#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৪১
#Saiyara_Hossain_Kayanat
“এত সকালে ছাদে কি করছেন মিস আরু!”
আরশি পেছন ফিরে তাকালো। দুহাত পকেটে গুজে দাঁড়িয়ে আছে রৌদ্র। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই এবাসার ছাদে চলে এসেছে। অগোছালো চুল গুলো কপালে আছড়ে পরে আছে। ভেজা ফর্সা মুখে পানির ফোটা গুলো মুক্তার মতো ঝলঝল করছে। নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে। মুখ দেখে এই মুহূর্তে তার ভাবাবেগ বোঝা বড়ই মুশকিল। গায়ে কালো রঙের টিশার্টের মাঝখানে হলুদ রঙের একটা স্মাইলি ইমুজি। আরশি মনে মনে হাসলো। আরশির আর বুঝতে বাকি নেই এই টিশার্ট কার। আরশি উৎকন্ঠা হয়ে বলল-
“আপনি নীলের টিশার্ট পরেছেন তাই না!”
রৌদ্র আরশির পাশে এসে দাঁড়ালো। গায়ে জড়ানো টিশার্টে দিকে এক নজর তাকিয়ে সহজ গলায় বলল-
“হুম। এছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না।”
আরশি হাল্কা হাসলো। নিচের বাগানের দিকে তাকিয়ে আছে চুপচাপ। রৌদ্র আবারও জিজ্ঞেস করলো-
“সকাল সকাল ছাদে কি করছেন? আমি তো ঘুম থেকে উঠেই জানালা দিয়ে আপনাকে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। তাই ফ্রেস হয়েই এখানে চলে আসলাম।”
“এমনি। রাতে ঘুম হয়নি তাই ছাদে একটু ফ্রেশ হাওয়া নিতে আসলাম।”
রৌদ্রর আরশির কানের কাছে এসে শীতল কন্ঠে বলল-
“তুমি সারারাত আমাকে নিয়ে ভাবছিলে তাই না ভালোবাসার বউ!”
আরশি রৌদ্রর দিকে তাকানোর আগেই রৌদ্রর স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। আরশি তার ভ্রু জোড়া কুচকে ফেললো। সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞেস করল-
“আপনি আসলেই খুব অদ্ভুত লোক। একবার আপনি সম্মোধন করেন আবার তুমি সম্মোধন করেন। মানে এক এক সময় এক এক রকমের কথা বলার কি আছে আজব!!”
রৌদ্র আরশির দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো-
“আমি অদ্ভুত বলেই তো আমাকে নিয়ে সারারাত চিন্তাভাবনা করো। মানুষ সব সময় অদ্ভুত জিনিসের প্রতিই বেশি আকৃষ্ট হয়। যেমনটা তুমি হয়েছো।”
আরশি ভড়কে উঠলো। রৌদ্রর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল-
“আপনি একটু বেশিই বোঝেন।”
রৌদ্র আরশির দিকে সরু চোখে তাকিয়ে সন্দিহান কন্ঠে বলল-
“কেন তুমি কি আমাকে নিয়ে ভাবো না! আমাকে ভালোবাসো না?? পছন্দ হয়নি আমাকে!”
রৌদ্র এক সাথে এতো প্রশ্ন করায় আরশি তেতে উঠে। তেজি কন্ঠে ছোট্ট করে উত্তর দিল।
“জানি না।”
রৌদ্র আহত দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকালো। আসহায় কন্ঠে বলল-
“তুমি তোমার এক মাত্র হাসবেন্ডকে ভালোবাসো না আরু? তুমি সত্যিই আমাকে ঘৃণা করো? আমাদের তো কালকেই আকদ হয়েছে। আজ বলছো তুমি আমাকে ঘৃণা করো!”
রৌদ্রর কথায় আরশির মাথায় জ্বলজ্বল করে রাগের শিখা জ্বলে উঠলো। প্রচন্ড রাগে রৌদ্রর দিকে তেড়ে গেল। রৌদ্রর মুখ বরাবর আঙুল উঁচু করে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল-
“আমি কি কখনো বলেছি আমি আপনাকে ঘৃণা করি? সব সময় দশ লাইন বেশি বোঝেন কেন আপনি?”
রৌদ্র আরশির রাগ পাত্তা না দিয়ে মুচকি হাসলো।
“তার মানে তুমি আমাকে ঘৃণা করো না তা-ই তো!”
আরশি নাক ফুলিয়ে শক্ত গলায় বললো-
“নাহ করি না।”
রৌদ্র একটা অমায়িক হাসি দিল। আরশিকে টান দিয়ে রৌদ্র নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। আরশির ঘাড়ের কাছে মুখ এনে নিম্ন স্বরে বলল-
“ঘৃণা করো না তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে ভালোবাসো তাই না ভালোবাসার বউ!”
রৌদ্রর কথায় আরশির জ্বলন্ত রাগ নিমিষেই নিবে পানি হয়ে গেল। রৌদ্রর এতটা কাছে আসায় আরশি বরফের মতো জমে আছে। নড়াচড়া করার বোধশক্তিও যেন আরশির মধ্যে নেই।
“পাশের বারান্দা…. ও ক্রাশ ভাবি কোথায় তুমি?”
