রৌদ্রদেশে মেঘের বেশে পর্ব-৩৩

0
566

#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা
[৩৩]

বিয়ে বাড়ির আমেজ কাটতে না কাটতে জাহেদার চেঁচামেচি ভেসে আছে। তখন ও বাড়িভর্তি মানুষ। জিনিয়ার মামাতো বোনেরা জায়িদকে ঘরে ডুকতে দেয়না টাকার জন্য। টাকা দিলে ডুকতে দেবে। জায়িদকে সবাই বরাবরের মতো ভয় পায় কিন্তু আজকের জন্য সবাই ভয়টয়কে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু জাহেদার জন্য শেষরক্ষা হলোনা। জায়িদকে টেনে নিয়ে গেলেন তিনি। ওই মেয়ের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। শুধু প্রতিদানের খাতিরে ওই মেয়েকে বউ করে আনল। তার ছেলের কাছে ওই মেয়ে আর কিছু পাবেনা।
জায়িদ হতভম্ব মায়ের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহারে। মাকে শান্ত করালো সে। বলল,
‘ ঠিক আছে আম্মা। আমি যাবনা। তুমি প্লিজ এই বাড়িভর্তি মানুষের সামনে এমন করোনা। লোকে কি ভাববে?
জাহেদা শান্ত হলেন। বললেন
‘ তুই কথা দে, তুই ওই মেয়ের কাছে যাবিনা। আড়ষ্টতায় ঘিরে ধরল জায়িদকে।
‘ ঠিক আছে আম্মা যাবনা। দোহাই লাগে আর চেঁচাবে না, কাঁদবেনা। বিয়ের আগেই এসব করলে হতো আম্মা। বিয়েটা আমি করতাম না, আব্বার কথায় আমি রাজি হয়েছি। তুমি ও তো মত দিয়েছিলে। তাহলে?
জাহেদা কিছু বলল না। চলে গেল।
জিনিয়া এসেই জায়িদকে দেখল। জাহেদাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল
‘ আম্মা ভাইয়া তোমার ঘরে কেন?
জাহেদা কিছু বললেন না। জিনিয়ার চিন্তা বাড়ল। আম্মা কি কোনো ঝামেলা করেছে আবার?
সাহিল ফোন দিয়ে জেনে ও নিল সব ঠিকঠাক আছে কিনা। জিনিয়া হ্যা বলল। কি হয়েছে তা জানতে পারলনা জিনিয়া।

থানা থেকে ফোন আসল জায়িদের। ইমার্জেন্সি কাজ পড়েছে, জায়িদ বলল,
‘ সমস্যা নেই, আমি ফ্রি আছি। এক্ষুণি আসছি।
নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াতেই জাহেদা হাজির।
‘ কোথায় যাচ্ছিস?
‘ আমাকে থানায় যেতে হবে আম্মা। ড্রেস পড়ব।
জাহেদা আর আটকালেন না। দরজা ঠেলে রুমে ডুকতেই রুমের বেহাল অবস্থা। আনহা কি করল এসব? লটকানো ফুলগুলো টেনে দরজার দিকে ছুড়ে মারল আনহা। জায়িদ এসেছে সে দেখতে পায়নি। জায়িদের মুখে এসে পড়ল সব। আনহা জায়িদকে দেখে থেমে গেল। থমথমে মুখ নিয়ে বসে থাকল পিছু করে। জায়িদ ওয়্যারড্রব থেকে নিজের ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে পড়ল। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসে ঘড়ি পড়তে পড়তে আনহাকে বলল,
‘ দরজা বন্ধ করে দিও।
আনহা চেঁচালো ঠিক সেইসময়।
‘ আদেশ করছেন আমাকে?
‘ আদেশ কেন করব? মনে করো আবেদন করছি।
মুখ ফিরিয়ে নিল আনহা। বিছানার চাদর তুলে জায়িদের দিকে ছুঁড়ে মেরে বলল,
‘ আপনাকে বিয়ে করার জন্য কি আমি বসেছিলাম? তাহলে? আমাকে বিয়ে করে এনে এভাবে অপমান করার মানেটা কি? আমি কি আপনার জন্য মরে যাচ্ছিলাম? নাকি আপনার প্রেমে পড়ে আমি হাবুডুবু খাচ্ছিলাম? নাকি আপনার জন্য আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি? কোনটা? আপনাকে ঘেন্না হচ্ছে এখন আমার। আমার মতো মেয়েকে বিয়ে করে দয়া দেখিয়েছেন? দয়া?
জায়িদ শান্ত স্বরে বলল,
‘ তোমাকে দয়া দেখানোর আমি কে? চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।
আনহা বলল,
‘ ঘুমাবো না। আমি যাব আমাদের বাড়িতে।
জায়িদ বলল,
‘ ফালতু কথা বলবেনা একদম।
বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করল জায়িদ। বলল,
‘ দরজা ধাক্কাবেনা একদম। মানুষ হাসাবেনা।
আনহার দরজার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে থাকল। তার সাথে কি হচ্ছে এসব? সে চায়নি এমনটা। চায়নি। ভাইয়া করেছে সবটা। দোষী ভাইয়া।

