রৌদ্রদেশে মেঘের বেশে পর্ব-৩২

0
570

#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা
[৩২]

কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি পড়া থেমেছে। হসপিটালে পৌঁছে হসপিটালের লাশ উদাও হওয়ার ঘটনা শুনে শফিক সাহেবের কোনো ভাবান্তর দেখা গেলনা। প্রায় তিনমাস পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। পুলিশ আর গোয়েন্দা কমিটি বিষয়টা নিয়ে উদ্বিগ্ন। শফিক সাহেবকে কিছু জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন
‘ গতরাত সাড়ে দশটায় তিনি হসপিটাল থেকে বাড়ি পৌঁছেন। তিনি যাওয়ার আগে ও লাশগুলো ছিল। তারপর কি হয়েছে তা তিনি বলতে পারবেন না। ডক্টর মুখার্জি, ডক্টর হোসেন হসপিটালের বাদবাকি ডক্টরগুলোকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা জানায় তারা তাদের চেম্বারেই ছিল। মৃত লাশগুলোর তত্ত্বাবধানে ছিল তিনজন সিকিউরিটি। তাদের ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া মেঝেতে। তাদেরকে ইনজেকশন পুশ করে ঘুমের মেডিসিন দেওয়া হয়েছিল।
শফিক সাহেব খেয়াল করেন জায়িদ এগিয়ে আসছে। সবাই সতর্ক হয়ে দাঁড়ালো জায়িদকে দেখে। শুধু শফিক সাহেব ছাড়া। জায়িদ এসেই বলল,
‘ আব্বা গত তিন মাসের আগের যে লাশগুলো নিখোঁজ হয়েছিল তারমধ্য একজনের লাশ পাওয়া গিয়েছিল জঙ্গলে। আর সেই ব্যাক্তির মৃত্যুর পড়েই অপারেশন হয়েছিল। কিডনি নিয়ে ফেলা হয়েছিল।
শফিক সাহেব বলেন,
‘ এখন আমি কি করতে পারি?
জায়িদ বলল,
‘ এই কিডনি পাচার দিনদিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে আব্বা। এই ঘটনা শুধু এখানেই নয় দেশের উন্নত জেলাগুলোতে এই দশা। তোমরা ডক্টররা যদি সতর্ক না হও তাহলে আমরা কি করতে পারি? উপর থেকে আমাদের উপর চাপ আসছে, কিন্তু আমরা আসলেই কিছু করতে পারছিনা। কজ হসপিটালের ডক্টর নার্সরা ও আমাদেরকে সঠিক ইনফরমেশন দিচ্ছে না। আমরা পাচ্ছিনা।
শফিক সাহেব বলল,
‘ চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
জায়িদ তেঁতো কন্ঠে বলল,
‘ কবে ঠিক হবে আব্বা?
লাশ রাখা রুমটার সিসি ক্যামরা কাজ করছেনা জেনেও তোমরা কি করে ওই রুমে লাশ রাখলে?
হসপিটাল কিছুক্ষণের মধ্যে ভারী হয় মৃত নিখোঁজ হওয়া মানুষগুলোর আত্মীয় স্বজনের আর্তনাদে।
জায়িদ ডক্টর হোসেন আর মুখার্জিকে বলল,
‘ শুধু মৃত নয়, বার কয়েক সুস্থ মানুষের শরীর থেকে ও কিডনি নিয়ে ফেলা হয়েছে, যার কারণে সামান্য জ্বর নিয়ে আসা রোগী আর বাড়ি ফিরতে পারেনি। এমন চলতে থাকলে তো হসপিটালেই কেউ চিকিৎসা নিতে আসবেনা। রোগে ধুঁকে ধুঁকে মরবে কিন্তু কেউ চিকিৎসা নেবেনা।
সবার মাঝে খেলে গেল একপ্রকার নিস্তব্ধতা। জায়িদের চোয়াল শক্ত। রাগ ঠিক কার উপর উঠছে বুঝতে পারছেনা সে।

