রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙পর্ব:০৭

#রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৭

___” তোমার মত নির্লজ্জ মেয়ে আমি একটাও দেখিনি অনু।”

মিশমির এমন কথা শুনে ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি। আমাকে ক্লাসরুম থেকে টেনে কলেজের পিছনে এই জায়গাটায় নিয়ে এসেছে ও।কিছু বুঝে উঠার আগেই হাতটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে কথাটা বললো ও। আমি উত্তরে বললাম,

___” মানে?”

মিশমি তাচ্ছিল্য হাসলো। তারপর বললো,

___” তোমার মধ্যে লজ্জার ছিটেফোঁটাও দেখতে পারছি না আমি মিস অনন্যা।একদম রাস্তার মেয়েদের মত করছো। ছেলেদের সাথে এত ঢলাঢলি তোমার?”

___” দেখো!তুমি কি বলছো।তা একটু বুঝিয়ে বলবে প্লিজ?”

মিশমি আবারো সেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। তারপর একটু চেঁচানো গলায় বললো,

___” লজ্জা করে না আমার হবু বরের সাথে ঘেষাঘেষি করতে?এত লাগালাগির কি আছে? ও একটা ছেলে।আর তুমি একটা মেয়ে। এভাবে পেছনে পড়ে থাকো, পুরোই প*তি*তার থেকে কম না।”

___” হোয়াট?”

বলেই ওর গালে চড় লাগালাম আমি। ও আমাকে এসব বলছে? ও গালে হাত দিয়ে বললো,

___” তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে চড় মারবার?”

___” তোমার সাহস কিভাবে হলো আমাকে এসব বলার?”(চোখ বড় করে)

___”যা সত্যি তাই তো বলছি। তোমার লজ্জা করে না অয়নের পিছনে এমন করে ঘুরতে?”

___” তুমি ভুল ভাবছো মিশমি। তেমন কিছুই নয়।”

___” তুমি চুপ করো। আমি সবটাই জানি। এবং আমি দেখছিও। সেদিন ক্লাসরুম থেকে শুরু করে এখন অবধি,তুমি আর অয়ন একসাথে কেন?”

___” কিসব বলছো!”

___” সেদিন ক্লাসরুমেও তুমি নক না করে ঢুকে গেলে। এরপর রেস্টুরেন্টেও চলে এলে। এমনকি সেদিনও দেখলাম কেন্টিনে বসে কথা বলছো।কি এত কথা তোমাদের মাঝে?এটা জানার পরেও যে অয়ন আর আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। তোমার মত ফালতু মাইন্ডের মেয়ে আমি আমার লাইফে দেখিনি।”

___” জাস্ট শাট আপ। কিছু না জেনে,না বুঝে কি সব বলে চলোছো তুমি? কাকে কি বলছো?”( রেগে)

___” যা বলছি ঠিকই বলছি।তোমার মত নির্লজ্জ, ছোটলোক মেয়ে কত দেখলাম! কিন্তু এমন মনমানসিকতা!”

ওকে থামিয়ে দিলাম আমি। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে আমার। ভ্রু কুঁচকে বললাম,

___” ব্যস! আর কত বলবা?আর কিসের লাইফ? কতটুকুই বা গিয়েছো লাইফের? মাত্র পড় সেকেন্ড ইয়ারে। এখনো তো হোল লাইফ পড়ে আছে। যখন তখন মেডিকেলে ঢুকে পড়ছো বলে কি নিজেকে এখানের ডাক্তার ভেবে বসে আছো? শুধুমাত্র তোমার বাবার পাওয়ার আছে বলে আসতে পারছো। পড়াশোনা টা করতে,তাহলেই বোঝা যেতো।”

___” এই কি বললে তুমি?”(আঙুল উঁচিয়ে)

___” আঙুলটা নামিয়ে কথা বলো। তোমার থেকে যথেষ্ট বড় আমি। এতক্ষণ যা যা বলেছি সে কথাগুলো একটুও বলবার ইচ্ছে ছিল না আমার। তোমাকে বেশ ভালো মনেরই মনে করেছিলাম আমি। এসব কি অয়ন জানে?”

