্লাইয়ার্সটা রেখে দিলে। হাত দুটো উঁচু করে বলল,
“রেখে দিলাম, এবার বলুন। না হলে আমার হাত আবার যাবে প্লাইওয়ার্সে। ”
“বলছি।” কাঁপা কাঁপা গলায় মৃদুলের উত্তর।
নিতিন অধরার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ইন্সপেক্টর অধরা, আপনি সিটে বসে পড়ুন। আপাতত বাধন খোলা লাগবে না। দেখি, মৃদুল সাহেব কী বলেন। তার কথায় যদি মিথ্যার আভাস পাই তবে আবার শাস্তির দেবার কথা ভাবব। ”
নিতিনের কথায় বাঁকা হেসে অধরাও নিজের সিটে বসে পড়ল। তারপর মৃদুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তারপর বলুন, আপনার কী ভূমিকা ছিল? ”
মৃদুল একবার নিতিন আর একবার অধরার দিকে তাকাল। দুজনের কঠিন দৃষ্টি দেখে ভয়ে ভয়ে বলল,
“স্বরূপার বয়ফ্রেন্ড এর ভূমিকা।”
“আপনার সাথে স্বরূপার আদৌ সম্পর্ক আছে?”
অধরা জিজ্ঞেস করল। মৃদুল উত্তর দিল,
“না। এটা শুধু একটা নাটক ছিল। প্রতিভার কাছে ভালো হওয়ার জন্য, যাতে প্রতিভা স্বরূপাকে সন্দেহ করতে না পারে।”
“ফরেনসিক রিপোর্ট বদলানোর কাজটা কার ছিল?”
“আমার আর কৌশিকের। ”
“ডাঃ কৌশিক তো প্রতিভার খালাতো ভাই। তবে সে আপনাদের সাথে যুক্ত হলো কেনো?”
“সম্পত্তির লোভে। ”
“প্রতিভা আর প্রভাত মির্জাকে খুন করার মূল কারণ কী ছিলো?”
“সম্পত্তি।”
“আপনাদের দলে এ কয়জন সদস্য আছে?”
” ছ’জন। ”
“নেতা কে? সব কিছুর নেতৃত্ব কে দিতো?”
“তুরাগ আর অভিলাষ ”
“তুরাগ প্রতিভাকে এত ভালোবাসতো তাও মারল কেনো!”
“সম্পত্তির জন্য। প্রতিভাকে মেরে প্রভাত মির্জার সম্পত্তি হাতানোই মূল উদ্দেশ্য ছিল।”
“তাহলে প্রভাত মির্জাকে মারল কেনো!”
“তার উপস্থিতিতে সম্পত্তি ভাগা আনা দুষ্কর। তাই তাকে খুন করা হয়েছে। ”
নিতিন অধরার প্রশ্নে উত্তর দিয়ে গেল মৃদুল।
এ পর্যায়ে এসে মৃদুলের কথা শুনে অধরা কিছু একটা ভাবলো তারপর বলল,
“প্রভাত মির্জাকে খুন করার আগে তার টাকা পয়সা ভাগে আনা হয়েছে?”
মৃদুল মৃদুস্বরে বলল,
“হ্যাঁ, প্রভাত মির্জার ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রভাত মির্জার নামে থাকা ছ’টা ফ্ল্যাট, বাড়ি ছ’জনের নামে করা হয়েছে।”
নিতিন ভ্রু কুঁচকে বলল,
” আপনার আর ডাঃকৌশিকের কথা না হয় বুঝলাম। কিন্তু বাকি চারজন তো মৃত সবার কাছে । তবে আইনি কাজে তাদের সম্পৃক্ততা থাকল কিভাবে? মৃত ব্যক্তির নামে তো উইল করা যায় না।”
“সমাজের কাছে তুরাগ, শিলা,অভিলাষ, স্বরূপা মৃত। কিন্তু হৃদিতা, বর্ণা,কুঞ্জন আর চঞ্চল জীবিত। সমাজ এদের চিনে না। এই চারজনই ভোগ করবে সব। তাদের নামেই রেজিস্ট্রি হয়েছে। ”
কাঁপা গলায় গড়গড় করে বলে দিল মৃদুল। তার কথায় অধরা নিতিন দুজনেই নড়েচড়ে বসল। অধরা ভ্রু কুচঁকে বলল,
” হৃদিতা মানে তো শিলা। বাকি তিনজন কে?”