জিনিয়াকে দেখা গেল। কোলে মুননা। লাল রঙের টিশার্ট আর থ্রি কোয়াটার কালো প্যান্ট পড়েছে সে। কপালের একপাশে সালেহা কালো টিপ লাগিয়ে দিয়েছে। ডাগর ডাগর বড় বড় চোখজোড়া দিয়ে জায়িদ আর শফিক সাহেবকে দেখে হাত তালি দিল মৃদু মৃদু। নরমসুরে ডাকল
‘ নানাভাই, মামাই?
গায়ে প্রচন্ড জ্বর তার। চোখদুটো লাল হয়ে আছে। ফর্সা গোলগাল চেহারাটা মলিন দেখতে একটু ও ভালো লাগছেনা তার মা জননীর। ছেলের নরম কন্ঠ শুনে বুক ধড়ফড় করল জিনিয়ার। তার ছেলেটা কেন অসুস্থ হতে গেল? সে হলে কি হতো? তার আদুরে বাচ্চাটাকে আল্লাহ অসুখ দিতে গেল।
জিনিয়া ছেলের গাল নিজের গালে লাগিয়ে চুমু খেয়ে বলল,
‘ হ্যা। মামা আর নানাভাই।
জায়িদ এগিয়ে এল।
‘ জুননু তুই? মামার কি হয়েছে?
শফিক সাহেব ও এগিয়ে এলেন।
জিনিয়া ছলছলে চোখে বলল,
‘ আমার ছেলেটার খুব জ্বর ভাইয়া। দেখোনা কেমন হয়ে আছে। কিছু মুখে ও দেয়নি।
জায়িদ আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
‘ সাহিল কোথায়? আসেনি?
জিনিয়া বলল,
‘ না, ওনি কিছুঘন্টা আগেই ব্যবসার কাজে বেরিয়েছেন। তারআগে ও সামান্য জ্বর ছিল মুননার। এখন দেখছি তরতর করে বেড়ে গেছে। ওনাকে জানায়নি এখনো। নাহিল ভাইয়া এসেছেন আমার সাথে, ওনি আসছেন।
জায়িদ হাত বাড়িয়ে দিল মুননার দিকে। মুননা এলোনা। জিনিয়ার কাঁধে পড়ে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলল,
‘ আম্মা না না না।
জিনিয়ার চোখজোড়া আর ছলছল করে উঠল। মুননা আম্মা ডাকেনা সহজে। সবসময় জুননু ডাকে। আজ শরীর খুব খারাপ লাগছে হয়ত। কফের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। কাশি ও আছে।
জায়িদ মাথায় হাত বুলিয়ে দিল মুননার। চুমু দিল গালে। বলল,
‘ ঠিক হয়ে যাবে মামা।
শফিক সাহেব বললেন,
‘ কিছু হবেনা মা। আয়, ওকে কেবিনে নিয়ে আয়।
নাহিল এল কিছুক্ষণ পর। মুননাকে কোলে নিতেই মুননা কেঁদে। জিনিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। জিনিয়া আবার কোলে নিয়ে নিল। বলল,
‘ থাক ভাইয়া। কারো কোলে যেতে চাইছেনা।

শফিক সাহেব গ্যাস দিলেন মুননাকে। সে কি কান্না!
জিনিয়া ও কেঁদে দিল ছেলের সাথেসাথে। শফিক সাহেব বললেন,
” শক্ত হ মা। এত নরম হলে চলেনা।

