রৌদ্রর শহরে রুদ্রাণী পর্ব -৫২

#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৫২
#Saiyara_Hossain_Kayanat

আরশি পেছন থেকে কাসফিয়ার গলা জড়িয়ে ধরলো। তবে কাসফিয়ার কোনো হেলদোল হলো না। সে জানতো আরশি এখন তাকে জড়িয়ে ধরবে। হয়তো কান্নাও করবে। কাসফিয়া আগের মতোই স্থির দাঁড়িয়ে আছে। কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে জানালার বাহিরে। আরশি নীরবে চোখের পানি ফেলছে। নিম্নস্বরে জড়ানো কন্ঠে বলল-

“আমি জানি তুই কেন আমার সাথে এমন করছিস। কেন আমাকে দূরে ঢেলে দিচ্ছিস আমি সব জানি কাসফি।”

কাসফিয়ার চোখের কাঠিন্য ভাব কেটে এখন শান্ত শীতল চাহনিতে রূপান্তর হয়েছে। আরশি এখনো আগের মতোই কাসফিয়া গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে। কাসফিয়া আরশির হাত ধরে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল-

“কি জানিস তুই?”

আরশি কাসফিয়াকে ছেড়ে দেয়। হাতের উল্টো পিঠে চোখেরজল মুছে নেয়। কাসফিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলল-

“তোর বেবি হবে এটা দেখে আমি কষ্ট পাবো এই জন্যই তুই আমার সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছিস তাই তো!”

কাসফিয়া জানালার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আরশির দিকে একপলক তাকালো। আরশির মুচকি হাসির মাঝেও এক সমুদ্র কষ্টের ঢেউ দেখা যাচ্ছে। ভেজা চোখের পাপড়ি গুলো একটা আরেকটার সাথে লেগে আছে। মুখটা কেমন যেন মলিন মলিন লাগছে। কাসফিয়া তো তাকে কষ্ট না দেওয়ার জন্যই এমন করছে তবুও কেন মেয়েটার মাঝে এতো কষ্টের খোলামেলা দেখা যাচ্ছে! কাসফিয়ার কাছ থেকে কোনো প্রতিত্তোর না পেয়ে আবারও মলিন কন্ঠে বলল-

“কি হলো কথা বলছিস না যে! আমি ঠিক বলেছি তো!”

কাসফিয়া কিছু বলল না। অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আরশি কাসফিয়ার কাধে হাত রেখে শীতল কন্ঠে বলল-

“আমি মা হতে পারবো না এটা ব্যর্থতা আমি জানি। কিন্তু তোর বেবি হবে অথচ আমি তোর পাশে থাকতে পারবো না। তোর মাঝে এই ছোট অস্তিত্বটাকে বেড়ে উঠতে দেখতে পারবো না। তোর বেবিকে কাছ থেকে অনুভব করতে পারবো না। এসব কিছু তো কোনো কষ্টের থেকে কম না কাসফি। তোর বেবিকে আদর করে হলে-ও তো নিজের ব্যর্থতাটা-কে একটু ভুলে থাকতে পারবো। নিজের সন্তানকে আদর করতে না পারলেও তো তোর বেবিকে আদর করতে পারবো, ভালোবাসতে পারবো। কিন্তু তুই তো আমাকে এসব কিছু থেকেই বঞ্চিত করে দিচ্ছিস।”

কাসফিয়া অনুতপ্তের দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকালো। কাসফিয়া তো এসব কিছুই ভেবে দেখেনি। আরশি কাসফিয়াকে এক পাশ থেকে কাধ জড়িয়ে ধরলো মুচকি হেসে বলল-

“কি এসব ভাবিসনি তাই তো! ভাব্বি কিভাবে তুই তো সব সময় আমার কষ্টটাকেই বড় করে দেখেছিস। আমি কষ্ট পাবো এটা শুনলে তো তোর আর মাথাই কাজ করে না।”

