#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৫৯
#Saiyara_Hossain_Kayanat
“শুভ্রতাকে প্রপোজ কর নীল।”
আরশির এমন নির্লিপ্ত ভঙ্গির কথা শুনে নীলসহ উপস্থিত সবাই হকচকিয়ে উঠলো। স্টেজের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্রতার আর নীলের বাবা-মা হতভম্ব হয়ে আরশির দিকে চেয়ে আছে। বিয়ের আগ মূহুর্তে বিয়ে থামিয়ে দিয়ে আরশি এমন কথা বলবে সেটা কেউ আশা করেনি। রৌদ্র আরশির হাত ধরে চোখের ইশারায় কিছু জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আরশি রৌদ্রর চাহনিকে পাত্তা দিলো না। আরশি এবার কিছুটা গম্ভীর গলায় বলল-
“নীল জলদি শুভ্রতা প্রপোজ কর না হলে বিয়ে থেমেই থাকবে।”
নীল শুভ্রতার পাশ থেকে আরশির কাছে আসলো। আরশির হাতের কব্জির দিকটা ধরে কিছুটা দূরে নিয়ে চাপা কন্ঠে বলল-
“আশু কি শুরু করেছিস এসব? এটা মজা করার সময় না। বড়রা সবাই এখানে আছে। তারা কি ভাব্বে ভেবেছিস!”
আরশি আগের মতো নির্লিপ্ত জবাব দিল-
“ওনাদেরকে আমি ম্যানেজ করে নিবো। তুই শুভ্রতাকে প্রপোজ কর যা।”
“কিন্তু আশু…”
নীলের কথার মাঝেই আরশি কড়া গলায় বললে উঠলো-
“কোনো কিন্তু না। তুই শুভ্রতাকে কথা দিয়েছিলি তুই ওকে বিয়ের সময় প্রপোজ করবি। প্রেম চলাকালীন সময়ে প্রপোজ করিসনি ঠিক আছে কিন্তু এখন নিজের কথাটা রাখ।”
আরশি কথা গুলো বলেই চলে গেল। শুভ্রতার বাবা-মার দিকে তাকিয়ে ভদ্রতার সাথে বলল-
“সরি আংকেল এভাবে বিয়ের মাঝে বাধা দেওয়ার জন্য। আসলে নীল শুভ্রতাকে আজ পর্যন্ত একবারও প্রপোজ করেনি। বলেছিল বিয়ের সময় করবে। শুভ্রতা নীলের সেই কথা মেনেই এতদিন ধরে অপেক্ষা করছে। নিজের মনে মধ্যে আশা পুষিয়ে রেখেছে। নীল আপনাদের ভয়ে এখন প্রপোজ করতে চাইছে না। আপনারা নিশ্চয়ই শুভ্রতার খুশির জন্য নীলকে অনুমতি দিবেন এখন প্রপোজ করতে!”
সবার মাঝে পিনপতন নীরবতা। একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে শুভ্রতা আর নীলের বাবা-মা। আরশি উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। সোফার কাছেই শুভ্রতা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর নীল আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে৷ কিছুটা সময় পর নীরবতা ভেঙে শুভ্রতার বাবা সহজ গলায় বললেন-
“নিজের বউকে প্রপোজ করবে এখানে এতো দ্বিধাবোধ কিসের!”
