রৌদ্রদেশে মেঘের বেশে পর্ব-১৮

0
548

#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা
[১৮]

প্রচন্ডরকম পেট ব্যাথায় কাতর হলো জিনিয়া। বহুদিন পর ব্যাথাটা উঠল। গরম পানি সেক, গরম পানি ও ঢকঢক করে খাওয়ার পর কোনোরূপ পরিবর্তন দেখা গেলনা। সাহিল তাকে একপ্রকার জোর করে হসপিটালে নিয়ে গেল। শফিক সাহেব আর জাহেদা চিন্তিত হয়ে পড়ল। এই মেয়ের এমন ব্যামো কোথাথেকে হলো? কিছুদিন পর পর।
শফিক সাহেব স্যালাইন আর ইনজেকশন পুশ করলেন। ঘুমিয়ে পড়ল জিনিয়া। ঘুম ভাঙল প্রায় সন্ধ্যার দিকে। তখন পেটে কোনোরূপ ব্যাথা লাগল না। শুধু দুর্বল লাগল। সবাইকে কি পরিমাণ ভয় লাগিয়ে দিল সে কে জানে? সাহিল কেবিনে ডুকেই জিনিয়ার কাছে ছুটে গেল আগে। বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখে বলল’
‘ কি পরিমাণ ভয় পেয়েছিলাম জানো মেয়ে?
জিনিয়া হেসে ফেলল। বলল,
‘ আপনি মাঝেমধ্যে এত ভীতু হয়ে যান কেন? সামান্য ব্যাথা মাঝেমধ্যেই হয় আমার। এসব কোনো সিরিয়াস কিছুনা। আব্বা তো বিয়ের সময় আপনাকে বলেছিল।
সাহিল মাথা নাড়াল। জিনিয়া হাসল। বলল,
‘ তো। আবার ভয় পাচ্ছিলেন কেন? নাহিল ভাইয়া কোথায় এখন?
সাহিল বলল,
‘ আছে ছোটমার কাছে । কাকা এসে বলেছে।
জিনিয়া বলল,
‘ সোরা খুব ভালো মেয়ে। ছোটআম্মা এটা ভালো কাজ করছেনা একদম। নাহিল ভাইয়া কি আসলেই ভালো থাকবে তার পছন্দ করা মেয়ের সাথে? থাকবেনা৷ আসলে তিনি ছেলে কি চাই তা বুঝতে চাইছেন না। নাহলে রাজী হয়ে যেতেন৷ ছেলের সাথে অন্যায় করছেন তিনি।
সাহিল বলল,
‘ আমি দেখছি কি করা যায়। ছোটমার সাথে কথা বলতে হবে। ছোটমা আমাকে দেখতে পারে। আমি রাজী করাতে পারি কিনা দেখি।
জিনিয়া বলল,
‘ দেখি না। রাজী করাবেন। সোরাকে আমার জা বানাবেন।
সাহিল হেসে ফেলল।
‘ ছোট বাচ্চাদের মতো আবদার করতে থাকো সারাক্ষণ।
জিনিয়া হাসল। সাহিলের মুখের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ বাচ্চা তো নেই। তাই তো আমিই আবদার করছি। বাচ্চা থাকলে কি করতাম?

সাহিল মাথা নামিয়ে হাসল। জিনিয়া বলল,
‘ এই, এই আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন গুড্ডুসাহেব?
সাহিল মাথা তুলে চোখ লাল করল। জিনিয়া আবার ও মিনমিন করে ডাকল,
‘ গুড্ডু! গুড্ডু!
তারপর পরই ধপ করে বেডে শুয়ে মুখ লুকোলো। সাহিল জিনিয়ার কান্ড দেখে হাসতে হাসতে বের হয়ে গেল।

