#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা
[১৬]
এলোমেলো চুলে এদিকওদিক ঘুরঘুর করতেই জাহেদার নজরে এলো আনহা। শক্ত কন্ঠে ডাক দিল জাহেদা।
‘ এই মেয়ে এদিকে আসো। তেল টেল নেই? চুলগুলো কি অবস্থা করে রেখেছ?
আনহার হঠাৎ মায়ের কথা মনে পড়ল।
মা যখন সুস্থ থাকে,তখন ডাকে, আনু?
মাথায় তেল দিয়ে দিতেই পারলে যেন মনে করেন রাজ্যের কাজ করে ফেলেছেন।
আনহার মাকে মনে পড়তে লাগল। মাকে ভালো রেখেছে তো তারা ?
জাহেদার ডাকে সম্ভিৎ ফিরে আনহার।
আনহা মাথা নামিয়ে বলল,
‘ আমার নাম আনহা আন্টি।
জাহেদা তেলের বোতল আনতে চলে গেল। আনহাকে টেনে নিয়ে এসে চেয়ারে বসালো। বলল,
‘ তোমার নাম জানি আমি। চুপচাপ বসো। তোমাকে দেখতেই আমার কেমন কেমন লাগছে। এলোমেলো চলাফেরা আমার একদম পছন্দ না। তুমি দেখোনা আমার ছেলেমেয়ে দুজনকে।
আনহা বলল,
‘ যাদের মা বাবা গোছালো, পরিবার গোছালো। তাদের সবকিছুই গোছালো আন্টি।
জাহেদা কিছুক্ষণের জন্য যেন থেমে গেল। মেয়েটাকে কি কি বলে ফেলল কে জানে? মেয়েটাকে দেখলে ও মায়া লাগে। কিন্তু ভালো করে কথা বলতে যেন আটকায় জাহেদা। মাথায় তেল দিয়ে চুল আঁচড়ে দেয় জাহেদা। বলে,
‘ চুল আঁচড়াতে কষ্ট লাগলে সোরাকে বলবে। নইলে আমি আছি। জিনি আছে। এভাবে পাগলের মতো ঘুরলে লোকে কি বলবে?
আনহা চুপ হয়ে থাকে। এই ধমক গুলোর পেছনে ও ভালোলাগা খুঁজে পাচ্ছে আনহা। আনহার বলল,
‘ আন্টি আপনি নারকেলের মতো।
জাহেদার ভ্রু কুঞ্চন হলো। কি বললে মেয়ে?
আনহা দাঁড়িয়ে গেল। চুল সামনে ফিরিয়ে বাকি বেণুনিটা বাঁধতে বাঁধতে বলল,
‘ নারকেল যেমন আপনি ও তেমন। টা টা।
জাহেদা ছুটল তার পিছু পিছু।
‘ এই মেয়ে বেণুনিটা বাঁকা হয়েছে। আনহা?
জায়িদ মায়ের গলার আওয়াজ শুনে আসে।
‘ কি হয়েছে আম্মা?
জাহেদা কপালে হাত বুলিয়ে বলল,
‘ আর বলিস না আব্বা। ওই পাগল মেয়েটাকে কোথা থেকে এনেছিস তুই? না বকতে পারি, না ভালো করে কথা বলতে পারি। কোনোটাই বলতে ইচ্ছে করেনা আমার।
জায়িদ বলল,
‘ তুমি আবার ওই মেয়েকে নিয়ে পড়েছ কেন আম্মা? রাখো তো।
জাহেদা ছেলের মুখে হাত বুলিয়ে বলল,
‘ এখন শরীর কেমন আছে আব্বা?
জায়িদ মায়ের হাত নিজের মুখে চেপে বলল,
‘ তোমাদের দোয়ায় এখন ভালো আছি আম্মা। তোমরা ভালো আছ?
