#রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৫
.
.
বিছানায় বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছি আমি। বাসায় এসেছি অনেকক্ষণ। ফুপি হয়তো ছাদে তাই টের পাননি। তবে সাদি ভাই টের পেয়েছেন কিনা সেটা জানি না। আমি অনবরত চোখের জল ফেলছি।চোখ বন্ধ করলেই মনে পড়ছে সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য। দরজার পিছনে থাকা অয়ন আর সেই মেয়ের চুম্বনরত অবস্থা। অয়নের ঠোঁট ছিল ওর কপালের মাঝ বরাবর। কি সুন্দর করে জড়িয়ে ছিল দুজনকে। চোখ বন্ধ করে উপভোগ করছিলো বিষয়টা। আমি ভিতরে ঢুকতেই দুজনে কেমন ছিটকে সরে গেলো।আমাকে দেখে অয়ন মাথা চুলকে বললো,
___” অনু তুই! নক করে ঢুকবি তো।”
আমি কিছু না বলে স্তম্ভিত চোখে শুধু অয়নের দিকেই তাকিয়ে আছি। আর ও তাকিয়ে আছে লজ্জা পাওয়া সেই মেয়েটার দিকে। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে অয়ন বললো,
___” দেখ!এখন কিন্তু আবার ব্লেকমেইল করে বসিস না যে সবাইকে বলে দিবি হ্যানত্যান। কারণ সবাই জানে যে আমি রিলেশনে আছি। ”
আমি মেয়েটার দিকে তাকালাম। সে অয়নের দিকে তাকিয়ে হাসছে। অয়ন মেয়েটার কোমড় জড়িশে বললো,
___” অনু,মিট মাই গার্লফ্রেন্ড মিশমি।”
আমি তখনো চুপ। চোখজোড়া আটকে আছে অয়নের হাতে। যেই হাতে ও মিশমি নামক মেয়েটার কোমড় ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নড়বার শক্তিটাও পাচ্ছি না। এতটা কষ্ট কেন হচ্ছে? অয়ন আবারো বললো,
___” কিরে চুপ করে আছিস কেন? তোকে বলিনি বলে রাগ করেছিস? আরে তুই ই তো দুদিন ধরে আসছিলি না।”
মিশমিও সায় জানিয়ে বললো,
___” হ্যা আপু।আমরা তো সবার প্রথম আপনাকেই জানাতে চাইছিলাম।”
আমি জোরপূর্বক হেসে বললাম,
___” আচ্ছা বেশ।”
বলেই চলে যেতে নিবো তখনই শুনলাম পিছন থেকে অয়ন বলছে,
___” একটু নক করে ঢুকতে পারতি। আমরা কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করছিলাম।”
আমি পিছনে ঘুরে গেলাম। ততক্ষণে চোখ থেকে দুফোটা জল পড়ে গেছে অলরেডি।আমি মুচকি হেসে বললাম,
___” মেডিকেলে আমরা আসি ডাক্তার হতে। স্বপ্ন পূরণ করতে! আমি কি করে বলবো বল,যে এখানে কেউ কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করছে? নেক্সট টাইম থেকে ওয়াশরুম ইউজ করিস,বেটার হবে।”
বলেই সেখান থেকে দৌড়ে বের হয়ে এলাম আমি। প্রান্তিও ডাকতে ডাকতে গেইট অবধি এলো। আমি ওকে হাত দিয়ে থামিয়ে বললাম,
