রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
পর্বঃ৫৭
#Saiyara_Hossain_Kayanat
“এই যে তুলতুলের আম্মু।”
আরশি থমকে দাঁড়িয়ে গেল। ভ্রু জোড়া কিছুটা কুচকে এলো তার। কান দুটো খাড়া খাড়া করে শোনার চেষ্টা করছে কেউ কি তাকে সত্যি-ই ডাকছে কি-না! হঠাৎ আরশির দাঁড়িয়ে যাওয়ায় রৌদ্রর হাতে টান পরলো। আরশির হাত ধরে রেখেই রৌদ্র জিজ্ঞেস করল-
“কি হয়েছে আরু! দাঁড়িয়ে পরলে কেন!”
আরশি একপলকে আশেপাশে নজর বুলিয়ে মৃদু হেসে বলল-
“কিছু না এমনি।”
আরশি আবারও হাঁটতে লাগলো রৌদ্রর হাত ধরে। তাদের কিছুটা সামনেই নীল, নির্বান, আদ্রাফ, কাসফিয়া আর নীলা এক সাথে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছে। এতক্ষন তারা সবাই একসাথেই দল বেধে হাঁটছিল কিন্তু আরশির এভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়াতে কিছুটা সামনে চলে গেছে তারা।
“উফফ তুলতুলের আম্মু তোমাকে কতক্ষন ধরে ডেকে যাচ্ছি একটু দাঁড়ালে না কেন?”
এবার আরশি সহ বাকি সবাই হাঁটা থামিয়ে স্থির পায়ে দাঁড়ালো। বিস্মিত হয়ে সবাই আরশির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে তাকালো। আরশি ড্যাবড্যাব করে ছেলেটাকে দেখছে। বুকে হাত দিয়ে বড়বড় করে শ্বাস নিচ্ছে। মনে হচ্ছে দৌড়ে আসার ফলেই এমনটা হয়েছে। আরশি কিছুক্ষন ছেলেটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার পর মুহূর্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আরশি ছেলেটার সামনে এসে উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল-
“আমি শুনেছিলাম আপনি ডাকছেন কিন্তু কোথাও দেখতে পাইনি তাই ভেবেছি হয়তো আমার মনের ভুল ছিল।”
ছেলেটা হাতের মানিব্যাগটা প্যান্টের পেছনের পকেটে রেখে। শালীন কন্ঠে বলল-
“রিকশায় থেকে ডাক দিয়েছিলাম তাই দেখতে পাওনি। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে আসলাম তোমার কাছে। যাইহোক এসব কথা থাক। আমার তুলতুল কেমন আছে? আমি যা বলেছিলাম তা সত্যি হয়েছে তো!!”
আরশি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল-
“হুম হুম আপনার কথাই সত্যি হয়েছে। আর তুলতুলও খুব ভালো আছে।”
আরশির কথায় ছেলেটা একটা মন কাড়া হাসি দিল। মাথার ঝাকড়া চুলে হাতের আঙুল দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে নেয়। বাকি সবাই বিস্ময় নিয়ে আরশি আর অচেনা ছেলেটার কথপোকথন শুনছিল। নীল নিজের কৌতুহল দমাতে আরশির কাছে এসে জিজ্ঞেস করল-
“আশু এটা কে?”
আরশি নীলের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল-
“তোদের তো বলেছিলাম একটা ছেলে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল! উনিই সেই ছেলে।”
নীলসহ বাকি সবার কৌতুহলী চোখে এখন কৃতজ্ঞতার ঝলক দেখা দিল। নীল তৎক্ষনাৎ ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে কৃতজ্ঞতার সুরে বলল-
“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের আশুর খেয়াল রাখার জন্য।”
নীল ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়ে দাঁডালো। ছেলেটা একটা অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে বলল-
“আমি তেমন কিছুই করিনি শুধু একটু হেল্প করেছি হসপিটালে নিয়ে গিয়ে।”
রৌদ্র হাসি মুখে ছেলেটার কাছে এসে বলল-
“আজকাল অচেনা একজন মানুষের জন্য এতটুকু সাহায্য করাই অনেক বড় ব্যাপার।”
রৌদ্র ছেলেটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে হাসিমুখে বলল-
“আমি তুলতুলের আব্বু ড.রৌদ্র আহনাফ।”
ছেলেটা হাসি মুখে হ্যান্ডশেক করে ভদ্রতার সাথে বলল-
“আমাকে হয়তো আপনি চিনবেন। আমি ধ্রুব হাসান। আপনার পুরনো পেসেন্ট। আপনাকে চেনা চেনা লাগছিল এখন আপনার নাম শুনে কনফার্ম হলাম আপনি-ই আমার ডক্টর ছিলেন।”
রৌদ্র সরু চোখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে বলল-
“তোমার আম্মুর সাথে এসেছিলে আমার কাছে! প্রায় দেড় বছর হবে তাই না!”
