#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_১৫
#Nishi_khatun
অরিন নিজের সামনে তাকিয়ে দেখে এক সুন্দরী রমনী তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অরিনের থেকে বয়সে বড় হবে! আর দেখতে মাশাল্লাহ্ অনেক সুন্দরি।
অরিন নিজেই হ্যা করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।
সামনে থাকা মেয়েটা অরিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,”এই মেয়ে কে তুমি? আর এবাড়িতে কি করছো?”
অরিন মুচকি হেসে উত্তর দেয়-
“আমি অরিন। এবাড়িতে থেকে লেখাপড়া করি। আপনি কে আপু?”
মেয়েটা ভাব নিয়ে বলে,”আমি ইফানের মামার একমাত্র কন্যা আজরিন আইজা।”
মাশাল্লাহ্ নামের মতো দেখতেও সুন্দর অনেক আপনি।
-ধন্যবাদ! তুমি ফুফুদের বাড়িতে কতো দিন ধরে আছো?
এইতো বছর পেড়িয়েছে আপু।
আজরিন অরিন কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বলল- একবছরের মতো আছো এ বাড়িতে? কই ফুফু বা ইফান ভাই তো কিছু বলে নাই আমাদের? যার বাড়িতে দুইটা বিয়ের উপযুক্ত ছেলে আছে তার বাড়িতে বিয়ের উপযোগী মেয়ে রাখা তো উচিৎ কাজ নয়?”
অরিন নিরবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”আসলে আমি তো ঐবাড়ির আশ্রিত তা-ই হয়তো আন্টি আত্মীয়দের কিছু বলে নাই। আমার এইচএসসি পরিক্ষা শেষ হলে আমি এ বাড়ি থেকে চলে যাবো। তাছাড়া আমি যাদের আপন না তাদের ফ্যামিলির সবার সাথে পরিচিত করে বা কি হবে?”
-সে যাই হোক! দুই বছরের জন্য তোমাকে এবাড়িতে রাখার কি দরকার ছিলো? হোস্টেলে রেখে দিলেই পারতো। এই তোমার জন্য মনে হয় ইফান ভাই আগের মত আমার সাথে কথা বলে না। এইবার বুঝলাম একবছরে তার এতো পরিবর্ত কেন?
অরিন হেসে বলে,”আপুর বুঝি আমাকে পছন্দ হচ্ছে না। আপু চিন্তা করবেন না আমার আর ইফান স্যারের মধ্যে এমন কোন সম্পর্ক নেই। যার জন্য আমি ইফান স্যারের লাইফে তৃতীয় কেউ হবো।”
আজরিন ভ্রু কুঁচকে বলে,”এই তুমিও তাহলে জানো ইফানের লাইফের কাহিনী? যাক তাহলেই ভাল তুমি তৃতীয় কেউ না হলেই ভালো হবে। আমিও চাই- না তুমি ইফানের জীবনের কোন অংশীদার হও।”
অরিন চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। তখন আজরিন বলে,”আর হ্যা শোন! এবাড়িতে অনেক ছেলে মেয়ে আছে তাদের কারো সাথে খবরদার কোন রকমের ঢলাঢলি করতে যাবে না।”
”আচ্ছা আপু আপনি কি একটু বেশি জার্জ করছেন না আমাকে?”
এমন সময় তাদের পেছন থেকে সুন্দর মিষ্টি সুপুরুষ কন্ঠে কেউ একজন বলে ওঠে,
“এখানে কে কাকে জার্জ করে?”
অরিন সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে একজন সুদর্শন-পুরুষ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মাশাল্লাহ্ ছেলেটা দেখতে অনেক মিষ্টি। যে কোন মেয়ে তাকে এক নজর দেখলেই স্বামী হিসাবে কল্পনা করতে পারে।
তবে অরিনের কল্পনা জুড়ে তো ইফানের বসবাস সেখানে এই বেচারার কোন জায়গা নেই।
ছেলেটা অরিনের সামনে এসে দাঁড়াতেই সে খুব ভালো ভাবে একবার অরিন কে দেখে নেই। তারপর বলে,
“এই মিষ্টি মেয়ে কে তুমি?”
অরিন মুচকি হেসে জবাব দেয়- আমি অরিন! এই বাড়ির আশ্রিত।
আজরিন ছেলেটার হাত ধরে বলে,”এই ইহান তুমি এখান থেকে চলো! তোমার মেয়েটার সাথে বেশি কথা বলার দরকার নেই। ওর সম্পর্কে যা জানার তা পড়ে জেনে নিও। এখন তুমি এখানে থেকে চলো!”
ইহান আজরিনের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”দেখো আজরিন আমার একদম গায়ে পড়া মেয়ে পছন্দ না। তুমি আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে। আর হ্যা আমি কার সাথে কখন কতোটা কথা বলবো সবটা আমার ব্যক্তিগত বেপার।”
আজরিন মন খারাপ করে বলে,”তুমি কিন্তু একটা বাহিরের মেয়ের সামনে আমাকে অপমান করছো?”
