#রূপকথা
#পর্ব_১০
DI YA
ভাইয়ার দেওয়া ঠিকানায় আসতেই কে জানি পিছনে থেকে আমার মুখে একটা রুমাল চেপে ধরলো। আমি অজ্ঞান হয়ে পরে গেলাম সাথে সাথে।
জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে একটি সাজানো গোছানো ঘরে আবিষ্কার করলাম। ধীরে ধীরে সবকিছু চিন্তা করতে লাগলাম।ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখি ১ টা বাজে। এমন সময় ঘরের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো একজন মেয়ে আর একজন ছেলে।তাদের দেখে আমি প্রচুর অবাক হয়েছি। এটা কিভাবে সম্ভব । আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রমি আপু আর রিয়াজ ভাইয়া। আমি এখনো বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে এসব।তারমানে কি তারা দুজনই এসব করেছে। আগ্রহ দমিয়ে রাখতে না পেরে বলে উঠলাম,
তোমরা এখানে কি করছো ? আমিই বা এখানে কিভাবে আসলাম ? আর রূপ ভাইয়া কোথায় ? – কথা
এত প্রশ্ন একেবারে করলো কোনটা রেখে কোনটার জবাব দিবো বলো তো দেখি – রিয়াজ ভাইয়া
আমি আর কখনো আমার রূপের নাম তোমার মুখে শুনতে চাইনা। ভুলে ও আর কখনো মুখ দিয়ে রূপের নাম উচ্চারণ করো না। নাহলে এর ফল কিন্তু খুব খারাপ হবে। যা তোমার ধারণার বাইরে – প্রমি
ও তাহলে তোমরা দুজনই এসব করেছো তাই না ? – কথা
হ্যা সবকিছু আমরা করেছি। – রিয়াজ ভাইয়া
কেন করলে তোমরা এসব ? কি লাভ হলো আমাদের দুজনকে আলাদা করে ? তোমরা না রূপ ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে কিভাবে পারলে তার সাথে এমনটা করতে। – কথা
কিসের বেস্ট ফ্রেন্ড। কোনো সময়ই ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। ও ছিল শুধু আমার শত্রু।সবসময় সবকিছুতে আমার থেকে এগিয়ে ছিলো ও। আমি যা চাইতাম তা ও পেয়ে যেতো। কিন্তু এটা তো আমি সবসময় মেনে নিব না।তুমি আমার ভালোবাসা। যেদিন রূপের ফোনে প্রথম তোমার ছবি দেখি। ওইদিনই আমার তোমাকে ভাল লেগে যায়।কিন্তু যখন জানতে পারি রূপ তোমাকে ভালোবাসে। তখনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি। তুমি শুধু আমারি হবে। ভালোবেসে না হলে জোর করে ছিনিয়ে দিব।কিন্তু তাও তুমি শুধু আমারি হবে – রিয়াজ ভাইয়া
আপনার মাথা ঠিক আছে ভাইয়া ? কি আবোলতাবোল বলছেন এসব ? প্রমি আপু তুমি সেই মেয়ে না যে আমার সাথে রূপ ভাইয়ার প্রেমিকা সেজে মিথ্যা কথা বলেছিলে ? – কথা
হুম আমিই সে। আমি জানতাম এমন কিছু করলে তুমি ঠিকই দূরে সরে যাবে আমার আর রূপের লাইফ থেকে।- প্রমি
বিদেশ যাবার পর যেদিন রূপের ফোন থেকে কথার কল রিসিভ করা হয়। সেদিন কথা আর প্রমির কথোপকথন –
রূপ ভাইয়া তুমি কেমন আছো। জানো আমি একটু ও ভাল নেই তোমাকে ছাড়া। তুমি কেনো গেলে আমাকে ছেড়ে রূপ ভাইয়া – কথা
তুমি কথা তাই না৷- প্রমি
জি আমি কথা কিন্তু আপনি কে? কথা
আমি রূপের গার্লফ্রেন্ড।দেখো তুমি তো জানো রূপ তোমাকে পছন্দ করেনা। তাহলে কেন বার বার ওকে ডিস্টার্ব কর বলো তো ? ও তোমাকে ভালোবাসেনা। এই কথা টা তুমি কেন বুঝতে চাও না ? কিই বা যোগ্যতা আছে তোমার রূপের পাশে দাঁড়ানোর। দেখো আমি সোজাসুজি ভাবে তোমাকে বলে দিচ্ছি তুমি আর কখনো রূপকে কল করে বিরক্ত করবানা। – প্রমি
কথা এ কথা শুনে আর কিছু না ভেবে কল কেটে দিয়ে রূপের নম্বর ব্লক করে দিয়েছিল।তারপর এই পাঁচ বছর আর কোনো যোগাযোগই ছিল না ওদের।
পেয়েছিলে কি রূপ ভাইয়াকে। যাকে পাওয়ার জন্য এসব করলে ? – তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো কথা
তুমি ওইদিন কথা বলার পর কল লিস্ট থেকে আমি তোমার কল ডিলেট করে দেই। তারপর থেকে তুমি কল করতেনা। রূপ যেন ধীরে ধীরে কেমন একটা হয়ে যাচ্ছিলো।।ওই ঘটনার দুই মাসের মাথায় আমি রূপকে প্রপোজ করি।কিন্তু ও আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলে।দেশে ওর জন্য ওর কথা অপেক্ষা করছে। রূপ তার কথা ছাড়া আর কারোর না। সেদিন আমি অবশ্য আর কিছু বলিনি ওকে। আমরা আবার ফ্রেন্ডের মতই থাকতে শুরু করি।আমি মনে মনে ভাবতে থাকি কিভাবে কি করবো। কিভাবে রূপের মন থেকে কথাকে সরানো যায়।এর মধ্যে আমি আরো একটি কথা জানতে পারি। সে কথা জানার পর তোমাদের আলাদা করা যেন আমার কাছে আরো সহজ হয়ে উঠে – প্রমি