_____

খাবার টেবিলে কাশি উঠে গেল আনহার। জাহেদা তড়িঘড়ি করে মাথা চাপড়াল আনহার। জায়িদ গ্লাসে পানি ঢেলে দিয়ে ধমকালো।
‘ এই মেয়ে পানি খাও। খাওয়ার সময় এত বকবক না করতে বারণ করেছি না?
আনহা ঢকঢক করে পানি খেল। চোখ লাল করে তাকাল জায়িদের দিকে।
‘ সবসময় খ্যাঁকখ্যাঁক করেন কেন?
খেয়ে চলে গেল আনহা। জায়িদ বিরক্তি নিয়ে খাওয়া শেষ করল। এই মেয়েকে চরম শিক্ষা দেবে সে।
রুমের দিকে এগোতেই আনহার রুমে কাউকে দেখল না জায়িদ। এই মেয়ে এতরাতে যায় কই? আশ্চর্য তো?
ছাদের দরজা বন্ধ করে কি করছে এই মেয়ে? ছাদের দরজা ধাক্কাল জায়িদ।
ফোনে কথা বলা আনহা বিরক্ত হলো। এই লোক যেখানে সেখানে গিয়ে তাকে ডিস্টার্ব করে। উফফ।
ফোন কেটে এগিয়ে গেল আনহা। দরজা খুলে দিল ছাদের। জায়িদ হুড়মুড় করে ছাদে পা রাখল। বলল,
‘ এই মেয়ে তোমাকে কতবার বলেছি ছাদে এসে তুমি কথা বলবেনা। পাশের বাড়ির সবাই দেখবে, শুনবে।
‘ তো কি হয়েছে শুনুক না। এতে আপনার কি সমস্যা?
মুখে মুখে কথা বলা সহ্য হয়না জায়িদের।
জায়িদ ফোন কেড়ে নিল আনহার হাত থেকে। এক আছাড় দিল ছাদের রেলিংয়ে । ভেঙে দুটুকরো হলো ফোন। আনহা হিংস্র বাঘিনীর মতো আক্রমণ করল যেন। এক ধাক্কা দিল জায়িদকে। তার এই ভয়ংকর ধাক্কায় জায়িদ গিয়ে পড়ল রেলিঙের কাছে। হাতে ঘষা লেগে ছিঁড়ে গেল।
সাথে সাথে হুশ ফিরল আনহার। কি হয়ে গেল? কি করে ফেলল সে? জায়িদের দিকে এগোতেই জায়িদ পিছু হাঁটল। চলে গেল আনহার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে। আনহা হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।
‘ অফিসার এটা কি করলেন? আমি এখন মায়ের খোঁজ নেব কি করে? কি করলেন এটা? আমি ধাক্কা দিলাম? আল্লাহ কি হচ্ছে এসব? আমার সাথে কি হচ্ছে এসব?

তারপরের দিনই ফোন কিনে এনে দিল জায়িদ। কোনোরূপ কথা না বলে জাহেদার হাত দিয়ে পাঠাল। তারপর বলতে বলল,
‘ বিকালেই যেন রেডি থাকে। উত্তরা দিয়ে আসবে তাকে তার মায়ের কাছে।
আনহা চরম অবাক হলো। ফোন নাম্বার না থাকায় সিফাতকে ফোন দিতে পারল না। মা তো উত্তরায় থাকেনা। সিফাত তাকে উত্তরা বলতে বলেছিল তাই উত্তরা বলেছে। আনহা কিছু বলল না জায়িদকে। কি করবে কি করবেনা ভাবতে ভাবতে দিশেহারা হয়ে পড়ল আনহা।