মিশমি আমার দিকে দাঁত কিরমির করে তাকালো। তারপর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

___” কোনসব?”

___” এইযে আমার প্রতি এমন বিহেভিয়ার। জানলে কি হবে বুঝতে পারছো?”

মিশমি হাসতে হাসতে বললো,

___” হাহ কি হবে?”

___”সেটা এখন জানালেই টের পাবা।”

ভেবেই আমি ক্লাসরুমের দিকে ছুট লাগালাম। মিশমি এমন টাইপের মেয়ে? ও কিনা আমাকে এসব বলছে? এটা জানতে পারলে তো অয়ন ওকে আস্ত রাখবে না। এই কথাটা ভেবেই আমি মিশমিকে একটা উত্তরও দিইনি। নয়তো এর যোগ্য জবাব দিতে পারতাম। আমি দৌড়ে গেলাম ক্লাসরুমে। সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। আমি ওখানে গিয়ে হাঁপাতে লাগলাম। রুশ আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো,

___” কি হয়েছে! এত দৌড়ে আসলি কেন? কেউ কিছু বলেছে?”

আমি হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম,

___” দাঁড়া বলছি।”

বলেই অয়নের দিকে তাকালাম। অয়ন আজ আমাকে জিজ্ঞাসা করার জন্য desperate না। আজ ও আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমি ওকে বললাম,

___” অ..অয়ন।”

___” কি?কিছু বলবি?”

___” অয়ন তুই জানিস মিশমি আমাকে কি বলেছে?”

বলেই সমস্ত ঘটনা ওদেরকে খুলে বললাম। ততক্ষণে মিশমিও এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে। সবাই তো বেশ ক্ষেপে গেলো মিশমির উপর।শুধু অয়নকে দেখে তেমন কিছু মনে হলো না। অয়ন আমার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

___” তোকে তো আমি ক্লাসে আসতেই দেখলাম না।”

___” দেখবি কি করে অয়ন! ও তো আমাকে ক্লাসের সামনে থেকে টেনে নিয়ে গেলো।”

ঠিক তখনই মিশমি বললো,

___” ছি আপু্ এত মিথ্যা কথা বলেন আপনি।আপনাকে তো ভালো মনে করেছিলাম। আমি আপনাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলাম? নাকি আপনি আমাকে নিয়ে গেছেন।”

বলেই মিশমি কাঁদতে শুরু করলো।আমি অবাক হয়ে সবার দিকে তাকালাম। বাকি সবাইও আমার দিকে তাকিয়ে। মিশমি কাঁদতে কাঁদতে অয়নকে বলো,

___” বিশ্বাস করো! অনু আপু আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে বললো,তুমি নাকি অনু আপুকে পছন্দ করো!আর আমি নাকি তোমাদের মাঝে চলে এসেছি। তারপর আমি ওনাকে বুঝাতে গিয়েছি বলে উনি আমাকে চড়ও মেরেছেন। দেখো।”(গাল দেখিয়ে)।

এভাবেই আরো নানা কথা বলতে লাগলো মিশমি। আমি এবার আর কান্না আটকে রাখতে পারলাম না। ধরা গলায় বললাম,

___” অয়ন!”

আমাকে হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো অয়ন। হালকা চেচিয়ে বললো,

___” হয়েছে অনু! আর কত? মিশমি কখনো এমনটা করতেই পারে না। তুই কেন ওর নামে এসব বলছিস? ওর থেকে তো যথেষ্ট বড় তুই। আর তোর সাথে কখন কিসের সম্পর্ক ছিল আমার? তোকে না সেদিন বললাম আমি!সবটা মজা ছিল। তারপরেও কেন? তুই ওকে চড়ও মেরেছিস!!”