“হুম এমনই হবে। আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন শুনে ভালো লাগলো।”
“আমার যতটুকু মনে পরে তোমার দেশের বাহিরে যাওয়ার কথা ছিল চিকিৎসার জন্য।”
ধ্রুব কিছুটা সময় চুপ থেকে একটা অদ্ভুত হাসি দিয়ে বলল-
“কিছুদিন আগেই ফিরেছি দেশে। এখন খুব সুস্থ আছি। যাই হোক আপনাদের সাথে তো পরিচয় হলাম না!”
ধ্রুব হাসি মুখে সবার সাথে এক এক করে পরিচয় হয়ে নেয়। ধ্রুব ভ্রু বাঁকিয়ে আরশির দিকে চেয়ে সন্দিহান কন্ঠে বলল-
“আচ্ছা তুমি আমাকে আপনি আপনি করে বলছো কেন? আমি তো তোমার থেকে ছোট হবো। আর হ্যাঁ আমি সবাইকে তুমি করে কথা বলায় অভ্যস্ত তাই তোমাদের সবাইকে তুমি করে বললে কিছু মনে করো না।”
আরশি হাসলো। ধ্রুবর দিকে চেয়ে বলল-
“আচ্ছা এখন থেকে তাহলে তুই করে বলবো চলবে তো!”
“চলবে না দৌড়াবে।”
ধ্রুবর কথায় সবাই হেসে দেয়। রৌদ্র ধ্রবর কাধে হাত রেখে বলল-
“যদি তোমার কোনো প্রব্লেম না থাকে তাহলে আমাদের সাথে চল। সবাই একসাথে ডিনার করবো। কোনো না মানবো না। তুলতুলের পক্ষ থেকেই এই ট্রিট মনে করো।”
ধ্রুব কিছুটা ইতস্তত বোধ করছে। নীল আদ্রাফ আর নির্বান এক প্রকার জোর করেই ধ্রুবকে তুলে নিয়ে গেল রেস্টুরেন্টে। রৌদ্র আরশি একে অপরের হাত ধরে হাসতে হাসতে তাদের পেছনে হেটে যাচ্ছে।
—————————
রৌদ্র বেড রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আরশিকে অপলক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে। আয়নায় নিজেকে নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আরশি। পেটে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ঠিক কতটুকু বড় হয়েছে তাদের তুলতুল। রৌদ্র গত তিনমাস ধরেই আরশির এই কাজ নিয়মিত দেখে আসছে। অবশ্য গত তিন মাসে প্রেগ্ন্যাসির কারনে আরশির মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। শরীর আগের থেকে খানিকটা ভারি হয়ে এসেছে। গাল গুলো কিছুটা ফুলে গেছে। তুলতুল বড় হয়ে আরশির পেট উঁচু করে তুলেছে। খানিকটা মোটা হয়ে যাওয়ায় আরশির সৌন্দর্যের লাবণ্যতা বেড়েছে আগের থেকে অনেক। কিন্তু এই সৌন্দর্য আরশির চোখে পড়ে না। রৌদ্র ধীর পায়ে এগিয়ে এসে আরশিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আরশির কাধে নিজের থুতনি রেখে আয়নায় আরশির প্রতিবিম্ব দেখছে। তবে এতে আরশির কোনো হেলদোল নেই। আরশি আয়নার দিকে তাকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বলল-
“আমি দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছি তাই না রোদ! গাল গুলো দেখেছেন কেমন আলুর মতো হয়ে যাচ্ছে।”
রৌদ্র দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল-
“হুম… তুলতুলের আম্মু গুলুমলু হবে এটাই স্বাভাবিক আরু।”
আরশি আয়নায় রৌদ্র দিকে চেয়ে মলিন কন্ঠে বলল-
“আমি মোটা হয়ে গেলে আপনি আমাকে আগের মতো ভালোবাসবেন তো রোদ?”
ইদানীং আরশির এসব অদ্ভুত রকমের প্রশ্নে রৌদ্র মাঝে মাঝে বড্ড ক্ষেপে যায়। আজও তা-ই হলো আরশিকে ছেড়ে দিয়ে মুখোমুখি দাড় করে কড়া গলায় বলল-
“আপনাকে আমি কতবার বলবো মিসেস আরু আমি আপনার রূপ দেখে ভালোবাসিনি, যে রূপ নষ্ট হয়ে গেলেই আমার ভালোবাসা কমে যাবে। অযথা এসব উদ্ভট প্রশ্ন কেন করেন আপনি মিসেস আরু!”
