রহিবে মনের গহীনে পর্ব-০৪

0
2142

#রহীবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_০৪
#Nishi_khatun

পরেরদিন বিকালে ইফানের রুমের পাশ দিয়ে অরিন যাচ্ছিল তখন হঠাৎ করে দাঁড়ায় যায়। কেনো জানি মনে হচ্ছে ইফানের রুমের ভেতরে দ্বিতীয় কেউ আছে।
অরিন ইফানে দরজাতে কান দিয়ে শুনতে চেষ্টা করে কার সাথে কথা বলছে? আর কী কথা বলছে সে?

শেষ পর্যন্ত বিয়ের কয়েদিন যেতে না যেতেই জামাই আমার পাশের ঘরে বউকে একলা রেখে পরোনারীকে নিয়ে সোজা বেডরুমে চলে আসছে? দাঁড়াও জামাই আজকে তোমার খবর আছে।

অরিন হুড়মুর করে ইফানের রুমের ভেতরে প্রবেশ করে। রুমের ভেতরে প্রবেশ করতেই ইফানের সাথে ধাক্কা খেয়ে মেঝেতে পড়ে যায়। বেচারি কম ব্যাথা পেয়েছে কারণ ইফানের রুমের মেঝেতে মোটা গালিচা বিছিয়ে রাখা আছে।

অরিন আফসোসের সাথে বিড়বিড় করে বলে,”হায়রে আমি এই দুক্ষু কোথায় রাখবো? সিনেমা তে হিরো নায়িকার সাথে ধাক্কা খেয়ে তার বুকের উপর পড়ে! তাদের মধ্যে কতো শত কাহিনী হয়। আর এখানে আমি বরের সাথে ধাক্কা খেয়ে মেঝের বুকে থাকা মোলায়েম গালিচার উপড়ে পরলাম। কেন রে স্বামীর বুকের উপর পড়লে কি হতো?” আস্তে আস্তে এসব কথা বিড়বিড় করতে থাকে।

এমন সময় অরিনের হুশ ফিরে যখন ইফান চিৎকার করে ওঠে!

-অরিননননন! কোন সাহসে আমার রুমে আসছো? উইদাআউট পারমিশনে কোন সাহসে আমার পারোসোনাল সময় রুমে প্রবেশ করেছো?

অরিন রুমের চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে! কই কোথাও তো কেউ নেই? তাহলে আমার বর কার সাথে ফিসফিস করে গল্প করছিল? হায়রে ভুল করে কোন ভুল কাজ করে বসলাম না তো আমি?

ইফান আবারো জোড়ে অরিননননন বলে ডাক দেয়।

অরিন এবার উঠে দাঁড়িয়ে একবুক সাহস নিয়ে বলে,”এই যে বিনা পারমিশনে না হয় বিবাহিত স্বামীর রুমে প্রবেশ করেছি। আপনার সাথে ধাক্কা খেয়ে গালিচার উপর না পড়ে, যদি অন্য কোথাও পড়তাম তখন আমার হাড়-হুড্ডি কী আস্ত থাকতো? উঁহু থাকতো না। তাহলে আপনি একটু আমার হাতটা ধরে ধপাৎ করে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারতেন না?”

ইফান রেগে বলে,
“অরিন একদম ফাইজলামি করবে না।
আমার রুমে কিসের জন্য এসেছো তা-ই বলো।”

অরিন ইফানের চোখে চোখ রেখে বলে,”আপনি কোন মেয়ের সাথে প্রেম করেন?”

-হ্যাঁ! কিহহহ! প্রেম? আমি আর প্রেম! প্রেম করি তাতে তোমার কি হয়ছে?

-“আপনার লজ্জা করে না? পাশের ঘরে বউ থাকতেও আপনি অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করেন? আপনার বাবা- মা তো ভালো মানুষ। তাদের ছেলে হয়ে কি করে পারছেন পরকিয়ার মতো জর্ঘন্য কাজ করতে? এই আপনি না লেকচারার মানুষ! স্টুডেন্টরা আপনার কাছ থেকে এসব শিক্ষা গ্রহণ করবে?”

