রহিবে মনের গহীনে পর্ব-২৮

0
1912

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_২৮
#Nishi_khatun

“মা তোমার সমস্যা কোথায়? শুধুমাত্র মেয়েটা আনিশার মতো দেখতে বলে তুমি তাকে সহ্য করতে পারো না? আনিশা তোমার নিজের মেয়ে ছিল!
মা হয়ে নিজের মেয়েকে এতোটা ঘৃণা কিভাবে করতে পারো? আমাকে যে এতো ভালোবাস!
আমি কি তোমার আপন মেয়ে?”

ইফানের নানী দ্রুত জিনিয়ার মুখে হাত দিয়ে বলে,
“তুই আমার নাড়িছেঁড়া সাত-রাজারধন না হলেও
তার থেকে বেশি কিছু। যাকে নাড়িছিঁড়ে দুনিয়ার বুকে এনেছিলাম সে বংশের মুখে চুনকালি মাখিয়ে পরপুরুষের হাত ধরে পালিয়েছিল।”

জিনিয়া ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
“মা তোমার কি নিজের শিক্ষার উপরে একটু ভরসা ছিল না? কেন নিজের মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারো নাই? কেনো নিজের মেয়ের চোখের ভাষার মানে বুঝতে চেষ্টা করো নাই? এসব কেনোর কোন জবাব নেই তোমাদের কাছে।”

ইফানের নানী বলে,”তুই চুপ কর জিনিয়া!
আমি ঐ মেয়ের নামে কোন কথা শুনতে চাই- না। আজ প্রায় ত্রিশ বছর আগের কাহিনী কেন এখন মনে করছিস। ঐ মেয়ে আমাদের জন্য বহু বছর আগেই মারা গেছে।”

জিনিয়া এবার সিক্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
“হ্যা সত্যি আম্মা! যে আপনাদের কাছে বহুবছর আগে মারা গেছিলো। সে এবার সত্যি সত্যি এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছে। কী সৌভাগ্য দেখেন আনিসার সে তার বাবা- মা’র আগে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। আর তার বাবা- মা কে দিয়ে গেছে অন্ধকার একটা দুনিয়া। এবার আপনারা শান্তিতে থাকেন। এতবছর ধরে তো এই খবরের আশায় বসে ছিলেন সবাই।”

আনিশার মৃত্যুর খবর শুনে তার বাবা- মা দুজনে পাথরের মত জমে গেছে। তাদের দু জনের মুখ দিয়ে আর কোন কথা বাহির হচ্ছে না।

তাদের দু জনের কাটা ঘাঁয়ে নুনেরছিটে দিতে জিনিয়া বলে,”আনিশার তিন সন্তান বড় ছেলে তারপর দুই কন্যা। দ্বিতীয় কন্যার বেশ কয়েক বছরের ছোট আরেক কন্যা আছে। এক ছেলে আর মেয়ে বিদেশে সেটেল। ছেলে বিদেশী মেয়েকে বিবাহ করেছে।
আর মেয়ে সেও বিয়ে শাদী করে বিদেশে সুখে সংসার করছে। ওহহহো হ্যা! আনিশার ছোট কন্যাটা কে জানো তোমরা ? জানোনা তা-ই নাহ?
যে মেয়েকে সারাক্ষণ আশ্রিত বলে অপমানিত করতে পিছপা হও না ঐ মেয়েটা তোমাদের নিজের কন্যার নাড়িছেঁড়া ধন।”