জাহেদা হাসে।
‘ তোরা ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকি আব্বা।
সাহিল জায়িদের কাছে আসতে গিয়ে ও থেমে যায়। মা ছেলের এত মহব্বত কলিজায় গিয়ে লাগে। মনপুড়ে মায়ের জন্য। মা নামক পাষাণ মানুষটার কথা ভীষণ ভীষণ মনে পড়ে। দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে। মায়ের কোলে শুয়ে ঘুমাতে ইচ্ছে করে। মায়ের হাতে খেতে ইচ্ছে করে। কোথায় সে মা জননী? কোথায়?
সাহিলকে চলে যেতে দেখে জাহেদা ডাক দেয়। সাহিল?
সাহিল ফিরে। বলে,
‘ ওই জায়িদের সাথে কথা ছিল।
জাহেদা এগিয়ে যায়। টেবিলের উপর থাকা তেলের বোতল থেকে তেল ঢেলে হাতে নিয়ে সাহিলের মাথায় দেয়। মাথার তালুতে ঢলে দিতে দিতে বলে,
‘ মাথাটা হুটহাট এজন্যই তো গরম হয়। তেল না দিলে কি মাথা ঠান্ডা থাকবে?
জিনিয়া রুমে ডুকেই হেসে দিল। সাহিল তাকালে মাথা নাড়িয়ে মিনমিন করল,
‘ আমি কিচ্ছু বলিনি।
জাহেদা বলল,
‘ আমি জানি। তোমার হুটহাট রেগে যাওয়ার অভ্যাস আছে। জিনিকে বলতে হবে কেন?
জায়িদ হাসল। জাহেদা তার মাথায় ও তেল দিয়ে দিল। সাহিল, জায়িদ দুজনই মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল। জিনিয়া হাসতে হাসতে মায়ের সাথে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
___________
দুইতিন ধরে সোরা পুরোপুরি এড়িয়ে চলছে নাহিলকে। নাহিলের বেহাল অবস্থা। সে বুঝে নিয়েছে সে ফেঁসে গিয়েছে এই কালো মেয়েটির সাথে। রূপ আর রং নয় এই মেয়েটাকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য হলেও তাকে চাই নাহিলের। প্রেমময় দুটো কথা বলে প্রেমিকা সাজতে নয়, রণমুর্তি ধারণ করে শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে খুন্তি নিয়ে দৌড়ে আসা মেয়েটিকে ভাবতে নাহিলের ভালো লাগে। কাজলচোখি মেয়েটিকে ভাবতেই নাহিলের মনে হয় যার চোখ এত সুন্দর দেখতে হয়, তার মনটা ও নিশ্চয়ই ভীষণ সুন্দর হবে। কিন্তু এ হলো কি? নাহিল তো বরাবরের মতোই চামড়ার পার্থক্য বুঝে এসেছে। এই বেলায় এমন হবে কেন? নাহিল তার মতোই সাদা চামড়ার মেয়ের কাছেই তো মুগ্ধতা খুঁজবে। মা তো বারবার সেটাই বলে। তার সুপুত্রকে তিনি এমন মেয়ে বিয়ে করাবেন, যার দিকে একবার তাকালেই আর চোখ ফেরানো যাবেনা। তার বেলায় যদি তিনি জানতে পারেন, তার সুপুত্র গ্রামের এক শ্যামাবতীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন তখন কি হবে?
