#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৫
#Saiyara_Hossain_Kayanat
আরশি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নতুন পাখির খাঁচাটার দিকে। এই কালো পাখিটা তো সে আগে দেখিনি তাহলে কি এটা আজ এনেছে!! আরশি বিস্মিত হয়ে কাসফিয়াকে জিগ্যেস করলো-
“আচ্ছা এটা কী পাখি রে কাসফি!! এটা মনে হয় আজ নতুন এনেছে এতদিন ছিল না এখানে।”
কাসফিয়া আরশির মাথায় একটা চাটি মেরে জ্ঞানী ব্যক্তির মতো ভাব নিয়ে বললো-
“গাধা এটা ময়না পাখি সেটাও জানিস না তুই!!”
কাসফিয়া নিচে পরে থাকা মোচড়ানো কাগজটা দেখে দুষ্টুমি করে বলল-
“এটা মনে হয় তোদের প্রেম পত্র তা-ই না আশু!!”
কাসফিয়া চিঠিটা হাতে নিতেই আরশি চেচিয়ে বলে উঠলো-
“খবরদার কাসফি ওটা নিবি না, দে আমাকে”
কাসফিয়া দৌড়ে রুমে চলে আসলো চিঠিটা নিয়ে। আরশি পায়ের ব্যথার জন্য দৌড়াতে না পেরে কাসফিয়াকে বকাবকি করতে করতে ধীর পায়ে রুমে চলে গেল।
আরশি আর কাসফিয়াকে কথা বলতে দেখে কিছুটা বিস্ময় আর ভয়ে রৌদ্র হন্তদন্ত হয়ে দরজা আড়ালে চলে এসেছিল। ওদেরকে বারান্দায় দেখে বেশ চমকে গিয়েছিল রৌদ্র। মনে হচ্ছে কোনো এক মানুষ হুট করেই অন্য গ্রহে চলে এসেছে ব্যাপারটা তার কাছে এমনই। কিন্তু ওদের কথা গুলো শুনেই সব বিস্ময় উবে গিয়ে একটা মুচকি হাসির আগমন হলো তার ঠোঁটের কোণে। আরশিকে চিঠির মানুষটা হিসেবে পেয়ে অজানা কারণেই খুব খুশি হলো। এই আগন্তুকটার সাথে তার ঘটে যাওয়া সকল ঘটনাই কি কাকতালীয়!! নাহ.. হয়তো ভাগ্য চাইছে তার জীবনে নতুন কিছুর আগমন ঘটুক। নতুন অজানা অনুভূতির সাথে সে পরিচিত হোক। বেশ তো তাহলে চলতে থাকুক সব কিছু যেভাবে চলছে। রৌদ্র বেশ ফুরফুরে মেজাজে রুমে চলে আসলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরের শার্ট খুলে ফেললো। ধবধবে সাদা উন্মুক্ত বুক আর কাধের দিকটা বেশ মনযোগ দিয়ে দেখছে। আজও মেয়েটা তার শরীরে নখের ছাপ বসিয়ে দিয়েছে। আচ্ছা বার বার এভাবে নখের আঁচড়ের দাগ বসিয়ে দেওয়াটা কি রৌদ্রকে মেয়েটার অস্তিত্ব অনুভব করানোর জন্য না-কি এটাও কাকতালীয়!! কাধের নখের দাগগুলোর উপর হাতে আলতো ছুঁয়ে একটা মন কাড়ানো তৃপ্তির হাসি দিল। রৌদ্র মুখের হাসি স্থির রেখেই শীতল কন্ঠে বলল-
“রুদ্রাণী.. সব সময় রৌদ্রকে নিজের অস্তিত্বের চিহ্ন দিয়ে যায়।”
—————————
“ওদের নাম রৌদ্র আর রুদ্রাণী তাই হয়তো ওদের ভালোবাসা রোদের মতোই উত্তপ্ত জ্বলন্তভাষী। ওদের ভালোবাসা প্রকাশের পদ্ধতি ভিন্ন বলেই সব সময় চেচামেচি করে। ভালোবাসা প্রকাশের পদ্ধতি ভিন্ন হলেই যে ভালোবাসার কমতি আছে এটা ভাবা উচিত নয়।”
কাসফিয়া রুমে এসে বিছানায় বসে বেশ চেচিয়ে চেচিয়ে চিরকুটটা পরলো। পড়া শেষ করার সাথে সাথেই আরশি চিলের মতো কাসফিয়ার হাত থেকে চিঠিটা ছিনিয়ে নিয়ে প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ধমকে বলল-
“পড়া শেষ!! এখন নিশ্চয়ই তোর কলিজা ঠান্ডা হয়েছে হারামি!!”