উত্তরা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরোতেই শফিক সাহেব মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন আনহার মাথায়। বলেন, আবার আসিস ইচ্ছে হলে। তোর মাকে ও সাথে নিয়ে আসিস।
জাহেদা ও তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। আনহা নিশ্চিত তাকে আবার এই বাড়িতে ফিরতে হবে। কিন্তু সিফাতের সাথে কি করে যোগাযোগ করবে সে? নাম্বার তো নেই। সিফাতের কাছে ও তার নতুন সিমের নাম্বার নেই। কি হবে এখন?
জায়িদের সাথে পুরোটা রাস্তা এলেও কোনো আওয়াজ এল না জায়িদের মুখ থেকে। প্রচন্ড রকম বিরক্তি লেগে উঠল তার। এই লোকটার কি হয়েছে আবার?
উত্তরার হসপিটালে পৌঁছে ঠিকানা অনুযায়ী আনহার মাকে পাওয়া গেলনা। জায়িদ এবার মুখ খুলল
‘ তোমার মা তো এখানে নেই। তুমি ভুল ঠিকানা দিয়েছ?
আনহা চুপ করে থাকল। জায়িদ হাত ধরে ঝাঁকাল আনহাকে।
‘ উত্তর দাও।
ছলছলে চোখে তাকাল আনহা৷ জায়িদ হাত ছেড়ে দিল। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,
‘ সত্যিটা বলো।
আনহা বলল,
‘ আমার বন্ধু মাকে অন্যকোথাও নিয়ে গিয়েছে বোধহয়। অন্য হসপিটালে। আপনি তো ফোন ভেঙে ফেলেছেন আমি যোগাযোগ ও করতে পারছিনা।
জায়িদ৷ মাথায় হাত দিল।
‘ তোমাকে কি করব আমি এখন?
আনহা সোজা তাকাল জায়িদের দিকে। জায়িদ চোখ সরিয়ে নিল।
আনহা ছোট্ট করে আওয়াজ করে বলল,
‘ আপনি চলে যান।
জায়িদ গর্জন করল,
‘ মানে?
‘ মানে কি? মানে আপনাকে চলে যেতে বলেছি আমি। দ্যাটস ইট।
‘ এক চড়ে দাঁত সব ফেলে দেব মেয়ে। আমাকে কি মগের মুল্লুক পেয়েছ? কোনো কুক্ষণে আমি তোমার সামনে পড়লাম কে জানে?
আনহা সরে দাঁড়াল দূরে। আমি খোঁজ নিতে নিতে মায়ের খোঁজ পেয়ে যাব অফিসার। আপনার চিন্তার কারণ নেই।
জায়িদের রাগ আকাশ ছুঁল। আনহার বাহু খামচে ধরে সামনে আনল সে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ আমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? তোমার জন্য চিন্তা করব আমি? পাগল?
আনহা ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠল। জন্তুর মতো ধরেছে লোকটা। হাতটা ছিঁড়ে চলে যাবে। আনহার চোখে পানি দেখতেই ছেড়ে দিল জায়িদ। এদিকওদিক হেঁটে রাগ সংবরণ করল কোনোমতে। তারপর কিছু একটা ভেবে এগিয়ে গেল। আনহার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। গাড়িতে তুলে সোজা আবার নিয়ে আসল। জাহেদার দিকে আনহাকে ছুঁড়ে মেরে বলল,
‘ আম্মা এই মেয়েকে সোজা ঘরবন্দী করবে। আমি তার মায়ের খোঁজ নিয়ে তারপর দিয়ে আসব। ছাদে যাতে না যায় এই মেয়ে।
জাহেদা কিছুই বুঝল না। আনহা কেঁদে গেল শুধু। জায়িদ আড়চোঁখে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। তারপর চলে গেল ৷ যেতে যেতে বাইরে দাওয়ায় লাগানো ফুলগাছের উপর রাগ ঝাড়ল। ভেঙে মোঁচড়ে ফেলল।

জিনিয়াকে দেখার জন্য গেল সবাই। জাহেদার সাথে আনহা ও গেল৷ জিনিয়া খুশি হলো সবাইকে দেখে। সাহিলকে ফোন করতেই দেখা গেল সাহিল ঘরে ফোন রেখে চলে গেল। জিনিয়া নাহিলের ফোনে কল দিল। নাহিলের ভার কন্ঠস্বর শোনা গেল।
জিনিয়া বলল,
‘ ভাইয়া আসবেন না বাসায়? শরীর ঠিক আছে?
নাহিল জবাব দিল,
‘ সামান্য জ্বর। মা আসতে দিচ্ছেনা। ভালো লাগলে চলে আসব।
সোরার কথা জিজ্ঞেস করল না জিনিয়া। সাহিলের কথা নিশ্চয়ই নাহিল জানেনা। তাই জিজ্ঞেস করল না।