রৌদ্র এমন কঠিন বাক্যে আরশির কোনো ভাবান্তর হলো না। সে ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে রৌদ্রর দিকে চেয়ে বলল-
“আচ্ছা আরেকটা প্রশ্ন ছিল জিজ্ঞেস করি!”
রৌদ্র ভ্রু কুচকে ফেলে। দু’হাত ভাজ করে গম্ভীর গলায় বলল-
“আবারও যদি আজেবাজে প্রশ্ন করেছেন তাহলে আজ আপনি এই রুমে একা একা ঘুমাবেন মনে থাকে যেন।”
আরশি রৌদ্রর দিকে সরু চোখে চেয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। একটা জোড়ালো শ্বাস নিয়ে বলল-
“আপনি রেগে গেলে সব সময় আমাকে আপনি সম্মোধন করে কথা বলেন কেন রোদ?”
রৌদ্র ছোট্ট করে একটা শ্বাস ফেলে। আরশির দিকে শীতল চাহনি নিক্ষেপ করে। শান্ত গলায় বলল-
“আমি চাইলেই আমার রাগ অন্য ভাবে প্রকাশ করতে পারি। কিন্তু আমি রাগের মাথায় ভুলেও কখনো তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আমাদের দেশে এমন অনেক পুরুষ আছে যারা রাগের মাথায় তাদের স্ত্রীর গায়ে হাত তোলে, চেচামেচি করে, তুইতোকারি করে কথা বলে, ধমকায়, বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। কিন্তু আমি এভাবে নিজের রাগ প্রকাশ করতে চাই না। আমি কাপুরুষের মতো নিজের রাগ অন্যের উপর মেটাতে চাই না। রাগের মাথায় এমন কোনো ব্যবহার বা কথা বলতে চাই না যার কারনে পরে আফসোস করতে হয়। আর তোমাকে ভুলেও কোনো কষ্ট দিয়ে ফেললে তার দ্বিগুণ কষ্ট হয়তো আমি পাবো। তাই আমি রেগে গেলে তোমাকে আপনি করে বলি আর যখন বেশি রাগ হয় তখন তোমাকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা না বরং রুম আলাদা করার কথা বলি। যেন একই বাসায় থেকে অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই নিজেদের মান-অভিমান ভুলে যেতে পারি। দূরত্ব যেন সৃষ্টি না হয় আমাদের মাঝে। কারন আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। আমি তোমাকে ভালোবাসি আরু। কোনো ভুলবোঝাবুঝি হলে সেটা ভালোবাসা দিয়ে ঠান্ডা মাথায় মিটিয়ে নিতে চাই। তুচ্ছ কারণে আমার ভালোবাসার বউকে কষ্ট দিব, আঘাত করে করে কথা বলবো, বাজে ব্যবহার করবো এমন কাপুরষ না তোমার রোদ। রোদ তার রুদ্রাণীকে আজীবন নিজের কাছে রাখতে চায় তাই রোদ তার প্রতিটি পদক্ষেপ ভেবেচিন্তে নেয়। বুঝেছো আরু!”
আরশি মাথা নাড়িয়ে জ্ঞানী ব্যাক্তিদের মতো বলল-
“হুম বুঝলাম।”
রৌদ্র আরশিকে ঘুড়িয়ে নিয়ে পেছন থেকে আবারও জড়িয়ে ধরলো। আয়নায় আরশির দিকে চেয়ে শীতল গলায় বলল-
“তুমি কি জানো রুদ্রাণী তুমি আগের থেকে অনেক বেশি সুন্দর হয়ে গেছো!”
রৌদ্রর কথায় আরশি ভ্রু কুচকে ফেলে। রৌদ্র হাল্কা হেসে আরশির পেটে নিজের দু’হাত আলতো করে রেখে বলল-
“সত্যি বলছি তুমি আগের থেকেও অনেক কিউট হয়ে গেছ। একদম গুলুমলু। আর তোমার গাল গুলো দেখলে তো ইচ্ছে টুপ করেই খেয়ে ফেলি।”
রৌদ্র কথাটা বলেই আরশির গালে আস্তে করে একটা কামড় দিল। আরশি ভ্রু কুচকে রৌদ্রর দিকে তাকালো। তাকিয়েছে বললে ভুল হবে। তীর নিক্ষেপের মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে রৌদ্রর দিকে। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল-
“কি করছেন আপনি এসব!! আপনি মজা কিরছেন আমার সাথে তাই না রোদ!”