শুভ্রতা বিস্ফোরিত চোখে তার বাবার দিকে তাকালো। তার বাবার মুখে এমন কথা যেন অবিশ্বাস্য কিছু মনে হচ্ছে। শুভ্রতার বাবার কথা শুনে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু নীল বেচারা লজ্জায় আর অস্বস্তিতে কাচুমাচু করছে। সকলের জোরাজোরিতে নীল শুভ্রতার সামনে এসে দাঁড়ালো। হাতে টকটকে লাল গোলাপ। লজ্জায় নীলের গাল গুলো লাল হয়ে যাচ্ছে। ছেলে মানুষ এতটা লজ্জা পায় সেটা নীলকে না দেখলে হয়তো কারও বিশ্বাস হতো না। নীলের মতো চঞ্চল ছেলেটা ভালোবাসার মানুষের কাছে এসেই ভিন্ন রূপ ধারন করে ফেলে। শুভ্রতাকে কখনো সামনাসামনি ভালোবাসার কথা বলা হয় তাই হয়তো এতো অস্বস্তি বোধ করছে। আর পরিবারের সকলের সামনে শুভ্রতাকে প্রপোজ করায় লজ্জার মাত্রা যেন আকাশ ছুঁই ছুঁই। নীল হাঁটু গেড়ে বসে গোলাপ ফুলটা শুভ্রতার দিকে এগিয়ে দিল। বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করেই বলা শুরু করলো-
“আমি তোমাকে ভালোবাসি শুভ্রতা। প্রেমিকা হিসেবে নয় বউ হিসেবেই প্রপোজ করছি তোমাকে। সবার সামনে প্রমিজ করছি সারাজীবন তোমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবো। কখনো কষ্ট পেতে দিবো না। একজন আদর্শ স্বামী হয়ে দেখাবো।”
নীল একনাগাড়েই কথা গুলো বলে দিল। কথা গুলো শেষ হতেই নীল বড় করে একটা শ্বাস নিল। গলার কাছেই যেন দম আটকে গিয়েছিল তার। উপস্থিত সকলে হাততালি দিলো। আরশি, কাসফিয়া আর নীলা পেছন থেকে শুভ্রতাকে গোলাপ নিতে বলছে। শুভ্রতা নীলের দিকে কিছুক্ষণ অপলকভাবে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে গোলাপটা নিয়ে নিলো। নীল দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। শুভ্রতার কাছ থেকে কোনো উত্তর আশা না করেই রৌদ্রর পেছনে গিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। সকলের হাততালির শব্দে নীলের লজ্জার পরিমাণ দফায় দফায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরশি আর শুভ্রতাকে জোর করলো না উত্তর দেওয়ার জন্য। শুভ্রতার হাসিমুখেই তার উত্তর পেয়ে গেছে সবাই। আরশি ঘাড় বাকিয়ে নীলার দিকে তাকালো। মুখে রহস্যময় এক হাসির রেখা টেনে বলল-
“এবার তোর পালা নিলু।”
আরশির কথায় নীলা হকচকিয়ে উঠে। আমতা-আমতা করে বলল-
“আমার পালা মানে!! কি বলতে চাচ্ছিস তুই?”
আরশি শান্ত গলায় বললো-
“নীড় ভাইয়া সব সময় তোকে ভালোবাসার কথা বলে গেছে। অথচ তুই কখনো তার কথায় উত্তর দিসনি। তাই আজ তুই নিজে ওনাকে ভালোবাসার কথা বলবি।”
আরশির কথায় নীল রৌদ্রর আড়াল থেকে সামনে আসলো। লজ্জার রেশ কেটে স্বাভাবিক হয়ে গেছে নীল। নীলার দিকে চেয়ে পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল-
“কি হলো নিলু বাবু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন!! আমার সময় তো খুব লাফাইছিলা। এখন আমি লাফামু তোমার লজ্জা দেইখা। যা ফকিন্নি তাড়াতাড়ি প্রপোজ কর। আমাদের এতো সময় নেই তোর নেকামো দেখার জন্য।”
নীলা তীক্ষ্ণতার সাথে নীলের দিকে তাকালো। কটমট করে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আহত দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকালো। আরশি নীলার দৃষ্টি উপেক্ষা করলো। নির্বানের মা তাড়া দিয়ে বলল-
“নীলা মা যা করার তাড়াতাড়ি করো। দেড়ি হচ্ছে তো। এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই আমরা আমরাই তো।”
নীলা এক রাশ লজ্জা নিয়ে নির্বানের দিকে এগিয়ে গেল। এক সমুদ্র পরিমাণ অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নির্বানের সামনে। নির্বান নির্বাকের মতো ড্যাবড্যাব করে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে। নীলা কিছুটা উঁচু হয়ে নির্বানের কানে কানে মৃদুস্বরে বলল-
