রৌদ্রদেশে মেঘের বেশে’ পর্ব-৪৮শেষ পর্ব

0
2782

#ধ্রুবতারা
#বোনাস_পর্ব_১ ( রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে )
#পুষ্পিতা_প্রিমা

[ বোনাস পর্ব তবে গল্পের নতুন নাম দিয়েছি, যারা রৌদ্রদেশে পড়েনি ও তারা পড়তে পারবে ]

গায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা শার্ট গায়ে ছেলেটির হাতে বড় কফির মগ। লম্বা হয়ে চুলগুলো বাতাসের দাপটে উড়ছে এলোমেলো হয়ে। ওই বাড়ির ছাদে থাকা দুটো মেয়ে দুটো ছেলে বড়ই গাছ থেকে বড়ই পাড়তে ব্যস্ত। তিনজনকেই আঁড়চোখে দেখল মুননা। কফির মগে চুমুক দিতেই খেয়াল হলো ওই বাড়ির ছাদের দরজা ঠেলে আসলেন এক বৃদ্ধা। মুননাকে দেখার সাথে সাথে ডাকলেন জাহেদা।
‘ ভাই, পায়েস রেঁধেছি। খেয়ে যাহ ভাই। কতকষ্ট করে রেঁধেছি নিজ হাতে। আয় না ভাই। আয়।
মুননা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। কফির মগে চুমুক দিয়ে নানুকে বলল
‘ নানু কফি খাচ্ছি।
জাহেদা বলল
‘ তো কি হয়েছে ভাই। এমন করিস কেন? আমি নিজ হাতে বানিয়েছি।
বড়ই পাড়া তাননা হাতের বড় সাইজের বাঁশটা দেখিয়ে ডাকল মুননাকে।
‘ মুননা নানুকে এত কথা বলাস কেন? নানু অসুস্থ না?
মুননা পিছু করে দাঁড়ালো। জাহেদা ডাকল আবার।
‘ ও ভাই আয় না । মিষ্টি খেতে পছন্দ করিস তাই বানালাম। আয়।
মুননা দাঁড়িয়ে থাকলো। ফিরল না। জাহেদা বলল
‘ এই বাড়িটা তোর মায়ের। মনে রাখিস। তোর এখানে আসতে সমস্যা কিসের?
মুননা ফিরল। বলল
‘ যাচ্ছি, কথা টানা মহিলাগুলোকে ভীষণ বিরক্ত লাগে আমার।
জাহেদা হেসে ফেলল। কথা না টানলে কি তুই কথা শুনিস?
তাননা বড়ই পাড়তে পাড়তে বলল
‘ ভাই নিচে কতগুলো পড়েছে, আসার সময় নিয়ে আসিস।
থেমে গেল মুননা।
‘ পারবনা বড়ই কুড়াতে।
মুখ মোঁচড়ালো তাননা। আনহা এল হাত মুছতে মুছতে। তাননার পাশে দাঁড়ানো ছেলে মেয়ে দুজন লুকোতে চেষ্টা করল তাননার পেছনে। দাঁত দেখিয়ে হাসলো রিহান। বলল
” ফুপী জুনিত আজ স্কুলে যাবেনা বলছে।
নোহা হেসে বলল
‘ আম্মা এই ফাঁকি বাজ দুটোকে মুননা ভাইয়ার হাতে তুলে দিতে হবে।
কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালো আনহা। রিহানকে বলল,
‘ তুমি ও কি যাবেনা? ভাইডি কোথায়?
মন খারাপ হয়ে গেল রিহানের।
‘ রাহা আপুকে কলেজ থেকে আনতে গিয়েছে।
আনহা বলল
‘ সব একজোট হয়েছ বুঝতে পারছি।
তাননা বলল
‘ উফ মাম্মি আজ সবাই বড়ই চাটনি খাব। স্কুল কলেজ অফ।
নোহা বলল
‘ ঠিক বলেছ আপু। আম্মা দেখো তাননা আপুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, আপুকে কি আর পাব?
আনহা বলল
‘ আচ্ছা। আপনারা ও এদের দলে?
মুননাকে কি বলব?
সবাই একসাথে না না করে উঠল। হাসল আনহা। আজ পুলিশ অফিসার আসুক। ভাইডি আসুক।
সবাই চুপসে গেল। আনহা বলল
‘ ভয় পেয়ে গেলে নাকি?
তাননা বড়ই কুড়াতে কুড়াতে সবাইকে বলল
‘ আমি আছি চিন্তা নেই গাইস।
সবাই হেসে উঠল।
‘ জিও আপু।
শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে আহম্মেদ বাড়ির ছাদে এল সোরা। সবাইকে একসাথে দেখে বলল
‘ কি ব্যাপার সবার? এখানে কি পিকনিক চলছে?
রিহান লুকোলো নোহার পেছনে। সোরা বলল
‘ আপনি লুকিয়েছেন কেন? আমি কি দেখিনি?
আনহা বলল
‘ সোরা,
ভাইডি আসলে বলে দিস, এরা চরম ফাঁকিবাজ হয়ে গেছে।
সোরা বলল
‘ ওনাকে বলতে হবেনা। মুননা কোথায়? ওর হাতের মাইর খেয়েছে অনেক দেরী হয়েছে। তাই সবাই এরকম করছে।
তাননা বলল
‘ আহা তোমরা শুধু এদের নিয়ে পড়ে থাকো কেন? আমি ডেকেছি ওদের।
সোরা বলল
‘ ঠিক, তোমাকে ও মাইর খাওয়াতে হবে মুননাকে দিয়ে। দাঁড়াও।
হাসলো তাননা।
‘ উফ মামুণি মুননার ভয় দেখিওনা তো। আমি কি ওকে ভয় পাই?
সোরা হাসল। বলল
‘ গোয়েন্দা সাহেব কোথায়? বউয়ের এত বড়ই খেতে মন চাইছে সে কি জানে?
হাসল তাননা।
‘ আমি কি রাক্ষস? যে সবই তাকে বলব? সুযোগ পেলে আমাকে খোঁটা দেবে। বলবে, বড়ই খাইনি কোনোদিন। এমনিতেও সামান্য ব্যাপারেও ছাড়েনা আমাকে।
আনহা বলল
‘ বাপরে বাপ।
সোরা খেয়াল করল কলেজ ড্রেস গায়ে নিয়ে দৌড়ে আসলো কেউ একজন। ওই ছাদে সবাইকে দেখে কাঁদোকাঁদো হয়ে গেল চেহারা। রিহান বলল
‘ আপু এসেছ। তাড়াতাড়ি চলে এসো। তেঁতুল আর বড়ই চাটনি চলবে।
রাহা কাঁদোকাঁদো গলায় বলল
‘ আমি কলেজে গেলাম সেই ফাঁকে তোমরা এসব করছ?
তাননা বলল
‘ চলে আয় রাহা। তাড়াতাড়ি। নইলে মিস। গায়ের স্কার্ফ খুলে ছুঁড়ে ফেলল রাহা। যাবনা। খাও তোমরা।
সোরা বলল
‘ ওমা? এত রাগ কেন? আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন, তারপর না হয়।
রাহা বলল
‘ তুমি জোর করে আমায় কলেকে পাঠিয়েছ আম্মা। কথা নেই তোমার সাথে। আমি কি ছোট বাচ্চা? আব্বা ও আমাকে ধরে ধরে কলেজে নিয়ে যায়, আবার নিয়ে আসে।
সোরা বলল
‘ তুমি মেয়ে বড় হচ্ছো রাহা। তুমি দেখোনা পুলিশ আঙ্কেল আর তোমার আব্বা কিভাবে তাননা আপুকে ও ভার্সিটি দিয়ে আসে।
রাহা চলে গেল গটগট পায়ে হেঁটে। সোরা স্কার্ফটা তুলে নিয়ে হাঁটা ধরল। মেয়ের হাঁটার ধরণ দেখে হাসলো সোরা। নেমে গেল নিচে।