ইফান অরিনে হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে বলে,”তোমার মতো অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে বিয়ে করলে এসব ছাড়া আর কি হবে? তোমরা সংসার করতে জানো? আজারে সারাক্ষণ বক বক করতে পারো।”

অরিন কিছু বলবে তার আগেই ইফানের ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। ফোনটা সেন্টার টেবিলের উপর থাকার জন্য স্কিনের উপরে ভেসে থাকা নামটা জ্বলজ্বল করছিল।

অরিন ইফানের গেঞ্জির গলা ধরে বলে,”এই আজরিন কে? এটার জন্য বুঝি আপনি আমাকে বউ মানতে চাইছেন না!”

ইফান অরিনের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”তোমার যা ইচ্ছা তুমি তা-ই মনে করো আমার তাতে কোন সমস্যা নেই।”

ইফান অরিনের সামনে ফোনটা রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিয়ে কথা বলতে শুরু করে..

অপর প্রান্ত থেকে সুমধুর মহোনীয় কন্ঠে একজন বলে ওঠে,
“আসসালামু আলাইকুম”

ইফান অরিনের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে সুন্দর ভাবে সালামের জবাব দেয় “ওয়া আলাইকুমুস সালাম।”

আজরিন বলে,” আমার জানের জান পাখিটা কি করে? এতো ব্যস্ত থাকলে প্রেম করা শিখবা কি করে? আমি তোমার প্রেমের স্কুলের ম্যাডাম। তুমি আমার স্টুডেন্ট। ম্যাডাম আর স্টুডেন্ট দুজনে মিলে প্রেমের ক্লাস করবো।”

ইফান অরিনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে উওর দেয়,”তোমার মতো সুন্দরি ম্যাডাম যদি প্রেম শেখায় তাহলে আর কী দরকার হয় বলো? আমি তো রাজী ডাকবো না কি কাজী?”

আজরিন,” তুমি কি যে বলো না।”

অরিনের প্রচুর রাগ লাগছিল। তার রাগে চোখ থেকে জল একাই গড়িয়ে পরতে শুরু করে।

অরিনের চোখে জল দেখে ইফানে মুখের হাসিটা মিলিয়ে যায়। কেনো জানি ইচ্ছা থাকতেও আর কৃত্রিম হাসি হাসতে পারছে না।

অরিন ইফানের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে সোজা কলের কানেকশন ডিসকানেক্ট করে দেয়।

ইফান কে হঠাৎ করে আলিঙ্গন করে। অরিনের কাছে থেকে অপ্রত্যাশিত ভাবে আলিঙ্গনে ইফান বেচারা বরফের ন্যায় জমে থাকে। আল্লাহ এই মেয়ের সাহস কতো আমাকে আলিঙ্গন করে?

অরিন ইফানের বুকের উপর মাথা রেখে মুখ গুঁজে কিছু সময় অতিবাহিত করে। কিছু সময় পর অরিন ইফানের কাছে থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বলে ওঠে,

-“আপনি আমাদের বিয়ে টা মানেন আর না মানেন। আই ডোন্ট কেয়ার এবাউট ইউ! বিকজ আমি যখন আপনাকে স্বামী বলে স্বীকার করেছি তখন আপনি সারাজীবন আমার স্বামী। সো এই সব ফালতু মেয়েদের সাথে যদি দ্বিতীয় বার হারাম প্রেম আলাপ করতে শুনেছি তাহলে আপনার কপালে খুব দুঃখ আছে। সাথে ঐ আজরিন নামের শাঁকচুন্নি ডায়নির ও। আমাকে ছোট বাচ্চা মেয়ে ভেবে মোটেই মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং করবেন না। এই বলে দিলাম অশিক্ষিত জামাই।”

ইফান রেগে বলে,”চোরের মায়ের বড় গলা। এই তোমাকে না বলছি আমাকে বাঙালী মেয়েদের মতো স্বামী স্বামী করবে না। আর কোন সাহসে আজরিন কে নিয়ে বাজে কথা বলতে আসছো?”

