রূপকথা পর্ব-৩

0
1873

#রূপকথা
#পর্ব_৩
DI YA

নিচে থেকে রুহি চৌধুরী রূপ বলে ডাকতেই কথার কাছে থেকে সরে দাঁড়ালো রূপ। তারপর চারিদিকে তাকিয়ে কথাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

এখনি নিচে আয় তুই। নাহলে আমি আবার আসবো। তখন কোলে করে নিচে নিয়ে যাব – বলে রূপ নিচে চলে গেলো।

রূপ নিচে যাওয়ার সাথে সাথে কথা আবার রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো।যাবেনা সে নীচে।কেন যাবে সে ? সে কি রূপকে ভয় পায় নাকি।মোটেও না কথা রূপকে একটু ও ভয় পায়। লোকটা নিজেকে কি যে ভাবে আল্লাহই জানে। কি করে সাহস পায় সে কথাকে স্পর্শ করার। কি যে চাচ্ছে লোকটা তা কথার মোটেও বোধগম্য হচ্ছে না।কথা চায় না রূপকে নিয়ে ভাবতে। রূপকে নিয়ে তার মনে যে সব অনুভূতি ছিল সেগুলো গভীর রাগ আর অভিমানের মাঝে চাপা পরে গিয়েছে। কথা আর ভাবতে চাচ্ছে না কিছুই। ঘড়িতে দেখলো দশটা বেজে গেছে রাত।সে ঘরের লাইট বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পরলো।

রাত ২ টা বাজে। চারিদিক নীরব হয়ে রয়েছে। মাঝেমধ্যে দুই একটা কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে। শীত কাল চারিদিকে কুয়াশা। এমন সময় কথার রুমের বেলকনি দিয়ে ভিতরে ঢুকলো একজন লোক। লোকটি আর কেউ না সে হচ্ছে রূপ। রূপ রুমে ঢুকে দেখলো কথা ঘুমিয়ে আছে। গায়ের কম্বল অন্য পাশে পরে আছে। কথাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার শীত লাগছে। তাই রূপ গিয়ে কথার গায়ের উপর কম্বলটা সুন্দর করে দিয়ে দিলো। তারপর কথার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে লাগলো,

হয়তো তোর জানায় ভুল ছিল নয়তো আমার কাজে ভুল ছিল।এত টা যে বদলে যাবি এটা আমি বুঝিনি।আঘাতটা হয়তো খুব বেশিই দিয়ে ফেলেছি।কিন্তু আমি নিজ ইচ্ছেতে এসব করিনি।তোর জন্যই যে সব করেছি। আমার উপর তোর এত এত রাগ এত এত অভিমান তৈরি হয়ে গেছে তাই না। কিন্তু আমি যে নিরুপায় ছিলাম।অনেক হয়েছে এখন থেকে আমি আর কোনোরকম ছাড় দিব না। দরকার পরলে জোর করে তোকে নিজের সাথে বেধে রাখবো। আমি তোকে পাওয়ার জন্য সবকিছু করতে পারি কথা। – কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে থামলো রূপ