রৌদ্র তপ্ত শ্বাস ফেলে। আরশিকে আগের থেকেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শীতল কন্ঠে বললো-
“আমি তোমাকে ভালোবাসি আরু। ভালোবাসি তোমার সব কিছুকে শুধু তোমার রূপ, গুনকে না। আমি প্রথম প্রেমে পরেছিলাম তোমার অগোছালো চেহারা দেখে। তোমার ভালোবাসায় পরেছি তোমার অস্বস্তিতে ঘেরা মুখ দেখে। তখনও তোমাকে ভালোবেসেছি। আর এখনও তোমার এই গোলাগাল কিউটনেসে ভরা চেহারাকে ভালোবাসি। আর বুড়ো বয়সে তোমার কুচকে যাওয়া চামড়া, সাদা হয়ে যাওয়া চুল, দাঁতবিহীন হাসি সব কিছুকেই ভালোবেসে যাবো। আমি আগেও তোমাকে ভালোবেসেছি, এখনো তোমাকে ভালোবাসি আর বুড়ো বয়সেও তোমাকেই ভালোবেসে যাবো।”
আরশি লাজুক হাসি দিয়ে ঘুরে রৌদ্রকে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরলো। রৌদ্রর বুকে মুখ গুজে দিয়ে নিম্নস্বরে বলল-
“আমিও আপনাকে ভালোবাসি রোদ। বুড়ো বয়সেও আপনাকে ভালোবেসে যাবো তুলতুলের আব্বু।”
রৌদ্র হাল্কা হেসে আরশির মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল-
“কাল কিন্তু নীলদের বাসায় যেতে হবে। ভুলে যেও না কিন্তু।”
আরশি মাথা নাড়ালো। রৌদ্র আরশিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল-
“চল এখন ঘুমাবে। রাত হয়েছে।”
চলবে…
[আসসালামু আলাইকুম। আশাকরি সবাই ভালো আছেন। প্রথমেই সবাইকে সরি বলছি এতদিন অপেক্ষা করানোর জন্য। বেস্টির বাসায় বেড়ানো শেষ তাই আজ থেকে নিয়মিত গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। কোনো ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ আর আকাশ সমপরিমাণ ভালোবাসা।❤️❤️]
#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৫৮
#Saiyara_Hossain_Kayanat
“শুভ্রতা তুমি এখানে একা কেন! নিলু কোথায়?”
আরশি নীলার রুমে এসে নীলা আর শুভ্রতাকে না পেয়ে বারান্দায় চলে আসে। শুভ্রতা বারান্দার একপাশে রেলিঙে হাত রেখে আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরশির কন্ঠস্বর পেয়ে শুভ্রতা ঝট করে পেছন ফিরে তাকায়। হাল্কা হেসে নম্রতার সাথে বলল-
“নীলু আপু ওয়াশরুমে গেছে ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য।”
আরশি মুচকি হাসলো। আস্তে আস্তে করে শুভ্রতার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছোট্ট করে ‘অহহ’ বলল। সরু চোখে শুভ্রতাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত খুটেখুটে দেখছে। শুভ্রতা নামটা যেন আজ স্বার্থক হয়েছে। শুভ্র সাদা রঙের গাউন পরেছে শুভ্রতা। শুভ্রতার ধবধবে ফর্সা ত্বকে সাদা রঙের গাউন পরায় শুভ্রতার পরশ যেন চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে সদ্য একটুকরো শুভ্র মেঘ নেমে এসেছে।
“কিছু একটা মিসিং লাগছে।”
আরশির সন্দিহান কন্ঠে শুভ্রতার কপালে চিন্তার ভাজ পরে গেল। শুভ্রতা নিজেকে দেখতে দেখতে চিন্তিত গলায় বলল-
“কি মিসিং লাগছে আশুপি! খারাপ লাগছে আমাকে?”