অরিন -বাজে কথা বলছি আমি? দাঁড়াও সারা বাড়িতে গিয়ে মাইকিং করছি। পাশের ঘরে বাচ্চা বউ কে একলা রেখে জামাই আমার অন্য নারীর সাথে আশিকি করে বেড়াই। ”

ইফান – এই মরিনের বাচ্চাও একদম বাড়ির কারো সামনে আজরিনের নামে বাজে কথা যদি বলছো তোমার খবর আছে।

– ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,

-“হুহ! আমি কাউরে ডরাই না। যা পারেন করিয়েন।”

অরিন চলে যেতেই ইফান নিজের মাথার চুল টানাটানি শুরু করে। এই পাজি মেয়ের জ্বালায় রুমের ভেতরে ফোন আলাপন করাও দায় হয়ে গেছে আমার। আল্লাহ মালুম সবাইকে কি কি বলে তাল কে তিল বানাবে।

অরিন নিচে ড্রয়িংরুমে তার শাশুড়ির আশেপাশে অনেকটা সময় ধরে ঘুরঘুর করছিল।
তা দেখে জিনিয়া অরিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-“আমার মামুনি টা কি কোন কিছু নিয়ে টেনশন করছে? না তার ছোট মাথায় কোন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যা সে করতে চাইছে আমাকে? ”

-আচ্ছা বাবার বন্ধুর ভালো বউ আমাকে একটা কথা বলবে।

– প্রশ্ন না করলে উওর দিবো কি করে?

আচ্ছা তোমাদের বাড়িতে কতো জন সদস্য? না মানে আমরা চার জন ছাড়া আর কাউরে দেখি না। তোমাদের বংশের কি আর কেউ নাই? কোন বিবাহের উপযোগী ছেলে মেয়ে?

জিনিয়া ভ্রূ কুঁচকে অরিনের দিকে তাকিয়ে কি একটা ভেবে হাসি মুখে উওর দেয়,ইফানে অনেক চাচাত, মামাত ভাই বোন আছে। এখন সবাই নিজেদের নিয়ে একটু ব্যস্ত। যখন তারা সবাই আসবে তখন দেখিও এটা বাড়ি মনে হবে না কোন চিড়িয়াখানা মনে হবে। ওদের সাথে ইফান এতো ফ্রি তোমাকে কি আর বলবো। কেউ কেউ তো ওদের প্রথমে আলাপ করতে দেখলে ভুল ভাল চিন্তা ভাবনা করে বসে থাকে। তা-ই মেয়েদের আগেই বলে রাখছি আমার দুই ছেলের থেকে তোরা সবাই দূরত্ব বজায় রাখবি। ইফানের থেকে ইহান বেশি ফাজিল। ইফান তাও লিমিটের মধ্যে থাকে ইহান তো যা বলা যায় তার উল্টাই করে। ছোট ছেলেটা পুরো বাদর। যখন দেশে আসবে তখন তোমাকে দেখবা জ্বালিয়ে মারবে। আর হ্যাঁ ওদের ফাজিল কাজিনদের কথা না বলাই ভাল।

অরিন- আন্টির আপনি আজরি…
কথাটা পুরো বলার আগেই ইফান এসে বলে,”অরিন চলো তোমাকে আইসক্রিম খেতে বাহিরে নিয়ে যাবো।”

অরিন হঠাৎ এমন কথা শুনে খুশিতে লাফাতে লাফাতে ইফানের সাথে বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে আসে। ইফানে সাথে আইসক্রিমের দোকানে আসার পথে এতো পকর পকর করছে বেচারা ইফানের কান শেষ। তবে এসবের মধ্যে অরিন আজরিন নামের মেয়েটার কথা ভুলে গেছে।

অরিন কে বাড়িতে আনার পথে ইফান শক্ত কন্ঠে বলে,”আজরিনের কথা বাড়ির কেউ যদি জানতে পারে তাহলে আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবো। বাকিটা তোমার ইচ্ছা। ”

অরিন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজেকে বলে,”কইলাম না ঐ আজরাইলের কথা কারো কাছে। তবে আপনাকে যে শান্তিতে থাকতে দিবো তা কিন্তু ভাবতে যেও না সুন্দর বেয়াদব স্বামী জান।”

এইভাবে কয়েকদিন কেটে যায়।

(মন্তব্য করবেন প্লিজ)



চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here