কাসফিয়া সোজা হয়ে বসে সব গুলো দাঁত কেলিয়ে হাসে বলল-
“হুম অনেকককক ঠান্ডা হয়েছে…. আচ্ছা একটা কথা, তুই যে ডক্টরের সাথে এমন ব্যবহার করলি এটা কি ঠিক হয়েছে?? কিসব মিয়া টিয়া বলে ধমকালি, উনি তো তোর পা ভালো করার জন্য একটু ব্যথা দিয়েছিল।”
কাসফিয়া শেষের কথা গুলো গম্ভীর গলায় বলল। কাসফিয়া কথায় আরশির হসপিটালের ঘটনা গুলো মনে পরে গেল। আরশি ভাবনায় পরে গেল ‘আসলেই তো কিভাবে রাগী কন্ঠে কথা বলেছিল। কিন্তু লোকটা তেমন কিছুই বলেনি। আচ্ছা এখন কি তার কেছে মাফ চাওয়া উচিত!!’ কাসফিয়ার আকর্ষণ কাড়া ডাকে আরশি নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে দৃঢ় চাহনিতে কাসফিয়া দিকে তাকায়। কাসফিয়া দু পা ভাজ করে বসে হাত নেড়ে বিজ্ঞ মানুষের ভঙ্গিতে বলল-
“শোন আশু তুই লোকটার সাথে এমন ব্যবহার করে একদমই ঠিক করিসনি উনি তো আমাদের সাহায্যই করেছে। অথচ তুই একবারও মুখ ফুটে ধন্যবাদ জানালি না। তোর উচিত তোর এমন ব্যবহারের জন্য ওনাকে সরি বলা।”
কাসফিয়ার কথা গুলো আরশির কাছে সব সময়ের মতো এবার অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হলো না। আরশি বিছানায় হাল্কা করে গাঁ এলিয়ে দিয়ে ভাবুকতার সাথে বলল-
“হুম সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু সরি বলবো কিভাবে??”
কাসফিয়া ঝড়ের গতিতে সমাধান হিসেবে খানিকটা চেচিয়ে বলল-
“কার্ড দিয়েছে তো, ওখানে নিশ্চয়ই ওনার ফোন নাম্বার আছে। তুই বস আমি এক্ষুনি কার্ডটি নিয়ে আসছি।”
আরশির কোনো প্রতিত্তোরের অপেক্ষা না করেই কাসফিয়া দ্রুত পায়ে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেল। আরশি দৃঢ় চোখে কাসফিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কাসফিয়া দৃষ্টির আড়াল হতেই আরশি ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে বসলো। মিনিট খানেকের মধ্যেই কাসফিয়া এসে কার্ডটা আরশির হাতে দিয়ে ওর গাঁ চিপকে বসে পরলো। আরশি বেশ মনযোগ দিয়ে কার্ডের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে কার্ডের প্রতিটা অক্ষরের আকৃতি গুলো পর্যবেক্ষণ করছে। গাঢ় কালো কালিতে ‘ডা. রৌদ্র আহনাফ’ নামটা দেখে বিস্ময়ে চোখজোড়া গোলাকৃতি ধারন করছে। চোখের সামনে পাখিগুলোর প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠলো। কাসফিয়া ভ্রু কুচকে এক ঝলক আরশি দিকে আরেকবার কার্ডের দিকে নরজ দিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল-
“এত মনযোগ দিয়ে তো পরিক্ষার আগে নিজের বই গুলোও দেখিস নি আশু। এতো ভাবার কি আছে!! একটু সরি ই তো বলবি আজব।”
আরশিকে চুপ করে থাকতে দেখে কাসফিয়া পাশ থেকে আরশির ফোন নিয়ে আরশির হাত থেকে কার্ডটা ছিনিয়ে নিল। মুহুর্তের মধ্যেই কার্ডের নাম্বারটা ফোনে তুলে কল করে আরশির হাতে ধরিয়ে দিল। আরশি বেকুবের মতো বড়বড় চোখ করে কাসফিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রেগেমেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে এক পুরুষালী কন্ঠে সালাম দিল। আরশি হতবাক হয়ে বোবার মতো চুপ করে আছে। কাসফিয়া আরশিকে খোচা মারার সাথে সাথে আরশি জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো কাসফিয়ার দিকে। ফোনের অপর পাশ থেকে আবারও কেউ হ্যালো বলায় আরশি খানিকটা ইতস্ততবোধ করে নিম্ন স্বরে সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞাসা করল-
“আপনি কি ডা.রৌদ্র??”