রুমে ডুকতেই দেখল আরেক কাহিনি। বাবা মেয়ের মান অভিমান ভাঙার পালা চলছে। বাবার বুকে হাত ছোঁড়া রাহা থেমে গিয়ে পড়ে রইল বাবার বুকে। নাহিল গম্ভীর কন্ঠস্বরে বলল
‘ যদি আমি না যাই তাহলে মুননা ভাইয়া যাবে। তার কথায় যেতে হয় তোমার সাথে। তাননার সাথে ও। নইলে কত কাজ আমার।
রাহা বলল
‘ মুননা ভাইয়া নো নো রোয়েন ভাইয়াকে নিয়ে যেতে বলবে।
হেসে ফেলল নাহিল। হঠাৎ লজ্জা পেয়ে গেল রাহা। বাবার বুকে মুখ গুঁজে ফেলে বলল
‘ আম্মাকে কিছু বলবেনা।
নাহিল হেসে মেয়ের পিঠ চাপড়ে বলল
‘ ঠিক আছে। কিন্তু সোরাকে দেখে জিভে কামড় বসালো নাহিল। সোরা সরে পড়ল। রাহা রুম থেকে বের হয়ে গেল লাফিয়ে লাফিয়ে। সোরা ডুকে পড়ল রুমে। নাহিলের কোর্ট নিয়ে আলনায় এলিয়ে দিতে দিতে বলল
‘ যদি মুননা এসব জানতে পারে?
নাহিল বাম হাত দিয়ে মুখ মুছে নেয়। সোরার পেছনে এসে দুহাত দিয়ে বেষ্টনী করে ধরে । ঘাড়ে মুখ মুছে বলল
‘ জানুক। আমার মেয়ে কি কোনোদিকে কম?
‘ কিন্তু?
‘ কোনো কিন্তু না।
সোরা বলল
‘আরেহ ছাড়ুন। আপনি দিনদিন বেসামাল হয়ে যাচ্ছেন। রাহা চলে আসতে পারে।
নাহিল তাকে আর ও শক্ত করে ধরে বলল
‘ আসুক।
সোরা হাতে চিমটি মারলো নাহিলের৷ সরে গেল নাহিল। সোরা হেসে ফেলল।
‘ কথা না শুনলে আর ও বেশি দেব।
নাহিল হাত ঢলতে ঢলতে বলল
‘ ধুরর এমন কেউ করে? ব্যাথা লেগেছে।
সোরা বলল,
‘ লাগুক।

