রহিবে মনের গহীনে পর্ব-১৯

0
1986

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_১৯
#Nishi_khatun

এরপর বেশ কিছুদিন পার হয়ে যায়।
ইহান দেশে সেটেল হবার সিদ্ধান্ত নেই। তা-ই জন্য দেশে একটা ভালো কোম্পানিতে জব করছে।

এদিকে আজরিন তার বাবার সাথে বাড়িতে ফিরে যায়। তবে সেখানে যাবার পর রেগুলার অরিনের সাথে যোগাযোগ করে। আজরিনের আরো কিছু কাজিনের সাথে অরিনের বেশ ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

এদিকে ইফানের নানী মা ইফানদের বাড়িতে থেকে গেছে। এতোদিন হলো উনি এ বাড়িতে আছে তবে তার সাথে অরিনের সম্পর্কটা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। অরিন নিজের দিক থেকে অনেকটা চেষ্টা করেছে কিন্তু নানি মা যদি ইচ্ছা পোষণ না করে সেখানে জোর করে সম্পর্ক গড়া সম্ভব না।

এদিকে অরিনের প্রতি ইফানের মুগ্ধতা তার চরম সীমানা পার করে যাচ্ছে। ইহান আসার পর থেকে সারাক্ষণ অরিনকে একপ্রকার জোর করে হলেও লেখাপড়াতে অতিরিক্ত ব্যস্ত রাখে। সারাক্ষণ অরিনের উপর নিজের অধিকার আছে তা জাহির করতে ব্যস্ত।

অরিনের জীবনের কাহিনী এখন এমন ইফানে শুরু তো ইফানে শেষ। ইফানের সাথে সকালে কলেজে যাবে। তার সাথে বাড়িতে আসবে আসার পর ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করেই আবার লাইব্রেরী রুমে ইফানের সাথে লেখাপড়া করতে হয়। দরকার হলে ইফান তাকে সাথে করে এদিকে সেদিকে নিয়ে যাবে একাকীত্ব দূর করতে।

আজকাল অরিন ইফানের প্রতি বড্ড বেশি বিরক্ত হচ্ছে। আমি তো বুঝি লেকচার সাহেব আপনি আমাকে নিয়ে জেলাস ফিল করেন।
আমাকে হারিয়ে ফেলবার ভয়ে নিজের ছোট ভাইয়ের সাথেও ঠিকমতো কথা বলতে দেন না।
কেউ আমাকে আশ্রিত বলে অপমানিত করতে না পারে সেই জন্য বাড়িতে মেহমান আসলে নানারকম অজুহাত দিয়ে আমাকে নিজের সাথে বাহিরে নিয়ে চলে যান। মেহমান চলে যাবার পর বাড়িতে ফিরে আসেন। আমি কি পছন্দ করি, আমার কী খাবার পছন্দ, কী পড়তে ভালোবাসি সব কিছুর খেয়াল রাখেন। আমার চেহারার রং একটু ফ্যাকাসে হলেই আপনার সেদিন টা বড্ড বেশি কষ্টের যায়।
আচ্ছা আমার প্রতি আপনি এতো বেশি পজিটিভ তাহলে কেন নিজের মনের কথা আমার নিকটে ব্যক্ত করেন না? কিসের এতো জড়তা? কেনো আমাকে আপন করে নিতে চাইছেন না আপনি? জানেন আপনার এতোটা কাছে থেকেও আমাদের মাঝের দূরত্ব আকাশ সমান। বাহিরে যে কেউ দেখলে বলবে আপনি আমাকে ভালোবাসেন! কিন্তু আপনি কখনো তা স্বীকার করতে চাইছেন না। আচ্ছা আপনার আর আমার বয়সের মধ্যের গ্যাপটা কি দায়ী না কি অন্য কিছু রহস্য আছে? আচ্ছা সারাজীবনে কি কোনদিন ও আপনার অনুভূতি গুলো আমার নিকটে প্রকাশ করবেন না? আপনার অব্যক্ত অনুভূতি গুলোকে আমি বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।

“কোনদিন যদি আমার অনুভূতি গুলো প্রকাশের সুযোগ আসে অবশ্যই প্রকাশ করবো।
নয়তো আপনার প্রতি থাকা সুপ্ত ভালোবাসা #রহিবে_মনের_গহীনে লুকায়িত। ”