______

সাগর সাহেবের পাশে গিয়ে বসল আনহা। জিজ্ঞেস করল,
‘ আন্কেল আপনার ওয়াইফ আর আপনার ভাইয়ের ওয়াইফ কোথায় থাকেন? তাদের তো কখনোই দেখলাম না।
সাগর সাহেব হাসলেন। বললেন,
‘ তারা পাজি মহিলা, বেড়ায় সারাবছর। বাপের বাড়ি থেকে আসতেই চায়না। যখন আসবে তখন পরিচয় করিয়ে দেব।
আনহা হাসল।
‘ ততদিন কি আমি থাকব?
আনহার মাথায় হাত বুলালো সাগর সাহেব। আনহা সাগর সাহেবের হাত তার মাথায় চেপে ধরল। হাতটা নামিয়ে খেলতে খেলতে বলল,
‘ আপনারা দুই ভাইয়ের আর ছেলেমেয়ে নেই কেন?
সাগর সাহেব কেশে উঠলেন। পুরোনো ক্ষত যেন নড়াচড়া দিয়ে তীব্র ব্যাথা ছড়িয়ে দিচ্ছে পুরো শরীরে, মন মস্তিষ্কে। তিনি বললেন,
‘ সাজেদের একটা ছেলে হয়েছিল নাহিলের পরপর। টাইফয়েড চলে আসায় মারা গিয়েছিল।

‘ আর আপনার?

আনহা প্রশ্ন করল।

সাগর সাহেব কিছু বলতে পারলেন না। কি বলবেন উনি? চাচির মতে সালেহার গর্ভে সন্তান ছিল। গর্ভের সন্তান নিয়ে কোথায় চলে গিয়েছিল সালেহা জানেনা সাগর সাহেব। সেই সন্তান কি বেঁচে আছে? নাকি? সালেহা ও কি বেঁচে আছে? নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করে সাগর সাহেবের৷ কত অমনাুষ ছিল সে তখন? সালেহা না চলে গেলে হয়ত এই উপলব্ধি কখনোই হতোনা তার। আসলেই আমরা প্রিয়জনের মূল্য বুঝিনা। প্রয়োজন হলেই কাছে টানি, প্রয়োজন ফুরোলে দূরে ঠেলে দিই। সেই তাদের যখন আবার প্রয়োজন হয় তখন না পেলে বুঝতে পারি তারা আসলে প্রয়োজন নয় প্রিয়জন ছিল। তাদের ছাড়া আসলেই আমরা অসহায়। এই উপলব্ধি যদি আগে আসত সাগর সাহেবের তাহলে আজ তার খুব সুন্দর গোছালো একটা সংসার থাকত। সেই তার দেখাদেখি ভাইটার সংসারটা ও গোছালো হতো। মূল শিকড়ই তো নড়বড়ে। সেখানে ছোট ভাই কি করবে?
আনহা উত্তর না পেয়ে জিজ্ঞেস করল আবার।
‘ আন্কেল সাহিল ভাইয়ার কি আর কোনো ভাইবোন নেই?
সাগর সাহেব উঠে গেলেন। আনহা অবাক হলো। খানিকটা মন খারাপ হলো তার। খানিকটা অনুশোচনা হলো তার। আন্কেল বোধহয় অমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে চাননা।