___________

মরিচ দিয়ে ঝাল ঝাল করে চাটনি বানালো তাননা। সবাইকে নিয়ে খেতে খেতে মুননাকে ডাকলো
‘ মুননা খাবি?
মুননা তাকালো।
‘ ঠাসস করে দেব বেয়াদব। ভাই ডাকবি।
তাননা বলল
‘ আচ্ছা, ঠিকাছে। নে চাটনি খাহ ।
‘ ইয়াক ওসব ও কেউ খায় নাকি? ছিঃ।
মুখ কালো হয় গেল তাননার। মাত্র গোসল করে এলো রাহা। ভেজা চুল থেকে টপটপ পানি পড়ছে। গায়ের ওড়না গলায় ঝুলিয়ে দৌড়ে ডুকল বাড়িতে। পড়ে গেল হোঁচট খেয়ে। হেসে উঠল সবাই। সবার হাসি শুনে উঠল না রাহা। কি লজ্জা! কাঁদল সে। মুননা তাকাতেই হাসি বন্ধ হয়ে গেল সবার। এগিয়ে গেল মুননা। পায়েসের বাটি একহাতে অন্য হাত রাহার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ উঠো। তোমার এই দৌড়ানোর অভ্যাস খুব খারাপ রাহা।
রাহা মুননার হাত দেখে ভড়কে গেল। লজ্জায় গাল লাল হলো। কান গরম হলো। কাঁপাকাঁপা হাত বাড়িয়ে দিয়ে রাখলো মুননার হাতের উপর। মুননা ঠেনে তুলল তাকে। রাহা দাঁড়িয়ে কাপড় ঝাড়তে লাগল। মুননা বলল
‘ কেউ সাহায্য করলে থ্যাংকস দিতে হয় রাহা।
রাহা ফটাফট বলল
‘ থ্যাংকস ভাইয়া।
‘ আমি হই কিংবা যে কেউ। থ্যাংকস বলবে।
‘ আচ্ছা।
মুননা গিয়ে বসলো সোফায়। পায়েস মুখে দিতে দিতে তাকালো টিভির দিকে। তাননাকে ডেকে বলল
‘ তুননু তোর বরকে দেখাচ্ছে। দেখ।
তাননা দৌড়ে এল।
‘ কোথায়?
মুননা বলল
‘ গোয়েন্দা সাহেবকে দেখ ওই পুলিশের পাশে। দেখেছিস?
হাসলো তাননা।
‘ দেখেছি।
মুননা বোনের মুখের দিকে তাকালো।
‘ লজ্জা পাচ্ছিস নাকি রে?
তাননা বলল
‘ যাহ। ফালতু কথা বলিস না।
মুননা নড়েচড়ে বসলো। রাহা আঙুলে চাটনি লাগিয়ে গালে পুড়তে পুড়তে বলল
‘ উফ সেই টেস্টি হয়েছে আপু। তোমার হাতের রান্না হোক চাটনি, খেয়ে ফিদা হয়ে যাবে গোয়েন্দা সাহেব।
তাননা বলল
‘ এরা চাটনি খায়না। মুননাকে দেখতে পাচ্ছিসনা।
রাহা বলল
‘ এরা ভালো খাবার খেতে জানেনা।
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো মুননা। চুপ মেরে গেল রাহা।
মুননা দেখল রাহা আঙুল চুষে চুষে চাটনি খাচ্ছে। ইয়াককক।