ইজাজ রহমান সেখানে এসে অরিনের মাথায় হাত বু্লিয়ে দিয়ে বলে,”ইহান! এ হচ্ছে অরিন। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মেয়ে। অরিনের বাবা- মা’র অবর্তমানে আমরা ওর দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা কখনো কাউকে অরিন কথা জানাতে পছন্দ করি নাই। কারণ, সবাইকে অরিনের কথা জানালে তারা নানারকম মন্তব্য করে মেয়েটার মনোবল নষ্ট করে দিবে। আমরা অরিন কে নিজের মেয়ে মনে করি। আশা করবো ইহান তুমি কোন ভাবে আমার মেয়েটাকে এমন কোন কথা বলবে না যার জন্য সে কষ্ট পাবে?”
ইহান হিরোদের মতো ভাব নিয়ে বলে,”না আমি কষ্ট দিবো না কাউকে কষ্ট দিতে দিবো। যে অরিন কে কটু কথা বলবে আমি তার উঁচু নাক ভোঁতা করে দিবো।”
আজরিন তেড়ে এসে বলে,”ইহান সব সময় আমার উঁচু নাকের দিকে কেন নজর দাও? নিজের নাকে তেল দাও।”
আজরিন কে উত্তর না দিয়ে অরিনের হাত ধরে সোজা ড্রয়িংরুমে এসে ইহান উপস্থিত হয়। ড্রয়িংরুমে বাড়ির সবাই উপস্থিত ছিল। তখন ইহান সেখানে এসে তার মা’কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আম্মা তুমি এটা কিভাবে করতে পারলে?”
সেখানে উপস্থিত সকলে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
তবে ইফানের নজর ইহানের হাতের দিকে।
ইফানের খুব রাগ লাগছে। ইহানের বাচ্চার কি সাহস!
দেশে আসতে না আসতেই তার আকাম শুরু? অরিনের হাত ধরে বাড়ির সকলের সামনে উপস্থিত? এতোদিন সে আমার সাথে যাতায়াত করে আমি কখনো ওর হাত ধরি না। আর আমার ভাই অরিনের হাত ধরে আছে কোন সাহসে?
জিনিয়া- কি সমস্যা তা-ই বল।
-অরিনের মত মিষ্টি মেয়ে যে আমাদের বাড়িতে আছে সে কথাটা অন্ততপক্ষে আমাকে জানাতে পারতে তো?
ইফান রাগী কন্ঠে তেতে বলে,”হ্যা আরো আগে তোকে খবর দিলে তো তুই দৌড়ে দেশে এসে অরিনকে কোলে করে ঘুরাঘুরি করতিস তা-ই না ? ”
অরিন ইফানের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে।
ইহান একগাল হেসে বলে,”হ্যা তা মন্দ বলিশ নাই। অরিনের হাত ধরেছি তাতে এই মন্তব্য করছিস।
কোলে করলে তুই হয়তো স্টোক করে হসপিটালে এডমিট থাকতিস। তোর যা ন্যাচারা আমি ভালোয় জানি! হিংসুক একটা।”
দুই ভাইয়ের এমন কান্ডে অরিন সেই বিনোদন পাচ্ছে।
এদিকে এদের দু ভাইয়ের এমন কান্ড দেখে আজরিন রাগে লুচির মতো ফুলতে থাকে।
তাতে এখানে উপস্থিত কারো কিছুই না।
জিনিয়া ইহানের কান টেনে নিজের কাছে এনে বলে,”কাল রাতে দেশে আসতে না আসতেই সকালে বড় ভাইয়ের সাথে খুনশুটিতে মেতেছিস? জানিস না আমার ইফান কতো ভদ্র।”
ইহান – মা ভুলে যেওনা! অতি ভদ্রতা চোরের লক্ষণ। তোমার ছেলে যে কত বড় চোর তা ভালোয় জানো!
অরিন হুট করে সবার সামনে বলে বসে,”লেকচারার স্যার আজকে কি কলেজে যাবেন না?”
সকলে অরিনের দিকে ভুত দেখার মতো তাকিয়ে আছে!
অরিন সকলের দৃষ্টি যে তার দিকে তা বুঝতেই একটা শুকনা ঢোক গিলে আমতাআমতা করে বলে,”আমি কি কোন ভুল কথা বলেছি?”
ইহান – ভুল মানে! অপরাধ করেছো। জানো আমার ভাই তার সাথে কখনো অন্য কাউকে এলাউ করে না। সেখানে তুমি তার সাথে যাবার কথা বলছো?
হ্যা! আমরা তো রেগুলার একসাথে এক গাড়িতে যাওয়াআসা করি।
ইহান ভাইয়ের কাঁধে সাবাসি দিয়ে বলে,
“বাহ বাহ দিনে দিনে ভাই তোমার কতো রুপ দেখিব।”
ইফান কোন কথা না বলে সোজা অরিনের হাত ধরে তাকে নিয়ে ড্রয়িংরুম ত্যাগ করে।
কিছুসময় পর ইফান রেডি হয়ে এসে ককলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
ইহান তার মা’কে জড়িয়ে ধরে বলে,”মা ঐ টা তোমার সেই অ্যাংরি বার্ড তো? না মানে হঠাৎ তার এতো পরিবর্তন কিভাবে? ”
জিনিয়া- সব কিছু আল্লাহ রহমত বলে চলে যায়।
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন! রিভাইস দেওয়া হয়নি)
‘
‘
‘
চলবে….