________

সাহিলের ফোনে কল আসল। জিনিয়া ধরবে কিনা ধরবেনা দোটানায় পড়ে গেল। শেষমেশ ধরে যেই কানে দিল, ওপাশ থেকে মধ্যবয়স্ক এক লোকের কন্ঠস্বর ভেসে আসল। জিনিয়া সালাম দিতেই ওপাশের ব্যাক্তি সালামের জবাব দিল। জিজ্ঞেস করল,
‘ কে তুমি?
জিনিয়া বলল,
‘ আপনি যাকে ফোন দিয়েছেন আমি ওনার ওয়াইফ। ওনি ফোনটা ঘরে রেখে চলে গেছেন।
লোকটা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
‘ ঠিকাছে মামুনি। আমি রাখছি সাহিল ফিরলে একটা মিস দিতে বলিও।
জিনিয়া মৃদু হেসে বলল,
‘ আচ্ছা আন্কেল।
সাহিল ফিরল রাত আটটায়। সবাইকে বাড়িতে দেখে খুশি হলো। জিনিয়ার মুখে ফোন দেওয়া ভদ্রলোকের কথা শুনে ভাবান্তর দেখা গেলনা তারমধ্যে। বলল,
‘ ওনি বাবার বন্ধু। ইয়াজিদ মজুমদার। আমাকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে গিয়েছিলেন প্রথমে।
জিনিয়া বলল,
‘ ওনাকে বাড়িতে আসতে বলবেন। আপনি বিয়ে করেছেন কিন্তু ওনাকে জানাননি কেন?
সাহিল হাসল। বলল,
‘ সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছি তাই।
জিনিয়া হেসে বলল,
‘ কচু। আমি বলে দিয়েছি ওনাকে যে আমি আপনার বিয়ে করা বউ।
সাহিল হেসে ফেলল জিনিয়ার কথায়।
‘ ভালো করেছ। বউ না বলে কি বোন বলবে?
জিনিয়া মাথা দিয়ে দুম করে মারল সাহিলের বুকে।

__________

সাহিলদের বারান্দায় এসে দাঁড়াল আনহা। জায়িদের কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ আপনি কখন ফিরেছেন অফিসার?
জায়িদ কোনো উত্তর না দিয়ে চলে গেল। আনহা দাঁড়িয়ে থাকল। কিছুটা দূরে রাস্তায় চোখ গেল। একটা হেলমেট পড়া লোক বাইক নিয়ে ঘুরঘুর করছে নিচে। আনহা নিচে নেমে এল সবার চক্ষুর অগোচরে। গেইট পার হয়ে রাস্তায় বেরোতেই ছেলেটাকে ডাক দিল।
বাইকে নিয়ে ছুটে এল সিফাত। গর্জে আনহাকে বলল,
‘ কি সমস্যা তোমার? ফোন কোথায়? কল ডুকছেনা কেন?
আনহা সব খুলে বলল।
সিফাত তাকে নাম্বার দিয়ে দিল। বলল,
‘ বাকি কথা ফোনে হবে।
সিফাত চলে যেতেই দুরুদুরু বুক নিয়ে আনহা বাড়িতে ডুকল। মুখোমুখি হলো জায়িদের। জায়িদ দৌড়ে আসছিল। আনহার সাথে ধাক্কা লেগে গেল। আনহাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে দৌড় লাগাতেই সাহিল ধরে ফেলল তাকে। কি হয়েছে জায়িদ? কোথায় যাচ্ছিস তুই এভাবে ?
জায়িদ সাহিলকে সরাতে সরাতে বলল,
‘ মনে হলো আমি সীমান্তকে দেখেছি। সীমান্ত কুত্তার বাচ্চা। আজ মেরে ফেলব ধরতে পারলে। সাহিল ছাড় আমায়।
আনহা ভয়ে কুঁকড়ে গেল। সীমান্ত কে? কই সে তো কোনো ছেলেকে দেখেনি।
জায়িদ মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসল । সাহিল পানি দিল তাকে। জায়িদ বলল,
‘ বাইকে উঠে চলে যাচ্ছে সে। আমি স্পষ্ট দেখেছি। হাঁটার ধরণটা ও সীমান্তর। বাইক চালানোর ধরণ ও। সাহিল বিশ্বাস কর।
আনহা বুকে হাত দিল।
‘ সিফাতই তো ছিল। তারসাথে দেখে ফেলেনি তো? আর সীমান্ত কাকে বলছে অফিসার?