____________

বাড়ির সামনে বাইকের জোরেশোরে আওয়াজ শোনা গেল। তাননা সবার সাথে ব্যাডমিন্টন খেলছে আহম্মেদ বাড়ির উঠোনে। বাইকের শব্দ শুনে গায়ে প্যাঁচানো ওড়না খুলে ফেলল তাননা। ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল
‘ নোহা, রাহা আমাকে কি দেখতে ঠিক লাগছে?
নোহা হেসে বলল
‘ ভালো লাগছে আপু। যাও। যাও। ঈশান ভাইয়া মেবি চকলেট আর আচার এনেছে।
তাননা বলল
‘ আমি না ডাকা অব্ধি কেউ যাবিনা তোরা।
নোহা বলল
‘ ঠিক আছে। শুধু লুকিয়ে থাকবো গেইটের কাছে, কথা শুনবো।
চোখ লাল করে তাকালো তাননা। ডাকল
‘ মুননা?
রাহা গিয়ে মুখ চেপে ধরল তাননার। শুনব না আপু।
বাইকের হর্ন বাজলো জোরে। তাননা খালি পায়ে দৌড়ে গেল। বাইকের বসা ছেলেটি হেলমেট খুলল তাকে দেখে। অস্বস্তি সংকোচ নিয়ে তাকালো তাননা। ঈশান কড়া কন্ঠে বলল
‘ কি সমস্যা আপনার জিন্নাত ? কখন থেকে হর্ন বাজিয়ে চলেছি।
তাননা বলল
‘ হবু বউকে ঘরে দেখতে আসে। রাস্তায় নয়।
কপাল মুছল ঈশান।
‘ যাব নাকি?
তাননা বলল
‘ ভয় দেখাচ্ছেন ? পাচ্ছিনা মোটেও। চলেন ।
ঈশান বলল
‘ মোটেও না। এগুলো দিতে এসেছি। আম্মা দিতে বলেছে আপনাকে। আর রোয়েনের কি সমস্যা? শালাবাবু ফোন ধরেনা কেন?
তাননা বলল
‘ ও একটু অন্যরকম। ঠিক হয়ে যাবে।
ঈশান চকলেট বক্স বের করল।
‘ এগুলো পিচ্চিদের জন্য। নিন ।
তাননা নিল।
‘ আম্মা কি পাঠিয়েছে?
‘ চুড়ি।
‘ কি দরকার ছিল? বিয়ে তো বেশি দেরী নেই।
‘ কিছু দেওয়া হয়নি। শুধু এটাই দিয়েছে। পড়বেন না?
তাননা চমকালো।
‘ এখনি পড়তে হবে?
মাথা নাড়ালো ঈশান। তাননা চুড়ি বের করল। ঈশান হাত বাড়িয়ে বলল
‘ এদিকে দিন।
তাননা বলল
‘ নাহ। আমি পড়তে পারব।
ঈশান ধমক দিল।
‘ দিন বলছি।
দিল তাননা। ঈশান হাত ধরতেই কুঁচিয়ে গেল তাননা৷ ঈশান চুড়ি পড়া শেষ করতে পারলোনা। হামলা করল নোহা রাহা জুনিত আর রিহান।
‘ দুলাভাই!
ঈশান ছেড়ে দিল তাননার হাত। তাননা ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলল। ঈশান বাইক ঘুরাতে ঘুরাতে বলল
‘ এত বিচ্ছু, বউয়ের সাথে প্রেম দূরে থাক একটু হাত ধরতে গেলেও হামলা। ধ্যাত। কে বলেছে এতগুলো শালা শালিকা থাকার জন্য??
তাননা বলল
‘ ওমা চলে যাচ্ছেন কেন? ওদের সাথে কথা বলবেন না?
ঈশান যেতে যেতে বলল
‘ কোনোকথা নেই আপনার সাথে।
হাসল তাননা।
‘ যাহব্বাবা আমি কি করেছি? কথায় কথায় রাগ।
পেট চেপে হাসলো রাহা আর নোহা।