চৌধুরী বাড়ির মেয়ে নাতাশা চৌধুরী কি কখনো তা হতে দেবেন? দাপটে যার নিজের স্বামীর ঘরে ও পা পড়েনা। সহজ সরল সাজেদ সাহেব এমন বউয়ের সাথে পেরে উঠেন না। এমন দাপটে মহিলাকে কেন তার ঘাড়ে চাপাল শ্বশুরমশাই? আর কোনো এমপ্লয়িকে পেলনা মেয়ে জামাই করার জন্য। অবশ্য বিয়ের পরপরই শ্বশুরের কোম্পানিতে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন সাজেদ সাহেব। ভাইয়ের সাথে ব্যবসায়ের হাল ধরেছেন। কিন্তু তারপর ও নাতাশা বেগমের কথা, সাজেদ সাহেবের এত উন্নতি তাকে বিয়ে করায় হয়েছে।
নাহিল বাবা মায়ের ঝামেলায় নিজেকে জড়ায় না। সাহিলের জন্যই সে দাদারবাড়িতে থাকে। ভাই তার সব।
নাতাশা বেগম ফিরেন স্বামীর বাড়ি কোনো বিশেষ প্রয়োজনে। নাহিলের অসুস্থতার সময়। যখন নাহিল যায়না সেখানে তখন। সাহিলের বউ দেখার জন্য আসার কথা থাকলে ও তিনি আসেননি। নাহিল একেবারে আসতে বারণ করিয়ে দিয়েছে। মা হয়ত জিনিয়াকে উল্টাপাল্টা কিছু বলে ফেলবে। বাবা নিজেকে মারা খোঁটা সহ্য করতে পারলে, পরিবারের কাউকে খোঁটা মারলে একদম সহ্য করতে পারেন না। নাহিলের বারণ শুনে নাতাশা বেজার হওয়ার পরিবর্তে খুশিই হলেন যেন।
ভেজা চুলের এই রমণীকে অদ্ভুত মোহনীয় লাগায় দূর থেকেই ছবি তুলে ফোনবন্দী করে নাহিল। ভেজা চুল ঝেড়ে উঠানের রশিতে গামছা বিলিয়ে দিতেই ভ্রু কুঞ্চন হয় সোরার।
আজব তো? ওই লোকটা কি পাগল? যখন তখন যেখানে সেখানে হাজির? ব্যাপারটা কি?
সোরা দৌড়ে ঘরে চলে গেল। হাসি আটকাল কোনোমতে। আবার পরক্ষণে হাসিহাসি মুখ চিন্তায় নিভু নিভু হয়। তার মাঝে কি আসলেই মুগ্ধতার মতো কিছু পাওয়া যায়? নাহলে ওভাবে তাকানোর মানে কি অন্যকিছু? ছিঃ ওসব ভাবা ও পাপ। তার মন বলে, নাহিল কখনোই খারাপ হতে পারেনা। তাহলে কি মুগ্ধতা?
সোরা চট করে প্রশ্ন করে আনহাকে।
‘ আপা আমাকে তোমার কেমন লাগে?
আনহা সোরার থুতনি ধরে বলল,
‘ তুই তো শ্যামলী। তুই জানিস শ্যামাবতীরা ভীষণ মায়াবী হয়, তাদের সৌন্দর্য দেখতে ও সুন্দর চোখ লাগে। তাই তোর সৌন্দর্য বুঝতে গেলেও সুন্দর চোখ লাগবে। আমার কি সেই চোখ আছে?
সোরা বিড়বিড় করল,
‘ সুন্দর চোখ? ছোটদাভাইয়ের চোখ তো সুন্দর।
বলতে না বলতেই লজ্জায় পড়ে যায় সোরা। আনহা চোখ বড়বড় করে বলল,
‘ হুররে তাহলে তো নাহিল সাহেবকে বলতেই হবে। বেচারা মাঝনদীতে হাবুডুবু খাচ্ছে। গিয়ে বলে আসি। একটু শান্তি পাক।
সোরা আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলে সোরাকে।
‘ না না আপা। এসব ভাবা ও পাপ। দাদি জানলে আমাকে মেরেই ফেলবে। আব্বা কষ্ট পাবে। না আপা। দোহাই লাগে তোমার।
আনহা সোরার দিকে অবাক চোখে তাকায়। আশ্চর্য!
তাহলে শেষটা কি হবে সোরা? তুই চুপ থাক কিন্তু নাহিল?
সোরা কিছু বলল না।
________
অত চেপেচিপে রাখার অভ্যাস নেই আনহার। বুঝেছ, যাহা বলিয়াছি সত্য বলিয়াছি। তোমার লায়লিকে এবার বউ কইরা লও মিয়া।
নাহিক ঘনঘন মাথার পেছনটা চুলকালো। বলল,
‘ কিন্তু আমার তো সুন্দরী মেয়ে পছন্দ। সোরা আমাকে পছন্দ করলেই কি না করলেই কি আসে যায়? আমি ধলা বউ বিয়ে করব।
আনহা বলল,
‘ তাই?