মৃদুল স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল,
” শতাব্দী মেহেক বর্ণা হচ্ছে স্বরূপা, কুঞ্জন বিশ্বাস হচ্ছে তুরাগ, চঞ্চল বিশ্বাস হচ্ছে অভিলাষ। এদের ছদ্মনাম এগুলো। ”
কিছুটা বিস্ময় নিয়ে অধরা জানতে চাইল,
“আপনাদের পরিকল্পনা কী ছিল?”
“আমাদের পরিকল্পনা ছিল প্রতিভা এবং তার বাবাকে হত্যা এবং সম্পত্তির দখলকরণ। তারপর পুলিশকে ঘুরিয়ে তুরাগরা চারজন বর্ডার হয়ে ভারত যাবে। সুযোগ বুঝে আমি ও হাসপাতাল থেকে পালিয়ে ভারত পাড়ি দিব।
কলকাতায় একটা বাংলো রেন্টে নিয়েছে মাস কয়েক আগে। সেখানে গিয়ে সবাই থাকবে। কয়েকবছর গেলে দেশবাসী যখন প্রতিভাদের ঘটনা ভুলে যাবে তখন ছদ্মবেশ ধারণ করে বাংলাদেশে আসবে। ততদিনে ডাঃকৌশিক এদিকটা সামলাবে। তাহিনা জাহানকে কনভেন্স করে প্রভাত মির্জার বাকি সব সম্পত্তি দেখাশোনার নাম করে নিজের নামে করবে। তারপর সম্পত্তি হাতে পেলে তিহানাকে খুন করে সবাই রাজত্ব করবে তার সম্পত্তিতে। এমনটাই পরিকল্পনা ছিল।”
” আমরা সব ভন্ডুল করে দিলাম। কাজটা কি ঠিক হলো?”
বেশ আফসোসের সুরে বলল নিতিন। মৃদুল কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“আমাদের ছেড়ে দিন! আপনাদের দুজন ও ফিফটি পার্সেন্ট দিব।”
মৃদুলের কথায় অধরার চোখে মুখে রাগের আভা খেলে গেল। টকটকে লাল চেহারা, আর অগ্নিচোখে মৃদুলের তাকিয়ে বলল,
“আমাদের কি ঘুষখোর মনে হয়? একে তো অন্যায় করেছেন আবার অফার ও করছেন। সাহস তো কম না? আপনাদের ফাঁসি হওয়াই ঠিক হবে। তার আগে পুলিশকে হাত করার চেষ্টার জন্য শাস্তি তো পাবেনই। ”
বলে টেবিলে থাকা প্লাইয়ার্স হাতে নিলো। প্লাইয়ার্স নিয়ে উঠতে যাবে তখনই নিতিন অধরাকে থামিয়ে বলল,
“রিল্যাক্স ইন্সপেক্টর অধরা, মৃদুলের অফারটা খারাপ না। ভেবে দেখুন, ফ্রিতে কত কী পাবো! তা মৃদুল সাহেব আপনাদের ছাড়ার বিনিময়ে কী দিবেন আমাদের? বলুন দেখি পছন্দ হয় কিনা। পছন্দ হলে মামলা এখানেই দফারফা করে দিব।”
নিতিনের কথা শুনে অধরা অবাক চোখে নিতিনের দিকে তাকাল। তার দেখা সবচেয়ে সৎ অফিসার ও তবে দূর্নীতিতে জড়িত! বিশ্বাস হচ্ছে না যেন অধরার। একটা মামলা নিয়ে এত দৌড়াদৌড়ির পর সমাধান মুহুর্তে এসে অন্যায়ের পক্ষ নিচ্ছে? তাও কি না সম্পত্তির লোভে! ছিঃ! ভাবতেই অধরার গা ঘিন ঘিন করে উঠল। সে বিকৃত মুখ করে নিতিনের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“শেষ পর্যন্ত আপনি ও? ছিঃ ছিঃ! আমি আপনার থেকে এমনটা আশা করিনি।”
নিতিন খুশিমনে বলল,
” ফ্রিতে এত বড় অফার পেয়ে গেলে কেউ হাতছাড়া করে? আমি তো করি না। আমার মনে হয় আপনার ও এই অফারটা লুফে নেয়া উচিত। প্রভাত মির্জার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। তার মাঝে ফিফটি পার্সেন্ট আমি পেলে বউ বাচ্ছা নিয়ে সারাজীবন আরামে কাটিয়ে দিতে পারব। ঠিক বলছি তো মি.মৃদুল?”