________

ডান হাতে মেহেদী ধরে বামহাতে মেহেদী আঁকছে সোরা। জাহানারা কলপাড়ে গোসল সাড়ছে। সালমা বেগমের ডাক ভেসে এল
‘ সোরা বাড়ির ফোনে কে কল দিছে মনে হয়।
সোরা মেহেদী দেওয়ায় মনোযোগী হয়ে বলল,
‘ দাদি তো কলপাড়ে আম্মা। ফোন কে ধরবে?
সালমা বেগম ফোন নিয়ে দৌড়ে এল।
‘ তোর আব্বা দিছেনি কোনো? দেখতো।
সোরা ফোন হাতে নিল ডান হাতে। ফোন ঘুরিয়ে হাতে নিয়ে দেখে বলল,
‘ আম্মা এই নাম্বার তো চিনিনা।
সালমা বেগম বললেন,
‘ ফোন তুলে দেখনা। কে ফোন দিছে?
সোরা অনেক ভেবেচিন্তে ফোন তুলল। কানে দিয়ে হ্যালো বলতেই খুব চেনা একটি কন্ঠস্বর ভেসে আসলে ও সোরা চিনতে পারল না। জিজ্ঞেস করল,
‘ কে বলছেন? কোথা থেকে বলছেন?
নাহিল বিছানার চাদর খামচে ধরে আবার ছেড়ে দিল। অনেকক্ষণ পর বলল,
‘ সোরা আমি নাহিল বলছি। চিনতে পারছ না?
সোরার হাত থেকে মেহেদী পড়ে যেতে গেল। সে শক্ত করে আঁকড়ে ধরল মেহেদী। মেহেদীর টিউব গলে সাদা কামিজে লেগে যেতে লাগল। সোরার সেদিকে হুশ নেই। সে বিড়বিড় করে জিজ্ঞেস করল,
‘ ছোটদাভাই আপনি? দাদির সাথে কথা বলবেন? না মায়ের সাথে?
‘ আমি তোমার সাথে কথা বলব বলে ফোন দিয়েছি সোরা।
সোরা জিজ্ঞেস করল,
‘ আমি? আমার সাথে? কিন্তু কেন?
নাহিল ভার ভার গলার আওয়াজ শুনে সোরার বুক কাঁপল ধড়ফড় করে। সে বলল,
‘ আপনি কি অসুস্থ?
সালমা বেগম ডাকলেন,
‘ কার সাথে কথা বলছিস সোরা? এই সোরা?
সোরা হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেল উঠানের মাঝখানে। হাতের মেহেদী ততক্ষণে লেপ্টে গেছে সাদা কামিজটাতে।
নাহিল কম্পিত কন্ঠে বলল,
‘ হ্যা। আমি অসুস্থ। আমার শরীর খারাপ সোরা। আমি ভালো নেই। সোরা তোমার জন্য লাল শাড়ি আনতে পারলাম না আমি৷ আমার হাত, পা বন্দী। আমি কি করব কিছুই বুঝতে পারছিনা। সোরা কিন্তু আমি,,,
বাকিটা শোনার আগেই জাহানারা কেড়ে নিল ফোন। সোরা ভয়ার্ত চোখে জাহানারার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ দাদি আমি,
জাহানারা নরম কন্ঠে বললেন,
‘ ঘরে যাহ। গিয়ে তাড়াতাড়ি কাপড় পাল্টা। মেহেদী লাগিয়ে ফেলেছিস।
ফোনের ওপাশে নাহিল সব শুনল। কিছু বলার আগেই জাহানারার কন্ঠস্বর শোনা গেল৷
‘ কেমন আছ ছোড মিয়া? সবাই ভালা আছে নি?
নাহিল থেমে থেমে উত্তর দিল।
‘ হ্যা সবাই ভালো আছে। সবাই।
ফোন কেটে দিল নাহিল।
সোরা ঘরে গিয়ে দরজা আটকাল। হাতের মেহেদী দুহাত দিয়ে ঘষল অনবরত। চোখের নোনাজল টুপটাপ পড়ল সেই হাতের উপর। হাতের বাহুতে চোখ ঘষতে ঘষতে আওড়াল,
‘ আমি আপনার অপেক্ষায় ছিলাম ছোটদাভাই। লাল চুড়ির সাথে লাল শাড়ি পড়ার অপেক্ষায় ছিলাম। ভুলে গিয়েছিলাম বামন হয়ে চাঁদে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করতে নেই। ভুলে গিয়েছিলাম আপনার পাশে দাঁড়ানোর যোগ্যতা আমার নেই। আপনি আমাকে ছাড়া ভালো থাকুন। খুব ভালো থাকুন। আমাকে ভুলে থাকুন৷

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here