রহিবে মনের গহীনে পর্ব-১৬

0
1890

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_১৬
#Nishi_khatun

কলেজে যাবার পথে গাড়িটা কে নিরব স্থানে থামিয়ে দেয়। তারপর অরিনের হাত ধরে বাহিরে বেড়িয়ে এসে বলে,”এই ইহানের থেকে দূরে থাকবে তুমি বুঝলে?”

-মাঝরাস্তায় গাড়ি থেকে নামিয়ে এই কথা বলার কি দরকার ছিলো? এই সামান্য কথা তো বাড়িতেই বলতে পারতেন।

এই শোনো তোমাকে লেকচার দিতে বলি নাই! যা বলছি তা-ই করবা। আমার ছোট ভাইয়ের থেকে দূরে থাকবা।

আপনি কি ইহান ভাইয়ের প্রতি জেলাস ফিল করছেন? আমি তার সাথে মেলামেশা করলে সমস্যা কোথায়?

ইফান অরিনের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
তার রাগী দৃষ্টি দেখে অরিন কেবলার মতো হাসি দিয়ে বলে,”স্যার চিন্তা করবেন না! আর যা ইচ্ছা করি দেবরের সাথে কিন্তু প্রেম করবো না। ”

ইফান অরিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে তা দেখে অরিন আমতাআমতা করে বলে,”না মানে কিছু না ক্লাস করতে দেড়ি হয়ে যাবে!”

তারপর আর মুখ দিয়ে ভুল করেও কোন শব্দ উচ্চারণ করে না। নিজের ভুলে আজ একটুর জন্য লেকচারার সাহেবের কাছে বকা খাই নি। নয়তো ইহান ভাইকে দেবর বানানোর শখ মিটে যেত আজ।

বাড়িতে ফিরতেই আজরিন এসে অরিনের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়।

ইহান আজরিনের সামনে এসে বলে,

-“আচ্ছা বয়স তোমার কম হলো না।
বুদ্ধি-শুদ্ধি কবে হবে শুনি?”

আজরিন মুখটা গোমড়া করে বলে,”আমার বয়স নিয়ে কেন টানাটানি করছো?”

ইফান এসে বলে,”রিন তোর বউ হবে না চিন্তা করিস না, ওর বয়স বেশি না পঞ্চাশ পার। ”

আজরিন ন্যাকামি করে বলে,”দেখো ইফান ভাই তুমিও শুরু করে দিও না। তাহলে সহ্য করতে পারবো না।”

অরিন মনে মনে বলে,”শাঁকচুন্নি সহ্য করতে না পারলে দূরে বিদায় হও। আমার জামাই এর আশেপাশে ঘুরাঘুরি করার কি দরকার? ”

ইহান – আজরিন তোকে এমনিতে দেখতে মন চাই- না। যার বয়স একশো বছর সে মেয়ে করে বাচ্চাদের মতো কাজ করাবার। এই তুই দেখছিস না মেয়েটা সারাদিন পর কলেজ করে বাড়িতে এসেছে। ওরে আগে ফ্রেশ হতে তো দিবি। তা না করে গরুর মতো টানাটানি করছিস। কেন রে ভাই তোর কি বাস ছুটে যাচ্ছে? ”

ইফান – এই টা ঠিক বলছিস ইহান রে। আজরিনের কমন্সের বড় অভাব। অরিন কে ফ্রেশ হতে দেও আগে তারপর বাকি কথা বলিও।

আজরিন এরপর ও দুই ভাইয়ের কথা কানে না তুলে সোজা অরিন কে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।
অরিনের হাতে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলে,

-“যাও আগে ফ্রেশ হয়ে এসো!”

অরিন ভদ্র বাচ্চাদের মতো প্যাকেট নিয়ে বাথরুমে চলে যায়।

বাথরুম থেকে বেড়িয়ে অরিন আজরিন কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপু এই ড্রেসটা তো তোমার ড্রেসের মতো। একদম কপি ড্রেস। ”

আজরিন বলে,”হুম এই জন্য তোমাকে দিলাম। আমি যতোদিন থাকবো দু জন সেইম সেইম ড্রেসআপ করবো। আর হ্যা শোন সকালের ব্যবহারের জন্য দুঃখীত মাফ করে দিও।”

আরে আপু কি যে বলো না। আমার কাছে মাফ চেয়ে লাভ হবে না। আমি তোমাকে মাফ করতে পারবোনা। যদি না আমার একটা শর্তে রাজী হও।

“কী শর্ত শুনি তো আগে?”

