রূপ ভাইয়া তুমি কি সত্যি বিদেশে চলে যাবে – কথা
হুম যাব।কেন তোর কোনো সমস্যা ? – রূপ
রূপ ভাইয়া তুমি তো জানো আমি তোমাকে কত ভালোবাসি। প্লিজ তুমি যেয়ো না। তুমি গেলে আমি কিভাবে থাকবো বলো।প্লিজ রূপ ভাইয়া যেয়ো না – কান্না করতে করতে বললো কথা
দেখ কথা তুই এখনো ছোট তো ছোটর মতো থাক।ভালোবাসার বুঝিসই বা কি তুই এখন। আমি শুধু তোর এজটা আবেগ।যা কয়দিন পর কেটে যাবে। তো প্লিজ তুই এই পাগলামি বন্ধ কর – রূপ
রূপ ভাইয়া তুমি আমার আবেগ না।বিশ্বাস কর আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি -কথা
দেখ কথা আমি বিরক্ত বিশ্বাস কর তোর উপর আমি প্রচুর বিরক্ত। এখন যা তো আমার রুমে থেকে আমার এখনো প্রচুর কাজ বাকি – বলে রূপ কথাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো।
আর কথা কান্না করতে করতে নিজের ঘরে চলে গেলো। সে বুঝে গেছে রূপ সত্যিই যাবে তাকে ছেড়ে। সে তো চলে গেলেই খুশি কারণ তখন আর কথা নামের কেউ তাকে বিরক্ত করবে না। কিন্তু কথা। কথা কিভাবে থাকবে তার রূপকে ছাড়া। কথা এসব ভেবে আরো কান্না করতে লাগলো।
~~~~~~
আসুন আপনাদের রূপ আর কথার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। বাবা আরাভ চৌধুরী আর মা রুহি চৌধুরীর ছেলে রূপ চৌধুরী। রুপের একজন ছোট বোন আছে যার নাম আরশি চৌধুরী। রূপ এ বছর ইন্টার পরিক্ষা দিয়েছে। তারপর এখন বাকি পড়ালেখা করার জন্য বিদেশে যাবে।
আর অন্য দিকে আমান চৌধুরী আর নীলা চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে হচ্ছে আলফা চৌধুরী কথা। বাসায় সবাই তাকে কথা বলেই ডাকে। কথা এই বছর নবম শ্রেণির ছাত্রী। আরশি আর কথা দুইজনেই একই সমান। দুজন চাচাতো বোন হওয়ার পাশাপাশি একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড ও। আর রূপ হচ্ছে কথার চাচাতো ভাই। আরাফ চৌধুরী আর আমান চৌধুরী দুইজনেই বিজনেসম্যান। তারা দুইভাই নিজেদের পরিবার নিয়ে একসাথেই থাকে মিলেমিশে।
পরিচয় পর্ব শেষ
ছোট বেলা থেকেই কথা রূপকে অনেক পছন্দ করে। যখন থেকে ভালোবাসার মানে বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই কথা রূপকে ভালবাসে। কিন্তু কোনো এক কারণে রূপ কথাকে পছন্দ করে না।বেশিরভাগ সময়ই তাকে উপেক্ষা করে চলে রূপ।আচ্ছা রূপ ভাইয়া কি জানে তার এই অবহেলাগুলো কথাকে কত কষ্ট দেয়।এসব ভাবতে ভাবতেই কে জানি কথার ঘরের দরজায় নক করলো। কথা চোখ মুছে পরিপাটি হয়ে দরজা খুলতে এগিয়ে গেলো। কথা চায় না কেউ তার কষ্টের কথা জেনে মন খারাপ করুক।
দরজা খুলে কথা দেখলো দরজার অপাশে আরশি দাঁড়িয়ে আছে।সে হাসিমুখে বলতে লাগলো,
কি হয়েছে আরু। – কথা
এটা তো তোকে আমি জিজ্ঞেস করব।দিনেদুপুরে ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে আছিস কেন – আরশি
আরে এমনি। একটু মাথা ব্যাথা করছিল। তাই শুয়ে ছিলাম- কথা
অনেক মাথা বয়াথা তোর।মেডিসিন নিয়েছিস – আরশি
না তা আর লাগবে না। ব্যাথা অলরেডি কমে গেছে – কথা
আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে – আরশি
৩ দিন পর,
ক্লাস শেষ করে বাসায় আসতে আসতে কথা আর আরশির ২ টা বেজে গেলো।
আজকে কত লেট হলো দেখলি কথু – আরশি
হুম।এক্সট্রা ক্লাস থাকলে যে লেট হবেই এটা কি তুই আজকে প্রথম জানলি আরু- কথা
আরে তা না – আরশি
ওদের কথার মাঝে সেখানে উপস্থিত নীলা চৌধুরী।তিনি বলতে লাগলো,
যা তোরা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি তোদের খেতে দিচ্ছি – নীলা চৌধুরী
মা আজকে কি তোমার মন খারাপ নাকি যে মুখ এরকম ভার করে আছো।আর বড়মা কই – কথা
আপু৷ তার ঘরে। আসলে এতো আদরের রূপ এতো বছরের জন্য চলে গেলো বিদেশ। তাই আপুর প্রচুর মন খারাপ। রূপ বের হওয়ার সময় আপু প্রচুর কান্না করছে – নীলা চৌধুরী
মানে কি বলছো ছোট মা। ভাই চলে গেছে – আরশি
হুম ২ ঘন্টা আগেই বাসা থেকে বের হয়েছে।এতক্ষণে তো মনে হয় ফ্লাইটে আছে – নীলা চৌধুরী