নাহিল হাসল। আনহা এদিকওদিক খুঁজে একটা লাঠি যোগাড় করল। দৌড় লাগাল নাহিল। আনহা ও তার পেছন পেছন দৌড় লাগাল। একেবারে জায়িদের হাতের সাথে লেগে ছিটকে পড়ল আনহা। মাগো বাবাগো বলে চিৎকার করে উঠতেই জায়িদ এসে মুখ চেপে ধরল আনহার। আনহা চুপ হয়ে গেল। জায়িদ রেগে তাকিয়ে রইল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ অন্ধের মতো দৌড়াচ্ছ কেন? মাথা কি গেছে?
আনহা ধীরে ধীরে জায়িদের হাত সরাল মুখ থেকে। গাইল,
‘ কাছে আইসো, আইসো রে বন্ধু, প্রেমের,
জায়িদ সরিয়ে দিল আনহাকে। যেতে যেতে বলল,
‘ স্টুপিড। কালই তোমার শেষদিন। তোমাকে এবার তোমার বাড়ি খুঁজে পাঠিয়ে দেব আমি।
আনহা হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বলল,
‘ আমার শেষদিন? আমি তো ভেবেছি আপনার শেষদিন বললেন? হা হা হা হা।
জায়িদ দাঁড়িয়ে গেল। পেছনে ফিরে আনহাকে হাসতে দেখল। বিড়বিড় করল,
‘ ননসেন্স।
হাসা ছাড়া আর কিছুই পারেনা।
_____________
বাড়ির পেছনেই করলা গাছ লাগিয়েছে সামাদ মিয়া। সোরা মায়ের কথায় করলা ছিড়তে গিয়েছে মাত্রই। হাতে থাকা ঝুড়িতে করলা ছিঁড়ে রাখতে রাখতে খেয়াল হলো করলা গাছের ওপাশে দাঁড়িয়েছে কেউ। নাহিলকে দেখলে ও সোরা বলল,
‘ কে?
নাহিল হেঁটে সামনে চলে এল সোরার। কিছুই বলল না। সোরা ভয়ে এদিকওদিক তাকালো। বলল,
‘ আপনি এখানে?
নাহিল তারপরে ও কিছু বলল না। সোরা চোখ ফিরিয়ে নিল। বলল,
‘ এখান থেকে চলে যান ছোটদাভাই। কেউ দেখলে,
নাহিল গেল না। করলা ছিঁড়ে সোরার ঝুড়িতে দিল৷ হাতটা ঝাড়ল সোরার সামনে গিয়ে। সোরা দুই পা পিছু হেঁটে বলল,
‘ কেন করছেন এমন? আপনি কি পাগল?
নাহিল পকেট থেকে হাত বের করে গলা ম্যাসাজ করল। চট করে সোরার হাতে দুই ডজন চুড়ি দিয়ে বলল,
‘ এগুলো শক্ত করে ধরো আগে।
সোরা চুড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল
এসব?
নাহিল হাতের তালু চুলকালো। এদিকওদিক তাকিয়ে সোরার গালের একপাশে আঙুল দিয়ে টোকা মেরে বলল,
‘ সোরা এই চুড়িগুলো গঞ্জ থেকে কিনেছি। মনে হলো তোমার হাতে খুব মানাবে। লাল শাড়ির সাথে এই চুড়িগুলো ভালো মানাবে। লাল শাড়ি দরকার। তুমি ভেবোনা লাল শাড়ি আনব আমি শহর থেকে। ততদিন কি তুমি থাকবে সোরা ?
সোরা হাত পা কাঁপে তরতর করে। নাহিল আবার ও বলল,
‘ সোরা আমি আসব। আমি জানি তুমি আমার অপেক্ষায় থাকবে। থাকবেনা?