আমাকে নিজের ছোট বোন ভাবতে হবে তাহলে মাফ করবো নয়তো না।

-আচ্ছা সমস্যা নেই। আসলে আমাদের বাড়িতে আমি একমাত্র মেয়ে আর কারো মেয়ে নেই।
বাড়ির সবার অতিরিক্ত আদরে একটু বান্দরী হয়ে গেছি। তা-ই তো কখন কারে কি বলি নিজেও জানি না। পরে যখন বুঝতে পারি তখন অনেকটা দেড়ি হয়ে যায়। আসলে সে ভাবে কেউ শাসন করে না আমাকে। ফুপির বাড়িতে আসলে দুই ভাই আমাকে আদবকায়দা শেখায় আবার ফুপিও শেখায়।

“আসলে আপু জানো তো মানুষকে কোন কিছু বলার আগে একটু চিন্তা করা উচিৎ। কারণ আমরা একবার সামনের মানুষকে যা বলি না কেনো। তার মনে কিন্তু সে কথার রেশ ঠিকি থেকে যাবে। কথা হচ্ছে যে কোন অস্ত্রের থেকে বেশি ধারালো। এটা মানুষের হৃদয়টাকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।”

আজরিন অরিনের কপালে টুপ করে একটা চুমা দিয়ে বলে,”তোমার বাবা- মা সৌভাগ্যবান! তাদের মেয়েটা খুব বুদ্ধিমতি। তাদের সাথে একবার দেখা করা উচিৎ।”

অরিন মুচকি হাসি দিয়ে বলে,”তাহলে চলো আপু কালকে তোমাকে আমার বাবা- মা’র সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাবো।”

আজরিন খুশি মনে বলে,”আচ্ছা তাহলে তো কালকে ছোটখাটো একটা টুর হয়ে যাবে।”

“হুম”

অরিন ইফানের রুমের দরজাতে নক করে বলে,”লেকচারার সাহবে আপনার রুমের ভেতরে কি আসতে পারি?”

ইফান নিজের জানালার বাহিরে তাকিয়ে আকাশের দিকে ভালো করে দেখতে চেষ্টা করে।

অরিন রুমের ভেতরে প্রবেশ করে বলে,”সূর্য পশ্চিমে ওঠে নাই পূর্ব দিকে উঠেছে।”

বাহ! আজকাল দেখছি আমি কিছু না বলতেই বুঝে যাচ্ছ।

-হ্যা! শুধুমাত্র আপনার মনটাকে বুঝি না এটুকু আস্তে বলে।
আচ্ছা শোনেন বলছি যে কাল তো শুক্রবার সবকিছু ছুটি। কালকে যদি একবার আমাদের বাড়ি থেকে আমাকে নিয়ে ঘুরে আসতেন তাহলে খুব ভালো হতো।

ইফান বেশকিছু সময় চুপচাপ থাকার পর বলে,”আচ্ছা কাল সকালে রেডি থেকে নিয়ে যাবো তোমাকে।”

অরিন খুশি ইফান কে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও নিজেকে কন্ট্রোল করে ধন্যবাদ বলে রুমের বাহিরে চলে আসে।

এদিকে অরিনের এমন কান্ডে ইফানের বেশ খারাপ লাগছিল। মেয়েটাকে যদি একটু খুশির মুহূর্ত উপহার দেওয়া যায় তাহলে মেয়েটা কতো বেশি খুশি হয় আর সব সময় ইফান কে জোড় করে হলেও জড়িয়ে ধরে।তবে আজ অরিন ইফান কে জড়িয়ে ধরে নাই।

ইফান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে। নিজের জন্য কোনটা ঠিক বেঠিক তা বুঝতে শিখে গেছে। আমি যে ওর জন্য যোগ্য না তা নিজেই অনুভব করতে শিখেছে অরিন। এটাই একসময় হবার ছিলো আজ হলে সমস্যা কোথায়? ”

সেদিন সবাই মিলে এমনিতে অনেক মজা করেছে।কিন্তু ইফান রুমের বাহিরে আসে নাই। সারারাত নির্ঘুম কেটেছে। তার নির্ঘুম রাতের খোঁজ কেউ রাখে নাই।

(ব্যস্ত আছি তা-ই পর্ব বড় করে দেওয়া সম্ভব না। গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সবাই)



চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here