নিতিনের কথা মৃদুলের মনে ধরল। সে হাফ ছাড়ল। যাক, একজনকে ভাগে আনা গেছে এখন এখান থেকে বের হওয়া আর ব্যাপার না। মৃদুল সহাস্যে বলল,
“একদম ঠিক স্যার। আপনারা যদি আমাদের সাথে থাকেন, তবে আমরা এক তুড়িতেই বাজিমাত করতে পারব। ”
উত্তরে নিতিন হাসল। অধরা তার বাঘিনী চেহারা নিয়ে নিতিন আর মৃদুলের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে মুখে রাগ আর ঘৃণার উত্তাল ঢেউয়ে ভিজে একাকার। যেন পারলে এখুনি ট্রিগার চেপে দুটো লাশ গ্রাস করতো। নিতিন অধরার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিল।
মৃদুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এখন তো আমরা টিম মেম্বার। আপনার কোন ভয় নেই, আমি আপনাদের বের করব নিজ দায়িত্বে। নিশ্চিন্ত থাকুন।”
মৃদুলকে উৎফুল্ল দেখাল। পরক্ষণেই অধরার দিকে তাকিয়ে কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল। ধীর স্বরে বলল,
“ম্যাডাম!”
মৃদুলের ইশারা বুঝে নিতিন অধরার দিকে তাকাল। অধরার রাগ আর ঘৃণামাখা দৃষ্টি চোখে পড়ল। চোখ ফিরিয়ে নিতিন অভয় দিল,
” টাকার কাছে ন্যায় নীতি হার মানে। ম্যাডাম ও হার মানবে। উনাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। ”
অধরা গম্ভীরমুখে ধীর স্বরে বলল,
” এটা ঠিক হচ্ছে না মি.নিতিন। আপনি এভাবে দূর্নীতি করতে পারেন না! আমি আপনার নামে দূর্নীতির মামলা দিব। ”
নিতিনকে এ পর্যায়ে বেশ গম্ভীর দেখালো। রাশভারি গলায় বলল,
“কাজে ব্যাঘাত ঘটানো পছন্দ নয় আমার। আশা করি, এটা মাথায় রাখবেন। ”
থেমে মৃদুলের উদ্দেশ্যে বলল,
“তো, মৃদুল, এখন আমরা একই দলের সদস্য। সে হিসেবে আমাকে সব ব্যাপার খুলে বলুন। তারপর আমি আপনাদের সাহায্য করতে পারব।”
মৃদুলের মুখে হাসি ফুটল। চেহারা থেকে ভীত ভাব চলে গেল। সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“আমাদের এখান থেকে বের করুন। তারজন্য যা জানার জিজ্ঞেস করুন আমি বলছি।”
” প্রতিভার ডায়েরিটা কে লিখেছে?”
“স্বরূপা। ”
“অভিলাষের ডায়েরি?”
“স্বরূপা লিখেছে। ”
“দুই ডায়েরির লিপিবদ্ধ সব কথা কি বানোয়াট? ”
“হাতে গোনা দু’চারটা ছাড়া বাকি সব স্ক্রিপ্ট। এর কোন সত্যতা নেই।”
“তারমানে আপনারা জানতেন যে ডায়েরিগুলো পুলিশের হাতে যাবে তাই বানিয়ে এমন গল্প লিখেছেন যেন আপনাদের কারো উপর আঙুল না যায়, তাই তো?”
“হ্যাঁ। সব স্ক্রিপ্ট। এমনকি, প্রতিভার সামনে আমি আর স্বরূপা কী কথা বলবো সেটাও স্বরূপা আগে থেকে আমাকে শিখিয়ে দিতো। স্ক্রিপ্ট দিতো। প্রতিভা অভিলাষের ডায়েরির সব কথাই বানোয়াট। যার কোন অর্থ নেই।”
“প্রতিভাকে কি তবে তুরাগ অভিলাষ কেউই ভালোবাসতো না?”