“আমি আপনাকে ভালোবাসি নীড়।”
নীলা লজ্জায় মাথা নুয়ে ফেললো। নির্বান মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়ে গেছে। নীলার মুখে কখনো ভালোবাসি শব্দটা শুনবে এটা তার কল্পনার বাহিরে ছিল।
“এটা কিন্তু চিটিং হলো। কানে কানে কি বললো কিছুই তো শুনলাম না।”
নীল উৎকন্ঠিত হয়ে বলল। নির্বানের হুশ আসলো। জোড়ালো শ্বাস নিয়ে দূর্বল কন্ঠে বললো-
“আমি শুনেছি এটাই অনেক।”
নির্বান তপ্ত শ্বাস ফেলে। নীলার দিকে এক নজর তাকালো। নীল রঙের বেনারসি শাড়িতে একদম নীল পরি লাগছে নীলাকে। এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে নীলা। নির্বান নীলার কানের কাছে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল-
“আজ আমি ধন্য হয়েছি নীলাদ্রি। তোমার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে আমার ভালোবাসা আজ পূর্ণতা পেল।”
নির্বান সোজা হয়ে দাঁড়ায়। মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে। নীল রঙের পাঞ্জাবির হাতাটা ঠিক করে সোফায় গিয়ে বসলো। সকলের মুখে তৃপ্তিদায়ক হাসি। চারদিকে ভালোবাসার ছড়াছড়ি। প্রতিটা মানুষের ভালোবাসা যেন আজ পূর্ণতা পেয়েছে। বন্ধুত্বটাও দৃঢ় হয়েছে।
—————————
রাত প্রায় দশটা। বিয়ের অনুষ্ঠান ভালো ভাবেই সম্পূর্ণ হয়েছে। সবাই আজ নীলদের বাসাতেই থাকবে। নীলাকেও বিদায় দেওয়া হয়নি। দুই বিয়ে একসাথে হওয়ায় সব কিছু যেন অন্য সব সাধারণ বিয়ের থেকে ভিন্ন ধরনের হয়ে গেছে। বেশ কিছুক্ষন ধরে আরশি দোতালার রুমে যাওয়ার পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে নীল আর নির্বান। আরশির পেছনে আছে ধ্রুব, আদ্রাফ আর রৌদ্র। রৌদ্র নিজের ইচ্ছেতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। আরশির হুমকি শুনেই বাধ্য ছেলের মতো রুমে যাওয়ার পথ আটকে রেখেছে। কাসফিয়া সাদাফকে কোলে নিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে নীল আর নির্বানের অবস্থা দেখে মজা নিচ্ছে৷ নীল আর নির্বান অসহায় মুখে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে। আরশির কাছে আকুতি মিনতি করছে যেন পথ ছেড়ে দাঁড়ায়। আরশি কোমড়ে দু হাত রেখে কঠিন গলায় বলল-
“আগে টাকা বের কর তারপর রুমে যেতে পারবি এর আগে না।”
নীল দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে পরেছে। আরশির দিকে চেয়ে অসহায় মুখে বলল-
“আশু টাকা তো দিয়েছি আমরা। তোদের সবাইকেই ভাগ ভাগ করে দিয়েছি। এখন আবার কিসের টাকা চাচ্ছিস!”
“হ্যাঁ ক্রাশ ভাবি এটা তো ঠিক না। আমরা তো টাকা দিয়েছি তবুও কেন আমাদের যেতে দিচ্ছো না!”
নির্বানের কথায় আরশি মুখ বাকিয়ে বলল-
“আরও দুজনের টাকা পাওনা বাকি আছে।”
“কিইইইই?”
নীল আর নির্বান প্রচন্ড অবাক হয়ে একসাথেই চেচিয়ে উঠলো। আরশি কপাল কুচকে বিরক্তির রেশ টেনে বলল-
“জ্বি। তুলতুল আর সাদাফের ভাগ তো এখনো পাইনি।”
নীল সরু চোখে আরশির দিকে তাকালো। সন্দিহান কন্ঠে বললো-
“সাদাফ তো নবজাতক বাচ্চা ওর আবার কিসের ভাগ?”
“সাদাফের কথা না হয় মানলাম কিন্তু তুলতুলের কথা বলে যে তোমরা টাকা হাতিয়ে নিতে চাচ্ছো এটা কিভাবে মেনে নিবো ক্রাশ ভাবি?”
নির্বান বিস্মিত হয়ে কথা গুলো বলল। ধ্রুব নিজের চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলল-
“এতসব কৈফিয়ত আমরা দিতে পারবো না। টাকা দাও রুমে যাও ব্যাস।”
“শালা এখন কেমন লাগে?? আমার বিয়ের সময় তো আমাকে ফকির বানিয়ে তারপর ছেড়েছিস। এখন বুঝো ঠেলা কাকে বলে? কত প্রকার? আর কি কি?”
আদ্রাফের কথায় আরশি সহ সবাই হেসে দেয়। সবার হাসি দেখে নির্বান ক্ষিপ্ত হয়ে রৌদ্রকে বলল-
“ভাই তুমি কিছু বলছো না কেন? তোমার তো ছেলে পক্ষে থাকার কথা। তুমি কেন ওদের সাথে মিলে রাস্তা আটকে রেখেছো?”