___________

সাহিলের সিদ্ধান্তে নারাজ সোরা। তার মেয়ের দায়িত্ব শুধুই তার। ছোটদাভাইকে নিতে হবেনা। ছোটদাভাইয়ের সাথে সে নিজেকে কখনোই জড়াবেনা। কখনোই না। সোরা রাহার মা হবে, বাবা ও হবে। দরকার নেই নাহিলকে। সাহিল ক্ষুব্ধ সোরার সিদ্ধান্তে। তার ভাইটা ঠকে আসছে শুরু থেকে। সোরা ঠকিয়েছে নাহিলকে। নাতাশার কিছু বলার নেই। নাহিলের কোনোকিছুর ব্যাপারে তিনি আর নাক গলাবেননা। নাহিল বারণ করেছে। যা ইচ্ছা করুক। পারলে বিধবাকে বিয়ে ও করুক, তার কি?
নাহিল সাহিলকে বারণ করল। সোরা থাকুক তার মতো। সে ও তার মতোই থাকবে। সোরা যা ইচ্ছে তাই করুক।
কিছুদিন পরপর মেয়ের ঠান্ডা, জ্বর কাশি লেগে যাওয়ার জন্য গ্রামের বাড়ি ফিরতে পারলনা সোরা। গ্রামে উন্নত চিকিৎসা নেই। হাত পা বাঁধা সোরার। সে যেতে পারছেনা এখান থেকে। নাহিলের সামনে পড়তে পারেনা সে। ছোটদাভাই নিজেকে সুযোগ দিচ্ছেনা তার জন্য।