“না। দুজনেই বিবাহিত। প্রতিভার সাথে অভিলাষ আর তুরাগের যা ছিলো সব অভিনয়। ওকে খুন করার আগে বিশ্বাস অর্জন করতে চেয়েছে তুরাগ। সে তো প্রতিভাকে ঘৃণা করতো। প্রতিভার সামনে শুধু মুখোশ পরে ছিল। ভালোবাসার ঢং করতো। আর অভিলাষ ও প্রতিভাকে সহ্য করতে পারে না। যেখানে সহ্য করতে পারতো না সেখানে ভালোবাসার আশা করা তো নিতান্তই হাস্যকর।”
“কেনো ঘৃণা করে?”
“তা জানিনা। ”
“অভিলাষ পুলিশকে যে জবানবন্দি দিয়েছে সেটা কি ছিল?”
“পূর্ব লিখিত কথা আওড়িয়েছে অভিলাষ। স্ক্রিপটা ও স্বরূপার লেখা। ”
” তুরাগ অভিলাষ এই দুজনের কথা না হয় বুঝলাম কিন্তু শিলা, স্বরূপা? ওদের কিসের শত্রুতা প্রতিভার সাথে?”
“ওদের শত্রুতা নেই। শুধু সম্পত্তির লোভ ওদের।”
“প্রতিভার প্রেগন্যান্সির কথা কেউ জানতেন না? ”
“না, শুধু মাত্র স্বরূপা জানতো।”
“আপনি কেনো ওদের দলে যোগ দিলেন? আমি যতটুকু জানি আপনার পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশ সচ্ছল।”
” আমি ইচ্ছে করে যোগ দিই নি। আমাকে অনেকটা জোর করে যোগ করেছে তারা।”
“পরিচয় কবে এবং কিভাবে?”
“তুরাগ আমার ক্লাসমেট ছিলো। সেই সুবাধে পরিচয় এবং বন্ধুত্ব। আট বছরের বন্ধুত্ব আমাদের। কয়েক বছর আগে ও আমাকে স্বরূপার বয়ফ্রেন্ড সাজার প্রস্তাব দেয়, বিনিময়ে আমাকে একটা ফ্ল্যাট এবং দশলাখ টাকা দিবে। আমি প্রথমে রাজি হইনি। প্রথমে ভালোভাবে বলেছে আমি রাজি না হওয়াতে হুমকি দেয়া শুরু করে। বাধ্য হয়ে আমি এক পর্যায়ে আমি রাজি হয়ে যাই। আর তাদের কথা মতো কাজ করতে থাকি। মিশনে নেমেই বাকিদের সাথেও পরিচিত হই।”
এতক্ষণ বেশ চুপচাপ ছিল অধরা। নিতিনের আচরণের রাগে শরীর কাঁপছে তার, রাগ সংবরণে মত্ত সে। মৃদুলের কথায় কৌতুহল অনুভব করল। রাগ সংবরণ করে প্রশ্ন করল,
“কী এমন হুমকি দিয়েছে, যাতে আপনি রাজি হয়ে গেলেন?”
” বয়ফ্রেন্ডের সাথে আমার বোনের কিছু অন্তরঙ্গ ছবি কিভাবে যেন তুরাগ পেয়ে গিয়েছিল। কিভাবে সংগ্রহ করেছে জানি না। সেগুলো দিয়ে তুরাগ আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতো আমি রাজি না হলে সে আমার বোনের ছবি ভাইরাল করে দিবে। আমার একটা মাত্র বোন। সে খুব বোকা আর ইমোশনাল। সবে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছবি ভাইরাল হলে আত্মহত্যা করতো। ভাই হয়ে আমি তা দেখতে পারতাম না, তাই বোনের জন্য বাধ্য হয়ে তুরাগের প্রস্তাবে রাজি হই। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি ওদের বারবার নিষেধ করেছি। ওরা শুনেনি। উল্টো আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতো। আমাকে প্রতিভা কেসে ফাঁসিয়ে দিবে বলে ব্ল্যাকমেইল করে পাগল সাজিয়ে মানষিক হাসপাতালে পাঠিয়েছে। সেখান থেকে ভারত যাবার কথা ছিল। সেটা ব্ল্যাকমেইল করেই। আমি রাজি ছিলাম না। ওরা প্রতি পদে পদে আমাকে হুমকি দিয়েছে, এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছে।”
মলিন মুখে বলল মৃদুল। নিতিন বলল,
“আইনের সহায়তা নেননি কেনো? এটলিস্ট মিস অধরাকে গোপন ভাবে হলেও বলতে পারতেন।”
“আমি বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু থানায় আসার পথেই ওরা টের পেয়ে যায় এবং আমার বোনের একটা অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে হুমকি দেয়। ভিডিওটা এডিটেড ছিল। কিন্ত আজকাল সময়ে কেউ সেসব বিশ্বাস করেনা। ভাইরাল হলে আমার বোনটা ক্ষতি হতোই তাই আর বলিনি।”
“বোনকে বাঁচাতে গিয়ে একটা পরিবারকে বলি দিলেন তাই তো?”