পড়ার টেবিলে বসে নিজের পড়াতে মন না দিয়ে ইফান কে নিয়ে এসব চিন্তা করতে গিয়ে কখন যে গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে গেছে তা অরিন জানে না।

অরিনের পাশে একটু দূরত্বে বসে ভার্সিটির স্টুডেন্টদের পরিক্ষার খাতা দেখছিল ইফান।
নিজের কাজ শেষ করে অরিনের দিকে তাকাতেই দেখে হাতের উপর মাথে রেখে পড়ার টেবিলে মনের সুখে শুভ্রপরী ঘুমিয়ে আছে। বড্ড এলোমেলো হয়ে আছে তার অবাধ্য চুল গুলো।
ইফান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

“বেচারি! লেখাপড়া করে নিজের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করতে গিয়ে নিজের খেয়াল রাখার কথা ভুলে যায়। এই ভুলো মনের মেয়েটার আমি কি করবো? সারাদিনে যদি নিজের একটু খেয়াল রাখে।
তার খেয়াল রাখার দায়িত্ব এখন আমার!
আহা কি এক অবস্থা আমি যাকে এক মুহূর্তের জন্য সহ্য করতে পারতাম না আজকে তাকে দুনিয়ার সকল সমস্যার হাত থেকে আড়ালে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। জানি না মেয়েটা আবার কোনদিন আমার এই কেয়ার গুলোর খারাপ কোন মানে ভেবে না বসে থাকে। আমি যে তাকে ভালোবাসি না এটা তাকে বলা দরকার। আমি তো শুধু মাত্র অরিনের প্রতি আমার দাঁয়িত্ব পালন করি সব সময়।”

এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অরিনকে কোলে করে লাইব্রেরি রুমের একটা সিঙ্গেল বেড ছিলো তার উপর শোয়াই দেয়। এরপর নিজের রুম থেকে একটা কাঁথা এনে অরিনের গায়ে জড়িয়ে দেয়। তার অবাধ্য চুল গুলোকে সুন্দর করে বেধে বাধ্য করে দেয়। টুপ করে অরিনের কপালে একটা চুমা দিয়ে হেসে দেয়।

এটা তাদের বাড়ির ছোট একটা লাইব্রেরি রুম। এখানে বাড়ির ছেলেমেয়ে দের লেখাপড়া করার জন্য তৈরি করা। ইফান ইহান ছোট বেলা লেখাপড়ার করার জন্য সারাদিন এই রুমে পার করতো।
তা-ই ওর বাবা একটা সিঙ্গেল বিছানার ব্যবস্থা করে দেয়। কারন ইহান খুব দুষ্টু ছিলো।
তার কথা ছিল সারাদিন যেখানে লেখাপড়া করবো রাতের বেলা আমি সে রুমে ঘুমাবো। দুই এক বছর তো এটাই ইহানের বেড রুম ছিল।
তারপর অবশ্য নিজের ইচ্ছাতে সে এই রুম ত্যাগ করে। পরে আবার সুন্দর করে লাইব্রেরী রুপে ইফান নিজেই সাজিয়েছে। তবে ছোটবেলার স্মৃতিচিহ্ন গুলোর আর পরিবর্ত করে না। ইফানের এই কাজে তার বাবা মা খুব খুশি। ইফান ছোট থেকে খুব গোছালো। ইহানের মত সে বেপরোয়া না। তা-ই তো নিজেদের ছেলেবেলার এই লাইব্রেরী রুমটার ডেকোরেশন আজ অরিনের ঘুমানোর কাজে এসেছে।

এদিকে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে বড় ছেলে আর অরিন কে দেখে আজ ইজাজ রহমানের বেশ খুশি লাগছে। অবশেষে হয়তো ইফান অরিন কে নিজের জীবনসঙ্গী রুপে গ্রহণ করবে। হয়তো কিছুদিন পর বড় ছেলের সুখের সংসার হবে যেমনটা সব বাবা- মা আশা করে। এসব ভেবে চোখেরজল মুছে মুচকি হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