কাসফিয়া কাঁদো কাঁদো মুখে বলল-

“আমি সত্যিই এভাবে ভেবে দেখিনি। আমি ভেবেছিলাম তুই আমাকে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় দেখলে কষ্ট পাবি তাই তোকে দূরে দূরে রেখেছি।”

আরশি সশব্দে হাসলো। বিছানায় পা দুলিয়ে বসে বলল-

“তুই আবারও আগের মতোই ভুল করলি কাসফি। তোর মনে নেই দু’বছর আগে তোকে কি বলেছিলাম! তুই আমার অনেক অনেক কাছের একজন মানুষ তোর থেকে দূরে থাকা আমার জন্য খুব কষ্টের, বেদনাদায়ক। আমি মা হতে পারবো না এটা পরের কথা কিন্তু বর্তমানে আমার কাছে যে মানুষ গুলো আছে আমি তাদের সাথেই ভালো থাকতে চাই কাসফি। কিন্তু তোরাও যদি আমাকে দূরে সরিয়ে দিস তাহলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো। সব কষ্ট মিলিয়ে ভেতর ভেতর একদম মরে যাবো। জীবন্ত লাশ যাকে বলে।”

কাসফিয়া আরশির পাশে বসে অনুনয়ের স্বরে বলল-

“এভাবে বলিস না আশু। প্রমিজ করছি আর কখনো তোকে ইচ্ছে ইগ্নোর করবো না৷”

আরশি হাসি দিয়ে কাসফিয়ার দিকে তাকিয়ে উৎকন্ঠিত হয়ে বলল-

“সত্যি তো!”

“হুম সত্যি তিন সত্যি। আর তুই যখন ইচ্ছে এখানে এসে পরিস। আমিও যে তোদের সবাইকে খুব মিস করেছি আশু।”

“কিরে গাধী তুই এসেছিস অথচ আমাকে বললি না কেন!”

আদ্রাফ রুমে এসেই আরশির মাথায় চাটি মেরে কথাটা বলল। আরশি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আদ্রাফের দিকে তাকিয়ে বলল-

“হারামিগিরি কম কর। কিছুদিন পর বাপ হবি কিন্তু এখনো তুই বাচ্চাদের মতো আমার সাথে লেগেই থাকিস।”

কাসফিয়া হাসলো আরশির কথায়। আদ্রাফ আরশির পাশে বসে ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে বলল-

“আমার বাচ্চাকেও লাগিয়ে দিবো তোর পেছনে। আমি আর আমার বাচ্চা মিলে তোকে জ্বালাবো তোর কোনো প্রব্লেম?? তোর প্রব্লেম থাকলেও আমার কিছু যায় আসে না।”

আরশি ভেংচি কেটে বলল-

“দেখুন দুলাভাই আপনি কিন্তু একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।”

আদ্রাফ আরশির চুলে টান মেরে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল-

“একদম দুলাভাই বলবি না আশু বলে দিচ্ছি। আমি তোদের আগেই বলে দিয়েছি আমরা আগে যেমন ছিলাম তেমনই থাকবো। দুলাভাই টুলাভাই ডেকে বন্ধুত্বটাকে হারিয়ে দিস না এসব সম্পর্কের মাঝে।”

আদ্রাফের কথায় আরশি ভ্রু বাঁকিয়ে বলল-

“আরে আমি তো মজা করছিলাম। তুই সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছিস কেন!”

“এই তোরা থাম তো। এখন চল নাস্তা করবি।”

কাসফিয়া কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করেই কথাটা বলল। আরশি আর আদ্রাফ ঝগড়াঝাটি বাদ দিয়ে কাসফিয়ার সাথে সাথে ডাইনিং রুমে চলে যায়।