রৌদ্র আরশির কন্ঠ আর এমন অস্বস্তি নিয়ে কথা বলা শুনেই বুঝে গেল। তাই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল-
“আপনার ফ্রেন্ড নিশ্চয়ই সরি বলার জন্য জোর করে ফোন করিয়েছে!!”
রৌদ্রর এমন গম্ভীর গলার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেল। কাসফিয়ার দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই কাসফিয়ার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকালো। আরশি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল-
“আসলে তখন আপনার সাথে আমার এমন বিহেভ করা ঠিক হয়নি আর আপনাকে ধন্যবাদ ও বলা হয়নি তাই ফোন করেছিলাম।”
আরশি এক দমে কথা গুলো বলে বড় করে একটা শ্বাস নিল। রৌদ্র শব্দহীন ভাবে একটু হাসলো। আরশির কথার কোনো কিছু না বলে বরাবরের মতোই গম্ভীর গলায় বললো-
“আপনার নাম কি? আর আপনার পায়ের কি অবস্থা এখন?”
আরশির কথার প্রতিত্তোরে কিছু শুনতে না পেয়ে আরশি কিছুটা রেগে গিয়ে শক্ত গলায় বলল-
“আমি আরশি আর আমার ফ্রেন্ডের নাম কাসফিয়া। আর পায়ে কিছুটা ব্যথা আছে এখনো।”
“রাতে ওষুধ খেয়ে নিবেন। আর বার বার পরে যাওয়া তো মনে হয় আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তাই কয়দিন হাঁটা চলা কম করুন সেটাই আপনার জন্য ভালো। তা না হলে দেখা যাবে হুটহাট করে রুমের মধ্যেই পরে গিয়ে পা ভেঙে বসে থাকবেন।”
রৌদ্রর গম্ভীর গলায় এসব কথা শুনে আরশির রাগ তরতর করে মাথায় উঠে গেল। রাগে নাকে হাল্কা লাল বর্ণ ধারন করেছে। আরশি দাঁতে দাঁত চেপে কিরমির করে বলল-
“আপনি কি তিতা করলা খেয়ে বড় হয়েছেন না-কি!! কথা এমন তিতা বিশের মতো কেন?? আপনি জানেন আপনি একজন রসকষহীন মানুষ!!”
রৌদ্র স্বাভাবিক ভাবেই বললো-
“এইতো আপনি বলাতে জেনে গেলাম। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”
কাসফিয়া আরশির এইরকম কথা শুনে তব্দা খেয়ে বসে আছে। কিসের জন্য ফোন দিতে বলেছিল আর এখন এসব কি হচ্ছে!! আরশি আর কিছু বলতে নিবে তার আগেই কাসফিয়া ফোনটা নিজের কানে নিয়ে ভদ্রতার সাথে বলল-
“আমি খুবই দুঃখিত ডক্টর। আপনি প্লিজ আরশির কথায় কিছু মনে করবেন না। আমি ওকে বুঝিয়ে বলছি ও আপনাকে পরে সরি বলে দিবে। এখন রাখছি আল্লাহ হাফেজ।”
কাসফিয়া দ্রুত একসাথে সব গুলো কথা বলেই ফোন কেটে দিল। জলন্ত চোখে আরশির দিকে দৃষ্টি দিয়ে কাঠকাঠ গলায় বললো-
“এভাবে কেউ অপরিচিত কারও সাথে কথা বলে??”
চলবে….
(উপন্যাসটা আমি গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করছি, কোনো কিছু তাড়াহুড়ো করে লিখে উপন্যাসটা নষ্ট করতে চাচ্ছি না। তাই সবার কাছে অনুরোধ রইলো ধৈর্য ধরে পরবেন। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে।❤️❤️)