আমি অয়নকে আটকানোর জন্যে বললাম,

___” অয়ন তুই আমাকে ভুল বুঝছিস।আর তোকে তো বলেছি যে কেন চর মেরেছি! স্বীকার তো রেছি।”

___” আমি সবটাই বুঝতে পারছি। কেন এত হিংসা তোর মিশমিকে নিয়ে? কি করেছে ও?আমি ওকে যথেষ্ট বিশ্বাস করি।”

___” আর আমাকে? “(ভাঙা গলায়)

___” তোকেও বিশ্বাস করি। কিন্তু আজ করতে পারছি না। সরি।(মুখ ঘুরিয়ে)

___” এটা তো আমার সাথে অন্যায় হলো।”

___” অন্যায়? অন্যায় তো তুই করলি এই বাচ্চা মেয়েটার সাথে। ও তো তোকে বড় আপুর মত ভালোবাসে। আর তুই ওকে এভাবে নির্জন জায়গায় টেনে নিয়ে এসব বুঝিয়েছিস? আসলেইয়!তোর দ্বারাই সম্ভব এসব।”

আমি আর কিছু বলছি না। দৃষ্টি অয়নের বুকে থাকা মিশমির দিকে। এই বাচ্চা মেয়েটা এত বড় একটা কাহিনী করে ফেললো? আর আমি তো নিজেও কোনো জবাব দিইনি। ভেবেছিলাম অয়ন জবাব দিবে। তাহলে অয়ন কেন ওকে বুকে নিয়ে ওকে শান্তনা দিচ্ছে? আমি কিছু না বললেও পিছন থেকে রুশ বললো,

___” অনুর দ্বারা কি সম্ভব আর কি অসম্ভব তা আমরা সবাই জানি। এত বছর ধরে একসাথে পড়ছি,এলাসাথে মেডিকেলে উঠেছি। কেউ বেক্কল না আমরা।”

আমি রুশের দিকে তাকালাম। ও আমার হাত ধরে অয়নের উদ্দেশ্যে বললো,

___” অনুর পাশে তুই না থাকলেও আমরা সবাই আছি। তাই তুই তোর মিশমিকেই বিশ্বাস কর।আমরা গেলাম।আসি ভাব্বী!”

বলেই রুশ আমার হাত ধরে পিছনের বেঞ্চে গিয়ে বসলো।আশ্চর্য্যের বিষয় হলো উপমা আর নিধি আমাদের সাথে এলো না। ওরা অয়নের সাথে তাল মিলিয়ে বললো,

___” তোদের যাবার তোরা যা। আর আমরা অনুকে ভালো করেই চিনি। ওর দ্বারা তো এসবই সম্ভব।”

বলেই তাচ্ছিল্য হাসলো। আমি দাড়িয়ে গেলাম। উপমা আর নিধিকে সরিয়ে দিলাম। অয়নের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম,

___” আমার তোর সাথে কথা বলা। ওদের সাথে নয়।”

অয়ন ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো।মিশমিও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।তবে এখনো অয়নকে জড়িয়ে ধরে আছে। অয়ন বললো,

___” আর কি বলতে চাস? তোর থেকে আর ভালো কিছু আশাও করছি না।”

আমি হাসলাম। হাসতে হাসতেই বললাম,

___” দরকার নাই তো আশা করবার। আমি কি তোকে কোনো কিছুর আশা দিয়েছি?দিইনি তো! তোর গফ কি বললো? আমি ওকে টেনে নিয়ে বলেছি উল্টাপাল্টা কথা? আর তুইও বিশ্বাস করে নিলি। একবারও জিজ্ঞেস করেছিস ওকে? আমার হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেছিস ওকে? বল!”

___” না করিনি। কারণ ওর উপর আমার বিশ্বাস আছে।”(শান্ত গলায়)।

___” আচ্ছা মেনে নিলাম। আমি তো তোর বেস্ট ফ্রেন্ড। এটা তো মানিস। মানিস তো?”

___”….”

___” আচ্ছা যা।এখন মানিস না। একসময় তো মানতি। আজ আমার হাতটা কাটা,বেন্ডেজ করা তার সাতদিন হচ্ছে। সবাই ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলো। তুই তো একবারও জিজ্ঞেস করলি না অয়ন!”