———————

আদ্রাফদের থেকে বিদায় নিয়ে আরশি বেড়িয়ে পরল বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। রিকশা খুঁজতে খুঁজতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আরশি। হঠাৎই চোখ পড়লো পাশের মাঠে খেলা করতে থাকা কতগুলো বাচ্চার দিকে। বাচ্চা ছেলে মেয়ে গুলো একটা ছোট্ট বিড়াল নিয়ে খেলছে আর খিলখিল করে হাসছে। আরশি ঠোঁটে হাসির রেখা ঝুলিয়ে মাঠের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আচমকাই আরশির মাথা ঘুরে উঠলো। চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে, পুরো পৃথিবী যেন গোলগোল করে ঘুরছে। আরশি তাল সামলাতে না পেরে মাথায় হাত দিয়ে পরে যেতে নিলেই পাশ থেকে এক আগন্তুক এসে আরশিকে ধরে ফেলে। আরশি ছেলেটার শার্ট খামচে ধরে চোখ কুচকে বন্ধ করে রেখেছে। পুরো শরীরে অসাড় হয়ে আসছে তার। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না আরশি। ছেলেটি আরশির হাত শক্ত করে ধরে আরশিকে সামলানোর চেষ্টা করছে। প্রচন্ড অস্থির হয়েও শালীন কন্ঠে জিজ্ঞেস-

“ম্যাম আপনি ঠিক আছেন তো! কি হয়েছে আপনার?”

ছেলেটি আশাহত হলো। আরশি কোনো কিছু বলার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। ছেলেটা আরশিকে কোনো রকম ধরে আছে। আশেপাশে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি করে একটা রিকশা ডাকে। আরশিকে রিকশায় তুলে নিজেও আরশির পাশে বসে পরে। ছেলেটা রিকশাওয়ালাকে পাশের কোনো হসপিটালে নিয়ে যেতে বলল। রিকশা চলে থাকে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। ছেলেটা অস্থির হয়ে আরশির দিকে তাকাচ্ছে আর বার বার গালে হাল্কা আঘাত করে জ্ঞান ফেরানো চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। আরশির জ্ঞান ফিরছে না।

—————————

প্রিয় রৌদ্র,

সরি না বলেই চলে যাচ্ছি। আসলে কাসফিকে খুব মিস করছিলাম তাই সকাল সকালই চলে যাচ্ছি ওকে দেখতে। আপনি ঘুমিয়ে আছেন তাই আর ডিস্টার্ব করতে ইচ্ছে করছে না। নাস্তা বানিয়ে রেখেছি খেয়ে তারপর হসপিটালে যাবেন।

[বিঃদ্রঃ আমাকে নিয়ে একদমই চিন্তা করবেন না। আপনার রুদ্রাণী নিজের খেয়াল রাখবে। তাই রুদ্রাণী চায় রৌদ্র নিশ্চিন্তে থাকুক। আর হ্যাঁ সর্বশেষ কথা ‘ভালোবাসি ডক্টর রোদ।’]

ইতি,
রুদ্রাণী

রৌদ্র চিঠিটা পড়ে একটা মুচকি হাসি দিল। কিন্তু আশেপাশে তাকিয়ে পরক্ষণেই হাসিটা গায়েব হয়ে গেল। কেন যেন খুব চিন্তা হচ্ছে তার রুদ্রাণীকে নিয়ে। মনটা খুব ছটফট করছে তার। কু ডাকছে। দু’বছরে এই প্রথম ঘুম থেকে উঠে রৌদ্র তার রুদ্রাণীর উজ্জ্বল হাসি মুখ খানা দেখতে পায় নি। রৌদ্র একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে। আরশিকে ছাড়া একা একা নাস্তা করার অভ্যেস তার নেই তাই নাস্তা না করে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।

————————

প্রায় ঘন্টা খানেক পরে আরশির জ্ঞান ফিরে। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো আরশি। নিজেকে হসপিটালে দেখে তৎক্ষনাৎ উঠে বসে পরে। মাথাটা এখনো ভার ভার লাগছে। মনে হচ্ছে খুব বড়সড় একটা পাথরের নিচে মাথাটা চাপা পরেছে। আরশি মাথা চেপে ধরে বসে আছে। তখনই ছেলেটা কেবিনে আসলো। আরশিকে বসে থাকতে দেখে হাসি মুখে তার দিকে এগিয়ে গেল। আরশি রুমে কারও উপস্থিতি টের পেতেই মাথা তুলে তাকায়। বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে অচেনা ছেলেটার দিকে। ছেলেটার মুখে অমায়িক হাসি লেগে আছে। চোখ গুলো বিড়ালের চোখের মতো। গায়ে কালো রঙের শার্ট-প্যান্ট জড়ানো। হাতে রাবারের একটা ব্রেসলেট। ছেলেটা হাসি মুখেই বলল-