রৌদ্র ছোট্ট করে একটা শ্বাস ফেলে বলল-
“তোদের দু’জনকে রুমে যেতে সাহায্য করলে আজ আমার রুমে জায়গা হবে না। আর আমি আমার ভালোবাসার বউকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি বাধ্য এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে। তাছাড়া আমার বিয়েতে তোরা আমার থেকেও টাকা নিয়েছিলি। আটকে রেখেছিলি প্রায় আধঘন্টা। এখন এটাই তোদের শাস্তি।”
রৌদ্র কথায় সবাই হেসে উঠলো। বাধ্য হয়ে নির্বান আর নীল নিজেদের সকল টাকা আরশির হাতে তুলে দেয়। নীল আর নির্বান শেষমেষ ছাড়া পায় রুমে যাওয়ার জন্য। দু’জনে ক্লান্ত হয়ে ঢুলতে ঢুলতে রুমে চলে যায়।
————————
“আরু দি কি হয়েছে তোমার? আরু দি…”
সকালে ধ্রুব আরশি আর রৌদ্রকে নাস্তার জন্য ডেকে আনতে গিয়েছিল। খাবার টেবিলে আসার সময় হঠাৎই আরশির মাথা ঘুরে পরে যায়। ধ্রুব আরশির পাশে থাকায় সে দ্রুত আরশিকে ধরে ফেলে। ধ্রুবর চেচিয়ে বলা উত্তেজিত কন্ঠস্বর শুনে রৌদ্র তৎক্ষনাৎ ফোনের স্ক্রিন থেকে নজর সরিয়ে আরশির দিকে তাকালো। আরশি জ্ঞান হারিয়েছে। ধ্রুব আরশিকে ধরে রেখে হাল্কা ঝাঁকিয়ে উত্তেজিত হয়ে ডেকে যাচ্ছে অনবরত। আরশির অবস্থা দেখে রৌদ্রর বুকে মোচড় দিয়ে উঠেছে। দৌড়ে সিড়ি থেকে নেমেই আরশিকে জাপ্টে ধরে ফেলে। কোলে তুলে নিয়ে সোফায় বসে পরে। আরশিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে আরশির গালে হাল্কা থাপ্পড় মেরে ডাকতে লাগলো। রৌদ্র আর ধ্রুবর অস্থির কন্ঠে ডাইনিং টেবিলের সবাই আরশির কাছে আসে। সকলের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। নীল সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি করেই গাড়ি বের করে। রৌদ্র আরশিকে কোলে নিয়ে গাড়িতে চলে যায়। ধ্রুব আর নীল সামনের সিটে বসে আছে। রৌদ্র পেছনের সিটে বসে অস্থির হয়ে আরশিকে ডাকছে। হাত ঘষছে। ব্যকুল হয়ে পরেছে আরশির জ্ঞান ফেরানোর জন্য। রৌদ্রর মনে ভয় ঝেঁকে বসেছে। চোখমুখ ফ্যাকাসে বর্ণের হয়ে পরেছে। বুকে অসহ্য ব্যথা অনুভব করছে রৌদ্র। আরশিকে এই অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এখনই হয়তো দম আটকে মারা যাবে রৌদ্র।
চলবে…
[সব সময় হাসিখুশিতে মেতে থাকবে এমন কোনো গল্প হয়না সেটা বাস্তব হোক কিংবা কাল্পনিক। সুখ, দুঃখ, কষ্ট সবমিলেই হয় গল্প। আশা করি ধৈর্য ধরে পরবেন। আপনাদের কথা রাখতেই আগে থেকে ভেবে রাখা গল্পের থিম পাল্টে কিছুটা ভিন্ন করতে হচ্ছে। ভুল-ভ্রান্তির ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।সবাইকে ধন্যবাদ আর ভালোবাসা।❤️❤️]
রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
পর্বঃ৬০
#Saiyara_Hossain_Kayanat
আধঘন্টা ধরে আরশিকে কেবিনের বেডে শুয়িয়ে রাখা হয়েছে। এখনো জ্ঞান ফেরেনি তার। বেডের পাশেই বসে আছে ধ্রুব। চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। সবাইকে যেন বিষন্নতার কালো ছায়া আঁকড়ে ধরেছে। ধ্রুবর বুকের ব্যথাটা বেড়েছে। শ্বাস নিতে খানিকটা কষ্ট হচ্ছে। তবুও নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছে এই পরিস্থিতিতে। ধ্রুবর কাছের মানুষ বলতে শুধু তার মা। বাবাও আছে তবে সারাক্ষণ বিজনেস নিয়েই ব্যস্ত থাকেন উনি। ছোট বেলা থেকেই একাকিত্বের মাঝে বড় হয়েছে ধ্রুব। বাবা-মা দুজনেই নিজেদের পেশায় ব্যস্ত থাকতেন। তাদের এতো বড় বিজনেস থাকা শর্তেও ধ্রুব মা শিক্ষকতার পেশায় যুক্ত হয়েছিলেন শুধুমাত্র শখের বশে। যখন শুনলেন ধ্রুব হৃদরোগে আক্রান্ত তখনই তিনি তার শখের পেশাকে বিসর্জন দিলেন। তারপর থেকে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টাই ধ্রুব আগেপিছে লেগেছিলেন। তবে ধ্রুবর বাবার মধ্যে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি বরাবরের মতোই নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ছেলেকে নিয়ে তেমন চিন্তাও করে না। তিনি মনে মনে ভেবেই নিয়েছেন তার ছেলে সুস্থ হয়ে উঠবেন। এতো টাকার মালিক সে সব তো এই একমাত্র ছেলের জন্যই! তার ছেলেকে দেশের বাহিরে বড় নামি-দামি হসপিটালে চিকিৎসা করাবেন। যত টাকার প্রয়োজন হয় সব খরচ করবেন। তখন নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে যাবে ধ্রুব!