_________

বিয়ের দুইতিনদিন পার হলো আনহা আর জায়িদের। জাহেদা আনহাকে দুচোখে সহ্য করতে পারেনা। চক্ষুশূল। আনহা জাহেদার কথা শুনে আড়ালে কাঁদে। শফিক সাহেব তাকে সব ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। বলে,
‘ তোর শ্বাশুড়ি না? শ্বাশুড়িরা একটু অমন জল্লাদ হয়। বুঝলি? সব ঠিক হয়ে যাবে।
আনহা বলল,
‘ ঠিক হয়ে যাবে। এ কথাটাই মেয়েদের জন্য একমাত্র সান্ত্বনা। তোমার ছেলের জন্য আর ও ভালো মেয়ে পেতে। আমাকে কেন চুজ করতে গেলে?
জাহেদা তেড়ে এলেন।
‘ এই আমার বাড়িতে উঁচু গলায় কেউ কথা বলেনা।
আনহা চুপ মেরে গেল। জায়িদ এল অনেক্ক্ষণ পর। আনহাকে খাবার বেড়ে দিতে দেখা গেল শফিক সাহেবকে। জায়িদ গিয়ে চেয়ার টেনে বসল। আনহা চলে গেল। যেন জায়িদকে দেখেও দেখল না। আশ্চর্য!
শফিক সাহেব বললেন,
‘ রিনা খান তো কতকিছু করবে। তোমরা কিজন্য এত রাগারাগি করো বুঝিনা।
জায়িদ বলল,
‘ তুমি আম্মাকে রিনা খান বললে আব্বা?
শফিক সাহেব হাসলেন। বললেন,
‘ আস্তে বল। শুনলে কেলেংকারী।
আনহা রান্নাঘরে গেল। তরকারির বাটি হাতে নিতেই চেঁচালো জাহেদা৷
‘ এই এসব ধরবিনা। একদম ছুঁবিনা।
বলেই জাহেদা বাটি কেড়ে নিয়ে টেবিলের দিকে এগোলো। আনহার তার পিছুপিছু এলো। জাহেদা টেবিলে বাটি রাখতে রাখতে বলল
‘ আবার বিষ মিশিয়ে মারবেনা কে বলতে পারে? হয়ত এবার সবাইকে মারার প্ল্যান?
জায়িদ আনহার দিকে তাকালো। শফিক সাহেব ও। চোখে জল টলমল করছে আনহার। মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। জাহেদা বলল,
‘ গিলতে ইচ্ছে করলে গিলে নিতে বলো। জোর টোর করতে পারবনা। অত ন্যাকামি করার সময় নেই আমার।
শফিক সাহেব আনহাকে ডাকল।
‘ আনু বসে পড়। খেয়ে নে। মুখটা শুকিয়ে আছে। আয়।
আনহা গেলনা। নিজের রুমে চলে গেল।
জাহেদা চেতে উঠল। তেঁতো গলায় বলল
‘ দেখেছ? দেখেছ তার তেজ কত? সে কি এটা বাপের বাড়ি পেয়েছে? হ্যা?
শফিক সাহেব বলল
‘ তোমার মেয়ে ও তো বিয়ে দিয়েছ। কেউ যদি তার সাথে এরকম করত?
‘ আমার মেয়ে অন্তত কাউকে মারার কথা ভাবতেও পারেনা।
জায়িদ খাওয়া থামিয়ে বলল
‘ আম্মা কানের উপর এসব আর বলিওনা তো। ভালো লাগেনা সারাদিন। বাড়ি ফিরে ও শান্তি নেই।
জাহেদা চুপ মেরে গেল। জায়িদ বলল
‘ ওর খাবার ও বেড়ে খেয়ে নিবে। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। যাও।
জাহেদা বলল
‘ তো? আমি কি তার জন্য বসে থাকব নাকি? অত ঢং করার সময় নেই। খেলে খাবে না খেলে নাই। আমার অত দরদ কিসের?
জাহেদা সব গোছগাছ করে নিল। প্লেটে করে ভাত তরকারি নিয়ে দিয়ে জায়িদের হাতে দিল। বলল
‘ ধর। টেবিলে ফেলে রাখবি, খেলে খাবে। না খেলে নাই।
জায়িদ মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকল। এ কেমন মা তার?
মাথার নিচে আর মাথার উপরে বালিশ চাপা দিয়ে শুয়ে থাকল আনহা। যাতে তার চেহারা দেখা না যায়। জায়িদ রুমে ডুকে টেবিলে প্লেট রাখতে রাখতে জবাব দিল
‘ খাবার এনেছি, খেয়ে নাও তাড়াতাড়ি।
আনহার কোনো নড়াচড়া নেই। জায়িদ শক্ত কন্ঠে ডাকল
‘ আনহা?
আনহা বলল
‘ খাবনা। আপনি খান।
জায়িদ বলল
‘ আমি খেয়েছি। উঠো। নইলে আমি টেনে তুলবো।
আনহা উঠে বসল। চেঁচিয়ে বলল
‘ জোর করবেন?
জায়িদ মাথা দুলিয়ে বলল
‘ হ্যা।
আনহা চোখদুটো ঘন লাল। দাঁতে দাঁত চেপে সে বলল
‘ দেখান সাহস থাকলে।
জায়িদ নরম পায়ে হেঁটে গেল। শক্ত করে আনহার হাত ধরে টেনে নামল। আনহা বলল
‘ আল্লাহ হাতটা এখন ছিঁড়ে যাবে।
জায়িদ বলল
‘ ছেঁড়ার জন্যই ধরেছি। নামো।
টেনে নামানোর কারণে আনহা হাতে ব্যাথা পেল। তখুনি দরজা ঠেলে ডুকে আসল তাননা মুননা। জায়িদ তারমানে এদের আওয়াজ শুনছিল।
দুজনই কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আনহাকে আর জায়িদকে দেখল। মুননা ঠোঁট টেনে বলল
‘ নানাভাই আননাকে মিমি ডাকতে বুলে কিনো?
জায়িদ হেসে ফেলল। বলল
‘ মিমি না বুদ্ধু মামি হবে।