জুনিত আর রিহান গেইট বেয়ে বেয়ে উঠে গেল। রাহা ধাক্কা দিল গেইট। জুনিত আর রিহান চড়তে চড়তে বলল
‘ আবার ধাক্কা দাও রাহা আপু। আহ কি আরাম। আহ।
তাননা বলল
‘ মামা আসুক। আসুক। বলব গেইট ভেঙে ফেলছে এই দুই বাঁদড়।
জুনিত ঘাসের উপর লাফ দিল। চিৎপটাং হয়ে পড়ে থাকলো।
তাননা চকলেট বক্স নিয়ে ভেতরে যেতে যেতে বলল
‘ চকলেট দেবনা কাউকে। আমার জামাইর চকলেট শুধু আমার।
সবাই পেছন পেছন ছুটল তাননার। না না আপু এ হয়না। চকলেট শুধু আমাদের।

________

তাননার বিয়ে কয়েকদিন পর। জায়িদ পুরো বাড়িটাতে রঙ লাগালো আবার। নতুন করে সাজুক বাড়িটা। জুননুর বিয়ের আগে একবার রঙ লাগানো হয়েছিল। মেহেদী হবে তাননার মায়ের বাড়িতে। বিয়ে হবে বাবার বাড়িতে। নাহিল ইতোমধ্যে বাড়ির সামনের অংশটুকু সাজিয়ে ফেলেছে। তাননার বিয়ে মানে অনেক বড় কিছু।