আরশিদের সাথে দেখা হওয়ার পর ধ্রুবর একাকিত্ব ভাব কেটে গেছে। সব সময় আরশিদের সাথে হাসিঠাট্টায় মেতে থাকতো। তাদের সবার সাথে থাকলে যেন ধ্রুবর সকল অসুস্থতা নিমিষেই দূর হয়ে যায়। আরশিকে খুব ভালোবাসে ধ্রুব। সব সময় তার মায়ের সাথে আরশিকে নিয়ে গল্প করে। সব সময় একটা কথাই বলে- ‘মা আমার কোনো বড়বোন থাকলে নিশ্চয়ই আরুদি’র মতো হতো তাই না! জানো তো আরুদি আমাকে অনেক আদর করে, কেয়ার করে আবার মাঝে মাঝে শাসন করে বকাও দেয়। কখনো মনেই হয় না তার সাথে আমার অল্পদিনের পরিচয়।’ বিশ বছর বয়সী ধ্রুবর ছেলেমানুষী কথায় তার মা শুধু হাসে। ছেলেকে তেমন কিছু বলে না। সব সময় একাকীই তো থেকেছে ছেলেটা, এখন না হয় মানুষদের সাথে মিশুক। এই সুন্দর পৃথিবীর কিছু সুন্দর চরিত্র গুলোর সাথে নিজেকে পরিচিত করুক। এতে তেমন কোনো সমস্যা তো নেই। অনিশ্চিত জীবনে এবার না হয় নিজের মতো করেই বাঁচুক।
কেবিনে দরজা খুলে নীল ভেতরে আসলো। আরশির দিকে একঝলক তাকিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে। ধ্রুবর কাধে হাত রেখে স্নেহের গলায় বলল-
“ধ্রুব তুই এখন বাহিরে যা এখানে আমি আছি। সেই কখন থেকেই তো বসে আছিস। এখন যা একটু হাঁটাহাঁটি কর।”
ধ্রুব নীলের তাকালো। তেমন কোনো কথা বলল না। সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। দরজার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতেই নীলের গাম্ভীর্যপুর্ণ ডাক শুনতে পেল। ধ্রুব ঘাড় বাকিয়ে নীলের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকাতেই নীল শাসনের সুরে বলল-
“মনে করে কেন্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিস। সকালে তো নাস্তা করিস নি। দিন দিন তোর কি হাল হচ্ছে দেখেছিস!”
ধ্রুব ক্ষীণ গলায় বলল-
“তোমরাও তো খাওনি। তোমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসবো?”