“তোমার পাশে নীলকে মিসিং লাগছে।”
আরশি কথাটা বলেই ফিক করে হেসে দেয়। শুভ্রতা অপ্রস্তুত হয়ে পরে। ইতস্তত করে বলল-
“আশুপি এই সময় তুমি মজা করছো আমার সাথে! এমনিতেই আমার খুব নার্ভাস লাগছে।”
আরশি শুভ্রতার কাধে হাত রেখে আস্বস্ত করে বলল-
“এনগেজমেন্টই তো হবে এখানে এতো নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই।”
“আশু আমারও খুব ভয় লাগছে রে। কেমন যেন অদ্ভুত রকমের ফিলিংস হচ্ছে মনের মধ্যে।”
নীলা বারান্দায় এসেই জড়ানো কন্ঠে আরশির উদ্দেশ্যে কথা গুলো বলল। আরশি নীলার দিকে চেয়ে একটা হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বলল-
“তোরা দু’জনে এতটা ভীতু আগে জানতাম না। এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর নার্ভাস হওয়ার ও কোনো দরকার নেই। এখানে সব আমাদের ফ্যামিলির মানুষই থাকবে। আর অদ্ভুত রকমের ফিলিংস হচ্ছে কারন তোরা ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাচ্ছিস তাই।”
শুভ্রতা চিন্তিত গলায় বললো-
“আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে আব্বু আমাদের বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছে। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আশুপি। তুমি আর রৌদ্র ভাইয়া আব্বুকে না বোঝালে হয়তো আব্বু কখনোই আমাদের সম্পর্কটাকে মেনে নিতো না।”
শুভ্রতা আরশিকে জড়িয়ে ধরলো। নীলা হাসি মুখে শুভ্রতা আর আরশির দিকে চেয়ে আছে। বাহির থেকে শুভ্রতার আম্মুর ডাক শুনতে পেয়ে শুভ্রতা আরশিকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত তার আম্মুর কাছে চলে যায়। আরশি আর নীলা বারান্দায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। নীলা কিছুটা সময় পর নিরবতা ভেঙে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল-
“আশু আমি ঠিক করছি তো বিয়েটা করে?”
আরশি নীলার দিকে চেয়ে শান্ত গলায় বললো-
“অবশ্যই ঠিক করছিস নিলু। নীড় ভাইয়া খুব একজন মানুষ৷ উনি তোর ব্যাপারে সব জেনে শুনেই তোকে ভালোবেসেছে। আর তুই নিজের জীবনে এগিয়ে গেছিস এটাই অনেক বড় প্রাপ্তি নিলু। অনেকেই ভুল মানুষকে ভালোবেসে আঘাত পায়। তুইও পেয়েছিস। তবে বেশিরভাগ মানুষই আঘাত পেয়ে নিজের জীবনটাকে ধ্বংস করে দেয়। যে মানুষটা কখনো তার হবেই না সেই একটা ভুল মানুষের জন্য নিজের জীবনকে অন্ধকারে ঢেলে দেয়। কিন্তু তুই খুব স্ট্রং ছিলি তাই নিজেকে সামলিয়ে নিতে পেরেছিস। নীড় ভাইয়াকে নিজের মনে জায়গা দিতে পেরেছিস। তোরা দুজন একে অপরের জন্য একদম পারফেক্ট।”
নীলা আরশিকে জড়িয়ে ধরে বলল-
“তুই আমার পাশে ছিলি বলেই আমি নিজেকে সামলিয়ে নিতে পেরেছি আশু।”
আরশি হাসলো। নীলার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল-
“দেখলি তো আমি আমার কথা রেখেছি। আমি বলেছিলাম তোর জন্য আদ্রাফ হারামির থেকেও ভালো একটা রাজপুত্র খুঁজে দিব। বিয়ের পর তুই আর নীড় ভাইয়া হবি বেস্ট কাপল। এবার সবাই তোদেরকে দেখবে আর মমতাজের গান গাইবে ‘ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়।”
আরশির কথায় নীলা সশব্দে হেসে দেয়। দুজনে এক সাথে তাল মিলিয়ে হাসছে। নীলা আরশিকে ছেড়ে দিয়ে হাসি থামিয়ে বলল-
“হয়েছে চল এবার। আমাকে রেডি হতে হবে।”
নীলা রুমে চলে যেতে নিলেই আরশি নীলার হাত ধরে ফেলে। নীলার দিকে একঝলক তাকালো। নীল রঙের গাউন পরেছে নীলা। এই রঙেটা নির্বানের খুব প্রিয়। হয়তো নির্বানের পছন্দেই এই গাউনটা পরেছে। নীলা জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে আরশির দিকে চেয়ে আছে। আরশি ঠোঁটের কোণে হাল্কা হাসি রেখে নরম গলায় বলল-
“একটা কথা মনে রাখিস নিলু যেটা অতীত হয়ে যায় সেটা কখনোই ভালোবাসা ছিল না। হয়তো মায়া ছিল। আর না হয় খনিকের মোহ। আমরা অনেক সময় মোহ আর মায়াকেই ভালোবাসা ভেবে ভুল করে ফেলি। ভালোবাসা খুব সুন্দর একটা জিনিস নিলু। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত একটা নির্দিষ্ট মানুষের প্রতি ভালোবাসা আমাদের মনে থেকে যায়। মৃত্যুর কয়েক মুহুর্ত আগেও যে মানুষটা কাছে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছে আমাদের মনে জেগে ওঠে সেই একটা মানুষই আসল ভালোবাসার মানুষ। আমি জানি তোর সেই ভালোবাসার মানুষটা আর কেউ না নীড় ভাইয়া।”