জিনিয়া চোখ মুছল। মুননাকে বলল,
‘ এই তো হয়ে যাবে আব্বা। আর কেঁদোনা।
নাহিল বলল,
‘ আইসক্রিম খাওয়ায় এই অবস্থা। আমি বারণ করেছিলাম।
জিনিয়া বলল,
‘ তাননার কি খবর?
নাহিল বলল,
‘ আনহা সামলাচ্ছে। মুননার কাছে আসার জন্য কাঁদছিল।
মুননা তাননার নাম শুনে মিনমিন করে ডাকল
‘ তুননু?
জিনিয়া বলল,
‘ আমরা এখনি তুননুর কাছে যাব আব্বা।
মুননা সাহিলকে ডাকল।
‘ আব্বা?
জিনিয়া বলল
‘ আসবে আসবে। আর কিছুক্ষণ!
জায়িদ চকলেট নিয়ে আসল। একটা ও নিলনা মুননা। জিনিয়ার কাঁধে মুখ গুঁজে গিয়ে মিনমিন করে বলল,
‘ আম্মা মুরে যাবো।
শফিক সাহেব থেমে গেলেন। জিনিয়া হু হু করে কেঁদে দিল। জায়িদ ধমকালো।
‘ তুই কি পাগল জুননু? ও ছোটমানুষ কত কিছু বলবে। আর তোকে কাঁদতে হবে?
জিনিয়া বলল,
‘ ও এসব কেন বলছে ভাইয়া?
নাহিল মুননাকে জোর করে কোলে তুলে নিল। মাথা তুলে বলল,
‘ বাবাই দেখো চাচ্চুর দিকে দেখো, এসব কথা কেন বলছ? তোমার আম্মা কাঁদছেনা?
মুননা মাথা ফেলে রাখল নাহিলের কাঁধে। মিনমিন করে বলল,
‘ আম্মা কানেনা। আল্লাহ মাববে।

সাহিল আসল তখন মধ্যরাত। আসামাত্রই জিনিয়ার সাথে দেখা হলো। হাসার চেষ্টা করল। জিনিয়া হাসল না। সাহিল জুতোর ফিঁতা খুলতে খুলতে বলল,
‘ ঘুমিয়ে পড়েছে?
জিনিয়া বলল,
‘ হ্যা।
‘ জ্বর কমেছে?
‘ সামান্য। পুরোপুরি না।
‘ চিন্তা করোনা। সব ঠিক হয়ে যাবে।
‘ খেয়ে এসেছেন?
‘ হ্যা।