প্রমি একদিন জানতে পেরে যায় আমি তোমাকে ভালোবাসি।এটা জানার পর প্রমি আর আমি মিলে তোমাদের আলাদা করার জন্য প্ল্যান বানাতে থাকি।অবশেষে আমরা ঠিক করি তোমাদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি তৈরি করে তোমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করব।এতে দেখা যাবে এক পর্যায়ে দুইজন দুইজনকে ভুল বুঝে যাবে। কেউ আর আসল সত্যি জানতে পারবেনা। আর সময় মত প্রমি ও রূপের মনে নিজের জায়গা করে নিবে।যেহেতু প্রমি তোমাকে সেই সব কথা বলে তোমার বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছিল। রূপের সম্পর্কে তোমার মনে ভুল ধারণা সৃষ্টি করেছিল।সেহেতু রূপ তোমাকে কোনো ভাবে ভুল বুঝলেই আমাদের আর কিছু করতে হবেনা।রূপের থেকে শুনেছিলাম তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড আকাশের কথা।তোমরা নাকি খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড – রিয়াজ ভাইয়া
তাই আমি পরিকল্পনা করি রূপকে বুঝাবো যে তুমি আর আকাশ রিলেশনে আছো। তাই তোমাদের নানারকম পিক এডিট করে রূপকে পাঠাতো হতো। কিন্তু তখন সমস্যা হয় যে পিকগুলো পাঠাবে কে ? ওখানে থেকে পাঠালে রূপ আমাকে বা রিয়াজকেই সন্দেহ করবে। – প্রমি
তাই তখন আমার মনে আসে সিয়ামের কথা।ছেলেটার বাবা মা নেই।অভাবের সংসার।বাসায় শুধু একটা ছোট বোন আছে।আমি সিয়ামের সাথে যোগাযোগ করি।জানতে পারি ওর ছোট বোন অনেক অসুস্থ। ডাক্তার জানিয়েছে ওর বোনের চিকিৎসা করতে অনেক টাকা লাগবে।তখন আমি সিয়ামকে বলি আমাকে একটা কাজ করে দিতে হবে।প্রথমে কাজের কথা শুনে সিয়াম রাজি হয়নি।পরে আমি ওকে বুঝাতে থাকি নানাভাবে ওর বোনের কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকি।অবশেষে ছেলেটা বোনের চিকিৎসা করার টাকার জন্য এ কাজে রাজি হয়।তারপর ও প্রায়ই তোমাকে আর আকাশকে ফলো করতো। তোমাদের পিক বাজে ভাবে এডিট করে রূপকে পাঠাতো।পিক দেখার পরে যে রূপের মনোভাব কি হতো তা আমরা বুঝতাম না।প্রমি চেষ্টা করতেই থাকে রূপের মনে নিজের জায়গা করার।। সব ঠিকই চলছিল কিন্তু সিয়াম একটা ভুল করে ফেলে। চারদিন আগে ও চিটাগং থেকে তোমার আর আকাশের কিছু পিক রূপের ফোনে পাঠায়।রূপ ওর বন্ধুকে দিয়ে খোঁজ লাগিয়ে জানতে পারে ওকে কই থেকে ছবি পাঠানো হতো।রূপ কালকে চিটাগং গিয়েছে। সিয়াম অবশ্য এখন মনে হয় ওদের কাছেই আছে – রিয়াজ ভাইয়া
মানুষ কতটা খারাপ হতে পারে আপনাদের না দেখলে কখনো জানতেই পারতাম না।- কথা
নিজের স্বার্থের জন্য কখনো কখনো খারাপ হওয়া লাগে – রিয়াজ ভাইয়া
অনেক কথা হয়েছে। আধা ঘন্টা পর কাজি আসবে। আজকে তোমার আর রিয়াজের বিয়ে হবে এখানে।দুজন মেয়ে এখন তোমার রুমে আসবে।তোমাকে সাজাতে।কোনরকম ঝামেলা করার চেষ্টা করো না এতে কিন্তু তোমারই ক্ষতি হবে। – বলে প্রমি আর রিয়াজ রুমে থেকে চলে গেলো।
~~~~~~~
অন্য দিকে রুপ আর আদ্র মাত্র ঢাকা এসে পৌঁছালো।রূপ সোজা নিজের বাসায় গেলো আদ্রকে নিয়ে।আরশি দরজা খুলে রূপকে দেখতে পায়। রূপকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
ভাইয়া তুমি এখানে তাহলে কথা কই ? – আরশি
মানে কথা তো বাসায় থাকার কথা। আমি তো মাত্র চিটাগাং থেকে আসলাম।আমি কিভাবে জানবো কথা কই ? – রূপ
ও তো তোমার সাথেই দেখা করতে গেছে – আরশি
মানে – রূপ
আরশি রূপকে সব ঘটনা বললো। আরশির কথা শুনো রূপ বলে উঠলো,
ওহহ শিট অনেক বড় ভুল করে ফেললাম আমি।পেয়ে ও কি আবার হারিয়ে ফেললাম আমি আমার কথাকে। #রূপকথার কাহিনী কি তাহলে অসম্পূর্ণই থেকে যাবে
চলবে , 🥰
(কে কে আকাশকে ভিলেন ভেবেছিলা)
পরবর্তী পার্ট পড়তে পেজে Follow দিয়ে রাখুন!
👉👉 সাহিত্যের ছোঁয়া