জিনিয়ার বাবা- মা অবাক দৃষ্টিতে জিনিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
তা দেখে জিনিয়া বলে,
“আনিশা ছোট থেকে অন্যরকম স্বভাবের ছিল। তোমাদের ভাষ্যমতে যারে তোমরা অবাধ্য বলো।
কিন্তু মেয়েটা কী সত্যি এতোটা বেপরোয়া স্বভাবের ছিল? সে সময় আনিশা ছিল প্রতিবাদী এক কিশোরী কন্যা।যে সে সময় মেয়েদের উপর হওয়ার জলুমের প্রতিবাদ করতো। নিজে অন্যায়ের সাথে আপোষ করতো না। কোন অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করতে পারত না। তাকে জব্দ করতে গ্রামের কিছু নিকৃষ্ট মস্তিষ্কের মানুষেরা নানা রকম প্লানিং করত। কিন্তু আনিশা এতোটা চালাকচতুর মেয়ে ছিল। সে সহজেই কারো পাতা ফাঁদে সে পা দিত না। কিন্তু সব সময় কি ভাগ্য সবার সহায় হয়? যখন সে মাধ্যমিক পরিক্ষা দিবে তার কিছুদিন আগে স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানে হঠাৎ করে অনুপস্থিত। যে মেয়েটা বাড়ি থেকে উৎসাহিত মুখে বেড়িয়ে ছিল। সে মেয়েটা হঠাৎ করে গায়েব হয়ে গেল। আনিশা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে নি সেদিন। স্কুলের কতিপয় মানুষেরা তার চরিত্র সম্পর্কে কিছু নোংরা বানী সুন্দর ভাবে তোমাদের মস্তিষ্কে গেঁথে দিয়ে গেছিলো আর তোমরা তা সত্যি বলে মেনে নিলে। যে তোমাদের কন্যা স্কুলের পাশে মুদির দোকানির সাথে পালিয়ে গেছে। মেয়েটা দু দিন পর যখন এক অপরিচত মানুষের সাথে ফিরে আসলো সেদিন তার মুখের একটি বুলিও শোন নাই। উল্টা খারাপ মেয়ের ট্যাগ লাগিয়ে ঐ অপরিচয় লোকটার সাথে বিয়ে দিয়ে গ্রাম ছাড়া করলে।
জানো সে সময় আমি কতোটা অসহায় ছিলাম আমার ছোট বোনটার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে? এদিকে বাড়িতে আমার বিয়ের রমরমা আমেজ। অন্যদিকে আমার বোনটা বাড়ি ছাড়া। আমি শ্বশুর বাড়িতে যাবার পরেই এতো কাহিনী হয়েগেছিল। জানো সেদিন আমার মনে হয়েছিল আনিশার জীবনটা আমার জন্য নষ্ট হয়েগেছে। যদি আমি আর কিছুদিন পর বিয়ে করতাম তাহলে মেয়েটা মাধ্যমিক পাশ করে ঐ স্কুলের শকুন গুলোর নজরের আড়ালে চলে আসতো।
শ্বশুর বাড়ি থেকে ফিরে এসে যখন এসব কিছু জানতে পারি তখন মনে হচ্ছিল আত্মহত্যা করে মরে যাই। যে মেয়েটা আমাকে কোনদিন এতিম হবার কথা মনে হতে দেইনি আজ সে মেয়ে নিজেই এতিম হয়ে গেলো। আমি সেদিন সব কিছু পেয়েও সর্বহারা হয়ে গেছিলাম। জানো এই দুনিয়ায় এতিম হয়ে বেঁচে থাকা কত কষ্টের? তোমরা জানো না! যদি জানতে বা বুঝতে তাহলে অরিনের সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করতে পাড়তে না। আমিও তো এতিম ছিলাম।
এই এতিমের জীবন তোমরা রঙিন করেছো। অন্যদিকে সেই তোমরা অরিনের জীবনটা বিষিয়ে দিচ্ছ। জানো কোনদিন তোমাদের জানাতে চাই- নি অরিনের আসল পরিচয়। কেন জানাতে যাব? আর কিসের জন্য? যাদের কিশোরী মেয়ে হারিয়ে যাবার পর তার খোঁজ না করে লোকের কথায় বিশ্বাস করে ঘরে বসেছিল তাদের মতো মানুষদের অরিনের দরকার হবে না। যেখানে অরিনে মা কোনদিন তোমাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে নাই! পরিচয় রাখে নাই সেখানে অরিন কি করবে?
আর হ্যা অরিনের জন্মপরিচয় জেনেছ বলে মেয়েটাকে আপন করার বৃথা চেষ্টা করতে যাবে না। আমি চাই- না অরিন নিজের মায়ের সাথে হওয়া অন্যায়ের কথা জানতে পারুক আর তোমাদের ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখুক। সারা দুনিয়া যেমন জানে তোমারা আমার আপনজন। বাকি জীবন এটাই সবাই জানবে। অতীতের কালোছায়া থেকে অরিন দূরে আছে আর সারাজীবন দূরে থাকবে। আশা করি তোমরা আমার কথাটা বুঝতে পেরেছ।”