তারপর কিছু সময় মাথার পাশে বসে থেকে। কথার কপালে একটি ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে রূপ আবার বেলকনি দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।

~~~~

সকালে আরশির ডাকে ঘুম থেকে উঠে কথা। বিরক্ত নিয়ে আরশির উদ্দেশ্য কথা বলে,

কি সমস্যা অরু তোর। আজ তো ভার্সিটি বন্ধ। তো এই শীতের মধ্যে এত সকালে উঠালি কেন। সর যা আমি ঘুমাবো। – বলে কথা আবার শুয়ে পরলো

আরু কথাকে টেনে উঠিয়ে বলতে লাগে,,

৮ টা বেজে গেছে কথা – আরশি

হুম তো – কথা

আজকে কি – আরশি

আজকে শুক্রবার। আর কি – কথা

আরে বাবা। আজকে আমাদের কি প্ল্যান ছিল সব ফ্রেন্ড দের – আরশি

কি জানি মনে নেই আমার – কথা

আরশি উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে কথার মুখের উপর ঢেলে দিয়ে বলতে লাগলো,

এখনো কি তোর ঘুম পাচ্ছে কথু – আরশি

অরুর বাচ্চা আমি তোকে খুনই করে ফেলবো আজ। তুই আমার ঘুমের মার্ডার করেছিস।আজকে আমিও তোকে মার্ডার করে ফেলবো – কথা

আমার কোনো দোষ নেই। আকাশ তোকে কল দিচ্ছে। রিসিভ কর ও তোকে সব বলবে। আজকে যে কতগুলো বকা খাবি তুই কথু – বলে হাসতে হাসতে রুম ত্যাগ করলো আরশি

কথা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ফোন বন্ধ। ফোন অন করতেই স্কিনে ভেসে উঠলো আকাশে ৪০+ কলের আর অসংখ্য মেসেজের নোটিফিকেশন।তাই কথা আবার আকাশকে কল ব্যাক করলো। সাথে সাথে রিসিভ করলো আকাশ,

কতগুলো কল করেছি আর মেসেজ দিয়েছি – আকাশ

সরি রে আমি ঘুমে ছিলাম – কথা

তো ঘুমে থাকলে কি এতগুলো কলের শব্দ কানে যায় না – আকাশ

আরে এটা কখন বললাম।আমাকে অরু মাএ ঘুম থেকে উঠালো।তারপর ফোন হাতে নিয়ে দেখি ফোন বন্ধ তারপর ফোন চালু হওয়ার সাথে সাথে তোকে মেসেজ দিলাম।এখন বল এখানে কি আমার কোনো দোষ আছে – কথা

না, তোর কি কখনো কোনো দোষ থাকতে পারে।সব দোষ হচ্ছে আমার তাই না – আকাশ

আরে বাবা আর রাগ করতে হবে না।এখন বল তো আজকে কি আর তোরা দুজন কেন আমার ঘুমটাকে মার্ডার করলি।- কথা

আরে তুই না নিজেই প্ল্যান করলি আজকে আমরা সব ফ্রেন্ড রা মিলে ঘুরতে যাব।তুই কিভাবে ভুলে গেলি এটা? – আকাশ

ও আচ্ছা মনে পরছে। তো কখন বের হবি – কথা

১০ টায় বের হয়ে একটু ঘুরবো। তারপর লান্স করবো বাইরে। তারপরে ঘুরবো আর সেই সাথে রিয়ার বিয়ের জন্য আমাদের বাকি শপিংগুলো ও করে ফেলবো বুঝলি – আকাশ

আচ্ছা ঠিক আছে।এখন যাই টাটা – কথা

হুম টাটা – আকাশ

কথা বলা শেষে কতা ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। এতক্ষণে সবার ব্রেকফাস্ট করা শেষ কথা জানে৷আব্বু আর বড়আব্বু অফিসে চলে গেছে। তাদের সাথে রূপও অফিসে চলে গেছে। সেই কারণে কথা নিশ্চিন্তে নিচে আসলো। কিন্তু নিচে আসতেই তার ভাবনা ভুল প্রমাণিত হলো।কারণ রূপ ড্রইংরুমে সোফায় বসে আছে। পরনে তার অফিসের ড্রেস।কিন্তু ও এখনো অফিসে যাইনি কেন সেটা কথা জানেনা।রূপকে বসে থাকতে দেখে ও কথা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কিচেনে চলে গেলো। কথাকে দেখে রুহি চৌধুরী বললো,

রাতে খেতে আসলি না কেন মা? – রুহি চৌধুরী

আসলে বড়আম্মু খেতে ইচ্ছে করছিলো না তাই আর আসিনি। কিন্তু এখন খিদের জন্য আমার পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। – কথা

টেবিলে তোমার কাবার রাখা আছে। আমি কিছুক্ষণ আগে রেখে এসেছি। গিয়ে খাওয়া শুরু করো আমি কফি নিয়ে আসছি – নীলা চৌধুরী

ওকে আম্মু – কথা

ব্রেকফাস্ট শেষে কথা ছাদে চলে গেলো। ছাদে গিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে নিজের পছন্দের একটি গান ছেড়ে বসে পরলো। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরই কথা বুঝতে পারলো তার পাশে কেউ বসে আছে।পাশে তাকাতেই দেখতে পেলো রূপকে।

তুমি এখানে কি করছো ভাইয়া – কথা

তোর জন্যই আসছি। তুই কালকে রাতে আমি বলার পর ও খেতে আসিসনি কেনো। আমার কথার কি কোনো দাম নেই তোর কাছে – রূপ

না নেই। – বলে কথা ওখানে থেকে চলে আসতে নিবে তখনই রূপ তার হাত ধরে তাকে আটকিয়ে ফেললো।

কথাকে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলতে লাগলো,

আমার কথার অবাধ্য হওয়া আমি মোটেও পছন্দ করি না। তুই বার বারই সেই একই ভুল করছিস কথা – রূপ

তুমি আমার হাত ছাড়ো। কোনো রকম অধিকার নেই তোমার আমার হাত ধরার – কথা

তোর উপর যদি কারোর অধিকার থাকে সেটা শুধুই আমার।তো দ্বিতীয় বার আমার অধিকার নিয়ে কথা বলার আগে ভেবে নিস কার কাছে কি বলছিস – রূপ

কল্পনার জগত থেকে বের হন মিস্টার রূপ চৌধুরী। আমি সেই আগের কথা নেই যে আপনার শত অবহেলা অপমানের পরে ও আপনার পিছু পিছু ঘুরবো। আজকের কথা আর আগের কতার মাঝে প্রচুর তফাত । যা আপনি ধীরে ধীরে খুব ভাল ভাবে বুঝে যাবেন।জাস্ট ওয়েট এন্ড সি মিস্টার রূপ চৌধুরী -কথা

রূপ আর কিছু না বলে কথার হাতটা ছেড়ে দিলো। ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথে কথা নিজের রুমে চলে গেলো। কিন্তু রুমে ঢুকতেই কথা দেখলো সেখানে

চলবে,🥰

গত পর্বে কিছু শব্দ ভুল ছিল তাই জন্য আমি দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here