সোরা ভয়ে ভয়ে দুই পা পিছু হাঁটে। ঝুড়ি পড়ে যায় হাত থেকে। সোরা চলে যেতে চাইলে নাহিল তার হাত ধরে ফেলল। বলল,
‘ সোরা আমি তোমার মুখে কিছু শুনতে চাই।
সোরার রাগ ঝড়ে পড়ল।
‘ কালা মেয়েকে কেন এসব বলছেন? আমি রূপবতী নই।
নাহিল মাথা ঝাঁকাল। সোরাকে টেনে এনে সোরার দুগাল আঁকড়ে ধরল। বলল,
‘ সোরা এসব আমার মুখের কথা। সোরা তুমি আমায় ভুল বুঝছ। আমি সত্যি এমনটা মিন করিনা সোরা।
সোরা নাহিলের দুহাত সরাতে চেষ্টা করল।
‘ এসব হওয়ার নয় ছোটদাভাই। এমন পাগলামি করবেন না। বাবা কষ্ট পাবে। দাদি কষ্ট পাবে। আপনার সাথে আমার যায়না। কোনোদিকেই যায়না। না শিক্ষা, না পরিবার। কোনোকিছুতে না। আমার ক্ষতি করবেন না ছোটদাভাই। আপনি আর ও ভালো কাউকে,,,,
পায়ের আওয়াজ তুলে চলে গেল নাহিল। করলাগুলো কুড়াতে কুড়াতে চোখ আটকে গেল সোরার। জাহানারার দুচোখ দেখে হাত থেকে আবারও করলার ঝুড়ি খসে পড়ল। দুচোখ জলে ভর্তি হলো সোরার। সে কাঁদল। বিড়বিড় করল, এই কালো মেয়েকে মন দেওয়ার অপরাধে আপনাকে অনেক বড় শাস্তি পেতে হবে ছোটদাভাই। আপনি অনেক বড় ভুল করলেন। অনেক বড়৷
_______
গ্রাম থেকে ফেরার সময় ঘনিয়ে এসেছে। শফিক সাহেবের হসপিটালের ছুটি ফুরিয়ে এসেছে। জায়িদের ও। জিনিয়ার ভার্সিটিতে পরীক্ষা। সবার আগে জাহেদার যাওয়ার তাড়া। এই গ্রামে আসা অব্ধি শুধু বিপদ যাচ্ছে তার ছেলের উপর। আর থাকবেন না তিনি। সাগর সাহেব ও সায় জানালেন। বৃদ্ধা জাহানারা হুট করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মন খারাপ করলেন। জাহেদা তারপর ও নিরুপায়। সালমার সাথে এ কয়দিনে বোনের মতো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। অনেক নতুন রান্না ও শিখেছেন তিনি। সালমার কথা মনে পড়তেই আর বেশি মনখারাপ হয় জাহেদার। সালমা তো জড়িয়ে ধরে রাখল জাহেদাকে।
‘ আপা আর কখনো কি আসবেন না?