আনহা তাননা মুননাকে নিয়ে এসে বলল
‘ ওদের ছুঁবেন না। আমার ভাইপো ভাইঝি।
জায়িদ বলল
‘ তো? ওরা কি আমার কেউ না? ওরা ভাগিনী ভাগিনা।
তাননা মুননা হামাগুড়ি দিয়ে খাটে উপর উঠে বসে। বলে
‘ আমলা ভেইবুন। তুননু আল মুননু। তুমলা ঝগলা কলো কিনো?
জায়িদ বলল
‘ তোমারা কার সাথে এসেছ মামা?
তাননা বলল
‘ চাচ্চুল সাথে। চাচ্চু আনি দিছে। কান্না কচচি তাই।
আনহা বলল
‘ কান্না কচচেন কেন? আপনারা কি এখানে একা একা আসতে পারেন না?
মুননা বলল
‘ আচতে পারি। জুননু আচতে মানা করে। বুকা দেই। জুননু পুঁচা।
জায়িদ বলল
‘ আমি জুননুকে বলে দেব।
মুননা ঠোঁট ফুলায়।
‘ তুমাকে গুলি কলে মেলে ফেলব।
জায়িদ বলল
‘ উফ ভয় পেয়েছি আপনাকে।
তাননা হেসে উঠে।
জায়িদ আনহাকে বলল
‘ চুপচাপ খেয়ে নাও। আমি তাননার মুননার সাথে আছি।
আনহা তাননার মুননার কাছে গেল। বলল
‘ আম্মা আব্বাকে ফিপি খাইয়ে দেই?
মুননা মাথা নাড়িয়ে বলল
‘ আমলা খাছি। ঝান ঝান ভাতু খাছি। জুননু খাবাই দিছে।
আনহা বলল,
‘ কি দিয়ে খেয়েছ?
তাননা বলল
‘ দিম দিয়ে মেখেমেখে খাছি।
মুননা ঠাস করে মারল তাননাকে। বলল
‘ মিছি বুলো কিনো? আমলা ভাতু খাছি দিম আল ঝুল দিয়ে, ঝান ঝান কলে খাছি। জুননু ভাতু দিয়ে ফুতবল বানায় দিছে। আমলা ফুতবল খাছি। তাপোর, না খিলে জুননু মাববে বলছে।
আনহা আর জায়িদ একসাথে হেসে উঠল। আবার দুজনের দিকে দুজনে তাকিয়ে হাসি থামিয়ে দিল। জায়িদ বলল
‘ তুমি খাবে কি খাবেনা?
আনহা বলল
‘ খাব না। কি করবেন?
জায়িদ হেসে উঠল আওয়াজ করে। হাসতে হাসতে বলল
‘ কি করব? তোমাকে আবার কিছু করা যায় নাকি?
আনহা সরু চোখে তাকালো। নিচু গলায় বলল
‘ বেয়াদব লোক।
মুননা বলে উঠল
‘ তুমলা পুঁচা কিনো? ঝগলা কলো আমাদেল মুতো?
জায়িদ বলল
‘ এই মেয়েটা পুঁচা। একে মাইর দিতে হবে, প্রচুর মাইর।
বলেই হাসল জায়িদ। অগ্নিমূর্তি রূপে চেয়ে রইল আনহা। জায়িদ তাননা মুননার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। বলল
‘ আজ কি এখানে থেকে যাবেন নাকি তুননু মুননু?
মুননা বলল
‘ আমলা চলি যাবো। জুননুল ঘুম আচেনা আমাদেল আদোল না কললে। গুড্ডুল ও ঘুম আচেনা।
আনহা হাসল মুননার কথায়। বলল
‘ আব্বা এদিকে আসেন। ফিপির হাতে খাবেন। আসেন। তাননা আম্মা আসো তো।
মুননা বলল
‘ ফিপি না মিমি ডাববো।
আনহা বলল
‘ না শুধু ফিপি ডাকবে।
মুননা বলল
‘ তুমাকে মাববো ফিপি। তুমি পুঁচা।
আনহা দুজনকে খাইয়ে দিল নিজে খেয়ে নিল। তাননা মুননা একলোকমা গালে দিয়ে চুপটি করে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর দুজনই জায়িদের গায়ের উপর গাল থেকে ফেলে দিল ভাতগুলো। জায়িদ চেঁচিয়ে উঠল
আনহার উপর চড়া হলো।
‘ পাগল তুমি? ইয়ার্কির একটা লিমিট থাকে।
আনহা টলমলে চোখে তাকায়। সে কি করেছে?
তাননা মুননা ভয়ে চুপসে যায়। তাননা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে
‘ মুননু আমলা চলি যাই। চলো। মামা লাগ কচচে মিমির সাথি। আমাদেল সাথি ও লাগ কববে।
আনহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। জায়িদ ওয়াশরুমে চলে যায়। তাননা মুননা দৌড়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে। আনহা তবু ও দাঁড়িয়ে থাকল। জায়িদ এল চেন্জ করে। বলল
‘ ওরা খেয়ে এসেছে তারপরেও তুমি ওদের খাইয়ে দিয়েছ কেন? এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন? আশ্চর্য!
আনহা ফুলেফেঁপে দাঁড়িয়ে থাকল। তার সাথে কুত্তার মতো ব্যবহার করে এরা মা ছেলে। কেন করে? তাকে বিয়ে করে উদ্ধার করে ফেলেছে বলে। চোখের গরম জল টুপটাপ পড়ল পায়ের আঙুলের কাছে। আঙুল নাড়াতে নাড়াতে নাক টানল আনহা। এখন চাইলেও মায়ের কাছে যেতে পারবে না, এই লোকটার সাথে একদম থাকতে ইচ্ছে করেনা। তার মায়ের কত ঢং! বাসর রাতে ছেলেকে সরিয়ে রাখল, এখন কোথায় গেল? সেদিন ওসব না করলে হতোনা? আনহা বসে ছিল তার ছেলের সাথে বাসর করতে। যত্তসব!