নীল কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে ভেবে বলল-
“আচ্ছা নিয়ে আয়।”
ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে গম্ভীর পায়ে বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। আদ্রাফ আর নীলা কেবিনের বাহিরের চেয়ারে বসে আছে। রৌদ্রকে দেখা যাচ্ছে না। হয়তো ডক্টরের সাথে কথা বলতে গেছে। আরশির বাবা-মা’কে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা সাথে সাথেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছে। কয়েকঘন্টার মাঝেই হয়তো ঢাকা পৌঁছে যাবে।
————————
আতংকিত মুখে বসে আছে রৌদ্র। আরশির কি হয়েছে জানার জন্য বিচলিত হয়ে উঠেছে তার মন। প্রচন্ডরকম উত্তেজিত হয়েই একগাদা প্রশ্ন ছুড়ে দিল টেবিলের সামনে বসে থাকা ডক্টরের দিকে-
“আরুর কি হয়েছে ডক্টর? হঠাৎ করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে কেন? আরু ঠিক আছে তো! এখনো জ্ঞান ফিরছে না কেন! বাবু ভালো আছে তো! আপনি কিছু বলছেন না কেন ড.শৈলী।”
বিস্ময়ে ড.শৈলীর কপাল কুচকে এলো। তিনি এই হসপিটালে শিফট করেছে প্রায় চার-পাঁচ মাস। এই কয়েকমাসে রৌদ্রকে কখনো এতটা উত্তেজিত হতে দেখেননি। তিনি রৌদ্রর দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলল-
“শান্ত হোন ড.রৌদ্র। একজন ডক্টর হয়েও এতো উত্তেজিত হওয়া আপনাকে মানায় না।”
রৌদ্র নিজেকে সামলিয়ে নেয়। চুপচাপ শান্ত হয়ে বসে রইলো। প্রতিত্তোরে কিছু বলল না। নিজেকে শান্ত করে উদাসীন গলায় বলল-
“আরুর কি হয়েছে! এভাবে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে কেন!”
ড.শৈলী হাতের কলমটা দু’হাতে নাড়িয়ে চাড়িয়ে শান্ত গলায় বলতে লাগলেন-
“আপনার কাছে যতটুকু শুনেছি আর আপনার ওয়াইফের আগের রিপোর্ট গুলো দেখে বুঝলাম মিসেস আরশির আগে থেকেই গর্ভধারণের ক্ষেত্রে প্রব্লেম ছিল। মানে গর্ভধারণের চান্স খুব ছিলো তাই তো!”
রৌদ্র হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। ড.শৈলী আবারও বলতে লাগলেন-
“মিসেস আরশির আগের ডক্টর নিশ্চয়ই বলেছিলেন ওনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা আছে তবে সেটায় রিস্কও আছে!”
রৌদ্র থমকালো। থমথমে চেহারায় নিয়ে চেয়ে আছে ডক্টরের দিকে। আতংকিত গলায় বলল-
“আরুর কি হয়ে সেটা বলুন।”
“আমাদের ডক্টরদের ভাষায় মিসেস আরশির কেসটা হলো হাই রিস্ক প্রেগ্ন্যাসি। হাই রিস্ক প্রেগ্ন্যাসির কারন বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কারও কারও প্রেগন্যান্ট হওয়ার পরের প্রব্লেম গুলোর কারনে হয়। আবারও কারও প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগের কোনো জটিলতা বা প্রব্লেম থাকার কারনে হয়। মিসেস আরশির আগে থেকেই প্রব্লেম ছিল। আর এখন ওনার শরীরের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে, শরীর খুব দূর্বল হয়ে পরেছে। বাচ্চা আর মা দুজনের লাইফই রিস্কে আছে। সামনে কি হবে বাকিটা আল্লাহ ভরসা।”
রৌদ্র কিছু বলছে না। কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখা যাচ্ছে না তার মধ্যে। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে টেবিলের দিকে। চোখদুটো নামিয়ে রেখেছে। ড.শৈলী রৌদ্রর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে রৌদ্রর ভাবগতিক। কিন্তু রৌদ্রর চেহারা সম্পূর্ণ অনুভূতিহীন লাগছে। ড.শৈলী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করল-
“আপনি ঠিক আছেন তো ড.রৌদ্র!”
রৌদ্র মাথা তুলে তাকালো। প্রতিত্তোরে কিছু না বলে বিনয়ের ভঙ্গিতে পালটা প্রশ্ন করল-
“আরুর জ্ঞান কখন ফিরবে?”
“চিন্তার কিছু নেই কিছুক্ষনের মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে।”
“আচ্ছা আমি তাহলে আসছি!”