এসব কথা বলে রুমের বাহিরে আসতেই জিনিয়া দেখে দরজার সামনে ইফান দাঁড়িয়ে আছে।
ইফানকে দেখে জিনিয়া চমকে ওঠে।
অতীতের কোন কথা ইফান জানতে পারে নাই তো? যদি জেনে যায় তাহলে তো সমস্যা।
এতো বছর পর কী দরকার পুরাতন ক্ষত গুলো উন্মোচন করার?

ইফান অগ্নিদৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
”কোথায় তোমার বাবা- মা ডাক দাও তাদের।
ওদের এতো সমস্যা কিসের? কেন তারা অরিনের পেছনে আঠার মতো লেগে থাকে? অরিন কি তাদের বাড়িতে যেয়ে পড়ে থাকে? না কি অরিনের ভরণপোষণের দাঁয়িত্ব তাদের? অরিনকে অপমানিত করার একটা সুযোগ ও তারা মিস করে না।
এভাবে চলতে থাকলে তারা তাদের প্রাপ্য সম্মান হারাবে এই বলে দিলাম। আমি ভুলে যাবো তারা আমার আপনজন। তাদের জন্য আমি আমার স্ত্রীর অপমান সব সময় সহ্য করবো না।”

জিনিয়া মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে কারণ ইফান তাদের অতীতের কোন কথা জানতে পারে নাই আর অরিনকে নিজের স্ত্রীর রুপে মেনে নিয়েছে।

তারপর নিজের ছেলেকে শান্ত করতে বলে,
“দেখ এটা বিয়ে বাড়ি! বিয়ে বাড়িতে এমন ছোটখাটো ঘটনা ঘটে থাকে। তাদের বয়স হয়েছে,
আমি তাদের দু জনকে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলেছি।
আশাকরি আজকের পর তারা অরিনের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না।”

ইফান ক্ষীপ্ত কন্ঠে বলে,”হ্যা! অরিনের সাথে খারাপ ব্যবহার না করলেই ভালো।”

আচ্ছা তুই যা! ইহানের বিয়ে বলে কথা।
তুই এমন রাগী চেহারাতে ঘুরাঘুরি করলে যে কেউ বুঝতে পারবে আমাদের পরিবারে কোন ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমাদের মানসম্মান নষ্ট হবে।

ইফান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে যায়।
এদিকে জিনিয়া নিজের কাজে ফিরে যায়।

অরিনের সাহস হচ্ছে না রঙিলা আর গোলাপির মুখোমুখি হবার। তারা হয়তো সবটা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছে। তবে ঐ নানা-নানি ছাড়া বাড়ির বাকিরা তো আলহামদুলিল্লাহ্‌ অনেক ভাল। হাতের পাঁচ আঙ্গুল যেমন সমান হয় না। তেমনি ভাবে বাড়ির সব সদস্যদের চিন্তা ভাবনা ব্যবহার একই ধরনের হবে না। দু একজনের জন্য তো পরিবারের বাকি সবাই কে একই দাঁড়িপাল্লা তে মাপা যাবে না?

এদিকে কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই খুব সুন্দর ভাবে ইহানের হলুদের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে যায়।

এরপর রাতের বেলা ইজাজ ইফান আর অরিনকে তার রুমে ডেকে পাঠায়। অরিনের কিছু লিগ্যাল কাগজ পত্রের ঝামেলা সমাধান করার জন্য।
তারা দুজনে মিলে সে সব সমস্যা সমাধান করে দেয়।

এদিকে বিয়েরদিন সকালে ইফান নিজের ছোট ভাইকে বর বেশে সাজাতে ব্যস্ত।

(বুঝতে পারছি না গল্পটা কেমন হচ্ছে।
আপনারা জানাবেন কেমন হয়ছে পর্বটা)



চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here