নীলা কিছু বলল না। তৃপ্তিদায়ক একটা হাসি দিয়ে আরশির হাত ধরে রুমে চলে আসে। আরশির কথা গুলোর মানে নীলা খুব ভালো করে বুঝে নিয়েছে। আর নীলাও জানে সে নির্বানকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। নির্বানকে এক মুহুর্ত না দেখলে তার মনে যে ব্যাকুলতা সৃষ্টি হয় সেটা কখনোই আদ্রাফের জন্য হয়নি। নির্বানের জন্য যে অনুভূতি গুলো নীলা অনুভব করে সেটা আগে কখনো অনুভব করেনি। হয়তো সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষের দেখা পেয়েছে তাই এমন অদ্ভুত অনুভূতির সাথে পরিচিত হচ্ছে নীলা।
————————
আজ নীলা-নির্বান আর নীল-শুভ্রতার এনগেজমেন্ট। দুই ভাইবোনের এনগেজমেন্ট আর বিয়ে একসাথেই করার ইচ্ছে ছিল সবার তাই সকল অনুষ্ঠানের আয়োজন নীলদের বাসায় করা হয়েছে। শুভ্রতা আর নির্বানের ফ্যামিলিও এসেছে নীলদের বাসায়। রৌদ্র আর আরশি নিজে শুভ্রতার বাসায় যেয়ে শুভ্রতার বাবাকে নীল আর শুভ্রতার সম্পর্কের কথা বুঝিয়ে বলেছে। প্রথম প্রথম এই প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা নারাজ থাকলেও কিছুদিন বাদেই মেয়ের খুশির কথা চিন্তা করে তাদের সম্পর্কটাকে মেনে নেয়। সবাই হাসিখুশি মনেই মেনে নিয়েছে এদের সম্পর্ক। নীলদের ছাদে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আজ এনগেজমেন্ট হবে আর তার দুমাস পরেই বিয়ে হবে। আরশি ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে সবাইকে দেখছে। নীলা আর শুভ্রতা স্টেজের সোফায় বসে অস্বস্তিতে কাচুমাচু করছে। নীল আর নির্বান অন্য পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আরশি নীলাদের দেখছে আর মনে মনে হাসছে। রৌদ্র আরশির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রৌদ্রর দৃষ্টি শুধুমাত্র তার রুদ্রাণীর মাঝেই আটকে আছে। রৌদ্র আর রুদ্রাণী আজ ম্যাচিং করে কালো রঙের ড্রেস পরেছে। রৌদ্র কালো শার্ট আর প্যান্ট পরেছে। আরশি কালো জামদানী শাড়ি পরেছে। পরেছে বললে ভুল হবে। রৌদ্র জোর করেই পরিয়েছে। পেট উঁচু হয়ে যাওয়াতে আরশি কোনো মতেই শাড়ি পরতে রাজি হয়নি। শাড়ি পরলে নাকি তাকে আরও বেশি মোটা মোটা লাগবে। কিন্তু রৌদ্রর জোরাজোরিতে অবশেষে শাড়ি পরেই আসতে বাধ্য হয়েছে।
“রুদ্রাণী তোমাকে আজ অনেক বেশি কিউট লাগছে। ইচ্ছে করছে আবারও তোমাকে নতুন করে বিয়ে করে ফেলি।”
রৌদ্র ঝুঁকে আরশির কানের কাছে এসে ফিসফিস করে কথা গুলো বলল। আরশি তার বড়সড় চোখে রৌদ্রর দিকে তাকালো। রৌদ্র মুচকি হেসে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আরশি চাপা কন্ঠে বললো-
“আপনি যে দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছেন সেটা আপনি জানেন রোদ!!”
“তোমাকে ভালোবেসেই তো হয়েছি রুদ্রাণী।”
রৌদ্রর ভ্রুক্ষেপহীন জবাবে আরশি হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে। এই লোকটাকে কিছু বলাই বেকার। সে নিজের মতোই যখন তখন এসব কথা বলে আরশিকে লজ্জা ফেলে দেয়।
“তুলতুলের আম্মু কেমন আছো?”
আরশি ঘাড় বাকিয়ে পাশে তাকালো। ধ্রুবকে দেখে সাথে সাথেই আরশি গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ধ্রুবর কথার কোনো প্রতিত্তোর দিলো না। দু হাত ভাজ করে অন্য দিকে চেয়ে আছে। এই কয়েক মাসে ধ্রুবর সাথে সবার সম্পর্ক যেন খুব গভীর হয়ে উঠেছে। ধ্রুবকে আরশি, নীল ওরা সবাই নিজেদের ছোট ভাইয়ের মতোই ভালোবাসে, স্নেহ করে। কিন্তু গত দশদিন ধরে ধ্রুব কারও সাথেই কোনো যোগাযোগ করেনি তাই আরশি রেগে আছে। ধ্রুব চোখের ইশারায় রৌদ্রকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে! রৌদ্র ঠোঁট উলটে দু কাধ খানিকটা উঁচু করে। যার মানে সে কিছু জানে না। ধ্রুব আরশির কাছে এসে মলিন মুখে জিজ্ঞেস করল-
“আরশি আপু কি হয়েছে! তুমি কি আমার সাথে কথা বলবে না? রাগ করেছো কোনো কারনে?”
