#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_১৪
#Nishi_khatun
বাড়িতে প্রবেশ করার সময় অরিনের চোখ জোড়া ছানাবড়া হয়ে যায়। বাড়ি থেকে সকালে যাবার সময় বাড়িটা ছিলো একরকম আর এখন বাড়িটা দেখে মনে হচ্ছে এটা বিয়ে বাড়ি।
বাড়ির আশেপাশে সেই সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে। চারদিক তাকিয়ে দেখতে দেখতে বাড়িরে ভেতরে প্রবেশ করার সময় অরিন হোঁচট খেয়ে ধপাস করে পড়ে যেতে লাগে।
ইফান দ্রুত অরিন কে ধরে ফেলে।
অরিন মুগ্ধ নয়নে ইফানের দিকে তাকিয়ে থাকে। উফফফফফ আজ কতোদিন পর উনি আমাকে হিরোদের স্টাইলে বাঁচিয়েছে।
আপনজন দের স্পর্শ খুব অন্যরকম হয়।
এখানে থাকে না খারাপ কোন চাহিদা।
এই স্পর্শে থাকে তো কেয়ার আর ভালোবাসার ছোঁয়া। যা সারা শরীরে ভালোলাগার শিহরন সৃষ্টি করে।
কতো সাধনার পর নিজের সব থেকে কাছের মানুষটার বুকের এতোটা কাছে।
অরিনের এতো সুন্দর মনোমুগ্ধকর মুহূর্তে ইফান পানি ঢেলে দেয়। সে অরিন কে সোজা ভাবে দাঁড় করিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,
“এই মেয়ে তোমার মন থাকে কোথায়? ”
অরিন মনে মনে বলে,
“আবার কোথায় আপনার নিকটে থাকে!”
-চোখ দুটি কি আকাশে ছিলো? এখানে যদি পরে যেতে তাহলে তোমার কি অবস্থা হতো ভাবতে পারছো?
এখুনি তোমাকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হতো।
একটু সাবধানে চলাচল করতে পারো না?
না মানে, মাথা নিচু করে বলে,
” আসলে আপনাদের বাড়িটা এতো সুন্দর করে সাজিয়েছে তা-ই।”
“হুম! তা-ই কী?”
“মুগ্ধ হয়ে বাড়িটা দেখছিলাম কয়েকমাস পর তো আর এই বাড়িতে থাকা হবে না। হয়তো কখনো মেহমান রুপে আপনাদের বাড়িতে আমার আগমন হবে নয়তো না।”
“অরিনের মুখে দূরে চলে যাবার কথা শুনে ইফানের বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে ওঠে। আচ্ছা মেয়েটা চলে যাবে বলতেই আমার খারাপ কেনো লাগছে?
আসলে এতোদিন মেয়েটা আমাদের বাড়িতে আছে আমার সাথে তার সম্পর্ক টা আগের মতো রুক্ষ নেই অনেকটা মোলায়েম হয়েছে।”
এরপর অরিনের দিকে দৃষ্টিপাত করে শুকনো হাসি দিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে যায়।
ইফান চলে যেতেই অরিন বলে,
–“জানি এমন একটা সময় আসবে যখন, আপনার মনের মন কুঠুরিতে আমার শূণ্যতা বড্ড পোড়াবে। সেদিন আমি রহিবো আপনার মনের গহীনে। সময় টা সেদিন হবে বড্ড বেশি স্বার্থপর আমি আমার আত্মসম্মান কখনো নষ্ট করবো না।”
এদিকে বাড়ির ভেতরে এসে দেখে কেউ নেই? সবাই একসাথে কোথায় গেছে? তারপর দ্রুত রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসে। ইফান বেশির ভাগ সময় তার রুমে খাবার খেতে ভালোবাসে।
এদিকে অরিন খাবার খেতে এসে জরিনা কে প্রশ্ন করে,
“খালা বাড়ি সবাই কোথায় গেছে? তাদের কাউকে তো দেখছি না?বাড়িতে মেহমান আসলো তাদেরকেও দেখছি না।”
জরিনা ভ্রু কুঁচকে অরিনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
–“এতো দিন এই বাড়িতে আছো আর এইডা জানো না বাড়ির মানুষ গুলান একলগে কই গেছে? ”
অরিন স্মিত হেসে উত্তর দেয়,
আসলে আমি লেখাপড়া নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকি তা-ই সবার সাথে সে ভাবে কথা হয় না। তাই বাড়ির কোন খবর বঠিক বলতে পারছি না। আপনি একটু বলেন এবাড়িতে কি কোন অনুষ্ঠান আছে?