“নিজের একটু রাখবেন তো না-কি!! যদি আমি না থাকতাম তাহলে তো রাস্তায় পরে থাকতেন আপনি।”

আরশি নিম্ন স্বরে কৃতজ্ঞতার সাথে বলল-

“ধন্যবাদ আমার খেয়াল রাখার জন্য।”

ছেলেটা ভ্রু কুচকে বলল-

“এই সময় নিজের একটু বেশিই খেয়াল হয় জানেন না! একা একা বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন আপনি?”

আরশি বিস্মিত হয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো। এই সময় বলতে ছেলেটা কি বলতে চাইছে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। আরশি কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করল-

“এই সময় মানে কি বুঝতে চাচ্ছেন আপনি?”

আরশির কথায় ছেলেটার ভ্রু জোড়া আগের চেয়েও খানিকটা বেশি কুচকে এলো। আরশির বেডের পাশে রাখা চেয়ারে গাঁ এলিয়ে দিয়ে বসলো। আরশির দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে সন্দিহান কন্ঠে বলল-

“এখন দয়া করে এটা বলবেন না যে আপনি জানেনই না আপনার বাচ্চার কথা।”

ছেলেটার কথায় আরশি প্রচন্ড চমকে উঠলো। খানিকটা নেড়েচেড়ে বসে অপ্রস্তুত হয়ে বলল-

“কিসের বাচ্চা! কার বাচ্চা? কি বলছেন আপনি এসব? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

ছেলেটা তীক্ষ্ণতার সাথে আরশির দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে উপরের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল-

“আল্লাহ এখন এটা যেন শুনতে না হয় যে এই মেয়ে অবিবাহিত।”

ছেলেটা কথা গুলো বলে নিজের কপালে হাল্কা চাপড় মারলো। আরশি ছোট ছোট চোখ করে ছেলেটার কর্মকাণ্ড দেখে যাচ্ছে। সহজ গলায় বলল-

“আমি বিবাহিত। কিন্তু আপনি বাচ্চার কথা কি বললেন!”

ছেলেটা সোজা হয়ে বসলো। দু-হাত হাটুর ওপর রেখে একসাথে মিলিয়ে নিল দুহাতের আঙুল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-

“আপনি প্রেগন্যান্ট আর আমি আপনার পেটের বাচ্চার কথাই বলছি।”

আরশি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকালো। একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল-

“ইম্পসিবল। আপনি ভুল ভাবছেন।”

“কি বলছেন আপনি! ইম্পসিবলের কি আছে এখানে!! ডক্টর নিজেই তো আপনার চেকাআপ করে বলেছেন এই কথা।”

“এটা সম্ভব না। ডক্টরের হয়তো কোথাও ভুল হয়েছে।”

ছেলেটা একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল-

“আচ্ছা ঠিক আছে আপনি নিজেই না হয় ডক্টরের সাথে কথা বলে আসুন। চলুন আমার সাথে।”