জায়িদ চোখের উপর হাত দিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল। বলল
‘ দাঁড়িয়ে না থেকে লাইট বন্ধ করো। লাইটের আলোয় আমার ঘুম আসেনা।
আনহা লাইট বন্ধ করল নরম পায়ে হেঁটে। তারপর দরজা ঠেলে চলে গেল ছাদে। সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি হওয়ায় পরিবেশ শীতল। ব্যাঙের ডাক ভেসে আসছে সাথে ঝিঁঝি পোকার। রাত ও অনেক হয়েছে।
আনহা গিয়ে দাঁড়ালো ছাদের এককোণে। নরম বাতাস এসে ছুঁয়ে দিল মুখ। সাথে শুষে নিতে লাগল ভেজা গাল।
সেই শুকিয়ে আসা গাল আবার ও ভিজে যেতে লাগল আনহার। নিজেকে আয়নায় দেখলে ঘৃণা হয় তার। নিজেকে সস্তা, নর্দমার কীট মনে হয়। এমন একটা বাড়িতে আবার বউ হয়ে এসেছে এটা তার সাতকপাল। কিন্তু সে স্বস্তি পাচ্ছেনা। স্বস্তি আসেনা। নিজেকে নোংরা মনে হয়। সিফাতের কথা মনে পড়তেই ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসে আনহার। সে কিছু ভাবতে পারেনা আর। নতুন করে আবার কি করে সব শুরু করা সম্ভব? জায়িদের সাথে সে কি কোনোভাবে অন্যায় করে ফেলল। ঢুলঢুল করতে করতে জায়িদ এসে পড়ে ছাদে। হাঁক ছাড়ে
‘আনহা ঘরে আসো। রাত বাড়ছে, আম্মা দেখলে চেঁচাবে। আনহার খেয়াল নেই।
জায়িদ আবারও ডাকল
‘ আনহা?
ফিরল না আনহা।
জায়িদ গিয়ে তার হাত শক্ত করে টেনে ধরে বলল
‘ চলো।
আনহা হাত ছাড়িয়ে নিল।
‘ যাবনা। জোর করবেন না।
জায়িদ বলল
‘ একশবার করব। আম্মা তোমাকে এখানে দেখলে চেঁচাবে।
আনহা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
‘ আপনার মা চেঁচায়না কখন?
জায়িদ বলল
‘ আম্মা তোমার খারাপ চায়না। তুমি চেয়েছ।
আনহা চেঁচালো ঠিক তখন।
‘ আমি খারাপ, আমি নোংরা। আমি ত্যাড়া, আমিই নষ্টা। আমিই সব। জানি আমি। আপনারা ও জানেন। তাহলে জেনেশুনে ও বিয়ে করলেন কেন?
কেন করলেন?
জায়িদ বলল
‘ জানিনা।
বলেই চলে গেল জায়িদ। আনহা ফুঁপিয়ে উঠল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here