আরশি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ধ্রুবর দিকে। অভিমানী কন্ঠে বলল-
“গত দশদিন কোথায় ছিলি? একবারও তো দেখা করতে আসলি না। আর ফোনটাও তো অফ ছিল তোর। আমার কথা তোর মনে আছে বলে তো আমার মনে হয় না।”
ধ্রুব চুপসে গেল। কি উত্তর দিবে সেটা নিয়েই চিন্তা ভাবনা করছে মনে মনে। কিছুটা সময় চুপ থেকে একটা কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলল-
“দাদু অসুস্থ ছিল তাই আম্মুকে নিয়ে গ্রামে গিয়েছিলাম। কাল রাতেই ঢাকা এসেছি। আর তখনই নীল ভাইয়া ফোন করে বলল আজ না-কি তাদের এনগেজমেন্ট। তাই তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে না বলেই চলে আসলাম।”
আরশি চিন্তিত গলায় জিজ্ঞেস করল-
“এখন সব ঠিক আছে তো!”
“হ্যাঁ ঠিক আছে। তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না।”
হঠাৎই রৌদ্র ছাদের দরজার দিকে তাকিয়ে বলল-
“কাসফিয়া আর আদ্রাফ এসে পড়েছে আরু।”
আরশি দ্রুত ছাদের দরজার দিকে তাকালো। আদ্রাফ কাসফিয়াকে ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। কাসফিয়ার পেট এখন অনেকটাই বড় হয়ে গেছে। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো এই ছোট্ট বেবিটা তাদের কোলে জায়গা নিয়ে নিবে। এই অবস্থায় কাসফিয়াকে আসতে সবাই না করেছিল। কিন্তু কাসফিয়ার জেদের কাছে সবাই হার মেনে নেয়। সে কিছুতেই তার বন্ধুদের এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান মিস করতে চায় না। কাসফিয়া আস্তে আস্তে হেঁটে আরশির পাশে এসে দাঁড়ালো। রৌদ্র আর ধ্রুবর সাথে কুশল বিনিময় করার পর কাসফিয়া উৎসুক কন্ঠে আরশিকে জিজ্ঞেস করল-
“কিরে কি অবস্থা এদিকের? নিলু আর শুভ্রতা এভাবে চুপসে আছে কেন?”
কাসফিয়ার প্রশ্নে আরশি আর রৌদ্র হেসে দেয়। আরশি হাসতে হাসতে বলল-
“আর বলিস না ওরা দু’জন না-কি খুব নার্ভাস ফিল করছে। তুই-ই বল এনগেজমেন্টের সময় কেউ ভয় পায়? নিলু ভীতু সেটা না-হয় জানতাম এখন নিলুর সাথে সাথে আরেকটা ভীতু মেয়ে জুটেছে।”
আরশির কথায় সবাই ঝংকার তুলে হেসে ওঠে। সবাই ছাদে চলে আসার কিছুটা সময়ের মধ্যেই অনুষ্ঠান শুরু হয়। রিং পরানো সম্পূর্ণ হওয়ার কিছুটা সময় পর অনুষ্ঠানের মাঝে হঠাৎই ধ্রুব দৌড়ে ছাদ থেকে চলে গেল। বুকের বা পাশে হাত রেখে বড় বড় করে শ্বাস ফেলতে ফেলতে নিচে চলে যাচ্ছে ধ্রুব। ধ্রুবর এভাবে চলে যাওয়া সবার চোখ এড়িয়ে গেলেও রৌদ্রর চোখে তা এড়ালো না। বেশকিছু দিন থেকেই হুটহাট করে ধ্রুবর গায়েব হয়ে যাওয়া নিয়ে রৌদ্রর মনে কিছুটা খটকা লাগছিল। ধ্রুবকে এভাবে যেতে দেখে আজ যেন কৌতূহলের পরিমান আরও বেড়ে যায়। রৌদ্র ভ্রু কুচকে ছাদের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো আপনি এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”
আরশির প্রশ্নে রৌদ্র নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে হাল্কা হেসে বলল-
“কিছু না। চলো নীলদের ওদিকটায় যাই।”
রৌদ্র আরশির হাত ধরে নীলদের দিকে এগিয়ে গেল। আরশি নীলের পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল-
“তোরা জমজ তাই তোদের বিয়ের সব অনুষ্ঠানও একসাথেই করবো। সময়ও বাঁচলো আর টাকাও কম খরচ হবে। ভালো না আমার আইডিয়াটা!”