সাহিল মুখ হাত ধুঁয়ে আসল। মুখ মুছে বাচ্চাদের কাছে গিয়ে গালে, কপালে আদর দিল। বাবার স্পর্শ পেয়ে পিটপিট করে তাকালো তাননা। উঠে বসল। চোখ কচলে ডাকল,
‘ মুননু ওঠোনা। আব্বা আচচে। ওঠো। মুননু?
জিনিয়া বলল,
‘ কি করছ তাননা? ভাইকে ডেকোনা। ভাই অসুস্থ।
তাননা বলল,
‘ আব্বা আচকিলিম দাও।
জিনিয়া ধমক দিল।
‘ একদম ঠাসস করে করে দেব। আইসক্রিম খেয়ে খেয়ে জ্বর লাগিয়েছে একটা। আবার আইসক্রিম বলে?
জোরে কেঁদে উঠল তাননা। সাহিল দুহাত আগলে ধরল তাকে। বুকের সাথে চেপে আদর দিতে দিতে বলে,
‘ মারব জুননুকে। এভাবে কেঁদোনা ভাইয়ের ঘুম ছুটে যাবে। জিনিয়া মুননাকে কোলে তুলে নেয়। কপালে মমতার স্পর্শ দিয়ে বলে,
‘ আপনাদের জন্য যদি আমার ছেলের ঘুম ভাঙে? অনেক্ক্ষণ পর একটু ঘুমিয়েছে।
তাননা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
‘ আল্লাহ মাববে।
সাহিল হেসে দেয়। বলে
‘ হয়েছে তো। এত কাঁদতে হয়না। ভাইয়ের শরীর খারাপ তো, তাই আম্মার মাথা খারাপ।
কোনোমতে তাননাকে ঘুম পাড়ায় সাহিল। বাবাকে শক্ত করে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে সে ।
সাহিল ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। গোল খাটটাতে শুয়ে পড়েছে জিনিয়া। মুননা তার বুকে। সাহিল ধীরপায়ে হেঁটে গেল। মুননাকে কোলে তুলে নিতেই আঁতকে উঠল জিনিয়া।
‘ কে?
সাহিল হেসে ফেলল।
‘ আমি। ভয় পেয়েছ?
জিনিয়া আলোবোলা কন্ঠে বলল,
‘ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমার ছেলেকে?
সাহিল আবার ও হাসল।
‘ তোমার ঘুম প্রয়োজন এখন। ঘুমাও। আমি আছি ওকে নিয়ে।
জিনিয়া বলল,
‘ আচ্ছা। ঘুম থেকে উঠে কাঁদলে আমাকে ডেকে দিবেন।
সাহিল বলল,
‘ ঠিক আছে।
জিনিয়া ঘুমিয়ে পড়ল। সাহিল ছেলেকে নিয়ে হাঁটল অনেক্ক্ষণ। আদর করল। তারপর শুইয়ে দিল তাননার পাশে। গায়ের উপর কাঁথা টেনে দিল। হেঁটে এগিয়ে গেল জিনিয়ার কাছে। সাহিল তাকে কোলে করে নিয়ে এসে শুইয়ে দিল ছেলেমেয়েদের পাশে।
চেয়ে রইল স্ত্রীর মুখপানে। জিনিয়া চোখ খুলে আবার বন্ধ করে ফিরল। সাহিলের বুকে ঠাঁই খুঁজে নিল। হেসে উঠল।
‘ জেগে ছিলে?
জিনিয়া গুঁজে যেতে যেতে বলল,
‘ হ্যা, কোলে চড়লাম।
সাহিল আবারও হাসল। জিনিয়া বলল,
‘ আপনার কাজগুলো কবে শেষ হবে? ইদানীং বেশি ব্যস্ত আপনি। আপনি বাড়িতে থাকলে ভালো লাগে আমার।
সাহিল জিনিয়ার চুলে হাত গলিয়ে দিল। বলল,
‘ শেষের দিকে। ঘুমাও এবার। আর কোনো কথা না।
জিনিয়া আর ও শক্ত করে ধরল সাহিলকে। বলল,
‘ এভাবে ধরে রাখুন। আমি ঘুমায়। যাবেন না।
সাহিল বলল,
‘ ছাড়ো মেয়ে। বাচ্চামো করবেনা।
রাগ করে মুখ ফুলিয়ে ছোট্ট অভিমান নিয়ে তাকালো জিনিয়া। হেসে ফেলল সাহিল। আর ও মুখ ফুলালো জিনিয়া। রাগ হলো। অভিমান হলো।
পরক্ষনেই সেই অভিমান আবার গলতে লাগল স্বামীর মিষ্টি সোহাগে।