থানা থেকে ফিরে জায়িদ নিজের রুমে গেল। নোহা আর জুনিত বাবাকে দেখে জোরেজোরে পড়ে শোনাচ্ছে। হাতের ঘড়ি খুলতে না খুলতেই এসে হাজির আনহা। হাতে শরবতের গ্লাস। জায়িদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ এ কয়দিন কাজ কমিয়ে দিন। মেয়েটার বিয়েটা হয়ে যাক।
জায়িদ গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল
‘ কাল থেকে যাবনা আর। আজ শেষ।
মুখটা উজ্জ্বল দেখালো আনহার। জায়িদ কপালে ভাঁজ ফেলে বলল
‘ কি সমস্যা?
আনহা মাথা নাড়ালো। ধীরপায়ে হেঁটে গিয়ে জায়িদের গলা জড়িয়ে বলল
‘ আমরা শ্বশুর শ্বাশুড়ি হবো অফিসার।
হাসল জায়িদ। ঘরের এককোণায় লাগানো দুই স্বামী স্ত্রীর ছবি দেখে বলল
‘ আমরা নই। জুননু আর সাহিল। কত খুশি হতো বলোতো। সাহিল কত পাগলামি করতো। আর আমার জুননু?
আনহা চুপ করে থাকলো। খেয়াল করল সে জায়িদের চোখের কোণায় ব্যাথা। আনহা বলল
‘ আপনি খেয়াল করেছেন ঈশানের কতগুলো অভ্যাস ভাইয়ের মতো। আমার ভাইকে যেন আমি দেখতে পাই ঈশানের মধ্যে।
জায়িদ বলল
‘ এজন্যই বেশি পছন্দ আমার ঈশানকে। ভালো থাকুক তাননা ঈশান। সুখী হোক। আনহা মাথা ফেলে রাখলো। জায়িদ বলল
‘ তোমার এই সমস্যাটা দিনদিন বেড়ে চলেছে। মুননাকে বলতে হবে এটা কেমন রোগ? আমি বাসায় আসতে না আসতেই তোমার ঝুলিয়ে থাকতে হয়।
জিভে কামড় বসালো আনহা।
‘ ছিঃ ছেলেকে এসব বলবেন?
‘ ডাক্তারি যেহেতু পড়ছে সেহেতু রোগের নাম আর ঔষধ ও নিশ্চয়ই জানবে। আমার দরকার।
আনহা সরে পড়ল। বলল,
‘ ধুরর আপনি ফাজলামো জানেন।
হাসলো জায়িদ। ধীরপায়ে হেঁটে গেল বোন আর বন্ধুর ছবিটার কাছে। তাদের বিয়ের ছবি। হাসি লেপ্টে আছে দুজনের মুখে। বোনের চোখে লজ্জা। জায়িদ ছবিতে হাত বুলালো। বলল
‘ জুননু আমি সর্বস্ব দিয়ে তোর বাচ্চাদের আগলে রাখার চেষ্টা করেছি। আদর, ভালোবাসা,মায়া মমতা, স্নেহ সব দিয়ে বড় করেছি তাদের। এবার তাননাকে তুলে দিতে হবে যোগ্য ছেলের হাতে। তোর বাচ্চাদের জন্য দোয়া করিস জুননু। দোয়া করিস বন্ধু। যেখানেই আছিস ভালো থাকিস।
রুমের দরজা খোলার আওয়াজ হলো। জায়িদ চোখ ঢলতেই দেখল তাননাকে। দৌড়ে এল তাননা। জায়িদের বুকে ঝাপটে পড়ে বলল
‘ মামা বিয়ে করবনা আমি। করবনা। কোথাও যাবনা। মুননুকে না দেখে, আম্মা আব্বার এই বাড়িঘর ছেড়ে থাকতে পারবনা আমি।
মুননুকে ছাড়া আমি থাকতে পারবনা।
জায়িদ হাত বুলায় তাননার মাথায়। বলে
‘ ঈশানকে বলব যখন ইচ্ছে হয় তখন তোমাকে নিয়ে আসতে। এই ছবিটার দিকে তাকাও।
তাননা মুখ তুললো। জায়িদ ছবিটা দেখিয়ে দিয়ে বলল
‘ দেখো এরা কত খুশি তোমার বিয়ের কথা শুনে। এই পাগলটা মনে হয় খুশিতে অনেক পাগলমি করছে জুননুর সাথে। জুননুকে জ্বালিয়ে মারছে।
তাননা হু হু করে কেঁদে আবার ঝাপটে ধরল জায়িদকে। হিঁচকি তুলে বলল
‘ আমি এদের ছুঁতে পারিনা কেন মামা? কেন তাদের শুনতে পাইনা। কেন আমার ডাক তাদের কান অব্ধি পৌঁছায় না।

_____

মুননাকে সারাবাড়ি খুঁজে পেলনা নাহিল। খুঁজতে খুঁজতে গেল ছাদে। মাগরিবের আজান পড়ছে চারদিকে। নামাজে যেতে হবে। নাহিল ছাদে যেতেই দেখল মুননাকে। মুননার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ডাকল
‘ আব্বা?
ফিরে তাকালো মুননা। চোখ নিচে নামিয়ে বলল
‘ হ্যা যাচ্ছি মসজিদে।
নাহিল বলল
‘ কি হয়েছে? হাতে কার ছবি। দেখি?
মুননা দেখাতে চাইলোনা। নাহিল কেড়ে নিল। দেখল তাননা মুননার ছোটবেলার ছবি। সাথে আছে তাদের আম্মা আব্বা। তাননা মুননার হাতে আইসক্রিম। কি খুশি চারজন!
নাহিল চোখ সরিয়ে পিছু ফিরে গেল। আবার সামনে ফিরে ছবিটা নিয়ে নিতে চাইলো। মুননা দিলনা। নাহিল বলল
‘ কি হয়েছে মুননা?
মুননা বলল
‘ তুননুকে বিয়ে দেওয়ার কি দরকার? ওকে দেখা ছাড়া কি করে থাকব আমি? আমার ভীষণ কষ্ট হবে।
নাহিল জড়িয়ে ধরল মুননাকে। পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
‘ তুমি ওর সাথে চলে যাবে। ও তো বাসায় উঠবে শহরে। ঈশানের কাজের জন্য শহরে থাকতে হবে।
মুননা চুপ মেরে থাকলো। নাহিল বলল
‘ ও তো মেয়ে আব্বা। ওকে বিয়ে দিতে হবে।
মুননা চুপ। নাহিল তুলল তাকে।
মুননা ছবিটা জড়িয়ে ধরে রাখলো। মাথা নিচু করে বলল
‘ ওরা ভীষণ স্বার্থপর বাবাই। ওরা ব্যাথা বুঝেনা, খবর রাখেনা,খোঁজ নেইনা। কতগুলো বছর কেটে গেল আমি তাদের আদর পাইনা৷ আমি জুননুকে খুব মিস করি। খুব মিস করি গুড্ডুকে। তাদের কথা মনে পড়তেই এই পৃথিবীর রঙ ধূসর মনে হয়। বিদীর্ণ মনে হয়। মনে হয় কোথাও রঙ নেই, আনন্দ নেই, সুখ নেই। আমার আম্মা আব্বা নেই, তাই কোথাও কিছু নেই। কিচ্ছু না।