নিতিনের প্রশ্নে মৃদুল লজ্জিত মুখটা নিচু করে মাথা নাড়ল। নিতিন বলল,
” ওরা যদি আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করে সব করায় তবে ওদের প্রতি আপনার ক্ষোভ জমার কথা। আপনি তাদের শাস্তি কামনা করার কথা। কিন্তু আপনি নিজেরসহ সবার মুক্তির জন্য আমার সাথে ডিল করছেন। ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত লাগছে না?”
“ওদের প্রতি আমার ক্ষোভ আছে অনেক। ওদের শাস্তি দিতে চাই। কিন্তু এখন ওদের শাস্তি দিতে গেলে আমিও শাস্তি পাব। তাই জেল থেকে বের হওয়ার জন্য হলেও ওদের মুক্তি চাচ্ছি। প্লিজ স্যার ম্যাডাম, কো-অপারেট করুন। আমাদের ছেড়ে দিন। আমি আর কখনো এমন কাজ করব না। আপনারা আমাদের ছেড়ে দিন, বিনিময়ে আমি তুরাগকে বলে একটা বাংলো আর দুটো ফ্ল্যাট করে দিব আপনাদের দুজনকে। প্লিজ স্যার!”
আকুতিভরা কন্ঠে বলল মৃদুল। নিতিন বাঁকা হেসে বলল,
” আমি অলরেডি কো-অপারেট করেছি মি.মৃদুল। আমিও আপনাদের গ্যাংয়ের। বাই দ্যা ওয়ে, আপনাদের গ্যাং আর মিশনের নাম কি?”
“গ্যাংয়ের নাম ‘S I V’ আর মিশনের নাম সারপ্রাইজ।”
“S I V মিনিং? ”
“six intelligence villain”
নিতিন ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
“ইন্টারেস্টিং! আমি গর্বিত অনুভব করছি এস আই ভির সদস্য হতে পেরে। সহকর্মী আপনি আমার। সেই হিসেবে আমি আপনাকে কিছু দিতে চাই। আপনি নিবেন?”
“কক্কি দিবেন স্যার?”
ভীত কন্ঠে বলল মৃদুল। নিতিন হেসে বলল,
” ভয় পাবেন না। আমি গিফট দিব,ফাঁসিতে ঝুলাব না। এমন গিফট দিবো,যার সাথে আপনারা পরিচিত। যেই গিফট আয়োজন করতে আপনারা দক্ষ তেমন কিছুই দিবো। আমাকে বিশ্বাস করলে নিতে পারেন। করেন বিশ্বাস? ”
মৃদুল খানিক সময় নিয়ে কিছু ভাবল। তারপর হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। যার অর্থ সে বিশ্বাস করে। নিতিন বলল,
“ধন্যবাদ আমার সহকর্মী। আমি এত বছরের অর্জিত সততা ভঙ করে আপনার কথায় সায় জানাচ্ছি। জানি না কেনো হুট করেই সম্পত্তির লোভ লেগে গেল। দূর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছি। লোভ বড্ড খারাপ জিনিস। এর থেকে নিজেকে সামলানো দায়। আমি ও নিজেকে সামলাতে পারছি না। হার মানলাম। আপনার জয় হয়েছে। আপনার জয় হিসেবে কিছু দিতে চাই। বিশ্বাস যেহেতু করেন তাই নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। গিফট দিয়েই দি। কী বলেন?”