জাহেদা হেসে বলে,
‘ আসব। সময় করে তোমরা ও শহর থেকে ঘুরে এসো। ভালো লাগবে।
সালমা হাসেন জাহেদার কথায় ৷ বড়মিয়া এত ভালা শ্বশুড়বাড়ি পাইল। কপাল লাগে।
জিনিসপত্র সব গোছগাছ। সবাই বেরোনোর জন্য প্রস্তুত। কিন্তু লাপাত্তা নাহিল। তাকে কোথাও পাওয়া গেলনা। আনহা তো সেজেগুজে জাহেদার পাশে দাঁড়িয়ে রইল। কি মজা, কখনো এ বাড়ি, কখনো ওই বাড়ি। জায়িদ সাহেব পুলিশ হওয়ায় আনহার সুবিধা হয়েছে। শহর থেকে সোজা মায়ের কাছে ফিরবে আনহা।
নাহিলের খোঁজে যখন সবাই পাগলপারা। সোরা চুপিচুপি চলে গেল নদীর পাড়ে। উদাস হয়ে বসে থাকা ছেলেটির কাছে গিয়ে ডাকতেই ঘাড় ফেরায় নাহিল। সোরাকে দেখে নির্বিঘ্নে তাকিয়ে থাকে৷ সোরা উশখুশ করে নাহিলের দিকে একটি ঘড়ি এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ ছোটদাভাই এটা আমার খুব প্রিয় একটা ঘড়ি। সাদিদের জন্যই কেনা। কিন্তু বড় পড়ে যাওয়ায় ওর হাতে মানায় না। আপনার হাতে খুব মানাবে। রাখুন। ফিরিয়ে দিলে আমি চুড়ি ফিরিয়ে দেব।
মাথা নিচু করেই কথাগুলো বলল সোরা। নাহিল চুপচাপ নিল ঘড়িটা। ক্ষীণস্বরে বলল,
‘ সোরা তুমি থাকবেনা? কাউকে কিছু বলতে দিচ্ছ না তুমি। নইলে,
‘ থাকব।
সোরা থেমে যায়। আচমকা ঝাপটে শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরল নাহিল। ছাড়ল না। সোরা গাল বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়াল। সোরার হাতের উল্টোপিঠে দুচোখ চেপে ধরল নাহিল। তারপর পরই চলে গেল। সোরার দিকে ফিরল না আর। সোরা আর গেলনা বাড়িতে। নদীর পাড়েই বসে রইল।
সবাই কত খুঁজল সোরাকে। যাওয়ার আগে কেউ আর পেলনা তাকে। জাহানারার কথা সোরা ফেলতে পারেনা। দাদি কখনোই তার ক্ষতি চাইনা।
_________
শহরে ফেরার পথে গাড়িতে জাহেদা প্রশ্ন করল আনহাকে।
‘ বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছ?
আনহা ঘনঘন মাথা নাড়ায়। জাহেদা বলল,
‘ মা বাবার খোঁজ নাওনি।
‘ বাবা নেই। মা ভালো আছে৷
জাহেদা থেমে বলল,
‘ কিসে পড়ো?
‘ কতবার বলেছি আন্টি জিনিয়ার সাথে।
জিনিয়া হেসে ফেলল। জাহেদা বলল,
‘ সে যাইহোক। এখন কাদের সাথে থাকবে? জিনিয়ার সাথে নাকি আমাদের সাথে?
আনহা হেসে ফেলল।
‘ অফিসার যা বলে। আর কয়দিন থাকব ওনিই তো জানেন কিংবা কোথায় রাখবেন।
জাহেদা হাসল। বলল,
‘ আমার সাথে থাকো। জিনির বিয়ের পর একা হয়ে গেছি একদম। তুমি থাকো। ভালো লাগবে আন্টির। এমনিতে ও ছেলের বউ নিয়ে আসব শীঘ্রই। আর পারিনা এত চাপ। সংসারের চাবিটা তুলে দিতে পারলেই শান্তি।
আনহা হাসল। বিয়ে খাব ৷ ওহহো। আন্টি আমি তাহলে বিয়ে খেয়েই যাব।
জাহেদা অসন্তুষ্ট হলেন। এ মেয়ের কোথাও একটা জ্বলুনি দেখতে চেয়েছেন তিনি। কিন্তু এই মেয়েটা দিব্যিই নাচছে৷ অসহ্য লাগছে জাহেদার। এই মেয়েকে কান বরাবর দুটো দিতে ইচ্ছে করছে। পরক্ষনেই জাহেদার ধারণা পাল্টালো। ভালো বংশের মেয়ে আনবেন তিনি তার ছেলের জন্য। কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে নয়। হাজার বাছা মেয়ে আনবে৷ এসব মেয়ে নয়৷ কখনোই না৷
চলবে,
সারপ্রাইজ পর্ব দিলাম। কাহিনি বেশি বাড়াতে ইচ্ছে করেনা আমার। তাই এত জোরে জোরে টানছি।