___________

বই বুকে নিয়ে দোতলার বারান্দায় এলোমেলো পায়চারি করছে রাহা। আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বিড়বিড় করল।
‘ উফ এই ধ্রুবতারা জিনিসটা কি? বুঝতে পারছিনা কেন? এই পড়াটা ও মাথায় ডুকছেনা? ধ্রুবতারা? ধ্রুবতারা?
মুননাকে নিচে নেমে যেতে দেখল রাহা। ডাকল
‘ রোয়েন ভাইয়া?
মুননা ফিরল পিছু। হাতের কব্জিতে ঘড়ি লাগাতে লাগতে উঠে এল। রাহার সামনাসামনি এসে গম্ভীর কন্ঠে বলল
‘ কিছু বলবে?
রাহা উসখুস করতে করতে বলল
‘ রোয়েন ভাইয়া ধ্রুবতারা কি?
হঠাৎ রাহার দিকে চোখ তুলে তাকালো মুননা। আবার চোখ নামিয়ে হাতের ঘড়ি পড়তে পড়তে বলল
‘ কেন?
‘ ধ্রুবতারা জিনিসটা কি বুঝতে পারছিনা।
রেলিংএ হাত দিয়ে দাঁড়ালো মুননা। নিচে তাকিয়ে বলল
‘ পৃথিবীর উত্তর মেরুর অক্ষ বরাবর দৃশ্যমান তারা ধ্রুবতারা নামে পরিচিত। এই তারাটি পৃথিবীর অক্ষের উপর ঘূর্ণনের সাথে প্রায় সামাঞ্জস্যপূর্ণভাবে আবর্তিত হয়।
পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ থেকে ধ্রুবতারাকে সারাবছরই আকাশের উত্তরে নির্দিষ্ট স্থানে দেখা যায়। দিক নির্ণয়ে এই তারা গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া ধ্রুবতারাকে অনেকেই শুভাশিস মনে করে। কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করিনা।
রাহা কৌতূহল নিয়ে বলল
‘ শুভাশিস?
‘ হ্যা।
বলেই রেলিং ভর দিয়ে নিচে তাকিয়ে থাকলো মুননা। একদলা ঝড়ো হাওয়া এসে হঠাৎ মনটা নাড়িয়ে দিল রাহার। ঠান্ডা বাতাসে শীতল অনুভূতি। শীতল মন, শীতল মনের আবদারটুকু।
‘ আমি অতকিছু বুঝিনা মুননা ভাইয়া। কঠিন লাগে।
‘ প্রপার কনসেনট্রেশান দাও পড়ালেখায়। তুমি খুব অমনোযোগী রাহা।
রাহা চেতে গেল।
‘ ধ্রুবতারা আমাকে ভীষণ অমনোযোগী করে দিয়েছে রোয়েন ভাইয়া।
ফিরে তাকালো মুননা।
‘ মানে?
রাহা ফিরে গেল।
‘ কিছুনা।
মুননা চোখ রাখল বহুদূরে। রাহা ধীরে ধীরে চোখ তুলে তাকালো মুননার দিকে। মিনমিন করে বলল
‘ আপনি আমার ধ্রুবতারা।

চলবে,
বোনাস পর্ব তবে গল্পের নতুন নাম দিয়েছি। ছোটগল্পের মতো হবে। এক পর্বে শেষ করতে পারবনা তাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here