জরিনা একটু ভাব নিয়ে বলে,
–“সারাদিন আরো বেশি ইফান বাবার লগে ঘষাঘষি করো তাইলে আর এই বাড়ির খবর জানবা কেমনে? সারাদিন তো দেখি মাছির মত ইফান বাবার আগে পেছনে ভনভন করো। এই মাইয়া তোমার মতিগতি কিন্তু আমার ঠিক লাগে না। ইফান বাবারে ফাঁসিয়ে বিয়ে শাদী করতে চাও না তো? তা যদি করতে চাও সমস্যা নাই কা। ইফান বাবা কোনদিন ও তোমারে পাত্তা দিবো না।”
অরিন ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“আপনি কথা ঠিক ভাবে বলেন। আমি এমন টাইপের মেয়ে না যে তার রুপ দেখিয়ে ছেলেদের আকৃষ্ট করতে যাব। আমি আমার যোগ্যতায় মানুষকে আপন করতে পারি।”
জরিনা বলে,”তোমার হেই যোগ্যতা হইবো না হেতির অন্য কারো লগে ইটিশপিটিশ আছে।আর হেই মাইয়ার সামনে তুমি কোন কিচ্ছু না বুঝলে? এরপরে থেকে ইফান বাবার পেছনে ঘুরবা না।”
ইফানের অন্য কারো সাথে রিলেশন আছে তা সে আগে থেকেই জানতো। তবে কখনো সে বিষয়ে মন খারাপ হতো না। আজ কেনো জানি জরিনার মুখে ইফানের রিলেশনের কথা শুনে কলিজার মধ্যে মোচড় দিচ্ছে। কোনদিন ও কি সে ইফানের যোগ্য হতে পারবে না?
এরপর অরিন বলে,
“খালা বাড়ির ছেলের পারোসোনাল লাইফে খবর অন্যের সামনে প্রকাশ করতে নাই। আপনার বোঝা উচিৎ আমার স্থানে অন্য কেউ থাকলে খবরটা কে অন্য ভাবে গ্রহণ করতে পারে।”
জরিনা মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে বলে,
–“আছো তো এই বাড়ির আশ্রিতা হয়ে। সেখানে এতো বড় বড় লেকচার দেও কেমনে? আজ পর্যন্ত কোন কামকাজ তো করবার দেখলাম না। যে বাড়িতে থাকো সেখানে কাজ না করে খাবার গিলতে লজ্জা করে না?”
আপনি কিন্তু আপনার লিমিট ছাড়িয়ে কথা বলছেন। আমাকে এভাবে কথা বলার কোন অধিকার আপনার নেই। কোন সাহসে আপনি আমাকে খাবার খোঁটা দিচ্ছেন? আমি কিন্তু আপনার খাবার খাচ্ছি না। যাদের খাচ্ছি পড়ছি তাদের সমস্যা হচ্ছে না আপনার কেনো সমস্যা হচ্ছে?
এমন সময় জরিনা ইফান কে দেখে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে জোড়ে জোড়ে বিলাপ করে বলতে শুরু করে,
—“ও বাবা গো এতোদিন ধরে এই বাড়িতে কাম করি! কেউ কোনদিন আমারে একটা কটু কথা কইনা। এই মাইয়া আমারে নানারকম বাজে কথা কইয়া কষ্ট দিচ্ছে। ও ইফান বাবা- আমি যে তোমাগো বাড়ির কামের বেডি আজ এইডা এই মাইয়া বুঝিয়ে দিছে। আর কোনদিন ও আমি কামের বেডি হেই কথা ভুলবো না।”
অরিন ইফানের সামনে এসে বলে,
–“বিশ্বাস করুণ আমি তাকে এমন কোন কথা বলি নাই! যার জন্য সে মনে কষ্ট পাবে। বরঞ্চ উনি আমাকে আশ্রিতা…”
আর কিছু বলার আগেই জরিনা বিলাপের সুরে বলে,
“দেখছ বাবা এই মেয়ে কতো কথা বলে।
তাহলে বোঝ এবার সে আমাকে অপমান করে নাই?”
ইফান কারো পক্ষ না নিয়ে অরিন কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“অরিন তোমার খাওয়াদাওয়া কমপ্লিট?
তাহলে এবার নিজের রুমে যাও।
এখানে বাড়তি কোন কথা আর শুনতে চাইছি না।”
অরিন মনটা খারাপ করে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।
“একটু সুখের খোঁজ পেতে না পেতেই দুঃখ দুয়ারে এসে হাজির এরি নাম জীবন।”
ইফান জানে অরিন কখনোই জরিনা খালাকে মনে দুঃখ দিয়ে কিছু বলবে না এতোটা বিশ্বাস আছে তার উপর। তবে জরিনা খালা যে মিথ্যা বলছে এটাও মানতে পারছে না। তবে ইফান জানে জরিনা খালা অরিন কে পছন্দ করে না। হয়তো সেই জন্য অরিনের কথা গুলো জরিনা খালা উল্টাপাল্টা ভেবেছে। এখন জরিনা খালার পক্ষ নিয়ে কথা বললে অরিন কে অপরাধী বলা হবে। অরিনের পক্ষ নিয়ে কথা বললে জরিনা খালা মনে কষ্ট পাবে। আমি দুজনের কারো মনে কষ্ট দিতে চাই না।
এদিকে অরিন ভাবছে এতোদিন যাকে ভালোবাসি সে আমাকে বিশ্বাস করে না। অযথা এই মনটা তাকে দিয়েছি। তাতে কি? মন তো মন।
এদিকে বিকাল পেড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে তবুও বাড়ির মানুষদের আসার নাম নেই। অরিনের মনটা ভালো ছিলো না তা-ই সে আগেই ঘুমিয়ে পড়ে এদিকে রাতে বাড়িতে কতোশত কাহিনী হইছে সে সব সম্পর্কে অরিন অবগত নয়।
সকাল বেলা কলেজের জন্য রেডি হয়ে রুম থেকে বেড়ুতে যাবে তখন কারো সাথে খুব জোড়ে ধাক্কা খায়।
(সবার কাছ থেকে মন্তব্য আশা করবো)
‘
‘
‘
চলবে…