দূরে দাঁড়িয়ে ইহান সবটাই দেখছিল। ইহান একটা জিনিশ কিছুতে বুঝতে পারছে না ইফান অরিনের উপর কিসের এতো অধিকার বোধ দেখায়?
যেখানে তার অরিনের উপর কোন অধিকার নেই।
বাবা- মা কেমন যেন হয়ে গেছে, ভাই অরিনের বেপারে সব সিদ্ধান্ত নেয়। তাতে তারা কোন রকমের বাধা প্রদান করে না। আচ্ছা বুঝলাম অরিন ছোট মানুষ সে ভাইকে কিছু বলার সাহস করে না এবাড়িতে আশ্রিত বলে কিন্তু ভাই তো বাচ্চা না। এসব কিছু যদি বাহিরের কেউ দেখে তাহলে তারা তো অরিনের চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তুলবে না এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।
দ্রুত কিছু করতে হবে আমাকে। যখন বাড়ির বড়রা ভুল করে তখন ছোটদের দাঁয়িত্ব নিয়ে তাদের ভুল সংশোধন করতে হয়।

এদিকে অরিনকে রুমে রেখে দরজা বাহিরে থেকে লক করে দিয়ে ইফান নিজের রুমের দিকে যেতে লাগে। তখন ইহান ইফান কে প্রশ্ন করে,

“আচ্ছা ভাই তুই কি অরিন কে ভালোবাসিস?”

ইফান দ্রুত উত্তর দেয়- কাউকে ভালোবাসা আমার দ্বারা সম্ভব না। তা জেনে শুনে কেন বার বার এই একি প্রশ্ন করিস?

তাহলে অরিনের প্রতি যতো দাঁয়িত্ব সে সব কিছু কি নিছক মাত্র দাঁয়িত্ব?

-হ্যা! অরিন আমাদের দাঁয়িত্ব! আমি চাইনা মেয়েটার সুন্দর ভবিষ্যৎ কোন কারণে নষ্ট হয়ে যাক। সবার অধিকার আছে নিজের মতো করে জীবনটাকে উপভোগ করার। কারো জীবনে কোন ধরণের বাধা সৃষ্টি করার অধিকার আমাদের নেই।

ইহান – তা-ই না! আচ্ছা সমস্যা নেই। জীবনটা অরিনের তাই ওর ইচ্ছা মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।অরিনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কিন্তু আছে।

ইফান – হুম তা অবশ্যই আছে।

ইহান – ভাই যাদের ঘরে মেয়ে থাকে তাদের কিন্তু একটা সময় পর মেয়ের বিয়ে দিতে হয়।

-হুম কিন্তু সে সব তো মেয়ের বাড়ির লোকের চিন্তা। যেমন তুই যে মেয়েকে বিয়ে করবি সে মেয়ের বাড়ির মানুষেরা চিন্তা করবে।

হ্যা ভাই! ঠিক তেমন ভাবে তোকে এবার অরিনকে নিয়ে চিন্তা করা উচিৎ। মেয়েটা বড় হয়ে গেছে ওর জন্য ভালো যোগ্য ছেলে দেখে বিয়ের ব্যবস্থা তোকে করতে হবে।

অরিনের বিয়ের কথা শুনে ইফান বিষম খেয়ে যাচ্ছি তা-ই অবস্থা। চোখমুখ লাল টকটকে হয়ে গেছে। পারলে এখুনি ইহান কে কাচা চিবিয়ে খাবে। কিন্তু কেন জানি কোন রিয়াক্ট না করে ইফান নিজের রুমে চলে যায়।

ইফান চলে যেতেই ইহান বলে,”আচ্ছা ভাই সমস্যা নাই। তোমার রাতের ঘুম হারাম করার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত আছি যেমন আগেও ছিলাম।”

ইফান রুমের ভেতরে এসে রাগেগরগর করতে থাকে।এটা ভাই না দুশমন? বড় ভাইয়ের পেশার বাড়িয়ে দিয়ে সে এখন শান্তিতে রাতের ঘুম ঘুমাবে।এদিকে আমার রাতের ঘুম যে উড়ে গেলো তার খোঁজ কেউ নিবে না।

(প্লিজ মন্তব্য করবেন নেক্সট বলবেন না)



চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here