রৌদ্র বিনয়ের গলায় কথা গুলো বলেই উঠে দাঁড়ালো। পেছন ফিরে যেতেই ড.শৈলী শালীন কন্ঠে বললেন-
“আপনার মিসেসের খেয়াল রাখবেন। আর ওনাকে এসব বলে অযথা দুঃশ্চিন্তায় ফেলার দরকার নেই। আপনি নিজেও ওনাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না। মানসিকভাবে ওনাকে সাপোর্ট দেওয়া খুব প্রয়োজন। আপনাকেই সাপোর্ট দিতে হবে। আর একটা কথা মাথায় রাখবেন রিস্ক থাকলেই যে সব সময় খারাপ কিছু হবে তা কিন্তু না। আপনি নিজেও একজন ডক্টর৷ আশাকরি আপনি এসব খুব ভালো করেই জানেন।”
রৌদ্র বেশ মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনলো। মাথাটা হাল্কা নাড়িয়ে একটা মলিন হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেল। আরশির কেবিনে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রৌদ্র। তার মাথা পুরো ফাঁকাফাঁকা লাগছে। নিজেকে জ্ঞানশূন্য মানুষ মনে হচ্ছে। না মাথা কাজ করছে, আর না শরীর কাজ করতে চাইছে। পুরো শরীর অসাড় হয়ে আসছে। পা দুটো যেন চলতে চাইছে না। চোখের সামনে শুধু আরশির লাজুক চেহারাটা ভেসে উঠছে বার বার। কিছুটা সামনে আসতেই ধ্রুবকে দেখতে পেল। চেয়ারে বসে আছে। মাথা নিচু করে বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছে। বিস্মিত হয়ে দ্রুত পায়ে ধ্রুব পাশে এসে বসলো। ধ্রুবর কাধে হাত রেখে থমথমে গলায় জিজ্ঞেস করল-
“ধ্রুব তুই ঠিক আছিস তো!”
ধ্রুব বিদ্যুৎগতিতে মাথা তুলে তাকালো। রৌদ্রকে পাশে বসে থাকতে দেখে থতমত খেয়ে গেল। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে আমতা-আমতা করে বলল-
“আমার আবার কি হবে! আমি তো ঠিকই আছি।”
রৌদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব মুখ ফ্যাকাসে বর্ণের হয়ে গেছে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চেয়েও পারছে না। ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। চোখেমুখে ভয়। রৌদ্র কড়া গলায় বলল-
“বেশি বড় হয়ে গেছিস? নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করিস! না-কি আমাকে বোকা মনে হয় তোর কাছে?”
ধ্রুব একটা কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলল-
“এসব কি বলছো ভাইয়া? আমি কেন তোমাকে বোকা মনে করবো!”
রৌদ্র আবারও গম্ভীর গলায় বলল-
“সত্যি করে বল তোর কি হয়েছে! তোর সার্জারি ঠিক মতো হয়েছিলো তো! কিছুদিন ধরে তোকে খুব দূর্বল দেখাচ্ছে।”
ধ্রুব চুপসে গেল। মাথা নিচু করে বসে আছে। দৃষ্টি হসপিটালের সাদা টাইলস লাগানো মেঝেতে। রৌদ্র একটা জোড়ালো শ্বাস ফেলে বলল-
“আমি তোর প্রথম ডাক্তার ছিলাম। আমি তোর চিকিৎসা করেছিলাম অনেক দিন। আর আমিই তোকে সাজেস্ট করেছিলাম দেশের বাহিরে চিকিৎসা করানোর জন্য। আমি জানি তোর কেস খুব সেনসেটিভ ছিল। আর এটাও জানতাম যে সার্জারি মাধ্যমে তোর হার্টের প্রব্লেম ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল অনেকটাই। এখন বাকি যতটুকু আমি জানিনা সেটা তুই আমাকে খুলে বল।”
ধ্রুব মাথা তুলে সোজা হয়ে বসলো। বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে শান্ত গলায় বলল-
“সার্জারি সাকসেসফুল হয়নি। আমার হার্ট ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নতুন হার্ট বসানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। আব্বু ওনার টাকার ক্ষমতা দিয়েও হার্টের জোগাড় করতে পারেননি। এখন আর সম্ভব না কোনো কিছুর। আমার লাইফটাইম অনিশ্চিত। কতদিন বাঁচবো জানি না।”
ধ্রুব জড়িয়ে যাওয়া গলায় অগোছালো ভাবে কথা গুলো বলল। রৌদ্র স্তব্ধ হয়ে আছে। কি বলবে সে! কিভাবে সান্ত্বনা দিবে ধ্রুবকে? মনে মনে ভাবছে রৌদ্র। আজকের দিনটা তার জীবনে না আসলেই হয়তো জীবনটা খুব রঙিন হতো। একদম রঙিন চিরকুট গুলোর মতো। প্রিয় মানুষ গুলোর অনিশ্চিত জীবন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না রৌদ্র। মস্তিষ্ক কাজ করা থামিয়ে দিয়েছে। সব কিছু এলোমেলো আর ঝাপসা ঝাপসা লাগছে। কিভাবে সামলাবে সে সব কিছু? কিভাবে আগলে রাখবে এই মানুষ গুলোকে?