ভাই আমার সাথে দেখা না করে চলে গেলো – আরশি কাদো কাদো স্বরে বললো
রূপ ভাইয়ার না আরো কিছু দিন পর যাওয়ার কথা ছিল।তাহলে আজকে হঠাৎ চলে গেলো কেনো? – কথা
জানিনা । কিন্তু ওর নাকি ওখানে কিছু কাজ আছে।তাই তারাতাড়ি যাওয়া লাগবে।ওকে আর কেউ না করেনি। ইশশ ছেলেটাকে আবার কতবছর পরে যে দেখবো – নীলা চৌধুরী
আজকে একমাস হয়ে গেছে রূপের চলে যাওয়ার।সবাই ও আগের মত নিজ নিজ জীবনে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। যাওয়ার পর থেকে রূপ প্রায় রোজই বাসার সবার সাথে ভিডিও কলে কথা বলে। কিন্তু কথা ছাড়া। কথা রোজই রূপকে কল করে। কিন্তু রূপ রিসিভ করেনা। আজকে ও কথা রূপকে কল দিলো।প্রথমবারে রিসিভ না হলে ও দ্বিতীয় বারে কল রিসিভ করায় কথা প্রচুর খুশি হয়ে যায়।কথা বলতে লাগে,,
রূপ ভাইয়া তুমি কেমন আছো। জানো আমি একটু ও ভাল নেই তোমাকে ছাড়া। তুমি কেনো গেলে আমাকে ছেড়ে রূপ ভাইয়া – কথা
ফোনের অপর প্রান্তের মানুষটির কথা শুনে কথার হাত থেকে ফোনটি পরে যায়। চোখ দিকে জল গড়িয়ে পরতে লাগলো কথার।রূপ ফোন রিসিভ করায় যতটুকু খুশি হয়েছিল সে। এখন কথার তারথেকেও অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। এর জন্যই হয়তো রূপ ভাইয়া তাকে পছন্দ করতো না। ঠিক আছে সে আর কখনো বিরক্ত করবে না রূপ ভাইয়া। আর কখনো বলবেনা ভালোবাসি রূপ ভাইয়া। আজ থেকে কথা বদলে যাবে। আর কাউকে নিজের দূর্বলতার সুযোগ নিতে দিবেনা কথা।
_________
দেখতে দেখতে ৫ বছর পার হয়ে গেলো। কথা এখন আর আগের কথা নেই। সে এখন বড় হয়েছে। তার সাথে সাথে অনেকটা বদলেও গিয়েছে। সকালে উঠে নাস্তা করার জন্য টেবিলে আসলে কথা দেখে সবাই আজকে অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই খুশি। কথা জিজ্ঞেস করে,
আজকে তোমরা সবাই এতো খুশি কেন? বাসায় কি আজকে কোনো প্রোগ্রাম আছে নাকি।আর আরু তুই এখনো রেডি হলি না কেনো? ভার্সিটিতে যেতে তো লেট হয়ে যাবে – কথা
আজকে ভার্সিটি যাওয়ার কোনো দরকার নেই কথা – রুহি চৌধুরী
কেন বড়মা আজকে কি ? – কথা
আরে আজকে ৫ বছর পর আমাদের রূপ দেশে আসছে। কতদিন পর দেখবো ছেলেটাকে। না জানি ওই দেশে একা থাকতে থাকতে নিজের কি অবস্থা করেছে ছেলেটা। এমনি তো নিজের যত্ন নিতো না । আর ওখানে তো পুরা একা ছিল – নীলা চৌধুরী
উনার যত্ন করার মানুষের অভাব নেই মা। তোমরা শুধু শুধুই উনার জন্য টেনশন করছো – তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো কথা
মানে – আমান
কিছু না আব্বু। আচ্ছা আমার খাওয়া শেষ। আমি উঠি।পরে আবার আমার ভার্সিটি যেতে লেট হয়ে যাবে – কথা
এ কি । তুই আজকেও ভার্সিটিতে যাবি কথু – আরশি
হুম আজকে একটা জরুরি ক্লাস আছে আরু। আমি ওটা মিস করতে চাইনা – কথা
আচ্ছা ঠিক আছে মামনি। চলো আমি তোমাকে ভার্সিটিতে পৌঁছিয়ে দেই – আমান চৌধুরী
না আব্বু লাগবেনা। আকাশ আসবে আমাকে নিতে – কথা
আচ্ছা মামনি সাবধানে যেও আর তারাতাড়ি বাসায় এসো – আরাফ চৌধুরী
জি বড় আব্বু – কথা
কথা বাসা থেকে বের হতেই দেখলো আকাশ বাইক নিয়ে গেটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কথা গিয়ে বাইকে উঠে বসলো।
সরি সরি আমি ইচ্ছে করে লেট করিনাই – কথা
আচ্ছা বাবা ঠিক আছে সমস্যা নাই।লেট যখন করেছিস তো আজকে আমাকে ফুচকা ট্রিট অবশ্যই তুই দিচ্ছিস – আকাশ
কোনো ছেলে যে এত ফুচকা পাগল হয় আমি তোকে না দেখলে জানতামই না আকাশ।আচ্ছা ঠিক আছে এখন চল – কথা
হুম আলু তুই আমাকে ধরে বস। আমি ও চালানো শুরু করছি – আকাশ
দূর থেকে আকাশ আর কথাকে এতোটা ক্লোজ ভাবে দেখে যে একজনে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এটা ওদের জানা হলো না। ওরা চলে যেতেই লোকটি বলে উঠলো,,
তোমার অনেক কিছু জানার বাকি আছে কথা। আমার অপেক্ষা না করেই যে তুমি এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবা আমি ভাবিনি,
চলবে,🥰
#রূপকথা
DI YA
#পর্ব_০১