আরশির আইডিয়া শুনে সবাই এক দফা হেসে নেয়। নীল সন্দিহান কন্ঠে বলল-
“যতসব উদ্ভট আইডিয়া শুধু তোর মাথাতেই আছে। দেখিস তোর এই কিপ্টামিতে রৌদ্রর ভাই অল্প কিছুদিনের মাঝেই বড়লোক হয়ে যাবে।”
নীলের কথায় সবাই উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। আজ সকলের মুখেই হাসি লেগে আছে। একে অপরের খুশিতে মেতে উঠেছে তাদের সবার মন।
দু’মাস পর..
চোখের পলকেই পাড় হয়ে গেল দু মাস। নীলদের বিয়ের দিন চলে এসেছে। আজকেও সবাই এক হয়েছে। সবার মুখেই হাসি লেগে আছে। তবে আজ খুশির পরিমাণ আগের থেকেও দ্বিগুণ বেড়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠান হলেও সবাই একটা নতুন প্রানকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পরেছে। সেই নতুন প্রানটা হলো কাসফিয়া আর আদ্রাফের ভালোবাসার সন্তান। নীলদের এনগেজমেন্টের কিছুদিন পরেই কাসফিয়ার কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান আসে। সাদাফ। সাদাফ দেখতে একদম আদ্রাফের মতোই দেখতে হয়েছে। ছোট বাচ্চা হলেও কান্নাকাটি একদমই কম করে। হয়তো গম্ভীর প্রকৃতির হবে ছেলেটা। কাসফিয়া বিয়ে বাড়িতে সাদাফকে নিয়ে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি। নীল আর নীলা নিজেদের বিয়ের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সাদাফকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পরেছে। তবে আরশি নীল আর নীলা কাউকেই পাত্তা দিচ্ছে না। সাদাফ আসার পর থেকেই আরশি সাদাফকে কোলে নিয়ে বিছানায় পা তুলে আরাম করে বসে আছে। রৌদ্র দূর থেকে তাদের বাচ্চামো দেখছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে। বাচ্চাটাকে কাছে পেয়ে যেন সবাই ছোট বাচ্চা হয়ে গেছে।
“নীল দূরে যা তো। কাড়াকাড়ি করিস না সাদাফকে নিয়ে। তুই শেরওয়ানি পরে আছিস। এখন সাদাফকে কোলে নিলে ও ব্যথা পাবে।”
আরশি শক্ত গলায় নীলকে কথটা বলল। নীল আরশির পাশে বসে বলল-
“তাহলে আমি শেরওয়ানি খুলে ফেলি! তখন দিবি তো!”
“অবশ্যই দিবো। তবে সাদাফকে না তোর গালে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পর দিবো। যা সর এখান থেকে। কিছুক্ষণ পর তোদের বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে তোরা গিয়ে রেডি হ। আর নিলু তুইও যা গিয়ে তোর সাজ কমপ্লিট কর।”
আরশির ধমক শুনে নীল আর নীলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। রুম থেকে চলে যাওয়ার আগে নীল আরশির দিকে চেয়ে বলল-
“তুলতুল হলে ওকে একেবারের জন্য আমরা নিয়ে আসবো। তখন তুই তুলতুলকে ভাগেও পাবি না মনে রাখিস হারামি।”
নীল ভেংচি কেটে চলে যায় রুম থেকে। ধ্রুব এসেছে আরশির কাছে। সাদাফকে কোলে নিতে চাইলে আরশি হাসি মুখেই ধ্রুবর কোলে সাদাফকে দিয়ে দেয়। ছেলেটা দিন দিন কেমন যেন রোগা হয়ে যাচ্ছে। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। খানিকটা শুকিয়েও গেছে। রৌদ্র অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিল তার চিকিৎসা ঠিকঠাক মতো শেষ হয়েছিল কি-না। ধ্রুব প্রতিবারই হাসি মুখে বলেছে সে একদম ঠিক আছে। আরশিও এখন হুটহাট করেই অসুস্থ হয়ে পরে। হঠাৎ করে মাথা ঘুরিয়ে পরে যায়। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিও পায় না। কিন্তু রৌদ্রকে তেমন কিছু বলে না৷ এসব স্বাভাবিক মনে করেই অবহেলা করছে আরশি।
চলবে….
[রিচেক করা হয়নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর আজকের পর্বটা একটু অগোছালো হয়েছে দুঃখিত]