ভেবেচিন্তে মৃদুল সায় জানাল। সে বুঝার চেষ্টা করছে নিতিন তাকে কী দিবে। তবে তার ধারণা নিতিন সত্যই তাদের দলে নাম লেখিয়েছে। তাই মনে মনে বেশ খুশি সে। নিতিন চেয়ার ছেড়ে উঠে মৃদুলের কাছে গেল। মৃদুলের বাঁ হাতের বাধন খুলে বাঁ হাত টেবিলের উপর রাখল। এরপর টেবিলের উপর থেকে প্লাইয়ার্স নিয়ে মৃদুলের বাঁ হাতের তর্জনী আঙুলের কাঁচা নখের ডগায় তাক করে সর্বশক্তি দিয়ে নখটা টেনে তুলে নিল। সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে গেল। ঘটনা এত তাড়াতাড়ি হলো যে অধরা থ বনে গেল। একটু আগে তার চেহারায় যে রাগী ভাব ছিলো তা কেটে গিয়ে এবার বিস্ময়ী ভাব ফুটে উঠল। মৃদুল ও কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব সে। খানিক অবাক হয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর অসহনীয় যন্ত্রণা অনুভব করা মাত্রই সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার জুড়ে দিল। নিতিন প্লাইয়ার্স টেবিলে রেখে আবার নিজের চেয়ারে এসে বসল। একবারেই রিল্যাক্স ভাব নিয়ে বসে আছে। যে কিছুই হয় নি।
এদিকে অধরা এক রাশ বিস্ময় নিয়ে ঘটনা বুঝার চেষ্টা করছে। একবার মৃদুলের দিকে তাকাচ্ছে একবার নিতিনের দিকে। একটু আগে না এরা শান্তিচুক্তিতে মৌখিক সাক্ষর করল! এখন তবে কী হলো। নিতিন কি তবে অভিনয় করছিলো? অধরার ভাবনার মাঝেই নিতিন টেবিলে দু’হাত ভাজ করে টেলিভিশনের সংবাদপাঠকের কায়দা অবলম্বন করে বসে ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে মৃদুলের উদ্দেশ্যে বলল,
“মি.মৃদুল আমার উপহার কেমন লাগল?”
উত্তরে মৃদুল ব্যাথিত চোখে নিতিনের দিকে তাকাল। নিতিন বাঁকা হেসে বলল,
“আমরা দেশ ভক্ষক নয়, আমরা দেশ রক্ষক। এই একটা বাক্যে না বুঝার শাস্তি ছিলো এটা। অবশ্য আমি এটাকে উপহার বলি। একজন সৎ মানুষকে কু’প্রস্তাব প্রদানের চেয়ে অতি অপমান জনক আর কিছুই নেই। আমার অপমানের গিফট ছিল এটা। আমি আইন নিজের হাতে তুলে দিই না। কিন্তু কেউ দফারফার প্রস্তাব দিলে তাকে শাস্তি না দিয়ে পারি না। তখন আইন মানিনা। আপনি একবার নয় দু’দুবার একই কাজ করেছেন। সহ্য হচ্ছিলো না বিধায় এই উপহারেরর আয়োজন। ”
“তাহলে এতক্ষণ কী ছিলো এটা? আর শান্তিচুক্তি! ”
অবাক কন্ঠে অধরার প্রশ্ন। নিতিন বাঁকা হেসে বলল,
“যারা মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলতে পছন্দ করে তাদের বিশ্বাস নিয়ে আমিও একটু খেললাম। আর কিসের শান্তিচুক্তি, কিসের দলবদল? তথ্য বের করা আমার উদ্দেশ্য ছিল। আমি নিজের থেকেও বেশি নিজের সততাকে ভালোবাসি। যাই হোক, নেক্সট ডাকুন সবাইকে একসাথে। এই খুনের কারণ সম্পত্তি নয় প্রতিশোধ। এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আজি শেষ করবো। ”
চলবে….
বিঃদ্রঃ-১ – ‘জিজ্ঞাসাবাদ বা রিমান্ডে কোন আসামীকে কোন প্রকার টর্চার করা বে-আইনি। ‘ এটা যাদের জানা আছে তাদের আজকের পর্বে আপত্তি থাকতে পারে। এই অংশটাকে কাল্পনিক ধরে নেয়ার অনুরোধ রইল। পুরো গল্পটাই যেহেতু কাল্পনিক।
বিঃদ্রঃ -২ – গল্পটা অনেক আগের লেখা। প্রকাশ হয়েছে ফেসবুকে। অনেক আমার পেইজ খুঁজে পড়ে গ্রুপে এসে স্পয়লার দিচ্ছেন। এমনটা করবেন না। আপনি পড়েছেন, পড়া নিজের মাঝেই রাখুন। স্পয়লার দিলে অন্যরা পড়ার আগ্রহ চলে যাবে। তাদের প্রতি অনুরোধ, কমেন্টে স্পয়লার দিবেন না।