রহিবে মনের গহীনে পর্ব-৩০

0
2005

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_৩০
#Nishi_khatun

ইহান বাড়ির ছোট বউ হিসাবে আজরিন কে এনেছে, এতে করে বাড়ির সকল সদস্য অনেক খুশি। তবে ইহান মোটেই সন্তুষ্ট নয়।
আচ্ছা একজন কে পছন্দ করে কি আরেকজন কে হুট করে জীবনের অংশ হিসাবে মেনে নেওয়া যায়? উঁহু কখনোই না। যার সাথে চিটিং করা হয়েছে তাকে নতুন মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য হলেও একটু সময় দেওয়ার দরকার আছে।

ইফানের পরিবারের সবাই ইহানের মনের কষ্টটা উপলব্ধি করতে পেরেছে। তা-ই তো তারা আজরিন কে নিয়ে বেশি মাতামাতি করছে না। যতোটুক না করলেই নয় সে টুকু নিয়ম পালন করছে।

ইহান বাড়িতে এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেছে।
এদিকে বাড়ির ড্রয়িংরুমে আজরিনের সাথে বাড়ির বাকিরা বসে আছে। তখন অরিন হঠাৎ বলে,” আন্টি আই থিংক ভাবীর বিয়ের সাজে থাকতে সমস্যা হচ্ছে। তার এই ভারী শাড়ী চেঞ্জড করা দরকার। ”

এদিকে নিজের বউয়ের মুখে ভাবী ডাক শুনে ইফানের বেহাল অবস্থা এই মেয়ে সম্পর্কের মানসম্মান পানিতে গুলিয়ে খাচ্ছে।

তখন আজরিন নিজের জড়তা একপাশে রেখে বলে,”ফুপি অরিন ঠিক কথা বলেছে। আমার এই সব রং-চং আর ভাড়ী শাড়িতে অসহ্য লাগছে এবার চেঞ্জড না করলে মরে যাব।”

জিনিয়া তখন গম্ভীর কন্ঠে বলে,” এসব কোন কিছু করার অনুমিত তুমি পাবে না।”

আজরিন মনখারাপ করে বলে,”কেনো ফুপি?”

জিনিয়া বলে,”কে তোমার ফুপি? আমি আজ থেকে তোমার শাশুড়ি আম্মা। এখন শাশুড়ি কে ফুপি ডাক দিলে শাশুড়ি মাইন্ড খাবে না?”

আরজিন মুচকি হাসি দিয়ে জিনিয়া কে জড়িয়ে ধরে বলে,”জি আচ্ছা! আমার ফুপি থেকে নতুন প্রমোশন পাওয়া শাশুড়ি আম্মা।”

অরিন গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে,” আমিও এই বাড়ির বউ! তবে আমি কেনো শ্বশুর কে বাবা, শাশুড়ি কে আম্মা, স্বামী কে স্বামী, দেবর কে দেবর হিসাবে সম্বোধন করার অধিকার পেলাম না? আমর বিবাহিত নারী হওয়ার পরিচয় কী সারাজীবন এমন আড়ালে থেকে যাবে? নয়তো নিয়তির এটাই পরিহাস ছিল। যাক তাতে আর আফসোস করি না। নসীবে যা কিছু আছে তাতেই আমি আলহামদুলিল্লাহ্‌ সন্তুষ্ট। তবে আমিও মানুষ তো! তা-ই মনখারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক বেপার।”

ইফান কি অরিনে উদাসীনতা দেখেছে? না কি সব চাওয়া পাওয়ার মতো এটাও আড়ালে থেকে গেছে?

এদিকে অরিন আজরিন কে তার রুমে নিয়ে যায়। সেখান যাবার পর সব কিছু চেঞ্জ করে। সিম্পল একটা সুতির শাড়ি পড়ে। নিজের মুখে থাকা ভারী মেকাপের প্রলেপ গুলো সুন্দর ভাবে মুছে ফেলে।

এরপর রাতে আজরিন কোথায় ঘুমাবে তা নিয়ে টেনশনে পড়ে যায়। তখন অরিন বলে,”ভাবী আপনি বরঞ্চ নিজ দাঁয়িত্বে স্বামীর ঘরে চলে যান। যদি সে তাড়িয়ে দেয় তাহলে না হয় আমার সাথে ঘুম দিবেন বাসরঘরের স্বপ্ন ত্যাগ করে।”

আজরিন বলে,”বাঘের খাঁচাতে বোনকে একলা পাঠাতে লজ্জা করছে না? নিজেও সঙ্গে আসতে পারো।”

আমি কি সে কথা একবারের জন্য বলেছি?
তুমি অতিরিক্ত চিন্তা করেছো।

এরপর আজরিন ইহানের ঘরের দরজাতে হালকা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। সাইডে থেকে অরিন ইশারাতে বলে, “ভেতরে চলে যাও!”

বুকে একরাশ শক্তি সঞ্চয় করে আজরিন ইহানের রুমে প্রবেশ করে। তারপর মনে মনে ভাবতে থাকে, আমি ইতিহাস গড়েছি মনে হয়। যে মেয়ে বরের স্থানে বাসরঘরে প্রবেশ করছি। যেখানে আমার বউ বেশে থাকার কথা সেখানে আমার স্বামী মহাদয় আগে রুমে উপস্থিত। এই ছিলো তোর কপালে আজরিন রে।”

এমন সময় ইহান বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসে কর্কশ কন্ঠে বলে,”এই তুই চোরের মতো আমার রুমে উঁকিবুকি দিচ্ছিস কেন?”

আজরিন থতমত খেয়ে বলে,”আমি তোমাকে বধূরুপে দেখতে আসছি বাসরঘরে বলেই জিব্বাহ তে কামড় খায়!”