নির্বানের আকর্ষণীয় ডাকে আরশির ধ্যান ভাঙলো। এক ঝাটকায় রৌদ্রকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে দাড়ালো। হঠাৎ ধাক্কায় রৌদ্র ছিটকে কিছুটা দূরে সরে যায়। নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ভ্রু কুচকে আরশির দিকে তাকায়। আরশি মাথা নিচু করে অনবরত হাত কচলাচ্ছে। নির্বান ছাদে এসে আরশিকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে কৌতুহল নিয়েই প্রশ্ন করল-
“কি হলো ক্রাশ ভাবি! কি হয়েছে তোমার? এভাবে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
আরশি কোনো কথা বলছে না। এখনো আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। নির্বান এবার ভ্রু কুচকে রৌদ্রর দিকে তাকালো। সন্দেহের গলায় জিজ্ঞেস করল-
“ভাই তুমি কি ক্রাশ ভাবিকে কিছু বলেছ না-কি!”
রৌদ্র আরশির দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল-
“আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম আরু আমাকে..”
রৌদ্রর কথার মাঝেই আরশি হকচকিয়ে উঠে আমতা-আমতা করে বলল-
“আসলে রাতে ঘুম হয়নি তাই মাথা ব্যথা করছে। আর কিছু না।”
রৌদ্র মুচকি হাসলো। নির্বান আরশির দিকে সরু চোখে তাকিয়ে কিছুক্ষন পর্যবেক্ষণ করে বলল-
“তা না হয় বুঝলাম কিন্তু তোমার মুখ এমন লাল হয়ে আছে কেন? আর হাত কচলাচ্ছো কেন?”
আরশি দ্রুত নিজের দু হাত আলাদা করে নেয়। মুখে হাত দিয়ে স্পর্শ করে জড়ানো কন্ঠে বললো-
“কই না তো। তেমন কিছু না। হয়তো রোদের জন্য এমন হয়েছে।”
রৌদ্র আরশির দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমির স্বরে বলল-
“আমার জন্য হয়েছে! কিন্তু কিভাবে মিস আরু?”
নির্বান আর রৌদ্রর একের পর এক প্রশ্ন করায় আরশি প্রচন্ড অস্বস্তিতে পরে যায়। রৌদ্রর দিকে তাকিয়ে একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল-
“আপনার কথা না আমি সূর্যের কথা বলেছি।”
নির্বান আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল-
“কিন্তু পাশের বারান্দা সূর্য তো এখনো পুরোপুরি উত্তপ্ত হয়ে ওঠেনি।”
আরশি ক্ষিপ্ত হয়ে ধমকের স্বরে বলল-
“জানি না আমি কিছু। আপনারা থাকুন আমাকে নিচে ডাকছে।”
আরশি কথা গুলো বলে হনহনিয়ে চলে যাচ্ছে তখনই আবারও নির্বান বলল-
“কিন্তু এখনো তো তোমাকে কেউ ডাক দেয় নি পাশের বারান্দা।”
আরশি নির্বানের দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই নিচে চলে গেল। সাথে সাথেই নির্বান আর রৌদ্র অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।
—————————
বিকেলে সবাই যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলো। রৌদ্র আর নির্বান আরশিদের সাথে একই ট্রেনে এসেছে। তবে আরশি সকালের পর থেকে রৌদ্রর সাথে একটা কথাও বলেনি। রৌদ্র আড় চোখে আরশির দিকে তাকালেই আরশি গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আরশির এমন অবস্থা দেখে রৌদ্র আর বাকি সবাই মিটমিটিয়ে হাসে। তাদের সবার হাসি দেখে আরশির রাগ আরও বেড়ে যায়। পুরো রাস্তা আরশি গাল ফুলিয়ে চুপচাপ বসে ছিল। ঢাকা পৌঁছেই রৌদ্র হসপিটালে চলে যায় আর নির্বান নিজের বাসায়। আরশি আর তার বন্ধুরা নিজেদের বাসায় চলে আসে। ক্লান্ত থাকায় আরশি ফ্রেশ হয়েই ঘুমিয়ে পরে। ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ আরশির ফোন বেজে উঠে। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় আরশি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে না দেখেই ফোন রিসিভ করলো।
“আরু তুমি কি ঘুমিয়ে পরেছিলে?”
রৌদ্রর প্রশ্নে আরশি ছোট্ট করে হুম বলে। রৌদ্র আবারও বলল-
“আচ্ছা তাহলে তুমি ঘুমাও। আমি আজ হসপিটালেই থাকবো। তুমি সকালে একটু পাখি গুলি দেখে নিও।”
আরশি আবারও হুম বলে। আরশি ঘুমের ঘোরেই হুম হুম বলছে। রৌদ্র একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফোন কেটে দেয়। আরশি কিছুক্ষনের মধ্যেই গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে আরশি সব সময়ের মতো আজও বারান্দায় যায়। পাখিগুলোর সাথে বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে রুমে এসে পরে। নাস্তা করেই কাসফিয়ার সাথে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। ভার্সিটিতে আসতেই আরশি আহানকে গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। আরশি আহনকে পাশ কেটে চলে যেতে নিলেই আহান আরশি হাত ধরে ফেলে।
চলবে…
[বিঃদ্রঃ ১.সারাদিন বাস জার্নি করে মাথা প্রচন্ড ব্যথা করছে তাই আজকের পর্বটা ছোট হয়েছে দুঃখিত।
২.এই গল্পটা লিখতে লিখতে গল্পের প্রতিটা চরিত্রের মায়ায় পরে গেছি। তাই হয়তো আমাকে দিয়ে এই গল্পের সেড এন্ডিং হবে না। যাই হোক সেটা না হয় পরেই দেখা যাবে। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে।❤️❤️]