“ভাইয়া তুমি চিন্তা করো না। আমি ঠিক আছি। একটা রিকুয়েষ্ট রাখবে আমার?”
ধ্রুব করুণ সুরে শেষের কথাটা বলল। রৌদ্র নিজেকে সামলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে অস্পষ্ট ভাবে ছোট্ট করে বলল-
“কি?”
ধ্রুব চট করে রৌদ্র ডান হাত নিজের দু’হাতের মুঠোয় বন্দী করে নিলো। বাচ্চাদের মতো আকুতিভরা টলটলে চোখে রৌদ্র দিকে তাকালো।
“প্লিজ ভাইয়া এই কথা তুমি আরুদি’কে বলো না। এমনিতেই আরুদি খুব ইমোশনাল। আমার কথা শুনলে অল্পতেই ভেঙে পরবে। আমি আরুদি’কে কষ্ট দিতে পারবো না। প্লিজ আমার কথাটা তুমি রেখো।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। তবে তুই ভয় পাস না। আমি আরও বড় বড় সার্জানদের সাথে কথা বলবো। তোর কিছু হবে না দেখিস। তুই একদম ঠিক হয়ে যাবি।”
“তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি ঠিক হবো কি-না! শুধু শুধু কেন নিজের মনে মিথ্যে আশার আলো জ্বালাচ্ছো?”
ধ্রুবর গম্ভীর গলায় রৌদ্র মিইয়ে যায়। কিছু বলল না। ধ্রুব তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল-
“চল এখন আরুদি’র কাছে যাই।”
ধ্রুব চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। রৌদ্র চুপচাপ কাঠের পুতুলের মতো ধ্রুব সাথে হেঁটে যাচ্ছে। আরশির কেবিনের কাছে আসতেই নীলা দ্রুত রৌদ্রর কাছে এসে জিজ্ঞেস করতে লাগলো ডক্টর কি বলেছে। নির্বানও এসে পরেছে হসপিটালে। সবাই একসাথে ঘিরে ধরেছে রৌদ্রকে।
“ডক্টর বলেছে তুলতুল আর আরু দুজনের লাইফ রিস্কে আছে। কথা গুলো যেন আরুর কান অব্দি না পৌঁছায় মাথায় রেখো সবাই।”
রৌদ্র গম্ভীরমুখে কথা গুলো বলেই দরজা ঢেলে ভিতরে চলে যায়। নীলা, আদ্রাফ, নির্বান আর ধ্রুব সবাই আগের জায়গাতেই স্থির দাঁড়িয়ে আছে। রৌদ্রকে দেখেই নীল উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল-
“ডক্টর কি বলেছে ভাইয়া! আরু ঠিক আছে তো?”
রৌদ্র আরশির দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে ক্ষীণ গলায় বলল-
“বাহিরে যাও নীল। আদ্রাফদের কাছ থেকে সব জেনে নিও। আমি এখন আরুর কাছে একা থাকতে চাই।”
রৌদ্রর থমথমে চেহারা দেখে নীল আর পালটা প্রশ্ন করার সাহস পেলো না। চুপচাপ রুমের বাহিরে চলে যায়। রৌদ্র চেয়ারটা টেনে আরশির বেডের একদম কাছে এনে বসে পরলো। রৌদ্র অপলকভাবে তাকিয়ে আছে তার রুদ্রাণীর দিকে। রৌদ্র কি তাহলে ভুল করলো! তার রুদ্রাণীর মা হওয়ার ইচ্ছে-পূরণ করতেই তো কতো চেষ্টা করেছে এতদিন। এখন কি এই ইচ্ছে পূরণের বিনিময়ে সে তার রুদ্রাণীকেই হারিয়ে ফেলবে? কি বলবে সে তার রুদ্রাণীকে? আর ধ্রুব! তাকেই বা কিভাবে বাঁচাবে! আরু ধ্রুবর কথা জানলেই বা কী করবে?
চলবে…
[হ্যাপি রিডিং। দেরিতে পোস্ট করার জন্য দুঃখিত। দেখতে দেখতেই ৬০ পর্ব হয়ে গেল। হয়তো আর কয়েক পর্বে মধ্যেই ইতি টানবো রৌদ্র রুদ্রাণীর গল্প। সবাইকে ধন্যবাদ আর ভালোবাসা।❤️❤️]