________

বিয়ের কথা তুললে কাঁদতে থাকে আনহা। সালেহা বেগম সান্ত্বনা দেয়। সাগর সাহেব বলেন,
‘ এভাবে কাঁদলে কি সব সমাধান হবে? তুই এভাবে থেমে থাকতে পারিস না। একটা জানোয়ারের জন্য কেন নিজেকে এভাবে ফেলে রাখবি?
আনহা আর ও জোরে কাঁদল। সোরা মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বলল,
‘ আপা বড়দাভাই শুনলে রাগারাগি করবে।
আনহার কান্না থামেনা। সে বিয়ে করবেনা কিছুতেই। আর কারো সাথে জড়াবেনা সে। আনহা কখনোই ভালো কিছু ডিজার্ভ করেনা।
সাহিল আসতেই কান্না থেমে যায় আনহার। চোখমুখ মুছে ফেলে সে। সাহিল আনহার গায়ে সেলোয়ার কামিজ দেখে স্বস্তি পেল। সালেহাকে বলল,
‘ মা আজ বিকেলে ওকে দেখতে আসবে। রেডি করে রাখিও।
আনহা ফোঁপাতে থাকল। সাহিল বলল,
‘ কি হয়েছে?
আনহা চোখ মুছল আবার। বলল,
‘ আমি বিয়ে করব না ভাইয়া।
সাহিল চুপচাপ ঘরে চলে এল। জিনিয়া খেলছে তাননা মুননার সাথে। সাথে খাওয়াচ্ছে ও। মুননাকে হাসানোর চেষ্টা করছে। সাহিল তার ব্যক্তিগত ব্যাগটা থেকে বের করল একটি ছবি। চুপিসারে নিয়ে গেল আনহার কাছে। দিল আনহাকে। কৌতূহল নিয়ে চাইল আনহা। সিফাতের রক্তমাখা ছবিটা। যেটা সাহিল তাকে কুপানোর আগে তুলেছিল। তখন মৃত সিফাত।
আনহা হা করে তাকিয়ে থাকল ছবিটার দিকে। সালেহা চেয়ে ও রইল।
আনহা চোখ তুলে তাকায় সাহিলের দিকে। সাহিল ছবিটা নিয়ে ফেলে। চলে যায়। বলে যায়,
‘ আজ বিকেলে রেডি থাকবি। আর সিফাতের মৃত্যুর খবর কেউ না জানে মতো।
আনহা গাল বেয়ে শুধু সাদা জলের নহর গড়ালো। সিফাত মৃত? মরে গিয়েছে? কে মেরেছে? নিজের মাথার চুল নিজে টেনে ধরল আনহা। কি হচ্ছে এসব তার সাথে? সিফাতের মৃত্যু সে কেন মেনে নিতে পারছেনা। কেন এত কষ্ট হচ্ছে? সিফাতের খুনী কে? ভাই?

________

বিকেলে আনহাকে দেখতে এলনা কেউ। বারণ করে দিয়েছে সাহিল। শফিক সাহেবের কথায়। তিনি আনহাকে জায়িদের বউ করে নিয়ে যেতে চান। সবাই মনে মনে বেশ খুশি হলেও এই খবর শুনে আধমরা হলো জাহেদা। জীবনে ও সে ওই মেয়েকে ছেলের বউ করবেনা। জায়িদ তখন জেলার বাইরে ছিল। এই খবর তার কানে পৌছালো বাসার ফেরার পরপর। কোনো ভাবান্তর দেখা গেলনা তারমধ্যে।
জাহেদা কপাল চাপড়ালো শুধু। জিনিয়া মাকে গিয়ে দেখে আসল। জাহেদা কিছুতেই রাজী হওয়ার পাত্রী নয়। যার স্বামী আছে তাকে কি করে ছেলের বউ করবে? আর ওই মেয়ে তো নষ্টা। তার ছেলের কি ঠেকা পড়েছে।
অন্যবার সোজাসাপটা না বলে দিলে ও জায়িদ এবার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলল। তবে তার না বলার ধরণ দেখে সবাই সবটা বুঝে নিল।
সালেহা বেগম ভারভার গলায় কথা বলল জিনিয়ার সাথে। জিনিয়ার মন খারাপ হলো।