___” থেমে যা। আর আসিস না। তোর ক্লাস আছে।”
___” অনু…!”
আমি দৌড়ে একটা রিক্সা ধরে ফুপির বাসায় চলে এলাম।ভাগ্যিস ফুপি দরজায় ছিলো না। নয়তো কাঁদতে দেখে অনেক প্রশ্ন করতো।
আমি রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে কাঁদতে লাগলাম।কথাগুলো ভেবে আরো জোরে কাঁদতে লাগলাম আমি।অয়ন এটা কি করে করলো? দুদিন আগেও আমি যার সবটা জুড়ে ছিলাম, তার সবটা জুড়ে আজ অন্যকেউ। বিশ্বাস করতে কেন এত কষ্ট হচ্ছে। এখন তো মনে হচ্ছে আমি না থাকলেই মনে হয় বেশ হত। ভাবতে ভাবতে পাশের টি-টেবিলে ফল কাটার ছুড়িটা চোখে পড়লো আমার।
আর কিছু না ভেবেই চোখ বন্ধ করে হাতের তালু বরাবর কয়েকটা পোঁচ দিলাম আমি। নিজের জিদটা কমানোর জন্যে। সুইসাইড করতে হলে তালুতে কাটতাম না।
ঠিক তখনই দরজায় কড়াঘাত করলো কেউ। হাত থেকে তখন রক্ত পড়ছে। আমি উঠলাম না।দরজাটা খোলাই ছিল।দুবার নক করে ভিতরে ঢুকলেই সাদি ভাই। আমি একবার ওনার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রইলাম।এখন আর কাঁদছি না।জিদ কমে গেছে। সাদি ভাই হন্তদন্ত হয়ে আমার পাশে বসে পড়লেন৷কাঁপা কাঁপা হাতে আমার হাতটা ধরে আতংকিত গলায় বললেন,
___” এটা কি করে হলো? ”
আমি ওনার দিকে অনুভূতিশূন্য চোখে তাকিয়ে আছি। উনি ফার্স্ট এইট কিট নিয়ে আমার হাতটা পরিষ্কার করতে লাগলেন।আর বলতে লাগলেন,
___” বেয়াদব মেয়ে।নিজের হাত নিজে কাটা শিখেছিস কবে থেকে।”
___”…..”
উনি বেন্ডেজটা করে আমার হাতটা তার বুকে চেপে ধরলেন। আমার গালে হাত রেখে বললেন,
___” কি হয়েছে অনুজান? কেউ কিছু বলেছে তোকে?”
___”…..”
___” বল না কি হয়েছে! কেন হাতটা কেটেছিস। কতটা কষ্ট পেলি। কতটা রক্ত বের হলো বল তো।”
___”…..”
উনি আমার মাথায় হাত দিয়ে আমার চোখে চোখ রেখে বললেন,
___” কি হয়েছে সেটা আমি জানি না তবে এটা জেনে রাখ যে সব ঠিক হয়ে যাবে অনুজান।আমি সব ঠিক করে দিবো।”
ওনার এতটুকু কথাই এনাফ ছিলো আমার জন্য। জানি না কি হলো! ওনার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগলাম আমি। এই মুহুর্তে এই বুকটাকেই নিরাপদ আশ্রয় মনে হচ্ছে আমার কাছে।যেন কত চেনা। কত আপন। উনিও আমার মাথাটা বুকে চেপে ধরে হাত বুলাচ্ছেন আর বলছেন,
___” শশশ, চুপ হয়ে যা অনুজান। আর কত কান্না করবি।আমি আছি না তোর পাশে?”
🍁
.
.
বিকাল ৫ টায় ঘুম ভাঙলো আমার।কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনেই নেই। ঘুম থেকে উঠেই কিছু ঘটনা মনে পড়তে লাগলো আমার। আচ্ছা ওটা কি আসলেই সাদি ভাই ছিলেন?সাদি ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন?কিন্তু এটা তো অস্বম্ভব। আমাকে কষ্ট দেয়া ছাড়া উনি কিছু পারেন নাকি!হয়তো ওটা স্বপ্ন ছিলো।আমি হাতের দিকে তাকাতেই ধারণটা পুরো পাল্টে গেলো। হাতটা তো বেন্ডেজ করা। তারমানে সাদি ভাইয়ের সাথে ঘটনাটা সত্যি।ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। এখন এটা ভাববার টাইম নাই। অয়নের কার্যকলাপগুলোই মনে পড়ছে ভীষণভাবে।
.
ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ফুপিকে বিছানার উপর বসে থাকতে দেখলাম আমি। আমাকে দেখেই মুচকি হেসে বললো,
___” তোর নাকি শরীর খারাপ?”
___” হ্যা একটু।”(জোরপূর্বক হেসে)
___” এখন কেমন লাগছে?”
___” ঠিক আছি ফুপি।”(হেসে)
___” আচ্ছা ঠিকাছে। তাহলে বিছানার উপর একটা কালো রঙের চুরিদার রেখে গেলাম। পড়ে রেডি হয়ে নিস।”
___” কেন ফুপি?”(অবাক হয়ে)
___” ওমা,তোর ফুপা না বললো আজকে বাহিরে নিয়ে যাবে!আমি রেডি হই গিয়ে তুইও রেডি হয়ে নে।”
আমি মুচকি হেসে সম্মতি হানালাম। ফুপি চলে গেলো। ফুপি আমাকে একবারও জিজ্ঞাসা করলো না কেন যে আমি এত জলদি কিভাবে বাসায় এলাম বা কেন এলাম?আশ্চর্য! যাকগে!জিজ্ঞাসা করেনি ভালোই হয়েছে। আমি চুরিদারটা পড়ে রেডি হয়ে নিলাম। হালকা সাজলাম। ভালো লাগছে না সাজতে। তাও ভাবলাম,
___” মানুষ সুখে আছে,তাহলে আমি কেন পারবো না? ওর আমার জন্য কোনো চিন্তা নাই। আমার কেন থাকবে?”
ভেবেই একটু সেজেগুজে বের হতে যাবো এমন সময় দেখলাম ব্ল্যাক কালার শার্ট পড়ে সাদি ভাই আমার রুমে ঢুকলেন। আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে।সাদা শরীরে কালো শার্টটা কি দারুণ মানিয়েছে।উনি হেসে বললেন,
___” মা তোকে নিতে পাঠালো।”
ওনার হাসি দেখে অবাক হলাম আমি।উনি তো আমার সাথে কখনোই হাসিমুখে কথা বলেন না। আমি মাথা নাড়ালান। রুম থেকে বের হতেই উনি পিছন থেকে বললেন,
___” কলেজ থেকে কেন এত জলদি ফিরেছিস,কেন কাঁদছিলি তার কিছুই জিজ্ঞেস করবো না। অপেক্ষা করবো তোর নিজ থেকে বলার।”
আমি অবাক হয়ে পিছনে ফিরলাম।উনি হাসিমুখে বললেন,
___” মাকে আমিই বুঝিয়েছি যে তুই অসুস্থ তাই ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিস।”
আমি মাথাটা নিচু করে ফপললাম। উনি এগিয়ে এসে আমার পাশে দাড়িয়ে বললেন,
___” যাওয়া যাক?”
আমি কিছু না বলে উনার পাশেই হাঁটা ধরলাম। সারা রাস্তা আর কেউ কারোর সাথে কথা বলিনি।সাদি ভাইও বলেননি আর আমিও না। ফুপির সাথে গল্প করছি বেশ।
সুন্দর একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামলো। আমি নেমে পড়লাম সাথে বাকি সবাইও। ফুপি আমাকে নিয়ে একটা টেবিলে বসে পড়লো।পাশেই সাদি ভাই। টুকটাক কথা বলছি সবাই। শুধু সাদি ভাই ওপ হয়ে আছেন। খালি গম্ভীর হয়ে বসে থাকেন। অসহ্য লোক। আমি আশেপাশে তাকিয়ে সৌন্দর্য দেখছি আর ফুপিকে বলছি,
___” জায়গাটা কি সুন্দর তাই না ফুপি?”
___” হ্যা। একদম নিরিবিলি,কি সুন্দর সফট মিউজিক বাজছে।”
আমি পিছনে তাকাতেই দেখলাম অয়ন আর ওর গার্লফ্রেন্ড মিশমি আমার পিছনের টেবিলটাতেই বসে আছে।একজন আরেকজনের হাত ধরে আছে।কিছু একটা বলছে। মুহুর্তেই মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেলো আমার।বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলাম। চোখজেড়া জলে টইটম্বুর হয়ে গেলো।
.
.
.
.
চলবে……❤️
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। গঠণমূলক মন্তব্য আশা করছি☺️❤️)