ছেলেটা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো৷ আরশির দিকে হাত বারিয়ে দিল। আরশি কিছুটা ইতস্তত বোধ করলেও দূর্বলতা থাকায় ছেলেটার হাত ধরেই ডক্টরের কেবিনে চলে যায়। ডক্টর একদম কনফিডেন্স নিয়েই বলেছে আরশি প্রেগন্যান্ট। তবুও আরশি মানতে নারাজ তাই আরশিকে শিউর করানোর জন্য টেস্ট করতে দিয়েছে। ইমার্জেন্সি টেস্টের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। দেড়-দুই ঘন্টা লাগবে প্রেগ্ন্যাসি রিপোর্ট দিতে। আরশির অস্থিরতার পরিমান যেন সময় সাথে বেড়েই চলছে। নিজের মনের শান্তির জন্য পর পর পাঁচ বার প্রেগ্ন্যাসি কিট নিয়ে টেস্ট করেছে। প্রতিবারই প্রেগ্ন্যাসি কিটে স্পষ্ট দুটো লাল দাগ ফুটে উঠেছে। তবুও আরশির মন শান্ত হচ্ছে না। প্রেগ্ন্যাসি রিপোর্ট দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠছে। রিসেশনের পুরোটা জায়গা ধরে আরশি পায়চারী করে যাচ্ছে। ছেলেটা আরশির অস্থিরতা দেখে সন্দিহান কন্ঠে বলল-

“প্রেগন্যান্ট হলে তো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু আপনি এভাবে অস্থির হচ্ছেন কেন?”

আরশি অস্থিরতার সাথেই বলল-

“কারন আমি কখনো মা হতে পারবো না। আমি ব্যর্থ।”

ছেলেটা অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন আরশির দিকে তাকিয়ে থাকে। মুখে অদ্ভুত সুন্দর এক হাসি টেনে নিয়ে বলল-

“আপনার ধারনা ভুল প্রমান হয়ে যাবে দেখে নিয়েন।”

আরশি বিস্মিত হয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো৷ সাথে সাথেই ছেলেটার ফোন বেজে উঠলো। ছেলেটা কিছুক্ষণ ফোনে কথা বলে আরশির কাছে এসে বলল-

“দুঃখিত ম্যাম আমার এখন যেতে হবে। খুব জরুরি কাজ আছে। রিপোর্ট দেখে যেতে পারছি না। যদিও আমি জানি সুখবরই আছে। যাইহোক নিজের খেয়াল রাখবেন আর আপনার হাসবেন্ডকে ফোন করে জানিয়ে দিন আপনি এখানে। আমি এখন আসছি। ভালো থাকবেন। আর তুলতুলের খেয়াল রাখবেন।”

কথা গুলো বলেই ছেলেটা দ্রুত চলে গেল। আরশি এখন রিসেপশনে বসে ছেলেটার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এতোটা সময়ের মাঝে ছেলেটার পরিচয় একবারও জানা হয়নি। তবুও ছেলেটার জন্য অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। ছেলেটার কথাই যেন সত্যি হয়। তুলতুল নামের কোনো অস্তিত্ব যেন সত্যিই থাকে আরশির মাঝে। আরশি মনে মনে কথা গুলো বলে আপনা আপনিই নিজের পেটে হাত রাখলো। এই মুহূর্তে কেমন অনুভূতি হওয়া উচিত আরশি জানে না। তবে আরশির প্রচন্ড ভয় করছে। ছেলেটার দিয়ে যাওয়া আশা গুলো ভেঙে যাওয়ার ভয়। কিছুক্ষণের জন্য মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার স্বপ্নটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়ার ভয়ংকর রকমের ভয় হচ্ছে।

চলবে…..

[বিঃদ্রঃ ১. রাত জেগে এই পর্বটা লিখেছি। সময়ের অভাবে রিচেক করা হয়নি ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
২. আমার একটাই মাত্র ফ্রেন্ড খুব কাছের ফ্রেন্ড তবে দুরত্ব একটু বেশি। বছরে বড়জোর চার পাঁচ বার দেখা হয়। কাল রাতে হুট করেই বলল আজ না-কি ওর ফ্যামিলি নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে। সেই সাথে শুরু হয়ে গেল বিয়ে বাড়ি টাইপের তোরজোড়। তাই ব্যস্ততায় কাল রাতে গল্প লিখতে পারিনি। আজ রাতে গল্প দিতে পারবো কি-না জানি না। তবে চেষ্টা করবো। বেস্ট ফ্রেন্ড সাথে থাকলে ফোনের কথা মনে থাকবে কি-না জানি না।😅 ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে। ❤️❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here