জায়িদের কথা শোনার পরপরই আনহা হাসল আওয়াজ করে। তারমতো বিবাহিত ধর্ষিতাকে বিয়ে করবে পুলিশ অফিসার? এমন ও কি হয় কখনো? সে করুণা চায়না। চায়না। একা জীবন কাটানো যায়। কিন্তু সাহিল নাছোড়বান্দা। আনহাকে সে বিয়ে দেবেই। জাহেদার কান্ডকারখানা দেখে রাগ উঠল সাহিলের। বলল
‘ দরকার নেই ওই বাড়িতে বিয়ে দেওয়ার। সেখানে ভালো থাকবেনা আনহা।
কিন্ত শফিক সাহেব নাছোড়বান্দা। তিনি আনহাকেই জায়িদের বউ করবেন। তিনি জাহেদার দুর্বল জায়গায় আঘাত করে বলেন,
‘ সেদিন সমাজের মুখ থেকে বাঁচতে সাহিলের সাথে জিনির বিয়ে দিয়েছি আমরা। সাগর পাশে দাঁড়িয়েছিল আমার। সেদিন যেমন জিনির কোনো দোষ ছিল না আজ ও আনহার কোনো দোষ নেই। তার সাথে অন্যায় হয়েছে। অন্যায় করেছে সিফাত। ওকে আগের মতো ভালোবেসে দেখো জাহেদা। তুমি তো নিজেই ওকে ছেলের বউ করতে চেয়েছিলে?
প্রতিদানের কথা মাথায় আসল জাহেদা। তবে তিনি আনহাকে কখনোই মানতে পারবেন না মন থেকে। মেয়েটা তার ছেলেকে মারতে চেয়েছিল। তার বাচ্চাটাকে।
সে মেয়েকে কি করে ছেলের বউ বানাবেন?
যদি আবারও কোনো ক্ষতি করে?
জায়িদকে সরাসরি জিজ্ঞেস করল সে আনহাকে বিয়ে করতে রাজী কিনা?
সে পড়ল মহাযন্ত্রণায়। আশ্চর্য এতবার জিজ্ঞেস করতে হয়? ছলেবলে কৌশলে এত সম্মতি জানালো তারপরও কেউ কিছুই বুঝল না। চলে গেল জায়িদ। হাসিতে ফেটে পড়ল শফিক সাহেব। বলল,
তুমি মজনুরে আমি ভালা কইরা চিনি। অতঃপর বিয়ের ফুল ফুটল তবে। আলহামদুলিল্লাহ।

জায়িদের সাথে কথা বলার জন্য সুযোগ খুঁজল আনহা। আশ্চর্যজনকভাবে একবার দেখা মিলেনি জায়িদের। আনহা কি করবে বুঝে পেলনা। অফিসার কি লজ্জা টজ্জায় পড়ে গিয়েছে নাকি? আশ্চর্য! এত শরমটরম পেলে বিয়ে করতে কে বলেছে?

____

প্রায় পনের দিনের মাথায় আনহা আর জায়িদের বিয়ে সম্পন্ন হলো। বিস্ময়কর হলেও আনহা শুধু কবুল বলার সময় একনজর দেখেছিল জায়িদকে। তারপর আর দেখেনি। এটা নাকি বিয়ে? বিয়ে? বিয়ে? চারপাশে রঙিন। শুধু সোরাটা? সাদা শাড়ি কেন তার গায়ে?
আনহার বিয়ের দিনই সাহিল সবাইকে জানালো।
‘ রাহার সব দায়িত্ব নেবে নাহিল।
সোরা হা করে তাকিয়ে থাকে সাহিলের দিকে। হাসিহাসি মুখটা নিভু নিভু হয় সোরার। আনহার মতো সেও একদিন বউ সেজেছিল। রাতুলের বউ। লাল টকটকে বেনারসি পড়েছিল। রাতুল সবার সামনেই বলে ফেলেছিল রাজার বউকে রাণী হতেই হতো। সবাই সেদিন লুকিয়ে হেসেছিল। কি লজ্জা সোরার! এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে রাতুল তাকে লজ্জায় ফেলে দিত শুধু।
সোরা দুই তিন পা পিছু হেঁটে হেঁটে না না করল। তার মেয়ের দায়িত্ব শুধুই সে নেবে। আর কেউ নয়। পিছু হাঁটতে হাঁটতে সে থমকে যায়। পিছু ফিরে দেখে নাহিলকে। মলিন মুখ। বিষাদের গাঢ় ছাপ নাহিলের উজ্জ্বল মুখমন্ডলে। কোলে রাহা। আওয়াজ করে হাসছে নাহিলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে। নাহিল চাইল সোরার দিকে। সোরা কেড়ে নিল মেয়েকে। বলল
‘ ওইদিন ও কোথায় গিয়েছিলেন। আজ আবার কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ও আমার মেয়ে। ওকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না ছোটদাভাই।
নাহিল নরম গলায় বলল,
‘ আমি ওকে তোমার কাছেই নিয়ে আসছিলাম সোরা। ঘুম থেকে উঠে কান্না করছিল।

চলবে
টাইপিং মিসটেক থাকতে পারে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here