ইহান ধমক দিয়ে বলে,”সবাই মিলে আমার সাথে ফাইজলামি করো? আমাকে জোকার পেয়েছ? এখন যে ভাবে হোক তুমি আমার বউ। তা-ই নাটক না করে চুপচাপ বিছানাতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো নয়তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”

আজরিন মনে মনে সেই খুশি, যাইহোক ইহান তাকে তাড়িয়ে দেয়নি বরঞ্চ রুমে থাকতে বলেছে। তা-ই দ্রুত আজরিন ভদ্র বাঁচ্চাদের মতো বিছানার একপাশে ঘুমিয়ে পড়ে।

ইহান নিজেও মানুষিক ভাবে অনেক ক্লান্ত তা-ই সে নিজেও আজরিনের পাশে ঘুমিয়ে পড়ে।

অরিন রুমে আসবে এমন সময় রঙিলা এসে বলে,”আদিত্য আব্বাজান কিন্তু আপনার উপরে খুব রাগ করছে। আপনি তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সে যোগাযোগ করতে চাইছো না। এখন আম্মাজান আপনি কি সিদ্ধান্ত নিবেন তার উপর নির্ভর করছে সে তার বোনের সাথে যোগাযোগ করবে কি না।”

অরিন কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ সেখান থেকে প্রস্থান করে।

এদিকে অরিন নিজের রুমে এসে মন মস্তিষ্কের সাথে একপ্রকার যুদ্ধে নেমেছে। অরিন যে সিদ্ধান্ত নিবে তাতে সে নিজেই কষ্ট পাবে। সে নদীর অথৈজলে পড়েছে। নদীর একূলে গেলে অপারের মানুষ কষ্ট পাবে। সে কাউরে কষ্ট দিতে চাইছে না। তবে এখন আর কিছু করার নেই। সময় সব সময় নিজের গতিতে চলে। আর মানুষকে নাকানিচোবানি খাওয়াতে ভালোই জানে।
তা-ই সে অনেক কষ্টে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সকাল বেলা সবাই যখন নাস্তা করছিল তখন অরিন সেখানে এসে সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমার আপনাদের সবাইকে কিছু বলার আছে।”

জিনিয়া তখন বলে,”আরে মামুনি আগে নাস্তা করে নাও তারপর না হয় যা বলার বলবে।”

অরিন জিনিয়ার কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে,
“ইজাজ আঙ্কল! আমার লেখাপড়া কমপ্লিট হয়েগেছে। এবার আমি আমার বাড়িতে ফিরে যাব। আমার বড় ভাইয়ার আদেশ, আমি যেন আজকেই আপনাদের বাড়ি থেকে চলে যাই। আর তার আদেশ আমি অমান্য করতে পারবো না।”

অরিনে মুখে এমন কথা শুনে সেখানে উপস্থিত সকলেই স্তব্ধ হয়ে যায়। সে সময় গোলাপি আর রঙিলা অরিনের সকল ব্যবহারিক জিনিশ পত্র নিয়ে গাড়িতে তুলতে শুরু করে।

ইফান রেগে অরিনের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“এসবের মানে কি? হুটহাট এভাবে এবাড়ি ছেড়ে যাবার অনুমিত কে দিয়েছে তোমাকে? কোন সাহসে তুমি এবাড়ি থেকে চলে যাচ্ছ? ”

ইজাজ – মামুনি তুমি চলে যাবে সে কথাটা কি আমাদের আগে জানানোর দরকার ছিল না?
এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর জানানোর মানেটা কি?”

ইহান বলে,”কাল আমার বিয়ে হলো! আর আজকে তুমি চলে যাচ্ছ? এমন কোন কথা ছিলো না। তুমি কি আমার উপরে রাগ করে চলে যাচ্ছ? ”

অরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আপনাদের বাড়িতে থাকার জন্য আমার বোন দুইবছর যোগাযোগ করে না। এখন যদি আপনাদের বাড়িতে আর এক দিন ও থাকি তাহলে ভাইয়া আমার সাথে তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে। আমি বাবা- মা কে হারিয়েছি, এখন কোনভাবে নিজের কলিজার টুকরো প্রিয় ভাইয়া কে হারাতে পারবোনা। এতোদিন আপনাদের বাড়িতে ছিলাম যদি কারো মনে কোন প্রকার দুঃখ দিয়ে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দিবেন।
আর ইহান ভাইয়া আপনার বিয়ের জন্য মন খারাপ করি নাই। আমার বড় ভাইয়ার কাছে আমার আত্মসম্মান সবচেয়ে আগে। এখানে অনেক অপমানিত হয়েছি। সেসব নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই। তবে সবাই দোয়া করবেন আমি যেখানে থাকি ভালো থাকতে পারি। নিজের সাথে পরিবারের মানসম্মান বাড়াতে পারি।”

এসব কিছু বলে সোজা সে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে চলে যায়। অরিন চলে যেতেই ইফান ড্রাইনিং টেবিলের উপর থেকে পানির জগ নিয়ে মেঝেতে আছাড় দেয়।
রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে যায়।

ইফানের এমন ব্যবহার দেখে সবাই হতবাক।

এদিকে নিজের চোখেরজল মুছতে মুছতে অরিন গাড়িতে বসেছে। উদ্দেশ্য নিজ গৃহত্যাগ করে বাবার নীড়ে ফিরে যাওয়া পালা এখন। আজ থেকে এই মনখারাপ সারা জীবনের সাথি হয়ে থাকবে।

(নেক্সট নাইস না বলে মন্তব্য করবেন প্লিজ)



চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here