অয়ন এবার আমার হাতের দিকে তাকালো।আমি হাতটা সরিয়ে নিয়ে বললাম,

___” তুই অনেকটা পাল্টে গেছিস অয়ন। আমিও কিন্তু তোর থেকে এতটা বদলে যাওয়া আশা করিনি।তোর গফ আমাকে প*তি*তার সাথে তুলনা করেছে। আমি এটা তোর কাছে বিচার দিয়েছি। আর তুই কিছুই বললি না ওকে?”

___” ও ভদ্র একটা মেয়ে। এসব শব্দ তোর মুখে মানায়। ও এসব বলতেই পারে না।”

___” আর কিছু বলার নাই।আর আমি চাই যে তুই যাকে বিশ্বাস করেছিস সে যেন তোর বিশ্বাসটা রাখে। আবার ভেঙে না দেয়।”

___” তোর এটা নিয়ে না ভাবলেও চলবে।তুই তোর রাস্তায় আর আমি আমার।”

আমি আর কিছু বললাম না। রুশও চুপ রইলো।আমি ওর পাশে বসে পড়লাম। চোখ অয়নের দিকে।ও আমাদের একবার আটকালো না অবধি? ও মিশমিকে আরেকবার বুকে ধরে জরিয়ে নিলো। তারপর গালে ধরে কি যেন বললো।
আর মিশমি চলে গেলো। তারপর অয়ন নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়লো। এতক্ষণ আশেপাশের সবাই আমাদের এসব দেখছিল। এখন তারাও নিজেদের মত বসে পড়লো। আর আমি আমার ভাবনায় ব্যস্ত।প্রান্তি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

___” থাক!মন খারাপ করিস না। আমরা তোকে ভালো করেই চিনি। ওই মেয়েই তোকে কিছু বলেছে।”

আয়ানও তাল মিলালো।আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো,

___” তুই আরো ভালো ডিজার্ভ করিস অনু।ওর জন্যে বসে থাকতে হবে না তোর।”

আমি হেঁচকি তুলতে তুলতে বললাম,

___” আমি ওর জন্য বসে ছিলাম না। তোরা বিশ্বাস কর! ওর জন্য ফিলিংস থাকলেও পরে ভাবলাম ওদের মাঝে গিয়ে কি লাভ! তাই আমি সরে এসেছিলাম।”

রুশ আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

___” আচ্ছা আচ্ছা। আমরা বুঝেছি। তুই চুপ কর! শান্ত হ। মনোযোগ দিয়ে ক্লাস কর। আর আজকের থেকে এই চ্যাপ্টার ক্লোজ কর।”

___” আমার জন্য তোরা…”

প্রান্তি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

___” আমরা সত্যের দিকে আছি। ওরা ওদের মত থাকুক। আমরা জানি কে ভালো আর কে খারাপ!”

আমি আর কিছু ভাবলাম না। আসলেই তো!ওর আমাকে নিয়ে কোনো টেনশন নাই আমার কেন থাকবে?আজ থেকে সবটা পাল্টে ফেলবো!অনু নিজের মত থাকবে! নিজের মত চলবে। আর যার জবাব সে এমনিতেই পাবে।সেটা আমার মন জানে।ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম….

কলেজ শেষ করেই সবাইকে বিদায় দিয়ে বের হয়ে এলাম আমি। গেইটের সামনে পরিচিত একটা মুখ দেখে বেশ অবাকই হলাম আমি। নিজে নিজেই বললাম,

___” এই লোক এখানে কেন?”

চলবে……❤️

(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। গঠণমূলক মন্তব্য আশা করছি☺️❤️)

(যথেষ্ট বড় হয়েছে। অবশ্যই উৎসাহমূলক মন্তব্য আশা করবো😊🍁।অয়ন কি চায় সেটা পরে ক্লিয়ার হবে। আপাতত ছোটখাটো টুইস্ট পেয়ে মিশমিকে একটু ঝেড়ে দাও😶)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here